Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প310 Mins Read0

    অ্যা কিডন্যাপিং – ১

    এক

    মেয়েটার মুখে ‘বিয়ে’ শব্দটা শোনার পর থেকেই ওর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। শব্দটা শোনার পর থেকে তার মধ্যে কেবল দেখতে পাচ্ছিলাম একটা ম্যানিকিন পুতুলকেই। অবশ্য সেই ম্যানিকিনে তার আবেদনময়ী স্তন, চিকন পা-জোড়া আর মসৃণ ত্বকটা কিন্তু ঠিকই ছিল।

    ভাবলেশহীন চোখে তাকালাম তার দিকে। তারপর নেমে পড়লাম বিছানা থেকে। বক্সারটা ছুঁড়ে ফেলেছিলাম মাটিতে, সেটা উঠিয়ে পরতে শুরু করলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে চেষ্টা করলাম এলোমেলো চুলগুলোকে একটু লাইনে আনার

    “এরকম মুখ করছো কেন?” বিছানায় উঠে বসে চুল ঝাঁকিয়ে মেয়েটি প্রশ্ন করলো। “এভাবে সোজাসুজি মুখটা তেতো না করলেও পারতে।”

    উত্তর দিতেও আমার ইচ্ছা করছিল না। অ্যালার্ম ঘড়িটার দিকে তাকালাম। আটটা বাজতে কেবল পাঁচ মিনিট বাকি। একদম ঠিক সময়ে উঠেছি। পাঁচ মিনিট পরেই অ্যালার্ম বেজে উঠত। হাত বাড়িয়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করে দিলাম।

    “আমার বয়স কিন্তু সাতাশ হয়ে গেছে, ঠিক আছে?” মেয়েটা পূর্বের কথাটার সাথে যোগ করলো। “তাই কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত তোমার।”

    “তোমাকে আগেই বলেছি, বিয়ে নিয়ে ভাবছি না আমি।” ওর দিকে পিঠ ফিরিয়ে রেখেই উত্তর দিলাম।

    “তুমি আমাকে বলেছ যে, বিয়ে নিয়ে ততটা ভাবছো না। একবারও সেটা নিয়ে ভেবে দেখবে না, তা কিন্তু বলোনি।”

    “আচ্ছা, তাই নাকি।”

    ও কী বলতে পারে, তা আগেই জানা ছিল। কিন্তু এভাবে আগে কোনোকিছু জেনে ফেললে বা বুঝতে পারলে সেটার প্রতি আমার আগ্রহটা হারিয়ে যায়। বিছানার পাশের মেঝেতে বুকডন দেওয়া শুরু করলাম। ব্যায়াম করার সময় খুব সতর্ক থাকি। যেভাবে জিম ইন্সট্রাক্টর শিখিয়ে দিয়েছিল, ঠিক ওভাবেই নির্দিষ্ট ছন্দে টেনে নিতে থাকি শ্বাস।

    “তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?”

    উত্তর দিলাম না। উত্তর দিতে গেলে বুকডনের তাল কেটে যাবে, কতবার বুকডন দিলাম তাও ভুলে যাবো। আঠাশ, উনত্রিশ, ত্রিশ। হ্যাঁ, এবার আরেকটু দ্রুত করতে হবে।

    “তাহলে বলো, আমাকে নিয়ে তোমার পরিকল্পনা কী?”

    চল্লিশ সেকেন্ডের বুকডন দেওয়া শুরু করলাম। বুকডন শেষে গড়িয়ে পা দুটো বিছানার নিচে ঢুকিয়ে দিলাম। এবার সিট-আপ করতে হবে।

    “আমার আসলে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছিল না। তোমাকে পছন্দ হয়েছিল। তোমার সাথে শুতে মন চেয়েছিল। তাই সেটা করলাম। যদি পরিকল্পনা কী জানতে চাও, তবে হ্যাঁ, এটুকুই আমার পরিকল্পনা ছিল।

    “তারমানে তুমি বিয়ের কথা মাথাতেই আনোনি।

    “আমি তো শুরু থেকে সেটাই বলে আসছি। ওসব নিয়ে বিন্দুমাত্রও ভাবিনি। তোমার চাপাচাপিতেও ভাবতে রাজি নই।”

    “আর যদি বলি ব্যাপারটা আমার চোখে খারাপ লাগছে?”

    “লাগলেই বা কী। বিয়ের জন্য তোমার অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। তোমার জন্য সেটা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না।”

    “তাহলে তুমি আমার ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছ?”

    “তো তা বলিনি। আমরা কেবল তিনমাস ধরে ডেটিং করছি। তবে মতোবিরোধ দেখা দিলে আমার কাছে হাল ছেড়ে দেওয়াটাই ভালো বলে মনে হয়।

    মেয়েটা চুপ হয়ে গেল। সে মনে মনে কী ভাবছে তা আমার মাথাতেই এলো না। ও বেশ অহংকারী, তাই খুব বেশি কিছু ওর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সে ভাবতে থাকুক, আমি সিট-আপ চালিয়ে যাই। বয়স তিরিশের কোঠায় পৌঁছানোর পর থেকে পেটে খুব সহজেই চর্বি জমে যায়। প্রতিদিন সকালে তাই এরকম ব্যায়াম করতে আমি বাধ্য।

    অবশেষে “আমি বাসায় যাচ্ছি,” বলে সে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। অবশ্য এই কথাটাই যে ও বলবে, তা আগেই অনুমান করেছিলাম।

    ব্যায়াম চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে সে কাপড় পরা শুরু করলো। কালো রঙের একটা ড্রেস পরে এখানে এসেছিল। জামা পরার পর মেকআপ না করেই তার ব্যাগটা হাতে নিল।

    “আমার কাছ থেকে আর কোনো ফোন কলের আশা কোরো না।”

    এই কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

    অস্বীকার করছি না যে, তার একটা আকর্ষণীয় ফিগার ছিল। কিন্তু যা হবার তা হয়ে গেছে। হ্যাঁ এটা সত্য যে, ঐ ফিগারের কারণেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু তাই বলে সারাজীবন তার সাথে কাটাতে রাজি নই আমি। অবশ্য বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আরো কিছুদিন ডেটিং চালিয়ে যেতে পারতাম। তারপর চূড়ান্তরকমের বিরক্ত হয়ে গেলে ঠিক তখনই ব্রেকআপ করতাম। কিন্তু ওভাবে মূলা ঝুলিয়ে ডেটিং চালানো আমার চরিত্রের সাথে যায় না। এমন না যে, ওরকম করলে আমার অবচেতন মন সেটা মেনে নিতে পারবে না। আসল কারণ হলো, খুবই সামান্য একটা জিনিসের জন্য অনেক বেশি কাজ করতে হবে, যা আমি কোনোমতেই করতে রাজি নই। এখন পর্যন্ত প্রচুর সম্পর্কে জড়িয়েছি। আঙুল গুনেও সঠিক সংখ্যাটা বের করা কষ্টকর হবে। অবশ্য ওগুলোর মধ্যে যে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে কাউকে ডেটিং করিনি, তাও কিন্তু বলছি না। তবে ভেতরে ভেতরে টের পাচ্ছিলাম, ঐ পথ ধরে আগানো আমার জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

    গোসল আর শেভ শেষ করতে করতে মেয়েটার কথা প্রায় ভুলেই বসেছিলাম। বরং আরো দুজনের নাম আমার মাথায় ইতোমধ্যে ঘোরা শুরু করেছিল। একজন উঠতি মডেল, আরেকজন ‘অফিস লেডি’। দুজনের ফোন নম্বরই মুখস্ত ছিল, কিন্তু কেন জানি তাদের ফোন দেওয়া হয়ে উঠেনি। মডেল কন্যা কিন্তু নিজে থেকেই একবার আমাকে ফোন দিয়েছিল। তবে ‘অফিস লেডি’কেই আমার বেশি ভালো লেগেছিল। কিন্তু একবার দুজনে মিলে ড্রিংক করতে যাওয়ার পর টের পাচ্ছিলাম, ঐ পথটায় খুব একটা আশা নেই। আর তার মন জয়ের জন্য অযথা হ্যাপা পোহাতেও আমি রাজি ছিলাম না। অতসব করার যোগ্য মহিলা সে নয়। আর আসল কথা হলো, এতকিছু করার মতো সময় আমার হাতে নেই।

    হ্যাম আর ডিম ভেজে নিলাম, সাথে পাউরুটি টোস্ট করলাম। ক্যানড স্যুপ গরম করে নিলাম। এসব দিয়েই সেরে ফেললাম ব্রেকফাস্ট। কদিন ধরে সবজি কম খাওয়া হচ্ছে। যতদূর মনে পড়ে, ফ্রিজের কোণায় একটা ফুলকপি থাকার কথা। আজকে রাতে সেটা দিয়ে গ্রাটান (চিজ, ডিম, মাখন ইত্যাদি সহযোগে বানানো একধরনের খাবার) বানাবো বলে মনস্থির করলাম।

    স্যুট-টাই পরে কম্পিউটারটা চালু করলাম। ইমেইল চেক করতে হবে। হুম, বেশ কয়েকটা কাজের সাথে জড়িত ইমেইল দেখা যাচ্ছে। বাকিগুলো সব অপ্রয়োজনীয়। এদের মধ্যে একটা সেদিন যে ক্লাবে গিয়েছিলাম, সে ক্লাবের হোস্টেস পাঠিয়েছে। ওটা না পড়েই ডিলিট করে দিলাম।

    ঘর থেকে বের হতে হতে নয়টার একটু বেশি বেজে গেল। তারমানে ঘুম থেকে ওঠার পর একঘণ্টার বেশি পার হয়েছে। সময়কে ভালোমতো ব্যবহার করাটা এখনো শিখলাম না। সাবওয়েতে ঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় মিনিট সাতেক লেগে গেল।

    মিনাতো ওয়ার্ডে আমার অফিস ছিল। পনেরো তলা লম্বা এক বিশাল বিল্ডিংয়ের নবম আর দশম তলা আমার অফিস, মানে ‘সাইবারপ্ল্যান’ ভাড়া নিয়েছিল। লিফটের দশে নেমে গেলাম।

    ডেস্কে পৌঁছাতেই দেখি কম্পিউটারের ওপর একটা কাগজ আঠা দিয়ে লাগানো। কাগজে লেখা, “আমার রুমে এসে দেখা করবে। ~কোজুকা।”

    প্রেসিডেন্টের দরজাটা হা করে খোলা। যদি দরজাটা বন্ধ থাকে, তবে খুব জরুরি কাজ না হলে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করা যাবে না। আর খোলা থাকলে যখন-তখন দেখা করা যাবে। এটা ছিল কোজুকার নিজস্ব পলিসি।

    ভেতরে ঢুকেই দেখলাম কোজুকা একজন মহিলা কর্মচারীর সাথে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছেন। আমাকে দেখেই আলোচনাটা থামিয়ে দিলেন।

    “বাকিটুকু তোমার হাতেই ছেড়ে দিলাম। তবে ঐ ডিজাইনারকে আর ব্যবহার করার দরকার নেই।” কোজুকা বুঝিয়ে বললেন। সে মাথা নেড়ে বুঝতে পেরেছে বলে বিদায় নিল। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে আলতোভাবে মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানালো।

    “যতদূর জানি, মেয়েটা একটা গেম বানানোর দায়িত্বে আছে।

    “তুমি তো জানোই, গেম বানানো বেশ কঠিন একটা কাজ।” কোজুক ফাইলগুলো বন্ধ করতে করতে জবাব দিলো। “প্লিজ দরজাটা বন্ধ করে দাও।”

    বোঝা গেল, প্রচুর টাকা-পয়সা জড়িত কোনো বিষয় নিয়ে তিনি কথাবার্তা বলবেন। কিংবা আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছুও হতে পারে। দরজাটা বন্ধ করে তার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়ালাম।

    “নিসেই অটোমোবাইলস থেকে পাকা খবর এসেছে।” পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্ট বললেন।

    “তাহলে তারা অবশেষে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে? যাক। এখন মিটিংগুলোর জন্য কাজকর্ম শুরু করে দিতে হবে। এই সপ্তাহের যে-কোনো দিন আমি ফ্রি আছি।’”

    তবে আমার উত্তর শুনে কোজুকার মুখের ভঙ্গি পাল্টালো না। “না, সে ব্যাপারে কিছু বলেনি ওরা।”

    “অটোমোবাইল পার্কটার কথাই তো বলছেন, তাই না?”

    “হ্যাঁ।”

    “তাহলে? তাহলে ওদের কি সিদ্ধান্ত নিতে আরো সময় লাগবে বলেছে?”

    “নাহ, ওরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সেটাই জানিয়েছে।”

    “কী জানিয়েছে?”

    “ওটা তারা ক্যান্সেল করে দিয়েছে।”

    তার কথাটা বুঝতে না পেরে ডেস্কের দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। না, ভুল বললাম। কথাটা বুঝতে পেরেছি, কিন্তু সেটা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হচ্ছে।

    “কাজটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে ওরা। অটোমোবাইল পার্কের পরিকল্পনাটা আবার শূন্যের কোঠায় চলে গেল।”

    “কিন্তু…কীভাবে হলো এটা?”

    নিজেকে মনে মনে ধোঁকা দিচ্ছিলাম, কোজুকা হয়তো আমার সাথে মজা করছেন। কিন্তু তার ভাবভঙ্গি দেখে মন থেকে সে কল্পনাটা উবে গেল। টের পেলাম, রাগে নিজের শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরা দিয়ে উত্তপ্ত রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেছে।

    “কথাটা আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।” কোজুকা মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন। “এতদূর আসার পর তারা প্রজেক্টটা ক্যান্সেল করে দিল?

    “এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে তা আমাকে প্লিজ বুঝিয়ে বলুন।”

    “আমি নিজেও কিছু জানি না। আজ রাতে ওরা মিটিং ডেকেছে, ওখানেই জিজ্ঞাসা করব। হয়তো ওখানেই আমাদের একটা আনুষ্ঠানিক নোটিশ দিয়ে ব্যাপারটা শেষ করে দেবে।”

    “ওরা কি পুরো কাজটাই বন্ধ করে দেবে? নাকি ওরা ‘কাজটা হবার সম্ভাবনা কম’ বোঝাতে চাইছে?”

    “হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য। গোটা পরিকল্পনাটাই প্রত্যাখ্যান করেছে ওরা।” ডানহাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিজের বাম হাতে ঘুসি মেরে বসলাম। “এত খাটাখাটুনির পর তারা এই কথা বলার সাহস… …”

    “সুপারভাইজার নিজেও বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন।”

    “সেটাই স্বাভাবিক। আমরা এই প্রজেক্টে প্রচুর সময় দিয়েছি, তাই…”

    “আমাকে তারা অবশ্য গ্যারান্টি দিয়ে বলেছে যে, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টাকা আমাদের খরচ হয়েছে তা ওরা পরিশোধ করে দেবে।”

    “এই পর্যায়ে এসে টাকা দিয়ে কাজটা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।”

    “সেটা আমিও জানি।” কোজুকা নাকের বাম পাশটা চুলকাতে লাগলেন।

    পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার সামনে পায়চারি করা শুরু করে দিলাম। “নিসেই অটোমোবাইল তাদের নতুন গাড়ি উদ্বোধনের জন্য একটা বিশাল আয়োজন করতে চেয়েছিল। একই সাথে তারা তাদের বানানো গাড়ির ইমেজ বাড়াতে চেয়েছিল। অনেকটা ‘কার শো’ টাইপ কিছু একটা করতে চেয়েছিল ওরা। তবে সামান্য প্রদর্শনী হলে চলবে না। সেজন্যই ওরা আমাদের সাহায্য চেয়েছিল, ঠিক না?”

    “হুম।’”

    “কোনো বড়োসড়ো ফার্মের সাথে দেখা না করে তারা আমাদের মতো মাঝারি সাইজের ফার্মের কাছে এসেছিল। বাজেট বাদেও তারা আমাদের কাছ থেকে সৃজনশীল কিছু আশা করেছিল বলেই আমাদের কাছে এসে হাজির হয়েছিল। এটাও তো ঠিক?”

    “একদম ঠিক।”

    “তারপর সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর কেবল তাদের একটা আনুষ্ঠানিক সম্মতির দরকার ছিল। তাহলেই কাজ শুরু করে দিতে পারতাম। তা না করে শেষমুহূর্তে ভয় পেয়ে তারা পিছিয়ে গেল? তাও আবার বিশ্ববিখ্যাত নিসেই কোম্পানি?”

    “রাগটা নিয়ন্ত্রণ করো। আমি জানি, আমাদের অন্যতম বড়ো প্রজেক্ট ছিল এটা। তুমিও প্রচণ্ড শ্রম দিয়েছ এটাতে। কিন্তু ক্লায়েন্ট পক্ষ তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। মনে রাখবে, এরকম কিন্তু ভবিষ্যতেও ঘটবে। আমাদের মেনে নিতে হবে ব্যাপারটা।”

    “ভবিষ্যতে তো দূরের কথা, এবারেরটাই আমি মেনে নিতে পারছি না।”

    “সবচেয়ে বিরক্ত কিন্তু আমি হয়েছি। আমাকে গোটা বিজনেস প্ল্যানটা আবার সাজাতে হবে। নিসেই জানিয়েছে পরবর্তী কাজে তারা আমাদের ডাকবে। অবশ্য ওদের ওপর আমি আর খুব একটা আস্থা রাখতে পারছি না।”

    “তারা হয়তো আজকের মিটিংয়ে আমাদের আরেকটা অ্যাড বানাতে বলবে। আজকের মিটিংয়ে কি আমি আপনার সাথে আসতে পারি?”

    “তুমি না এলেই বরং ভালো হবে।” কোজুকা হাতের তালু সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “তুমি ওখানে গেলে হয়তো ওদের সাথে মারামারি করে বসতে পারো। যদি আমরা চুপচাপ ঘটনাটা হজম করে ফেলি, তাহলে ওদের সুনজরে থাকতে পারবো।”

    এরকম পাকা ব্যবসায়ীর মতো চিন্তাভাবনা কোজুকার পক্ষেই সম্ভব। সে যে সৃষ্টিশীল কেউ নয়, বরং একজন ম্যানেজার; তা নতুন করে শিক্ষা হলো। জোরেসোরে একটা শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তাহলে প্রজেক্ট টিমও ভেঙে ফেলা হবে?”

    “সেটা তো অবশ্যম্ভাবী। আজ রাতে সবকিছু জেনে গোটা পরিস্থিতি তোমাকে ইমেইলে জানাবো। তারপর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে তুমি পদক্ষেপ নেবে।”

    “আমরা বাদেও আরো অনেকে আছে, যারা এ সিদ্ধান্তে খুবই মন খারাপ করবে।”

    “স্বাভাবিক।” কোজুকা ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলেন।

    ***

    সেদিন বিকেল পর্যন্ত অফিসে থাকলাম। কিন্তু একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারলাম না। কেন? কষ্টের, অপ্রাপ্তির অনুভূতিগুলো বুদবুদ করে বুকে জমা হচ্ছিল। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। গন্তব্য : আমার অতি পরিচিত স্পোর্টস জিম।

    টানা চল্লিশ মিনিট ধরে সাইকেল চালিয়ে প্রায় লিটার খানেক ঘাম ঝরালাম। তবুও শান্তি পেলাম না। মরিয়া হয়ে মেশিনগুলোতে ব্যায়াম করতে বসলাম, কিন্তু গা ম্যাজম্যাজ করছে বিধায় তাতেও শান্তি জুটলো না। স্বাভাবিকের চেয়ে কম ব্যায়াম করে উঠে পড়লাম। গোসলখানায় ঢুকে সেরে নিলাম গোসলটা।

    জিম থেকে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠলো। নম্বরটা চেনা চেনা লাগছিল। কিন্তু কার নম্বর, তা মনে করতে পারছিলাম না।

    “সাকুমা? আমি কোজুকা বলছিলাম।

    “জি প্রেসিডেন্ট। নিসেই-এর সাথে মিটিং শেষ হলো?”

    “হুম। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। আমি এখন রপ্পোনগিতে। আসতে পারবে এখানে?”

    “অবশ্যই। জায়গাটা কোথায়?”

    ““সেবাইন’ এ চলে আসো। মনে আছে তো জায়গাটা?”

    “জি স্যার। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে হাজির হচ্ছি।”

    ফোনটা কেটে দেওয়ার সাথে সাথে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম। হাত দেখিয়ে ওটাকে থামালাম। একদম সময়মতো পেয়ে গেছি।

    ‘সেবাইন’ প্রতিষ্ঠানটা একটা কতিপয় স্বাস্থ্যকর খাবারের কোম্পানি চালায়। উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই : ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া। কোজুকার সাথে বেশ কয়েকবার গেছি ওখানে। জায়গাটা অতিরিক্ত বড়ো আর খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ। সেই সাথে সঙ্গ দেবার জন্য প্রচুর হোস্টেস ভেতরে ঘোরাফেরা করে। ভেতরের চোখ ধাঁধানো জাঁকজমক দেখলে অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই বিরক্তি ধরে যাবে। প্রত্যেকবার এখানে এসে আমার একটাই কথা মনে হয় : যে পরিমাণ টাকা এখানে ঢালা হয়েছে, তার অর্ধেক দিয়েই আমি এটাকে অপূর্ব করে সাজিয়ে দিতে পারতাম।

    ট্যাক্সি থেকে নেমে কাছাকাছি বিল্ডিংটার লিফটে ঢুকে পড়লাম।

    কালো স্যুট পরা একজন পুরুষ আর স্বর্ণকেশী একজন মহিলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে দেখে পুরুষ স্ট্যাফ অত্যধিক বিগলিত হয়ে অভিবাদন জানালেন। স্বর্ণকেশী আমাকে স্বাগতম জানালেন ভাঙা ভাঙা জাপানিজে

    “প্রেজিসেন্ট কোজুকা কি এসেছেন?”

    “জি, তিনি ইতোমধ্যে এসে পড়েছেন।”

    দরজা থেকেই গোটা প্রতিষ্ঠানটা দুদিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। বাম দিকে ঢুকলে হলঘর। আর ডান দিক দিয়ে ঢুকলে কাউন্টার সিট পড়বে। স্ট্যাফকে অনুসরণ করে ডান দিকে ঢুকে পড়লাম। কিন্তু কোজুকা সেখানে ছিলেন না। পেছনের দিকে একটা প্রাইভেট রুম ছিল। বিশেষ অতিথিদের জন্য সেই ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কোজুকা তো এখানে তেমন খরচাপাতি করেন না। বরং কিছু রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে তিনি এ জায়গাটা ব্যবহার করেন। আসলেই কোজুকার মাথাটা একদম খাঁটি পলিটিশিয়ানদের মতো

    প্রাইভেট রুমে কোজুকা দুজন হোস্টেসের সাথে বসে হেনেসির সাথে বরফ মিশিয়ে পান করছিলেন। আমাকে দেখে হাতটা উঠিয়ে কাছে ডাকলেন।

    “হঠাৎ করে এখানে ডাকার জন্য দুঃখিত।”

    “না, সমস্যা নেই। আমি এমনিতেও এখানে আসার কথা ভাবছিলাম।”

    কোজুকা মাথা নেড়ে যেন বোঝাতে চাইলেন তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন।

    আমি কীরকম ড্রিংক চাই হোস্টেস তা জিজ্ঞেস করলো। পানি আর বরফ না মিশিয়ে কোজুকার হাতের ড্রিংকটাই আনতে বলে দিলাম। ভিআইপি রুমের সাথে একটা লাগোয়া কাউন্টার রয়েছে, যেখানে মোটামুটি সবধরনের ড্রিংক্সই পাওয়া যায়। হোস্টেস সেখান থেকে একটা ব্র্যান্ডি গ্লাস নিয়ে এলো। হেনেসি দিয়ে পরিপূর্ণ করে আমার সামনে গ্লাসটা রেখে দিলো। কিন্তু কেন জানি এক্ষুণি পান করতে মন চাইলো না।

    “দুঃখিত, এখন আমরা দুজন কিছুক্ষণ গোপন ব্যবসায়িক আলাপ করবো।” কোজুকা কথাটা বলায় হোস্টেস দুজন জোর করে মুখে হাসি রেখে সেখান থেকে বিদায় নিল

    “তাহলে, বলুন কী বলবেন।” চুপ থাকতে না পেরে অবশেষে বলেই ফেললাম।

    “হ্যাঁ। সোজাসুজি মূল ব্যাপারে চলে যাচ্ছি। যা বুঝতে পারলাম, গতকালকের বোর্ড মিটিংয়ে তারা আমাদের ক্যান্সেল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

    “সেটা নাহয় বুঝলাম। আমি শুধু কারণটা জানতে চাচ্ছি।”

    “কারণটা…” কোজুকা গ্লাসটা ঝাঁকিয়ে বরফগুলো দিয়ে টুংটাং শব্দ করলেন।

    “কারণটা হচ্ছে তারা এত বড়ো আয়োজন থেকে সেই অনুপাতে সাড়া পাওয়ার আশা করতে পারছে না। একবাক্যে বললে এটাই তাদের ক্যান্সেল করার মূল কারণ।”

    “আশা করতে পারছে না? কে বলেছে এসব কথা? আমরা না কদিন ধরে কাজ করে সেটা ভুল প্রমাণিত করেছি?”

    “আচ্ছা আচ্ছা। আজেবাজে কথা বাদ দিলাম। তোমার কাছে আর কিছুই লুকাবো না। আমাদের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন মিস্টার কাতসুরাগি, সদ্য যোগ দেওয়া এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট।”

    “কাতসুরাগি? মানে চেয়ারম্যানের ছেলে?”

    “মিস্টার কাতসুতোশি কাতসুরাগি। তিনি নাকি একেবারে গোড়া থেকে সবকিছু শুরু করতে চান।”

    “তার মানে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আমরা যে খাটাখাটুনি করলাম, সেটা ঐ বড়োলোকের বাউন্ডুলে ছেলে আকস্মিক ঝোঁকের মাথায় মূল্যহীন করে দিল?”

    “ও সামান্য কোনো বড়োলোকের বাউন্ডুলে ছেলে নয়। তাদের সেলস আর প্রমোশন বিভাগে বেশ নাম কামানোর পর সে নিসেই এর আমেরিকান ব্র্যাঞ্চে গিয়ে মার্কেটিংয়ের খুঁটিনাটি শিখে এসেছে। হ্যাঁ, সে যে চেয়ারম্যানের ছেলে হওয়ার কারণে পঞ্চাশ বছর বয়স হওয়ার আগেই এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তা সত্য। কিন্তু তার মানে এই না যে, সে একেবারে মূর্খ অবস্থায় কাজে যোগ দিয়েছে।”

    “মিস্টার কোজুকা, আপনি কি ওর সাথে আজকে দেখা করেছেন?”

    “হ্যাঁ। একেবারে র‍্যাপটরের (Raptor; একধরনের ডাইনোসর) মতো চোখা চোখ তার। আর একবারও সেই মুখে হাসির ছিটেফোঁটা দেখতে পাইনি।” কোজুকার মুখে অভিভূত হওয়ার ভাব টের পাচ্ছিলাম, কিন্তু চট করে হাতের ব্র্যান্ডিটা গিলে ফেলে সেটা আড়াল করে ফেললেন।

    “ভয়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার। দুর্দান্ত শাসক ঢুকেছে নিসেইতে।”

    আমিও গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালাম।

    “মিস্টার কাতসুরাগি বলেছেন, তিনি আরেকবার আমাদের সুযোগ দেবেন।”

    “ওহ,” গ্লাসটা হাতে নিয়ে খুশিখুশি চেহারায় প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালাম। “তাহলে ভিন্ন কথা। আবার প্রথম থেকে কাজ করা শুরু করে দেই। এবার এমন কিছু তাদের সামনে উপস্থাপন করবো যে, ওরা কোনো অভিযোগই করতে পারবে না।”

    “অবশ্যই, সেটা তো আমারও ইচ্ছা…ছিল। কিন্তু তিনি আমাদের সুযোগটার সাথে দুটো শর্তও জুড়ে দিয়েছেন। একনম্বর শর্ত হচ্ছে—তারা যে পরিবেশবাদী ভূমিকা রাখছে, সেটা ভালোভাবে হাইলাইট করতে হবে। সেটা কেবল গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া আর শক্তি সাশ্রয়ের মধ্যে আটকে রাখলে চলবে না। তিনি চান সবাই জানুক যে, নিসেই কোম্পানি পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া চালিয়ে থাকে।”

    “কাজটা করতে বেশ ধকল পোহাতে হবে। যাই হোক। আরেকটা শর্ত কী?”

    “হ্যাঁ, সেটার কথাই বলতে যাচ্ছি।” কোজুকা গ্লাসে ব্র্যান্ডি ঢেলে নিলেন। আমার চোখ এড়িয়ে কথা বলা শুরু করলেন।

    “অন্য শর্তটা কী?” আবার জিজ্ঞাসা করলাম।

    কোজুকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবশেষে মুখ খুললেন। “দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, আমাদের গোটা টিমটা পালটে ফেলতে হবে। বিশেষ করে সেই টিমের প্রধান শুনসুকে সাকুমাকে।”

    আমার নামটা আসার পরও তিনি কী বলতে চাইছেন, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। নাকি আমার নাম আসাতেই কথাটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল? “সে চায় আমি প্রজেক্টের ধারেকাছেও না থাকি?”

    “মিস্টার কাতসুরাগি নাকি এখন পর্যন্ত তোমার করে আসা কাজকর্মের খোঁজখবর নিয়েছেন। সবশেষে তিনি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। মনে রাখবে, কথাগুলো আমার নয়। এগুলো এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাতসুরাগির কথা।”

    “বলে ফেলুন।”

    “মিস্টার সাকুমার কাজকর্ম বেশ চটকদার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সবার আকর্ষণ কেড়ে নিতে সক্ষম হন। কিন্তু দীর্ঘসময়ের সিদ্ধান্ত নিতে তিনি ব্যর্থ। তার চিন্তাভাবনা খুবই সহজ-সরল, মানুষজন খুব সহজেই সেটা ধরতে পারে। কিন্তু মানুষজন কী চায়, তা তিনি ধরতে পারেন না। একটা নতুন গাড়ির প্রচারণার জন্য একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ব্যবস্থা করা খুবই সাধারণ চিন্তাভাবনা। এখান থেকেই তার ভাসাভাসা চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। নিসেই-এর ক্রেতারা শুধু গাড়ি কেনে না, তার সাথে তারা সম্মানও কেনে। কেউই সেই অর্জিত সম্মানটা খোয়ানোর জন্য একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্কে আসবে না। আমি চাই আপনি এমন কাউকে এ কাজের দায়িত্ব দেন, যে কিনা প্রত্যেকটা কাজ করার আগে ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেয়—এটুকুই ছিল মিস্টার কাতসুরাগির কথা।”

    তখনো গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছি। আমার গোটা শরীরের ভেতর লজ্জ্বা আর রাগ ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে রেখেছি এখনো। যদি কোনো কারণে মুখ খুলি, তবে শুধু চিৎকার বের হবে। আর নড়ে ওঠার সুযোগ পেলে আমি হয়তো হাতের গ্লাসটা ছুঁড়ে মারবো।

    “বুঝতে পেরেছ?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

    মাথা নাড়লাম। “সংক্ষেপে বললে তিনি বলেছেন, সাইবারপ্ল্যান-এর সাকুমা একটা অপদার্থ, অযোগ্য একজন কর্মচারী।”

    “তিনি অত খারাপভাবে কথাটা বলেননি। তিনি এটুকু বোঝাতে চেয়েছেন যে, তার সাথে তোমার চিন্তাধারা মেলে না।”

    “একই কথা! মূল কথা হলো, তিনি নিজেকে সেরাদের সেরা ভাবেন।” ঢকঢক করে ব্র্যান্ডিটা গিলে ফেললাম। টের পেলাম, তরল আগুনের একটা ঢেউ আমার মুখ থেকে পাকস্থলিতে পৌঁছে যাচ্ছে।

    “যাকগে। আমাদের মতো মাঝারি সাইজের ফার্মের পক্ষে শর্ত দুটো মেনে নেওয়া বাদে আর কিছুই করার ছিল না। কালকেই আমি সুগিমোতোর সাথে এ নিয়ে আলাপ করব।”

    “সুগিমোতো তারমানে আমার জায়গাটা নিচ্ছে?”

    “ওটাই আপাতত আমার সিদ্ধান্ত।”

    “বাহ, ‘কনসার্ট গায়ক’ সুগিমোতোকে বেছে নিচ্ছেন?” অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম।

    “আমার কথা শেষ।”

    “বুঝতে পেরেছি।” বলে উঠে দাঁড়ালাম।

    “এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে যাও। যে মানুষটা মদের গ্লাসে নিজেকে বরবাদ করে দিতে চায়, তাকে সঙ্গ দেওয়া আমার পলিসিগুলোর একটা।”

    “যুক্তিহীন কথা বলবেন না প্লিজ।” হাত দুটো সামান্য ওপরের দিকে তুলে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করলাম।

    কোজুকা বুঝতে পেরে মাথা নাড়লেন। হাতের গ্লাসটা নিচে রেখে বিড়বিড় করে বললেন, আমিই নাকি অযৌক্তিক কথাবার্তা বলছি।

    সেবাইন থেকে বের হবার পর সরাসরি বাড়ি যেতে মন চাইল না। তাই পরিচিত একটা বারে চলে গেলাম। আগেও বেশ কয়েকবার এখানে এসেছি। কাউন্টারের কোণার একটা সিট দখল করে বরফ মেশানো বারবনের অর্ডার দিলাম। বারবনের গ্লাসে চুমুক দেবার পরেও ভেতরের ভারি ভারি ভাবটা দূর করতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল একগাদা সীসা গিলে ফেলেছি, তাই নিজেকে এত ভারি লাগছে। মানুষজন কী চায়, তা তিনি ধরতে পারেন না; কাজকর্মে তার ভাসাভাসা চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়; আমি চাই এমন কাউকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হোক, যে কিনা প্রত্যেকটা কাজ করার আগে ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেয়— প্রত্যেকটা কথা আমার ভেতরটা চুরমার করে দিতে থাকলো। মনের ভেতরের ভারসাম্যটা আর রক্ষা করতে পারছিলাম না।

    আমাকে অন্তত একটু ছাড় দাও, ভাবলাম আমি। গুরুত্বপূর্ণ একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে চারবছর আগে বাছাই করে এ কাজে নেওয়া হয়েছে আমাকে। কাজে যোগ দেবার পর থেকে আমার হাত দিয়ে এমন কোনো একটা পণ্যও যায়নি, যা বিক্রি করাতে পারিনি। সেটা পণ্য হোক কিংবা মানুষ, রত্ন হোক কিংবা আবর্জনা– আমার মনে এইটুকু গর্ব ছিল যে, আমি সবই বিক্রি করাতে পেরেছি। যে মানুষ অন্য মানুষের চাহিদা ধরতে পারে না, তার পক্ষে এটা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

    মেজাজ তখনও প্রচণ্ড খারাপ ছিল। কিন্তু মাথা ঘোলাটে হতে শুরু করায় বার থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় গিয়ে ট্যাক্সি থামালাম।

    “কোথায় যাবেন?” ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো।

    ‘কায়াবাচো’ বলার কথা ছিল, কারণ আমার বাসা ওখানে। কিন্তু অদ্ভুত কারণবশত সেটা বললাম না। খেয়ালের বশে বলে উঠলাম, “দেনেনচোফু চলো।” সাথে আরো যোগ করলাম, “নিসেই অটোমোবাইলস-এর চেয়ারম্যানের বাসা চেনো? ঐ যে, বিশাল প্রাসাদের মতো বাসাটা? ওখানে নিয়ে চলো।”

    “হ্যাঁ, ম্যানশনটা চিনি।” ড্রাইভার জবাব দিলো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভবিষ্য পুরাণ – অনুবাদ : স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি)
    Next Article ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.