Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ১ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)

    জেমস হেডলি চেজ এক পাতা গল্প2631 Mins Read0

    ০৩-৪. সকালে প্রাতঃরাশ

    ০৩.

    ক্র্যামার বৃহস্পতিবার সকালে প্রাতঃরাশ খাচ্ছিলেন। হেলেন সকালে কিছু খায় না। সে দ্বিতীয়বার ক্র্যামারের কফির পেয়ালা ভর্তি করে দিচ্ছিল। এমন সময় তিনি সহজ ভঙ্গিতে বললেন। আজ সকালের প্লেনে মো জেগেটি আসছে, ডার্লিং। এখানেই লাঞ্চ খাবে।

    চমকে বলল, কে?

    মো জেগেটি। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে?

    মানে সেই বদমাশটা? সবে জেল থেকে বেরিয়েছে, তাই না?

    প্রায় দুবছর হলো বেরিয়েছে। বড় ভালো লোকটা। তুমি তো তাকে পছন্দ করতে হেলেন।

    একটু বিবর্ণ হয়ে হেলেন বলল, কী চায় সে?

    কিছুই না। সে এখন নিজের ব্যবসা চালাচ্ছে। গতকাল আমায় ফোন করেছিল। একটা কাজে প্যারাডইসশহরে আসছে। আমি এখানে আছি জেনে ভেবেছে একবার দেখা করে যাবে। অনেকদিন পরে আবার দেখা হবে। চমৎকার লোক।

    তীব্র রাগে হেলেন বলল, ও স্রেফ একটা ডাকাত। জিম তুমি কথা দিয়েছিলে ঐ ডাকাতগুলোর আর ছায়া মাড়াবে না। আমাদের সামাজিক মর্যাদার কথা ভুললে চলবে না। কেউ যদি জানতে পারে যে একটা জেল ফেরৎ আসামী আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল?

    হয়েছে, হয়েছে, হেলেন, ঠাণ্ডা হও। মো আমাদের পুরোনো বন্ধু। একবার জেলে গিয়েছিল তো আমাদের কি? এখন সে ভদ্র জীবন-যাপন করছে আর নিজে ব্যবসা করছে।

    হেলেন অনেকক্ষণ ধরে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কিসের ব্যবসা?

    জানি না। দেখা হলে না হয় তুমিই জেনে নিও।

    আমি ওকে দেখতে চাই না, আর ও এ বাড়িতে পা দিক তা-ও আমি চাই না। দেখ, জিম, পাঁচ বছর হল তুমি অপরাধী মহল থেকে সরে এসেছ, আর ফিরে যেতে চেষ্টা করো না।

    ক্র্যামার মাংসের শেষ টুকরোটি মুখে পুরে প্লেট সরিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন। তারপর ধারালো স্বরে বললেন, আমি কী করব না করব সে বিষয়ে কারো উপদেশ শোনা আমার পছন্দ নয় হেলেন, তোমার উপদেশও না। তুমি তা জান, মাথা গরম কোরো না। জো এখানেই লাঞ্চ .. খাবে পুরনো বন্ধু হিসেবে। সে আমার বাড়ি আসছে সুতরাং শান্ত হও।

    স্বামীর গম্ভীর-ধূসর চোখে আগুনের ঝলক হেলেন চিরকাল ভয় করে চলে। সে জানে তার বয়স কিছু কমছে না, রূপে ক্রমশঃ ভাটার টান ধরছে। ষাটের কোঠায় গিয়েও ক্র্যামার এ পর্যন্ত অন্য কোনো নারীর দিকে দৃষ্টি দেননি। হেলেন উঠে একটু হেসে বলল, ঠিক আছে জিম। আমি বরং ওর জন্য ভাল কিছু বেঁধে রাখব। আমার শুধু ভয় হয়েছিল যে সেই বিশ্রী পুরনো জীবনটা থেকে হঠাৎ একজন এখানে এসে পড়লে

    ভয় পাবার কিছুই নেই। যাকগে, আমি এয়ারপোর্টে চললাম। আমরা দুজনে সাড়ে বারোটা নাগাদ ফিরব, তৈরী থেকো। হেলেনের গালে একবার ঠোঁট ছুঁইয়ে ক্র্যামার বেরিয়ে গেলেন।

    হেলেন বসে পড়ল, মো জেগেটি। মনে পড়ল অনেকদিন আগেকার কথা যখন মো জিমের ডানহাত ছিল। মানুষ হিসেবে মো কে খারাপ লাগত না। কিন্তু তার পরিচয়টা আজ ভয়াবহ, জেল ফেরৎ ডাকাত। তারা আজ প্যারাডাইস শহরে উচ্চবিত্ত মহলে জায়গা করে নিয়েছে। আর এখন কেউ যদি জানতে পারে যে মো তাদের সঙ্গে লাঞ্চ খাচ্ছে! উঁহু, জিমের মাথায় কি অন্য কোন মতলব এসেছে?

    .

    এফ. বি. আই.-এর ইন্সপেক্টর জে ডেনিসন এবং স্পেশাল এজেন্ট টম হার্পার এয়ারপোর্টের লবিতে তাদের ওয়াশিংটন গামী প্লেনটির খবরের জন্য অপেক্ষা করছিল।

    এক বিশাল পেশীবহুল মানুষ ডেনিসন, মুখে বড় একজোড়া গোঁফ। মোটা নাকের পাশে তামাটে দাগ, বয়েস প্রায় আটচল্লিশ একজন সুদক্ষ, পরিশ্রমী পুলিশ অফিসার। প্যারাডাই শহরেই তার সদর দপ্তর। তার পাশে হার্পারকে বাচ্চা বলে মনে হচ্ছিল। ইন্সপেক্টরের চেয়ে কুড়ি বছরের ছোট সে। রোগা, লম্বা চেহারার উন্নতিশীল যুবক। ডেনিসনের মত কড়া শিক্ষক পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে, ছোকরা কাজকর্ম ভালই শিখছে। দুজনের মধ্যে একটা প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ইদানীং আবার হার্পার ডেনিসনের মেয়েকে বিয়ে করবার জন্য ঝুঁকেছে।

    ডেনিসন হঠাৎ হার্পারের বাহুতে চাপ দিয়ে, কে এলো দ্যাখো একবার। ঐ যে ব্যাটা মোটকু এইমাত্র গেট দিয়ে ঢুকল।

    হার্পার বেঁটে-মোটা মানুষটিকে দেখতে পেল। প্লেন থেকে নেমে লবিতে এসে ঢুকল। হার্পার চিনতে না পেরে সপ্রশ্ন চোখে কর্তার দিকে তাকাল।

    ততক্ষণে ডেনিসন উঠে, তাড়াহুড়ো কোরো না। লোকটার ওপর নজর রাখতে হবে।

    তারা লোকটার পিছু নিল। গাড়ি পার্ক করবার জায়গায় এসে সে থমকে দাঁড়াল।

    ডেনিসন বললেন, ঐ হল মো জেগেটি। মনে পড়ছে? ওর সঙ্গে মোলাকাত অবশ্য তোমার হয়নি–ওর সময়ে তুমি কাজে ঢোকনি। তবে ওর কীর্তিকলাপ নিশ্চয় শুনে থাকবে।

    এই সেই জেগেটি! খুব শুনেছি ওর কথা। ক্র্যামারের স্যাঙাৎ। সে সময়ে গুণ্ডামহলের সবচেয়ে উঁদে ওস্তাদদের একজন ছিল। তারপর দুবছরের জন্যে জেলে গিয়ে আবার দুবছর হলো বেরিয়েছে। চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ টাকাপয়সা করেছে। সুটটা চমৎকার।

    এই সেই লোক। কিন্তু ব্যাটা এখানে কী মতলবে এসেছে?

    ঐ দেখুন বাঁদিকে। ঐ যে ক্র্যামার স্বয়ং।

    লাউড স্পীকারে শোনা গেল–ওয়াশিংটনের যাত্রীরা সকলে যেন এক্ষুনি পাঁচ নম্বর গেটে চলে আসেন।

    পুলিশ অফিসার দুজন দেখল,ক্র্যামার হাত নেড়ে ইসারা করলেন এবং মো জেগেটি সেদিকে পা চালাল। তারপর অফিসার দুজন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ৫ নম্বর গেটের দিকে চলল।

    চিন্তিতভাবে ডেনিসন বললেন, ক্র্যামার এবং জেগেটি–সেই অপরাজেয় জুটি। বিপদ বাঁধতে পারে।

    হার্পার বলল, আপনি কি বলতে চাইছেন ক্র্যামার আবার দস্যজীবনে ফিরে যাবে! ওর হাতে তো অঢেল টাকা আছে। এমন পাগলামি ও করবে না।

    জানি না। অনেকবার ভেবেছি সলি লুকাস কেন আত্মহত্যা করল। সেই-ই ক্র্যামারের টাকাপয়সার দেখাশুনা করত। যাই হোক ওদের ওপর নজর রাখতে হবে। প্লেনে উঠেই এখানকার পুলিশদের সতর্ক করতে হবে। দীর্ঘ একুশ বছর আমি ক্র্যামারকে বাগে পাবার চেষ্টা করেছি। পারিনি। যদি ও পুরনো জীবনে ফিরে আসে–সে সুযোগ আমি হাতছাড়া করবো না।

    .

    কেউ তাকে লক্ষ্য করছে সেটা মোবুঝতে পারেনি। দুজনে কাছাকাছি আসতেই দুজনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরস্পরের ওপর চোখ বুলিয়ে নিল, গত সাত বছরে অন্যজনের কতটুকু পরিবর্তন ঘটেছে।

    ক্র্যামারের তামাটে চেহারা এখনও তাজা আছে তবে সেই চঞ্চল তরতরে হাঁটার ভঙ্গীটা হারিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য জিমের বয়স এখন ষাট। ক্র্যামারের গায়ে কুচকুচে কালো সোয়েডের জ্যাকেট, বাদামী গ্যাবাডিনের প্যান্ট আর মাথায় সাদা টুপি। দেখে সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক বলেই মনে হয়।

    মোর চেহারা আগের চেয়ে অনেক মোটা ও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কেমন একটা অস্বাস্থ্যকর ও শিথিল ভাব। আর ক্র্যামার লক্ষ্য করলেন তার চোখের অস্বচ্ছন্দ, ভীতু চাহনী এবং ঠোঁট জোড়ার নার্ভাস কাঁপুনি। তবে মো-র চোহারা যথেষ্ট সম্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে। রোজগার ভালো না হলে, এমন উঁচুদরের পোশাক পরা যায় না।

    মোর হাতে হাত মিলিয়ে ক্র্যামার বললেন, অনেকদিন পরে দেখা হল, কেমন আছ?

    মো জানাল যে সে ভালই আছে এবং তার সঙ্গে দেখা হওয়াতে খুব খুশী হয়েছে। তারপর দুজনে ক্যাডিলাক গাড়ীটার দিকে এগিয়ে গেল।

    মো মুগ্ধকণ্ঠে বলে, তোমার গাড়ী নাকি, জিম?

    হ্যাঁ, তবে এবার এটা বেচে নতুন মডেল কিনছি। ঢোকো, হেলেন তোমার জন্যে স্পেশাল খাবার তৈরী করছে, দেরী হলে মজা দেখিয়ে দেবে।

    যেতে যেতে মোর কাছে ডলের সব খবর জানলেন।

    ক্র্যামার খুব বিচলিত হলেন। ডলকে তার খুব ভালো লাগতো। তিনি বললেন, ভালো হয়ে যাবেন। উনি যথেষ্ট শক্ত ধাতের মানুষ। অসুস্থতা সকলের জীবনেই আসে আবার ভাল হয়ে ওঠে। উনিও সেরে উঠবেন।

    তিনি স্যান কোয়েন্টিনের সম্বন্ধে জানতে চাইলে মো দুই হাতে সজোরে মুষ্ঠিবদ্ধ করে, শক্ত, বোঁজা গলায় বলল,-অতি জঘন্য জায়গা–সে সময়টা খারাপ কেটেছে।

    ক্র্যামার অতি অল্পের জন্য এই স্যান কোয়েন্টিন এর গ্রাস থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন। এই জেলটা একটা দুঃস্বপ্নের রাজত্ব। তিনি বললেন, আমিও সেই রকম ভেবেছিলাম। যা হবার হয়ে গেছে। ও নিয়ে ভেবো না। ব্যাপারটা চুকে গেছে।

    নানান গল্পের মধ্যে কুড়ি মাইল রাস্তা কেটে গেল। কিন্তু ক্র্যামার যে কেন মো-কে ডেকেছেন, সে বিষয়ে কোন কথা হল না।

    নির্বিঘ্নেই খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকে গেল। খাওয়াটা বেশ ভারী হয়েছিল কিন্তু মো বুঝতে পারল, তার আসাটা হেলেনের ঠিক পছন্দ নয়। তার মন একটু খারাপ হয়ে গেল।

    হেলেন সোজাসুজি তাকে জিজ্ঞেস করল এখন কি করছো।

    মো বলল, তার একটা রেস্তোরাঁ আছে। রোজগার পত্র ভালই হচ্ছে।

    তাহলে প্যারাডাইস শহরে এসেছ কি জন্যে?

    ইতস্ততঃ করে মো কিছু বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় ক্র্যামার বললেন, ও আরো একটা • রেস্তোরাঁ খুঁজছে। চমৎকার মতলব। প্যারাডাইস শহরে একটা ভালো ইটালিয়ান রেস্তোরাঁ হলে আমাদের সুবিধা হবে।

    লাঞ্চ শেষ হলে হেলেন বলল যে সে শহরে যাচ্ছে আর সেখান থেকে ব্রির্জ ক্লাবে।

    হেলেন চলে যাওয়ার পর ক্র্যামার বললেন, চলো মো, আমার পড়বার ঘরে। তোমার সঙ্গে কথা আছে।

    দুজনে পড়বার ঘরে ঢুকল। ক্র্যামারের বিরাট বাড়ি, বাগান, অজস্র দামী দামী আসবাব পত্র ও জাকজমক দেখে মোর মাথা ঘুরে গেল। এ ঘরে এসে বড় জানালা দিয়ে গোলাপের বাগিচা দেখতে দেখতে বলল, চমৎকার বাড়ি পেয়েছ জিম।

    ক্র্যামার বসে এক বাক্স সিগার মোনর দিকে দিয়ে নিজেও একটি তুলে বললেন, মন্দ নয়। আচ্ছা সলি লুকাসকে তোমার মনে আছে?

    নিশ্চয়। সে এখন কি করছে? এখনও কি তোমার হয়ে কাজ করছে?

    হপ্তা দুয়েক আগে সে নিজেকে গুলি করেছে। কাজটা আমারই করবার কথা, কিন্তু তার আগেই নিজে সেরে ফেলেছে।

    মো শিউরে তার দিকে তাকাল।

    ক্র্যামার বলে চললেন, হ্যাঁ, আমার চল্লিশ লাখ ডলার উড়িয়ে দিয়েছে। এ কথা কিন্তু তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানবে না। হেলেনকেও আমি জানাতে চাই না। আমার কাছে এখন যে কটা পয়সা আছে, তোমার হাতে ডলারের সংখ্যা তার চেয়ে বেশিই হবে।

    স্বয়ং বিগ জিমের কাছ থেকে চল্লিশ লাখ ডলার মারা! অবিশ্বাস্য, মো স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইল।

    ক্র্যামার বললেন, সুতরাং এখন আমার বেশ থোকে টাকা দরকার, কাজটা শক্ত নয়, কিন্তু তোমার সাহায্য চাই। আমরা দুজনে জুটি চিরকাল, কাজ করে এসেছি তাই প্রথমে তোমার কথাই মনে হলো। এখনও আমরা অনায়াসে বড় একটা কাজ হাসিল করতে পারি। আমার মাথায় একটা মতলব আছে।কাজটা ঠিকমত সারতে পারি টাকা আসতে পারে। পরিকল্পনা ও পরিচালনা সব আমিই করবো, তোমাকে দরকার, পাবার কিছু নেই, মো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি একেবারে বিপদের সম্ভাবনা নেইবুঝতে পেরেছ? যদি কোন গোলমালের আশংকা থাকতো আমি তোমাকে ডেকে পাঠাতাম না। স্যান কোয়েন্টিনে তোমার দিনগুলি যে কেমন কেটেছে সে আমি বুঝতে পারি। শোন–আমার সঙ্গে কাজ করলে ঐ জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। থাকলে, এই বয়সে আমি কখনও এ ব্যাপারে মাথা গলাতাম না আর তোমাকেও টেনে আনতাম না।

    মো-র মন থেকে এবার ভয় সরে গেল। বিগ জিম যখন নিজে মুখে বলছেন যে কোনরকম ঝুঁকি না নিয়েই তিনি আড়াই লক্ষ ডলার তার হাতে তুলে দেবেন তবে সত্যিই হবে। ক্র্যামারের ওপর অটল বিশ্বাস আছে তার। চোখে ঐ দৃষ্টি নিয়ে ক্র্যামার যদি কোনো কিছু করবার প্রতিজ্ঞা করেন সে প্রতিজ্ঞা তিনি পালন করবেনই।

    উৎসাহভরে মো প্রশ্ন করল, কাজটা কী বলল দেখি? ক্র্যা

    মার বললেন, জন ভ্যান ওয়াইলির নাম শুনেছ কখনো?

    মো হতভম্ব মুখে ঘাড় নাড়ল।

    ভদ্রলোক একজন তৈলব্যবসায়ী। নিবাস টেক্ৰাস প্রদেশ। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবেনা কিন্তু সত্যি সত্যিই নাকি ভদ্রলোক একশ কোটি ডলারের বেশি সম্পত্তির মালিক।

    একটা লোকের অত টাকা থাকতেই পারে না। একশ কোটি ডলার। কোত্থেকে পাবে অত টাকা?

    গত শতাব্দীর শেষে ওঁর বাবা তেলের খনি আবিষ্কার করেছিলেন। টেক্রাসে তখন সবে লোকবসতি আরম্ভ হয়েছে। সে ভদ্রলোক জলের দরে একের পর এক জমি কিনেছিলেন। সে জমির যেখানেই গর্ত করেন, সেখানেই দেখেন তেল। জীবনে তিনি একটা শুকনো গর্ত খোড়েন নি–ভাবতে পারো। তিনি মারা যাবার পর তার ছেলে ব্যবসা নিল। বাবা যে টাকা রেখে গিয়েছিলেন জন ভ্যান ওয়াইলি নিপুণ হাতে তাকে দশগুণ করে ফেললেন। বিশ্বাস করো। আজ তার হাতে একশ কোটি ডলারের বেশি বৈ কম হবে না।

    মো মুখের ঘাম মুছে বলল, এসব শোনা কথা, কোনদিন সত্যি বলে বিশ্বাস করিনি।

    ক্র্যামার বললেন, বেশ কয়েক বছর যাবত আমি ভ্যানওয়াইলির ওপর নজর রাখছি। ভদ্রলোকের ব্যাপার-স্যাপার বড় অদ্ভুত। তিনি ডেস্কের একটা ড্রয়ার খুলে একটা ফাইল বারকরলেন, তার মধ্যে অজস্র খবরের কাগজের কাটিং আটকানো। এই প্রত্যেকটি কাটিং ভ্যান ওয়াইলির পরিবার সম্পর্কে। ওরা নিজেদের সম্বন্ধে যতটা জানেন আমি তার চেয়ে কিছু কম জানি না। মাঝে মাঝে আমি নিছক মজার জন্যেই নানান চুরি ডাকাতির প্ল্যান ভেবে ভেবে খাড়া করতাম। তখন জানতামনা যে একদিন সত্যি সত্যি এ পথে ফিরতে হবে। আমায় যখন ফিরেই আসতে হচ্ছে তখন সেই প্ল্যানগুলো যথেষ্ট কাজে লাগবে। ভ্যান ওয়াইলির স্ত্রী ক্যানসারে মারা গেছেন। একটি মাত্র মেয়ে, তার চেহারা ঠিক মায়ের মত। ভ্যান ওয়াইলির কাছে তার মেয়ের মত মূল্যবান কিছুই নেই।

    ক্র্যামার কিছুক্ষণ তার জ্বলন্ত সিগারের দিকে তাকিয়ে বললেন, একজন মানুষ যা কিছু চাইতে পারে তার সবটুকু ভ্যান ওয়াইলির আছে। তার এত বেশি টাকা যে সবটা খরচ করা অসম্ভব। তিনি যে কোনো জিনিষ যে কোনো দামে কিনতে পারেন কিন্তু নিজের মেয়ে এমন একটা জিনিষ যা কেনা যায় না।

    মো পুরোটা শোনবার জন্য অপেক্ষা করছিল।

    ক্র্যামারের মুখের রেখা কঠোর হয়ে উঠল, চোখ দুটো জ্বলছে। সুতরাং আমরা তার মেয়েকে চুরি করে এনে তার পকেট থেকে সুন্দর ও নিরাপদভাবে চল্লিশ লাখ ডলার নিতে পারি।

    সর্বাঙ্গ শক্ত হল মোর। দুচোখ বিস্ফারিত করে বলল, দাঁড়াও, দাঁড়াও, জিম! তুমি জানো আমাদের দেশে অপহরণের শাস্তি প্রাণদণ্ড। শেষে কি গ্যাস চেম্বারে প্রাণ দিতে চাও?

    তুমি কি ভেবেছ কথাটা আমি ভাবিনি? আমি তো বললাম, পুরো ব্যাপারটা সহজ, নিরাপদ আর সম্পূর্ণ-গোপন। ধরো ভ্যান ওয়াইলি তার মেয়েকে হারালেন, দুনিয়ায় একমাত্র যার জন্য তিনি পরোয়া করেন। চল্লিশ লাখ ডলার তার মত লোকের কাছে মুড়ি-মুড়কী। তোমার মেয়েকে কেউ যদি নিয়ে জানায় যে কুড়ি ডলার মুক্তিপণ দিলেই তুমি তাকে ফেরৎ পাবে, তুমি কি সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা দেবে না? তুমি কি পুলিশ ডাকতে যাবে? না, বরং টাকাটা দিয়ে দেবে। তিনি বিনা ঝামেলায় মেয়েকে ফেরত পাচ্ছেন। তার জন্য যে টাকা খরচ হচ্ছে তার মূল্য তার কাছে যতটুকু আমাদের কাছে কুড়িটা ডলারের দাম তার চেয়ে বেশি।

    কিন্তু একবার মেয়েকে ফেরত পেলেই তিনি আমাদের পেছনে পুলিশ লাগাবেন। ওরকম লোক কখনও মুখ বুজে অতগুলো টাকার শোক হজম করবে না।

    আমি তাকে পরিষ্কার সমঝিয়ে দেব যে কোনরকম শয়তানি করলে সুবিধে হবে না। মেয়ের ওপর যতই পাহারা বসান না কেন, একদিন না একদিন আমার দলের একজন বন্দুক হাতে তার কাছে পৌঁছবেই এবং সেইদিনই সব শেষ। আমি তাঁর মনে ভয় ঢুকিয়ে দেব, গণ্ডগোল করলেই মেয়েকে খতমকরবই। সেআজ হোক,কাল হোক,আরদুবছর পর হোক। তিনিও বুঝবেন যে একটা মেয়েকে সারাজীবনকড়া পাহারায়রাখা অসম্ভব। সুতরাং তিনিশ্চুপচাপ থাকবেন।

    বেশ, চিরকাল তোমার কথায় বিশ্বাস করেছি। তুমি যখন বলছ, তাই হবে। আমায় কী করতে হবে?

    তোমার ওপর সহজ কাজটার ভার দিচ্ছি। তুমি অপহরণ টুকুর ব্যবস্থা করবে–অবশ্য একলা নয়। আমাদের আরো দুজন লাগবে। দুজন কম বয়েসী, শক্ত সমর্থ, ডাকাবুকা ছোঁড়া আমাদের চাই। তাদের ভাগে পড়বে পাঁচ হাজার ডলার। তুমি নিশ্চয়ই দুয়েকটা ভালো ছোকরা যোগাড় করতে পারবে।

    ক্র্যামারের মত মোরও বহুদিন অপরাধী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই কিন্তু সে কথা বললে মহাবিপদ হবে। বিগ জিমকে মো চেনে। তার মুখ দেখে আড়াই লাখ ডলার দেবেন না। যতক্ষণ ঠিকঠাক কাজ হবে, ততক্ষণ তিনি কিছু বলবেন না। কিন্তু একটু অক্ষমতা দেখলেই পত্রপাঠ বিদায়।

    হঠাৎ মোর মাথায় একটা কথা এলো, আমি দুজনকে চিনি, যারা এ কাজ করতে পারে। দুই ভাইবোন তাঁরা। নাম-ক্রেন। এ ব্যাপারে ওদের চেয়ে মানানসই বদমাশ পাওয়া মুস্কিল।

    ক্র্যামার বললেন, কেন? কে তারা?

    আমার নীচের ফ্ল্যাটে থাকে। ভীষণ বেপরোয়া। যমজ ভাইবোন। ভাইটা হল বীটনিক–নিজের দল আছে। ওদের বশে আনা শক্ত। কিন্তু প্রচুর সাহস আছে।

    হেসে ক্র্যামার বললেন, ভেবো না, আমি ওদের ঠিক ম্যানেজ করে নেব। ওদের সম্বন্ধে আর কি জানো? কী করে ওরা?

    কিছুই না। কোন দিন রোজগারের চেষ্টাও করেনি। বললাম যে–ভীষণ বেপরোয়া। ওদের বাবা ছিল এক বন্দুকবাজ। ছোটখাট দোকান আর নির্জন পেট্রল পাম্প লুঠ করে বেড়াত। একদিন মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরে দেখে, তার বৌ অন্য লোকের সঙ্গে শুয়ে আছে। দুজনকেই গুলি করে শেষ করে। পনেরো বছরের জন্য তার জেল হল, কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই জেলের মধ্যে সে আত্মহতা করল।

    ছোটবেলা থেকেই এই ভাইবোন চুরি করা শিখেছিল। ওদের মা ছিল দোকান বাজার থেকে জিনিষপত্র সরাতে সিদ্ধহস্ত। মাকে দেখতে দেখতে এরা দুজনে মায়ের চেয়েও পাকা চোর হয়ে উঠল। তারা দশ বছর বয়সে বাবা মাকে হারিয়ে অতি বন্য জীবন যাপন করছে। চুরি চামারি করে খাবার দাবার জোগাড় করে। পুলিশ এবং উপদেশদাতাদের সব সময় এড়িয়ে চলে। দুজনেই খুব চালাক-চতুর। সারাক্ষণ ব্ল্যাকমেলের ছুতো খোঁজে, সুযোগ পেলেই কামড় বসায়। বোনটা সারাক্ষণ রূপ দেখিয়ে বেড়ায় আর কোনো বুদু ফাঁদে পা দিলেই ভাই এসে টুটি ধরে শেষ কানাকড়িটুকু কেড়ে নেয়। ছোঁড়াটা মহা-পোক্ত। আর একটা মেয়েকে দলে নেওয়ার মতলবটাও মন্দ নয়, অনেক কাজে লাগতে পারে।

    কিছুক্ষণ ভেবে ক্র্যামার বললেন, আমি স্যানফ্রান্সিসকো গিয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করে যদি ভাল লাগে তাহলে ওদের দলে নিয়ে নেব। ঠিক আছে?

    আমি কথা বলে রাখব। এর পেছনে তুমি আছ শুনলেই ওরা ছুটে আসবে।

    সে তো আসবেই। তবে কাজটা এখুনি ওদের কাছে ফাস কোরো না, মো। আমি আগে ওদের দেখতে চাই। জানিও যে, বিগ জিম ক্র্যামারের অধীনে কাজ করার একটা সুযোগ পেতে পারে।

    .

    একটা ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দিয়ে চিতা ক্রেন দাঁড়িয়েছিল। ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে। সে লাল রং করা পুরুষ্ঠ ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে রাস্তার ওপারে গিজা ক্লাবের গেটের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে।

    রাত তিনটে, এক্ষুনি খদ্দেররা বেরোবে তাদের একজন না একজন তাকে দেখে এ ফুটপাতে চলে আসবে।

    মেয়েদের তুলনায় চিতা একটু লম্বা, চওড়া কাঁধ, উন্মুক্ত বক্ষদেশ পুরুষদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়, নিটোল নিতম্ব ও দীর্ঘ পা। তার পরনের কালো চামড়ার টাউজার্স তেলে চকচকে দেখাচ্ছে। গায়ে কালো চামড়ার সোয়েটার, তার পিঠের দিকে সাদা রঙের একটি ক্রেন মাছির ছবি আঁকা, যার প্রচলিত নাম হল ড্যাডী লংলেগস। ভাইবোনে সর্বদা এই ছবি আঁকা পোষাক পরে। এ এলাকার গুণ্ডাদের কাছে তাঁরা এজন্য লেদার জ্যাকেটস নামে পরিচিত–লেদার জ্যাকেট হল শস্যবিধ্বংসী ক্রেন মাছির বিষাক্ত লালার নাম।

    চিতা তার খেয়ালমত তার কালো চুলকে সোনালী রঙে রাঙিয়ে নিত। চোয়ালের হাড় উঁচু, বড় বড় কালচে নীল চোখ আর সুঠাম নাক। তাকে সুন্দরী বলা যায় না কিন্তু তার সর্বাঙ্গে রয়েছে সুতীব্র–যৌন আবেদন। তার নষ্টামীও আদিম আকর্ষণে ভরা। দুই চোখ চুম্বকের মত মানুষকে টেনে আনে। সে তাঁর ভাইয়ের মতই নিষ্ঠুর, দুঃসাহসী ও হিংস্র। দুই ক্রেন ভাইবোনের মধ্যে কোনো ভালো জিনিস পাওয়া দুঃসাধ্য। এরা স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী, অসৎ ও বিশ্বাসঘাতক, চরম স্বার্থপর। পরস্পরের প্রতি তাদের অসাধারণ মমতা, তারা দুজনে এক চেহারার যমজ, তাদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি বাঁধত কিন্তু কেউ অসুস্থ বা বিপদগ্রস্ত হলে তখন অন্যজন সর্বদা এগিয়ে আসত। পরস্পরকে তারা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করত। তারা একসঙ্গে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য উপভোগ করত। তাদের মধ্যে একজন একটা টাকা রোজগার করলে স্বভাবতঃই অন্যজন তার আট আনার মালিক-এর ব্যতিক্রম কল্পনাতীত।

    একটা অন্ধকার গলিতে রাস্তার ওপারে তার ভাই রিফ ক্রেন গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোনের চেয়ে সে কয়েক ইঞ্চি লম্বা। বোনেরই মত তার চওড়া–চোয়াল আর উজ্জ্বল কালো চোখ, ছছটেবেলায় মারামারি করতে গিয়ে একবার তার নাক ভেঙেছিল। কয়েক মাস আগে জনৈক শত্রু বাগে পেয়ে তার ডানদিকের চোখ থেকে চোয়ালের নীচ পর্যন্ত ধারালো ক্ষুর দিয়ে চিরে দিয়েছিল। মুখের এই দুটি ক্ষতের জন্য তাকে আরও হিংস্র ও ভয়াবহ দেখায়। ক্ষুরধারীশত্ৰুটির তারাযথাসময়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। আজ স্ত্রীর সাহায্য ছাড়া লোকটির এক পা চলবার সামর্থ্য নেই–মাথায় অজস্র বুটের আঘাত পেয়ে তার মস্তিষ্ক চিরদিনের মত পঙ্গু হয়ে গেছে, দৃষ্টিশক্তিও নেই বললেই চলে। রিফ আর চিতা দুজনেই সর্বদা স্কীবুট পরে থাকে। এ জুতো তাদের পোশাকের সঙ্গে বেশ মানায়। আর রাস্তার লড়াইয়ের সময় অস্ত্র হিসেবেও মারাত্মক কাজ দেয়।

    নাইট ক্লাবের দরজা দিয়ে একটা লোক বেরিয়ে এল। ডাইনে বাঁয়ে তাকিয়ে চিতাকে দেখল। তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে উল্টোদিকে রওনা হল।

    লোক বেরোতে শুরু হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা না একটা লোক তার দিকে এগিয়ে আসবে। দূরে তাই ভাই জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরোটা ছুঁড়ে ফেলে আরো অন্ধকারে সরে গেল।

    নাইট ক্লাব থেকে স্ত্রী পুরুষেরা বেরিয়ে অনেকে গাড়ীতে উঠে দরজা বন্ধ করল। তারপর বেরিয়ে এলেন একটি ছোটখাট লোক। পরনে বর্ষাতি মাথায় গোল টুপি। ভদ্রলোক রাস্তার ওপার থেকে চিতার দিকে তাকালেন, একবার দ্বিধা করে এপারে চলে এলেন। চিতার অভিজ্ঞ চোখ লক্ষ্য করল ভদ্রলোকের দামীবর্ষাতিহাতে তৈরী জুতো আর ঝকঝকে স্ট্রাপওয়ালা সোনার হাতঘড়ি। লোকটা শিকার হিসেবে মন্দ হবে না।

    লোকটির সর্বাঙ্গে কেমন যেন এক বেপরোয়া সবজান্তা ভাব। হাল্কা পায়ে হাঁটছেন। রোগা ধূর্ত মুখের তামাটে রং দেখে বোঝা যায় ভদ্রলোককে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হয়।

    ভদ্রলোক এসে বললেন, সখি, কারো জন্যে পথ চেয়ে আছে নাকি?

    নাক দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া বার করে একটুকরো পেশাদারী হাসি হেসে বলল, হয়ত ছিলাম কারো পথ চেয়ে। কিন্তু এতক্ষণে বোধহয় তার দেখা পেয়েছি। কি বল?

    চিতাকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে ভদ্রলোক বললেন, ঠিক আছে, চলো বৃষ্টি থেকে বেরোনো যাক। আমার গাড়ীটা ঐখানে আছে। একটা নির্জন, নিরিবিলি জায়গায় গেলে কেমন হয়? অনেক গল্প করা যাবে।

    হেসে চিতা বলল, মন্দ মতলব নয়। জায়গাটা কোথায়, আর ঠিক কতটা নির্জন?

    তিনি চোখ টিপে বললেন, একটা হোটেলে গেলে কেমন হয় সখি? ওড়াবার মত কিছু টাকা আমার পকেটে আছে। ছোট্ট কোনো নিরিবিলি জায়গা তোমার জানা আছে?

    নিতান্ত সহজ হয়ে আসছে কাজটা। চিতা একটু চিন্তা করে বলল, বেশ তো, আমার আপত্তি নেই। আমার একটা ভালো জায়গা জানা আছে। চলো সেখানে যাই।

    জ্বলন্ত সিগারেটটাকে আঙুলের টোকায় শূন্যে ছুঁড়ে দিল চিতা। এটা একটা সংকেত। যাতে রিফ বুঝতে পারে সে লোকটাকে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।

    ভদ্রলোকের বুইক কর্টিল গাড়ীতে দুজনে উঠল। চিতা পাশে বসতেই তিনি বললেন। তোমার পোশাকটা তত বড় অদ্ভুত। তোমায় বেশ মানিয়েছে। ড্যাডী লংলেগের ছবিটা লাগিয়েছ কেন?

    বিরক্ত ভরে চিতা বলল, ওটা আমার পরিচয় চিহ্ন। সোনার হাতঘড়িটার দিকে চিতা একবার তাকাল। অন্ততঃ এটা বাগাতে পারলেও খাটুনি পুষিয়ে যাবে।

    তারা হোটেলে পৌঁছে একটা ঘরে ব্যবস্থা করে ফেলল। রিসেপশন ডেস্কের বয়স্ক, নোংরা কেরানীটি চিতার দিকে চোখ টিপল। চিতাও চোখ টিপল। দুজনেই জানে যে রিফ কয়েক মিনিটের মধ্যেই আসবে।

    তারা মাঝারী সাইজের একটা ঘরে এল। ভেতরে একটা জোড়া বিছানা। গোটা দুয়েক চেয়ার একটা ওয়াশ বেসিন আর একটা রোঁয়াওঠা কার্পেট।

    বিছানায় বসে চিতা ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে হাসল। তিনি ততক্ষণে বর্ষাতি আর টুপি খুলে ফেলেছেন। এখনতার গায়ে একটা তৈরীকরাকালোসুট। চেহারা দেখে বেশ পয়সাওয়ালামনেহয়।

    চিতা বলল, আমার টাকাটা দাও দেখি, তিরিশ ডলার।

    কৌতুকের হাসি হেসে ভদ্রলোক জানালার দিকে গেলেন। নোংরা পর্দাটা সরিয়ে বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় চোখ রাখলেন। দেখতে পেলেন রিফ মোটর সাইকেল থেকে নামলো।

    চিতা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, কী দেখছ ওখানে? এখানে এসো–আমার টাকাটা চাই।

    ভদ্রলোক বললেন, টাকা পাবে না সখি। তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই। আমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

    আমার ভাই? কী আজেবাজে বকছো?

    গত হপ্তায় আমার এক বন্ধুকে তোমরা ফাঁদে ফেলেছিলে। তাকে তুমি এখানেই টেনে এনেছিলে। তার সব টাকাকড়ি নেবার পর তোমার হতচ্ছাড়া ভাই তাকে প্রচণ্ড মার দিয়েছিল। এবার আমার পালা।

    চিতা লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখল, নিতান্ত নিরীহ চেহারা। ছোট দেহ, ওজনেও কম, রিফ এক ঘুষিতে একে সাবাড় করতে পারবে।

    সে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, ছেলেমানুষি করতে যেও না বীরপুরুষ। আমরা গোলমাল চাই না। কিন্তু সামলে না চললে বিপদে পড়বে। তোমার মত দশটাকে রিফ একা খতম করতে পারে। যদি হাসপাতালে যেতে না চাও তোমার মানিব্যাগ আর রিস্টওয়াচ দিয়ে দাও। আমি রিফকে বলব যেন তোমার গায়ে হাত না দেয়।

    ভদ্রলোক হেসে বললেন, লেদার জ্যাকেট তাইনা!দুই ধূর্ত, হিংস্র তরুণ তরুণী-যাদের গায়ের জোর ছাড়া একটি পয়সা রোজগারের ক্ষমতা নেই। সখি, আজ আমি তোমাদের পাওনা মিটিয়ে দিতে এসেছি।

    রিফ ঘরের দরজাটা সজোরে খুলে ঘরে ঢুকল। সাধারণতঃ সে ঘরে ঢোকার আগেই চিতা সব জামাকাপড় খুলে বিছানায় শুয়ে থাকে। যাতে রিফ এসেই রেগে আগুন হয়ে যাওয়া ভাইয়ের ভূমিকা করতে পারে। আজ তাকে সমস্ত পোশাকশুদ্ধ বসে ছোট্ট মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিফ থমকে দাঁড়াল।

    হাসি মুখে ভদ্রলোক বললেন, এসো, খোকা, এসো। তোমার জন্য আমি বসে আছি।

    রিফ চিতার দিকে তাকাতে সে একটু অস্বস্তির সঙ্গেই বলল, আমি জানি না বাপু। লোকটার মাথা খারাপ আছে মনে হয়।

    দরজা বন্ধ করে রিফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলল, ঠিক আছে। দোস্ত, হাতঘড়ি আর মানিব্যাগটা বার করো। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমোবার সময় হল।

    চাপা হাসি হেসে ভদ্রলোক বললেন, ঘুমের জন্য আমার তেমন তাড়া নেই।

    ভদ্রলোকটির দুঃসাহস দেখে এবার রিফ ক্ষেপে গেল,দুপা এগিয়ে,দাঁত খিঁচিয়ে বলল, চটপট করো।

    ভদ্রলোক একটু পিছিয়ে, মানিব্যাগ চাই? বলেই পকেটে হাত ঢোকালেন।

    চিতা ধারালো গলায় বলল সাবধান। একটি কালো পিস্তল বার করে ভদ্রলোক সেটা রিফের দিকে উঁচিয়ে ধরে বলেন, কীরে শয়তান! এরকম প্যাঁচে পড়বি বলে ভাবিস নি, তাই না?

    রিফ ভয়ংকর মুখভঙ্গি করে বলল, ওটা ফেলে দে, নইলে মহা বিপদে পড়বি।

    ডানদিকে একটু ভড়কি দিয়েই সহসা বাঁদিক দিয়ে সে আক্রমণ করল। চিতার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। একী পাগলামি!

    রিফ পাক খেয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে পিছু হটে এল। অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র গন্ধ বেরোল। ততক্ষণে রিফ মাটিতে বসে দুহাতে চোখ ঘষতে ঘষতে আহত জন্তুর মত আর্তনাদ করছে। চিতা ওঠবার চেষ্টা করতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে তার দিকে গ্যাসপিস্তলটা তুলে ধরল। দুহাতে চোখ ঢাকতে গিয়ে একরাশ অ্যামেনিয়া মুখে এসে লাগল। চোখ বাঁচল বটে। কিন্তু নিশ্বাসের সঙ্গে অনেকটা জ্বলন্ত গ্যাস ফুসফুসে ঢুকে গেল। চীৎকার করতে করতে সে মাটিতে পড়ে গেল।

    সন্তুষ্ট চিত্তে ছোট মানুষটি বর্ষাতিটা নিয়ে পরলেন, বেশ কায়দা করে হেলিয়ে টুপিটা মাথায় দিলেন। একবার ভূপতিত ক্রেন ভাইবোন দুজন কেমন কাটা পাঁঠার মত ছটফট করছে দেখে বেরিয়ে গাড়ীতে গিয়ে উঠলেন।

    ভদ্রলোক যে কে ছিলেন, ক্রেনেরা জানতেও পারল না। কিন্তু তাদের শাস্তির খবর ছড়িয়ে পড়তে যারা এর আগে তাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছে, তারা তাকে সুবিচারের দূত হিসেবে মনে মনে শ্রদ্ধা জানাল।

    .

    ০৪.

    গাড়ীতে স্পেশাল এজেন্ট এর ম্যাসন বসেছিল। রেজিস কোর্ট হোটেলের প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে। স্যান ফ্রান্সিসকোর ভ্যান নোল অ্যাভিনিউয়ের পাশের এক গলিতে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর হোটেল।

    ক্র্যামার যে এই হোটেলে এসে উঠেছেন গত সন্ধ্যায় স্পেশাল এজেন্ট হ্যারী গার্সন স্থানীয় পুলিশ অফিসে এই খবর পাঠায়, সেই থেকে গার্সন এবং ম্যাসন পালা করে হোটেলটির ওপর নজর রাখছে।

    সকাল এগারোটা বেজে কুড়ি মিনিট। ম্যাসন সকাল থেকে বসে কিন্তু তেমন কিছু চোখে পড়েনি। তবে ম্যাসন ধৈর্য হারাবার পাত্র নয়। সে অনেকবার নানান আজেবাজে হোটেলের সামনে দিনের পর দিন পাহারা দিয়েছে। সে জানে, সে যদি অপেক্ষা করে, তবে আজ হোক কাল হোক, একটা না একটা কিছু ঘটবেই।

    ঠিক সাড়ে এগারোটায় একটা ট্যাক্সী এল, আর তা থেকে নামল স্বয়ং মো জেগেটি। সে ট্যাক্সীর ভাড়া মিটিয়ে ঝটপট ভেতরে ঢুকে গেল। ম্যাসন তার রেডিও- টেলিফোনের মাইকে ডেনিসনকে খবর দিল।

    ডেনিসন বললেন, ওদের ওপর নজর রাখো, এবং আমি টমকে পাঠাচ্ছি। জেগেটি বেরোলেই টম তার পিছু নেবে। আর তুমি সামলাবে ক্র্যামারকে।

    দুজন বয়স্কা মহিলা হোটেলে ঢুকলেন। তার কিছুক্ষণ পরে ট্যাক্সী করে একটি মেয়ে এল। সঙ্গে একটি ছোট ছেলে। তারাও হোটেলে ঢুকল।

    একটা সিগারেট ধরিয়ে আরাম করে বসে ম্যাসন ভাবল, ওদের সঙ্গে ক্র্যামারের নিশ্চয় কোনো সম্পর্ক নেই।

    একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মনে হয় যমজ ভাইবোন, তারা বারোটা বাজবার কয়েক মিনিট আগে এল। মেয়েটির চুল সোনালী রঙের। পরনে সত্তা সুতির পোষাক, পায়ে কোঁচকান সাদা জুতো আর চোখে সানগ্লাস। ছেলেটির গায়ের রং তামাটে, পরনে গাঢ় সবুজ রঙের প্যান্ট ও খোলা গলার সাদা শার্ট। কাঁধের ওপর বাদামী রঙের হালকা জ্যাকেট ঝোলান। তার চোখেও কালো চশমা। যেন কমবয়সী ছাত্রছাত্রী, ছুটি উপভোগ করতে বেরিয়েছে। ম্যাসন একবার নিরুৎসাহ ভাবে তাদের দেখল। মো বুদ্ধি করে বলে দিয়েছিল যে ক্র্যামারের সঙ্গে দেখা করবার সময় তারা যেন তাদের চিরাচরিত পোশাক না পরে। এটুকুর জন্যেই তারা পুলিশ অফিসারাটির মনে কোন সন্দেহ না জাগিয়েই হোটেলে ঢুকে পড়ল।

    চিতা চাপা গলায় ভাইকে বলল, রাস্তার ওদিকে গাড়ীর ভেতর লোকটাকে দেখেছিস? টিকটিকি হতে পারে।

    রিফ বলল হুম দেখেছি। জেগেটিকে বলতে হবে। কিছুই নয় হয়ত এই ব্যাটা প্রাইভেট ডিটেকটিভ কোনো এক ডাইভোর্স কেসের মাল-মশলা জোগাড় করছে।

    মো তাদের বলে দিয়েছিল দোতলায় ১৪৯নং ঘরে গিয়ে দুবার টোকা দিয়ে অপেক্ষা করতে।

    লাউঞ্জে কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি বসেছিলেন। তারা দুজনে সিঁড়ির দিকে এগোতে তারা সবাই তাকিয়ে দেখলেন।

    একজন বেয়ারা তাদেরকে দেখে উঠতে গিয়েও থেমে গেল। ভেবে দেখল এরা দুজনে রাস্তা চেনে নিশ্চয়।

    ১৪৯ নং ঘরের সামনে চিতা আর রিফ পৌঁছল। দুবার টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল। মো ইঙ্গিতে তাদের ভেতরে ঢুকতে বলল।

    বিগ জিম ক্র্যামার জানালার পাশে একটা আরাম কেদারায় বসে, ঠোঁটের ফাঁকে ধরা জ্বলন্ত সিগারেট। ভাইবোনে ঢুকতেই তাদের ওপর কড়া নজর বুলিয়ে নিলেন। তারা দুজন এমন ভঙ্গীতে ঢুকল যেন নতুন পরিবেশে অনভ্যস্ত দুই জন্তু। মোসত্যিই বলেছে পাকা শয়তান। চিতার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে, দারুন মেয়েটা কী বুক একখানা।

    ক্র্যামারের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে রিফ মো-কে বলল, হোটেলের বাইরে গাড়ীতে একটা ডিটেকটিভ বসে আছে–প্রাইভেট ডিটেকটিভ বা পুলিশও হতে পারে।

    মো ফ্যাকাশে মুখে ক্র্যামারের দিকে তাকাতেই তিনি শান্তভাবে বললেন, চুলোয় যাক। আমি লোকটাকে দেখেছি। ওরা নিশ্চয়ই দেখতে চায় জেগেটি কখন এসে আমার সঙ্গে মোলাকাৎ করে–কিছুই দেখছি ওদের চোখ এড়ায় না। তেমন দরকার হলে আমি ওর চোখে ধুলো দিয়ে উধাও হয়ে যাব। গত চলিশ বছর ধরে ওদের চোখে ধুলো দিয়ে আসছি।

    ক্রেন ভাইবোনও ক্র্যামারকে খুটিয়ে দেখতে কসুর করলনা। ছোটবেলায় তার সম্বন্ধে খবরের কাগজে অনেক কিছু পড়েছিল। জানত একদা কুখ্যাত দস্যসম্রাট ছিলেন, পাপের পথে প্রচুর রোজগারও ছিল–প্রায় ষাট লক্ষ ডলার, আজ ক্র্যামার জরাগ্রস্ত, দেখে হতাশ হল তারা। সিগার মুখে বসা ষাট বছরের এক মোটা লোককে কল্পনাও করতে পারেনি, ভেবেছিল সাংঘাতিক চেহারার এক মানুষ দেখতে পাবে।

    তোমরা বোসো, ক্র্যামার বললেন, দু-হপ্তা আগে যে অ্যামোনিয়া গ্যাসে রিফের মুখ ঝলসে দিয়েছিল। পরে দেখা হতে ক্র্যামার জিজ্ঞেস করলেন। তোমার মুখে আবার কি হল?

    কামড়ে দিয়েছিল একটা মাগী, রিফ বলল। ক্র্যামারের মুখ ও চোখের দৃষ্টি জ্বলে উঠল।

    তিনি গর্জে উঠলেন, আমি প্রশ্ন করলে ভদ্রভাবে জবার দিবি-বুঝেছিস?

    নিশ্চয়ই, হ্যাঁ, হা, রিফ বলল, আমার মুখে কী হয়েছে তাতে আপনার কিছু এসে যায় না।

    ক্র্যামারের দিকে তাকাল জেগেটি। আগেকার দিন হলে একটি ঘুষিতে মুখ ভেঙ্গে দিতেন। এসব বাদ দিয়ে বললেন, এবার তোমরা শোন, আমি একটা ডাকাতির প্ল্যান করেছি। ইচ্ছে হলে আসতে পার। কোনো ঝুঁকি নেই, আর মজুরি পাঁচ হাজার ডলার। রাজী আছে?

    বুঝতে পেরেছিল চিতা ক্র্যামার ঘায়েল হয়েছেন। সহজাত প্রবৃত্তি দিয়েই বুঝে নিল পুরুষের মনে লালসা জাগাতে পেরেছে সে। ক্র্যামারের বেলাতেও ভুল হয়নি।

    ঝুঁকি নেই কোন? সে জানতে চাইল, তাহলে ঐ পুলিশটা পিছু নিয়েছে কী জন্যে?

    ওসব কথা ছাড়, তোমরা আসতে চাও? পাঁচটি হাজার ডলার পাবে। মনস্থির কর।

    কাজটা কী রিফ বলল?

    ক্র্যামার বললেন, যতক্ষণ না দলে আসছ, কিছুই জানানো যাবে না, আর দলে যদি একবার ঢোকো, আর বেরোতে পারবে না।

    পরস্পরের দিকে ভাইবোন তাকাল, বলল দুহপ্তা খারাপ কেটেছে। এক ভদ্রলোক তাদের অ্যামোনিয়া দিয়ে শায়েস্তা করেছে। এটা ছড়িয়ে পড়ায় মাথা হেট হয়েছে, বিদ্রূপ করছে। আর চিতাকে জ্বালাতন করে মারছে, কিছু দিন আগেও তাকে ছোবার সাহসটুকু ছিল না। পাঁচ হাজার অংকটা শুনে মাথা ঘুরে গিয়েছিল তাদের। একসঙ্গে এত টাকা স্বপ্নেও ভাবেনি। এতদিন গা বাঁচিয়ে খুশীতে থেকেছে। আজ ক্র্যামারের পাল্লায় পরে বিপদের গ্রাসে পড়তে হবে।

    এতগুলো টাকার লোভ সামলানো সহজ নয়। রিফ চিতার দিকে তাকালে চিতা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

    রিফ বলল, ঠিক আছে আমরা দলে আসছি, কাজটা কী?

    ক্র্যামার মো কে যা বলেছিলেন, এদেরকেও তাই বললেন। কেবল নামগুলো বললেন না, বললেন যে, মেয়েটির বাবার প্রচুর টাকা আছে এবং পুলিশের ঝামেলা না করে মুক্তিপণ মেটাতে দ্বিধা করবেন না।

    ভাইবোনে আরেকবার পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রিফ বলল, এ ব্যাপারে জড়িয়ে পড়লে আমাদের প্রাণদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। পাঁচ হাজারে হবে না, প্রাণ হারাবার ঝুঁকি যখন নিতে হচ্ছে, আমাদের এক একজনের পাঁচ হাজার ডলার চাই।

    ক্র্যামারের মুখ লাল হয়ে গেল। আমার কথা কানে গেল না? বললাম না বিপদের সম্ভাবনা নেই?

    রিফ বলল, কাজটা মেয়ে চুরির। হাজারটা গণ্ডগোল বাঁধতে পারে। কোনো কিছু করেই পুলিশের ঝামেলা এড়ানো যাবে না। দশ হাজার না পেলে আমরা এ কাজ ছোব না।

    ক্র্যামার চেঁচিয়ে উঠলেন, বেরিয়ে যাও তাহলে, দুজনেই এক্ষুনি বেরোও। তোমাদের মত ঢের ঢের গুণ্ডা আছে যারা পাঁচ হাজারেই করবে।

    রিফ শান্ত গলায় বলল, দশ হাজার ডলার পেলে আমরা পরিপাটিভাবে কাজটা সেরে দিতে পারি। কোনোরম খুঁত থাকবে না।

    গর্জে উঠলেন ক্র্যামার, বেরিয়ে যাও। শুনতে পাচ্ছে। বেরিয়ে যাও!

    টাকাটা তো আপনার পকেট থেকে যাচ্ছে না, অত চটবার কি আছে? আপনি মেয়েটার বাবার কাছে আরো কয়েক হাজার না হয় বাড়িয়ে দিন। তাহলেই তো আমরা খুশী মনে কাজটা সেরে দিই।

    পাঁচ হাজার ডলার নেবে তো নাও, নইলে একটি পয়সাও পাবে না। ক্র্যামারের ডান হাত কোটের কাছাকাছি সরে এল। ওখানে যে একটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে বুঝতে অসুবিধে হল না।

    রিফ উঠে বলল, চল্ চিতা, কাজকর্ম পড়ে রয়েছে।

    দাঁড়াও একটু, মো বলে উঠল। ক্র্যামারের দিকে তাকিয়ে, তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে। জিম, বলে সে শোবার ঘরে গেল।

    রিফের দিকে অগ্নিদৃষ্টি রেখে ক্র্যামার ঝড়ের বেগে পাশের ঘরে গিয়ে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।

    তিনি দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললেন, কী হয়েছে?

    মো শান্তভাবে বলল, ঠাণ্ডা হও জিম, পরে আমায় দোষ দিও না। এরা অতি ধূর্ত। এদের এভাবে তাড়িয়ে দিলে তুমি কিন্তু ভুল করবে। এ কাজ করার ক্ষমতা এদের আছে, দশ হাজার ডলার দেওয়া যায়। তাছাড়া এখন আর এদের টাকা না দিয়ে আমাদের উপায় নেই। ওরা জেনে গেছে আমরা এক মেয়ে চুরির মতলব আঁটছি। ওরা সাপের মত খল। ওরা যা চায় দিয়ে দাও–ওরা মুখ বুজে কাজ তুলে দেবে। কিন্তু এখন যদি বার করে দাও ওরা রাস্তার ওপারে পুলিশের টিকটিকিটার কাছে সব ফাঁস করে দেবে। পুলিশ ওদের চেনে না-কিন্তু আমাদের খুব চেনে। ওরা আমাদের অনায়াসে বিপদে ফেলতে পারে।

    ক্র্যামারের মুখ টকটকে লাল। বিশাল দুহাত একবার মুষ্টিবদ্ধ হচ্ছে, একবার খুলছে। রাগে কাঁপা গলায় বললেন, তুমি কী বলতে চাও ঐরকম একটা হতচ্ছাড়ার মুখে মুখে তর্ক করা আমি সয়ে যাব? আমি তোক লাগিয়ে ওকে খুন করাবো। আমি

    তুমি কাকে লাগাবে? আজ তো আর আমাদের দলের সেই সব খুনেদের কেউ কাছে নেই। অন্য কাউকে দিয়ে করালে তাকেও তোমার টাকা দিতে হবে কিন্তু ততক্ষণ কিছু করার থাকবে না। পুলিশ একবার কোনক্রমে জানতে পারলে সব শেষ।

    ক্র্যামার জানালার দিকে গিয়ে মোর দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ালেন। একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা হৃদপিণ্ডের নীচে। তিনি গত কয়েক বছরে এতটা উত্তেজিত হননি। জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলেন। ক্রমশঃ মুখ থেকে বাড়তি রক্ত নেমে গেল, হৃদস্পন্দনও স্বাভাবিক হয়ে এল।

    মো অস্বক্তির সঙ্গে তাকিয়ে থাকে।

    ক্র্যামার ঘুরে দাঁড়িয়ে, তোমার কি সত্যি মনে হয় ওরা কাজটা তুলে দিতে পারবে?

    মো বলল, আমি জানি ওরা পারবে।

    ক্র্যামার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বেশ ঠিক আছে। কিন্তু আবার যদি কোনো গণ্ডগোল করে। আমি নিজের হাতে ওদেরকে গুলি করে মারব।

    মো মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল, তাই কোরো, জিম। কিন্তু এখন চলল। ওদের সঙ্গে আবার কথা বলা যাক।

    তারা বসবার ঘরে ফিরে গেল। রিফ নির্বিকার মুখে সিগারেট ধরাচ্ছে। চিতা চেয়ারে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়েছিল। দুজনে ঘরে ঢুকতে সে সোজা হয়ে কাপড় ঠিক করল, কিন্তু তার আগেই ক্র্যামার তার নিটোল অপরূপ সুন্দর পায়ের ওপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে গেছে।

    মো বলল, আমরা কথা বলে দেখলাম। তোমরা দুজনেই পাঁচ হাজার ডলার করে পাবে। অতগুলো টাকা যখন নিচ্ছ, কাজটা কিন্তু ঠিকমত তুলে দেওয়া চাই।

    কাজ আমরা ঠিকই তুলে দেব। ক্র্যামারের দিকে তাকিয়ে রিফ বলল। সে বুঝেছিল যে ক্র্যামারের প্রথম প্রস্তাব প্রত্যাখান করাটা চিতারকাছে পাগলামি ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। একবার তারও খটকা লেগেছিল যে সে ভুল করল কিনা। কিন্তু এই বুড়ো ঘাঘুটাকে সত্যিই সে ধাপ্পা দিতে পেরেছে। বলুন কি করতে হবে–আমরা করে দেব।

    ক্র্যামার বসলেন, তার বুকের বাঁদিকে মোড়ানো ব্যথাটাও ছাড়েনি। চিতার ধবধবে সাদা উরুর কথা ভেবে বার বার চিতার ওপর নজর যাচ্ছিল।

    তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি। এখন থেকে আমি যা বলব, সেইমত কাজ চাই। তোমাদের কোনোরকম ঝামেলা আমি বরদাস্ত করব না। বুঝেছ?

    আমাদের কাজে কোনো খুঁত থাকবে না। আপনি নিশ্চিত থাকুন।

    রিফের নির্বিকার ক্ষতচিহ্নে ভরা মুখ আর সাপের মত নিষ্প্রাণ চোখদুটো তাকে বিচলিত করল।

    ঠিক আছে। বলে একটা সিগার ধরিয়ে আবার শুরু করলেন, শোনো এবার প্ল্যানটা। মেয়েটাকে চুরি করা নিতান্তই সহজ কাজ। অনেকদিন যাবৎ ওর ওপর আমার নজর আছে। প্রতি শুক্রবার মেয়েটি গাড়ী চালিয়ে স্যান বার্নাডিনো শহরে চুল বাঁধতে যায়। তারপর শহরেই কাট্রি ক্লাবে লাঞ্চ সেরে বাড়ি ফেরে। গত দুবছর ধরে ও একই রুটিন মানছে। আবোহেড হ্রদের কাছে এক বিরাট এস্টেটে ও বাবার সঙ্গে থাকে। এস্টেটের মাঝখানে তাদের প্রাসাদ থেকে একটা তিন মাইল লম্বা প্রাইভেট রাস্তা চলে গেছে স্যান বার্নাডিনো গামী রাজপথ পর্যন্ত। এই প্রাইভেট রাস্তার শেষে একটি লোহার গেট আছে। বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে এলে এই গেট থেকে টেলিফোনে খবর দিতে হয়। তখন প্রাসাদ থেকেই একজন কর্মচারী গেটের বৈদ্যুতিক তালা খুলে দেয় এবং গেটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত মারাত্মক বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।

    মেয়েটি সকাল নটায় বাড়ী থেকে বেরোয়। গেটে পৌঁছয় নটা দশ। চিতার দিকে তাকিয়ে ক্র্যামার বললেন, এ কাজটা তোমার, মন দিয়ে শোনো। তুমি নটার সময় গেটের বাইরে থাকবে। তোমার সঙ্গে একটা গাড়ী থাকবে। গাড়ির ব্যবস্থা আমি করব। নটা দশ বাজলেই তুমি তোমার গাড়ির বনেট খুলে ফেলবেঠিক যেন গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো কোরো না। মো তোমার আড়ালে থাকবে যেখানে একটা বড় ঝোঁপ আছে। গেট খোলবার জন্য মেয়েটাকে গাড়ি থেকে। নামতে হবে। তখন তুমি গিয়ে তাকে বলবে যে, তোমার গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে, সে যদি তার গাড়ি করে তোমায় কাছাকাছি কোনো গাড়ি মেরামতের দোকানে পৌঁছে দিতে পারে তো বড় ভাল হয়। তুমি একলা মেয়ে–সে নিশ্চয়ই নিঃসন্দেহে না বলবে না। তুমি তার গাড়ি চড়বার পর সে তোমাকে স্যান বার্নাডিনোর দিকে নিয়ে যাবে। মো তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে তোমার সেই গাড়িটায় চড়ে তোমাদের পিছু নেবে।

    ক্র্যামার একটু থেমে চিতার দিকে চেয়ে আবার বললেন, এইবারে তোমার আসল কাজ শুরু হবে। রাস্তার মাঝখানে মেয়েটাকে সমঝিয়ে দিতে হবে যে তোমার কথামত কাজ না করলে সে মহাবিপদে পড়বে। সে জন্য তুমি এই জিনিসটা ব্যবহার করবে। ক্র্যামার কোটের পকেট থেকে একটি ছোট বোতল বার করে বললেন, এর ভেতরেসালফিউরিক অ্যাসিড আছে। বোতলের মাথায়। এই ঢাকনির কাছে চাপ দিলেই পিচকিরির মত অ্যাসিড বেরিয়ে আসবে। তুমি তাকে বলবে যে তোমার কথা না শুনলে অ্যাসিড ছুঁড়ে তার মুখের বারোটা বাজিয়ে দেবে। গাড়ির ভেতর চামড়ার আচ্ছাদনের ওপর খানিকটা অ্যাসিড স্প্রে করে একটু নমুনা দেখিয়ে দেবে। সে নিজের চোখে অ্যাসিডের কার্যকারিতা দেখলে আর ঝামেলা করবে না।

    চিতা সম্মতি জানিয়ে বোতলের জন্য হাত বাড়িয়ে বলল, ঠিক আছে। নেহাৎ সোজা ব্যাপার। এ যন্ত্রটা আমি আগেও ব্যবহার করেছি।

    মো ক্র্যামারের দিকে তাকিয়ে, কেমন? বলেছিলাম না।

    তুমি তাকে ম্যাকলীন স্কোয়ারে গাড়ি পার্ক করবার জায়গাটিতে নিয়ে যেতে বলবে। গাড়ি ঢোকাতে কোন অসুবিধে হবেনা। মো তোমাদের পেছনে থাকবে। তুমি আর মেয়েটি গাড়ি থেকে বেরিয়ে মোর গাড়ির পেছনের সীটেবসবে। মেয়েটা যেন পালাবার চেষ্টা না করে দেখবে,বুঝেছ?

    ক্র্যামার এবার মোর দিকে তাকিয়ে, তুমি ওদের নিয়ে সোজা নষ্টনীড়েচলে যাবে। তোমাকে ম্যাপে দেখিয়েছি, তুমি জানো ঠিক জায়গাটা কোথায়। দুপুর নাগাদ তোমরা ওখানে পৌঁছে যাবে। ঠিক আছে?

    হ্যাঁ।

    চিতা বলল, নষ্টনীড়? সেটা আবার কী?

    ক্র্যামার রিফের দিকে ফিরে বললেন, কান পেতে শোনো। এবার তোমার ভূমিকা। একাজটার একমাত্র কায়দা হল এমন এক জায়গায় মেয়েটাকে লুকিয়ে রাখা, যেখানে কেউ তাকে খোঁজবার কথা ভাববে না। আর এমন একজনকে জোগাড় করা যে আমাদের হয়ে মুক্তিপণ সংগ্রহ করে আনবে।কারণ আমাদের মধ্যে কেউ ওর বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাবেনা। তোমরা কখনও ভিক্টর ডারমটের নাম শুনেছ?

    চিতা বলল, ঐ নামের একজন নাট্যকার আছে। তার কথা বলছেন না নিশ্চয়?

    ক্র্যামার বললেন, তার কথাই বলছি। লোকটার ভালোনাম আছে। ওকে সবাই চেনে। ওকেই পাঠাব মেয়েটির বাবার সঙ্গে কথা বলতে। সে ভদ্রলোককে রাজী করাবে টাকাটা দিতে আর, পুলিশের ঝামেলা না করতে।

    রিফ মুখ বেঁকিয়ে বলল, কী দরকার পড়েছে তার?

    ক্র্যামার বললেন, কারণ তার একটি সুন্দরী স্ত্রী ও একটি ছোট বাচ্চা আছে। তুমি, মো আর চিতা, তিনজনে ডারমটের বাড়িতে জুড়ে বসবে। তোমাদের কাজ হবে ভদ্রলোককে এমন ভয় পাওয়ানো যাতে ও আমাদের অবাধ্য হবার সাহস না পায়। ক্র্যামার রিফের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, মো একাজের জন্য উপযুক্ত লোকই ঠিক করেছে সন্দেহ নেই। এই চেহারা নিয়েও যদি স্ত্রী ও শিশু শুদ্ধ একজন মানুষের ভয় ধরিয়ে দেওয়া অসম্ভব হয় তাহলে আর কিছু বলবার নেই।

    রিফ বলল, ঠিক বুঝলাম না। এ লোকটা এর মধ্যে আসছে কি করে?

    ক্র্যামার বুঝিয়ে বললেন, লোকটি একটি নাটক লিখতে বসেছে। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক ওকে একটি র‍্যাঞ্জ হাউস ভাড়া দিয়েছেন। সে বাড়ি আমি দেখেছি। ওরকম একটা যাচ্ছেতাই, নির্জন সৃষ্টিছাড়া বাড়ির কথা ভাবাই যায় না। তবে শান্তিতে, নির্জনে বসে নাটক লেখার পক্ষে আদর্শ জায়গা। বাড়িটার নাম নষ্টনীড়। ডারমট এখন ওখানেই আছে। আর তার স্ত্রী, সন্তান, একজন ভিয়েতনামী চাকর আর একটা অ্যালসেশিয়ান কুকুর আছে।ক্র্যামার রিফের দিকে আঙুল তুলে ধরলেন।তোমার কাজ হবে কুকুর এবং চাকরটার ব্যবস্থা করা, আর তারপর ডারমটদের মনে যথাসম্ভব ভয় ধরিয়ে দেওয়া। বুঝেছ?

    রিফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কুকুরটার ব্যবস্থা আমি করতে পারি কিন্তুচাকরটার ব্যবস্থা করব মানে কী?

    ক্র্যামার বললেন, এই চাকরবাকরগুলো নানান ঝামেলা বাধাতে পারে। তোমাকে সারাক্ষণ ডারমটদের পাহারা দিতে হবে, সুতরাং চাকরটাকে তার ঘরের ভেতর বন্ধ রাখাই নিরাপদ। নইলে সে বিপদ বাধাতে পারে।

    রিফ সম্মতি জানাল।

    তুমি টেলিফোনের তার কেটে দেবে আর গাড়িগুলোকে অচল করে দেবে। ওদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র থাকবে সেগুলো সরিয়ে দেবে। তারপর মো পৌঁছনো পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে থেকো। মেয়ে চুরির আগের দিন মাঝরাতে তুমি নষ্টনীড়ে পৌঁছবে।

    জানালার কাছে গিয়ে রিফ প্রশ্ন করল, নীচের ঐ টিকটিকির ব্যাপারে কী করা যায়?

    কিছু না। তোমরা দুজন নীচের বার-এ গিয়ে দুপাত্র পানীয় নিয়ে বসো। আধঘণ্টা ওখানে কাটিয়ে সোজা বেরিয়ে যাবে। নীচের লোকটা তোমায় চেনে না। কিন্তু সাবধান, কেউ যেন পিছু না নেয়। মো এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছে। ওরা পিছু নেবে। এবং এর আগেও অনেক পুলিশ মোর পিছু নিয়েছে। লাঞ্চ শেষ করে আমি বেরোব। আমারও পিছু নেবে ওরা। কিছু করতে পারবে না।

    ক্র্যামার ব্রিফকেস খুলে একটা মোটাসোটা খাম খুলেরিফের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, এরমধ্যে সব আছে-ম্যাপ, সময়ের খুটিনাটি, আর সমস্ত প্ল্যানের বিবরণ। মুখস্ত করা হয়ে গেলে সব পুড়িয়ে ফেলবে।কাজটা পরের হপ্তায়। ইতিমধ্যে মো গা ঢাকা দেবে।কাজের আগের দিন বিকেল পাঁচটায় তোমরা টুইন ক্রীক ট্যাভানে পৌঁছে যাবে। মো সেখানে থাকবে। সে তোমাদের শেষ নির্দেশ দেবে আর দেখে নেবে যে কখন কী করতে হবে তা তোমাদের রপ্ত আছে কিনা। ঠিক আছে?

    রিফ বলল, আজ কিছু টাকা দিন না। পকেট একদম ফাঁকা।

    ক্র্যামার খামের দিকে ইঙ্গিত করে।ওর ভেতর একশো ডলার পাবে। আপাততঃচালিয়ে নাও। পরের দিন মো আরো কিছু দেবে। সে তোমার গাড়িটাও নিয়ে যাবে।তিনি চিতার দিকে তাকিয়ে, এবার সোজা বারে গিয়ে বোসো। আর কোনরকম ঝামেলা করলে শুধু পুলিশ নয়, আমিও তোমাদের শায়েস্তা করার ব্যবস্থা নেব।

    .

    পরের বৃহস্পতিবার রাত্রে রিফ ক্রেন তার মোটর সাইকেলে চড়ে পীট শহর থেকে বোস্টন ক্রীকের দিকে যাচ্ছিল। রাজপথ বেয়ে মাইল পনেরো যাবার পর বাঁদিকে এক কাঁচা রাস্তা দেখা গেল। সেই রাস্তা দিয়ে আরো পনের মাইল গিয়ে সে নষ্টনীড়ের লোহার গেটের সামনে পৌঁছল।

    গেটের বাইরে গাড়ি থামিয়ে রিফ র‍্যাঞ্চ হাউসটার দিকে তাকালো।

    চিরাচরিত কালো চামড়ার পোশাক রিফের পরনে। চোখের বিশাল গগলস্ মুখের অর্ধেক ঢেকে রেখেছে। অস্বস্তি হচ্ছে, এই তার প্রথম বড় অপরাধ, আর সে জানে এ কাজে কোনো গণ্ডগোল বাধলে কতবড় বিপদ আসবে।

    চিতা আর সে গত সাতদিন ধরে এই কাজ নিয়ে কত পরামর্শ করেছে। কিন্তু দশ হাজার ডলার পাবার স্বপ্ন তাদের সম্মোহিত করেছিল। এ তাদের ছোট খাটো ছিঁচকে চুরির ব্যাপার নয়। সহসা তাদের হাতে এসেছে এই বিরাট ডাকাতির কাজ। এবং মতলব ফাস হলেই একমাত্র পুরস্কার মৃত্যু। ক্র্যামারের মত এক পাকা বদমাশ সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে এ ব্যাপারে তারা নাক গলাত না।

    এখন, রিফ এই অপহরণের কাজে জড়িয়ে গেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চিতাও জড়িয়ে পড়বে। আর তাদের ফেরবার উপায় নেই। সুতরাং কাজটা ঠিকমত শেষ করতেই হবে।

    রিফ গেট খুলে মোটর সাইকেল ঠেলে ঘাসের ওপর নিয়ে গেল। রিফ সামনের দিকে কড়া নজর রেখে সাবধানে এগোলো। অ্যালসেশিয়ান কুকুরটা হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লে সে সামলাতে পারবে না। মো তাকে একটুকরো বিষ মাখানো মাংস দিয়ে দিয়েছে।

    এক ঘণ্টার বেশী সময় লাগল র‍্যাঞ্চ হাউসের কাছে পৌঁছতে। তার ভাগ্য ভাল যে কুকুরটা তাকে দেখবার আগেই সে কুকুরটাকে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গে উপুড় হয়ে সে শুয়ে পড়ল। বাড়িটা তখনও পঞ্চাশ গজ দূরে।কুকুরটা এমনভাবে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে যে খুব সম্ভবতঃ সে বিপদের-সংকেত পেয়েছে।

    সে মাংসের টুকরোটা বার করে চট করে কুকুরের দিকে ছুঁড়ে দিল। ছোঁড়াটা নিখুঁত হয়েছিল। কুকুরটা ঘুরে গেল রিফের দিকে। কিন্তু অন্ধকারে রিফের কালো পোশাক তাকে একেবারে অদৃশ্য করে রেখেছে।

    তার গা দিয়ে দরদরিয়ে ঘাম পড়ছে, সে চুপচাপ শুয়ে, বুকের মধ্যে দুরু দুরু করছে। পাঁচ মিনিট পরে আস্তে মাথা তুলল। দেখল কুকুরটা একপাশ ফিরে মাটিতে পড়ে রয়েছে। ধীরে ধীরে উঠে সাবধানে সামনে এগিয়ে গেল।

    রিফ সঙ্গে আনা কোদালের সাহায্যে নিহত কুকুরটাকে কবর দিয়ে বালিগুলো সমান করল। এবার সে মোটর সাইকেলের কাছে এসে সেটা ঠেলে নিয়ে চললবাড়ির বাইরের দিকে। গ্যারেজের পেছনে সেটা রেখে একবার তাকিয়ে সমস্ত জায়গাটা ভালভাবে দেখে নিল।

    এই বাড়ি এবং আশেপাশের বিস্তৃত বিবরণ মো তাকে আগেই দিয়েছিল। তাই চাকরদের কেবিন চিনতে তার দেরী হল না। ঐ কেবিনেই ভিয়েতনামী চাকরটা থাকেন, অনেকক্ষণ চিন্তা করে সে আগে বাড়ির দিকে গেল।কালো ছায়ার মত সেবাড়ির চারপাশ ঘুরে টেলিফোনের তার বের করল। এগুলো কেটে কালো সুতো দিয়ে বেধে রাখল যাতে বোঝা না যায়।

    বাড়ির বাঁদিকে কাঁচের জানলা। তারপরেই বন্দুকের ঘর। নিঃশব্দে তালা ভেঙে বড় ঘটাতে ঢুকল। অন্যের বাড়িতে গোপনে তালা ভেঙ্গে ঢোকা তার এই প্রথম। ফলে বেশ নার্ভাস হাতে একটা জ্বলন্ত শক্তিশালী টর্চ ধরল। টর্চের আলো গিয়ে পড়ল বন্দুকের তাকের ওপর। বন্দুকগুলো মাটিতে নামিয়ে মোর নির্দেশ অনুযায়ী সবকটা ড্রয়ার খুঁজে একটা ০.৩৮ বোরের অটোমেটিক রিভলবার পেয়ে পকেটে পুরল। তারপর বন্দুকগুলো তুলে নিয়ে চাঁদের আলোয় বেরিয়ে এল। বাড়ি থেকে বেশ কয়েকশ গজ দুরে এক বালিয়াড়ির মধ্যে সেগুলো পুঁতে দিল।

    এসব সেরে রাত দুটোয় সে বাড়িতে ফিরে কাঁচের জানালাগুলো বন্ধ করে একটা লিকলিকে ছুরির সাহায্যে সুকৌশলে ভেতরের ছিটকিনিটা ফেলে দিল।

    তারপর রিফ গ্যারেজে গিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা নামিয়ে দিল। বাতি জ্বালিয়ে চটপট দুটো গাড়ি থেকেই স্পর্কিং প্লাগ খুলে নিল। রুমালে জড়িয়ে বন্দুকের জায়গায় প্লাগকটা পুঁতে ফেলল।

    মো যেমন যেমন বলে দিয়েছে ঠিক তেমনি কাজ হয়ে চলেছে। কুকুরটা খতম, বন্দুকগুলোর ব্যবস্থা, গাড়িদুটো অচল এবং টেলিফোন অকেজো। এবার ভিয়েতনামী চাকরটা। অবশ্য রিফের ভয় অনেকটা কেটে গেছে।

    পকেট থেকে একটা বাইসাইকেলের চেন বার করল। লড়াইয়ের সময় এটাই তার সবচেয়ে প্রিয় হাতিয়ার। লোহার চেনটা ডানহাতের মুঠোর ওপর ব্যান্ডেজের মত জড়িয়ে চাকরদের কেবিনের দিকে রওনা হল।

    ডি-লং মানুষটি নিতান্তই ক্ষুদ্র। ছোট্ট, রোগা চেহারা, তার ওপরে মহা ভীতু। রাত দুটোর কয়েক মিনিট পরে, অস্বস্তির সঙ্গে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। খানিকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে ভাবল তার তো এমন হয় না তবে কেন তার ঘুম ভাঙ্গল। খাটের পাশের বাতিটা জ্বালিয়ে উঠে তেষ্টা পেয়েছে দেখে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল। রেফ্রিজারেটার থেকে এক বোতল কোকাকোলা বার করে কেবিনের তালা খুলে বাইরে এসে র‍্যাঞ্চ হাউসটার দিকে তাকাল। আর ঠিক তক্ষুনি কেবিনের ওধার থেকে রিফ এসে তার সামনে দাঁড়াল।

    স্তম্ভিত–বিস্ময়ে উভয়ে পরস্পরের দিকে তাকাল। চাঁদের আলোয় ডিলং-এর মুখ স্পষ্ট হল কিন্তু রিফ ছিল ছায়ার ভেতরে। কালো ছায়ামূর্তি ছাড়া ডি-লং কিছুই দেখতে পেল না। তীব্র আতংকে তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কোকাকোলার বোতলটা হাত থেকে খসে পড়ল। ততক্ষণে রিফ এগিয়ে এল। দেখল ডি-লং চীৎকার করবার জন্য মুখ খুলছে। তার চেন জড়ানো ডান হাতের মুঠো হঠাৎ ভয় পাওয়া ক্ষিপ্রতায় কেউটের ছোবলের মত সামনের দিকে ছুটে গেল।

    তার ঘুসি সজোরে আঘাত নিয়ে পড়ল ডি-লংয়ের মুখের একপাশে। সারা হাত ঝনঝনিয়ে উঠল। লোকটা ছিটকে একেবারে কেবিনের ভেতর মেঝেতে আছাড় খেয়ে পড়ল।

    রিফ মনে মনে ভাবল–এত জোরে মারা মোটেই উচিত হয়নি। ঘুষিটাঅতিরিক্ত জোরেবসেছে, আর এই সাইজের একটা লোকের পক্ষে এরকম মোক্ষম আঘাতের পর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

    র‍্যাঞ্চ হাউসটার দিকে একবার সে তাকাল। মনে মনে ভাবল, কী কপাল! ব্যাটা এখানে দাঁড়িয়ে কী করছিল? মাইরি! ভয়ে আমি–আরেকটু হলেই লোকটা চেঁচিয়ে উঠত। ঘুষি না চালিয়ে উপায় ছিল না।

    লোহার চেনটা হাত থেকে খুলতে গিয়ে রিফের খেয়াল হল চেনটা কেমন যেন ভেজা ভেজা আর চটচটে লাগছে। মুখ বিকৃত করে সে কেবিনের ছায়া থেকে বেরিয়ে এল।

    চাঁদের আলোর নীচে চেনের বারো আনা জুড়ে লেগে থাকা গাঢ়, চকচকে দাগটার দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝল এ রক্ত।রাগের চোটে বালির ওপর ঘষে ঘষে চেন থেকে রক্ত মুছে ফেলল। তারপর পকেটে চেনটা রেখে সিগারেট ধরিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে তাকাল পড়ে থাকা রোগা দুই পায়ের দিকে। যদি সে এ ব্যাটাকে মেরে ফেলে থাকে তাহলে সমস্ত প্ল্যানের বারোটা বেজে যাবে। ক্র্যামার বলেছিলেন যে এ কাজে ঝুঁকি নেই। কিন্তু এ হতভাগ্য যদি মরে গিয়ে থাকে, তাহলে ক্র্যামার পুলিশের ঝামেলা এড়াতে পারবে না।

    দুরু দুরু বক্ষে গালাগাল দিতে দিতে টর্চের আলো ফেলল, ডিলং-এর বিধ্বস্ত মৃত মুখের ওপর।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্ল্যাক অর্ডার (সিগমা ফোর্স – ৩) – জেমস রোলিন্স
    Next Article জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ২ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)

    Related Articles

    জেমস হেডলি চেজ

    জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ২ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)

    August 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.