Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দশটি রহস্য উপন্যাস – প্রণব রায়

    প্রণব রায় এক পাতা গল্প1004 Mins Read0

    নিশীথ নগরী – ১

    এক

    এই যে কবি, ভারি খুশি হলুম তোমায় দেখে।

    ঝলমলে কালো গাউন—পরা বছর সাতাশ—আটাশ বয়সের একটি মেয়ে এসে আমাদের টেবিলের সুমুখে দাঁড়িয়েছে—সঙ্গে সামরিক পোশাকে একটি জোয়ান পুরুষ।

    কবি টুপি খুলে তাদের অভিবাদন জানালে: চমৎকার সন্ধ্যা, না মিস হেনরিয়েটা?

    হেনরিয়েটা পুরুষটির বাহু জড়িয়ে ধরে কবির পানে চেয়ে বললে, আলাপ করিয়ে দিই এসো—আমার নতুন স্বামী রবিনসন আলিস, আর কবি অ্যাডলফ।

    কবি আরেকবার মাথা নুইয়ে বললে, আমার আগেকার সম্বোধন সংশোধন করে নিচ্ছি মিসেস আর্লিস। আপনার তৃতীয় দাম্পত্য জীবন সুখের হোক।

    হেনরিয়েটা মৃদু হেসে মিঃ আর্লিসের বাহুলগ্না হয়ে সরে গেল। বিস্মিত হয়ে কবিকে শুধোলুম, তৃতীয় দাম্পত্য জীবন মানে?

    কবি বললে, তৃতীয়বারের দাম্পত্য জীবন। হেনরিয়েটা রেনোর নাম করা সোসাইটি গার্ল। আজই সকালে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ওর বিবাহ—বিচ্ছেদ ঘটেছে জানতুম, কিন্তু ওর তৃতীয় বিয়ের খবর পাইনি।

    বললুম, এখনো চব্বিশ ঘণ্টা কাটেনি যে!

    কবি জবাব দিলে, এখানে অমন হয়েই থাকে। আদালতে রোজ অন্তত দশটা ডাইভোর্স কেস চলেছে এবং বিয়ে হচ্ছে কমপক্ষে ন’টা। ক্যালিফোর্নিয়াতে একটা hygienic law আছে যে, তিনদিনের নোটিশ না দিয়ে বিয়ে হতে পারবে না। কিন্তু যারা সময় নষ্ট করতে চায় না, তারা ছুটে আসে রেনোতে। এখানে চারজনের সঙ্গে কথাবার্তা কইতে গিয়ে তিনজনের মুখে শুনতে পাবে, ‘আমার আগেকার স্বামী, অথবা ‘অমুক তারিখের স্ত্রী’। বিবাহ—বিচ্ছেদ এখানে অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার, এতে অবাক হবার কিছুই নেই। ভালো না লাগলে এরা ভালোলাগার অভিনয় করে না।

    এতক্ষণে বুঝলুম রেনো সত্যিই মজার শহর। কিন্তু বুঝলুম না, অভিনয় কোনটা—বিবাহ, না বিচ্ছেদ? কোরাস গান ততক্ষণে থেমে গেছে, পিয়ানোর কর্ড আর বেহালার সুরের সঙ্গে শুরু হয়েছে জোড়ায় জোড়ায় নাচ। কবি তার গ্লাস চতুর্থবার পূর্ণ করতে করতে গান ধরলে:

    চাঁদের হাসিটি পড়েছে আমার ছোট্ট ঘরে,

    বাতায়নতলে ফুটছে মদির ক্রিসেন্থিমাম,

    ওগো ও কুমারী কানে কানে বলো তোমার কি নাম,

    এসো আজ মেয়ে ভালোবাসি মোরা পরস্পরে।।

    তোমায় এত খুঁজছি অ্যাডলফ—

    এবার দুটি অল্পবয়সী মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একজনের গায়ে সবুজ রেশমি ফ্রক, মাথায় কালো আর হলদে ডোরা—কাটা রুমাল বাঁধা। তার সঙ্গিনীর পরনে সাদা ঘাঘরা—সাবানের ফেনার মতো, আইসক্রিমের মতো ধবধবে! গুচ্ছ গুচ্ছ আঙুরের মতো সোনালি চুল।

    অ্যাডলফ গান থামিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে বসলে, হুকুম কারো। সবুজ মেয়েটি ভুরু বাঁকিয়ে বললে, নটি। আমরা নাচের পার্টনার খুঁজছি। কবি বললে, আমরাও। তারপর সামনের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললে, বার্থাকে আমি নিলাম, তুমি ন্যান্সিকে নাও জয়।

    বললুম, ভারি দুঃখিত। নাচ আমি তো জানিনে।

    ও। আচ্ছা, তুমি বিশ্রাম করো। ওরা তিনজনে চলে গেল! কবি আর বার্থা নাচ শুরু করেছে, ন্যান্সিও পার্টনার পেয়েছে দেখছি। ভালো নাচিয়ে বলে কবির নিশ্চয় নাম আছে, ওর একখানা হাত বার্থার কটিদেশ ঘিরে জড়ানো, আর একটা হাতে ও বার্থার দক্ষিণ হাতখানি ধরেছে। পরস্পরকে পার্টনার পেয়ে ওরা বোধ করি খুশি হয়েছে। …কিন্তু ন্যান্সি ঘনঘন আমার দিকে তাকাচ্ছে কেন—সোনালি চুল ওই মেয়েটি? নাচের ছন্দে ন্যান্সির শরীরে জাগছে ঢেউ। ন্যান্সি তন্বী, ন্যান্সি সুন্দরী! চোখে চোখ পড়তেই ওর চোখে ফুটল ইসারা, ঠোঁটে হাসি, আর গালে টোল। ওর মনের ভাষা হয়তো বুঝব না, কিন্তু ওর চোখের ভাষা বুঝেছি। মন্ত্র—চালিতের মতো উঠে ধীরে ধীরে হল থেকে বেরিয়ে পাশের নিরিবিলি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালুম।

    চাঁদ ডুবে যাচ্ছে। বারান্দাটি আবছায়া—চুপি চুপি কথা কইবার লগ্ন। ন্যান্সি এসেছে। চারখানি হাতে নিঃশব্দে পরিচয় হয়ে গেল। সাদা একটি কপোতী আমার বুকের কাছে এগিয়ে আসছে—আরো কাছে, আরো—সাদা একটা সমুদ্রের ঢেউ আমার গায়ে ভেঙে পড়েছে—

    ন্যান্সির চুমার স্বাদ মদের চেয়েও মদির!

    .

    হঠাৎ চমকে ভাঙতেই দেখি, নান্সি নেই। যেমন নিঃশব্দে এসেছিল, তেমনি অগোচরে চলে গেছে। শুধু ক্ষীণ একটি সৌরভ আমাকে ঘিরে রয়েছে। আকাশে চাঁদের পাত্তা নেই, দূরে গিরিশ্রেণী আর বুনো গাছের ছায়া ঘনতর। রাত বুঝি শেষ হয়ে এল!

    আবার হলের মধ্যে এলুম। নাচ—গান থেমে গেছে, ভাঙন ধরেছে আজকের উৎসবে। সবার হাতে শেষ পান—পাত্র। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখি, সেই কোণের টেবিলে কবি আর বার্থা মুখোমুখি বসে একই মদের গ্লাসে দুটো স্ট্র—পাইপ লাগিয়ে খাচ্ছে। থেকে থেকে বার্থার সে কী চটুল হাসি। এগিয়ে গেলুম। স্ট্র—পাইপ থেকে মুখ তুলে কবি শুধোলে, কোথায় ছিলে এতক্ষণ?

    বললুম, খোলা বারান্দায়, খোলা হাওয়ায়।

    কবি বার্থার দিকে চেয়ে বললে, বার্থা, এই আমার নতুন—পাওয়া বিদেশি বন্ধু জয়। ইন্ডিয়া থেকে আসছে। চমৎকার নাম নয়? …জয়! আনন্দ!

    বললুম, আমাদের বাংলা ভাষায় জয় মানে কিন্তু অন্য—Victory।

    খুশি হয়ে কবি বলে উঠল, দুটো মানেই চমৎকার। জয় তো যৌবনেরই।

    বার্থা আমার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে একটু হাসলে শুধু।

    বিদায়ের পালা শুরু হয়েছে: ‘গুড নাইট কবি’ ‘অ রিভোয়া’ ‘ডার্লিং অ্যাডলফ, বাই বাই’—এমনি বহুতর বিদায় সম্ভাষণ। অ্যাডলফ এখানে সত্যিই লোকপ্রিয়। ভিড় ক্রমশ পাতলা হয়ে এল। উৎসব ক্লান্ত, সেই নরনারীর জনতার মাঝে আমার চোখ উৎসুক হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কই? কোথায় সেই সাদা ঘাঘরা, সেই সোনালি চুল?

    বার্থার বাহুতে বাহু জড়িয়ে কবি এবার উঠল। যেতে হবে। হোটেলের বিল চুকিয়ে দিলুম। অ্যাডলফের একখানা হাত ধরে বললুম, শুভরাত্রি বন্ধু। অ্যাডলফ আমার হাত ছাড়ল না, প্রশ্ন করলে, রাত কাটাবে কোথায়? হোটেলের সব ঘর তো আজ ভর্তি।

    উত্তরে বললুম, একটা পার্ক বেছে নেব’খন বা রাস্তার ধারে একখানা বেঞ্চ। রাত পোহাতে কতক্ষণই বা বাকি!

    আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে কবি বললে, সে হবে না, তুমি আমার অতিথি।

    তিনজনে হোটেলের বাইরে এসে দাঁড়ালুম। সদর দরজার ওপর রঙিন লন্ঠনগুলো রাতের হাওয়ায় এখনো তেমনি দুলছে। একটু পরেই হয়তো নিভে যাবে। পিছন ফিরে আরেকবার তাকালুম—হলটা ফাঁকা, শুধু শূন্য কয়েকটা পানপাত্র, ছড়ানো ছিন্নফুলের গুচ্ছ আর রঙিন কাগজের কুচি! ন্যান্সি নিশ্চয় আগেই চলে গেছে।

    বার্থা গায়ে দিলে তার ফার—এর ক্লোক, ধীরে এগিয়ে গিয়ে অ্যাডলফের দিকে মুখ তুলে ধরলে। ক্ষণজীবী একটি মুহূর্ত। তারপর ফটক পার হয়ে বার্থা রাস্তায় নেমে পড়ল। কবি নিঃশব্দে সেই দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে আপন মনে টুপি খুলে বিদায় অভিনন্দন জানালে—বোধ করি বার্থারই উদ্দেশে, কিংবা দীপ নিভে আসা এই উৎসব রাত্রিকে। তারপর আমায় ডাকলে, এসো।

    .

    ঘুমন্ত পথ। আমার কাঁধে ভর দিয়ে কবি মন্থর পদে চলতে শুরু করলে। এতক্ষণ লক্ষ করিনি যে কবি টলছে। যেতে যেতে প্রশ্ন করলুম, আচ্ছা অ্যাডলফ, ন্যান্সি কে?

    কে আবার? সুন্দরী একটি মেয়ে। জড়ানো গলায় থেমে থেমে কবি বলতে লাগল, এছাড়া আর কি ওদের পরিচয় থাকতে পারে? ওদের সবাই এক, তোমার ওই ন্যান্সি, বার্থা, হেনরিয়েটা—সব্বাই। ওরা ভালোবাসে, ভালোবাসা চায়। এছাড়া মেয়েদের আর কোনো সংজ্ঞা নেই। কি হবে ওদের বেশি পরিচয় জেনে? ভালো যদি লাগে কাউকে, ভালোবাস,—কবি চলতে চলতে থেমে একটা সিগারেট ধরাল: তারপর ভুলে যাও।

    বললুম, ভালোই যদি বাসি, তবে ভুলে যাব কেন?

    বাঃ, নইলে নতুন মুখ তোমায় মুগ্ধ করবে কেমন করে? নতুন প্রেমের আগুন জ্বলে উঠবে কি করে তোমার মনে?…শেরির স্বাদ না ভুললে মুখে রুচবে কেন ভারমুথ, ভালো লাগবে কেন নতুন কবির রচনা, পুরোনো কবিতার পৃষ্ঠা অস্পষ্ট না হয়ে এলে? মেয়েদের বেলায়ও তাই। একজনকে ভুলতে হয়, আরেকজনকে ভালোবাসবার জন্য।

    সেই ঘুমন্ত স্তব্ধতার মাঝে মাঝে ভাঙা ভাঙা গলায় কবির কথাগুলো কেমন অদ্ভুত শোনাতে লাগল।

    বললুম, বার্থাকে তাহলে তুমি ভুলে যাবে? কবি শুধু জবাব দিলে, বার্থা আমার একাদশ প্রণয়িনী।

    বড় রাস্তা ছেড়ে এইবার ও একটা গলির মধ্যে এল। ছোট পাড়া, ডাইনের নিচু ধরনের দ্বিতীয় বাড়িটার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললে, আমার আস্তানা এই। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ওর পিছন পিছন ঘরে ঢুকলুম। কবি একটা মোমবাতি জ্বাললে। স্তিমিতালোকে ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলুম—একধারে হালকা একখানা আর্মচেয়ার আর পুরোনো একটা কাঠের টেবিল, এছাড়া আর কোনো আসবাব নেই। যেন দু’দিনের জন্য বাসা বাঁধা। অ্যাডলফ টুপিটাকে ঘরের এক কোণে ছুড়ে ফেলে দিলে, খুলে ফেললে স্কার্ফটা, তারপর জানলার পর্দা সরিয়ে দিয়ে বললে, তুমি নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছ জয়, শুয়ে পড়ো। আজকে আমার ঘুম আসবে না।

    অ্যাডলাফ আর্মচেয়ারে গা মেলে দিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরাল। শুয়ে শুয়ে আজকের উৎসবটিকে স্মরণ করলুম।—মদির ও মুখর সেই উৎসব, সাদা সেই ঘাঘরা, ফেনার মতো ধবধবে। ফেনার মতো নরম, আর গুচ্ছ গুচ্ছ আঙুরের মতো সোনালি চুল। …স্মরণ করলুম তাকে, দূর বিদেশে যে আমায় তার যৌবনের রাঙা কয়েকটি মুহূর্ত উপহার দিয়েছে, যে আমার যৌবনকে প্রথম সম্মানিত করল।

    দুই

    ক’দিন কবির ঘরে বেশ নির্ঝঞ্ঝাটে কাটিয়ে দেওয়া গেল।

    নিশ্চিন্ত অবকাশ, নিরুদ্বিগ্ন দিন। জীবনের পুরোনো পৃষ্ঠাগুলি উলটে ফেলেছি, পার হয়ে এসেছি সমুদ্রের নতুন উপকূলে। কলকাতা থেকে আসছি রেনোয়। মোটর মুখরিত সেই সভ্যতা, জন—জটিল সেই আবর্ত থেকে এসে পড়েছি বিস্তীর্ণ অবকাশের মধ্যে, নিবাবরণ আকাশের তলায়। এখানে এই পাহাড়ি নগরী সোনালি রৌদ্রে গা মেলে সারাবেলা ঝিমোয়। এখানে দিনের আকাশের চোখে আধো তন্দ্রা আর রাত্রির চোখে হালকা নেশা। অথচ এখানে আছে সবই: রাজনীতিক, পুলিশ, ব্যবসাদার, ফ্যাক্টরি, মেশিন, শ্রমিক। রেনো গরিব শহর নয়। কিন্তু এখানকার পথে ভিড় নেই, কারণ এখানে আছে ভিড় ঠেলে চলবার আগ্রহ, এখানেও আছে জীবন সংগ্রাম, কিন্তু নেই প্রাণ—ধারণের জন্য উন্মত্ত প্রতিযোগিতা।

    কবি একদিন শুধোল, কেমন লাগছে রেনোকে?

    বললুম, মন্দ কী? তবে, আমেরিকার সম্বন্ধে ধারণা আমার বদলে যেতে বসেছে।

    কবি বললে, আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।

    কেন? বিস্মিত হলাম একটু।

    কবি বললে, রেনো আমার কাছে পুরোনো হয়ে গেছে, আর কোনো মোহ নেই—এখানকার মেয়েরা বড় বেশি চেনা, এখানকার মদে আর নতুন করে নেশা লাগছে না।

    হেসে বললুম, কিন্তু একদিন তুমিই তো রেনোর রূপে মুগ্ধ হয়ে ভালোবেসে ফেলেছিলে।

    কারণ রেনো বড় বেশি ভালো।—কবি একখানা কাগজ খুঁজে এনে আমার সামনে মেলে ধরলে।

    দেখলুম, একখানা সরকারি ইস্তাহার। শহরের মেয়র মিঃ ই. ই. রবার্টস জারি করেছেন। কয়েকটা লাইন কবি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে :

    ‘builded upon the principle that all men are created equal and have certain in alienable rights, among which are, lifes liberty and the pursuit of happiness, Everyone has right to do just what his conscience dictates he should do, provided he does not interfere with the rights of others…’

    সাম্যবাদের যুগে এর চেয়ে ভালো কথা আর কি হতে পারে? দুনিয়ায় আনন্দ কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়, সবারই সমান অধিকার। সুখ চাও? স্বচ্ছন্দে তা বেছে নিতে পার, তোমার খুশিতে কেউ বাধা দেবে না—যদি তুমি অপরের খুশিতে বাধা না দাও। এমন জায়গা আমার ভালো লাগছে না কবি?

    এবার কবি কোনো জবাব দিলে না। আর্মচেয়ারে শুয়ে গুনগুনিয়ে গান ধরলে:

    সাগর পাখিরা ডানা ঝাপটায়,

    শুনতে পাও?

    নব উপকূলে জীবনের ঢেউ

    কী অস্থির!

    নগরের পথে যেথা জনগণ

    করেছে ভিড়—

    মনের বিহগ, সেখানে কি পাখা

    মেলতে চাও?

    কাল দুপুরে সে এসেছিল—বাড়িওলীর সেই মেয়েটি। নিরালা প্রহর, খোলা জানলার ধারে কবির আর্মচেয়ারে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসেছিলুম, পেছন থেকে কে যেন মেয়েলি গলায় বলে উঠল: কিটি—আমার কিটি এসেছে এখানে?

    ফিরে তাকিয়ে দেখি, সেই মেয়েটি। তাকালে সবার আগে চোখে পড়ে ওর লাল আপেলের মতো ফুলো ফুলো গাল আর উদ্ধত বুক। ওর যৌবনে সৌষ্ঠব নেই, কিন্তু বাহুল্য আছে প্রচুর। তবু মোটাসোটা দেহে ও আঁটসাঁট জ্যাকেট পরতে ভোলেনি আর খয়েরি—লালে মেশানো রঙিন ছিটের ফুলে ওঠা ঘাঘরা। মেয়েটিকে এর আগে দু’—একবার দেখেছি, দেখা হয়েছে সিঁড়িতে ওঠবার মুখে, ঝুড়ি ভরে বাজার করে ফিরছে।

    মেয়েটি দাঁড়িয়েছিল আমাদের ঘরের চৌকাঠের ওপর। এবারে দু’পা এগিয়ে এসে, একটু দম নিয়ে ফের বললে, কিটি বুঝি পালিয়ে এসেছে?

    কিটিকে চিনতে পারলুম না। আশ্চর্য হয়ে বললুম, কই না! কেউ তো আসেনি এখানে।

    মেয়েটি ঘরের মাঝখানেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল: কী দুষ্টু! কোথায় পালাল, কে জানে, আমায় এমন করে হয়রান করছে!

    দাঁড়িয়ে উঠে বললুম, অনুমতি দাও তো, তোমার কিটির খোঁজ করতে পারি।

    না, না, নিজেই সে ফিরে আসবে। এমন লক্ষ্মীছাড়া বেড়াল—ছানা দুনিয়ায় নেই।

    কিটি তবে প্রতিবেশিনীর পোষা বেড়াল ছানা! যাক, আশ্বস্ত হওয়া গেল। মেয়েটি এখনো ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কেন? আর কিছু বলবার আছে নাকি ওর?

    একখানা চেয়ার দেখিয়ে বললুম, দাঁড়িয়ে কেন? বোসো না মিস—

    ম্যাগি।—হাসি হাসি মুখে ও তাড়াতাড়ি বলে উঠল, আমার নাম ম্যাগি। তুমি কিন্তু যা খুশি বলে ডাকতে পার।

    আমার ওপর ওই অকারণ পক্ষপাতের মানে বুঝতে পারলুম না। বললুম, এবার থেকে তোমায় তাহলে মাতঙ্গিনী বলেই ডাকবে, কেমন?

    ওর মানে কি? ম্যাগি শুধোল।

    বলে ফেললুম, মাতঙ্গিনী আমাদের দেশের সৌন্দর্যের দেবী।

    ম্যাগিচট করে চেয়ার ছেড়ে জানলার ধারে গিয়ে আমার দিকে পিছন ফিরে দাঁনাল। কানের কাছে দু’পাশের বাদামি রঙের চুলের গোছা সাজিয়ে নিলে, জ্যাকেটের বন্ধনী আর একটু আঁট করে বাঁধলে, আর একটু ফুলিয়ে তুললে ঘাঘরার ঘের। তারপর কাঁধের ওপর দিয়ে তেরছা চোখে চেয়ে বললে, বয়সের তুলনায় আমায় অনেক বড় দেখায়, আমার বয়স কিন্তু সত্যিই অত বেশি নয়, সবে ছাব্বিশে পা দিয়েছি।

    সব দেশেরই মেয়েদের দেখছি বয়স সম্বন্ধে দুর্বলতা আছে। বয়েসের কথায় ওদের চরিত্রের একটি বিশেষ রূপ ধরা পড়ে।

    কিন্তু প্রতিবেশিনীর বয়স সম্বন্ধে ভুলে কৌতূহল প্রকাশ করে ফেলেছি বলে মনে হচ্ছে না তো! এমন অযাচিত বিজ্ঞাপনের দরকার কি? হাসি চেপে তবু বললাম, সৌন্দর্যের বয়স নেই মিস মাতঙ্গিনী।

    ম্যাগি এবার মুখ না ফিরিয়ে থাকতে পারল না। সে এক অপরূপ ভঙ্গি! আনন্দে ওর ছোট চোখ দুটো ফুলো ফুলো গালের আড়ালে প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে, সারা মুখখানা হয়ে উঠেছে টসটসে। কাঁধ দুলিয়ে ও বলে উঠল, তুমি ভারি চমৎকার কথা বলতে পার তো!

    একটু থেমে ম্যাগি ফের প্রশ্ন করলে, তুমি বুঝি তুর্কিরাজ্য থেকে এসেছ?

    বললুম, না ইন্ডিয়া থেকে।

    ও, ইন্ডিয়া! (ম্যাগি অবাক হয়ে গেছে) শুনেছিলাম, ইন্ডিয়া অসভ্য নিগ্রোদের রাজ্য, কিন্তু তুমি—

    ম্যাগি একটু অপ্রস্তুত হয়ে চুপ করে রইল। তারপর হঠাৎ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলতে লাগল, গুড হেভেন্স! ইন্ডিয়ার পুরুষরা যে এত লাভলি, আগে জানতুম না। জানো, কালো চোখ আর কালো চুল আমি এত ভালোবাসি!

    ম্যাগি যেমন হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল, থেমে গেল তেমনি হঠাৎ। মিনিট কয়েক চুপচাপ। ম্যাগি তেমনি দাঁড়িয়ে মুখ নামিয়ে জ্যাকেটের ঝালরের একটা কোণ খুঁটছে। কেন দাঁড়িয়ে এখানে, তা ওই জানে।

    একটু পরে মুখ তুলে ম্যাগি বললে, তোমার বিছানাটা কি অগোছালো, গুছিয়ে রাখতে পার না? সারাদিন বসে বসে কি কর?

    হেসে বললুম, কুঁড়েমি। চমৎকার কাজ নয়?

    ম্যাগিও হেসে উঠল। তারপর নিজেই গেল বিছানা গুছোতে। আবার চুপচাপ। ম্যাগি বিছানা গুছোয় আর আমার দিকে ফিরে ফিরে তাকায়। বালিশ দুটো রাখলে যথাস্থানে, চাদরটা ঝাড়লে, কিন্তু ফের না পেতে, ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলে, আচ্ছা, দুপুরবেলা তোমার একা একা লাগে না? আমার কিন্তু একা থাকতে ভারি বিশ্রী লাগে।

    ইচ্ছে হল বলি, ভাষা তোমাদের নতুন হলেও কথা তোমাদের পুরোনো। তুমি কি বলতে চাও, তা আমি জানি ম্যাগি। সব কথা কি না বললে বোঝা যায় না? কিন্তু কিছুই বলা হল না। আজকের খবরের কাগজখানা টেনে নিলুম শুধু। বিছানা পাতা শেষ করে ম্যাগি চলে গেল না, জানলার ধারে এসে দাঁড়াল। কতক্ষণ নিঃশব্দে কেটে গেল, খেয়াল করিনি!

    চেয়ে দেখি, দরজার কপাটের আড়ালে খয়েরি—লালে মেশানো ঘাঘরা সরে যাচ্ছে। ছাব্বিশ বছরের যৌবনপীড়িত দেহভার নিয়ে ম্যাগি ফিরে গেল।

    .

    ফিরতে রাত হয়েছিল। হোটেল থেকে প্রায়ই মধ্যরাত্রির আগে ঘরে ফেরা হয়ে ওঠে না। আজকে একাই ফিরছি। সিঁড়ির মুখটা অন্ধকার, কোথা থেকে সরু একটি আলো—রেখা বাঁকা ভাবে এসে পড়েছে। মনে হল, সেই আবছায়ায় একটি নারীমূর্তি চাপা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললে, দুপুরবেলায় আমায় তাড়িয়ে দিলে কেন?

    এবার চিনলুম ওকে। অবাক হয়ে বললুম, তাড়িয়ে দিয়েছি? তোমায়?

    তাড়িয়ে দিলে না তো কি!…ওর মানেই তাড়িয়ে দেওয়া! আমি কি সত্যিই কিটিতে খুঁজতে গিয়েছিলুম?

    ম্যাগির কণ্ঠ বুজে এল। আশ্চর্য মেয়ে! আমাকে এই কথা শোনাতেই ও কি এত রাত অবধি পথের পাশে জেগে রয়েছে! ওর কপালের ওপর থেকে কয়েকটি অগোছালো চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বললুম, ঘরে যাও ম্যাগি। অনেক রাত হল।

    এছাড়া কী—ই বা বলবার আছে? শুনতে পেলুম অন্ধকারে চলে যেতে যেতে ও অস্ফুট স্বরে বলছে: আমি যে এমন, সে জন্যে কি আমি দায়ী? আমি কি করব?…

    ভেবেছিলুম, আজ দুপুরে ম্যাগির আবির্ভাব নিয়ে কবির হাসির খোরাক জোগাব। কিন্তু নাঃ, থাক।

    তিন

    জুয়ার আড্ডায়।

    এখানকার এক বইয়ের দোকানে অ্যাডলফ আমায় একটা কাজ খুঁজে দিয়েছে। দিনকতক সেই কাজেই লেগেছি, যা হোক কিছু পাওয়া যাচ্ছে। এখানে হপ্তায় হপ্তায় মাইনে চুকিয়ে দেওয়ার নিয়ম। কাল ছিল শনিবার, দোকানের পে—ডে। টাকার পরিমাণ এমন কিছু বেশি নয়, তবু আপাতত এতেই চলবে। গত কয়েকদিন জঠরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিতান্ত উদাসীন হয়ে থাকতে হয়েছিল। আর্মচেয়ারে শুয়ে আর স্রেফ সিগারেট টেনে টেনে জীবন সম্বন্ধে প্রায় দার্শনিক হয়ে উঠেছিলুম আর কি! যাক, আবার কিছুদিন চলবে, অন্তত ঘরভাড়ার তাগাদা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে তো!

    সন্ধ্যার পর ঘরে আজ বাতি জ্বালিনি। পরিপূর্ণ ভাবে আলস্য উপভোগ করছি। সুকোমল একটি আবছায়া ঘনিয়ে এসেছে—বিস্মৃত স্মৃতির মতো। বসে বসে ম্যাগির কথা ভাবছি—সেই নিষ্ফলযৌবনা, সেই একা মেয়েটির কথা। আজকে আবার কার ঘরে কিটিকে খুঁজতে গেছে, কে জানে!

    সিঁড়িতে কার শিস দেওয়ার আওয়াজ পাচ্ছি, তারপর গুনগুনিয়ে গান:

    অনেক দূরের দ্বীপে যেখানে ফুটছে ফুল

    রাতের হাওয়ায়—

    নতুন দ্বীপের মেয়ে, সেখানে কী মোর

    গান পৌঁছায়?

    কবি আসছে। কাল থেকে ওর পাত্তাই পাইনি। ঘরে ঢুকেই কবি তাড়া দিলে: ওঠো, ওঠো জয়। কী বুড়োর মতো শুয়ে আছ! চলো শিগগির।

    ব্যস্ত হলুম না, কারণ কবিকে আমি জানি। ও কথা কয় এক নিশ্বাসে, হাসে ঘর মুখ করে। কাজেই ব্যস্ত না হয়েই প্রশ্ন করলুম, ব্যাপার কি? যেতে হবে কোথায়?

    বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে কবি জবাব দিলে, পথে। দেখছ না, কী চমৎকার আজকের এই সন্ধ্যাটা! বাইরে ঝিরঝিরে তুষার, আর পকেটে—, কবি একবার ট্রাউজারের পকেট চাপড়ালে: শুনেছ?

    হেসে বললুম, আমার অবস্থাও আজ সচ্ছল। কিন্তু তুমি কি হঠাৎ আলাদিনের প্রদীপ কুড়িয়ে পেলে?

    কাল সারারাত ‘গ্রিন অর্চাড’ থিয়েটারের ক্যাবারে মেয়েদের নতুন একটা নাচ শিখিয়ে দিয়েছি। আজ সকালে ক্যাশ পেমেন্ট!…কিন্তু আর শুয়ে থাকলে চলবে না, ওঠো।

    উঠতে হল এবার। ওভারকোটের উঁচু কলারে কান ঢেকে, দুটো সিগারেট ধরিয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়লুম।

    .

    এ বছর রেনোতে এই প্রথম তুষারপাত। সাদা তুষারের গুঁড়োগুলো যেন সিন্ধু—শকুনের সাদা সাদা পালকের টুকরো! বাংলাদেশে নতুন বৃষ্টির মতো এদেশেও প্রথম তুষারের একটা মাদকতা আছে। দলে দলে স্ত্রী—পুরুষ তাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে এই ঝিরিঝিরি তুষারে।

    রবিবার ছুটির দিন। শহর গমগম করছে—হাসিতে, কোলাহলে, গানে আর নাচের বাজনায়। ছুটির দিন বটে, অনেক দোকানে তবু কেনা—বেচা চলছে। থিয়েটার, সিনেমা, রেস্তোরাঁ আর সেলুন থেকে তীব্র আলো এসে ছিটিয়ে পড়েছে বড় রাস্তার ওপর। রাতের রেনোর এই রূপ!

    কবিকে শুধোলুম, আজকের প্রোগ্রাম কি?

    অ্যাডলফ জবাব দিলে, নতুন মদ, নতুন গান, আর নতুন—

    হেসে বললুম, বুঝেছি।

    সামনেই বড় বড় হরফে লেখা: Primrose Path. লাল অক্ষরগুলো ক্রমাগত জ্বলছে নিভছে। ‘প্রিমরোজ পাথ’ রেনোর অভিজাত হোটেলেগুলির মধ্যে একটি। কাচের ঘোরানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলুম। জ্যাজ নাচের রেকর্ড বাজছে। ফারকোট, ক্লোক আর মাফলারের ভিড়। ঝলমলে গাউন আর কালো সান্ধ্য—পোশাকের মাঝখান দিয়ে পথ করে ওয়েটার একধারের একটা টেবিলে আমাদের বসিয়ে দিয়ে গেল। কবি দুটো ককটেল—এর অর্ডার দিলে। হলের বাঁ দিকটায় অনেক লোক জমেছে, মৃদু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে উঁচু গলার দু’—একটা উত্তেজিত কথা।

    কবিকে প্রশ্ন করলুম, ওদিকটায় কি ব্যাপারে?

    সেদিকে না তাকিয়েই কবি বললে, হাউসি—হাউসি খেলা চলেছে, কেউ কেউ বলে কেনো। তাসের জুয়া আর কি!

    অবাক হয়ে বলে উঠলুম, এমনি খোলা জায়গায় জুয়া চলছে! পুলিশ—

    পুলিশ কি করবে?—অ্যাডলফ ঠোঁট কুঁচকে বললে, তিন মাস অন্তর স্টেটকে পনেরো ডলার আর লাভের শতকরা সাড়ে সাত ভাগ শহরের কর্তাদের দিলেই এখানে যে কেউ কেনোয় আড্ডা খুলতে পারে। তবে, তাস ছাড়া অন্য ধরনের জুয়া—খেলায় স্টেটকে দিতে হয় তিরিশ ডলার আর লাভের শতকরা দশ ভাগ শহরের কর্তাদের। আর…’ কবি গ্লাসে একটা চুমুক দিলে: রেনোতে একটা পানশালা খুলতে কত খরচ জানো? বছরে দুশো ডলার আগাম, ব্যস! তারপর বছরে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন তুমি দোকানের দরজা খুলে রাখ, কেউ আপত্তি করবে না!

    জুয়ার নেশা একরকম ভুলে গেছলুম। অথচ কবির যেমন মদ, আমার তেমনি ছিল জুয়া। মনে পড়ে, কলকাতায় পুলিশের চোখ এড়িয়ে নেবুতলার বস্তিতে রাতের পর রাত তাস নিয়ে খেলেছি ‘লাল কালো’, আর পটলডাঙায় কোনো এক মেসের চিল—কোঠায় ভদ্রযুবকের সঙ্গে ‘ফ্ল্যাস’। জীবনে যত না জিতেছি, হেরেছি তার ঢের বেশি। তবু তাতেই পেয়েছি বেশি উত্তেজনা, পেয়েছি ভাগ্য—পরীক্ষার নতুনতর উৎসাহ! …যে উৎসাহ আমার আজও মরেনি।

    কবিকে বললুম, চলো না, ভাগ্যের সঙ্গে একবার আলাপ করে আসি।

    গ্লাসটা নিঃশেষ করে কবি জবাব দিলে, তার চেয়ে কোনো নতুন মুখের সঙ্গে আলাপ করা ঢের ভালো।

    বললুম, তাহলে আমিই ঘুরে আসি।

    গুড লাক!—বাঁ হাতখানা নেড়ে কবি শুভেচ্ছা জানালে।

    .

    বড় একটা টেবিলে খেলা চলেছে। ধারে সারি সারি চেয়ার পাতা, নানা বয়সী স্ত্রী—পুরুষে ভর্তি। ভিড় এখানেই বেশি। টেবিলের ওপর তাস আর নোটের তাড়া ছড়ানো। চোখে চোখে উৎসুক দৃষ্টি, মুখে মুখে আলো আর ছায়া। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলুম। শুনেছি, হাউসি—হাউসি বা কেনো এখানে ভারি প্রিয়। প্রত্যেক কেনো—কার্ডের দাম দশ সেন্ট, জিতলে প্রত্যেক দানে পাঁচ ডলার লাভ।

    একটা বৃদ্ধা বিড়বিড় করে বকতে বকতে আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। ফ্যাকাশে মুখ, নিভে—যাওয়া চাউনি। এর শেষ বয়সেও অদৃষ্ট ওকে ঠাট্টা করতে ছাড়েনি হয়তো! ওদিকে তখন একটি ছোকরা নোটের তাড়া পকেটে গুঁজছে, তার গা ঘেঁষে অল্পবয়সী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।

    বুড়ির খালি চেয়ারটা আবার ভর্তি হয়ে গেছে। এবার এসে বসেছে একটি যুবতী। লাল স্কার্টটা তীব্র আলোয় আগুনের আভার মতো জ্বলছে। পেন্ট করা ভুরু, রুজ মাখা গাল, আর ঠোঁটে লম্বা সিগারেট। তার চেয়ারের পেছনে ডিনার—জ্যাকেট পরা অতিরিক্ত মোটা এবং বেঁটে লোক দাঁড়িয়ে। কিন্তু মেয়েটি যেন আমার চেনা! …কে ও? ন্যান্সি না? ন্যান্সিই তো! গুচ্ছ গুচ্ছ আঙুরের মতো সেই সোনালি চুল। এক মুহূর্তে আমার শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল। ভিড় ঠেলে এগিয়ে, ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলুম। কিন্তু ন্যান্সি কি আমাকে চিনতে পারেনি? ইচ্ছে হল বলি: তোমায় আমি কত খুঁজেছি ন্যান্সি—সেই হোটেলে, রেনোর পথে পথে, আমার নিশীথ স্বপ্নে! মুখ ফিরিয়ে ন্যান্সি তখন তাসের দান ধরেছে। আমাকে ও চিনতে পারেনি। চিনতে পারবেও না। …আচ্ছা, এবার নতুন এক্সপেরিমেন্টই করব ন্যান্সি!

    পকেট থেকে একমুঠো নোট বের করে বলে উঠলুম, এক ডজন কার্ড কিনতে চাই।

    টেবিলশুদ্ধ লোক একবার আমার দিকে তাকাল। তাকাল না শুধু ন্যান্সি। খেলা শুরু হয়েছে। ন্যান্সি দান ধরেছে ছ’খানা তাসের, আমি ধরলুম বারোখানার। হেরে যাব, তা জানতুম, জীবনে কোনোদিনই প্রথমবার জিততে পারিনি। তা হোক, আরও বারোখানা কার্ড কেনবার পয়সা পকেটে এখনো রয়েছে। এবারেও ন্যান্সি ধরলে ছ’খানার দান, আমি তার ডবল। কিন্তু এবারেও হার হল আমার। পর পর এত বেশি আজ কেউ হারেনি। সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে; ন্যান্সির ঠোঁটের কিনারে বাঁকা হাসি!

    সেই মোটা বেঁটে লোকটা খুশিতে বেলুনের মতো ফেটে পড়বার উপক্রম। সেলুনের মালিক আমার পিঠ চাপড়ে বলে উঠল: Try your luck again, Kid!

    কথাটা ব্যঙ্গের মতো শোনাল, তবু পকেটে হাত দিলুম। যা বাকি আছে, তাতে আর বারোখানা কার্ডের দাম কুলোবে। কিন্তু তারপর? …তারপর ভাববার অবকাশ নেই। ভাগ্যকে আজ আমার শেষ চ্যালেঞ্জ!

    চার

    হ্যাঁ, ভাগ্যকে আমার এই চ্যালেঞ্জ! ব্যর্থ যদি হতে হয়, তবে তার আগে বড় রকমের একটা এক্সপেরিমেন্ট করাই ভালো। ব্যর্থতার উত্তেজনা আমার শিরায়, স্নায়ুতে তীব্র মদের নেশার মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এবারেও যদি হেরে যাই, তবে আমি জানি, ন্যান্সি, আমার ব্যর্থতাই তোমাকে আমার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে অনেকদিন। জীবনে এত বড় জয়ের সুযোগ তোমাকে নিশ্চয়ই খুব কম লোকই দিয়েছে, হয়তো আর কেউই দেয়নি।

    তৃতীয়বার খেলা শুরু হয়েছে। টেবিলের চারপাশে গুঞ্জন গেছে থেমে। স্তব্ধ কয়েকটি মুহূর্ত। হঠাৎ সেলুনের মালিক অস্ফুট আনন্দধ্বনি করে উঠল; এবার জিত আমার।

    আশেপাশে আবার শোনা যাচ্ছে কথার কলগুঞ্জন। ন্যান্সি একটু চঞ্চল হয়ে উঠেছে। বেলুনাকৃতি লোকটার পকেট থেকে এবার বেরিয়েছে নোটের তাড়া। শুরু হল চতুর্থবারের খেলা। কিন্তু ভাগ্য এখন আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে, এবারে হারবার পালা ন্যান্সির।

    পঞ্চমবার ও দান ধরলে বারোখানা তাসের, আমি চব্বিশখানার। কিন্তু এবারেও ভাগ্য ওকে ঠাট্টা করে গেল। আশেপাশে কলরব বেড়ে উঠেছে, কেউ কেউ আমায় জানাচ্ছে কনগ্র্যাচুলেশনস। এরই মধ্যে আমার নতুন নামকরণ হয়ে গেছে: Lucky stranger—সৌভাগ্যবান আগন্তুক।

    আবার খেলা হল। আরো একবার। বিদ্রোহী অদৃষ্টকে ঘুষ দিয়ে বশ করবে বলে ন্যান্সি আরো বড় দান ধরল। কিন্তু ওর হাত কাঁপছে! তুষার—তীক্ষ্ন এই ঠান্ডা রাতেও কপালে ওর বিন্দু বিন্দু ঘাম! তবু হল না। একরোখা পুলিশ অফিসারের মতো অদৃষ্ট ঘুষ নিল না। আবার ন্যান্সি হেরে গেছে। ভাগ্য ন্যান্সির মতোই পূর্বপরিচিতকে ভুলে যায়! মোটা বেঁটে লোকটার নোটের তাড়া শীর্ণ হয়ে এসেছে।

    সাতবারের পর আমিই প্রথম দান ধরলুম—একসঙ্গে আটচল্লিশখানা তাসের। আবার টেবিলের চারপাশে রুদ্ধশ্বাস স্তব্ধতা। ন্যান্সির পিছন ফিরে তার সঙ্গীর মুখের পানে চাইলে। সে—মুখ চিমনির মতো অন্ধকার। লোকটা নিঃশব্দে বারকয়েক মাথা নাড়লে শুধু। তার মানে, বিশ্বাসঘাতক অদৃষ্টকে সে আর ঘুষ দিতে রাজি নয়। ন্যান্সির মুখে কিন্তু এতটুকু চাঞ্চল্য দেখা গেল না, হঠাৎ সে আশ্চর্যরকম শান্ত হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সে আরেকটা সিগারেট ধরালে, তারপর অত্যন্ত সহজভাবে উঠে ভিড় ঠেলে চলে গেল। যখন সে এসেছিল, তখনও সে আমায় দেখতে পায়নি, চলে গেল যখন তখনও ফিরে তাকাল না।

    .

    ন্যান্সি আমায় দিয়ে গেছে কতকগুলো পাউন্ড আর ডলার, কিন্তু তার বদলে হরণ করে নিয়ে গেল আমার উৎসাহ, নিভিয়ে দিয়ে গেল আমার উত্তেজনা। চলে গেছে, যাক; কিন্তু আজকের এই জুয়াখেলার মোহ, কেনো—খেলার এই নেশা কেড়ে নিয়ে গেল কেন? এতবার জিতেও শেষ পর্যন্ত ন্যান্সির কাছে আমারই হার হল!

    Hurry up lucky guy ! সুযোগ তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে। ভাবনা কিসের?—সেলুনের মালিক তাড়া দিলে।

    চেয়ে দেখি ন্যান্সির চেয়ারে এবার এসে বসেছে এক বুড়ো ইহুদি। শকুনের মতো শুকনো শীর্ণ চেহারা। পকেট থেকে একখানা মাত্র নোট বের করে, সেই একখানা বারবার গুনছে। তাসগুলো টেবিলের ওপর ছড়িয়ে ফেলে বললুম, আর খেলব না।

    সেলুনের মালিক অবাক হয়ে গেল: বলো কি! আজ তোমার বরাত খুলে গেছে, এ সুযোগ কি কেউ হারায়? এতগুলো কার্ড কিনলে?

    উঠে দাঁড়িয়ে বললুম, এই আটচল্লিশখানা কার্ডের দাম তোমায় ফেরত দিতে হবে না, কিন্তু আজ আর খেলব না আমি।

    .

    ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলুম। ছুটির সন্ধ্যায় ‘প্রিমরোজ পাথ’ গমগম করছে, জ্যাজ—ব্যান্ডের রেকর্ড এখনো থামেনি। অনেক ঘাঘরার রং, অনেক হাসির ঝিকিমিকি, অনেক চোখের আলাপ। কিন্তু সে নেই—আগুনের শিখার মতো সেই লাল স্কার্ট, গুচ্ছ গুচ্ছ আঙুরের মতো সেই সোনালি চুল, পাথরের মূর্তির মতো সেই আশ্চর্যসুন্দর অথচ আশ্চর্য—কঠিন ভঙ্গিমা। নাই বা রইল, তাতে আমার কি আসে যায়?

    কবির খোঁজ করা দরকার। আমাদের টেবিলের কাছে ফিরে গিয়ে দেখি…বাঃ! রেনোতে কোনো সন্ধ্যাই কবিকে একলা কাটাতে দেখলুম না। জলপাই রঙের গাউন পরা ছিপছিপে গড়ন একটি অচেনা মেয়ের মুখোমুখি বসে কবি গল্প করছে। এর ডান হাতের আঙুলগুলির সঙ্গে ওর বাঁ হাতের আঙুলের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা।

    বার্থা নয়—কবির দ্বাদশ প্রণয়িনী বোধ করি। মেয়েটির প্রায় নিরাবরণ বুক দেখে, ইয়াঙ্কি সভ্যতার মূল কথাটি বুঝতে পারলুম। আমাদের দেশ চাইছে মনের মুক্তি, আর আমেরিকা চাইছে দেহের মুক্তি।

    আমার দেখে কবি বলে উঠল, এই যে জয়! ভাগ্যের সঙ্গে আলাপ হল? হার, না জিত?

    একখানা চেয়ার টেনে নিয়ে বললুম, গোটাকতক পাউন্ড জিতেছি বটে, কিন্তু শেষ অবধি আমায়ই হারতে হল।

    তার মানে? ভুরু কুঁচকে কবি শুধোলে।

    ওকে ন্যান্সির কথা বললুম। শুনে কবির ঠোঁটে হাসি টলটল করে উঠল, তারপর সেই হাসির ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল ওর নীল চোখে। আমার কাঁধে একটা হাত রেখে বললে, ভারমুথ এখন তোমার মনের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। আচ্ছা জয়, তুমি কি ভাব মানুষের মন ছবির ফ্রেম? যে ফোটো বাঁধিয়ে রেখে দেবে, বরাবর তাই থাকবে! মেয়েদের মন হচ্ছে আয়নার মতো, যতক্ষণ সামনে থাকবে, তোমারই ছায়া পড়বে—যেই সরে যাবে, অমনি সে আয়নায় পড়বে নতুন মুখের ছায়া। সে রাতে তোমাকে ন্যান্সির ভালো লেগেছিল বলে আজ রাতে ভালো নাও লাগতে পারে। এতে আশ্চর্য হবার কি আছে? কাল তুমি খেয়েছিলে নেভিকাট সিগারেট, আজ লাকিস্ট্রাইক খাচ্ছ কেন?

    গ্লাসটা (বলতে পারি না, এটা দ্বিতীয় না সপ্তম গ্লাস) কবি আরেক বার মুখে তুললে। তারপর শুরু করলে: বার্থার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কেন জানো? বিয়াল্লিশ ঘণ্টার বেশি তাকে ভালো লাগেনি বলে। বার্থাকে আর ভালো লাগে না বলেই তো নতুন মুখ ভালো লাগল। পেলুম নতুনতর ভালোবাসার স্বাদ, পেলুম এই ক্লডেটকে।

    ক্লডেট বাঁকা চোখে চেয়ে বললে, Naughty Adolf ! Pretty Adolf!

    কবি বলে চলেছে: পুরোনো মুখ যত ভুলে যাবে, নতুন মুখ তত ভালো লাগবে। জীবনে যদি শুধু একজনকেই ভালো লাগে, তবে বুঝতে হবে মনের হয়েছে অপমৃত্যু! ন্যান্সিকে তোমার এখনো ভালো লাগে জেনে আমি দুঃখিত।…একটু ভারমুথ খাবে?

    বললুম, না। তার চেয়ে করিডরে একটু বেড়াই।

    কেনোর টেবিলের পাশেই লম্বা বারান্দা। টেবিলের চারপাশে এখনো ভিড়, রাতের সঙ্গে সঙ্গে খেলাও উঠেছে জমে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলুম। কত লোক চলে যাচ্ছে, কত লোক আসছে। ভাগ্যের চাকা ঘুরে চলেছে। হঠাৎ চোখে পড়ে গেল…দেখি, সাদা একখানা হাত সাপের মতো নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে আমার বুক পকেটের দিকে, সরু দুটি আঙুলের টানে পকেট থেকে নোটের তাড়া বেরিয়ে এল। এখুনি ভিড়ের মাঝে চকিতে অদৃশ্য হয়ে যাবে…কিন্তু তার আগেই সাদা হাতখানা আমার মুঠোর মধ্যে ধরা পড়েছে!

    ন্যান্সি!…তুমি?

    ন্যান্সির সারা মুখখানা তার গালের রুজের মতোই টকটকে লাল হয়ে উঠল, দেখতে দেখতে আবার কাগজের মতো সাদা হয়ে গেল।

    তার হাতে এখনো নোটের তাড়া। ন্যান্সি তাহলে চলে যায়নি, আমার জন্যে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল! এখন সে আমাকে চিনতে পেরেছে নিশ্চয়। কিন্তু আমি এই ন্যান্সিকে চিনি না, চিনতে পারব না। আমি চিনতুম তাকে—আলোর শিখার মতো শ্বেতবসনা, আলোর শিখার মতো পবিত্র সেই মেয়েটি, বিদেশে যে আমার যৌবনকে প্রথম সম্মান দিয়েছিল।

    আমাদের ঘিরে জন—জটলা কলরব, আর বহু কণ্ঠের প্রশ্ন: ব্যাপার কি? চুরি? …পুলিশে ফোন করা হয়েছে?

    ন্যান্সির হাতখানা আস্তে আস্তে ছেড়ে ছিলুম। তারপর স্পষ্ট গলায় বললুম, আপনারা অকারণে ব্যস্ত হবেন না, নোটগুলো ওকে আমিই দিয়েছি।

    সবাই একবার পরস্পরের মুখের পানে তাকালে, তারপর সরে গেল। একটা রোমাঞ্চকর ঘটনার সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ায় অনেকেই ক্ষুণ্ণ হল হয়তো, কেউ কেউ হয়তো আরো রোমাঞ্চকর কিছু ভাবলে।

    এতক্ষণ ন্যান্সি মুখ নিচু করে দাঁড়িয়েছিল, এইবার মুখ তুললে। পাথরের মতো কঠিন মুখ, পাথরের মতো কঠিন চোখ। হাতের নোটগুলো ছড়িয়ে ফেলে দিয়ে আমার দিকে চেয়ে স্পষ্ট গলায় বললে, তুমি মিথ্যেবাদী! তোমার নোটগুলো আমি চুরি—চুরি করেছি। আমায় পুলিশে ধরিয়ে দিতে পার।

    বলতে পারতুম, তোমায় পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারি না, তা তুমি জানো ন্যান্সি, আমার চেয়ে ভালো করেই জানো!—কিন্তু কিছুই বলতে পারলুম না। ন্যান্সি আরেকটা সিগারেট ধরালে, ফারফোট গায়ে দিলে, তারপর দরজার দিকে এগোল। কানের কাছে কারা বলাবলি করছিল: ও, ওই মেয়েটা! নাচের আসরে আর জুয়ার আড্ডায় ঘুরে ঘুরে পকেট মারাই তো ওর পেশা!

    চিৎকার করে ডাকতে গেলুম, ন্যান্সি—! গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না। শুধু দেখলুম, কাচের দরজাটা একবার ঘুরে গেল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদেরি হয়ে গেছে – প্রচেত গুপ্ত
    Next Article মহাভারতের মহারণ্যে – প্রতিভা বসু
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }