Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ১ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)

    জেমস হেডলি চেজ এক পাতা গল্প2631 Mins Read0

    ০৭-৮. ইজিচেয়ারে দাঁতের ফাঁকে

    ০৭.

    একটা ইজিচেয়ারে দাঁতের ফাঁকে একটা সিগার নিয়ে ক্র্যামার বসে ছিলেন। মো জেগেটি তার পেছনে দাঁড়িয়ে। তাঁর সামনে আরেকটি ইজিচেয়ারে ভিক্টর ডারমট বসে আছে।

    গ্যারেজের দরজা খোলা; ভিক্টর জানালার ভেতর দিয়ে দেখতে পাচ্ছিল। রিফ ভিক্টরের ক্যাডিলাক গাড়ি নিয়ে পড়েছে। স্পর্কিং প্লাগদুটো লাগানো হয়ে গেছে। এখন সে গাড়িটার নম্বর প্লেট সরিয়ে ক্র্যামারের আনা ভুয়ো নম্বর প্লেটটা লাগাচ্ছে।

    নটা বাজে। ক্র্যামার বললেন, এগারোটা নাগাদ আপনি ভ্যান ওয়াইলির বাড়ি পৌঁছবেন। ভদ্রলোককে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজী করাতেই হবে। বুঝেছেন?

    ভিক্টর বলল, বুঝেছি।

    ভ্যান ওয়াইলি আপনার পরিচয় জানতে চেষ্টা করবেন। যদি তিনি জানতে পারেন এবং এখানে ধাওয়া করেন, তাহলে কিন্তু অতি জঘন্য ব্যাপার হবে। এই ক্রেন ভাইবোন দুজন আত্মসমর্পণ করতে জানে না। আর তারা আপনার ছেলে, বৌ এবং ভ্যান ওয়াইলির মেয়েকে শেষ করবে। তারপর শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে যাবে।

    ভিক্টর চুপ করে শুনছিল।

    সুতরাং ভ্যান ওয়াইলির কাছ থেকে চেকগুলো আদায় করবার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার ওপর। চেক কটা নিয়ে আপনি স্যান বানাডিনো চলে যাবেন। সেখানে চেস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে প্রথম চেকটা ভাঙাবেন। সেখান থেকে লস্ এঞ্জেলসে গিয়ে মার্চেন্ট ফিডেলিটিতে দ্বিতীয় চেকটা ভাঙাবেন। রাতটা সেখানে মাউন্ট ক্রেসেন্ট হোটেলে থাকবেন। সেখানে জ্যাক হাওয়ার্ড নামে একটা ঘর রিজার্ভ করে রেখেছি। রাত এগারোটায় আপনাকে ফোন করব। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, আপনি এই লিস্ট অনুযায়ী উপকূলবর্তী শহরগুলি থেকে একে একে সবকটা চেক ভাঙিয়ে নেবেন। সব শেষে স্যান ফ্রানসিসকো শহরে আসবেন। রোজ আর্মস হোটেলে আমি থাকব। টাকাটা আমার হাতে তুলে দিলেই আপনার ছুটি। আপনি তখন এ বাড়িতে আসতে পারেন। তার আগেই আমরা মিস ওয়াইলিকে ছেড়ে দেব এবং আমার লোকজন সরে যাবে। তারপর যেন আপনি কাউকে কিছু বলবার বা শয়তানি করবার চেষ্টা করবেন না। সবকিছু ভুলে যাবেন। চালাকি করলে ভাববেন না পুলিশ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে। একদিন না একদিন আমার দলের একজন আপনার বাড়ি গিয়ে সপরিবারে শেষ করে দেবে। বুঝতে পেরেছেন?

    হ্যাঁ, পেরেছি।

    বেশ তাহলে এই পর্যন্তই–পরে বলবেন না যে আপনাকে সাবধান করা হয়নি, গাড়ি তৈরী, এবার রওনা হোন।

    আমার স্ত্রী একলা থাকতে ভয় পাচ্ছে। আপনি এবং আমি যখন এখানে থাকব না, তখন যে তার কোনো বিপদ হবে না, তার গ্যারান্টী কি?

    বন্ধুবর, আপনার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমার সহকারী মো, এখানে থাকবে। ক্রেনরা একটু জংলী আছে। কিন্তু আমার বন্ধু ওদের শাসনে রাখতে পারবে। যতক্ষণ আপনি আমার নির্দেশ অনুযায়ী চলবেন ততক্ষণ কোনো রকম বিপদের আশঙ্কা নেই।

    ভিক্টর ক্যারীর কাছে বিদায় নিতে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু শোবার ঘরে ঢুকে দেখলক্যারী নিজেকে সামলে নিয়েছে।

    দুহাতে ভিক্টরের গলা জড়িয়ে ধরে সে বলল, ঠিক আছে ভিক, আমার আর ভয় করছে না। দুশ্চিন্তা করো না। আমি ঠিক থাকব।

    ভিক্টর তাকে আদর করে বলল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ফিরে আসব। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এই কদিনের রোমাঞ্চের কথা সারাজীবন ধরে গল্প করব।

    ক্র্যামার এসে বললেন, আপনি তৈরী মিঃ–ডারমট?

    ছেলেকে ও ক্যারীকে চুমু খেয়ে ক্যারীর দিকে এক দীর্ঘ নিবিড় দৃষ্টি ফেলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ডারমট।

    ছেলেকে কোলে নিয়ে ক্যারী বিছানায় বসল। তার বুক ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। ছেলেকে জোরে বুকে চেপে ধরল।

    অ্যারো হেড লেক পর্যন্ত যে রাজপথ চলে গেছে, সেটা ধরে অনেকদূর পর্যন্ত ক্র্যামার ভিক্টরের গাড়ির পেছনে পেছনে এলেন। তারপর কয়েকবার হর্ণ বাজিয়ে হাত নেড়ে পাশের একটা রাস্তা ধরে নিজের হোটেলের দিকে গেলেন। মোড় ঘুরিয়ে ভিক্টর ভ্যান ওয়াইলির এস্টেটের দিকে এগিয়ে চলল।

    দশ মিনিট পরে সে বিদ্যুৎবাহী লোহার গেটটার সামনে এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমে টেলিফোনের রিসিভার তুলতেই সাড়া পাওয়া গেল।

    ভিক্টর বলল, মিঃ ভ্যান ওয়াইলির সঙ্গে কথা বলতে চাই। তিনি জানেন যে আমি আসবো। মিস ভ্যান ওয়াইলির সংক্রান্ত ব্যাপার।

    সোজা ভেতরে চলে আসুন খুলে যাচ্ছে গেট। গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাসাদের সদর দরজায় পৌঁছে গেল।

    সিঁড়ির গোড়ায় মেরিল অ্যানড্রুজ ছিল। অ্যানড্রুজ ভিক্টরের মত সম্ভ্রান্ত চেহারার একজনকে দেখে চমকে গেল। শুধুচমকনয়, বিস্ময়ও, কারণ তার মনে হচ্ছিল কোথাও যেন এই ভদ্রলোককে দেখেছে।

    ভিক্টর বলল, মিঃ ভ্যান ওয়াইলির সঙ্গে আমার দরকার আছে।

    এদিকে আসুন। বলে তাকে দুটো ঘর পেরিয়ে একটা তকতকে উঠোনে নিয়ে গেল। সেখানে ভান ওয়াইলি ছিলেন।

    ভিক্টর উঠোনে ঢুকতেই ভ্যান ওয়াইলি ঘুরে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকালেন। ইঙ্গিতে অ্যানড্রুজকে চলে যেতে বলে তিনি ছোট টেবিলটার দিকে গিয়ে একটা সিগার তুলে ধরিয়ে তারপর বললেন, বলুন এবার। আপনি কে, এবং কী চান?

    শান্তগলায় ভিক্টর বলল, মিঃ ভ্যান ওয়াইলি, আপনার এবং আমার সামনে আজ একই সংকট। দুজনেরই প্রিয়জনের প্রাণ-বিপন্ন। আপনার মেয়েকে যারা অপহরণ করেছে, তাদেরই হাতে বন্দী রয়েছে আমার স্ত্রী এবং শিশুপুত্র। আপনার মেয়ের চেয়ে তাদের দুজনের নিরাপত্তা আপাততঃ আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

    বেশ কিছুক্ষণ ভিক্টরকে পর্যবেক্ষণ করে ভ্যান ওয়াইলি একটা বেতের চেয়ার দেখিয়ে বললেন, বসুন–আপনি বলে যান, আমি শুনছি।

    ভিক্টর বসতে বসতে বলল, এই লোকগুলো আমাকে নির্বাচিত করেছে আপনার কাছ থেকে চল্লিশ লাখ ডলার আদায় করবার জন্য। গতকাল তারা আপনার মেয়েশুদ্ধ আমার বাড়ি এসে দখল করে নেয়। আমি যদি আপনার কাছ থেকে টাকা আদায় করে দিতে না পারি, তাহলে ওরা আপনার মেয়ে ও আমার বৌ-ছেলেকে খুন করবে। এটা মিথ্যে শাসানি নয়। আমি ওদের দেখেছি। ওদের মধ্যে একটি গুণ্ডা ছোকরা আছে যার কাছে যে কোনো নিষ্ঠুর কাজ নেহাৎ ছেলেখেলা। আমার ধারণা, ইতিমধ্যেই সে আমার চাকরকে খুন করেছে।

    আপনার বাড়ি কোথায়?

    আমায় সতর্ক করা হয়েছে যে বাড়ির ঠিকানা যেন আপনার হাতে না পড়ে। কোনোকিছুই আপনাকে জানানো চলবে না। আমি কেবল আপনাকে জানাতে পারি যে, যদি আপনার মেয়েকে সুস্থ শরীরে ফেরৎ পাবার ইচ্ছে থাকে, তাহলে আমার হাতে চার লাখ ডলারের দশটা চেক দিতে হবে।

    ভ্যান ওয়াইলি নাকমুখ দিয়ে অজস্র সিগারেটের ধোঁয়া বের করে বললেন, আশা করি বুঝতে পারছেন যে, এর ফলে আপনি নিজেও এক চরম অপরাধের অংশীদার হয়ে পড়ছেন। সবকিছু চুকে গেলে যখন পুলিশ রঙ্গমঞ্চে নামবে, তখন হয়তো আপনাকেই গ্যাস চেম্বারে ঢুকতে হবে।

    ব্যাপারটা চুকে যাবার পর আমায় যদি প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানেও ফেলে দেওয়া হয়, তাতেও আমার কিছু এসে যায় না। এই মুহূর্তে স্ত্রী-পুত্রের নিরাপত্তার চেয়ে কোন কিছুই আমার কাছে বড় নয়।

    ভিক্টরের মুখের দগদগে ক্ষতটার দিকে তাকিয়ে ভ্যান ওয়াইলি বললেন, এটা কী করে হল?

    ঐ যে ছোকরা গুণ্ডাটা মেরেছে। ডানহাতের মুঠোয় একটা সাইকেলের চেন জড়িয়ে ঘুষি চালায়–একেবারে মোক্ষম চোট লাগে।

    ভিক্টর বলে চলল, এই গুণ্ডাটি আমার বাচ্চার, স্ত্রীর বা আপনার মেয়ের মুখে ঐরকম ঘুষি বসাতে এতটুকু দ্বিধা করবে না। আপনার তো অনেক টাকা। ওদের দাবী না হয় মিটিয়ে দিন। চার লাখ ডলারের দশটা চেক। আপনার অহমিকা ছাড়া অন্যকিছু এতে ক্ষুণ্ণ হবে বলে তো মনে হয় না। সুতরাংইতস্ততঃ করবেন না। এইরকম একটা ঘুষি যদি আপনার মেয়ের মুখে লাগে তাহলে আর তার মুখের কিছু অবশিষ্ট থাকবেনা। আমি ধাপ্পা দিচ্ছিনা,মিঃ ভ্যান ওয়াইলি, আমি আপনাকে নগ্ন সত্যটুকু জানিয়ে দিচ্ছি।

    টেবিলের ওপর বলিষ্ঠ দুহাত রেখে ভ্যান ওয়াইলি বললেন, টাকা দিলেই আমার মেয়েকে ফেরত পাব তার স্থিরতা কি?

    কোনো স্থিরতা নেই। আমি নিজেও জানি না বাড়ি ফিরে আমার ছেলে বৌকে জীবিত দেখব কিনা। কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। টাকাটা দিলে হয়ত বা আপনার মেয়েকে ফেরৎ পেতেও পারেন, এই পর্যন্ত।

    আমি কিছু বুঝতে পারছি না। টাকা আমি দিতে পারি কিন্তু তার বদলে যে কী পাব, তা জানা নেই। আপনি আমার মেয়েকে দেখেছেন? সে ভাল আছে?

    হা, আমি তাকে দেখেছি। মনে হয়, এখন পর্যন্ত সে ভালই আছে।

    যারা ওকে চুরি করেছে তাদের কথা বলুন। ওদের দলে কজন আছে?

    আমার একমাত্র কাজ হল আপনাকে মুক্তিপণ মিটিয়ে দিতে রাজী করানো। আমাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কোনো খবর যেন না বেরোয়। আপনি কেবল স্থির করুন, টাকাটা দেবেন, না মেয়েকে ওই লোকগুলোর কজায় রেখে দেবেন। ব্যস।

    ভ্যান ওয়াইলি তীব্র অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, একটু বসুন, টাকার ব্যবস্থা করছি।

    তিনি দ্রুতপদে উঠোন পেরিয়ে পড়বার ঘরে ঢুকলেন। সেখানে অ্যানড্রুজ অপেক্ষা করছিল।

    তিনি নির্দেশ দিতেই অ্যানড্রুজ ফোন তুলে নিল। ক্যালিফোর্নিয়া অ্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলল সে। ম্যানেজার রীতিমত চমকে গেলেও জানালেন যে, এক ঘণ্টার মধ্যেই চেক তৈরী হয়ে যাবে।

    অ্যানড্রুজ রিসিভার রেখে ভ্যান ওয়াইলিকে বললেন, এ লোকটা ডাকাতদের কেউ নয়। ও লোকগুলো একে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে চমৎকার মতলব। এ লোকটার বৌ ও একটা বাচ্চা ছেলে আছে। ডাকাতগুলো জেলডাকে লুঠ করে ওর বাড়িতে আড্ডা গেরেছে। টাকা আদায়ের ভার পড়েছে এর ওপরে, যদি এ বেচাল করে ওর গোটা পরিবার সাফ করে দেবে।

    এ ভদ্রলোককে আমি আগে কোথায় যেন দেখেছি। বেশ নামকরা কেউ একজন হবে। খুব সম্ভবতঃ থিয়েটার লাইনের।

    লোকগুলো একে প্রচুর মার দিয়েছে। মুখের কাটাটা লক্ষ্য করেছ? ডাকাতগুলো নেহাত সহজ পাত্র নয়। একে তুমি এর আগে কোথাও দেখেছ?

    ঠিক মনে পড়ছে না। তবে দেখেছি নিশ্চিন্ত। ভদ্রলোককে নিয়ে কী যেন খবর বেরিয়েছিল।

    খুব কাজের খবর দিলে না? মনে করবার চেষ্টা করো। আমি জানতে চাই, লোকটি কে?

    অ্যানড্রুজ চিন্তা করতে লাগল কোথায় দেখেছে লোকটিকে। থিয়েটার মানে লোকটি কি অভিনেতা? সে স্মৃতি হাতড়ে চলল আর ভ্যান ওয়াইলি ভিক্টরের কাছে ফিরে গেলেন।

    .

    মো-কে যেন ফুটন্ত কড়াইয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সে না পারছে আরাম করে বসতে, না পারছে চিন্তা করতে। মা,কেমন আছেন? ইচ্ছে করছিল, রিসিভার তুলে হাসপাতালে ফোন করে জানে কিন্তু বিপদের সম্ভাবনা। হয়তো ভ্যান ওয়াইলি পুলিশে খবর দিয়েছেন। পুলিশ হয়ত সব । লাইনে আড়ি পেতে আছে। পুলিশ যদি নষ্টনীড়ের খবর জেনে যায় তাহলে তার আড়াই লাখ ডলারের স্বপ্ন বন্দুকের গুলিতে উড়ে যাবে।

    কিন্তু মায়ের খবর জানতেই হবে।

    শোবার ঘরে জেলডা ক্যারী আর বাচ্চাটা। তাদের টুকরো টুকরো কথা কানে আসছে। ক্রেন ভাইবোন দুজন রোদ্দুরে গা এলিয়ে শুয়ে আছে, কোকাকোলা খাচ্ছে আর ছবির বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে। ক্র্যামার তাকে আদেশ দিয়ে গেছেন এ বাড়ি ছেড়ে এক পানানড়তে। কিন্তু হাসপাতালে ফোন করে মায়ের খবর জানা একান্ত প্রয়োজন।

    সবচেয়ে কাছের বুথ হলো বোস্ট ক্রীকে কুড়ি মাইল দূরে। যদি সে জোরে গাড়ি চালায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ফিরতে পারবে। একঘণ্টায় কী আর ঘটবে?

    মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্রেন ভাইবোনের দিকে এগিয়ে আসতে তারা মুখ তুলে তাকাল।

    মো বলল, আমার একটা কাজ আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসব। তোমরা ঠিকমত পাহারা দাও, গোলমাল বাধিও না। কেবল নজর রেখো মেয়ে দুজন যেন না পালায়। একঘণ্টার বেশী দেরী হবে না।

    রিফ বলল, নিশ্চয়। ফিরে এসে দেখবে আমরা এখানেই বসে আছি। যাবার আর জায়গা কোথায়?

    এখানেই থাকো তোমরা। আমি কোনোরকম গণ্ডগোল চাই না।

    রিফ বলল, গণ্ডগোল আবার কী হবে? আমার তো বেশ মজাই লাগছে, তুমি বেরিয়ে পড়ো। আমরা সব ঠিকঠাক রাখব।

    সহসা মো একটু ইতস্ততঃ করল রিফের চোখে বিদ্রুপের ছায়া দেখে। কিন্তু ভাইবোনে আবার ছবির বইয়ে নিমগ্ন হলে মো আর দ্বিধা না করে গ্যারেজে গিয়ে লিংকন গাড়িটায় চেপে রওনা হল।

    গাড়ি মিলিয়ে যেতেই রিফ আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়াল।

    চিতা সন্ধিগ্ধ চোখে বলল, কোন চুলোয় যাচ্ছিস?

    চেপে যা। একটু পা খেলিয়ে আসি। কোথায় যাচ্ছি না যাচ্ছি তাতে তোর দরকার কি?

    খুব হয়েছে রিফ, বসে পড়। তোর আসল মতলব আমার জানা আছে। ও কাজ করিস না। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা দশ হাজার ডলার পাব। সবকিছু ভণ্ডুল করে দিস না।

    তুই একটা বোকা। বুঝতে পারছিস না যে কাজটা ইতিমধ্যেই ভণ্ডুল হয়ে গেছে। এই ফাঁকে একটু মজা লুঠতে পারলে ক্ষতি কি? তুই চুপ করে বসে থাক। দ্বিতীয় বার বলব না আমি।

    মেয়েটার গায়ে হাত দিস নে।

    চেপে যা বলে বাড়ির দিকে গেল।

    জেলডা বাচ্চাদের দুচক্ষে দেখতে পারে না। তার মতে, বাচ্চাদের একদিক থেকে বেলোয় আওয়াজ, আর অন্যদিকে তরল পদার্থ। বাচ্চারা হল একজাতের ছোট জানোয়ার, যারা লোকেদের কাছে সর্বদা বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। যদিও জেলডা হল পৃথিবীর সবচেয়ে পয়সাওয়ালা মেয়েদের অন্যতম। তার ধারে কাছে একটা শিশু দেখলে সবাই যেন তার উপস্থিতির কথা ভুলে যায়। এজন্য বাচ্চাদের ওপর তার ভীষণ রাগ।

    আপাততঃ সে ইজিচেয়ারে বসে ব্যাজার মুখ করে, ক্যারীর খোকার জাঙিয়া বদলে দেওয়া দেখছিল। বিতৃষ্ণায় তার নাক কুঁচকে গেল। এই বাচ্চাগুলো এক অখাদ্য ব্যাপার। ভিক্টর ডারমটের বাড়িতে থাকতে পেয়ে তার রীতিমত রোমাঞ্চ হচ্ছিল। ভদ্রলোকের প্রতিটি নাটক সে দেখেছে। এত লোক থাকতে শেষ পর্যন্ত সুবিখ্যাত ভিক্টর ডারমটকেই যে তার মুক্তিপণ আনতে ছুটতে হল, এ ব্যাপারটা তার ভীষণ রোমান্টিক বলে মনে হচ্ছিল। বাড়ি ফিরে এই নিয়ে সে কত চালই না মারতে পারবে।

    তার ক্যারীকে পছন্দ হয়েছিল। এমন সুন্দরী মেয়েকে এইরকম এক মোটা-সোটা বিদঘুঁটে বাচ্চাকে নিয়ে মাতামাতি করতে দেখে তার করুণা হচ্ছিল। সে চাইছিল আরাম করে বসে ক্যারীর সঙ্গে সাজপোষাক নিয়ে আলোচনা করবে। তার বিশ্বাস, ক্যারী নিশ্চয় জামাকাপড় সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ক্যারী বাচ্চাটাকে খাটে শুইয়ে, কয়েকটা খেলনা ঝুলিয়ে দিল। জেলডা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

    ক্যারী বলল, ব্যস, এবার কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চিন্ত। এবার ঘরটা গুছিয়ে নিতে হবে। না কি, তুমিই ঘরটা সাজাবে আর আমি গিয়ে রান্নার যোগাড় করব?

    জেলডা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বলল, আমি গুছিয়ে নেব? তার মানে?

    তা ঘরদোর তো একটু গুছিয়ে রাখতেই হয়। আমি রান্না করতে যাচ্ছি, তাই বলছিলাম তুমি ততক্ষণ শোবার ঘর দুটো গুছিয়ে ফেল। ওরা দুজন তো আর আমাদের কাজে সাহায্য করতে আসছে না!

    জেলডা রাগের সঙ্গে বলল, আমিও কোনো কিছু করতে পারব না। আমি কি তোমার চাকর নাকি? দু-এক দিনের মধ্যে আমার বাবা টাকা মিটিয়ে দেবে, আর আমি বাড়ি ফিরে যাবো। এখানকার ঘর দোরের কি হল তাতে আমার বয়ে গেল।

    কেন, তোমার আপত্তি থাকলে আমি সব কিছু করে নিচ্ছি। খাবার খেতে আশাকরি তোমার আপত্তি নেই?

    খাবার খাবো বৈকি। একশো বার খাবো।

    ঠিক আছে। তুমি যদি চুপচাপ বসে থাকতে চাও, তাই থাকো। আমিই সব সেরে নিচ্ছি।

    আমার দায় পড়েছে চাকরানীর কাজ করতে। বলে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে রইল।

    সেই মুহূর্তে সশব্দে দরজা খুলে রিফ ভেতরে ঢুকল।

    স্তম্ভিত–বিস্ময়ে ক্যারী ও জেলডা তাকিয়ে। রিফের ক্ষতচিহ্নে ভরা মুখ ঘামে চকচক করছে। ক্যারী তার গায়ের গন্ধে দুপা পিছিয়ে গেল। রিফ জেলডার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। জেলডা যেন চেয়ারের মধ্যে জমে গেছে।

    রিফ হাতছানি দিয়ে বলল। চলে এসো সখি, চলো, তোমাতে আমাতে একটু হুল্লোড় করা যাক। উঠে পড়ো।

    ক্যারী জেলডার সামনে দাঁড়িয়ে।বেরিয়ে যাও এখান থেকে। ওর গায়ে তুমি হাত দেবেনা।

    রিফ কুৎসিত ভাবে বলল, সরে যাও সামনে থেকে,নইলে তোমাকে দিয়েই কিন্তু শুরু করব।

    ক্যারী না নড়ে বলল, বেরিয়ে যাও।

    সজোরে রিফের বাঁহাত এসে আঘাত করল ক্যারীর মুখের বাঁ পাশে। মনে হল যেন এক তীব্র হাওয়ার ঝাঁপটা তাকে ছিটকে খাটের উপর ফেলল। মাথা ঝিমঝিম করল,জ্ঞান নেই বললেই চলে। সে সেখানেই পড়ে রইল।

    সে অস্পষ্টভাবে শুনতে পেল জেলডা চীৎকার করছে। অচেতন অবস্থায় ওঠবার চেষ্টা করতে করতে দেখল জেলডা রিফের সঙ্গে লড়াই করছে। কিন্তু রিফের আসুরিক শক্তি তাকে টেনে তুলে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল। জেলডার আর্ত চীৎকার সারা বাড়িতে প্রতিধ্বনি তুলল। রিফ তাকে টেনে নিয়ে গেল যে ঘরটায়, জেলডা আগের দিন শুয়েছিল। তাকে বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলে ভেতর থেকে দরজায় ছিটকিনি তুলে দিল।

    নিশ্চল হয়ে চিতা বসে রইল। তীব্র চিৎকার ভেসে আসছে কিন্তু একটুও নড়ল না সে। তার মুখ পাথরের মত কঠিন হয়েছে।

    কিছুক্ষণ পরে চীৎকার থেমে গেল।

    .

    টেলিফোন বুথে দাঁড়িয়ে মো জেগেটি দেখতে পেল দুটি মেয়ে আঁটসাঁট জীনস পরে, টুলের ওপর বসে কোকাকোলা খাচ্ছে। কদমছাট চুলওয়ালা একটি ছেলে তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে কথা বলছিল। তার হাতেও স্ট্র শুদ্ধ একটা কোকাকোলার বোতল।

    কপালের ঘাম মুছল মো। আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। লাইনের ওপার থেকে মৃদু গুঞ্জন আর টুকরো টুকরো কথা ভেসে আসছে। ওরা তাকে ধরে থাকতে বলেছে। একটি মেয়ে টুল থেকে নেমে গানের বাক্সের মধ্যে একটি মুদ্রা ফেলে দিতেই তীব্র চটুল বাজনা আরম্ভ হল। মেয়েটি তার শিশুসুলভ নিতম্ব যুগল দুলিয়ে নাচ শুরু করল।

    একটা গলা শোনা গেল। মিঃ জেগেটি! আমি নার্স হার্ডিস্টি বলছি। আমি দুঃখিত। আপনার মা গতরাত্রে পরলোক গমন করেছেন।

    গানের আওয়াজ মোর কানে বিঁধছিল, ভদ্রমহিলা যে কী বলছেন তা যেন সে বুঝতে পারছে না। মো সজোরে রিসিভার চেপে ধরল। নিশ্চয় ভুল শুনেছে সে–তার মা-মানে মারা গেছে।

    কী বললেন আপনি? একটু ধরুন। বুথের দরজা খুলে চীৎকার করে উঠল। বন্ধ করো ঐ হতচ্ছাড়া বাজনাটা।

    মেয়েটি নাচ বন্ধ করে তার দিকে তাকাল। তারপর আবার নাচতে শুরু করল। মোর দিকে কোমর দুলিয়ে আর দুহাতে তুড়ি দিয়ে।

    মো তীব্র হতাশায় দরজা বন্ধ করে আমার মা, কেমন আছেন?

    বললাম তো। তিনি শান্তিতে পরলোক গমন

    মানে মারা গেছে।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। গত রাত্রে উনি মারা গেছেন।

    মো আস্তে আস্তে রিসিভার নামিয়ে রেখে ভাবল আড়াই লাখ ডলারে তার আর কোনো প্রয়োজন নেই। আজ সে নিঃসঙ্গ। কি করবে টাকা দিয়ে? মা যখন আর বেঁচে নেই–

    মো ধীরে ধীরে কফি হাউস থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়ির ভেতর গিয়ে বসল। নষ্টনীড়ে ফিরে যাবে? যদি কিছু গোলমাল বাধে? ক্র্যামারের বয়েস হয়েছে? যদি আজ তাঁর প্ল্যান ফেঁসে যায়? জেলের সেই ভয়ংকর কথা মনে পড়ল। কী হবে আড়াই লাখ ডলার পেয়ে? কিন্তু মনে পড়ল ছোট্ট রেস্তোরাঁ আর দাসত্বের কথা। সে জীবনে যাওয়া চলে না। টাকাটা পেলে, বাড়ি, ভদ্র জীবন যাপন, বাকি জীবনটার জন্য সঙ্গিনী হতে পারে। তাছাড়া ক্রাম্যারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা খুব খারাপ হবে। না–ফিরে যেতেই হবে।

    মো একটা গাড়ি নিয়ে ফিরে চলল নষ্টনীড়ের দিকে।

    .

    মনে পড়ল না এখনও লোকটাকে কোথায় দেখেছ? ভ্যান ওয়াইলি প্রশ্ন করলেন। ভিক্টর ডারমটকে তার ক্যাডিলাক গাড়িতে উঠতে দেখেছিলেন তিনি। ভিক্টর ক্যালিফোর্নিয়া অ্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাংকে যাচ্ছে, চেক নেবার জন্য।

    অ্যানড্রুজ বলল; লোকটি থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত।

    –নম্বর নিয়েছ গাড়ির?

    –নিশ্চয়।

    -ঠিক আছে, এবার কাজে লাগা যাক, তিনি বললেন।

    এই লোকগুলো যদি ভাবেচল্লিশ লাখ ডলার নিয়ে কেটে পড়বে, তাহলে ভুল করবে। বলছিল যে, টেলিফোন ট্যাপ করেছে। এটা হয়তো ধাপ্পা, কোন ঝুঁকি না নিয়ে, জে ডেনিসনের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তাকে টেলেক্স পাঠাও,বল আমার সঙ্গে লস্ এঞ্জেলস্ এয়ারপোর্টে দেখা করে ১২টার সময়। সাক্ষাৎকার যেন গোপন থাকে। আমরা হেলিকপ্টারে যাবে, যাতে পিছু নিতে না পারে।

    ভ্যান ওয়াইলি দেড়ঘণ্টা পর এয়ার পোর্টের পাশে একটি ছোট্টঅফিসে ঢুকলেন। পেছন পেছন অ্যানড্রুজ এল। এইখানেই ডেনিসন তার সঙ্গে দেখা করবেন। ডেনিসনের সাথে টম হাপার।

    ভ্যান ওয়াইলি ও ডেনিসনের বেশ কয়েক বছর পর দেখা হল। ডেনিসন একবার তার বিস্ময়কর গোয়েন্দাগিরির সাহায্যে একটি ব্যাংকঘটিত জুয়াচুরি ধরে ফেলে ভ্যান ওয়াইলির অনেকগুলো টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তার এই উপকারের কথা ভ্যান ওয়াইলি ভোলেননি। এবং প্রত্যেক বড়দিনে তার কাছ থেকে ডেনিসমের কাছে একরাশ খাদ্যসামগ্রী উপহার যেত।

    করমর্দন করলেন দুজনে। ভ্যান ওয়াইনির চোখের তিক্ত জ্বালাটুকু ডেনিসনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ধরা পড়ল।

    ভ্যান ওয়াইলি ডেস্কের ধারে বসে বললেন, আমার মেয়েকে চুরি করা হয়েছে। চল্লিশ লাখ ডলার মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে এবং হুমকি–পুলিশে খবর দিলে মেয়েকে ফেরত পাবো না। ডেনিসন, আমি তোমার সঙ্গে দেখা করলাম কারণ মেয়েকে ফেরৎ পাবার সাথে সাথে আমি চাই যে তুমি ডাকাতগুলোকে ধরবার ব্যবস্থা করো। আমরা হেলিকপ্টারে এখানে এসেছি সুতরাং ওদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ফোনে লোকটি আমাকে যা যা বলেছিল, তা এই টেপে রেকর্ড করা আছে। এটা তুমিই রাখো। টেপের রীলটি তিনি ডেনিসনের হাতে দিলেন।

    ডেনিসন বলল, ব্যাপারটা কখন ঘটল, মিঃ ভ্যান ওয়াইলি? হার্পারের দিকে কটাক্ষ করে দেখলেন তার হাতের নো5 তৈরী আছে।

    ভ্যান ওয়াইলি ডেনিসনকে সব ঘটনার বর্ণনা দিলেন। শেষ পর্যন্ত ভিক্টর ডারমটের প্রসঙ্গ এল।

    ভ্যান ওয়াইলি বললেন, বোঝা যাচ্ছে যে এই লোকটির সঙ্গে অপহরণকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। লোকটি আমারই মত দুর স্থায় পড়েছে। অ্যানড্রুজ বলছিল যে সে নাকি লোকটিকে আগে দেখেছে।

    অ্যানড্রুজের দিকে তাকালেন ডেনিসন ।

    আমি খুব চেষ্টা করছি মনে করতে কিন্তু কছুতেই মনে আসছে না, ঠিক কোথায় দেখেছি। ভদ্রলোক যে থিয়েটার লাইনের কেউ সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত–সম্ভবতঃ একজন অভিনেতা।

    তা একটা সূত্র তো পাওয়া গেল অন্ততঃ বলে ডেনিসন প্যারাডাইস শহরের সদর দপ্তরে ম্যাসনকে ফোন করলেন। বললেন, আমি মিঃ মেরিল অ্যানড্রুজকে পাঠাচ্ছি। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন। তিনিই তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবেন। তুমি এক্ষুনি থিয়েটারী এজেন্ট সাইসন অ্যান্ড লের অফিসে গিয়ে বছর আটত্রিশ বয়সের শ্যামলা চেহারার ছফুট লম্বা যতজন অভিনেতার ছবি পাবে, সব নিয়ে এসো। খুব জরুরী কাজ এটা। ফোন ছেড়ে তিনি অ্যানড্রুজের দিকে তাকিয়ে, আপনি বরং রওনা হয়ে যান,মিঃ অ্যানড্রুজ। ঐ এজেন্টদের কাছে হয়ত সেই ভদ্রলোকের ছবি পেয়ে যাবেন।

    ভ্যান ওয়াইলির দিকে তাকাতে তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে সে দ্রুতপদে বেরিয়ে গেল।

    ভ্যান ওয়াইলি বললেন, এই ডাকাতরা কিন্তু অতি বিপজ্জনক। জেলডার ব্যাপারে কোনরকম ঝুঁকি নিতে চাই না। বুঝেছ?

    ডেনিসন শান্তভাবে বললেন, নিশ্চয়, এসব ব্যাপার কী করে সামলাতে হয় তা আমরা জানি। এবার আপনার মেয়ের দৈনিক রুটিনের খুঁটিনাটি আরেকটু বলুন আমাকে। আপনি এইমাত্র বলছিলেন যে, একই দিনে একই সময়ে প্রত্যেক হপ্তায় সে চুল বাঁধাতে যেত।

    –আরো এক ঘণ্টা আলোচনার ওপর ভ্যান ওয়াইলি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বলতে আজ তাহলে এই পর্যন্তই। আমি কাজের ভার তোমার হাতে ছেড়ে দিচ্ছি বটে, কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস না করে হঠাৎ কিছু করে বোসো না যেন।

    ডেনিসন উঠে করমর্দন করলেন। ভ্যান ওয়াইলি বললেন, চল্লিশ লক্ষ ডলার আমার কাছে জেলডার চেয়ে মূল্যবান নয়, ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই।

    তিনি চলে যেতেই ডেনিসন আবার টেলিফোনের দিকে হাত বাড়ালেন।

    সদর দপ্তরে মেরিল অ্যানড্রুজ একরাশ বিতৃষ্ণার সঙ্গে শেষ ফটোটি ম্যাসনের ডেস্কের ওপর ছুঁড়ে ফেলল।

    নাঃ–এদের মধ্যে কেউ নয়।

    ম্যাসন বলল, হয়ত লোকটি সিনেমায় অভিনয় করে, আমি বরং

    সিনেমার অভিনেতা কখনো নয়। আমি সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ যে, ভদ্রলোক থিয়েটার লাইনে এবং ভাল নামডাকও আছে।

    ম্যাসন উঠে দাঁড়িয়ে, ঠিক আছে। চলুন তাহলে দৈনিক পত্রিকা হেরাল্ড-এর অফিসে গিয়ে তাদের পুরোনো ফটোগুলোর ওপর চোখ বুলানো যাক। ওদের কাছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে। এক লাইব্রেরী আছে। সেখানে খোঁজ পাওয়া যেতে পারে।

    সদরদপ্তর থেকে দুজনে বেরাচ্ছে। এমন সময় ডেনিসনের সঙ্গে দেখা। তিনি জোরে গাড়ি চালিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে এসেছে।

    ডেনিসন বললেন, কিছু পাওয়া গেল?

    তারা কোথায় যাচ্ছে সবকিছু ম্যাসন তাকে জানাল। ডেনিসন সম্মতি জানালেন। অফিসে এসে স্যান বার্নাডিনোর পুলিশ দপ্তরে ফোন করলেন। জানতে চাইলেন গতকাল সকাল নটা নাগাদ ভ্যান ওয়াইলি এস্টেট থেকে স্যান বার্নাডিনোর পথে কুমারী ভ্যান ওয়াইলিকে কোনো পুলিশ অফিসার দেখেছে কিনা। সেখানকার কর্মরত সার্জেন্টটি জানাল যে, সে অবিলম্বে তাকে জানাবে।

    ডেনিসন সার্জেন্টটিকে বলে দিলেন, প্রতিটি ভ্রাম্যমান পুলিশ অফিসার যেন একটি ই টাইপ জাগুয়ার গাড়ির খোঁজ করে। গাড়ির নম্বরটা বলে দিলেন।

    এরপর তিনি হার্পারকে বললেন অ্যানড্রুজের কাছ থেকে পাওয়া ক্যাডিলাকের নম্বরটি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে।

    হার্পার জানাল, এরকম কোন নম্বর নেই।

    ডেনিসন একট টেপ রেকর্ডার টেনে নিয়ে তাতে ভ্যান ওয়াইলির দেওয়া টেপটি চড়ালেন।

    একাগ্রচিত্তে দুজনে শুনলেন। পর পর তিনবার পুরো টেপটা শুনে ডেনিসন মেসিন বন্ধ করে একটা সিগার ধরিয়ে আরাম করে বসলেন।

    তিনি প্রশ্ন করলেন, এমন কোনো গুণ্ডাকে চেনো, যে হাতে সাইকেলের চেন জড়িয়ে লড়াই করে?

    হার্পার বলল, শ দুয়েক নাম এক্ষুণি দিতে পারি। আমার অচেনা যে সব গুণ্ডাদের এ অভ্যেস আছে তাদের সংখ্যাও ত্রিশ-বত্রিশ হাজারের কম হবে না। এটা আজকাল বীটনিক ঘোড়াগুলোর এক ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    কিন্তু এ কাজটা কোনো ছিঁচকে ছোঁড়ার কাজ নয় টম। চল্লিশ লাখ ডলার। টেপে একজন বয়স্ক লোকের গলার আওয়াজ শুনলাম। মনে পড়ছে সেই সব পুরনো দিনের কথা। যখন দনায়কেরা এরকম বিশাল অংকের মুক্তিপণ দাবি করত। এ সব কাজ ঐ জিম ক্র্যামারকে বড় ভালো মানায়। যদি অবশ্য বোকামি করে আবার দস্যজীবনে ফিরে আসেন। আমার মনে হয় না আজ আবার তিনি একটা মেয়েচুরির কাজে হাত লাগাকেন। যাই হোক, তুমি এ অঞ্চলের সবকটা ব্যাংকে টেলেক্স করে দাও যে কোনো লোক যদি ভ্যান ওয়াইলির সই করা চার লাখ ডলারের চেক ভাঙাতে আসে, তাহলে যেন আমাদের খবর দেয়। আমরা চেক ভাঙানোর সঙ্গে সঙ্গে এই লোকটির পিছু নিতে পারি।

    সম্মতি জানিয়ে হার্পার বেরিয়ে গেল।

    চোখে শূন্যদৃষ্টি, মুখ নির্বিকার, ডেনিসন ধূমপান করে চললেন। ক্র্যামার? হতে পারে! তাকে ও তার সঙ্গী জেগেটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। মনে মনে হাসলেন তিনি। যদি ক্র্যামার এর পেছনে থাকেন এবং তাকে ধরা সম্ভব হয়, তাহলে তাকে গ্যাস চেম্বারে দেবার পরিতৃপ্তি ডেনিসনেরই প্রাপ্য হবে। অবসর নেবার আগে এর চেয়ে বড় পুরস্কার কোনো পুলিশ অফিসারের কল্পনাতীত।

    .

    ০৮.

    ক্যারী খোকার একটানা কান্নার শব্দে টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। রিফের আঘাতের জায়গাটা তার গরম ও ফোলা মনে হল। বাচ্চার কান্না ছাড়া সমস্ত বাড়িটা থমথমে। সে ছেলেকে বুকে তুলে নিল। খোকা সন্তুষ্ট হয়ে কান্না থামিয়ে কিচকিচ শব্দ শুরু করল।

    ছেলেকে কোলে নিয়ে ক্যারী দালানে বেরিয়ে কান পাতল। কিছু শোনা যাচ্ছে না। সদর দরজা খুলে তাকাল।

    চিতা এদিকে তাকিয়েই উঠোনে বরাদুরে বসে আছে।

    ক্যারী ভাঙ্গা গলায় বলল, তুমি একটু এসো না

    চিতা বলল, ওর মধ্যে নাক গলাতে যেও না। খামোকা মার খাবে।

    কিন্তু তাই বলে ও ঐ মেয়েটাকে

    তোমার ঘরে গিয়ে বসে থাকো।

    ক্যারী ঘরে ফিরে ছেলেকে খাটে শুইয়ে একটি খেলনা হাতে গুঁজে দিল। তারপর দুরুদুরু বক্ষে জেলডার ঘরের দিকে চলল। আবার রিফের মুখোমুখি হবে ভেবে শিউরে উঠল। তাবলে তো আর অসহায় মেয়েটাকে জানোয়ারটার হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দরজায় সজোরে কিল মেরে চীৎকার করল। দরজা খোলো।

    কোন সাড়া না পেয়ে ক্যারী ভয় পেয়ে গেল, তবে কি শয়তানটা জেলডাকে মেরে ফেলেছে?

    দরজায় আবার ঘুষি মেরে, জেলডা! কী হয়েছে তোমার? দরজা খোলো।

    ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ পেল ক্যারী। তারপর শুনল জেলডা খিলখিল করে হাসছে।

    জেলডা ভেতর থেকে বলল, সব ঠিক আছে। তুমি চলে যাও না!

    স্তম্ভিত বিস্ময়ে ক্যারী দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় একটা শব্দে পেছনে তাকাতেই চিতাকে দেখল। তার মুখে এমন এক অভিব্যক্তি যা ব্যথা, রাগ, হতাশা আর তীব্র ঈর্ষার।

    চিতা সজোরে বলল, কাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে, বুদ্ধ কোথাকার? মেয়েদের কী করে বশ করতে হয়, তা আমার ভাইয়ের জানা আছে। যাও, নিজের ঘরে গিয়ে বসো।

    ক্যারী বিতৃষ্ণা নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এল। তারপর তীব্র ঘৃণায় শিউরে উঠে ভেতর থেকে ছিটকিনি দিল।

    .

    টহলদারী পুলিশ অফিসার মার্কি জে, ডেনিসনের অফিসঘরে এসে ঢুকল। স্যালুট করে বলল, মার্ফি, ডি ডিভিশন। সার্জেন্ট ও হ্যারিডন আমাকে পাঠিয়ে দিলেন, স্যর।

    ডেনিসন বললেন, মিস্ ভ্যান ওয়াইলির ব্যাপারে নাকি?

    আজ্ঞে হ্যাঁ স্যর। মার্কি চটপট সব কথা বলে গেল গাড়িতে বসা এই দ্বিতীয় মেয়েটিকে আমার কেমন যেন অন্যমনস্ক লেগেছিল, চিতার এক নিখুঁত বর্ণনা দিল মার্ফি। আমি ভেবেছিলাম মিস্ ভ্যান ওয়াইলি বোধহয় মেয়েটিকে গাড়ি করে শহরে পৌঁছে দিচ্ছেন।

    যা জানার ছিল ডেনিসন প্রশ্ন করে তাঁর কাছে সবটুকু জেনে নিলেন।

    মার্ফি সবশেষে বলল, আমি ম্যাকলীন স্কোয়ারে গাড়ি পার্ক করবার জায়গাটা পর্যন্ত মিস ভ্যান ওয়াইলির পেছন পেছন গিয়েছিলাম। তারপর অন্য রাস্তা ধরে।

    ঠিক আছে, ঐ মেয়েটিকে প্রয়োজন হলে সনাক্ত করতে পারবে তো?

    নিশ্চয় পিরবো।

    কোনো কথা যেন না বেরোয়, ডেনিসন মার্ফিকে সতর্ক করে দিলেন। তাকে যেতে বলে স্যান বার্নাডিনোর পুলিশ দপ্তরে ফোন করলেন। নির্দেশ দিলেন ম্যাকলীন স্কোয়ারের গাড়ি পার্ক করবার এলাকাটা ভাল করে খুঁজতে। তার ধারণা ওখানেই মিস ভ্যান ওয়াইলির জাগুয়ার গাড়িটা পাওয়া যাবে। সার্জেন্ট জানাল সে খোঁজ নিয়ে ডেনিসনকে খবর দেবে।

    মেরিল অ্যানড্রুজ ও ম্যাসন এসে ঢুকল ডেনিসনের ঘরে।

    ম্যাসন বলল, হেরাল্ড পত্রিকার লাইব্রেরীতে যত ছবি ছিল সব উল্টে পাল্টে দেখলাম, মিঃ অ্যানড্রুজ লোকটির হদিশ পেয়েছেন কিন্তু ষোলআনা নিশ্চিত হতে পারেন নি। একটা গ্রুপ ফটো দেখাল সে, এটা হচ্ছে ভেনিসের জ্যোৎস্না নামক একটা নাটকের কলাকুশলীদের গ্রুপ ফটো। শেষের সারিতে ডানদিক থেকে তৃতীয় লোকটি হলেন ভিক্টর ডারমট–যিনি এইনাটক লিখেছেন। মিঃ অ্যানড্রুজের মতে এই সেই ব্যক্তি।

    অ্যানড্রুজ বলল, হ্যাঁ, ফটোটা তেমন পরিষ্কার নয়, তবু আমার ধারণা ইনিই তিনি।

    ডেনিসন টেলেফোনে থিয়েটারী এজেন্ট সাইমন অ্যান্ড লের মালিক মিঃ সাইমনকে ধরলেন। ডেনিসনকে তিনি চিনতেন, কিন্তু হঠাৎ তার ফোন পেয়ে বেশ অবাক হলেন।

    ডেনিসন বললেন, আপনাকে বিরক্ত করলাম বলে মনে কিছু করবেন না মিঃ সাইমন। আমি মিঃ ভিক্টর ডারমটের সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই। তার ঠিকানাটা দিতে পারেন?

    সে আমি দিতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় না তাকে বাড়িতে পাবেন। ভদ্রলোক বাইরে গেছেন। কি ব্যাপার বলুন তো?

    একটুকরো কাগজে ঠিকানাটা লিখে নিয়ে ডেনিসন বললেন ধন্যবাদ। আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত। বলেই ফোন ছেড়ে দিলেন।

    ঠিকানাটা হচ্ছে ১৩৩৪৫ নম্বর লিংকন অ্যাভিনিউ, লস এঞ্জেলস। ম্যাসন, তুমি অ্যানড্রুজকে সেখানে নিয়ে যাও। সেখানে মিঃ ডারমটের খোঁজ করো। যদি তিনি বাড়ি না থাকেন, তবে তার একটা ছবি নিতে চেষ্টা করবে। যদি ইনিই সেই ব্যক্তি হন, তার বর্তমান ঠিকানাটা জেনে আসবে।

    ম্যাসন ও অ্যানড্রুজ বেরিয়ে গেলে হার্পার এসে ঢুকল।

    স্যান বার্নাডিনোর চেসন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং লস এঞ্জেলসের মার্চেন্ট ফাইডিলিটি ব্যাঙ্ক থেকে আমাদের টেলেক্সের জবাব এসেছে। এই দুই ব্যাংকে ভ্যান ওয়াইলির সই করা চার লক্ষ ডলারের দুটি বেয়ারার চেক ভাঙানো হয়েছে।

    যে লোকটা চেক ভাঙাতে এসেছিল তার চেহারা কেমন?

    হ্যাঁ–সেই একই লোক–আটত্রিশ বছর, লম্বা সুদর্শন ও শ্যামলা চেহারা। সাজসজ্জাও বেশ চমৎকার।

    তোমার ওপর একটা বিশেষ কাজের ভার দিচ্ছি, টম। সোজা অ্যারোহেড লেকে চলে যাও। ঐ অঞ্চলের সবকটা হোটেলে খোঁজ নিয়ে দ্যাখো, জিম ক্র্যামারের চেহারার কোনো লোক সম্প্রতি থেকেছেন বা থাকছেন কিনা। সাবধানে যাবে। আমাদের ফাইল থেকে ক্র্যামারের একটা ফটো, নিয়ে নাও। লেটস আর ব্রডিকে সঙ্গে নিও। খুব তাড়াতাড়ি খবর চাই।

    হার্পার বলে উঠল, জিম ক্র্যামার? আপনি বলতে চান?

    তোমাকে আমি তাড়াতাড়ি খবর পাঠাতে বললাম।

    আচ্ছা স্যর বলেই বেরিয়ে গেল।

    .

    ক্যারী!

    জেলডার ডাক ক্যারীর কানে এল। ক্যারী নিজের আহত মুখের ওপর জল লাগাচ্ছিল। ডাক শুনে দরজায় এসে দাঁড়াল।

    ক্যারী!

    শোবার ঘরের দরজা খুলে দালানে এল ক্যারী।

    কী বলছ?

    এসো না একটু।

    দালান পেরিয়ে জেলডার ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল ক্যারী। ঘরের দরজা হাট করে খোলা। ইতস্ততঃ করে সে ঘরে ঢুকল।

    খাটের একপাশে জেলডা। শুয়ে আছে। বিছানাটা একেবারে লণ্ডভণ্ড। একটি চাদরে জেলডার সর্বাঙ্গ ঢাকা। তার পরিপাটি চুল এলোমেলো হয়ে গেছে। মুখের রং লালচে। চোখে মুখে তার পরিতৃপ্তির ছাপ।

    ক্যারী দেখল রিফ ক্রেনের পাত্তা নেই। খাটের পাশে জেলডার জামাকাপড়ের ধ্বংসাবশেষ। তার পোষাক দুটুকরো হয়ে পড়ে আছে। অন্তর্বাসগুলো সাদা কাপড়ের টুকরোয় পরিণত হয়েছে।

    জেলডা খুব শান্তভাবে বলল, আমার আর কোনো জামাকাপড় নেই। আমায় কিছু পোষাক ধার দিতে পারবে?

    তোমার কোথাও লেগেছে নাকি? সে ছোকরা কোথায়?

    খিলখিল করে হেসে বলল, আমি ঠিক আছি–ও চান করছে। আমিই জোর করে পাঠালাম। উঃ ক্যারী! আমি কাউকে না বলে থাকতে পারছি না। রিফকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। তুমি জানো না ও কী অদ্ভুত ভালো! কী ভীষণ আদিম!ক্যারী! আমি ওর প্রেমে পড়েছি। জীবনে এই প্রথম একজন পুরুষকে আমার ভালো লাগল। আমি ওকে বিয়ে করব।

    তোমার কী মাথা খারাপ হয়েছে। এ কথা চিন্তা করতে তোমার লজ্জা করছে না? আমায় কিরকম মেরেছে দেখেছ?

    জেলডা বোকা বোকা হেসে চাদর একটু সরিয়ে তার উরুর ওপর একটা নীল হয়ে যাওয়া কালশিটের দাগ দেখিয়ে বলল, আমাকেও মেরেছে। মানুষটা ঐরকম। ও যা চায় তা গায়ের জোরে আদায় করতে জানে নিষ্ঠুরভাবে সুন্দরভাবে।

    ঘেন্নার চোখে ক্যারী চেঁচিয়ে উঠল, চুপ করো। বোকা কোথাকার। ঐরকম একটা জানোয়ারকে তোমার ভালো লেগেছে?

    জেলডা মুখ শক্ত করে বলল, হিংসে করে আর কি করবে! বুঝতে পারছি ওরও আমাকেই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া আর কী আশা করেছিলে তুমি। হাজার হলেও তোমার বয়েস অনেক বেশি, তার ওপর আবার বাচ্চা আছে। রিফ কখনও তোমার মত একটা মেয়ের সঙ্গে

    ক্ষিপ্তভাবে ক্যারী বলল, আর একটা কথা বললে তোমায় আমি থাপ্পড় লাগাব-ভেবোন মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছি।

    রিফ বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এল। কোমরে একটা ভোয়ালে জড়ানো তার বিশাল বুকে ঘন কালো লোম, বাহুতেও অজস্র কালো লোম। ক্যারীর মনে হল এক বীভৎস বনমানুষ। সে দরজার দিকে দুপা পিছিয়ে গেল।

    রিফ একমুখ হেসে ক্যারীকে বলল, আবার নাক গলাতে এসেছ সখি? ঝামেলা বাধাতে চাও?

    জেল বলল, আঃ, রিফ ওকে ছেড়ে দাও। ওর একটু হিংসে হয়েছে। তুমি কাছে থাকলে ও আমার গায়ে হাত দিতে পারবে না। দাও না আমায় কিছু কাপড়-চোপড়। রিফ তাড়াহুড়োর চোটে আমার সব জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেছ!

    রিফ হাসতে হাসতে বলল, হ্যাঁ, পরবার কিছু এনে দাও ওকে। আমরা দুজনে এইমাত্র প্রেমে পড়েছি।

    ক্যারী কোনরকমে কাপড়ের আলমারী দেখিয়ে বলল, ওর মধ্যে থেকে যা দরকার নিতে পার। বলে দ্রুতপদে বেরিয়ে গেল।

    ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একটা সুন্দর কাটগ্লাসের বোতল থেকে একরাশ সুগন্ধি জল, বুকে মেখে পরিতৃপ্তির সংগে গন্ধ শুকল রিফ।

    গা থেকে মাগীদের মত গন্ধ বেরোচ্ছে। কী? এবার ঠিক আছে তো?

    খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, রিফ। কী দারুণ মাসল, তোমার–

    হয়েছে, হয়েছে। তুমি এবার কাপড় চোপড় পরে নাও দিকি। আমি এক্ষুণি আসছি।

    তারই অপেক্ষায় চিতা বারান্দার রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

    রিফ এগিয়ে এসে একমুখ হেসে বলল, দারুণ ব্যাপার হয়েছে মাইরী। বুধু মেয়েটা আমার প্রেমে পড়ে গেছে। ভাবতে পারিস? দশ হাজার ডলার তো এখন আমার কাছে নস্যি। মেয়েটা আমায় বিয়ে করতে চায়।

    জ্বলন্ত চোখে চিতা বলল, বিয়ে করবে তোকে? কি বলছিস তুই?

    সত্যি বলছি! এইমাত্র জানতে পারলাম মেয়েটা আসলে কে। ওর বাবা হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে পয়সাওয়ালা বড়লোকদের একজন। টেক্রাসের আধেকটাই নাকি লোকটার কেনা। সেই জন্যেই ক্র্যামার মেয়েটাকে চুরি করেছে। এবার শোন। আমাকে দেখে মেয়েটার মাথা ঘুরে গেছে। এই ধরনের মেয়েদের গায়ের জোরে বশ করতে হয়। আর মাইরী। গায়ের জোর কাকে বলে দেখিয়ে দিয়েছি মেয়েটাকে, ওকে

    চুপ কর, নোংরা জানোয়ার কোথাকার। তোকে বিয়ে করবে! বোকা, তুই ভেবেছিস ওর বাবা এ বিয়েতে রাজি হবে?

    রিফের পা সামনের দিকে ছুটে গেল। চিতার গোড়ালিতে পা বাধিয়ে টান দিতেই সে চিৎ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। আর রিফ সঙ্গে সঙ্গে তার গালে চড় মারল।

    চিতা ওঠবার-চেষ্টা করতেই রিফ গর্জে উঠল, আরো ধোলাই চাই নাকি? যত চাস তত পাবি। খবরদার মুখ খুলবি না। আমি যা বলছি শুনে যা। বুঝতে পেরেছিস?

    চিতা গুটিয়ে গেল।

    এই হচ্ছে আমাদের সুযোগ। ক্র্যামার ব্যাটার খুব আস্পর্ধা যে আমাদের মাত্র দশ হাজার ডলার দিতে চায়, ও টাকা:তো এখন কিছুই নয়। তাছাড়া কাজটা ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা। আমি ভেবে দেখেছি, এখন আমাদের কেবল গাড়িতে চেপে মেয়েটাকে ওর বাবার কাছে ফেরৎ দিতে যেতে হবে। তাহলে আমরা এই মেয়ে চুরির ব্যাপার থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। ওর বাবা এত কৃতজ্ঞ হবে যে পুলিশও ডাকবেনা। তারপর মেয়েটা বলবে যে সে আমায় ভালবাসে। বলবে যে তার বাচ্চা হতে চলেছে। তখন আর কী উপায় থাকবে? পছন্দ হোক না তোক বিয়েতে রাজি হতেই হবে। আর তারপর মাইরী দুনিয়ার সব টাকা আমাদের কজায়, লোকটার কোটি কোটি টাকা আছে।

    আমি তো আর মেয়েটাকে বিয়ে করছি না। আমার কি গতি হবে?

    কী সব আজে বাজে বকছিস? তুইও আমাদের সঙ্গে আসবি। তাছাড়া আর কী হতে পারে?

    আমরা তিনজনে একসঙ্গে থাকব, তাই না? মেয়েটার বয়ে গেছে ওরকম ভাবে থাকতে। আমারও বয়ে গেছে।

    আমি যা বলব ও তাই করবে।

    কিন্তু আমি করব না।

    তুই কী মেয়েটার টাকা বাগাতে চাস না?

    না, চাই না। জন্মে ইন্তক আমরা এক সঙ্গে বড় হয়েছি। প্রতিটি কাজ একসঙ্গে করেছি। আজ আরেকটা মেয়ের সঙ্গে তোকে ভাগাভাগি করতে আমি রাজি নই। আমি কখনো চাইব না যে ঐ বুদু মেয়েটা আর তার টাকা তোকে আমার কাছ থেকে আড়াল করে দিক।

    তুই এমনভাবে কথা বলছিস যেন তুই আমার বৌ।

    এই, রিফ

    জেলডা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাকছে। হলদে রঙের শার্ট ও টুকটুকে লাল একটা আটসাঁট স্ন্যাকস, মাথায় বেধেছে একটা সাদা স্কার্ফ। চোখেমুখে খুশির ভাব, মুহূর্তের জন্যে তাকে প্রায় রূপসী দেখাল।

    আমরা কখন রওনা হবো, রিফ?

    জামাকাপড় পরেই রওনা হচ্ছি।

    তোমার জন্যে জামাকাপড় বের করে বিছানায় রেখেছি। তাড়াতাড়ি করো, রিফ। চটপট বেরিয়ে পড়তে হবে।

    নীরস গলায় চিতা বলল, একটা গাড়ি আসছে।

    রিফ গাড়িটা দেখে বলল, জেগেটি আসছে।

    চিতা বলল, এবার বেশ মজা হবে। মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে যাবার ব্যাপারে জেগেটিকে কী বলবি?

    রিফ একছুটে জেলডার ঘরে গিয়ে মেঝেতে ছেড়ে রাখা তার কালো চামড়ার প্যান্টটা তুলে হিপ পকেটে হাত ঢোকাল ভিক্টরের রিভলবারটার উদ্দেশ্যে কিন্তু অস্ত্রটা সেখানে নেই। আশে পাশের সবকিছু খুঁজেও পেল না। বেমালুম অদৃশ্য হয়ে গেছে রিভলবারটা।

    .

    বিশালকায়া ভেরা সিত্তর গত পাঁচ বছর যাবৎ ভিক্টর ডারমটের সেক্রেটারী। আরামপ্রিয় চেহারার পকেশ মহিলা। তার মুখে আপাততঃ সতর্ক কৌতূহলী দৃষ্টি ফুটে উঠেছে।

    ম্যাসন ও মেরিল অ্যানড্রুজকে তিনি ডেস্কের পেছন থেকে চশমার ভেতর দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এবার বললেন, কেন্দ্রীয় পুলিশ থেকে আসছেন মিঃ ম্যাসন? আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

    ম্যাসন আবার ভদ্রভাবে প্রশ্ন করল, আপনি দয়া করে বলবেন মিঃ ডারমটকে কোথায় পাওয়া যাবে?

    আমি বললাম যে, আমি কিছু বুঝতে পারছি না। মিঃ ডারমটের সঙ্গে আপনার কিসের প্রয়োজন?

    কথাবার্তার ফাঁকে অ্যানড্রুজ বড় ঘরটার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। ঘরের শেষে রূপোর ফ্রেমে আঁটা জনৈক ব্যক্তির ফটো দেখতে পেল। ডারমটের চমৎকার ফটোটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সে ঘুরে উত্তেজিতভাবে বলল, সেই ভদ্রলোকই ভিক্টর ডারমট। ভুল হবার সম্ভাবনা নেই।

    ম্যাসন স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল, এটা একটা জরুরী তদন্তের ব্যাপার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডারমটের সঙ্গে আমাদের দেখা করা দরকার। দয়া করে বলুন তিনি কোথায় আছেন।

    মিস্ সিত্তর বললেন, মিঃ ডারমট একটি নাটক লিখতে ব্যস্ত। তাকে এখন বিরক্ত করা চলবে না। আপনাকে সে ঠিকানা দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।

    মিঃ ডারমট খুব বিপদে পড়েছেন। আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে একদল ডাকাত তার বাড়িটি দখল করে নিয়েছে এবং তাদের হাতে তার স্ত্রী ও ছেলের জীবন বিপন্ন।

    মিস সিত্তর বললেন, আপনার পরিচয় পত্র দেখতে পারি। মিঃ ম্যাসন?

    ম্যাসন বিরক্তির সঙ্গে তার পুলিশী কার্ড বার করে দেখাল।

    ঠিক তিন মিনিট পরে ম্যাসন ডেনিসনকে ফোন করছিল।

    ডারমটই সেই ভদ্রলোক। তিনি এবং তার স্ত্রী নষ্টনীড় নামক একটি র‍্যাঞ্চ হাউস ভাড়া নিয়েছেন শ্রী ও শ্রীমতী হ্যারিস জোন-এর কাছ থেকে। বাড়িটা সভ্যজগৎ থেকে একদম বিচ্ছিন্ন। বোস্ট ক্রীক নামক একটা ছোট জায়গা থেকে কুড়ি মাইল আর পীট শহর থেকে পঞ্চাশ মাইল।

    ডেনিসন বললেন, বহুৎ আচ্ছা। ফিরে এসো এখানে। মিঃ অ্যানড্রুজকে এখন আর প্রয়োজন নেই। তাড়াতাড়ি চলে এসো।

    ডেনিসন ফোন নামিয়ে রাখতেই আবার বেজে উঠল। স্যান বার্নাডিনোর পুলিশ দপ্তর থেকে সার্জেন্ট ও হ্যারিডন ফোন করছে।

    মিস্ ভ্যান ওয়াইলির জাগুয়ারটা খুঁজে পেয়েছি স্যর। আপনি যেখানে বলেছিলেন সেখানেই। একটা অদ্ভুত ব্যাপার সামনের দরজার ভেতর দিকে কোনো এক কড়া অ্যাসিড স্প্রে করা হয়েছে। সমস্ত চামড়ার আচ্ছাদনটা জ্বলে গেছে।

    গাড়ির ভেতরে যা যা আঙুলের ছাপ পাও যোগাড় করো আর কী অ্যাসিড সেটাও দেখো।

    ইতিমধ্যেই আমার লোকেরা কাজে লেগে গেছে।

    আবার ফোন ছেড়ে, সিগার ধরাতেই টম হার্পারের ফোন এলো।

    হার্পার বলল, ঠিক ধরেছিলেন কর্তা, ক্র্যামার লেক অ্যারোহেড হোটেলে দুদিন ছিলেন। হোটেলের দারোয়ান ফটো দেখেই চিনতে পারল। মেয়ে চুরির দিন দুপুর তিনটেয় ক্র্যামার একটা কনভার্টিবল বুইক ভাড়া করে পীট শহরের দিকে গেছেন। সেরাত্রে আর ফেরেননি। পরদিন সকাল এগারোটার পর ফিরেছেন। হোটেলের টাকা চুকিয়ে ট্যাক্সি চেপে রেল স্টেশনের দিকে যান। তার একটু পরেই স্যান ফ্রানসিসকোর ট্রেন ছাড়ে।

    খুব ভাল, সুতরাং এর পেছনে ক্র্যামারের হাত থাকতে পারে। শোনো টম, তোমার জন্যে ঐখানেই একটা কাজ আছে। আমরা প্রায় নিঃসন্দেহ যে মিস ভ্যান ওয়াইলি নষ্টনীড় নামক এক র‍্যাঞ্চ হাউসে বন্দী আছে। নষ্টনীড়ের অবস্থান টমকে বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু ষোলআনা নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। এটা তুমি খুঁজে বার করতে পারবে?

    পারব বোধহয়।

    কড়া গলায় ডেনিসন বললেন, অত আস্তে বললে চলবে না। ডাকাতগুলো যেন কিছু জানতে না পারে। শুনলাম এরমধ্যেই ওরা প্রেঅ্যাসিড কাজে লাগিয়েছে। খুন করতেও হয়ত দ্বিধা করবে না। ওরা যদি বুঝতে পারে যে ওদের পেছনে পুলিশ লেগেছে তাহলে মেয়েটাকে ডারমটদের আর অন্যান্য যারা ওদের সনাক্ত করতে পারে তাদেরকে শেষ করে দেবে।

    শোনো টম, একটা গাড়ি ভাড়াকরো। তোমার মানিব্যাগ, পুলিশ কার্ড আর পিস্তল কাছে রেখে যাবে। গাড়ি চালিয়ে চলে যাও নষ্টনীড়ে। ভালভাবে জায়গাটার আশপাশ দেখে দরজায় ঘন্টি বাজাবে। যে-ই দরজা খুলুক না কেন, বলবে যে তুমি বাড়ির মালিক হ্যারিস জোনসের বন্ধু এবং তাদের কাছ থেকে দুমাসের জন্য বাড়িটা ভাড়া নিচ্ছ। বলবে, তুমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলে তাই একবার বাড়িটা দেখে যেতে ইচ্ছে হল–ইত্যাদি, ইত্যাদি। মোটের ওপর কথা বলতে বলতে বাড়িটার ভেতরটা দেখে নেবে। ঢুকতে নিশ্চয় তোমাকে দেবে না। কিন্তু জায়গাটার খুঁটিনাটি দেখে নেওয়া চাই। আমাকে জানাবে যে বাড়িটার কাছাকাছি কোন ঘর বা কেবিন আছে কিনা। আর পুলিশের দল সুবিধেমত গা-আড়াল করে গুলি চালাবার মত জায়গা আছে কিনা। বুঝতে পারছ, খুব সাবধানে কাজ করো, টম। ক্র্যামারের দলবল হলে ব্যাপারটা অতি বিপজ্জনক।

    ঠিক আছে কর্তা। আমি এক্ষুণি রওনা হচ্ছি। পাঁচটা নাগাদ ওখানে পৌঁছে যাব। সঙ্গে লেটস বা ব্রডিকে নেব নাকি?

    কী জন্যে? তোমার কি মন কেমন করছে?

    .

    মো ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে নষ্টনীড় ফিরছিল। বোস্টন ক্রীক পেরিয়ে রাস্তার পাশে গাড়িটা থামাল মনটাকে একটু হালকা করে নেবার জন্য।

    কিন্তু তার চোখে একফোঁটা জল নেই, কারণ হঠাৎ সে আবিষ্কার করল তার নিজের কাছে মায়ের মৃত্যুর তাৎপর্য কি? জীবনে এই প্রথম সে মায়ের সঙ্গে পরামর্শ না করেই নিজের ইচ্ছেমত কাজ করতে পারবে। এই আকস্মিক উপলব্ধি তাকে এত চমকে দিল যে সে একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে বসল এই আবিষ্কার তার ভবিষ্যৎ জীবনকে ঠিক কতটা প্রভাবিত করবে।

    আটচল্লিশ বছর বয়সে তার বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি কারণ যে কটি মেয়েকে না পছন্দ করেছে তার মা নাকচ করে দিয়েছিলেন। সারাটা জীবন তার মায়ের অধীনতায় কেটেছে। তার অজস্র বিরক্তিকর ব্যাপারের মধ্যে ছিল তার উপদেশ প্রতিদিন জামাকাপড় বদলাতে হবে। মদ বেশি খাওয়া চলবে না ইত্যাদি। আজ আড়াই লক্ষ ডলার হাতে পেলে সে এক নতুন স্বাধীন, চমৎকার জীবন শুরু করতে পারবে।

    তার মনে পড়ল যখন সে মায়ের কাছ ছাড়া থাকত তখন আবার ক্র্যামার তার ওপর শাসন চালাতেন। অবশ্য ক্র্যামার অবসর নেবার পর তার সবকিছু বানচাল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে তার দোষ কোথায়? এখন আবার ক্র্যামার তার ওপর প্রভুত্ব ফলাচ্ছেন।

    মো ভাবল, আড়াইলাখ ডলার! অংকটা চমৎকার। কিন্তু ক্র্যামার এত টাকা দিচ্ছেন তাহলে নিজে কত টাকা বাগাবেন?

    মো স্বাধীনতার মত্ততায় স্থির করল যে, ভাগাভাগিটা মোটেই ন্যায়সঙ্গত হচ্ছে না। মতলবটা ক্র্যামারের হলেও আসল বিপজ্জনক কাজটা মোর ওপর। গণ্ডগোল বাঁধলে মোর ঘাড়েই আগে কোপ পড়বে। আধাআধি বখরাতে ক্র্যামারকে রাজি করাতে হবে।

    মো নষ্টনীড়ের দিকে গাড়ি চালাল। টাকার কথাই তার মাথায় ঘুরছিল। ক্র্যামারকে বলবে যে সে ক্রেনদেরকে তার নিজের বখরা থেকে টাকা মিটিয়ে দিতে রাজি আছে কিন্তু তাকে তার নতুন ব্যবস্থায় টাকা ভাগ করতে হবে।

    তার মনকে এইসব কুটিল চিন্তা এমন সজাগ করে দিয়েছিল যে, নষ্টনীড়ের কাছাকাছি আসতেই সহজাত প্রবৃত্তির সাহায্যে বুঝতে পারল কোথাও একটা গলদ বেঁধেছে।

    খানিকক্ষণ গাড়িতে বসে বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইল। জেলডা নতুন জামাকাপড় পরে একদৃষ্টে তার দিকে চেয়ে আছে। চিতা তার পাশে দাঁড়িয়ে, রিফের চিহ্ন নেই।

    মো গাড়ি থেকে বেরোল। সে মনে মনে বলল, কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কী? ক্রেনরা অতি খল। সে তার কোটের বোতম আলগা করে দিল, যাতে প্রয়োজন বোধে কোটের নীচে রাখা ৩৮ অটোমেটিক পিস্তলটা বার করতে পারে।

    বারান্দায় উঠে সে বলল, সব ঠিক আছে তো?

    চিতা বলল, বেঠিক আবার কি হবে?

    চিতার মুখের বাঁ দিকের কালশিটে দাগ দেখে তার অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল।

    রিফ কোথায়?

    চিতা বলল, ভেতরে আছে।

    এমন সময় রিফ সদর দরজায় এসে দাঁড়াল। তার পরনে কালো চামড়ার পোক। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

    আরে, ফিরে এসেছ তাহলে?

    মো জিজ্ঞেস করল, মিসেস ডারমট কোথায়?

    রিফ বলল, তার ছোঁড়াটাকে নিয়ে ভেতরে বসে আছে।

    মো লক্ষ্য করল, রিফের হাত তার পিঠের পেছনে লুকানো।

    আমি না থাকার মধ্যে সব ঠিক ছিল?

    নিশ্চয়, নিশ্চয়, বলতে বলতে রিফ মোর দিকে এগোতে লাগল।

    মো চোখের কোন দিয়ে দেখল চিতাও সহজ ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে। মো জিজ্ঞেস করল, তোমার পেছনে ওটা কী?

    কিসের কথা বলছ তুমি? মোর কয়েক হাতের মধ্যে সে এসে পড়েছে।

    মোকে যে এক সাংঘাতিক জাতের অপরাধী বলে মনে করত পুলিশ বাহিনী সেটা ঠিক। তার মা এবং ক্র্যামার তার ওপর যখন তখন কর্তৃত্ব ফলালেও সে তেমন সংকটে পড়লে একেবারে কেউটের মত ভয়ংকর হয়ে উঠত। খুন খারাপির ব্যাপারে কম বয়েসী গুণ্ডাদের মুখোমুখি লড়াইয়ের সময় মো কখনও পিছু হটেনি। যে কোনো দস্যুর চেয়ে দ্রুত পিস্তল চালাবার আশ্চর্য ক্ষমতা তার ছিল এবং এই ক্ষমতা তাকে বহুবার প্রাণে বাঁচিয়েছে।

    রিফ সবে লোহার চেন জড়ানো হাত তুলে মো-কে ঘুষি লাগাতে যাচ্ছে, এমন সময় তার সামনে এক নিকষ কালো পিস্তলের নল উদ্যত, যেন কোন মন্ত্রবলে মোর হাতে উঠে এসেছে পিস্তল।

    চিতা থমকে দাঁড়িয়ে গেল পিস্তল দেখে। কাঁপা গলায় রিফ বলল, এ আবার কি?

    মো কড়াগলায় বলল, চেনটা হাত থেকে খোলদা। মেঝেতে ফেলে দাও।

    এ যেন এক নতুন মো। তার মুখ সুকঠিন, কালো–চোখে স্থির ও ভয়াবহ দৃষ্টি।

    তাড়াতড়ি চেনটা ফেলে রিফ বলল, আমি তো কেবল একটু ইয়ার্কি করছিলাম, ওরকম করছ কেন, মো?

    ওদিকে সরে যাও।

    তোমার মাথাটাথা খারাপ হল নাকি?বলে রিফ সুড়সুড় করে বোনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

    মো চেনটা তুলে বলল, এবার বল, এখানে কী হচ্ছে?

    এতক্ষণ জেলডা ভয়ে ভয়ে দৃশ্যটা দেখছিল। এবার সে বলল, ওকে মেরো না! আমরা একসঙ্গে চলে যাব ঠিক করেছি। ওকে আমি বিয়ে করব। তুমি যদি আমাদের সাহায্য করো, আমি বাবাকে বলব তোমায় কিছু টাকা দিতে।

    স্তম্ভিত হয়ে মো পিস্তল নামিয়ে হাঁ করে জেলডার দিকে তাকিয়ে রইল।

    রিফ সুযোগ বুঝে বলল, এই হল আসল ব্যাপার মো। আমরা প্রেমে পড়েছি। শোনো, এই সুযোগে মেয়েটাকে ফেরৎ নিয়ে গেলে ওর বাবা খুশী হবেন এবং পুলিশের ঝামেলা করবেন না। আমরা বেকসুর বেরিয়ে আসতে পারবো। আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে, আর তোমাকেও খুশী করে দেব।

    মুগ্ধনেত্রে জেলডা রিফের দিকে চেয়ে আছে। তারপর মো চিতার দিকে তাকাতেই বুঝল চিতার অন্ততঃ তেমন মনঃপুত না ব্যাপারটা।

    মো-র ক্র্যামারের কথা মনে পড়ল। ক্রেনদের এই কাজে ঢোকানোর জন্য নিজেকে গালাগাল দিল সে। ক্র্যামারের আরো তিনদিন লাগবে সব কাজ করতে। জেল আর রিফ তার বিরুদ্ধে। দাঁড়িয়েছে। চিতা হয়ত তার স্বপক্ষে থাকতে পারে।তবু বিশ্বাস করা চলে না। তার ওপর ডারমটের স্ত্রীকে পাহারা দিতে হবে।

    মো দাঁড়িয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছিল, এমন সময় দূরে কাঁচা রাস্তায় একটা গাড়ি আসতে দেখল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্ল্যাক অর্ডার (সিগমা ফোর্স – ৩) – জেমস রোলিন্স
    Next Article জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ২ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)

    Related Articles

    জেমস হেডলি চেজ

    জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ২ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)

    August 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.