Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প323 Mins Read0

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১২

    অধ্যায় ১২

    হোটেলের লাউঞ্জে প্রবেশ করতেই পেছনের টেবিল থেকে এক লোক ডাক দিলো ইয়াসুকোকে। কুডো। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো বেশিরভাগ টেবিলই নানা বয়সি মানুষে ভর্তি। অনেকের পরনে দামি স্যুট, চকচকে জুতো, টাই। খাওয়া দাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ব্যবসায়িক আলাপটাও সেরে নিচ্ছে তারা। নিচের দিকে তাকিয়ে কুডোর টেবিলটার দিকে হাটা দিলো সে।

    “এভাবে হঠাৎ করে ডাকার জন্যে দুঃখিত,” কুডো হেসে বললেন। “কিছু খাবে?”

    ওয়েটার আসলে তার কাছে এক কাপ দুধ-চা অর্ডার করলো ইয়াসুকো।

    “কিছু হয়েছে নাকি?” ইয়াসুকো জিজ্ঞেস করলো।

    “না, সেরকম কিছু না,” কফির কাপ তুলতে তুলতে বললেন কুডো। “আমার বাসায় একজন ডিটেক্টিভ এসেছিলেন গতকাল।”

    “তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে!”

    “তুমি তাদের আমার ব্যাপারে কিছু বলেছিলে নাকি?”

    “আসলে সেদিন ডিনার শেষে বাসায় যাবার পর আমার বাসায় পুলিশ এসেছিল। আমি কোথায় গিয়েছিলাম, কার সাথে গিয়েছিলাম এসব প্রশ্নের উত্তরও দিতে হয়েছে আমাকে। তখন যদি আপনার কথা না বলতাম তাহলে আরো সন্দেহ করতো ওরা। আমি খুবই দুঃখিত—”

    “আরে, তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন?” মাঝপথেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন কুডো। “আমি জানি তোমার কোন দোষ নেই। আর আমাদের মাঝে যদি ভবিষ্যতে কিছু হয়, তাহলে সেটা পুলিশের জানতে সমস্যা কোথায়? আমার মনে হয় তাদের বলে ভালোই করেছো তুমি।”

    “আসলেই?” ইয়াসুকো তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।

    “শুধু মনে রেখো, এখন থেকে আমাদের ওপর সবসময় নজর রাখবে ওরা,” মাথা নেড়ে বললেন কুডো। “এখানে আসার পথেও কেউ অনুসরণ করছিল আমাকে।”

    “কি!”

    “প্রথম দিকে অত খেয়াল করিনি, কিন্তু মোড়টা ঘোরার সময় পরিস্কার বুঝতে পারি সব। ওরা এমনকি আমার পিছু নিয়ে পার্কিংলটেও ঢুকেছিল।”

    কুডো এমনভাবে কথাগুলো বললেন যেন খুবই সাধারণ ঘটনা সেগুলো। কিন্তু ইয়াসুকো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। “এরপর? কোথায় গেলো তারা?”

    “জানি না,” কাঁধ তুলে বললেন তিনি। “ওদের চেহারা দেখতে পারিনি আমি। এখানে বসার পর থেকেই আশেপাশে তীক্ষ্ণ নজর রাখছি, কিন্তু সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি আমার। অবশ্য ওদের না চোখে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার ধারণা এতক্ষণে চলে গেছে ওরা।“

    ইয়াসুকোও আশেপাশে একবার তাকালো। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত সবাই।

    “তার মানে আপনাকে সন্দেহ করছে ওরা?”

    “আমি তোমাকে টোগাশিকে খুন করতে সাহায্য করেছি-তারা বোধহয় এমন গল্প ফেঁদেছে। কালকে যে ডিটেক্টিভটা এসেছিলেন, তিনি তো কোন রাখঢাক না করেই আমার অ্যালিবাইয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন।”

    ওয়েটার দুধ-চা নিয়ে এসেছে। সেটা টেবিলে পরিবেশন করার সময়ে ইয়াসুকো দ্বিতীয়বারের মত আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিলো।

    “তারা যদি এখনও আপনার ওপর নজর রাখে তাহলে আমাদের দু- জনকে একসাথে দেখলে কিছু সন্দেহ করবে না?”

    “করলে করুক। বললামই তো, ওসবের আর পরোয়া করি না আমি। সবাই আমাদের একসাথে দেখলেও কিছু যায় আসে না এখন। লুকোছাপা করলে ওদের মনে সন্দেহ আরো বাড়বে,” কুডো পেছন দিকে হেলান দিয়ে আয়েশ করে হাত ছড়িয়ে বসে বললেন। যেন ভাবভঙ্গি দিয়েই বোঝাতে চাচ্ছেন কোনকিছুর পরোয়া করেন না।

    “আসলে আমি চাই না আমার জন্যে আপনাকে কোন সমস্যায় পড়তে হোক। আমাদের বোধহয় কিছুদিন দেখা-সাক্ষাত না করাই ভালো হবে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আর কি।”

    “আমি জানতাম তুমি এ ধরণের কিছু বলবে,” সামনের দিকে এগিয়ে এসে বললেন কুডো। “এজন্যেই তোমাকে এখানে ডেকেছি আজ। আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তোমাকে। ঘটনার দিন অন্য এক লোকের সাথে ছিলাম আমি। সেটাই শক্ত অ্যালিবাই হিসেবে কাজ করবে। বেশিদিন আমাকে ঘাটাবে না ওরা।”

    “সেটাই যেন হয়।”

    “আমি আসলে তোমাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত,” কুডো উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন। “ওরা এটা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে ফেলবে, আমি তোমাকে কোনভাবেই সাহায্য করিনি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, তোমাকে এত সহজে রেহাই দিচ্ছে ওরা। আমার তো ভাবলেই খারাপ লাগছে ব্যাপারটা।’

    “কিছু করার নেই এখন। টোগাশি তো খুন হবার আগে আমার খোঁজ করছিল।”

    “একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না, তোমার সাথে কী এমন দরকার ছিল তার? মরে গিয়েও সে তোমাকে শান্তি দিচ্ছে না,” কুডো মুখ বাঁকিয়ে বললেন। “তুমি তো আসলেই কিছু করোনি, তাই না? না না, সন্দেহ করছি না তোমাকে। মারা যাবার আগে যদি টোগাশির সাথে যোগাযোগ হয় তোমার তবে সেটা নিশ্চিন্তে আমাকে বলতে পারো। বলা যায় না, সাহায্যও করতে পারি তোমাকে।“

    ইয়াসুকো অভিব্যক্তিহীনভাবে কুডোর দিকে তাকালো। তাহলে এজন্যেই আজ ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি? অল্প হলেও সন্দেহ দানা বাঁধতে

    শুরু করেছে তার মনে।

    “না, আমি আসলেও কিছু করিনি,” মুখে হাসি টেনে বলল সে।

    “আমিও এটাই ভেবেছিলাম। তবুও তোমার মুখ থেকে শুনতে পেয়ে ভালো লাগলো,” ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে বললেন কুডো। “এসেই যখন পড়েছো ডিনারটা আমার সাথে সেরে যাও? খুব ভালো একটা ফ্রেঞ্চ রেস্টুরেন্ট চিনি আমি।”

    “না, আজকে পারবো না। মিশাতোকে বলে আসিনি।”

    “ওহ্, ঠিক আছে তাহলে। আমি চাই না সে একা একা থাকুক, বিলের কাগজটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন কুডো। “চল, তাহলে?”

    কুডো বিল দেয়ার সময় আরেকবার আশেপাশে তাকালো ইয়াসুকো। কিন্তু কাউকে দেখেই গোয়েন্দা বলে মনে হলো না।

    কুডোকে পুলিশ সন্দেহ করার একটা ভালো দিকও আছে, খুব তাড়াতাড়িই সত্যটা জেনে যাবে তারা। তখন তার সাথে দেখা সাক্ষাতে আর বিধি-নিষেধও থাকবে না। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছে না ইয়াসুকো, এরকম নাজুক পরিস্থিতে কুডোর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া কি উচিত হবে? যতই মনে মনে সেটা চাক না সে। আর ইশিগামির কথাটাও মাথায় রাখতে হবে।

    তোমাকে বাসায় পৌছে দেবো আমি,” বিল দেয়া শেষ করে বললেন কুডো।

    “তার দরকার হবে না। ট্রেনে করেই চলে যেতে পারবো।”

    “এত কষ্ট করার দরকার নেই, আমিই পৌঁছে দিচ্ছি।”

    “না, আসলেও লাগবে না। বাসায় যাওয়ার পথে টুকটাক বাজার করতে হবে আমাকে।”

    “ঠিক আছে,” একটু মনোক্ষুন্ন হয়ে বললেন কুডো, কিন্তু শেষপর্যন্ত হাসিমুখেই বিদায় জানালেন তাকে। “পরে দেখা হবে তাহলে। আমি ফোন দিলে সমস্যা হবে?”

    “না, না, কোন সমস্যা হবে না। চা খাওয়ানোর জন্যে ধন্যবাদ,” এই বলে হাটা দিলো ইয়াসুকো।

    শিনাগাওয়া স্টেশনের কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। হাটতে হাটতেই সেটা বের করে ডিসপ্লে দেখলো সে। বেন্টেন-টেই থেকে সায়োকো ফোন করেছে।

    “হ্যালো?”

    “হ্যালো? ইয়াসুকো? কথা বলতে পারবে এখন?” সায়োকোর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে উদ্বিগ্ন সে।

    “হ্যা, কোন সমস্যা?”

    “ডিটেক্টিভটা আজকেও এসেছিল। এবার অনেক উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেছে, তাই ভাবলাম তোমাকে ফোন করি।”

    শক্ত করে ফোনটা চেপে ধরলো ইয়াসুকো। না জানি কি জাল পাতছে পুলিশ অফিসারগুলো তার জন্যে।

    “উল্টাপাল্টা প্রশ্ন মানে?” অস্বস্তির সাথে জিজ্ঞেস করলো সে।

    “ঐ লোকটা সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল তারা। তোমার প্রতিবেশি। কী যেন নাম…ইশিগামি?”

    ফোনটা প্রায় পড়েই যাচ্ছিল ইয়াসুকোর হাত থেকে। “ওনার ব্যাপারে কি প্রশ্ন?” কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো সে।

    “তারা নাকি শুনেছে, এখানে একজন কেবল তোমাকে দেখার জন্যেই লাঞ্চ কিনতে আসে। তার ব্যাপারে জানার জন্যেই এসেছিল। আমার ধারণা কুডো এ কথা বলেছে তাদেরকে।”

    “কুডো?”

    ইয়াসুকোর মাথাতেই ঢুকলো না ব্যাপারটা।

    “ইয়াসুকো…আমি বোধহয় ওরকম কিছু একটা কুডোকে বলেছিলাম একসময়, আর সেটাই সে পুলিশকে জানিয়েছে।”

    এতক্ষণে ব্যাপারটা পরিস্কার হলো তার কাছে। কুডোকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইশিগামির ব্যাপারে নিশ্চয়ই কিছু শুনেছে তারা, এরপরে বেন্টেন-টেইয়ে গেছে সেটা যাচাই করতে।

    “তুমি তাদের কি বললে, সায়োকো?”

    “আমি ওদের মনে সন্দেহ জাগাতে চাইনি, তাই সত্যটাই বলে দিয়েছি। বলেছি, তিনি একজন গণিতের শিক্ষক, তোমার পাশের বাসায় থাকেন। আর এখানে তার আসার কারণ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই, কিন্তু ধারণা করছি, তোমাকে পছন্দ করেন তিনি…এসব।”

    ইয়াসুকোর গলা শুকিয়ে গেছে। ইশিগামির ব্যাপারটা তাহলে জেনেই গেছে পুলিশ। কুডোই কি তাদেরকে সে কাজে সাহায্য করেছে নাকি অন্য কোন কারণে তাকে সন্দেহ করছে তারা?

    “হ্যালো? ইয়াসুকো?”

    “হ্যা, শুনছি।’

    “যাই হোক, এগুলোই বলেছি আমি ওদের। কোন সমস্যা হবে না তো?”

    হবে, কিন্তু মুখের ওপর সেটা তাকে বলতে পারলো না ইয়াসুকো। “না, আমার মনে হয় না কোন সমস্যা হবে। আর ইশিগামির তো এসবের সাথে কোন সম্পর্কও নেই।”

    “আমিও এটাই ভেবেছিলাম, তবুও জানিয়ে রাখলাম তোমাকে।”

    “ধন্যবাদ,” এই বলে ফোন কেটে দিলো ইয়াসুকো। পেটের ভেতর মোচড় দিচ্ছে তার। মনে হচ্ছে বমি করে ফেলবে।

    বাসায় ফেরার পুরো পথটাই দরদর করে ঘামলো সে। মাঝখানে বাজারে থেমে এটাসেটা কিছু জিনিস কিনলেও বাসায় যেতে যেতেই ভুলে গেলো কি কিনেছে।

    X

    ইশিগামি তার কম্পিউটারে বসে কাজ করছিল, এমন সময় পাশের বাসার দরজা খোলার আওয়াজ আসলো তার কানে। কম্পিউটার স্ক্রিনে তিনটা ছবি খোলা। দুটো কুডোর আর অন্যটা ইয়াসুকোর। হোটেলে ঢোকার সময় তোলা হয়েছে ওগুলো। তাদের দু-জনের একসাথে একটা ছবি তোলার ইচ্ছে ছিল তার, কিন্তু তাতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। আর ইয়াসুকো তাকে দেখে ফেললে ঝামেলা হয়ে যেত। তাই তিনটা ছবি তুলেই চলে এসেছে।

    পরিস্থিতি একদম খারাপ হলেই কেবল এ ছবিগুলো কাজে আসবে তার, তবে সে আশা করছে, ওরকম কিছু ঘটবে না।

    ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজছে প্রায়। তার মানে বেশিক্ষণ কথাবার্তা বলার সময় পায়নি কুডো আর ইয়াসুকো। কেমন যেন স্বস্তি লাগলো কথাটা ভেবে।

    টেলিফোন কার্ডটা পকেটে ভরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো সে। আশেপাশে তাকিয়ে যখন নিশ্চিত হলো তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে না তখন টেলিফোন বুথের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

    সেখানে পৌছে ইয়াসুকোর মোবাইলে ফোন দিলো সে। তিনবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে তার আওয়াজ ভেসে আসল।

    “হ্যালো?”

    “আমি, ইশিগামি। কথা বলতে পারবেন এখন?”

    “হ্যা।”

    “কিছু হয়েছে আজকে?” সে আসলে জানতে চায়, কুডোর সাথে ইয়াসুকোর কি কথা হয়েছে। কিন্তু সেটা জিজ্ঞেস করা সম্ভব নয়, কারণ কুডোর পিছু না নিলে তাদের একসাথে দেখতো না সে।

    “আসলে…” ইয়াসুকো বলতে শুরু করলো।

    “আসলে কি? কোন সমস্যা?” নিশ্চয়ই কুডো তাকে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝিয়েছে।

    “বেন্টেন-টেইয়ে আবার পুলিশ এসেছিল। এবার আপনার সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল ওরা?”

    “আমার সম্পর্কে? কেন?” ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো ইশিগামি।

    “ইয়ে মানে, আসলে দোকানে আপনার সম্পর্কে কয়েকদিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছিল, ঘটনার আগে থেকেই। আমি দুঃখিত এসব আপনাকে আগে বলিনি। আসলে আমি চাইনি আপনি রেগে…

    এভাবে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলায় ইশিগামির রাগ উঠছে এখন। ইয়াসুকো কখনও গণিতে ভালো করতে পারেনি, এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত।

    “আমি রাগ করবো না। দয়া করে সব কিছু খুলে বলুন, কিচ্ছু লুকাবেন না। আমার সম্পর্কে কি বলছিল তারা?” ইশিগামি উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলো। তার চেহারা সম্পর্কে বাজে কোন মন্তব্য শুনতে হতে পারে এখন।

    “আসলে আমি এতদিন স্বীকার করিনি…আপনি তো বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা। এখানে অনেকের ধারণা আপনি বেন্টেন-টেইয়ে লাঞ্চ কিনতে আসেন শুধুমাত্র আমাকে দেখার জন্যে।”

    “কি!” বাজ পড়লো যেন ইশিগামির মাথায়।

    “আমি আসলেও দুঃখিত। তারা মজা করার জন্যে ওটা বলেছিল। আপনার কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে নয়। আমিও গুরুত্ব দেইনি ব্যাপারটাকে,” ইয়াসুকো কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল।

    কিন্তু ইশিগামির কানে এখন এসব কিছুই ঢুকছে না। অন্য কেউ কিভাবে বুঝল এ কথা?

    তারা অবশ্যই ঠিক ধারণাটাই করেছে। ইয়াসুকোকে দেখতেই সে দোকানে যায় প্রতিদিন। আর এখন বুঝতে পারছে সে নিজেও অবচেতন মনে এটা ভাবতো, এক না এক সময়ে ইয়াসুকোও সত্যটা ধরতে পারবে। কি হাসাহাসিটাই না করেছে তারা ইশিগামিকে নিয়ে। তার মত কুৎসিত এক লোক কিনা প্রেমে পড়েছে ইয়াসুকোর মত সুন্দরির!

    “আপনাকে রাগিয়ে দিয়েছি আমি, তাই না?” ইয়াসুকো বলল।

    “না না, ডিটেক্টিভরা ঠিক কি জিজ্ঞেস করেছিল?” গলা খাঁকারি দিয়ে বলল ইশিগামি।

    “যেমনটা বললাম, তারা নাকি শুনেছে, আমাকে দেখতে প্রতিদিন কেউ আসে। তার নাম জানার জন্যেই এখানে এসেছিল, আর দোকানে তখন যে ছিল সে সবকিছু বলে দিয়েছে।”

    “তারা এরকম কথা কোত্থেকে শুনলো?”

    “আমি… আমি ঠিক জানি না।“

    “আর কিছু জিজ্ঞেস করেছিল তারা?”

    “না, মনে হয়।”

    শক্ত করে রিসিভারটা কানে চেপে ধরলো সে। এ মুহূর্তে সাহস হারালে চলবে না। কিভাবে ব্যাপারটা ঘটল সে জানে না, কিন্তু পুলিশের নজর তার দিকে ঘুরে গেছে এখন। বুদ্ধি দিয়ে সামনে এগোতে হবে।

    “আপনার মেয়ে আছে আশেপাশে?”

    “মিশাতো? হ্যা, আছে, কেন?”

    “তাকে দেয়া যাবে একটু?”

    “অবশ্যই।”

    ইশিগামি চোখ বন্ধ করে বোঝার চেষ্টা করলো ঐ কুসানাগির মাথায় কি ঘুরছে এখন। কি ফন্দি আঁটছে হারামজাদা। আর মানাবু ইউকাওয়ারই বা এসবের সাথে কি সম্পর্ক।

    “হ্যালো?” ওপাশ থেকে মিশাতোর গলার আওয়াজ ভেসে এলো।

    “আমি ইশিগামি,” বলল সে। “মিশাতো, তুমি তো বারো তারিখে তোমার বন্ধুর সাথে সিনেমাটার ব্যাপারে কথা বলেছিলে, তাই না? মিকা ছিল না ওর নাম?”

    “হ্যা, পুলিশকেও একথা জানিয়েছি আমি।”

    “হ্যা, ভালো করেছো। তোমার আরেকজন বন্ধু আছে না? হারুকা?”

    “জি। হারুকা তামাওকা।”

    “তার সাথেও তো সিনেমাটার ব্যাপারে আলাপ করেছিলে, তাই না?”

    “হ্যা, একবার শুধু। তা-ও বেশিক্ষণ না।“

    “পুলিশকে তো তার ব্যাপারে কিছু জানাওনি?”

    “না, শুধু মিকার কথা বলেছি। আপনিই তো বলেছিলেন হারুকাকে না জানাতে, তাই বলিনি।”

    “ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনে হয় এখন হারুকার ব্যাপারটাও তাদের জানানোর সময় এসে গেছে।”

    এরপরে আশেপাশে নজর বুলিয়ে মিশাতোকে কি করতে হবে সেটা খুলে বলল সে।

    X

    টেনিস কোর্টের পাশের খোলা জায়গাটা থেকে ধূসর রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি উড়তে দেখা যাচ্ছে।

    কুসানাগি সেখানে পৌঁছে দেখলো ইউকাওয়া একটা লাঠি হাতে নিয়ে তেলের ড্রামের ভেতরে কী যেন খোঁচাচ্ছে। ল্যাব কোটের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো।

    তার পদশব্দ শুনে ইউকাওয়া ঘুরে তাকালো, “আবার গন্ধ শুকে এসে পড়েছো দেখছি।”

    “সন্দেহজনক লোকজনের ওপর নজর রাখাই ডিটেক্টিভদের কাজ।“

    “তাহলে আমাকে সন্দেহ করা হচ্ছে এখন?” ইউকাওয়া একপাশের ভুরু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো। “তোমার মধ্যে বেশ তেজ দেখছি আজকাল? ভালো, এই দুনিয়াতে টিকে থাকতে হলে সেটার দরকার আছে।”

    “তোমার যা ইচ্ছে বলতে পারো, গ্যালেলিও,” কুসানাগি ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলল। “জানতে চাইছো না কেন সন্দেহ করছি তোমাকে?”

    “তার দরকার নেই। লোকজন এমনিতেও বিজ্ঞানীদের সন্দেহ করে সবসময়,” ড্রামের ভেতরের জিনিসগুলোকে আরো একবার নাড়িয়ে বলল সে।

    “কি পোড়াচ্ছো?”

    “সেরকম কিছু না। কিছু রিপোর্ট কার্ড আর পুরনো জিনিসপত্র, যেগুলো আর লাগবে না আমার,” এই বলে পাশে থেকে একটা বালতি তুলে ড্রামের ভেতরে পানি ঢেলে দিলো ইউকাওয়া। ছ্যাঁৎ করে আওয়াজ হয়ে ধোঁয়ার পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো।

    “তোমার কাছে কিছু প্রশ্ন ছিল আমার … অফিশিয়ালি।”

    “আসলেও কিছু একটা ঘুরছে তোমার মাথায়, তাই না?” বালতিটা হাতে নিয়ে হাটা শুরু করলো ইউয়াকাওয়া।

    কুসানাগি অনুসরণ করলো তাকে। “তোমার সাথে কথা বলার পরে বেন্টেন-টেইয়ে গিয়েছিলাম গতকাল। খুব মজার একটা কথা শুনলাম সেখানে। জানতে চাও না কি সেটা?”

    “না।”

    “তবুও বলছি তোমাকে। ইয়াসুকোকে পছন্দ করে তোমার বন্ধু ইশিগামি।”

    হাটা বন্ধ হয়ে গেলো ইউকাওয়ার। ঘুরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কুসানাগির দিকে তাকালো সে, “ওখানকার কেউ একথা বলেছে তোমাকে?”

    “ওরকমই কিছু একটা। কাল তোমার সাথে কথা বলে ট্রেনে ওঠার পরে একটা জিনিস মাথায় আসে আমার। যুক্তি আর প্রমাণের তো দরকার আছেই, কিন্তু একজন গোয়েন্দার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো তার কল্পনাশক্তি।”

    “তো?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করলো। “এটার সাথে কালকের তদন্তের কি সম্পর্ক?”

    “না বোঝার ভান কোরো না। আমি জানি তুমিও ইশিগামিকে সন্দেহ করো। কিন্তু আমার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছিলে ব্যাপারটা।“

    “কিছু লুকানোর চেষ্টা করছিলাম বলে মনে পড়ছে না।”

    “যাই হোক, আমি এখন জানি তুমি কেন তাকে সন্দেহ করো। তার ওপর কড়া নজর রাখা হবে এখন থেকে। আর সেজন্যেই এখানে এসেছি আজ। কাল অবশ্য আমরা বলেছিলাম নিজের কাজ নিজেই করবো, কিন্তু এখন একটা চুক্তিতে আসতে চাই। আমি তোমাকে সব তথ্য দেবো, বিনিময়ে তুমি আমাকে বলবে কি খুঁজে পেয়েছো এই কেসটার ব্যাপারে। খারাপ না কিন্তু চুক্তিটা।”

    “তুমি আসলে আমাকে একটু বেশিই চালাক ভাবো। কিছুই খুঁজে পাইনি আমি। সবটাই আমার কল্পনা।”

    “সেই কল্পনার কথাই খুলে বলো আমাকে,” কুসানাগি তার বন্ধুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।

    কিছুক্ষণ ভেবে আবার হাটা শুরু করলো ইউকাওয়া। “ল্যাবে চল আগে।”

    ১৩ নম্বর ল্যাবে ঢুকে বড় টেবিলের পাশে বসে পড়লো কুসানাগি, আর ইউকাওয়া তার বিখ্যাত ইনস্ট্যান্ট কফি বানানো শুরু করলো।

    “আচ্ছা, ইশিগামিও যদি এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকে তাহলে তার ভূমিকাটা কি?” কাপে গরম পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করলো ইউকাওয়া।

    “আমাকেই কথা বলতে হবে প্রথমে?”

    “চুক্তির প্রস্তাবটা কিন্তু তুমিই দিয়েছিলে,” চেয়ারে বসতে বসতে বলল ইউকাওয়া।

    “ঠিক আছে। চিফকে ইশিগামির ব্যাপারে কিছু বলিনি এখনও, তাই যা বলবো তার পুরোটাই আমার নিজের ধারণা। খুনটা যদি অন্য কোথাও হয়ে থাকে, ইশিগামিই সেটা নদীর পাড়ে বয়ে নিয়ে গেছে।”

    “তাই? কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম তোমার ধারণা খুনটা ওখানেই করা হয়েছে।“

    “আগেই বলেছিলাম কিন্তু, একজন সঙ্গি থাকলে সে যুক্তি আর খাটবে না। আমার এখনও মনে হয় কাজটা ইয়াসুকো হানাওকাই করেছে। আর ইশিগামি তাকে সাহায্য করেছে।”

    “বেশ নিশ্চিত মনে হচ্ছে তোমাকে।”

    “দেখো, ইশিগামিই যদি খুনটা করে থাকে, তাহলে সে-ই কিন্তু মূল অপরাধি, সহযোগি নয়। ইয়াসুকোকে সে যতই ভালোবাসুক না কেন, মনে হয় না এত বড় ঝুঁকি নেবে। সে যদি একাই খুনটা করে থাকে, আর ইয়াসুকো যদি সে ব্যাপারে জানতো, তাহলে এতদিনে ধরা পড়ে যেত ইশিগামি। তার মানে ইয়াসুকোও এসবের সাথে যুক্ত।”

    “এমন কি হতে পারে না, ইশিগামিই টোগাশিকে খুন করেছে, এরপর দু-জন মিলে লাশ ওখানে নিয়ে গেছে?“

    সম্ভব না এটা বলবো না আমি, কিন্তু সেটার সম্ভাবনা খুবই কম। ইয়াসুকো হানাওকার সিনেমা হলের অ্যালিবাইটা নড়বড়ে হতে পারে, কিন্তু পরেরটুকুতে কোন খুঁত নেই। খুনটা করার পরে কারাওকে বারে যাওয়া সম্ভব ছিল তার পক্ষে, কিন্তু লাশ ওখানে নিয়ে যেতে হলে সেটা সম্ভব নয় কিছুতেই।”

    “অ্যালিবাইয়ের কোন অংশটুকু নিশ্চিত হতে পারোনি তোমরা?”

    “সাতটা থেকে নয়টা দশের মধ্যবর্তি সময়টা, যখন সিনেমা দেখছিল তারা। নুডল্স শপ আর কারাওকে বারে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি আমরা। তবে সিনেমা হলে সে গিয়েছিল কোন এক সময়ে, কারণ তার টিকেটের ছেঁড়া অংশের বাকিটা খুঁজে পেয়েছি আমরা ওখানে। আঙুলের ছাপও মিলে গেছে।”

    “তোমার ধারণা ঐ দু-ঘন্টা দশ মিনিটেই সে আর ইয়াসুকো মিলে খুন করে টোগাশিকে?”

    “লাশটাও হয়তো তখনই লুকানোর ব্যবস্থা করে তারা, কিন্তু ইশিগামির আগেই ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে ইয়াসুকো।”

    “তাহলে খুনটা কোথায় হয়েছিল?”

    “সেটা বলতে পারবো না। বোধহয় ইয়াসুকোই সেখানে ডেকে পাঠিয়েছিল টোগাশিকে।”

    চুপচাপ কফির কাপে চুমুক দিতে লাগলো ইউকাওয়া। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না কুসানাগির ব্যাখ্যা সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তাকে।

    “কিছু বলার আছে তোমার?”

    “সেরকম কিছু না।”

    “বলার থাকলে বলে ফেল,” কুসানাগি বলল। “আমার যা যা মনে হয় সব তো বললামই, এবার তোমার পালা।”

    “ সে কোন গাড়ি ব্যবহার করেনি,” হঠাৎ করে বলল ইউকাওয়া। “কি?”

    “আমি বললাম, ইশিগামি কোন গাড়ি ব্যবহার করেনি। লাশটা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কিছু তো দরকার ছিল তার, তাই না? আর যেহেতু তার নিজের কোন গাড়ি নেই সেহেতু অন্য কোনভাবে সেটা জোগাড় করতে হবে তাকে। কিন্তু সেটা সম্ভব বলে মনে হয় না আমার, তাহলে কোন না কোন প্রমাণ থেকেই যেত।”

    “সব রেন্ট-এ-কার কোম্পানিতেই খোঁজ নেবো আমরা।”

    “তা নিতে পারো কিন্তু আমি নিশ্চিত, কিছুই খুঁজে পাবে না।”

    কুসানাগি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পদার্থবিদের দিকে তাকিয়ে থাকলো, কিন্তু ইউকাওয়া পাত্তাও দিলো না তাকে। “আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো। খুনটা যদি অন্য কোথাও হয়ে থাকে, তবে ইশিগামিই লাশটা নদীর তীরে নিয়ে গিয়েছিল পরে। এখনও এটার ভালো সম্ভাবনা আছে, খুনটা আসলে লাশ যেখানে খুঁজে পাওয়া গেছে সেখানেই হয়েছিল। যদি তারা দু-জনেই এর সাথে জড়িত থেকে থাকে, তবে যেকোন কিছুই সম্ভব।”

    “তো,” ইউকাওয়া কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “তোমার ধারণা তারা দু-জন টোগাশিকে সেখানে খুন করে, এরপর তার চেহারা আর আঙুলের ঐ অবস্থা করার পর সব জামাকাপড় খুলে নেয়। সব শেষে পালিয়ে যায় সেখান থেকে?”

    “ভিন্ন ভিন্ন সময়েও ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারে তারা,” এই বলে তার নিজের কফির কাপের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলো কুসানাগি। ময়লা জমে আছে পুরো কাপে। “কারণ ইয়াসুকোকে সিনেমাটা শেষ হবার আগেই সিনেমা হলে পৌছুতে হত।”

    “আর তোমার মতে ভিক্টিম নিজে সাইকেলে চড়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে?”

    “হতে পারে।”

    “তার মানে তো এটা দাঁড়াচ্ছে, ইশিগামি সাইকেল থেকে আঙুলের ছাপ মোছার কথা ভুলে গিয়েছিল। এই সামান্য ভুলটা কি তার পক্ষে করা সম্ভব? বুদ্ধ ইশিগামির?”

    “অতি জ্ঞানী লোকেরাও মাঝে মাঝে ভুল করে।”

    “সে করবে না,” আস্তে আস্তে মাথা দুলিয়ে বলল ইউকাওয়া। “আচ্ছা, তাহলে সে আঙুলের ছাপ রেখে গেলো কেন সাইকেলে?”

    “আমিও সেটাই চিন্তা করছিলাম,” হাত ভাঁজ করে বলল ইউকাওয়া। “এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।”

    “আমার মনে হয় তুমি একটু বেশিই পেঁচিয়ে চিন্তা করছো ব্যাপারটা। ইশিগামি অঙ্কে খুব ভালো হতে পারে, কিন্তু খুনি হিসেবে আনাড়ি সে।”

    “অসম্ভব,” ইউকাওয়া বলল। “বরং খুনটাই আরো সহজ কাজ মনে হওয়ার কথা তার কাছে।”

    “যাই হোক, তার ওপর কড়া নজর রাখা হবে এখন থেকে। ইয়াসুকোর যদি আসলেই কোন পুরুষ সঙ্গি থেকে থাকে তাহলে তদন্তের ক্ষেত্রটা কিন্তু আরো বড় হয়ে গেলো।”

    তোমার নতুন ধারণাটা যদি ঠিক হয়, তাহলে বলতে হবে, খুনটা খুব দায়সারাভাবে করা হয়েছিল। সাইকেলে আঙুলের ছাপ, আধপোড়া জামাকাপড়, সবকিছুতেই অযত্নের চিহ্ন। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, খুনটা কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল নাকি হঠাৎ করেই ঘটে যায় ঘটনাটা?”

    “আসলে…” বলা শুরু করেও ইউকাওয়ার শান্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করতে লাগলো কুসানাগি। “হঠাৎ করেও হতে পারে। এই যেমন, ইয়াসুকো হয়তো টোগাশিকে কথা বলার জন্যে ডেকে পাঠিয়েছিল সেখানে, সঙ্গে করে ইশিগামিকে নিয়ে গিয়েছিল বডিগার্ড হিসেবে। এরপরে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে আর তারা দু-জন মিলে খুন করে টোগাশিকে।”

    “কিন্তু এটা তো সিনেমা হলের গল্পটার সাথে একদমই খাপ খাচ্ছে না,” ইউকাওয়া বলল। “যদি কথা বলার জন্যেই ডেকে থাকে টোগাশিকে, তাহলে অ্যালিবাই তৈরি করে রাখার কি দরকার?”

    “তোমার ধারণা খুনটা পূর্ব পরিকল্পিত? টোগাশি সেখানে আসার পরে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইশিগামি আর ইয়াসুকো?”

    “না, সেরকমটা ঘটেছিল বলে মনে হচ্ছে না।“

    “বেশ, কি ঘটেছিল তাহলে?”

    “ইশিগামিই যদি সব পরিকল্পনা করে থাকে, তবে সেটাতে এত ফুটো থাকার কথা নয়।

    “তাহলে-” কুসানাগির কথার মাঝখানেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। “দাঁড়াও একটু,” এই বলে কলটা রিসিভ করলো সে।

    কিছুক্ষণ পরেই সে গভীর আলোচনায় ডুবে গেলো। ফোন রাখার আগে পকেট থেকে একটা নোটপ্যাড বের করে কী যেন টুকে নিলো সেখানে।

    “আমার পার্টনার কিশিতানি ফোন করেছিল,” ইউকাওয়াকে বলল সে। “ইয়াসুকোর মেয়ে সম্পর্কে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য হাতে এসেছে আমাদের। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মিশাতোর এক সহপাঠি নাকি অদ্ভুত একটা কথা বলেছে।”

    “কি বলেছে?”

    “খুনের দিন লাঞ্চের সময় মিশাতো নাকি তার সেই সহপাঠিকে বলেছিল, রাতে সে আর তার মা সিনেমা দেখতে যাবে।”

    “আসলেই?”

    “কিশিতানি নিশ্চিত করেছে ব্যাপারটা। তার মানে ইয়াসুকো আগে থেকেই সিনেমা দেখার পরিকল্পনা করে রেখেছিল,” কুসানাগি তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল। “আমার ধারণাই ঠিক, পুরোটাই পরিকল্পিত।”

    “অসম্ভব,” গম্ভীর মুখে মাথা দোলাতে দোলাতে বলল ইউকাওয়া।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.