Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প323 Mins Read0

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৬

    অধ্যায় ৬

    প্রতিদিনকার মতই বড় ক্লাসরুমটা খালি খালি লাগছে। প্রায় একশজন ছাত্র- ছাত্রি বসতে পারবে এখানে। কিন্তু এখন বড়জোর বিশ পঁচিশজন আছে। তা-ও সবাই পেছনের দিকে বসে আছে যাতে করে অ্যাটেনডেন্স ডাকার পর বেরিয়ে যেতে পারে নির্বিঘ্নে কিংবা লেকচার চলাকালীন সময়ে অন্য কোন কাজ করতে পারে।

    খুব কম আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্রই গ্র্যাজুয়েশনের পরে গণিতবিদ হতে চায়। আসলে এই ক্লাসে একমাত্র ইশিগামি বাদে কেউই এই পথে পা বাড়াতে চায় না। আর ফলিত গণিতের এই কোর্সে ছাত্র-ছাত্রিদের আগ্রহ আরো কম।

    ইশিগামির নিজরও এই কোর্সটা অত ভালো লাগে না, তবুও সে দ্বিতীয় সারিতেই বসেছে বরাবরের মত। সব ক্লাসেই এ জায়গায় বসে সে, যতটা কাছাকাছি সম্ভব। মাঝামাঝি জায়গাতেও বসে না, তাহলে অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সবচেয়ে ভালো প্রফেসরেরও তো মাঝে মধ্যে ভুল হতে পারে, সেটা ধরিয়ে দেয়ার মত কেউ থাকবে না তাহলে।

    ক্লাসের সামনের দিকটা সবসময় নির্জনই থাকে, কিন্তু আজকে ঠিক তার পেছনের সিটটাতে কেউ একজন বসেছে। ইশিগামি অবশ্য তার দিকে কোন মনোযোগ দিচ্ছিল না। লেকচার শুরু হবার আগে কিছু জরুরি কাজ আছে তার। নোটবুক বের করে সেখানে সূত্র কষতে শুরু করলো সে।

    “বাহ্, তুমি দেখি এরডোসের অনুসারি,” পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

    ইশিগামি প্রথমে বুঝতে পারেনি মন্তব্যটা তাকে উদ্দেশ্যে করে করা হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে কাজ থেকে মনোযোগ সরাতে বাধ্য হলো। আলাপ শুরু করার জন্যে নয়, বরং এই ভেবে তার খুব অবাক লাগছে যে, ক্লাসে সে বাদে ‘এরডোস’কে কেউ চেনে।

    তাকিয়ে দেখলো তারই সমবয়সি একজন ছাত্র, লম্বা চুল কাধ পর্যন্ত নেমে এসেছে। পরনে একটা রঙচঙে শার্ট। ইশিগামি আগেও দেখেছে তাকে। পদার্থবিজ্ঞানে মেজর করছে ছেলেটা। কিন্তু এটা ছাড়া আর কিছু জানে না তার সম্পর্কে।

    এ নিশ্চয়ই কথাটা বলেনি, ইশিগামি ভাবছিল, এমন সময় ছেলেটা বলে উঠলো, “এভাবে কাগজ-কলম দিয়ে কিন্তু আর বেশিদিন কাজ করতে পারবে না তুমি। চেষ্টা করে দেখতে পারো অবশ্য, কিছু হলে হতেও পারে।”

    ইশিগামি অবাক হয়ে খেয়াল করলো কিছুক্ষণ আগের কন্ঠস্বর আর ছেলেটার কন্ঠস্বর মিলে গেছে। তার মানে সে-ই একটু আগে মন্তব্যটা করেছিল। “তুমি জানো আমি কি করছি?” জিজ্ঞেস করলো সে।

    “আমি দুঃখিত। পেছন থেকে একবার উঁকি দিয়ে দেখেছিলাম শুধু, তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনি,” ইশিগামির ডেস্কের দিকে ইঙ্গিত করে বলল ছেলেটা।

    ইশিগামির চোখ তার নোটবুকের দিকে ফিরে গেলো। সে কিছু সূত্র লিখেছে ঠিকই, কিন্তু ওগুলো আরো বড় একটা সূত্রের অংশমাত্র। ছেলেটা যদি এটুকু দেখেই বলতে পারে সে কি নিয়ে কাজ করছিল, তার মানে সে নিজেও এটা নিয়ে ঘাটাঘাঁটি করেছে আগে।

    “তুমিও কাজ করেছো এটা নিয়ে, তাই না?” ইশিগামি জিজ্ঞেস করলো।

    লম্বা চুলের ছেলেটা সোজা হয়ে বসে হেসে বলল, “আরে, না। আমি অপ্রয়োজনিয় জিনিসপত্র নিয়ে ঘাটাঘাঁটি করি না। আমি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তোমরা গণিতবিদরা যে সূত্র আবিষ্কার করো সেগুলোকে আমরা কাজে লাগাই মাত্র। সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব তোমাদেরই।”

    “কিন্তু আমি এখানে কি করছি সেটা তো তুমি বুঝতে পারছো?” ইশিগামি তার নোটবুকের দিকে ইঙ্গিত করে বলল।

    “হ্যা, কারণ এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করা হয়েছে। কোনটার প্রমাণ আছে আর কোনটার নেই সেটা জানার মধ্যে তো কোন ক্ষতি নেই,” ছেলেটা ব্যাখ্যা করলো ইশিগামির চোখের দিকে তাকিয়ে। “চার রঙের সমস্যাটা তো? ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে এটার। যেকোন মানচিত্র রঙ করতে পারবে তুমি ওগুলো দিয়ে।”

    “সব মানচিত্র নয়।“

    “তা ঠিক। কিছু শর্ত আছে অবশ্য। যেকোন সমভূমি অথবা গোলাকার মানচিত্র হতে হবে সেটা, এই যেমন পৃথিবীর।”

    এটা গণিতের সবচেয়ে পুরনো সমস্যাগুলোর একটা। ১৮৭৯ সালে আর্থার কেইলি করেছিলেন প্রশ্নটা। এরপর প্রায় একশ বছর ধরে সমাধান করা হয় এটার। সর্বশেষ প্রমাণটা আসে কেনেথ অ্যাপেল এবং উলফ হ্যাকেনের পক্ষ থেকে। ইলিনয় ইউনিভার্সিটির এই দু-জন গণিতবিদ একটা কম্পিউটার ব্যবহার করে সমাধান করে। তার বলে, সব মানচিত্রই মোটামুটি পঞ্চাশ ধরণের মানচিত্রের একটা সমষ্টি, চারটা রঙ দিয়েই রঙ করা যাবে ওগুলোকে।

    সেটা ১৯৭৬ সালের কথা।

    “আমার কাছে প্রমাণটা তেমন সুবিধার মনে হয় না,” ইশিগামি বলল। “সে তো বুঝতেই পারছি। এজন্যেই তুমি কলম আর নোটবুক নিয়ে কাজে নেমেছো।”

    “তারা যেভাবে প্রমাণ করেছিল সেটা একজন মানুষের পক্ষে হাতেকলমে করার জন্যে একটু বেশিই কঠিন হয়ে যায়। এজন্যেই তারা কম্পিউটার ব্যবহার করেছিল। কিন্তু একটা সূত্র প্রমাণ করতে যদি তোমার কম্পিউটারের সাহায্যের দরকার হয়, তাহলে সেটার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।”

    “যেমনটা বলেছিলাম। এরডোসের অনুসারি,” লম্বাচুলো ছেলেটা একটু হেসে বলল।

    পল এরডোস হচ্ছে একজন হাঙ্গেরিয়ান গণিতবিদ। বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে সেখানকার গণিতবিদদের সাথে যৌথভাবে গবেষণা করার জন্যে বিখ্যাত। তিনি বিশ্বাস করতেন সব গাণিতিক সমীকরণেরই হাতে কলমে করা যায় এমন সমাধান আছে। কেনেথ অ্যাপেল এবং উলফ হ্যাকেনের সমাধানটা দেখেছিলেন। বলেছিলেন, ‘সৌন্দর্যের অভাব’ রয়েছে ওটায়।

    ইশিগামির মনে হলো নতুন ছেলেটার চিন্তাভাবনার ধরণ অনেকটা তার নিজের মতই।

    “সেদিন আমার এক প্রফেসরের কাছে গিয়েছিলাম একটা সমস্যা নিয়ে,” ছেলেটা বলল। “খুব জটিল ছিল না কিন্তু প্রফেসর বোধহয় টাইপিঙে কোথাও ভুল করেছিল। তাই পুরো ব্যাপারটাই প্যাঁচ খেয়ে যাচ্ছিল বারবার। ভুলটা ধরতে পারি আমি, দেখাই তাকে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলে, আরেকজন ছাত্র নাকি ইতিমধ্যেই সেটা বলে গেছে তাকে। একটু হতাশই হয়েছিলাম প্রথমদিকে। কারণ আমি ভেবেছিলাম কেবলমাত্র আমিই ভুলটা ধরতে পেরেছি।“

    “ওহ্, ওটা! তেমন…” ইশিগামি মুখ খুলেও বন্ধ করে নিলো।

    “কঠিন ছিল না?” ছেলেটা তার মুখের কথা শেষ করে দিলো। “ইশিগামির মত ছাত্রের জন্যে এটা বিশেষ কিছু না-এমনটাই বলেছিলেন প্রফেসর। তুমি যতই ওপরে ওঠো না কেন, তার চেয়েও ওপরে কেউ না কেউ থাকবেই, নাকি? সে সময়টাতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, গণিতবিদ হওয়া আমার কম্ম নয়।“

    “পদার্থবিজ্ঞানে মেজর করার কথা বলছিলে, তাই না?”

    “আমি ইউকাওয়া। তোমার সাথে পরিচিত হতে পেরে বেশ ভালো লাগছে,” ছেলেটা তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল।

    আগ্রহ নিয়েই তার সাথে হাত মেলাল ইশিগামি। এতদিন তার ধারণা ছিল এখানে সে-ই একমাত্র সবার থেকে আলাদা।

    ইউকাওয়াকে সে ঠিক ‘বন্ধু’ বলবে না। কিন্তু সেদিনকার পরে তাদের যতবারই দেখা হয়েছিল প্রতিবারই কিছু না কিছু নিয়ে কথা হয়েছে। ইউকাওয়া অনেক পড়াশোনা করতো, পাঠ্যবইয়ের বাইরের অনেক কিছু নিয়ে অগাধ জ্ঞান ছিল তার। কিন্তু কিছুদিন পরেই সে বুঝতে পারে গণিতের বাইরে অন্যকিছু নিয়ে খুব কমই আগ্রহ আছে ইশিগামির।

    তারপরও ইউনিভার্সিটিতে একমাত্র তার সাথে কথা বলেই একটু আরাম পেত ইশিগামি। কারণ ইউকাওয়ার চিন্তাভাবনার ধরণকে সম্মান করতো সে।

    সময়ের সাথে সাথে তাদের দেখা-সাক্ষাতও কমে গিয়েছিল। পদার্থবিজ্ঞান আর গণিতের ভুবন দু-জনকে দুদিকে ব্যস্ত রাখত। প্ৰত্যেকেই ছিল নিজের বিষয়ে পারদর্শি। কোন সমস্যার সম্মুখিন হলে নিজেদের জ্ঞান দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করতো সেগুলোর। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু পার্থক্য ছিল, কারণ ইউকাওয়া সবকিছু সমাধান করার আগে সেটা নিয়ে অনেক ভেবে দেখতো। আর ইশিগামি কলম আর নোটবুক নিয়ে বসে যেত, সূত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করার দিকে আগ্রহ ছিল তার। ইউকাওয়া সেটা হাতেনাতে পরীক্ষা করে দেখতে ভালোবাসতো।

    নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবার পরেও ইউকাওয়া সম্পর্কে এটাসেটা কানে আসতো ইশিগামির। তৃতীয় বর্ষে এক আমেরিকান কোম্পানি এসেছিল ইউয়াকাওয়ার একটি প্রজেক্টের সত্ত্ব কিনতে। ‘ম্যাগনেটাইজড গিয়ার’ নাম ছিল সেটার।

    স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পরে ইউকাওয়ার সাথে যোগাযোগ একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। ততদিনে নিজেও ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেছে সে। আর এরপর সময় চলতে থাকে তার নিজস্ব গতিতে।

    X

    “কিছু জিনিস কখনো বদলায় না, কি বলো?” ইউকাওয়া ইশিগামির অ্যাপার্টমেন্টের বুকশেলফের দিকে তাকিয়ে বলল।

    “যেমন?”

    “এই, তোমার গণিতের জন্যে ভালোবাসা। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার ডিপার্টমেন্টের কোন প্রফেসরের কাছেও এত বই নেই।”

    ইশিগামি আর কথা বাড়াল না ও ব্যাপারে। বুকশেলফে শুধু যে বই আছে তা নয়, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন রিসার্চ পেপারের প্রিন্ট- আউটও রয়েছে। পৃথিবীর যেকোন ঝানু গণিতবিদের চেয়ে তার সংগ্রহ কোন অংশে কম নয়।

    “কফি চলবে?” ইউকাওয়াকে বসার ইশারা করে বলল ইশিগামি।

    “কফিতে না নেই আমার, কিন্তু সাথে করে এটা নিয়ে এসেছি আমি, “ এই বলে প্যাকেট থেকে দামি একটা ব্র্যান্ডের হুইস্কি বের করে দেখালো ইউকাওয়া।

    “আরে, ওটা আনার কোন প্রয়োজন ছিল না।”

    “খালি হাতে তো আর বন্ধুর সাথে দেখা করতে আসা যায় না।“

    “তাহলে কিছু সুশি অর্ডার করে দেই। তুমি নিশ্চয় খাওনি এখনও?”

    “না না, অসুবিধে নেই।“

    “আরে, আমি নিজেও খাইনি।”

    ফোন তুলে একটা রেস্তোরাঁর নম্বরে ডায়াল করলো সে। সবচেয়ে ভালো খাবারগুলো অর্ডার দিলো। ওপাশ থেকে যে অর্ডার নিচ্ছিল তাকে কিছুটা অবাক মনে হলো। স্বাভাবিক-ভাবলো ইশিগামি। দীর্ঘদিন এরকম কিছু অর্ডার দেয়নি সে। শেষ কবে তার বাসায় কোন মেহমানকে আপ্যায়ন করেছিল সেটাও ভুলে গেছে।

    “তোমাকে দেখে কিন্তু বেশ অবাক হয়েছি,” ইশিগামি বলল।

    “হঠাৎ করেই এক বন্ধুর কাছে তোমার নামটা শুনি আমি। তারপর ভাবলাম, দেখা করি।“

    “বন্ধু? কে?”

    “ইয়ে মানে, সেটা শুনে তোমার হয়তো কিছুটা অদ্ভুত বলে মনে হবে,” ইউকাওয়া নাক চুলকে বলল। “কিছুদিন আগে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে একজন এসেছিল তোমার বাসায়, তাই না? কুসানাগি নামে?”

    “গোয়েন্দা?” ভেতরে ভেতরে অবাক হলেও সেটা বুঝতে দিলো না ইশিগামি। তার পুরনো বন্ধু কি কিছু জানে?

    “হ্যা, সে আমার সহপাঠি ছিল এককালে।”

    আরো অবাক হয়ে গেলো ইশিগামি, “সহপাঠি?”

    “ব্যাডমিন্টন ক্লাবে একসাথে ছিলাম আমরা। তাকে দেখে অবশ্য ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির ছাত্র বলে মনে হয় না, তাই না? সে বোধহয় সমাজতত্ত্ব বিভাগে ছিল।”

    “আসলেও মনে হয় না,” অস্বস্তিকর ভাবটা কেটে গেলো ইশিগামির। “এখন তুমি বলাতে মনে পড়ছে, ইউনিভার্সিটির একটা চিঠি দেখেছিল সে। সেকারণেই আমাকে প্রশ্ন করেছিল ওটা সম্পর্কে। কিন্তু আমাকে বলল না কেন, সে নিজেও ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল?”

    “আসলে ও বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রদের নিজের সহপাঠি বলে মনে করে না। তার ধারণা আমরা অন্য এক প্রজাতির মানুষ।”

    ইশিগামি মাথা নাড়লো। মানবিক অনুষদের ছাত্রদের সম্পর্কে তার নিজেরও সেরকমই ধারণা।

    “কুসানাগি আমাকে বলল তুমি নাকি একটা হাইস্কুলে পড়াচ্ছো ইদানিং?” ইউকাওয়া সরাসরি ইশিগামির দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা।

    “হ্যা, এই তো কাছেই সেটা। তুমি তো ইউনিভার্সিটিতে, তাই না?”

    “হ্যা, তেরো নম্বর ল্যাবে।”

    নিজের ঢোল পেটানোর ইচ্ছে নেই ইউকাওয়ার, বুঝতে পারলো ইশিগামি। নিজের অবস্থান নিয়ে গর্বও করতে চাইছে না।

    “তুমি কি প্রফেসর হয়ে গেছো নাকি?”

    “না, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরেই আটকে আছি এখনও। তুমি তো জানোই ওদিককার অবস্থা,” ইউকাওয়া শুকনো গলায় বলল।

    “তাই? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি এতদিনে প্রফেসর হয়ে গেছো। বিশেষ করে তোমার সেই ম্যাগনেটিক গিয়ারের কাজটার পর।“

    ইউকাওয়া হেসে উঠলো কথাটা শুনে, “ওসব কেবল তোমারই মনে আছে এখনও। ওরা কাজে লাগাতে পারেনি ওটা। প্রজেক্ট হিসেবেই থেকে যায় আইডিয়াটা।” হুইস্কির বোতল খুলতে শুরু করলো ইউকাওয়া।

    উঠে গিয়ে দুটো গ্লাস নিয়ে আসল ইশিগামি।

    “কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম তুমি এতদিনে নিশ্চিত প্রফেসর হয়ে গেছো। রিসার্চে ডুবে আছো কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ল্যাবে। ‘বুদ্ধ ইশিগামি’র কি হলো? নাকি এখনও এরডোসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছো?”

    “ওরকম কিছুই ঘটেনি,” শ্বাস ছেড়ে বলল ইশিগামি।

    “চলো তাহলে, শুরু করা যাক,” ইশিগামির গ্লাসে হুইস্কি ঢালতে ঢালতে বলল ইউকাওয়া।

    আসলে গণিত নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল ইশিগামির। ইউকাওয়ার মতই স্নাতকোত্তর করার পর ইউনাভার্সিটিতেই পিএইচডি করার ইচ্ছে ছিল তার। গণিতের ভুবনে অবদান রাখতে চেয়েছিল সে।

    কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি, কারণ বাবা-মা’র সব দায়িত্ব এসে পড়েছিল তার কাঁধে। পিএইচডি’র জন্যে গবেষণা করার পাশাপাশি পার্ট-টাইম চাকরি করে সেটা করা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। স্থায়ি একটা চাকরির খোঁজে বের হয়ে পড়ে সে।

    তার পরিচিত এক প্রফেসর নতুন একটা ইউনিভার্সিটির খোঁজ দেয় তাকে। সেখানে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে যোগ দেয়। পাশাপাশি নিজের কাজও চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্যে। কারণ সেখানকার প্রফেসরদের কারোরই গবেষণার প্রতি মনোযোগ ছিল না। ক্ষমতার পেছনে দৌড়াচ্ছিল সবাই। রাতের পর রাত জেগে সে যে রিসার্চ করতো সেটা ফাইলবন্দি হয়ে থাকতো কোন প্রফেসরের আলমারিতে। সেখানকার শিক্ষার্থিদের অবস্থাও অতটা সুবিধার ছিল না। হাইস্কুল পর্যায়ের গণিত বুঝতেই ঘাম ছুটে যেত ওদের।

    অন্য ইউনিভার্সিটিতে যে চাকরি খোঁজেনি তা নয়। কিন্তু গণিত অনুষদ আছে এমন ইউনিভার্সিটিগুলো অনেক দূরে দূরে অবস্থিত। আর গণিত বিভাগ থাকলেও রিসার্চের ব্যবস্থা ছিল না, কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলোর মত গণিতের পেছনে টাকা ঢালতে রাজি ছিল না কোম্পানিগুলো।

    খুব তাড়াতাড়ি ইশিগামি বুঝে যায় অন্যদিকে পা বাড়াতে হবে তাকে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট জোগাড় করে নেয় একটা। কিন্তু এর জন্যে গণিত নিয়ে দেখা যাবতিয় স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছিল তাকে।

    কিন্তু এ মুহূর্তে ইউকাওয়াকে এসব বলা জরুরি বলে মনে হলো না তার কাছে। অনেকের জীবনেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তারটাও সেরকমই একটা ঘটনা, বিশেষ কিছু নয়।

    কিছুক্ষণ পরেই খাবার দিয়ে গেলে সেগুলো খেয়ে নিলো দু-জন মিলে আলাপ করতে লাগলো এটাসেটা নিয়ে। দেখতে দেখতে বোতলটাও খালি হয়ে গেলো। উঠে গিয়ে আরেক বোতল হুইস্কি নিয়ে আসলো ইশিগামি। খুব কমই পান করে সে, মাঝে মধ্যে জটিল কোন গাণিতিক সমস্যা নিয়ে বেশিক্ষণ খাটলে মাথাটা ভারি হয়ে আসে তার। তখন এক আধটু হুইস্কি খেলে মাথা খুলে যায় আবার।

    আলাপটা সেরকম প্রাণবন্ত না হলেও কথা বলতে খারাপ লাগছিল না ইশিগামির। ইউনিভার্সিটি জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে ভালোই লাগছিল। ইশিগামি অবাক হয়ে খেয়াল করলো, প্রায় দুই যুগ আগে শেষ কথা হয়েছিল তাদের। এরমধ্যে অন্য কারো সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেনি সে। ইউকাওয়া ছাড়া কে আর তার সব কথা বুঝবে?

    “ওহ্! তোমাকে তো সবচেয়ে জরুরি জিনিসটা দেখাতেই ভুলে গিয়েছি,” ইউকাওয়া হঠাৎ বলে উঠলো। এরপরে তার কাগজের ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে ইশিগামির সামনে রাখলো।

    “কি এটা?”

    “খুলেই দেখো না,” হেসে জবাব দিলো সে।

    খামটার ভেতরে পুরো একটা পাতাভর্তি কিছু সূত্র লেখা। ইশিগামি একবার দেখেই চিনে ফেলল। “রাইম্যানের উপপাদ্যকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করছো নাকি?”

    “এত তাড়াতাড়ি বুঝে গেলে?”

    রাইম্যানের উপপাদ্য হচ্ছে সবচেয়ে জটিল উপপাদ্যগুলোর মধ্যে একটি। এখনও প্রমাণ করতে পারেনি কেউ সেটাকে। রাইম্যান নামের এক জার্মান গণিতবিদ প্রস্তাব করেছিলেন এটা।

    ইউকাওয়া প্রমাণ করার চেষ্টা করছে রাইম্যানের উপপাদ্য আসলে ভুল। পৃথিবীর অনেক গণিতবিদই সে চেষ্টা করেছে আগে কিন্তু কেউই সফল হতে পারেনি।

    “আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক প্রফেসরের কাছ থেকে ধার করেছি এটা। কোন জার্নালে প্রকাশ হয়নি এখনও। কিন্তু আমার ধারণা ঠিক পথেই এগোচ্ছে সে,” ইউয়াকাওয়া ব্যাখ্যা করলো।

    “তাহলে তোমার ধারণা রাইম্যানের উপপাদ্য ভুল?”

    “আমি বলেছি এটা ঠিক পথেই এগোচ্ছে,” খামটার দিকে ইশারা করে বলল ইউকাওয়া। “রাইম্যানের উপপাদ্য যদি ঠিক হয়ে থাকে তাহলে এটাতে নিশ্চয়ই কোন ভুল আছে।”

    ইউকাওয়ার চোখ জ্বলজ্বল করছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন উপভোগ করছে বিষয়টা। ইশিগামি বুঝতে পারলো, আসলে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ইউকাওয়া। ‘বুদ্ধ ইশিগামি’ কি আগের মতনই আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করছে।

    “একবার দেখবো নাকি আমি?”

    “সেজন্যেই তো এনেছি।”

    কাগজটা হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে সেটা পড়তে লাগলো ইশিগামি। কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে ডেস্কে বসলো সে। একটা কাগজ কলম নিয়ে লিখতে শুরু করলো।

    “P=NP সমস্যাটার সাথে পরিচিত তো তুমি?” ইউয়াকাওয়া জিজ্ঞেস করলো পেছন থেকে।

    “মানে, বোঝাতে চাচ্ছো, যে কারো সমাধান ভুল প্রমাণ করার চেয়ে সেটা নিজে সমাধান করা বেশ কঠিন, তাই তো? ক্লে গণিত সংস্থা পুরস্কার ঘোষণা করেছে এটার জন্যে,” ইশিগামি ঘুরে বলল।

    “আমি নিশ্চিত ছিলাম, তুমি এটার ব্যাপারে শুনেছো,” গ্লাসটা হাতে নিতে নিতে বলল ইউকাওয়া।

    আবার ঘুরে বসলো ইশিগামি।

    গণিতকে সবসময়ই সে গুপ্তধন শিকারের সাথে তুলনা করে। একবার যদি কেউ জানে তাকে কোন পথে এগোতে হবে, সেই অনুযায়ি সূত্র বসালেই চলবে। যদি সেটাতে না হয় তবে আবার শুরুতে ফিরে গিয়ে অন্য কোন পথ ধরে এগোতে হবে। আর ধৈর্য ধরে এভাবে কাজ করতে থাকলেই এক না এক সময় গুপ্তধনের দেখা মিলবে। এমন একটা সমাধান হাতে আসবে যেটা আগে কেউ করেনি।

    সেক্ষেত্রে মনে হতে পারে অন্য কারো সমাধানের নির্ভুলতা যাচাই করার জন্যে সেই ব্যক্তির দেখানো সূত্র ধরে এগোলেই চলবে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা অত সহজ নয়। কারণ সেই ব্যক্তি ভুল সূত্রও দিতে পারে। সে অনুযায়ি এগোলে সমাধান আসবে ঠিকই, কিন্তু তার চেয়েও যে ভালো কোন সমাধান নেই সেটার কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। তখন আসল সমাধান খুঁজে বের করা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এই জন্যেই P=NP সমস্যাটার প্রস্তাব করা হয়।

    খুব তাড়াতাড়ি ইশিগামি ডুবে গেলো সমস্যাটার ভেতরে। সময়ের খেই হারিয়ে ফেলল একটু পরেই। মনে হতে লাগলো দীর্ঘদিন পরে যুদ্ধে নেমেছে দক্ষ কোন যোদ্ধা। মগজের প্রতিটি কোষ ব্যস্ত হয়ে উঠলো তার।

    X

    “আহ্!” হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গেলো ইশিগামি। কাগজটা হাতে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। ইউকাওয়া কোট খুলে মেঝেতে ঘুমাচ্ছে এখন। আস্তে করে তার কাঁধে টোকা দিলো সে, “সমাধান করে ফেলেছি।”

    ইউকাওয়া উঠে বসলো। চোখ কচলে তাকালো ইশিগামির দিকে, “কি হয়েছে?”

    “সমাধান করে ফেলেছি আমি। দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, তুমি যে সমাধানটা এনেছিলে সেটা ভুল ছিল। মিলে যাচ্ছিল প্রায়, কিন্তু শেষের দিকে একটা সূত্রের প্রয়োগে ভুল হয়ে গেছে। প্রাইম নম্বরগুলো—”

    “আরে, দাঁড়াও দাঁড়াও,” ইউকাওয়া হাত উঁচু করে তাকে থামার নির্দেশ দিলো। “কি বলছো কিছুই বুঝতে পারছি না এখন। কয়েক কাপ চা খাওয়ার পরেও বুঝতে পারবো কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। আর রাইম্যানের উপপাদ্যটা ভালোমত বুঝিও না আমি। তোমাকে দেখানোর জন্যেই এনেছিলাম ওটা।”

    “কিন্তু তুমি তো বলছিলে, তোমার ধারণা ওটা ঠিক পথেই এগোচ্ছে?”

    “ঐ প্রফেসরের কথাই পুনরাবৃত্তি করছিলাম আমি। আসলে সে নিজেও বোধহয় সমস্যাটার কথা জানতো, এজন্যেই কোথাও প্রকাশ করেনি।”

    “ওহ্,” হতাশ হয়ে বলল ইশিগামি।

    “তুমি কিন্তু অবাক করে দিয়েছো আমাকে। প্রফেসর আমাকে বলেছিল, কোন দক্ষ গণিতবিদের পক্ষেও একবার বসে ভুলটা বের করা সম্ভব নয়, ইউকাওয়া তার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল। “আর তুমি সেটা ছয় ঘন্টায় করে ফেলেছো!”

    “ছয় ঘন্টা?” ইশিগামি অবাক হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। আলো ফুটতে শুরু করেছে বাইরে। অ্যালার্ম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে।

    “বুদ্ধ ইশিগামি এখনও আগের মতনই আছে তাহলে,” ইউকাওয়া উচ্ছসিত হয়ে বলল। “কিছু জিনিস কখনো বদলায় না। ভালো লাগলো ব্যাপারটা।”

    “আমি দুঃখিত ইউকাওয়া, ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার কথা।’

    “আরে, ব্যাপার না। আমি কিছু মনে করিনি। তোমার একটু হলেও ঘুমানো উচিত এখন। স্কুল আছে তো, নাকি?”

    “হ্যা, তা আছে। কিন্তু এখন আর ঘুমানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অনেক দিন পরে গণিত নিয়ে এভাবে খাটলাম। ধন্যবাদ তোমাকে,” হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ইশিগামি।

    “এখানে এসে খুব খুশি হয়েছি আমি,” ইশিগামির সাথে হাত মেলাল ইউকাওয়া।

    “আমিও খুশি হয়েছি,” বলল সে। “খুব বেশি কিছু করার নেই এখানে। কিন্তু ট্রেন চালু হওয়ার আগপর্যন্ত থেকে যাও।”

    X

    সাতটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে নিলো ইশিগামি। ভালোই হলো ঘুমটা, অনেক দিন পরে এভাবে মগজ খাটিয়েছে সে। মাথাটা অন্যান্য সময়ের চেয়েও পরিস্কার লাগছে আজ।

    স্কুলের জন্যে তৈরি হচ্ছে সে, এমন সময়ে ইউকাওয়া মন্তব্য করলো, তোমার প্রতিবেশি দেখি খুব ভোরেই উঠে গেছে।“

    “আমার প্রতিবেশি?”

    “সাড়ে ছটার সময় তার বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ পাই আমি।”

    ইউকাওয়া এতক্ষণ জেগে ছিল তাহলে।

    ইশিগামি উত্তর দেবে কিনা ভাবছে এমন সময়ে ইউকাওয়া আবার বলে উঠলো, “কুসানাগি তোমাকে তো বলেছে সে একটা খুনের কেসের সন্দেহভাজন, তাই না? সেজন্যেই তোমার ফ্ল্যাটে এসেছিল ওরা।”

    জ্যাকেট পরতে পরতে পাল্টা প্রশ্ন করলো ইশিগামি, “তোমার সাথে কেস নিয়ে আলোচনা করে সে?”

    “মাঝে মাঝে। আসলে কাজের ফাঁকে সময় কাটাতে আসে। আমি তাড়িয়ে দেয়ার আগপর্যন্ত এটা সেটা নিয়ে অভিযোগ করে, এই আর কি।’

    “যাই হোক, তার বর্তমান কেস নিয়ে কিছুই জানি না আমি। কুসানাগি… না কী যেন বলেছিলে তার নাম? সে কিছু বলেনি আমাকে।”

    “একটা লোক খুন হয়েছে। সে আবার তোমার প্রতিবেশির প্রাক্তন স্বামী।”

    “ওহ্! জানতাম না তো!” অনুভূতিহীনভাবে বলল ইশিগামি।

    “তা, প্রতিবেশির সাথে বেশি কথাবার্তা হয়?”

    চিন্তার ঝড় বইতে লাগলো ইশিগামির মাথায়। ইউকাওয়ার গলার সুর শুনে অবশ্য মনে হচ্ছে না সে কিছু সন্দেহ করেছে। প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো হত। কিন্তু গোয়েন্দাটার কথাও মনে রাখতে হবে। ইউকাওয়ার সাথে আবার তার আলাপ হতে পারে। তাই উত্তর দিতেই হবে তাকে এখন।

    “ঠিক ‘বেশি’ বলবো না। কিন্তু মিস হানাওকা যে লাঞ্চ শপটাতে কাজ করেন সেখানে নিয়মিত যাই আমি। আমার এখন মনে হচ্ছে কুসানাগিকে সেটা বলতে বোধহয় ভুলে গিয়েছিলাম তখন।“

    “লাঞ্চবক্স বিক্রি করে সে তাহলে?”

    “আমি কিন্তু আমার প্রতিবেশির জন্যেই ওখানে যাই এমনটা না। স্কুলে যাওয়ার পথে পড়ে বলেই যাই। আমার সাথে গেলেই দেখবে তুমি।’

    “বুঝতে পারছি। তবুও সন্দেহভাজন খুনের আসামির পাশে বসবাস করা বেশ অস্বস্তিদায়ক।”

    “আমাকে তো আর খুন করছে না সে, তাই আমার মাথা না ঘামালেও চলবে।”

    “তা ঠিক,” স্বাভাবিকভাবেই বলল ইউকাওয়া। সন্দেহের লেশমাত্র নেই কণ্ঠে।

    সাড়ে সাতটা নাগাদ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো তারা। ইউকাওয়া কাছের ট্রেন স্টেশনে না গিয়ে ইশিগামির সাথে হাটার সিদ্ধান্ত নিলো। স্কুলের কাছ থেকে ট্রেনে উঠবে সে, তাহলে আর ট্রেন বদল করতে হবে না মাঝপথে।

    যাবার পথে কেসটার ব্যাপারে আর কথা হলো না তাদের মধ্যে। ইশিগামি একবার ভেবেছিল কুসানাগি তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে ইউকাওয়াকে পাঠিয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটু অতিরিক্তই ভেবে ফেলেছিল সে। তথ্যের জন্যে এতটা মরিয়া হয়ে ওঠেনি নিশ্চয়ই কুসানাগি।

    “এখানকার দৃশ্য তো বেশ ভালো,” সুমাইদা নদীর পাশ দিয়ে হাটার সময় বলল ইউকাওয়া। কিছুক্ষণ আগেই শিনোহাশি ব্রিজ পার করে এসেছে তারা। বাস্তুহারাদের জায়গাটাও দেখেছে সে।

    পনিটেইলওয়ালা ধূসর চুলের লোকটা তার কাপড়চোপড় নেড়ে দিচ্ছে। তার পেছনে ক্যান-মানব নিজের কাজে ব্যস্ত।

    প্রতিদিন একই ঘটনা,” ইশিগামি বলল। “গত একমাস ধরে এই একই জিনিস দেখছি আমি। ওদেরকে জীবন্ত ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে তুমি।”

    “কোন নিয়ম-কানুন ছাড়া জীবন যাপন করলে এমনটাই হয়। নিজের অজান্তেই একটা শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যায় জীবন।”

    “ঠিক বলেছো।”

    কিয়োসু ব্রিজের আগের সিঁড়িটা ধরে উপরে উঠলো ওরা। সামনে একটা বিরাট অফিস, পুরোটা কাঁচে মোড়ানো। সেখানে নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখে বলে উঠলো ইশিগামি, “ এখনও এরকম শরীর ধরে রেখেছো কিভাবে, ইউকাওয়া? মাথাভর্তি চুল তোমার। আমাদের মধ্যে কত পার্থক্য!”

    “আগের মত নেই কিন্তু। দিন দিন আরো পাতলা হয়ে যাচ্ছে।”

    স্বাভাবিকভাবে গল্প করলেও ইশিগামির মনে অন্য কথা ঘুরছে। এভাবে যেতে থাকলে তো তার সাথে বেন্টেন-টেই’তে পৌঁছে যাবে ইউকাওয়া। সেখানে তাদের দেখে নিশ্চিত অবাক হয়ে যাবে ইয়াসুকো। আর সেটা তার বন্ধুর নজর এড়াবে বলে মনে হয় না। নিজে চুপচাপ থাকলেও সবকিছুর প্রতিই সমান নজর থাকে ইউকাওয়ার।

    রাস্তার পাশের সাইনটা বন্ধুকে দেখালো সে, “এই লাঞ্চবক্স শপটার কথাই বলছিলাম আমি।”

    “বেন্টেন-টেই? নামটা তো ভালোই দিয়েছে। মালিকদের নিশ্চয়ই ধারণা সম্পত্তির দেবি বেন্টেন তাদের দু-হাত উজার করে দেবেন এই নাম দিলে।”

    “অন্তত আমি নিয়মিত কেনাকাটা করি ওখান থেকে। আজকেও যাবো।”

    “ওহ্, আচ্ছা। আমার তাহলে চলে যাওয়া উচিত এখন, কি বলো?”

    একটু অবাক হলেও ভেতরে ভেতরে স্বস্তি অনুভব করলো ইশিগামি। “দুঃখিত, তোমাকে ঠিকমত আপ্যায়ন করতে পারলাম না।”

    “আরে না, সব ঠিকই ছিল। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চের সুযোগ পেলে করবে নাকি?”

    “আমার বাসাতেই রিসার্চের কাজ করতে পারবো আমি। সেরকম যন্ত্রপাতির তো আর দরকার নেই আমার। আর এই বয়সে আমাকে কেউ নেবে বলে মনে হয় না।”

    “বলা যায় না কিন্তু। শুভকামনা থাকলো তোমার জন্যে, ইশিগামি।”

    “তোমার জন্যেও শুভকামনা।”

    “অনেক দিন পর দেখা হয়ে ভালোই লাগলো।”

    হাত মিলিয়ে রওনা দিলো ইউকাওয়া। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুর প্রস্থান দেখতে লাগলো ইশিগামি। ভালো হয়েছে তার সাথে বেন্টেন-টেই পর্যন্ত যায়নি সে।

    ইউকাওয়া দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলে ঘুরে বেন্টেন-টেইয়ের দিকে রওনা দিলো সে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.