Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প323 Mins Read0

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৫

    অধ্যায় ৫

    ল্যাবের টেবিলের ওপর একটা লোহার দন্ড রাখা আছে। সেটার নিচের দিকে একটা গোলাকার চাকতি। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে সেটার উপরের দিকে একটা সুইচ লাগানো।

    “এটা আবার কি?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করলো। নিচু হয়ে জিনিসটাকে দেখছে সে।

    “আমি হলে ওটাতে হাত দিতাম না,” কিশিতানি সতর্ক করে দিলো পাশ থেকে।

    “আরে, মনে হয় না কোন বিপদ হবে। কারণ বিপজ্জনক জিনিসপত্র এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার কথা না ওর,” কুসানাগি সুইচটাতে চাপ দিতে দিতে বলল। সাথে সাথে চাকতি ওপরে উঠে ভাসতে লাগল দন্ডটার পাশে।

    কুসানাগি হা হয়ে গেলো ব্যাপারটা দেখে। একদম শূন্যে ভাসছে চাকতিটা

    “ওটা নিচে নামানোর চেষ্টা করো দেখি,” বাইরে থেকে কেউ বলে উঠলো।

    কুসানাগি দেখলো ইউকাওয়া ঢুকছে ঘরে। হাতে একটা পেটমোটা ফাইল!

    “ক্লাসে ছিলে নাকি?” কুসানাগি চাকতিটার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল। ওটাকে নিচে নামানোর জন্যে হাত বাড়াল সে। সাথে সাথে হাত ফিরিয়ে নিলো, “আউচ! এত গরম কেন?”

    “বিপজ্জনক জিনিসপত্র আমি বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখি না, কথাটা কিন্তু ঠিক বললে না,” মৃদু হেসে বলল ইউকাওয়া। “আর এই জিনিসটার পেছনের যে সূত্র কাজ করছে সেটা হাইস্কুলের কোন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রও বলতে পারবে।”

    “হাইস্কুলে আমার পদার্থবিজ্ঞান ছিল না,” কুসানাগি হাতে ফুঁ দিতে দিতে বলল। কিশিতানি হেসে ফেলল সেটা শুনে।

    “তোমার বন্ধুটা কে?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করলো।

    কিশিতানির মুখ থেকে হাসিটা উধাও হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি বাউ করে বলল, “আমি কিশিতানি। ডিটেক্টিভ কুসানাগির সাথে কাজ করি আমি। আপনার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছি, স্যার। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অনেক কেসে সাহায্য করেছেন আপনি। সেখানে সবাই আপনাকে ডিটেক্টিভ গ্যালেলিও বলে ডাকে।“

    ইউকাওয়া হাত নেড়ে উড়িয়ে দিলো কথাটা, “ও নামে ডাকবে না আমাকে। শখ করে যে সাহায্য করি না সেটা তো জানোই বোধহয়। তোমার ডিটেক্টিভ কুসানাগির মিনমিন করা শুনতে ভালো লাগে না বলেই করি। তার যুক্তিগুলো যা হয় না একেকটা! বেশি সময় কাটিয়োনা ওর সাথে। তাহলে তোমার মগজটাও ওর মত…”

    কিশিতানি অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রাখতে গিয়েও পারলো না। কুসানাগি রাগি রাগি দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।

    “একটু বেশিই হাসো তুমি,” কুসানাগি গম্ভীর স্বরে বলল। “আর তুমি যে কেসগুলা সমাধান করে মজা পাও সেটা স্বীকার করছো না কেন?” এবার ইউকাওয়ার দিকে ঘুরে বলল কথাটা সে।

    “মজা পাওয়ার কি আছে ও কাজে বলো দেখি? ঐ সময়গুলো গবেষণার পেছনে দিতে পারতাম আমি। এবার আশা করি কোন ‘অমীমাংসিত’ কেসের কাজে আসোনি?”

    “না, শুধু তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছি। এই এলাকায় কিছু কাজ ছিল আমাদের।“

    “যাক, বাঁচা গেলো,” ইউকাওয়া সিঙ্কের কাছে গিয়ে কেতলিতে পানি ভরে সেটা বার্নারে চাপিয়ে দিলো। এভাবেই কফি বানানোর সূচনা করে সে। “তোমার এডোগাওয়া নদীর তীরের খুনটার সমাধান হলো?” কাপে ইন্সট্যান্ট কফির গুড়ো ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করলো সে।

    “তুমি কিভাবে বুঝলে আমরা ঐ কেসটা নিয়ে কাজ করছি?”

    “একটু যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলেই বোঝা যায়। সেদিন আমার এখানে তুমি ফোনটা ধরার পর রাতের খবরেও খুনটার ব্যাপারে রিপোর্ট দেখেছিলাম একটা। আর এখন তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না তদন্তের অবস্থা খুব একটা ভালো।”

    কুসানাগি কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না সেটা, “অতটাও খারাপ চলছে না। কয়েকজনকে সন্দেহ করছি আমরা। কেবল তো শুরু।”

    “সন্দেহভাজন? তাই নাকি?” ইউকাওয়া প্রশ্ন করলো ঘাড় না ঘুরিয়েই। তার গলার স্বর শুনে অতটা আগ্রহি বলে মনে হলো না।

    “আসলে,” কিশিতানি মাঝে বলে উঠলো। “আমার মনে হয় না আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি।”

    “তদন্ত যে দিকে মোড় নিচ্ছে সেটা নিয়ে তোমার আপত্তি আছে?” ইউকাওয়া ভুরু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো।

    সেটাকে ঠিক আপত্তি বলবো না আমি….

    “ওটাকে তুমি কিছু না বললেই ভালো লাগবে আমার,” কুসানাগি ধমকের সুরে বলল।

    “আমি দুঃখিত, স্যার।”

    “আরে, ক্ষমা চাইছো কেন?” ইউকাওয়ার আওয়াজ শুনে মনে হলো সে ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করেছে এখন। “তোমাকে যে আদেশ করা হয় সেগুলো তুমি পালন করো, কিন্তু তোমার নিজেরও মতামত থাকছে সে ব্যাপারে—এটা তো অনেক ভালো কথা। গতানুগতিক সব নিয়ম- কানুনকে প্রশ্ন করার মত কেউ যদি না থাকে তাহলে নতুন নতুন পথ আবিষ্কার হবে কিভাবে?”

    “আরে, এত বক্তৃতা না দিলেও চলবে,” কুসানাগি বলল। “ও ভালো মানুষ সাজার জন্যে কথাগুলো বলেছে, আর কিছু না।”

    “কি? না, আমি সেরকম – “

    *

    “আহা, স্বীকার করে নাও, কিছু মনে করবো না আমি। ঐ ডিভোর্সি মহিলা আর তার মেয়ের প্রতি সহানুভূতি জেগেছে তোমার ভেতরে। সত্যি কথা বলতে কি, ওনাদের সন্দেহের বাইরে রাখা গেলে আমার নিজেরও ভালো লাগতো।”

    “জটিল মনে হচ্ছে ব্যাপারটা,” ইউকাওয়া হাসতে হাসতে বলল।

    “কিছুই জটিল না এখানে। যে লোকটা খুন হয়েছে সে তার প্রাক্তন স্ত্রীর খোঁজ করছিল ইদানিং। আর সেই মহিলার অ্যালিবাই খতিয়ে দেখার কাজই করছি আমরা এখন।“

    “তার অ্যালিবাই আছে তাহলে?”

    “এ ব্যাপারটাই তো খোঁচাচ্ছে আমাকে,” কুসানাগি মাথা চুলকে বলল। “ওহ্, তোমার গলার সুর শুনে মনে হচ্ছে, অবস্থা সুবিধের নয়, ইউকাওয়া কফির কেতলির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল। ধোঁয়া বের হচ্ছে ওটা থেকে এখন। “কফি চলবে তো তোমাদের?”

    “জি,” কিশিতানি আগ্রহের সাথে মাথা নেড়ে বলল।

    “আমি খাবো না,” কুসানাগি বলল। “আমার মনে হচ্ছে, মহিলার

    অ্যালিবাইয়ে কোথাও একটা গোলমাল আছে।’

    “আমার কাছে কিন্তু এমন মনে হচ্ছে না,” কিশিতানি বলল।

    “কিসের ভিত্তিতে? আমরা তো এখনও তদন্তের কাজ পুরোপুরি শেষ করিনি।”

    “কিন্তু আপনিই তো চিফকে বললেন, নুডল্স শপ আর সিনেমা হলে খোঁজখবর নেয়া অসম্ভব ব্যাপার।”

    “অসম্ভব বলিনি আমি। বলেছি, ঝক্কির কাজ।“

    “হয়েছে,” ইউকাওয়া দু-কাপ কফি নিয়ে এসে বলল। তো সন্দেহভাজন মহিলা বলেছে খুনের সময়টাতে তারা একটা সিনেমা দেখায় ব্যস্ত ছিল?” একটা কাপ কিশিতানির দিকে বাড়িয়ে দিলো সে।

    “ধন্যবাদ,” কিশিতানি মাথা নেড়ে বলল। এরপরেই তার চোখদুটো বড় হয়ে গেলো কাপের হ্যান্ডেলের দিকে নজর পড়ায়। ময়লা জমে দাগ বসে গেছে সেখানটাতে। কুসানাগি হেসে উঠলো জুনিয়র ডিটেক্টিভের অবস্থা দেখে।

    “সিনেমাটাই যদি তাদের অ্যালিবাই হয়ে থাকে তবে সেটা খতিয়ে দেখা বেশ কঠিন হবে,” ইউকাওয়া একটা চেয়ারে বসে বলল।

    “কিন্তু এরপরে তো তারা একটা কারাওকে বারে গিয়েছিল। সেখানকার এক কর্মচারিকে ভালোমত জিজ্ঞাসাবাদ করেছি আমরা,” কিশিতানি বেশ দৃঢ় স্বরেই বলল কথাটা।

    “তার মানে এটা নয় যে, সিনেমা হলের গল্পটা বিশ্বাস করতেই হবে আমাদের। খুনটা করার পরেও তারা কারাওকে বারে যেতে পারে, ‘ কুসানাগি যুক্তি দেখালো।

    “কিন্তু হানাওকারা তো সাতটা নাগাদ সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। ওরকম ব্যস্ত সময়ে কাউকে খুন করা সহজ কথা নয়। আর শুধু খুনই নয়, সব জামাকাপড়ও খুলে নেয়া হয়েছিল ভিক্টিমের।“

    “মানছি তোমার কথা, কিন্তু কাউকে নির্দোষ ঘোষণা করার আগে তোমাকে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখতে হবে,” কুসানাগি বলল। আর ঐ মামিয়া হোকাটাকেও সন্তুষ্ট করতে হবে-শেষের কথাটা মনে মনে বলল সে।

    “তোমাদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে লোকটা কখন খুন হয়েছিল সেটা বের করতে পেরেছো?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করলো।

    “দশ তারিখে সন্ধ্যা ছয়টার পর যেকোন এক সময়ে খুনটা করা হয়েছে,” কিশিতানি বলল। “ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে।”

    “বাহ। ডিপার্টমেন্টের অন্যসব কেসের তথ্যও বলে দিচ্ছো না কেন,“ তিরস্কারের সুরে বলল কুসানাগি।

    “আমি তো ভেবেছিলাম প্রফেসরসাহেব আমাদের ডিপার্টমেন্টকে সাহায্য করেন?”

    “খুব বড় আর জটিল ধরণের কেসের সম্মুখিন হলে তার শরণাপন্ন হই আমরা। কিন্তু এই কেসের ক্ষেত্রে বাইরের কারো সাহায্য দরকার নেই আমাদের,” কুসানাগি বলল।

    “বুঝলাম, আমি একজন সাধারণ নাগরিক। কিন্তু কেসে সাহায্য করা ছাড়াও তোমাকে যে সঙ্গ দেই আমি সেই কথাটা ভুলে যেও না। আমি না থাকলে কার কাছে গিয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ করতে তুমি?” ইউকাওয়া কফির কাপে দীর্ঘ একটা চুমুক দিয়ে বলল।

    “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমরা এখান থেকে চলে গেলেই খুশি হবে,” কুসানাগি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল।

    “আরে, দাঁড়াও দাঁড়াও,” ইউকাওয়া বলল। “তোমাদের এই সন্দেহভাজন মহিলা কি প্রমাণ করতে পারবে তারা সিনেমা দেখতে গিয়েছিল?”

    “সিনেমার গল্পটা তো ঠিকমতই বলতে পেরেছিল। অবশ্য সেটা থেকে বোঝা যাবে না, তারা কখন সিনেমাটা দেখেছে।’

    “টিকেটের ছেঁড়া অংশ ছিল তাদের কাছে?”

    ইউকাওয়ার চোখের দিকে বলল কুসানাগি, “ছিল।”

    “তাই? কোথায় রেখেছিল সে ওগুলো?” জানালা দিয়ে রোদ এসে ইউকাওয়ার চশমার ওপর পড়ায় সেটা চিকচিক করছে এখন।

    “আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো। টিকেটের ছেঁড়া অংশ কে এত যত্ন করে রেখে দেয়, তাই না? আমার মনেও সন্দেহ জাগতো যদি ইয়াসুকো হানাওকা তার রান্নাঘরের ড্রয়ার থেকে ওগুলো বের করতো।”

    “ওগুলো কোন নির্দিষ্ট জায়গায় ছিল না তাহলে?”

    “প্রথমে সে বলেছিল ওগুলো ফেলে দিয়েছে কিন্তু পরে ভালোমত তার ব্যাগ ঘেটে দেখে ওখানেই আছে।“

    “হুম, ব্যাগটা বাঁচিয়ে দিলো তাহলে। বিশ্বাস করা যায় এটা, কি বলো? টিকেটের তারিখ কি মিলে গেছে?”

    “হ্যা, আমরা দেখেছি পরীক্ষা করে। তার মানে কিন্তু এটা দাঁড়াচ্ছে না, তারা আসলেও সিনেমা হলের ভেতর ঢুকেছিল। এমনও হতে পারে, শুধু টিকেটটাই কিনেছে কিন্তু ভেতরে ঢোকেনি।”

    “যাই হোক, অন্তত সিনেমাহলের কাছে তো যেতে হয়েছিল তাদের টিকেট কিনতে।”

    “আমরাও সেরকমটাই ভাবছি। তাই আজ সকালে সিনেমাহলের আশেপাশে খোঁজ-খবর নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্য সেদিন টিকেট কাউন্টারে যে মেয়েটা ছিল তার আবার আজ ছুটি। তাই তার বাসায় যেতে হয় আমাদের। আর সেটা তোমার ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি হওয়ায় ভাবলাম এখানেও একবার ঢুঁ মেরে যাই।”

    “ঐ মেয়েটা তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানাতে পারেনি নিশ্চয়ই,” মৃদু হেসে বলল ইউকাওয়া। কুসানাগির চেহারা দেখেই যা বোঝার বুঝে নিয়েছে সে।

    “আসলে খুনটা বেশ কয়েকদিন আগে হয়েছে। আর টিকেট কাউন্টারে এত মানুষের ভিড় থাকে যে, সবার চেহারা মনে রাখা আসলেও কঠিন। আমি অবশ্য আশাও করিনি বেশি কিছু জানতে পারবো। যাই হোক, তোমার অনেক সময় নষ্ট করলাম আমরা,” এই বলে কিশিতানিকে ওঠার ইঙ্গিত করলো কুসানাগি

    “লেগে থাকো ভালোমত,” পেছন থেকে বলল ইউকাওয়া। “যদি তোমাদের এই সন্দেহভাজন আসলেও খুনি হয়ে থাকে তাহলে তোমাদের সামনে বেশ কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।”

    “মানে?” কুসানাগি ঘুরে প্রশ্ন করলো।

    “মানে, একজন সাধারণ অপরাধি কিন্তু টিকেট নিয়ে অতটা সাবধানি হবে না। ওগুলো যদি আসলেও অ্যালিবাই তৈরি করার জন্যে কেনা হয়ে থাকে আর ওরকম সাধারণ একটা জায়গায় রাখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে, যার বিরুদ্ধে লাগতে যাচ্ছো তোমরা সে কোন সাধারণ অপরাধি নয়।“

    সতর্কবাণীটা হজম করে নিলো কুসানাগি। “আচ্ছা, মনে থাকবে আমার, এবার আসি তাহলে,” বিদায় জানিয়ে আবার বের হয়ে যতে গিয়েও থেমে গেলো সে। দ্বিতীয়বারের মত ঘুরে দাঁড়াল, “তোমার এক ক্লাসমেটের সাথে দেখা হলো, মহিলার বাসার পাশেই থাকে। তোমার থেকে এক-দুই বছরের বড় হতে পারে।”

    “বড়?” ইউকাওয়া ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

    “ইশিগামি নাম লোকটার। হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক। ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি থেকেই পাশ করেছে। তোমার ডিপার্টমেন্টেরই হবে।”

    “ইশিগামি…” চশমার পেছনে চোখজোড়া বড় হয়ে গেলো ইউকাওয়ার। “বুদ্ধ ইশিগামি?”

    “বুদ্ধ?”

    ইউকাওয়া হাত দিয়ে ইশারা করে তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলে পাশের ঘরে ঢুকে গেলো। একবার চোখাচোখি হলো কিশিতানি আর কুসানাগির মধ্যে।

    কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো প্রফেসর। একটা কালো রঙের ইউনিভার্সিটি ফাইল তার হাতে। সেটা খুলে একটা পাতার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “এই ইশিগামি?”

    পাতাটায় বেশ কয়েকজন ছাত্রের ছবি আছে। একদম ওপরে লেখা : বিজ্ঞান অনুষদ, আটত্রিশতম ব্যাচ।

    ইউকাওয়া পাতার মাঝামাঝি একটা ছবি আঙুল দিয়ে নির্দেশ করলো। অন্যান্য ছাত্রদের মত সে হাসছে না। মুখটা গোলগাল, ছোট ছোট চোখ। ছবির নিচে নাম লেখা : তেতসুয়া ইশিগামি।

    “আরে, উনিই তো,” কিশিতানি বলল। “এখানে অবশ্য বয়স অনেক কম দেখাচ্ছে।”

    “এখন চুল বেশ পাতলা,” কুসানাগি বলল। “চেনো নাকি তুমি তাকে?”

    “হ্যা। কিন্তু সে আমার থেকে বড় ছিল না, সমানই ছিল। তখনকার দিনে বিজ্ঞান অনুষদে সব ছাত্রদের প্রথম বর্ষে একই সাথে ক্লাস করতে হত। এরপরে মেজর অনুযায়ি ভাগ করে দিত আমাদের। আমি নিয়েছিলাম পদার্থবিজ্ঞান আর ও গণিত।”

    “ওহ্, তাহলে উনি আমাদের সমান? হুম…”

    ওকে আগে থেকেই বয়সের তুলনায় বড় বলে মনে হত,” ইউকাওয়া হেসে বলল। “আচ্ছা, তুমি কী যেন বলছিলে? সে একটা হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক?” একটু অবাক হয়ে প্রশ্নটা করলো সে।

    “হ্যা, যেখানে থাকেন তার কাছেই স্কুলটা। এছাড়াও একটা জুডো ক্লাবের পরিদর্শক।”

    “ওহ্, আচ্ছা। আমি জানি সে ছোটবেলা থেকেই জুডোর প্র্যাকটিস করতো। ওর দাদার মনে হয় একটা জুডো স্কুল ছিল। কিন্তু তুমি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত সে আসলেই হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক?

    “হ্যা, আমি নিশ্চিত।”

    এরকম তো হওয়ার কথা নয়। যাই হোক, তোমার কথা বিশ্বাস করছি আমি। অনেকদিন ওর সাথে দেখা-সাক্ষাত নেই, ভেবেছিলাম কোথাও গবেষণায় ডুবে আছে। কিন্তু ইশিগামি…একটা হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক। ব্যাপারটা মানতে কষ্ট হচ্ছে…” এই বলে

    “ এই বলে স্মৃতিচারণে ডুবে গেলো ইউকাওয়া।

    “ডিপার্টমেন্টে খুব নামডাক ছিল বুঝি ওনার?” কিশিতানি জিজ্ঞেস করলো।

    “আমি কিন্তু খুব সহজে কাউকে মেধাবি বলি না। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি মেধাবি শব্দটা ব্যবহার না করি তাহলে ইশিগামিকে অপমান করা হবে। আমাদের এক প্রফেসর একবার বলেছিলেন, প্রতি চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরে এরকম দুয়েকজন ছাত্র পাওয়া যায়। তাকে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত ছিল ডিপার্টমেন্টে। কম্পিউটারের ওপর ভরসা ছিল না তার, সারারাত ল্যাবে বসে কাগজ কলম নিয়ে বিরাট বিরাট হিসেব কষতো। যখনই তার দেখা পেতাম আমরা, কোন না কোন সূত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সে। সম্মান করে ‘বুদ্ধ ইশিগামি’ বলে ডাকতো সবাই তাকে।“

    কুসানাগি মাথা নাড়লো। ইউকাওয়ার মুখে তার চেয়েও মেধাবি কারো কথা শুনতে কেমন যেন লাগছে। সে সবসময়ই ভেবে এসেছে তার এই পদার্থবিদ বন্ধুর চেয়ে মেধাবি লোক খুব কমই আছে। কিন্তু সবার ওপরেই কেউ না কেউ থাকে।

    “এরকম মেধাবি একজনকে তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালগুলোর লুফে নেয়ার কথা,” কিশিতানি মন্তব্য করলো।

    “সেটাই তো ভাবছি,” ইউকাওয়া বলল। “আছে কি রকম সে? কি মনে হলো তোমাদের?”

    “তা বলতে পারবো না। কিন্তু অসুস্থ মনে হলো না। আমরা অবশ্য বেশিক্ষণ কথা বলিনি তার সাথে, তবে তার মুখ দেখে সেরকম কিছু অনুমানও করতে পারিনি…”

    “বুদ্ধর মনে যে কী চলে এটা কেউই বলতে পারবে না কখনও, ইউকাওয়া শুকনো হেসে বলল।

    “সেটাই। বেশিরভাগ লোকই দরজায় অপরিচিত কাউকে দেখলে সন্দেহের চোখে দেখে। আর সেই অপরিচিত লোক গোয়েন্দা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু ওনাকে দেখে কিছুই বুঝতে পারলাম না। কোন অনুভূতি নেই যেন।”

    “গণিত ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তার খুব কমই আগ্রহ আছে। যদিও ব্যাপারটা এমন নয়, সে অন্যসব ব্যাপারে উন্নাসিক ধরণের। সবার সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতাও আছে তার। আচ্ছা, আমাকে ওর ঠিকানাটা দিতে পারবে? সময় পেলে একবার দেখা করতাম।”

    “তুমি! কারো সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে যাবে? ব্যাপারটা কেমন শোনাচ্ছে না?”

    নোটবুক বের করে ইউকাওয়াকে ঠিকানাটা দিয়ে দিলো কুসানাগি। খুশিমনে সেটা টুকে রাখলো ইউকাওয়া, খুনের ঘটনাটা ভুলেই গেছে যেন।

    X

    ছয়টা আটাশের সময় ইয়াসুকো তার সবুজ বাইসাইকেলটা নিয়ে বাসায় ফিরে আসল। ডেস্কে বসে জানালা দিয়ে বাইরে নজর রাখছিলো ইশিগামি। ডেস্কভর্তি কাগজপত্রের স্তুপ, গাণিতিক সমীকরণে ভর্তি সেগুলো। বাসায় ফিরে গণিত নিয়ে যুদ্ধ করা তার অভ্যাস। কিন্তু ইদানিং সে কাজেও মনোযোগ দিতে পারছে না। অপেক্ষায় আছে কবে গোয়েন্দারা আবার ফিরে আসবে।

    গতরাতে আবার এসেছিল তারা। আগের দু-জনই। এবার একজনের নাম দেখতে পেরেছে সে-কুসানাগি।

    ইয়াসুকো বলেছে তারা অ্যালিবাই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিল। যেমনটা সে ভেবে রেখেছিল আগে থেকেই। অনেক প্রশ্নই করেছিল তারা, এই যেমন, সিনেমা হলের আশেপাশে পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়েছিল কিনা, টিকেটের ছেঁড়া অংশগুলো আছে কিনা, সিনেমার কাহিনী কি ছিল-এসব।

    কারাওকে বার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করেনি, তার মানে সেদিকটা খোঁজ খবর নিয়েছে ওরা আগেই। আর সেই অ্যালিবাইটা না মেলার কোন কারণ নেই। ইশিগামি হিসেব করেই ঐ বারটা ঠিক করেছিল।

    ইয়াসুকো সবকিছু পুলিশকে দেখিয়েছে-টিকেটের ছেঁড়া অংশ, পপকর্ণের রশিদ, সব। সিনেমার কাহিনীও বলেছে। এছাড়া আর কিছু বলেনি। পুলিশ যখন জিজ্ঞেস করেছিল পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়েছে নাকি, তখন না করে দিয়েছে।

    গোয়েন্দারা সন্তুষ্ট হয়েই ফিরে গেছে বলে ইশিগামির ধারণা। কিন্তু কাজে বিন্দুমাত্র ঢিল দিলে চলবে না এখন। যেহেতু তারা ফিরে এসেছে, তার মানে ইয়াসুকোকে সন্দেহ করার মত যথেষ্ট তথ্য আছে তাদের হাতে। সেই তথ্যগুলো কি হতে পারে, সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো সে।

    কিছুক্ষণ পর জ্যাকেটটা গায়ে চাপিয়ে টেলিফোন কার্ড আর ওয়ালেট নিয়ে বের হয়ে গেলো

    সিঁড়ির দিকে এগোনোর সময় কারো পায়ের আওয়াজ ভেসে এলো নিচে থেকে। গতি কমিয়ে সেদিকে তাকালো ইশিগামি। ইয়াসুকো। সে অবশ্য প্রথমে তাকে খেয়াল করেনি। একজন আরেকজনকে অতিক্রম করার সময় আস্তে করে ‘গুড ইভনিং’ জানালো ইশিগামি। অন্যান্য সময়ে যেভাবে বলে আজও সেভাবেই বলার চেষ্টা করলো। শান্তস্বরে, নিচের দিকে চোখ রেখে। এরপরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।

    বলা যায় না, পুলিশ হয়তো সবসময় তাদের ওপর নজর রাখছে। তাই একদম স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। ইয়াসুকোকেও একই নির্দেশ দিয়েছে সে। ওপরে ওঠার সময় আস্তে করে তাকেও ‘গুড ইভনিং” জানিয়েছে ভদ্রমহিলা।

    পার্কের কাছে পৌছে তাড়াতাড়ি ফোন বুথে ঢুকে গেলো ইশিগামি। দ্রুত টেলিফোন কার্ডটা ঢুকিয়ে ইয়াসুকোর নম্বরে ডায়াল করলো। কাছে একটা মুদি দোকান আছে। সেটার মালিক বাসায় ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন। এছাড়া আর কেউ নেই আশেপাশে।

    “জি, ইয়াসুকো বলছি,” ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এলো। তার কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে ইশিগামির ফোনের অপেক্ষাতেই ছিল।

    “রিপোর্ট করার মত কিছু আছে?”

    “হ্যা। আজকে বেন্টেন-টেই তে এসেছিলেন একজন গোয়েন্দা।”

    “ওখানে?”

    “হ্যা।”

    “এবার কি জিজ্ঞেস করলো?”

    “টোগাশি কখনো দোকানে এসেছিল কিনা সেটা জানতে চাইছিল।”

    “কি বললেন আপনি?”

    “আমি না করে দিয়েছি। তখন সে বলল, আমি থাকা অবস্থায় হয়তো আসেনি। তাই মালিকদের সাথেও কথা বলেছে। পরে ওরা আমাকে বলল, টোগাশির একটা ছবি দেখিয়ে তার ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন অফিসারটা। আমার ধারণা তারা আমাকে সন্দেহ করছে।”

    “সেটা তো আমরা ভেবেই রেখেছিলাম। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর কিছু জিজ্ঞেস করেছিল নাকি?”

    “না, শুধু আগে যেই ক্লাবে আমি কাজ করতাম সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেছে। জানতে চাচ্ছিল, সেখানকার কারো সাথে এখনও যোগাযোগ আছে কিনা আমার। যখন জানতে চাইলাম কেন এসব কথা জানতে চাইছেন, তখন বলল টোগাশি নাকি কিছুদিন আগে আমার খোঁজে সেখানে গিয়েছিল।”

    “ওহ্, আচ্ছা,” ইশিগামি বলল। “তার মানে আপনার খোঁজে সেখানেও গিয়েছিল টোগাশি।“

    “সেরকমটাই তো মনে হচ্ছে। ওখানেই বোধহয় বেন্টেন-টেই সম্পর্কে খোঁজ পায় সে। অফিসার বলছিল তারও সেরকম ধারণা। আর সে জন্যেই বেন্টেন-টেই’তে খোঁজ নিতে এসেছে। আমি আবারও বলি টোগাশিকে দেখিনি আমি সেখানে।“

    কুসানাগিকে শ্রদ্ধা না করে পারলো না ইশিগামি। বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক বলে মনে হয়েছে তার কাছে। আস্তে ধীরে কথা বলে, কোন কিছু চাপিয়ে দেয় না। কিন্তু সে যেহেতু একজন হোমিসাইড গোয়েন্দা, নিশ্চয়ই সে সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা তার বেশি। সাক্ষিকে ভয় দেখিয়ে কথা আদায় করবে না, বরং কৌশলে তার মুখ থেকে কথা বের করে নেবে। ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির চিঠিটাও তার নজর এড়ায়নি, তার মানে সূক্ষ্ম জিনিসের প্রতিও সমান নজর থাকে তার। আর এরকম একজন মানুষের কাছ থেকে সাবধানে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

    “এছাড়া অন্য কোন কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন তাকে?”

    “না। কিন্তু মিশাতো…”

    ফোনটা শক্ত করে ধরলো ইশিগামি, “ওর স্কুলেও গিয়েছিল?”

    “হ্যা, আমিও কেবল শুনলাম এটা। ক্লাস শেষে বাসায় আসার পথে তার সাথে দেখা করেছে ওরা। ঐ দু-জন গোয়েন্দাই হবে।”

    “মিশাতো আছে আশেপাশে?”

    “হ্যা, ধরুন একটু।”

    কিছুক্ষণ পরেই মিশাতোর গলার আওয়াজ ভেসে এলো রিসিভারে, “হ্যালো?”

    “তোমাকে গোয়েন্দারা কি জিজ্ঞেস করেছিল?”

    “আমাকে ঐ লোকটার ছবি দেখিয়ে বলছিল তাকে অ্যাপার্টমেন্টের আশেপাশে দেখেছি কিনা আমি…..”

    “তুমি তো না করে দিয়েছো, তাই না?”

    “হ্যা।”

    “আর কি জানতে চেয়েছিল?”

    “সিনেমাটা সম্পর্কে। আমরা কি সত্যিই মার্চের দশ তারিখে গিয়েছিলাম কিনা। তারিখটা হয়তো গোলমাল করে ফেলতে পারি-এরকমটা বলছিল। কিন্তু আমি বলে দিয়েছি দশ তারিখেই গিয়েছিলাম আমরা।’

    “তখন তারা কি বলল?”

    “তারা জানতে চাচ্ছিল আমি সিনেমাটা নিয়ে কোন বন্ধুর সাথে আলাপ করেছি কিনা। আর আমার বন্ধুদের নামও জিজ্ঞেস করেছিল।”

    “বলেছো তাদেরকে?”

    “শুধু মিকার নামটা বলেছি।”

    “মিকার সাথেই তো বারো তারিখে সিনেমাটার ব্যাপারে আলাপ করেছিলে তুমি, তাই না?”

    “জি।”

    “ভালো কাজ দেখিয়েছো তুমি। আর কিছু জানতে চেয়েছিল ওরা?”

    “সেরকম কিছু না। এই স্কুল কেমন লাগে, ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিস কেমন চলছে-এসব আর কি। আমি বুঝলাম না, তারা কিভাবে জানলো আমি ব্যাডমিন্টন টিমে আছি? আমার সাথে তো র‍্যাকেটটাও ছিল না।”

    ইশিগামি ধারণা করলো ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেটটা হানাওকাদের বাসায় ঝোলানো অবস্থায় দেখেছিল কুসানাগি। এ দেখি বিপজ্জনক লোক, কিছুই নজর এড়ায় না।

    ইয়াসুকো নিয়ে নিলো ফোনটা মিশাতোর কাছ থেকে। “কি করা উচিত এখন আমাদের?” আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো সে।

    “কিছু না। সমস্যার কিছু দেখছি না আমি এ মুহূর্তে,” ইশিগামি স্বাভাবিকভাবে বলল। “সবকিছু আমার হিসেবমতই এগোচ্ছে। আমার ধারণা তারা আবার আসবে, খুব শিঘ্রই। আমি যেভাবে বলেছি সবকিছু সেভাবে করলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই আপনাদের।”

    “আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, মি. ইশিগামি। আপনিই আমাদের একমাত্র ভরসা।”

    “ঠিক আছে তাহলে। চিন্তা করবেন না, খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি কাল আবার ফোন করবো।”

    টেলিফোন কার্ডটা বের করে ফোন বুথ থেকে বেরিয়ে গেলো সে। শেষের কথাটা বলা ঠিক হয়নি। সবকিছু কি আসলেই খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে?

    যাই হোক, সবকিছু তার ধারণা মোতাবেকই এগোচ্ছে। সে জানতো তারা একসময় বের করে ফেলবে, টোগাশি ইয়াসুকোর খোঁজ করছিল। এজন্যেই অ্যালিবাইয়ের ব্যাপারটায় জোর দিয়েছে সে। আর সে এটাও চায় পুলিশ অ্যালিবাইটাকে সন্দেহ করুক।

    মিশাতোর সাথে যে তারা যোগাযোগ করবে এটা সে আগেই বুঝতে পেরেছিলো। তাদের নিশ্চয়ই ধারণা এই কেসের সবচেয়ে দূর্বল দিক হচ্ছে মিশাতো, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অ্যালিবাইয়ের মিথ্যাটা বের হয়ে যাবে। কিন্তু ইশিগামি সেদিকটাও ভেবে রেখেছে। এখন মনে হচ্ছে সবকিছু আরো ভালোমত খতিয়ে দেখতে হবে আবার।

    এসব ভাবতে ভাবতে অ্যাপার্টমেন্টের সামনে পৌছে গেলো সে। কিন্তু দরজার দিকে তাকিয়েই থেমে গেলো। কালো জ্যাকেট পরা এক লোক দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। হয়তো আরেকজন গোয়েন্দা হবে-ভাবতে গিয়েও থেমে গেলো। তার পায়ের আওয়াজ শুনে ফিরে তাকিয়েছে লোকটা। ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসলো, “ইশিগামি?”

    অবাক হয়ে সে খেয়াল করলো লোকটা হাসছে। কিন্তু হাসিটা খুব পরিচিত ঠেকছে তার কাছে। চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো তার। নিজের অজান্তেই বিশ বছর আগের পুরনো দিনগুলোতে ফিরে গেলো।

    “মানাবু ইউকাওয়া!”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.