Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প310 Mins Read0

    অ্যা কিডন্যাপিং – ১০

    দশ

    হোটেল গার্ডেনস-এ ফোন করে জানিয়ে দিলাম, আজকে রাতের জন্য রিজার্ভেশন করতে চাচ্ছি একটা। আমার ফোনটা ট্রান্সফার করে ফ্রন্ট ডেস্কে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। সেখানে পুরুষ হোটেলমালিক ফোনটা ধরলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কয়জনের রুম লাগবে। জানালাম, “কেবল আমার জন্য একটা রুমের বন্দোবস্ত করে দিন।”

    “হ্যাঁ, আজকে রাতের জন্য আমরা একটা রুমের ব্যবস্থা করে রাখতে পারব।”

    “যদি সম্ভব হয়, তবে অ্যাভিনিউ-এর দিকে মুখ করা রুম হলে ভালো হয়।”

    “অ্যাভিনিউয়ের সামনের দিকটা?”

    “হ্যাঁ। আর চেষ্টা করবেন, খুব বেশি ওপরের রুম যাতে না হয়।”

    “একটু অপেক্ষা করুন।”

    বিশ সেকেন্ডের মতো হোল্ডে থাকার পর হোটেলমালিকের গলা আবার শুনতে পেলাম।

    “ধন্যবাদ আপনাকে। পনেরো তলার রুমে আপনার চলবে?”

    “পনেরো তলা? ঠিক আছে। ঐ রুমটাই তাহলে নেব।”

    “অবশ্যই স্যার। আপনার নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া যাবে?” ভুয়া নাম আর নম্বর দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।

    “কোন হোটেল?” জুরি সোফা থেকে না উঠেই জিজ্ঞেস করলো।

    “গার্ডেনস। এখান থেকে বেশ কাছে। মন্দ না হোটেলটা। ওখানকার চাইনিজ রেঁস্তোরাটাতে যে ক্র্যাব-এগ-শার্ক-ফিন স্যুপটা বানায়, সেটা অত্যন্ত সুস্বাদু। শুনেছি, ওখানের হেড শেফ ফ্রান্সের অধিবাসী, আর তিনি নাকি গোটা জাপানে সবচেয়ে বেশি মেডেল পাওয়া মানুষ।”

    আমার কথা শুনে জুরি মাথা নেড়ে বলল, “আমি জানতে চাইছি হোটেলে কেন রিজার্ভেশন নিলেন। শুধু খাওয়া-দাওয়া করতে তো নেননি। নাকি আমরা নতুন কোনো জায়গায় সরে যাচ্ছি?”

    “আমাদের নতুন করে কোনো জায়গার দরকার নেই। আজকের জন্য কেবল হোটেলে সময় কাটাবো।”

    “টাকাপয়সা বিনিময়ের কাজে ব্যবহার করবেন?”

    নিজেকে সামলাতে না পেরে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলাম। “না না, সেরকম কিছু করবো না।”

    “তাহলে আপনার পরিকল্পনা কী? এটা কী কাজে ব্যবহার করবেন? আমরা কীভাবে টাকা আদানপ্রদান করব?” জুরি হিস্টিরিয়াগ্রস্থ মুখে জানতে চাইলো।

    “আমাকে জেরা করছো নাকি?”

    “জেরা করছি কারণ আপনি আমাকে কিছুই বলছেন না। আমরা একে অপরের পার্টনার না?”

    “সময় হলেই সব জানাবো।”

    “এখনো সময় আসেনি? পাপা তো ইন্টারনেটে তার জবাব জানিয়ে দিয়েছে, ঠিক না? তাদের টাকা জোগাড় হয়ে গেছে। এমনকি যোগাযোগের জন্য একটা ফোন নম্বরও দিয়েছে। এখন টাকা বিনিময়ের কাজটাই কেবল বাকি।”

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পলক ফেললাম। “তোমাকে আগেও বলেছি, যে খেলাটা আমরা খেলছি সেরকম খেলার সুযোগ জীবনে কেবল একবারই আসে। এত দ্রুত সেটাকে শেষ করা যাবে না। আর ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতেও পারবো না। আমি যা করছি, সবই নিয়ম মেনে করছি।”

    “কিন্তু আপনি তো ওদের বলে দিয়েছেন যে টাকাটা একটা গলফ ব্যাগে ভরে…”

    “পরবর্তী কাজের জন্য সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। তুমি ভিডিয়ো গেম তো খেলেছো, তাই না?”

    “না, কখনোই খেলিনি।”

    “সত্যি? আচ্ছা তাহলে চুপচাপ থেকে আমাকে লক্ষ করো।”

    জুরি নিতান্ত অনিচ্ছায় আমার কথাতে সায় দিল।

    .

    জুরির বানানো গতকালকের ক্রিম স্ট্যু-টা দিয়ে সকালের খাবারের পালা সেরে নিলাম। বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ক্লজেট থেকে একটা স্পোর্টস ব্যাগ বের করে সেটাতে একটা ভিডিয়ো ক্যামেরা, টেপ আর একটা ট্রাইপড, দূরবীন ইত্যাদি জিনিস ঢুকালাম। আমার এক বার্ড ওয়াচার বন্ধু দূরবীনটা উপহার দিয়েছিল।

    “যেহেতু একজনের রুমের রিজার্ভেশন, তারমানে ধরে নিচ্ছি আপনি একলাই যাচ্ছেন?”

    “আজকে শনিবার, সেটা জানা আছে? আজকের মতো দিনে ডাবল রুম পাওয়াই মুশকিল। আর থাকলেও নিজের ইচ্ছামতো তলায় রুম বেছে নেওয়া যেত না।”

    “তাহলে আমি আপনার সাথে আসতে পারি?”

    “হুম। তবে সতর্ক থেকো। হোটেলের কেউ যেন তোমার প্রতি মনোযোগ না দেয়। আর হ্যাঁ, যে ছদ্মবেশ নেবে, সেটা যেন কারো কাছে সন্দেহজনক না মনে হয়।”

    জুরি কোমরে হাত রেখে আমার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকালো।

    “কী হলো?” জিজ্ঞেস করলাম।

    “কী হলো? আমি কীভাবে ছদ্মবেশ নেব? আমি তো সাথে করে কোনো কাপড়চোপড় বা মেকআপ কিছুই আনিনি। যা আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ একটা অল্পবয়স্ক ভিখারির ছদ্মবেশ নিতে পারব।”

    হা হা করে হেসে ফেললাম। মেয়েটা শব্দ নিয়ে ভালো খেলতে পারে। “তাহলে এখানে বসেই তুমি অপেক্ষা করবে। তুমি যে জামাকাপড় পরে নিখোঁজ হয়েছিলে, তা পুলিশের জানা আছে। মনে হয় হোটেলে হোটেলে সেই জামাকাপড়ের বর্ণনা দিয়ে নোটিশ পাঠিয়ে হোটেলের কর্মচারীদের সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে।”

    “যেভাবেই হোক আমি আপনার সাথে ওখানে যাচ্ছি। ওখানে কী কাজ করবেন তা আমি জানি না। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে আপনাকে সাহায্য তো করতে পারবো।” তার চোখের দিকে তাকালাম। চোখজোড়াও একই কথা বলছে, সে আমার সাথে যাবেই। মাথার ভেতর ওখানে কী কী করতে যাচ্ছি, তা কল্পনা করে নিলাম। না, সে সাথে থাকলে মন্দ হবে না। কাজেও লেগে যেতে পারে। তাই হাত থেকে স্পোর্টস ব্যাগটা ফেলে দিলাম।

    “আচ্ছা ঠিক আছে। চলো।”

    “তারমানে আপনার সাথে হোটেলে যেতে পারব?”

    “সবার আগে শপিংয়ে যেতে হবে।”

    .

    দুনিয়ার কোনো কিডন্যাপারই বোধহয় এরকম করে না, মনে মনে ভাবলাম। এখন গিনজার একটা ডিপার্টমেন্ট স্টোরে শপিং করতে এসেছি, সঙ্গী হিসেবে রয়েছে আমারই কিডন্যাপ করা একজন মেয়ে। অবশ্য একদিক থেকে ভাবলে পুলিশ এরকম দৃশ্যকল্পের কথা কল্পনাও করতে পারবে না। তা সত্ত্বেও নিজেকে শান্ত রাখতে বেগ পেতে হচ্ছিল।

    সে আমার মনের অবস্থার প্রতি কোনো প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে জামাকাপড় দেখতে লাগল। আশেপাশের সুন্দরী যুবতি মেয়েদের মধ্যে তাকে খুব আলাদা লাগছিল না। বরং মনে হচ্ছিল সে আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিশে গেছে। তাকে অবশ্য আমরা এখানে কেন এসেছি তা মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম।

    ভাগ্যিস সে বোকা নয়। স্টাফরা তাকে মনে রাখার মতো কোনো প্রকার কাজ করেনি। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল জামাকাপড় দেখতে দেখতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভেসে বেড়াচ্ছে। বরং নিজের কাছে মনে হচ্ছিল, আমিই বোধহয় সেখানকার মানুষদের মনে একটা ছাপ ফেলছি। গোটা সময় জুড়ে আমি দোকানের কাচের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকে তিক্ত মুখে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাকে যদি একজন যুবতি মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের পার্ট দেওয়া হতো, তাহলে খুব সহজেই উৎরে যেতাম।

    অবশেষে জুরির শপিং শেষ হলো। হাতে একটা পেপারব্যাগ নিয়ে সে বের হলো।

    “যাক, অবশেষে কিছু একটা তো কিনতে পেরেছ। আমি তো ভেবেছিলাম তোমার আরো সময় লাগবে।” ব্যঙ্গাত্মকভাবে বললাম।

    “জীবনে এই প্রথম আমি এত দ্রুত শপিং করেছি। আর বেশিক্ষণ থাকলে হয়তো স্টাফরা আমাকে মনে রাখতো। তাই ঝটপট হাতের কাছে যা পেয়েছি, তাই বেছে নিয়েছি।”

    “অসাধারণ। এ কাজের জন্য তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ।”

    “এবার মেকআপ কেনার পালা। চলো একতলায় যাই।” আবারও তুমি করে সম্বোধন করতে লাগল। ওর গলার স্বর শুনে তাকে খুব খুশি খুশি লাগছে।

    লাউঞ্জে বসে কফি খেতে খেতে জুরির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। জুরি তখন মেকআপ বাছাবাছি করতে ব্যস্ত। তাকে একলা ছাড়া ঠিক হলো না। অবশ্য আমি সাথে থাকলে কিই বা সাহায্য করতে পারতাম! আমাকে তার কথায় বিশ্বাস রাখতে হচ্ছে যে, শিবুইয়া থেকে এই গিনজায় শপিং করাটাই বেশি নিরাপদ। এখানে চেনা কারো সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য।

    আধাঘণ্টা পর দোকান থেকে বের হয়ে এলো। তার মুখ দেখে আমার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।

    “তুমি মেকআপও করে এসেছ!”

    “হ্যাঁ, কিনতে কিনতে করে ফেললাম।” সে আমার অপর প্রান্তে বসে পড়লো। ওয়েট্রেস এসে কী লাগবে জিজ্ঞেস করায় জুরি একটা দুধ-চায়ের অর্ডার দিলো।

    “স্টাফের কেউ তোমাকে মেকআপ করতে সাহায্য করেনি তো?”

    “কেন করবে? আমি একটা আয়না ধার করে নিজেই নিজের মেকআপ করে নিয়েছি। সমস্যা নেই। ওরকম জায়গায় কেউই কারো চেহারা মনে রাখে না। সবাই তাদের সামনে রাখা আয়নাতে নিজের প্রতিফলন দেখতে ব্যস্ত থাকে।”

    “একটু ছাড় দাও আমাকে। আমি এখনো ঐ ডিপার্টমেন্ট স্টোর আর ফ্যামিলি রেঁস্তোরায় কেউ তোমাকে দেখেছে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত।”

    “বলছি তো সমস্যা নেই।” সে তার হ্যান্ডব্যাগ থেকে সিগারেট বের করলো। কিন্তু সিটে ‘নন-স্মোকিং জোন’ লেখা দেখে বিরক্ত মুখে সেটা আবার ব্যাগে পুরে রাখলো।

    দুধ-চা এসে পড়লো। সে কাপটা মুখের কাছে নিল। সে অবস্থাতেই আমি তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। তার মেকআপ খুব বেশি ভারি ছিল না, বরং ত্বকের সাথেই মানিয়ে গিয়েছিল। সুন্দর চোখজোড়া আর নাকটার সে ভালোই যত্ন নিয়েছে। ফলে তাকে আরো অপরূপা দেখাচ্ছে।

    “আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? এখনো চিন্তা হচ্ছে?”

    “না, সেরকম কিছু না।” চোখ সরিয়ে নিলাম। “আমাকে আরো একটা জিনিস কিনতে হবে।”

    “কী?”

    “খেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস।

    ট্যাক্সিতে ওঠার পর ড্রাইভারকে আকিহাবারা যেতে নির্দেশনা দিলাম। গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় জুরির হাতে পাঁচটা দশ হাজার ইয়েনের নোট ধরিয়ে দিলাম।

    “এটা আবার কী জন্য?”

    “শপিং করার টাকা। আমার হয়ে তুমি কিনে আনবে।”

    “কী কিনতে হবে সেটাই তো আমাকে বলোনি।”

    “সময় হলেই বলবো। যা বলছি ঠিকঠাক মতো করবে।”

    জুরির মুখ আবার গোমড়া হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোনোমতেই ড্রাইভারের সামনে কথা বলতে রাজি ছিলাম না।

    শোয়া রোড ধরে কিছুদূর সামনে যাওয়ার পর নেমে পড়লাম। শনিবারের দিন, তাই বেজায় ভিড় এখানে। আমাদের জন্য বরং ভালোই হলো। আমাদের দিকে কেউ আলাদাভাবে তাকাবে না। তারপরেও সতর্কতাস্বরূপ জুরি মাথায় একটা টুপি পরে নিজের চোখজোড়াকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করলো।

    বাইরের খোলা রাস্তার দু’পাশে বড়ো বড়ো ইলেকট্রনিক্সের দোকান সারি সারি করে সাজানো আছে। সেটাকে এড়িয়ে একটা গলিতে ঢুকে পড়লাম। গলিতেও বেশ লোকজন ছিল, কিন্তু আবহাওয়াটা বাইরের রাস্তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষ কাজের জন্য দোকানগুলো গড়ে উঠেছিল।

    সাথে সাথে দাড়িওয়ালা, কৃষ্ণকায় এক ইরানিয়ানের ওপর আমার চোখ পড়ে গেল।

    “ঐ মানুষটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, তার কাছে একটা বার্নার হবে কিনা।” ফিসফিস করে জুরির কানে বললাম।

    “বার্নার?”

    “হ্যাঁ, একটা বার্নার ফোন। একটা নকল নামে রেজিস্টার করা ফোন।”

    “আচ্ছা বুঝেছি।” সে মাথা নাড়লো। “ওগুলোর নাম আগেও শুনেছি।”

    “যে-কোনো কোম্পানির হলেই চলবে। আমার ধারণা পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে পেয়ে যাবে। নগদ টাকা হাতে ধরিয়ে দেবে। টাকা দেবার পর সে হয়তো তোমাকে বলবে তাকে অনুসরণ করার জন্য। তাই যা যা বলে সেগুলো করবে। আমি এখানেই অপেক্ষা করছি।”

    “তুমি আসবে না?”

    “যদি সে কোনোভাবে ধরে নেয় যে, আমরা পুলিশের হয়ে কাজ করছি তবে ঝামেলা হতে পারে। তাই সেই সন্দেহটা দূর করার জন্য তোমাকে একলা পাঠাচ্ছি। হ্যাঁ, এরকম ক্ষেত্রে ভয় পাওয়াটা স্বাভবিক। কিন্তু একটু চেষ্টা করে সহ্য করে নাও।”

    জুরিকে একটু উদ্বিগ্ন দেখালো। কিন্তু সে সায় জানিয়ে মাথা নাড়লো।

    “আচ্ছা, যাচ্ছি তাহলে।” সে ইরানিয়ানের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

    দূর থেকে দেখলাম, সে ইরানিয়ানের সাথে আলাপ করছে। এরকম যুবতি মেয়েকে তার সাথে আলাপ করতে দেখে তাকে একটুও অবাক মনে হলো না। অনেক মেয়েদের মধ্যেই নাকি এ জায়গার কথা জানা আছে। আমাকে এই জায়গার কথা একজন মহিলাই জানিয়েছিল। সেও এখান থেকে একটা বার্নার কিনেছিল।

    যা ভেবেছিলাম, তারা হাঁটতে শুরু করেছে। একটা কানাগলিতে ঢুকে পড়লো তারা। জুরি একবারও আমার দিকে তাকায়নি। চমৎকার।

    সাধারণত যার কাছে পণ্যটা থাকে, তারা গাড়িতে বসে থাকে। যাতে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই গাড়িতে করে সেখান থেকে দ্রুত চম্পট দিতে পারে।

    পনেরো মিনিট পর জুরি ফিরে এলো। অবশেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

    “মিশন কমপ্লিট,”সে সগৌরবে বলে উঠল। হাতের পেপারব্যাগটা উঁচু করে দেখালো। “সাথে একটা স্যুভেনিয়ারও পেয়েছি।”

    “কী স্যুভেনিয়ার?”

    “একটা টেলিফোন কার্ড। তারা বলেছে, এটা দিয়ে নাকি সীমাহীন ফোন করা যাবে। আপাতত পঞ্চাশ পয়েন্ট আছে এটার ভেতর, তবে শূন্য হলেই সেটা আবার রিসেট হয়ে যায়।”

    হেসে ফেললাম। “তুমি তো কখনোই পাবলিক ফোন ব্যবহার করবে না।”

    “আমার কিন্তু নিজস্ব ফোন বলে এখনো কিছু নেই।” জুরি কার্ডটা বাতাসে ঝাঁকালো।

    এতদিন ধরে বোধহয় ইরানিয়ান এরকম অবৈধ কার্ড নিয়েই ব্যাবসা করে এসেছে। মোবাইল ফোনের যুগ এসে পড়ায় বোধহয় ওরকম কার্ডের ব্যাবসা লাটে উঠেছে। তাই সে জায়গায় তারা এখন বার্নার ফোনের ব্যাবসা শুরু করেছে।

    “লোকগুলোর জাপানি ভাষা ছিল চমৎকার।” সে বিস্মিত মুখে বলল। “কীভাবে এত নিখুঁত শিখলো কে জানে!”

    “যখন নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হয়, তখন মানুষ সিরিয়াস হয়ে যায়। যে লোকটা এরকম অবৈধ কার্ড বানানোর সাথে জড়িত, তার ক্ষেত্রেও কথাটা সত্য। এনটিটি কর্পোরেশন (জাপানিজ পাবলিক টেলিফোন কোম্পানি) অতটা বিপদের মধ্যে নেই, তাই তাদেরকে প্রত্যেকবারই এভাবে ঠকে আসতে হবে।”

    “তার মানে তাদেরকে ধরার জন্য পুলিশকেও সিরিয়াস হতে হবে, আর তাদের ভাষা শিখতে হবে?”

    “ঠিক ধরেছ।”

    হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে থেমে গেলাম। জুরি আমার হাত ধরে হাঁটছিল। এরকম অকস্মাৎ না বলে থেমে যাওয়ায় সে আমার থেকে এগিয়ে গেল।

    “কী হলো আবার? এভাবে হঠাৎ করে থেমে যেও না।”

    “নতুন একটা আইডিয়া পেয়েছি।” মুচকি হেসে বললাম। “খেলা আবার শুরু হতে যাচ্ছে।”

    ট্যাক্সি করে বাসায় ফিরে এলাম। ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। ব্যাগে ল্যাপটপটা ঢোকানোর পর মনে হলো, আমি এখন প্রস্তুত।

    “আমি তোমাকে ফোন করব। বারবার ভাঙা রেকর্ডের মতো একই কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু আবার বলে রাখি— সামনের দরজা দিয়ে হোটেলে ঢুকবে না।”

    “হয়েছে। সব মনে আছে।”

    আমি বারবার একই নির্দেশনা দিচ্ছিলাম, কারণ ভেতরে ভেতরে খুব উদ্বিগ্নবোধ করছিলাম। কিন্তু কিছু না বলে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। হাতের ঘড়িতে তখন দুপুর তিনটা বাজে।

    একটা ট্যাক্সি নিয়ে হোটেল গার্ডেনস-এ কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম। সামনের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে সোজা চলে এলাম ফ্রন্ট ডেস্কে। আমার পরনে ছিল একটা কালচে ধূসর রঙের স্যুট আর তার নিচে শার্ট আর টাই। একজন ব্যবসায়ীর ভান ধরেছিলাম, যে কিনা ছুটি কাটানোর জন্য টোকিওতে এসেছেন। এমনকি কাহিনিটার সাথে মিলিয়ে আমি হোটেলে যে নম্বর দিয়েছিলাম, সেটাতে নাগোয়ার এরিয়া কোড ব্যবহার করেছিলাম।

    আমার নকল নাম আর ভুয়া ঠিকানা লজিং কার্ডে লেখার পর পঞ্চাশ হাজার ইয়েন ডিপোজিট করে চেক-ইন করার সব ফর্মালিটি সেরে নিলাম। ফ্রন্ট ডেস্কে বসে থাকা মানুষটা সারাক্ষণ কাউন্টারের দিকে তাকিয়ে ছিল। নিজের মুখটা তার কাছে বেশি প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকলাম।

    যে কি-কার্ড পেলাম, সেটা ছিল রুম নম্বর ১৫২৬-এর। একজন বেলবয় সাথে দিতে চাইলে মানা করে দিলাম। এরপর হেঁটে সোজা লিফটে উঠে পড়লাম।

    রুমে ঢোকার সাথে সাথে জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে জানালাটা খুলে দিলাম। বামদিকে কোণাকুণিভাবে হাকোজাকি মেট্রোপলিটন এক্সপ্রেসওয়ে জংশন দেখতে পেলাম। ব্যাগ থেকে দূরবীন বের করে সেখানে ফোকাস করলাম। গিনজা এলাকা থেকে একটা ঘন নীল রঙের গাড়ি বের হয়ে দ্রুতবেগে আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল।

    যাক, প্রথম ধাপের কাজ শেষ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। পূর্বেও এই হোটেলে থেকেছি, তাই জংশনটা যে দেখতে পাবো তা জানা ছিল, স্বাভাবিকভাবেই তখন এই ভিউয়ের কোনো মূল্য ছিল না আমার কাছে।

    ফোনটা বের করে বাসায় ফোন করলাম। তিনবার রিং হয়ে সেটা আন্সারিং মেশিনে চলে গেল। টোন আসার পর মুখ খুললাম।

    “রুম নম্বর ১৫২৬। আসার পর দরজায় নক করবে।” বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। জুরি মেসেজটা শোনার সাথে সাথে বের হয়ে যাবে। তাকে বলে দিয়েছি, টাক্সিতে উঠে হানজোমন সাবওয়ে লাইনের কাছে সুইওতেনগু-মায়েতে যেন নেমে যায়। সেখান থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড পথ ব্যবহার করে যেন সোজা হোটেলে চলে আসে। হোটেলের বি-টু (B2) লেভেলটা সাবওয়ে স্টেশনের সাথে সংযুক্ত। সে চাইলে লিফট ব্যবহার করে সোজা অতিথিদের জন্য সংরক্ষিত ফ্লোরে চলে যেতে পারে। সহজ ভাষায়, এভাবে সে সামনের ফটক আর ফ্রন্টডেস্ক এড়িয়ে খুব সহজেই হোটেলে ঢুকে পড়তে পারবে।

    জ্যাকেটটা খোলার পর গলার টাইটাও খুলে ফেললাম। এবার পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু। ভিডিয়ো ক্যামেরাটা ট্রাইপডে বসিয়ে সেটা জানালার দিকে তাক করে দিলাম। এলসিডি স্ক্রিনে তাকিয়ে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল আর জুম ঠিক করলাম। এখন এটা গিনজা এলাকা থেকে বের হওয়া সব গাড়িকে রেকর্ড করতে পারবে।

    এরপর ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বের করলাম। আগেই একটা কর্ড কিনে রেখেছিলাম, সেটা ডেস্কের জ্যাকের সাথে সংযুক্ত করে দিলাম। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ ফোনলাইনের পাশাপাশি একটা ইন্টারনেট ব্যবহার করার লাইনও জুড়ে দিয়েছে। আগেরবার এখানে থাকার সময় ব্যাপারটা আবিষ্কার করেছিলাম।

    ল্যাপটপ চালু করে ইন্টারনেটে ঢুকার চেষ্টা করলাম। খুব সহজেই সংযোগ স্থাপন হয়ে গেল। সিপিটি মালিকদের ওয়েবসাইটে ঢোকার পর বুলেটিন বোর্ডে নতুন একটা পোস্ট চোখে পড়লো।

    .

    আর অপেক্ষা করতে পারছি না (ইউজারনেম-জুলি)

    আমি অফার অনুযায়ী টাকাপয়সা জোগাড়ের পরও তাদের কাছ থেকে কিছু শুনিনি।

    তারা যে কী করছে বুঝতেও পারছি না। তাড়াতাড়ি আমার পণ্য আমাকে বুঝিয়ে দিন।

    গলফ ক্যাডি ব্যাগটা ঘরের দোরগোড়ায় বসে বসে কাঁদছে।

    .

    নাহ, তাদের এরকম অসাধারণ শব্দের খেলার তারিফ না করে পারলাম না। আমি বাদে আর অন্য কেউ পড়লে তার কাছে মনে হবে, একটা মেয়ে তার পছন্দের জিনিসটা হাতে না পেয়ে নেটে এসে ঘ্যানঘ্যান করছে।

    সে যাকগে। তারা যে অস্থির হয়ে পড়েছে, তা ভালোমতোনই বোঝা গেছে। কিডন্যাপাররা এরপর কী কী করবে, তা জানার জন্য তাদের আর তর সইছিল না।

    ফ্রিজ থেকে এক বোতল মিনারেল ওয়াটার বের করে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে খাওয়া শুরু করলাম। গোটা পরিকল্পনাটা আবার মাথার মধ্যে কল্পনা করে দেখলাম। কিছুই হিসাব করা বাদ দিইনি। পরিকল্পনার কোনো ত্রুটিও খুঁজে পাচ্ছি না।

    ঘড়ির দিকে তাকালাম। ফোন দেবার পর আধাঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। জুরির এত সময় লাগছে কেন?

    আরো আধাঘণ্টা পর অবশেষে দরজায় নকের শব্দ শুনতে পেলাম।

    “কে?” জানি, তারপরেও জিজ্ঞেস করলাম।

    “আমি।” গলার আওয়াজটা শুনে দরজাটা খুললাম।

    “এত দেরি হলো কেন তোমার? সামান্য জামা পাল্টাতেই যদি…” এটুকু বলেই থেমে গেলাম। জুরির কালো চুলের রং পালটে গিয়ে বাদামি রং ধারণ করেছে। কাছ থেকে সেটাকে আর বাদামি না, বরং অনেকটা সোনালি চুল বলেই মনে হচ্ছে। তার ওপর সে চুল কেটে ছোটো করে ফেলেছে।

    হিহিহি, সে খিলখিল করে হাসলো। দ্রুত একবার চুলের ওপর হাত বুলিয়ে নিল। “হোয়াট দ্য হেল!”

    “চুল ডাই করে নিয়েছি। খারাপ লাগছে না, তাই না?” সে রুমের ভেতর ঢুকে রুমটাকে ঘুরেফিরে পরখ করা শুরু করলো। জানালার কাছে গিয়ে ক্যামেরাটাকে সাজানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কী ভিডিয়ো করছো?”

    এই মুহূর্তে আমার এসব ফালতু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত নয়। “কী করে বসেছ তুমি?” রাগান্বিত গলায় বললাম।

    “কী?”

    “তোমার চুল। এরকম চোখ ধাঁধানো কিছু করতে তোমাকে মানা করেছিলাম না?”

    “এইটা? চোখ ধাঁধানো?”

    “আয়নার সামনে নিজেকে দেখেছ?”

    “তুমি আমাকে ছদ্মবেশ নিতে বলেছ, তাই আমি সেটাতেই আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি। নিজের চুল নিজেই কেটেছি, নিজেই ডাই করেছি। এমনকি নতুন জামাকাপড়গুলো নিজেই পরেছি। তাহলে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখো তো, আমাকে দেখে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ মনে হচ্ছে না?” তার পরিধান করা লাল রঙের টপটা ছিল স্লিভলেস। সেটার সাথে ম্যাচ করে কালো রঙের একটা স্কার্ট পরে এসেছে। সে যে একই সাথে অলংকার ও জুতোও পাল্টিয়ে এসেছে, সেটা দেখে খানিকটা অবাক হলাম। এসব কেনার সময় কখন পেল?

    “আমি তোমাকে এমন একটা ছদ্মবেশ নিতে বলেছি, যেখানে কেউ তোমার দিকে তাকালেও তোমার চেহারাটা মনে রাখবে না।”

    আমার কথাটা শুনতে পেরেছে কিনা বুঝতে পারলাম না। বিছানায় বসে শরীর দুলিয়ে ঝাঁপাতে শুরু করলো সে। তাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে।

    “আচ্ছা, আপনি কি সত্যিই একজন দক্ষ অ্যাড প্ল্যানার? সামান্য এই জিনিসটা নিয়ে এত গ্যাঞ্জাম করছেন দেখে সেটা কিন্তু মনে হচ্ছে না। আজকালকার দিনে কালো চুলের মেয়েদের সংখ্যাই বরং অনেক কম।”

    “আর যারা চুল ডাই করে, তারা কেন করে সেটা জানো? সেটা কি অন্যের চোখে ধুলো দেবার জন্য? না, বরং সবাই যাতে তাদের লক্ষ করে, সেজন্য।”

    “প্রথম প্রথম এটাই ছিল, কিন্তু আজকাল সে সংজ্ঞাটা পালটে গেছে। আজকাল কালো চুল না রাখাটাই ফ্যাশন।”

    মাথা ঝাঁকালাম। এখন এসব ফালতু জিনিস নিয়ে তর্ক করার সময় নেই। “যাই হোক, বাড়ি ফেরার সাথে সাথে তুমি আবার সেটা কালো করে ফেলবে। একটা জিনিস বোধহয় ভুলে গেছ যে, তুমি এখন কিডন্যাপারদের হাতে জিম্মি। অপহৃত থাকার সময় কোনো জিম্মি কি চুলের রং পাল্টিয়ে ফেলে? ব্যাপারটা চিন্তা করতেও উদ্ভট লাগছে।”

    “হুম…কিডন্যাপাররাও খুবই উদ্ভট ছিল, সেজন্য? তারা মজা পাবার জন্য জিম্মির চুল ডাই করে ফেলেছে?”

    “এসব ঠাট্টা করা বাদ দাও।” আকিহাবারা থেকে যে ফোনটা জোগাড় করেছিলাম, সেটা বের করে তার মুখের সামনে ধরলাম। “নাও, খেলা আবার শুরু হয়ে গেছে। তোমার পাপার নম্বরে ফোন দাও।”

    “আমি?” স্বাভাবিকভাবেই তার মুখ আবার শক্ত হয়ে গেল।

    “শুরুতে ভেবেছিলাম আমিই ফোন করব। কিন্তু তুমি এসে পড়েছ, তাই আমাকে আর করতে হচ্ছে না। তিনি আমার গলা যত কম শোনেন, ততই আমার জন্য মঙ্গল। তবে আমার মনে হয় না তিনি আমার গলার স্বর মনে রেখেছেন।”

    “ফোন করে কী বলব?”

    “সেটাও প্রস্তুত করে রেখেছি। এখানে আসো।” তাকে ল্যাপটপের সামনে বসালাম। কিবোর্ডে টিপে একটু ডকুমেন্ট স্ক্রিনের সামনে এনে দিলাম। তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এটা লিখে ফেলেছিলাম। ডকুমেন্টটাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করা হয়েছে।

    প্রথম অংশটা আঙুল দিয়ে দেখালাম। “এটা দিয়ে শুরু করো। এটা বলার পরেই ফোনটা কেটে দেবে।”

    জুরি মনোযোগ দিয়ে লেখাগুলো পড়তে লাগলো। শপিং করার সময়, চুল ডাই করার পর তাকে সাহসী মনে হচ্ছিল। কাছ থেকে তাকে বুঝতে পারলাম, সবই তার অভিনয়। তার মনের অস্থিরতা ঢাকার জন্যই সে এরকম সাহসী থাকার ভান করে যাচ্ছিল।

    “এই মোবাইল থেকে ফোন দিলে সমস্যা হবে না তো?”

    “যতটা সংক্ষেপে কথা বলতে পারো, ততই মঙ্গল। যদি বেশিক্ষণ কথা বলো, তবে তারা আমরা কোন এলাকায় আছি, তা বের করে ফেলতে পারবে।”

    জুরি লম্বা করে একটা শ্বাস টেনে নিল। মোবাইলটার বাটনের দিকে তাকিয়ে আমাকে আবার জিজ্ঞেস করলো,

    “এক্ষুনি করতে হবে?”

    “এখনোই করতে হবে। এই যে নম্বর।” তার সামনে কাতসুতোশি কাতসুরাগির নম্বর লেখা একটা কাগজ ধরলাম। “তাড়াতাড়ি করো, সূর্য অস্ত চলে যাচ্ছে।”

    “সূর্য অস্ত হয়ে গেলে সমস্যা হবে?”

    “আমার ভিডিয়ো ক্যামেরাটা ইনফ্রারেড না, দূরবীনটাতেও নাইট ভিশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।”

    আমার কথাটা সে বুঝতে না পারলেও মাথা নেড়ে সায় দিল। আরেকবার জোরে শ্বাস টেনে নিয়ে বামহাতে মোবাইলটা নিয়ে ডান হাতের তর্জনী বাটনের ওপর রাখলো। কাগজটা দেখে ধীরে ধীরে সতর্কভাবে প্রত্যেকটা বাটনে চাপ দিলো। ডায়াল শেষে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে শান্তভাবে চোখটা বন্ধ করে ফেলল।

    রিং হচ্ছে। দুবার রিং হবার পরই অপর পাশ ফোন তুলল।

    “হ্যালো, আমি বলছি। জুরি। কিছু বলো না, শুধু আমার কথা শুনে যাও।” সে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলে গেল। “দশমিনিট পর ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। গাড়ির ট্রাঙ্কে ক্যাডি ব্যাগ আর অন্য ব্যাগটা রেখে দেবে। পাপা, গাড়িতে যেন তুমি বাদে আর কেউ না থাকে। মেট্রোপলিটন এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পড়ে মুকোজিমা ইন্টারচেঞ্জ…মুকোজিমা.. মু-কো-জি-মা, হ্যাঁ, মুকোজিমা ইন্টারচেঞ্জ বরাবর যেতে থাকবে। যদি পারো, গাড়ির গতি লিমিটের মধ্যে রেখেই চালিয়ো। আবার তোমার সাথে যোগাযোগ করবো…মাফ করে দিও, আর কথা বলতে পারবো না।”

    সে ফোনটা কেটে দিয়ে আমার দিকে কান্নাকান্না চোখে তাকালো। তার গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছিল। তার আধখোলা ঠোঁটদুটোতে চুম্বন করলাম।

    “ভালো কাজ করেছ।”

    “পরের বারেও কি আমাকেই ফোন করতে হবে?”

    “সত্যি বলতে, তুমি আমার হয়ে তার সাথে যোগাযোগ রাখবে।”

    “যোগাযোগ?”

    “একটু পরেই টের পাবে।”

    ল্যাপটপ অন করে আবার ইন্টারনেটে ঢুকলাম। জাপানিজ পাবলিক হাইওয়ে কর্পোরেশন একটা ওয়েবসাইটের ব্যবস্থা করে রেখেছে, যেটাতে রাস্তায় প্রকৃত সময়ে কী ঘটছে তা দেখা যায়। সেটাতে ঢুকতেই ল্যাপটপের এলসিডি ডিসপ্লেতে মেট্রোপলিটন এক্সপ্রেসওয়ের ম্যাপ ভেসে উঠল। রাস্তাগুলো সাদা লাইন দিয়ে নির্দেশিত করা হয়েছিল। আর হলুদ কিংবা লাল রঙের মাধ্যমে সে রাস্তাগুলোয় ট্রাফিক জ্যাম, ভিড়ভাট্টা টের পাওয়া যাচ্ছে। আজকে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই রয়েছে। তবে এখানে-সেখানে লাল আর হলুদের ছোপের মাধ্যমে হালকা জ্যামের লক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে।

    কাতসুতোশি কাতসুরাগি যে পথ ধরে আসবে, সেটা পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলাম। সে রাস্তায় কোনো ট্রাফিক ছিল না। কেবল হাকোজাকি জংশনের সামনে একটু লাল ছোপ দেখা যাচ্ছে।

    ঘড়ি আর এক্সপ্রেসওয়ের ম্যাপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পানির বোতলটা খালি করে দিলাম। কেন জানি খুবই তৃষ্ণার্ত বোধ হচ্ছে। জুরি নিজেও এক বোতল কোলা খাওয়া শুরু করলো। কেউই কারো সাথে একটা কথাও বললাম না। একটু পর পর ট্রাফিকের তথ্য নিখুঁতভাবে পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটটা রিফ্রেশ করছিলাম। না, এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র গুরুতর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল ট্রাফিকে পরিবর্তন হতে পারে। ওরকম যাতে না হয়, মন থেকে প্রার্থনা করা শুরু করলাম।

    ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে তুড়ি মেরে জুরিকে বললাম, “জুরি, ফোন হাতে নাও।”

    টানটান অস্থিরতার মধ্যে সে ফোনটা হাতে নিল। “এখন তাকে কী বলব?”

    “এখন সে কোথায় আছে, সেটা জিজ্ঞেস করো। কেবল এটুকু করলেই চলবে।” জুরি মাথা নেড়ে ফোন করলো। “হ্যালো, আমি বলছি। কোথায় তুমি…ও, তাকেবাশিতে? তুমি এইমাত্র তাকেবাশি পার করে এসেছ?”

    আমি তাকে ওকে সাইন দেখাতেই সে দ্রুত ফোনটা কেটে দিল।

    “পাপা বলল, সে নাকি এখন তাকেবাশিতে।”

    “ঠিক আছে।”

    আবার ম্যাপে মনোযোগ দিলাম। তাকেবাশি জংশন থেকে এদোবাশি পর্যন্ত কোনো জ্যাম নেই, রাস্তা একদম ফাঁকা। সে বোধহয় ঘণ্টায় চল্লিশ মাইল গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। এদোবাশি থেকে হাকোজাকির রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। সেটা সমস্যা হতে পারে। সময়। সবকিছুই সময়ের ওপর নির্ভর করছে। আমি কেবল নিজের সহজাত প্রবৃত্তির ওপর বিশ্বাস রাখছিলাম।

    আবার তুড়ি বাজালাম। “ফোন করো। তার অবস্থানটা জানো।”

    জুরি রি-ডায়াল বাটনে চাপ দিলো। সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ হলো। “কোথায় তুমি?…এদোবাশির কাছাকাছি এসে পড়েছো?”

    আমি তড়াক করে দাঁড়িয়ে তাকে ওকে সাইন দেখাতেই সে আবার ফোন কেটে দিল।

    জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিয়ো ক্যামেরাটা ঠিকঠাক আছে কিনা, তা আবার পরীক্ষা করে নিলাম। জুরিকে হাতছানি দিয়ে ডাকলাম।

    “আবার একমিনিট পর ফোন করবে। তাকে হাকোজাকির রাস্তা থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দেবে। তারপর ফোনটা আমার হাতে দেবে।”

    “তোমার হাতে? তুমি কথা বলবে?”

    “হ্যাঁ। এরপর থেকে আমিই কথা বলব।”

    ঠিক একমিনিট পর জুরি ফোন করলো। তারপাশে বসে ব্যাগ থেকে একটা গ্যাসভর্তি কৌটা বের করলাম।

    “হ্যাঁ, আমি বলছি। হাকোজাকি থেকে বের হয়ে যাও। আর ফোনটা কেটে দিও না।” শেষ কথাটা যোগ করে সে তাড়াহুড়ো করে আমার হাতে মোবাইলটা তুলে দিল।

    আমি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে মোবাইলটা হাতে নিলাম। মোবাইলটা খুবই হালকা হবার কথা, কিন্তু হাতে নেবার পর সেটা প্রচণ্ড ভারি লাগছিল। আমার বুকের খাঁচায় হৃৎপিণ্ড লাফালাফি শুরু করলো।

    জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে মোবাইলটা কানে চেপে অপর হাত দিয়ে দূরবীনটা চোখে দিলাম। ওদিকে ভিডিয়ো ক্যামেরা রেকর্ডিং করা শুরু করেছে।

    ঢাল বেয়ে একটা রূপালি-ধূসর বর্ণের মার্সিডিজ গাড়িকে নামতে দেখলাম। ড্রাইভার যে কে, তা দেখতে পাচ্ছিলাম না। জুরির দিকে তাকালাম। সে ভিডিয়ো ক্যামেরার মনিটরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আলতো করে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল, হ্যাঁ, ওটা কাতসুতোশি কাতসুরাগিরই গাড়ি।

    গ্যাসভর্তি কৌটা মুখের কাছে ধরে খানিকটা গ্যাস মুখ দিয়ে টেনে নিলাম। তারপর একটানা বলে গেলাম, “এক্সপ্রেসওয়েতেই থাকুন, তারপর সামনের ঐ চক্রাকার লেনে ঢুকে যান।”

    জুরি পাশে বসে আমার গলা থেকে ওরকম আওয়াজ বের হতে দেখে চমকে গেল। তাকে দোষ দিতে পারছি না। আমার গলা থেকে হঠাৎ করে ডোনাল্ড ডাকের মতো স্বর বের হচ্ছে। একটা হিলিয়াম গ্যাসভর্তি খেলনার কারণে আমার গলার স্বর এতটা পালটে যাবে, তা কল্পনাতেও আসেনি। কোনো একটা কারণে এই খেলনাটা অনেক আগে কিনেছিলাম।

    কাতসুতোশি কাতসুরাগিও চমকে গেছে বুঝতে পারলাম। “আপনি কী বললেন? আমার না মুকোজিমাতে যাওয়ার কথা?”

    জবাব দেবার আগে আমি আবার খানিকটা গ্যাস টেনে নিলাম। “চক্রাকার লেনে ঢুকে পড়ুন।”

    “ডানে দিয়ে গিনজাতে একটা রাস্তা চলে গেছে। ওটাতে ঢুকব না?”

    “চক্রাকার লেনে ঢুকে পড়ুন।”

    ঠিক ঐ মুহূর্তেই ফোনটা কেটে দিয়ে সেটা জুরির কাছে ফিরিয়ে দিলাম। দূরবীন দিয়ে হাকোজাকি জংশন মনিটর করতে লাগলাম। একটা মার্সিডিজ গাড়িকে ধুলো উড়িয়ে যেতে দেখলাম। তার পেছন পেছন কয়েকটা গাড়ি, একটা ট্রাক, এমনকি একটা ট্যাক্সিও চলে গেল।

    মার্সিডিজটা আবার দেখতে পেলাম। হাকোজাকি জংশনটাতে একটা ছোট্ট রিংয়ের মতো রাস্তা ছিল। যদি অন্য কোনো এলাকায় যাবার রাস্তায় মোড় না নেন, তবে ওখানে ইচ্ছামতো পেট্রোল শেষ না হওয়া পর্যন্ত চক্রাকারে ঘুরতে পারবেন।

    মার্সিডিজ গাড়িটাকে তৃতীয়বারের মতো দেখার পর জুরিকে পরবর্তী নির্দেশনা দিলাম। সে অবাক হয়ে আবার রি-ডায়াল বাটনে চাপ দিলো।

    “হ্যালো…হ্যাঁ, আমি বলছি। লেনদেন আজকের মতো বন্ধ। বাসায় ফিরে যাও। আর পরবর্তী যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করো…দুঃখিত। কী যে হচ্ছে তা আমিও জানি না।”

    ফোনটা কেটে দেবার পর সে আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো। আমি তখন বিছানায় ফুরফুরে মেজাজে বসে ছিলাম।

    “এটা কী হলো? হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ করে দিলে কেন?”

    “হঠাৎ করে? শুরু থেকে এটাই আমার পরিকল্পনা ছিল।’

    “শুরু থেকেই? শুরু থেকেই বন্ধ করবে বলে ঠিক করে রেখেছিলে?” জুরি আমার কাছে এসে সোজা আমার চোখের দিকে তাকালো। “তাহলে এত ঝামেলা করতে গেলে কেন?”

    “পুলিশের গতিবিধিটা জানতে চেয়েছিলাম।”

    আমি উঠে দাঁড়ালাম। ভিডিয়ো ক্যামেরাটা এখনো চলছে। সেটাকে বন্ধ করে দিলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভবিষ্য পুরাণ – অনুবাদ : স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি)
    Next Article ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.