Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প310 Mins Read0

    অ্যা কিডন্যাপিং – ২

    দুই

    ওয়েস্টার্ন রীতিতে সাজানো বিশালাকৃতির বাড়িটিকে ‘প্রাসাদ’ বলা যায়। নেমপ্লেটটা না থাকলে হয়তো সেটাকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেবে ভুল করতাম। খুব সহজেই একটা মাঝারি সাইজের ট্রাক কারুকাজ করা গেটের ভেতরে ঢুকে যেতে পারবে। গেটের পাশে লাগোয়া গ্যারেজটাতে যে খুব সহজেই চারটা গাড়ি এঁটে যাবে, তা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে। সেই গাড়িগুলো মার্সিডিজ বেঞ্জ কিংবা রোলস রয়েস হলেও সমস্যা হবে না। দেওয়ালের বাইরে সারি সারি গাছ এত ঘনভাবে লাগানো হয়েছে যে, বাইরে থেকে সহজে মূল দালানটার ছাদও দেখা সম্ভব হবে না। বাড়িটাও গেট থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। মূল গেট থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতেই একজন মানুষ ক্লান্ত হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

    অসতর্ক অবস্থায় সেখানে কোনোরকম ঘোরাফেরা করলাম না। গেটপোস্টের ওপর একটা ক্যামেরা আগেই চোখে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় চারপাশে আরো ক্যামেরা রয়েছে। সেজন্যই গেট থেকে বেশ খানিকটা দূরে ট্যাক্সি থেকে নেমে গেলাম। এমুহূর্তে গেট থেকে ৬০ ফুট কিংবা তার বেশি দূরে অবস্থান করছি। রাস্তায় কেউ একটা ভ্যান পার্ক করে রেখেছে, সেটারই ছায়ায় লুকিয়ে আছি আমি।

    আমাকে কাতসুতোশি কাতসুরাগির সাথে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হোক, মনে মনে ভাবলাম। তার সাথে সরাসরি দেখা করে তাকে জেরা করব। শুনসুকে সাকুমার সাথে আপনার সমস্যাটা কী? আমার চিন্তাভাবনার কোন দিকটা আপনার কাছে অগভীর, ভাসা-ভাসা লেগেছে? কোজুকার ব্যাখ্যা শুনেও ব্যাপারটা আমি ধরতে পারিনি। জিনিসটা আমার মাথাতেই ধরছে না।

    কিন্তু বিশাল প্রাসাদসম বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দ্বিধাবোধ হতে লাগলো। যদি এই সময়ে তার সাথে দেখা করতে যাই, তিনি আমার সাথে দেখা করতে চাইবেন না। বরং গেটের বাইরে থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হবে। যদি নিজের পরিচয়ও দিতে চাই, আমাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তারা এই একগুঁয়ে, জেদি বিজ্ঞাপনী সংস্থার সামান্য কর্মচারীর কাণ্ডকীর্তি দেখে হাসাহাসি করবে। আর যদি কোনোভাবে তার সাথে দেখা করার সুযোগও মিলে, সে টের পাবে আমি এখন মাতাল হয়ে আছি। মুখ থেকে ভুরভুর করে মদের গন্ধ বের হচ্ছে আমার। যদি কাতসুরাগি কোনোভাবে টের পায় যে আমি মাতাল হয়ে ঝোঁকের বশে তার সাথে দেখা করতে এসেছি, সে কিছু না বলেই উঠে চলে যাবে।

    কিন্তু কথাটা তো ভুল নয়। আমি তো সত্যিই মাতাল হয়ে ঘোরের মধ্যে এখানে এসে হাজির হয়েছি। যখন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে এখানে পৌঁছে দিতে বলেছিলাম, তখন আমার মাথা কেটলির উত্তপ্ত পানির মতো টগবগ করছিল।

    আসলেই কিছু করার নেই আমার। দিনশেষে শত্রুর মুখোমুখি হলে আমি ভয় পেলে পালিয়ে যাই। হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করেছিল। আমাকে যে তারা অপমান করতে পারে—শুধুমাত্র এই চিন্তাটার কারণেই ওখান থেকে মনেপ্রাণে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। মনে মনে সেখানে না ঢোকার উপকারিতার তালিকা বানিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম যে, পালিয়ে গেলে সমস্যা নেই।

    চিন্তাটা মাথায় আসতেই রাগ আরো বেড়ে গেল। রাগটা এবার আমার নিজের ওপর। সাকুমা, নিজেকে এত ছোটো করছো কেন?

    ঠিক করলাম, আমাকে আবার প্রথম থেকে সবকিছু শুরু করতে হবে। মনটা এখনো খুব দুর্বল হয়ে আছে। কিন্তু আমি পালিয়ে যাবো না। কাতসুরাগির মুখোমুখি হবোই। তবে সেটা খুবই সতকর্তার সাথে, ভেবেচিন্তে করতে হবে। এটাই আমার বৈশিষ্ট্য। ঠিক তখনই ব্যাপারটা ঘটলো। চোখের কোণা দিয়ে কী যেন নড়তে দেখলাম। দেওয়ালের দিকে তাকালাম।

    কে জানি দেওয়ালটা বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। না, ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছে না। বরং ভেতর থেকে বের হচ্ছে। একটা মানুষের অবয়ব চোখে পড়লো। দেওয়ালে লাগানো লোহার শিকগুলোর ফাঁকে পা রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সে। তারপর লাফ দিয়ে ফুটপাতে বসে পড়লো। ধপ করে বসে পড়ায় তেমন একটা ব্যথা পায়নি বোঝা গেল।

    প্রথমেই মনে হলো, চোর হবে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চিন্তাটা দূর করে দিতে বাধ্য হলাম। কারণ, অবয়বটা ছিল একজন যুবতি মেয়ের। স্কার্ট পরা চোরের কথা কোনোদিন শুনিনি।

    মেয়েটাকে টিনএজার বলেই মনে হচ্ছে। বয়সটা বিশের ঘরে থাকলেও খুব একটা অবাক হবো না। সে বেশ সুন্দরী, দেহের গঠনও মন্দ নয়। উঠে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগল, কেউ তাকে দেখে ফেলেছে কিনা। সেজন্য চট করে আবার ভ্যানের ছায়ায় লুকিয়ে গেলাম।

    আশপাশ দেখার পর দ্রুত হাঁটা শুরু করলো মেয়েটি। কিছুক্ষণ দ্বিধান্বিত থেকে আমিও তাকে অনুসরণ করা শুরু করলাম। কাতসুরাগির এস্টেট পার করার সময় ক্যামেরার চোখে না পড়ার জন্য মাথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে হাঁটতে থাকলাম।

    পুরোই ঝোঁকের মাথায় তাকে অনুসরণ করছি। আমি নিশ্চিত ছিলাম, মেয়েটা কাতসুরাগির বাসভবনে চুরি করতে ঢোকেনি। বরং কোনো কারণে সেখান থেকে লুকিয়ে বের হয়েছে। কারণটা কী হতে পারে? সেটাই জানতে আগ্রহী ছিলাম।

    তাকে যে অনুসরণ করা হতে পারে, তা নিয়ে মেয়েটাকে বিন্দুমাত্র ভাবতে দেখলাম না। অবশ্য তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই আমি তাকে অনুসরণ করছি। বড়ো রাস্তায় পৌঁছাতেই সে হাত উঁচু করে ট্যাক্সি ডাকলো। ঠিক তখনই ব্যাপারটা আমার মাথায় খেলে গেল। ও যদি ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে, তবে সব খতম।

    প্রায় ছুটে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ালাম। সে যে ট্যাক্সিটাতে উঠেছিল, সেটা চলতে শুরু করেছে। ট্যাক্সিটার লাইসেন্স প্লেটটা মুখস্ত করে পরবর্তী ট্যাক্সিটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সৌভাগ্যবশত, একটা খালি ট্যাক্সি পেয়েও গেলাম।

    “যতটা সম্ভব জোরে সোজা চলতে থাকো।” ট্যাক্সিতে উঠেই ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলাম।

    আমার নির্দেশ দেওয়ার এমন ভাবভঙ্গি দেখে ড্রাইভারকে খুব একটা উৎসাহী মনে হলো না। তার মুখের সামনে একটা দশ হাজার ইয়েনের নোট ধরলাম।

    “আমাদের সামনে ঐ যে ট্যাক্সিটা দেখতে পাচ্ছো, আমি চাই তুমি ওটাকে অনুসরণ করো।”

    “আমি কোনোরকম ঝামেলা চাই না স্যার।”

    “ঝামেলা হবে না। ঐ ট্যাক্সিতে একটা মেয়ে বসে আছে। ওর বাবা-মা আমাকে বলেছেন তাকে অনুসরণ করতে।”

    “আচ্ছা।”

    ড্রাইভার এক্সিলেটরে জোরে চাপ দিল। বোঝা গেল, আমাদের মূলামূলির পর্ব শেষ হয়েছে। সামনের মানি ট্রেতে নোটটা রেখে দিলাম।

    মনে মনে ভাবছিলাম, যদি ওদেরকে কানপাচি স্ট্রিটের আগে ধরা না যায়, তবে সমস্যা হয়ে যাবে। সৌভাগ্য কিনা জানি না, মেয়েটার ট্যাক্সিটা সামনের একটা ট্রাফিক লাইটের কারণে থেমে গেল। নম্বরটা আবার মিলিয়ে নিলাম। ড্রাইভারকে বললাম, “হ্যাঁ, ঐ গাড়িটাই।”

    “ওকে অনুসরণ কেন করছেন? তাকে কি হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করছেন?” ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো।

    “না। আমার কাজ ওর গন্তব্য খুঁজে বের করা।”

    “আচ্ছা। আর সেই গন্তব্যটা আপনি ওর বাবা-মাকে জানাবেন, এই তো?”

    “অনেকটা ওরকমই।”

    “বুঝতে পেরেছি। মেয়েটাকে বোধহয় তার বাবা-মা খুবই ভালোবাসে।”

    সে কী বোঝাতে চাইছে, ঠিক ধরতে পারলাম না। তবে ড্রাইভার যা ইচ্ছা ভাবুক। তা নিয়ে মাথাব্যথার সময় নেই।

    ট্রাফিক ছেড়ে দিতেই ট্যাক্সিটা দক্ষিণের রাস্তা ধরে কানপাচি স্ট্রিটে প্রবেশ করলো। আমাদেরটাও একই কাজ করলো। মেয়েটার ট্যাক্সিটা খুব একটা জোরে চলছিল না। তাই তাকে অনুসরণ করাটা খুব একটা কঠিন ছিল না।

    “আমি ভেবেছিলাম যুবতি মেয়ে, শিবুউইয়া তার গন্তব্য হবে। কিন্তু কেসটা দেখছি ভিন্ন।” ড্রাইভার বলে উঠল। আমরা শিবুউইয়া এর পুরো উলটো দিকে যাচ্ছিলাম।

    ঠিক ঐ মুহূর্তে সামনের ট্যাক্সিটা বামে মোড় নিয়ে নাকাহারা স্ট্রিটে ঢুকে পড়লো।

    “এভাবে চলতে থাকলে আমরা গোতান্দাতে পৌঁছে যাবো, তাই না?” তাকে জিজ্ঞেস করলাম।

    “ঠিক ধরেছেন। আজকাল শুনেছি গোতান্দাতেও সময় কাটানোর মতো অনেক জায়গা গড়ে উঠেছে।”

    সে এত কষ্ট করে দেওয়াল টপকে ঐ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এসেছিল শুধুমাত্র বারে ঘোরার জন্য? যদি এই সময়ে তার বাবা-মাকে বলত, সে ঘুরতে হচ্ছে— কোনো মা-বাবাই বের হতে অনুমতি দিতেন না। কিন্তু সত্যি বলতে কী, সে লাফ দিয়ে নামার পর যখন আশেপাশে তাকাচ্ছিল, তখন তার মুখটা দেখে মনে হয়নি মেয়েটি আনন্দভ্রমণে বের হচ্ছে। বরং সেখানে একটা গম্ভীর ভাব ছিল, যেন কোনো জরুরি কাজে বেরিয়েছে। ঠিক ঐ কারণেই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছিলাম।

    দৃষ্টি সীমানার মধ্যে গোতান্দা স্টেশন চলে এলো। সামনের ট্যাক্সির গতি দেখে মনে হলো তারা ওখানেও থামবে না। স্টেশন পেরিয়ে এবার ট্যাক্সিটা ডানে মোড় নিল।

    “বাহ, এখন তারা শিনাগাওয়া যাচ্ছে।” ড্রাইভার অস্ফুট স্বরে বলে উঠল।

    “তাই তো মনে হচ্ছে।”

    মেয়েটার ট্যাক্সি এখন এক নম্বর রুটে প্রবেশ করেছে। এক নম্বর রুট টোকিও আর ইয়োকোহামার মধ্য দিয়ে চলে গেছে। আমরা তার পিছু ছাড়লাম না। এক মিনিট পরেই রাস্তার ডানদিকে জাপান রেলওয়ে শিনাগাওয়া স্টেশন চোখে পড়লো। বামদিকে সব দামি দামি হোটেল দেখা যাচ্ছে।

    “আহ, এবার তারা বামে মোড় নিচ্ছে।” ড্রাইভার বলল। এবার ট্যাক্সিটার পেছনে ব্লিঙ্কার মিটমিট করে জ্বলা শুরু করলো। তারমানে গাড়িটা এখানেই কোথাও থেমে যাবে।

    “অনুসরণ করা চালিয়ে যাও।”

    “কিন্তু তাহলে আমাদের হোটেলটাতে ঢুকতে হবে।”

    “সমস্যা নেই।”

    একটা ঢালের পাশেই হোটেলটার গেট তৈরি করা হয়েছে। ওদের ট্যাক্সিটা ঠিক সেটার সামনেই থেমে গেল। আমিও তার থেকে একটু দূরে ট্যাক্সিটা থামাতে বললাম। “আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা কোনো ছেলের সাথে দেখা করার জন্য এতদূর এসেছে।” আমার হাতে রিসিপ্টটা দিতে দিতে ড্রাইভার বলে উঠল।

    “হতেও তো পারে, “বলে তাকে একটা রহস্যময় উত্তর দিলাম।

    মেয়েটা তখন রিভলভিং দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করার পর আমিও ভেতরে ঢুকলাম।

    মনে হচ্ছে ড্রাইভারের কথাই সত্যি হতে যাচ্ছে। যদি সে সত্যিই কোনো ছেলের সাথে গোপনে দেখা করতে চায়, তবে তাকে ওভাবেই ঘর থেকে পালাতে হবে। কিন্তু সেটা সত্যি হলে আমি পাগলের মতো কেন এত টাকা খরচ করে তাকে অনুসরণ করলাম? না, নিজেকে দোষ দেওয়া যাবে না। কাতসুরাগিদের একটা গোপন কথা যদি জানা যায়, তবে সেটা কোনোভাবে আমার কাজে লেগেও যেতে পারে। আবার পূর্বের কৌতূহলটা ফিরে এলো।

    পকেট থেকে দশ হাজার ইয়েনের একটা নোট বের করে মেয়েটার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

    “মাফ করবেন, কিন্তু আজকে রাতে একটা রুমও ফাঁকা নেই।” হোটেলের মালিক তখন মেয়েটাকে বলছে। বুঝতে পারলাম, মেয়েটা শেষ মুহূর্তে এসে রুম নিতে চাচ্ছিল। “যে-কোনো রুম হলেই চলবে আমার। কোনো সমস্যা নেই।” মেয়েটা বলল। মেয়েটার গলার স্বরে একটা অনীহা প্রকাশ পাচ্ছিল। এরকম গলার মেয়েরা ব্লুজ গান গাইলে বেশ ভালো লাগে।

    “মাফ চাচ্ছি আবারও, কিন্তু আসলেই আমাদের একটাও রুম ফাঁকা নেই।” মধ্যবয়স্ক হোটেলের মালিক ভদ্রতার সাথে মাথা নুইয়ে উত্তর দিল। তারপর আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”

    “আমার দশ হাজার ইয়েন ভাঙানো দরকার। একটু সাহায্য করতে পারবেন? পাঁচটা দুহাজার ইয়েনের নোটের ব্যবস্থা করলেই কৃতজ্ঞ হবো।”

    “দশ হাজার ইয়েন? একটু অপেক্ষা করুন।

    হোটেলের মালিক কাউন্টারের পেছনের দিকে চলে গেল।

    আমাকে না দেখার ভান করে মেয়েটা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ধরলো। ওকে হারাতে দেওয়া চলবে না। তাই আমিও কাউন্টার থেকে চলে এলাম। ঐ মুহূর্তে পেছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম, “স্যার, এই যে নেন।”

    “ধন্যবাদ। ওটা আপনিই রেখে দিন।”

    হোটেলের মালিক বোকা হয়ে গেল। হোটেলের বাইরে চলে এলাম।

    মেয়েটা হোটেলের বাগানের মাঝের পথ ধরে বের হয়ে যাচ্ছিল। মোটামুটি একটা দূরত্ব বজায় রেখে তার পিছু নিলাম আবার। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে টের পায়নি।

    পথটা একবারে রাস্তায় গিয়ে শেষ হয়েছে। রাস্তার অপর পাশে আরেকটা হোটেল দেখা যাচ্ছে। বোধহয় এখন ওটাই তার গন্তব্য।

    যা ভেবেছিলাম, মেয়েটা সামনের হোটেলটায় হনহন করে ঢুকে পড়লো। এবারের হোটেলটার ফ্রন্ট ডেস্কটা একতলাতে ছিল। এত রাত হয়েছে, তারপরেও ফ্রন্ট ডেস্কে মানুষজন দাঁড়িয়ে আছে। নামীদামী ব্যবসায়ীরা প্রায়ই হুটহাট করে হোটেলে আসে বলে এই ব্যবস্থা। কাছাকাছি একটা জায়গা বের করে সেখানে বসে মেয়েটির কাজকর্ম লক্ষ করতে লাগলাম।

    মেয়েটা এবারও হোটেলমালিকের সাথে কথা বলতে বলতে হুট করে ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে হাঁটা শুরু করলো। তার মুখভঙ্গি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এখানেও ব্যর্থ হয়েছে।

    এবার একটা পাবলিক টেলিফোনের ঘরে ঢুকলো। বুঝতে পেরেছি তাহলে, ভাবলাম। ওর আরো কাছে এগিয়ে গেলাম।

    ভেতরে মেয়েটি পাগলের মতো ফোনবুকের পাতা উল্টিয়েই যাচ্ছে। কোন সেকশন খুঁজছে, তা না দেখেই বুঝে গেলাম।

    “এই সময়ে এই চেহারা নিয়ে তুমি কোনো হোটেলেই ঢুকতে পারবে না।” মেয়েটি গলার আওয়াজ শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠলো। আমার দিকে আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তাকালো।

    “একাকী একজন যুবতি মেয়ে রিজার্ভেশন ছাড়াই একটা রুম ভাড়া করতে চাইছে— ব্যাপারটা সবার কাছেই সন্দেহজনক লাগে। হোটলের দিক থেকে ভাবলে এর চেয়ে তারা কোনো গৃহহীন ফকিরকেও জায়গা দিতে রাজি আছে। কারণ, এভাবে কোনো মেয়েকে হোটেলে জায়গা দিলে তারা নানারকম বিপদে পড়তে পারে।”

    সে বোধহয় ভাবছে আমি পাগলাটে উদ্ভট চরিত্রের মানুষ, যে কিনা গোপন কোনো অভিসন্ধি নিয়ে তার পিছু নিয়েছে। ফোনবুকটা বন্ধ করে বেরিয়ে যেতে চাইলো।

    “আপনি আজকে রাতের জন্য একটা রুম খুজছেন, তাই না মিস কাতসুরাগি?”

    সে থেমে গেল। রোবটের মতো মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কে?”

    পকেট থেকে একটা বিজনেস কার্ড বের করে তার হাতে দিলাম। সে আড়চোখে তাকিয়ে আমার সাথে কার্ডে ছাপা তথ্যগুলোর মিল খোঁজার চেষ্টা করলো।

    “সাইবারপ্ল্যান…”

    “বিজ্ঞাপন বানানো, ব্রোকারিং–আমরা সব ধরনের কাজই করে থাকি। অনেকটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানদের হ্যান্ডিম্যান-এর মতো। আপনার কোম্পানি আমাদের সবচেয়ে বড়ো ক্লায়েন্ট, মিস কাতসুরাগি। আমার পরিচয়টা তো দিলাম। এবার আপনার পালা।”

    “আমি সেটা দিতে বাধ্য নই।” সে হাত দিয়ে কার্ডটাকে টোকা মেরে মেঝেতে ফেলে দিল।

    “তাহলে আমার কাজটা সম্পন্ন করে ফেলি।” কার্ডটা মেঝে থেকে তুলে নিলাম। “আমাদের ক্লায়েন্টের বাসার ভেতরে একজন চোর ঢুকেছিল, ব্যাপারটা তো মেনে নেওয়া যায় না।”

    মেয়েটার চোখ কিছুটা বড়োবড়ো হয়ে গেল। তাকে ওভাবে দেখে বেশ সুন্দরীই লাগছিল। এখনো মাথা গরম করে বসেনি, তার মানে মাথায় ভালোই বুদ্ধি আছে। তার চোখদুটোর দিকে তাকিয়েই রইলাম।

    “লুকিয়ে যদি না ঢুকে থাকেন, তবে এর উলটোটা ঘটেছে। আপনি লুকিয়ে সেখান থেকে বেরিয়েছেন। যেটাই হোক, সেটা ধামাচাপা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মিস্টার কাতসুরাগির সাথে আমার এক্ষুণি যোগাযোগ করা উচিত।” বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম।

    “থামুন।”

    “ঠিক আছে। তাহলে নিজের পরিচয় দিন।” তাকে একটা হাসি উপহার দিলাম। “কী হয়েছে, তা আমাকে খুলে বলুন। আমি কিন্তু বেশ উদার মনের একজন মানুষ। পরিস্থিতি বুঝে আপনার জন্য একটা রুমের ব্যবস্থাও করে দিতে পারব।”

    তার মুখে একটা দ্বিধান্বিত ভাব ফুটে উঠল। না, ভুল বললাম। সেটা দ্বিধাবোধ নয়। বরং সে আমার বলা কথাগুলো মাথার মধ্যে বিশ্লেষণ করে দেখছে। আমাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা, আমার দেওয়া তথ্যগুলো আদৌ সত্য কিনা, আর আমাকে ব্যবহার করা যায় কিনা— প্রশ্নগুলো তার মাথার ভেতর ঘুরছে।

    সে ডানহাতটা বাড়িয়ে দিল। “বিজনেস কার্ডটা দিন প্লিজ।”

    “জো হুকুম।”

    কার্ডটা নিয়ে সে এবার বাম হাতটা বাড়িয়ে দিল। “আপনার লাইসেন্সটাও দিন।”

    “লাইসেন্স?”

    “কারণ, এই কার্ডটা আপনার নাও হতে পারে।”

    “ওহ, বুঝতে পেরেছি।”

    তার বয়স যত ভেবেছিলাম, কাছ থেকে দেখে সেটা আরো কমিয়ে দিতে বাধ্য হলাম। এখন দেখে তাকে হাইস্কুলে পড়ুয়া মনে হচ্ছে। কিন্তু মাথাটা সে তুলনায় বেশ পরিষ্কার। মানিব্যাগ থেকে লাইসেন্সটা বের করে তার হাতে দিলাম। পাবলিক ফোনের পাশে রাখা মেমো প্যাড আর বলপয়েন্ট কলমটা হাতে নিয়ে সেখানে ঘসঘস করে আমার দেওয়া ঠিকানাটা টুকে নিল।

    “আপনি বেশ সতর্ক দেখছি।” লাইসেন্সটা ফেরত পাওয়ার পর সেটা মানিব্যাগে রেখে দিতে দিতে বললাম।

    “পাপা আমাকে শিখিয়েছে যে, সবার শেষে নিজের পরিচয় দেবে।”

    “পাপা?”

    “কাতসুতোশি কাতসুরাগি।”

    “আচ্ছা।” মাথা নাড়লাম। “অবশ্যই। কিন্তু নিসেই অটোমোবাইলসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টের আদরের কন্যা কেন দেওয়াল টপকে বাসা থেকে পালাবে?

    “তাতে আপনার কী?”

    “হ্যাঁ, তাতে আমার কিছু না—এই কথাটা একদম সত্য। কিন্তু বাস্তবতাটা হলো, আমার সাথে আপনার দেখা হয়ে গেছে। যদি আপনার সাথে কোনোকিছু ঘটে, পরে আমাকে জেরা করতে ডাকা হবে। আর এত বড়ো আঘাত আমার কোম্পানি হজম করতে পারবে না।”

    “তাতে আমার কী?”

    সে বেরিয়ে যেতে চাইলো। তাই মোবাইলটা আবার বের করলাম। “আমি এক্ষুণি ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”

    সে বিরক্ত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। “আমাকে একলা থাকতে দিন। যা যা জিজ্ঞেস করেছেন, তা যথেষ্ট না? এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টের কন্যা আপনাকে একটা অর্ডার দিচ্ছে, সেটা চুপচাপ মানতে এত কষ্ট হচ্ছে কেন?”

    “দুর্ভাগ্যবশত, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার কন্যা? সেটা ভেবে দেখতে হবে।” মোবাইলের কয়েকটা বাটনে ক্লিক করে নম্বর ডায়াল করার ভান করলাম।

    “থামুন।”

    সে আমার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিতে চাইলো। সরে গেলাম।

    ঠিক তখন সেখানে এলো এক মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ী। আমাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকালো।

    “তুমি তো এখানে ঝামেলা পাকাতে চাও না, তাই না?” বললাম। “চলো, অন্য কোথাও গিয়ে কথা বলি।” মেয়েটাকে তুমি করে সম্বোধন করলাম এবার।

    কথাটা কয়েক মুহূর্ত ভেবে দেখলো সে। বোধহয় আবার সেই আগের মতো কথাগুলো মনে মনে বিশ্লেষণ করছে। তারপর মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।

    হোটেলের পাশের একটা ক্যাফেতে ঢুকলাম। জায়গাটাকে শুধু ক্যাফে না বলে একটা মিনি ব্যুফে-টাইপ ক্যাফে বললে বরং মানাবে। এখানে নিজের ড্রিংক নিজেকে নিয়েই সিটে বসতে হয়। রাস্তা দেখা যায় এমন একটা কাউন্টারে গিয়ে পাশাপাশি বসলাম।

    দুইভাবে মেয়েটাকে কাজে লাগানোর ফন্দি মাথায় এসেছে। একটা হচ্ছে, তাকে এই মুহূর্তে কাতসুরাগির এস্টেটে নিয়ে যাওয়া। তাহলে কাতসুতোশি কাতসুরাগিকে আমি হাতের মুঠোয় নিয়ে নিতে পারবো। কারো কন্যাকে রক্ষা করে ফিরিয়ে আনলে পৃথিবীর যে-কোনো বাবার মন পালটে যেতে বাধ্য

    আরেকটা হলো, মেয়েটির কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। হ্যাঁ, সে যে এস্টেট থেকে লুকিয়ে বের হয়ে এসেছে; কথাটাতে কোনো ভুল নেই। তার মানে এর পেছনে কোনো গোপন কাহিনি লুকিয়ে আছে। গোটা কাতসুরাগি পরিবারের গোপনীয় কোনো ব্যাপার হবে সেটা। এরপর যখন আমি কাতসুতোশি কাতসুরাগির মুখোমুখি হবো, তখন এটাকে গোপন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

    কফির কাপে চুমুক দেবার পর সে মুখ খুললো। “কতক্ষণ ধরে আমার ওপর নজর রাখছেন?”

    “ম্যানশন থেকেই। দেওয়াল টপকানোর সময়েই তুমি আমার চোখে ধরা পড়ে গেছ।”

    “আমার বাড়ির সামনে আপনি কী করছিলেন?”

    “কারণটা তোমার না জানলেও চলবে। একটা কাজের জন্য আমি কাছাকাছিই ছিলাম, তাই মনে হলো বিখ্যাত কাতসুরাগি প্রাসাদটা দেখে চোখটা সার্থক করি।”

    “আমি তো তখন রাস্তায় কাউকে দেখিনি।

    “কিছুটা দূরে ছিলাম। যদি কাছে থাকতাম, তবে তোমাদের বাড়ির সিকিউরিটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে যেতাম।”

    “তারপর থেকে আমাকে অনুসরণ করা শুরু করলেন? কেন? কী কারণে?

    “তোমার প্রশ্নগুলো শুনে মনে হচ্ছে যেন আমাকে জেরা করা হচ্ছে।” মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিলাম। “আগেই বলেছি, মিস্টার কাতসুরাগি আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্লায়েন্ট। যদি এরকম গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্লায়েন্টের বাসা থেকে কাউকে দেওয়াল টপকাতে দেখি, তবে সেটা তদন্ত করা আমাদের কর্তব্য। তাই নয় কি?”

    “আমাকে সাথে সাথে পাকড়াও করলেন না কেন? “সেটাই কি তোমার ইচ্ছা ছিল?”

    প্রশ্নটা করতেই সে চুপ হয়ে গেল। কফির কাপে আরেকবার চুমুক দিলাম।

    “আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এভাবে বাড়ি থেকে পালানোর পেছনে তোমার কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই ভাবলাম তোমাকে আরো কিছুক্ষণ অনুসরণ করা যাক। কিন্তু কল্পনাতেও ভাবিনি যে, অনুসরণ করতে করতে এতদূর চলে আসবো।”

    “অদ্ভুত চিন্তাভাবনা।”

    “কাজের জন্য আমাকে এরকম অদ্ভুত চিন্তাই করতে হয়। তা না হলে নিজের কাজটা আমার পক্ষে ভালোমতো করা সম্ভব হতো না। এখন তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব। প্রথমত, তোমার পরিচয় দাও।”

    “সেটা একটু আগেই তো দিয়েছি।”

    “কেবল জানিয়েছ যে, তুমি মিস্টার কাতসুরাগির মেয়ে। আমি তোমার নাম জানতে চাই। কিছু একটা বলে তো তোমাকে ডাকতে হবে, তাই না?”

    সে কাচের জানালা দিয়ে বাইরের রাস্তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর বিড়বিড় করে বলল, “জুরি।”

    “কী?”

    “জুরি। গাছপালা (জুমোকু) আর বিজ্ঞান (রিকা) এর প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে জুরি।”

    “আচ্ছা, তাহলে ‘মিস জুরি’। জুরি কাতসুরাগি। হুম, নাম শুনেই বুঝতে পারছি তুমি সামান্য কেউ নও।

    “মানে?”

    “তোমার প্রশংসা করছি, আর কিছু না। যাই হোক, আমার মাথায় কেবল একটা প্রশ্নই বারবার আসছে। কী এমন কারণ থাকতে পারে যার ফলে মিস জুরি কাতসুরাগি নিজের বাড়ির দেওয়াল টপকাতে বাধ্য হলো?”

    প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। “তারমানে আপনাকে সেটা বলতেই হবে?”

    “যদি না চাও, তবে বলতে হবে না। তবে তখন অবশ্য…” আমার পকেটে হাত দিলাম। সেখানে মোবাইলটা রেখেছি।

    “না বললে আপনি আমার বাবা-মাকে ফোন করবেন। বাহ।”

    “এটাকেই ‘বড়োদের দায়িত্ববোধ’ বলে। এ দুটোর মধ্যে কোনটা চাও দ্রুত বেছে নাও।”

    “আমাকে একটুখানি চিন্তা করতে দিন।” জুরি কাউন্টারের ওপর হাত দুটো রেখে সেটাতে খুঁতনি রেখে বিশ্রাম করতে লাগলো। কাছে থাকায় টের পেলাম, আজকাল- কার মেয়েদের তুলনা তার গায়ের রং অনেক ফর্সা। তার ত্বকটাকে পোর্সেলিনের সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না। ত্বকে বিন্দুমাত্র অসামঞ্জস্যতা ছিল না। না, কেবল যৌবন থাকলেই ব্যাপারটা আপনাআপনি পাওয়া যায় না। এরকম ত্বকের জন্য খাটতে হয়।

    তার সুন্দর মুখশ্রীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি দেখে আমার দিকে ঝট করে মুখ ফেরালো। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।

    “কফি রিফিল করে নিয়ে আসতে পারবেন?” সে জিজ্ঞেস করলো। “অবশ্যই।”

    নিজের কফিটা শেষ করে ওর কাপটা সাথে নিয়ে আরো দুকাপ কফি নিয়ে এলাম। এসে দেখি, জুরি ‘ক্যাস্টার সুপার মাইল্ড’ ব্র্যান্ডের সিগারেট টানছে।

    “তোমার বয়সের কেউ সিগারেট টানছে— দৃশ্যটা আমার পছন্দ না।”

    “বুঝলাম। এখন আমার যদি বয়স আরো বেশি হতো, তখন কি সেটা পছন্দ করতেন?”

    “আমি সিগারেট খাই না।”

    “স্বাস্থ্যের জন্য?”

    “না, আরো কারণ রয়েছে। আমার কাছে এটা সময়ের অপচয় বলে মনে হয়। একটা সিগারেট শেষ করতে তিন মিনিট সময় লাগে। তারমানে একদিনে গোটা এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করলে দিন থেকে একঘণ্টা সময় হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বলে যে, সিগারেট মুখে নিয়ে তারা কাজ করতে পারে— কথাটা আমি বিশ্বাস করি না। আরেকটা কারণ হলো, ধূমপায়ীদের ধূমপানের তাগিদে যে-কোনো একটা হাত বিসর্জন দিতে হয়। পৃথিবীতে খুব কম কাজই আছে যেটাতে কেবল একটা হাত লাগে।”

    জুরি আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে ফুঁ দিয়ে আমার মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লো। “ওভাবে চিন্তাভাবনা করলে কি কোনো কাজে আনন্দ পাওয়া সম্ভব?”

    “আনন্দের জন্য আমি কাজ করি না। আসলে ‘অপচয়’ জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। যাই হোক, সিদ্ধান্ত নিতে পারলে?”

    জুরি খুব সাবধানে অ্যাশট্রেতে সিগারেটটা চেপে নিভিয়ে দিল। দ্বিতীয় কফিটাতে চুমুক দিল।

    “সংক্ষেপে বলতে গেলে—আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলাম।”

    “পালিয়ে যাচ্ছিলে?”

    “হুম। ঐ বাড়িতে থাকতে জঘন্য লাগছিল, তাই পালিয়ে গেলাম। এজন্যই বাবা- মায়ের কাছে ধরা পড়া চলবে না। তাই দেওয়াল টপকে বের হতে বাধ্য হয়েছিলাম।”

    “বিশ্বাস হচ্ছে না।”

    “কেন?”

    “পালাতে হলে এত অল্প জিনিস সাথে নিয়ে কেউ পালায় না।” তার সাথে লাগেজ হিসেবে কেবল ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগ ছিল।

    “আপনার বিশ্বাস করা কিংবা না করাতে আমার কিছু যায়-আসে না। তবে একটা কথা বলে রাখছি, আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।” সে সিগারেট প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে নিল।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকালাম। আশেপাশের কেউ আমাদের দেখলে ভেবে বসতে পারে, আমি মেয়েটাকে পটাতে চাচ্ছি। সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তারপরও যেভাবেই হোক মেয়েটার পেট থেকে আরো তথ্য বের করতে হবে।

    “বুঝতে পেরেছি।” মেনে নেওয়ার ভান করলাম। “ধরে নিই যে তুমি সত্যিই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছো। কিন্তু শুধু এটুকু বলেই তুমি আমার সামনে থেকে চলে যেতে পারবে না। বাড়ি থেকে পালানোর কারণটাও আমি জানতে চাই। যদি সেটা যৌক্তিক মনে হয়, তবেই তোমাকে ছেড়ে দিতে পারি।”

    জুরি আমার মুখে আবার ধোঁয়া ছাড়লো। “পালানোর জন্য আমাকে কেন আপনার অনুমতি নেওয়া লাগবে?”

    “কারণ তুমি সেরকম একটা পরিস্থিতিতে আটকা পড়ে গেছ। এই কথাটা তোমার মেনে নিতে হবে : পালাতে গিয়ে তুমি কারো সামনে ধরা পড়ে গেছ। তাই কারণটা বলে ফেল।” বলে ডান হাতের তালু দেখিয়ে তাকে বলার জন্য ইঙ্গিত করলাম।

    সিগারেটটা আঙুলের ফাঁকে ধরে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙুলিটা কামড়ে ধরলো। নখ আর দাঁতগুলোকেও ভালোভাবে পরিচর্যা করে সে। ফলে দেখতে বেশ লাগছে।

    অবশেষে মুখ থেকে আঙুলটা বের করে আড়চোখে আমার দিকে তাকালো।

    “মিস্টার সাকুমা’, এটাই আপনার নাম। ঠিক?”

    “নামটা মনে রাখতে পেরেছ বলে খুশি হলাম।” সন্তুষ্ট গলায় উত্তর দিলাম।

    “আপনি কি ওয়াদা করতে পারবেন যে, এখন আমি যা বলতে চাচ্ছি তা আপনি কাউকে বলবেন না?”

    “আমি মনেপ্রাণে বলতে চাচ্ছি ‘ওয়াদাটা রাখবো’, কিন্তু পুরোটুকু না জেনে এরকম ওয়াদা করা ঠিক না।”

    “হুম।” সে এবার সরাসরি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি বেশ সৎ। ধরেই নিয়েছিলাম আপনি ওয়াদা করে বসবেন।”

    “না জেনেশুনে কোনো ওয়াদা করা অর্থহীন।” হ্যাঁ, এটা সত্য যে, ‘ওয়াদা করলাম’ বলাটা সোজা। কিন্তু ওর মতো মেয়েরা এরকম ফস করে কেউ ওয়াদা করলে তাকে বিশ্বাস করে না।

    “অবশ্য আপনি ওয়াদাটা রাখবেন কিনা সে ব্যাপারেও তো কোনো গ্যারান্টি নেই।”

    “একদম। তবে এটা জানিয়ে দিই, আমার স্বার্থের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। তবে গপ্পোবাজ, ফটকা একজন মানুষ হিসেবেও পরিচিত হতে চাই না। বিশেষ করে আমাদের সেরা ক্লায়েন্টের মেয়ের সামনে।”

    জুরির ঠোঁটের একপাশ কুঁচকে গেল। আমার কথাবার্তা তার কাছে ভালো লাগছে, নাকি বিরক্তিকর লাগছে—ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।

    ঐ অবস্থায় সিগারেটে বেশ কয়েকবার সুখটান দিয়ে নিল। তাকে ওরকম মোহনীয়ভাবে সিগারেটে টান দিতে দেখে ওর ওপর থেকে চোখ সরাতে পারলাম না।

    “আসলে সত্যি বলতে কী, আমি…” জুরি বলে উঠল। “আমি আসলে সত্যিকারের একজন কাতসুরাগি নই।”

    “আচ্ছা।” তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কথাটা বুকে শেলের মতো বিঁধেছে। “সত্যি নাকি কথাটা?”

    ““সত্যিকারের কাতসুরাগি নই’ কথাটা একটু বেশি নাটকীয় হয়ে গেল। অফিশিয়ালি… হ্যাঁ এইবার ঠিক আছে। আমি অফিশিয়ালি কাতসুরাগির মেয়ে নই।”

    “যেটাই হোক, অদ্ভুত একটা কথা শোনালে। এখনই কথাটার সত্য-মিথ্যা বিচার করছি না।”

    “যদি আমার কথাটা বিশ্বাস করতে না চান, তবে যা বললাম ভুলে যান। আপনাকে আর কিছু বলবো না।”

    “দাঁড়াও দাঁড়াও।” শান্ত গলায় তার কাছে অনুনয়ের ভঙ্গিতে বললাম, “একটু ভেবে দেখার চেষ্টা করো। তুমি যে কথাটা মাত্র বলেছ, তা যে কেউ শুনলেই অবাক হবে। আচ্ছা, যাও কথা দিলাম। এরপর তোমার কথা পুরোটা কথা শোনার পরেই মন্তব্য করবো।”

    জুরি ঘোঁৎ করে উঠলো। তার মুখচোখ দেখে বুঝতে পারছিলাম, সে আমার দেওয়া অবজ্ঞার দৃষ্টিটা সহ্য করতে পারছে না। অবস্থা বুঝে মুখ থেকে সে ভাবটা দূর করলাম।

    “আপনি কি জানেন যে, পাপা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন?”

    “কোথায় যেন শুনেছিলাম। তবে যতদূর জানি সেটা প্রায় বিশ বছর আগের কথা, তাই না?”

    “হুম, একদম বিশ বছর আগের কথা। তিনি আগের স্ত্রীর সাথে বোঝাপড়া করে ডিভোর্স দিয়েছিলেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে একটি কন্যা রয়েছে।”

    “কন্যাটি যে তুমি নয়, তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না।”

    কোনো মেয়েই নিজের মাকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে ডাকবে না। আবার ‘আগের স্ত্রী’ বলাটাও খুব অস্বাভাবিক। তারমানে দুজনের কারো মেয়ে নয় সে?

    “আমি আসলে তার মিস্ট্রেসের (প্রণয়িনীর) ঘরের মেয়ে।”

    সে এত স্বাভাবিকভাবে কথাটা বলল যে, আমার মুখটা হা হয়েই রইল। ওভাবেই চোখের পলক ফেললাম।

    “তবে আমার পাপার শেষ মিস্ট্রেস কিন্তু তিনি নন। সেটা হিসেব করে বের করা মুশকিল। শেষের আগের জনও হতে পারেন, তার আগের জনও হতে পারেন। ঠিক নেই। মানুষটাকে থামানো যায় না।” সে একটা কাষ্ঠ হাসি হাসলো। মানুষটা বলতে সে তার ‘পাপা’র কথা বুঝিয়েছে।

    “তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো তোমার মা মিস্টার কাতসুরাগির প্রথম স্ত্রীর সময় থেকেই তার মিস্ট্রেস হয়ে আছেন?”

    “হুম। ডিভোর্সটা নাকি সেকারণেই হয়েছিল। তার প্রথম স্ত্রী খুবই সম্ভ্রান্ত, ভালো পরিবার থেকে এসেছিলেন। তাই তিনি হয়তো এটা মেনে নিতে পারেননি।”

    জুরির গল্পটা শুনে নিজের হাসিটা চেপে রাখা কষ্ট হলো। ব্যক্তিগত জীবনে যে কাতসুতোশি কাতসুরাগি কতবার হোঁচট খেয়েছেন, তা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।

    “তাহলে, তুমি একজন মিস্ট্রেসের মেয়ে হয়েও কীভাবে কাতসুরাগিদের সাথে বসবাস করছো?”

    “উত্তরটা খুবই সোজা। কারণ আমার মা মারা গেছেন। শুনেছি, লিউকেমিয়া হয়েছিল তার। অন্যের মুখে শুনেছি তিনি অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন। আর সুন্দরীরা নাকি অল্প বয়সেই মারা যায়।” জুরি স্বাভাবিক গলায় কথাগুলো বলল। কথাগুলোর মধ্যে কোনো প্রকার বিষাদ, কষ্ট টের পেলাম না।

    “তোমার মাকে মনে নেই তোমার?”

    “আবছা আবছাভাবে হয়তো মনে আছে, কিন্তু…” সে মাথা নেড়ে বলল। “ঠিক স্পষ্ট না। হয়তো তাকে ভুলে গেছি। কিংবা ছবিতে দেখেছিলাম তাকে, আর এখন সেটাকেই স্মৃতি বলে ভ্রম হচ্ছে।”

    বেশ ঠান্ডা মাথায় করা চিন্তা এগুলো। “কখন তুমি কাতসুরাগিদের পরিবারে যোগ দিলে?”

    “আট বছর বয়সে। আমার যখন তিন বছর বয়স, তখনই মা মারা যান। ঐ সময়টায় নানীর কাছেই বড়ো হয়েছি।”

    আট বছর বয়সের মধ্যেই তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যেতে হয়েছে। সেই ছোট্ট থাকতেই তার নিজেকে, নিজের চরিত্রটাকে তৈরি করে ফেলতে হয়েছে। কল্পনায় জুরিকে দেখতে পেলাম। তাকে অল্প বয়সেই বিচ্ছেদের কষ্ট পেতে হয়েছে। কিছুটা সমবেদনা হলো তার জন্য। “আগে না নিয়ে কেন এতদিন পর তোমাকে পরিবারে টেনে নিল, সেটা আমার বোধগম্য হলো না।”

    “কে জানে। হয়তো তার নতুন স্ত্রীর কারণে। ঐ সময়েই তার ঘরে ‘বৈধ’ একজন কন্যা জন্ম নিয়েছিল। সেজন্যই বোধহয় এতদিন অপেক্ষা করছিলেন।”

    “তাহলে তো আরেকটা প্রশ্নের উদয় হয়। তোমাকে নেওয়ার প্রয়োজনই বা কী ছিল?”

    “কারণ, আমার নানী প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কাউকে তো আমাকে পালার দায়িত্ব নিতে হবে, তাই না? পাপার তখন মনে পড়েছিল যে, আমি তারই কন্যা। সেজন্য অন্যের বাড়িতে বড়ো হবার থেকে নিজের বাড়িতে আমাকে পালা মঙ্গলজনক।”

    জুরি হাতের সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে চেপে নিভিয়ে দিল।

    “তখন থেকেই তুমি ঐ বাসায় রয়েছ?”

    “একদিক থেকে বলা যায়।”

    “মানে?”

    “কথাটা ভেবে দেখার চেষ্টা করুন। যদি আচমকা আপনার সংসারে অন্য কারো সন্তান ঢুকে পড়ে, সেটা কি আপনার নতুন স্ত্রী আর কন্যা মেনে নিতে পারবে? তা সেই সন্তানের বয়স আট হোক কিংবা তার কম, অধিকাংশই তা মেনে নিতে পারবে না। কথাটা পাপারও জানা ছিল, তাই তিনি আমাকে একটা বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তাও আবার জাপানের একেবারে উত্তরে অবস্থিত সেন্ডাইতে।”

    “এলিমেন্টারি থেকেই?”

    “এলিমেন্টারি থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত। বড়ো বড়ো ছুটি পেলেই কেবল বাসায় ফিরে আসতে পারতাম। কিন্তু তখনও আমার বাসায় ফিরে আসতে মন চাইত না। ডর্মিটরিতেই ছুটিটা কাটিয়ে দিতে চাইতাম। কিন্তু স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী, বিশেষ কারণ না থাকলে বাড়িতে ফিরে যেতেই হবে। আমি গ্রীষ্মের ছুটি, এমনকি শীতকালীন আর বসন্তকালীন ছুটিগুলোকেও মনেপ্রাণে ঘেন্না করতাম। ভাবতাম, ওসব আজেবাজে ছুটিগুলো না থাকলেই তো হতো। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছুটির জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতো, আর আমি ছিলাম সম্পূর্ণ তার উলটো। আগস্টের শেষ দেখার জন্য কত যে অপেক্ষা করেছি!” (জাপানে গ্রীষ্মের ছুটি সাধারণত আগস্টের ৩১-এ শেষ হয়)

    “তুমি কি এখন কলেজে পড়ো?”

    “হুম। দ্বিতীয় বর্ষে।”

    ভাবলাম, কোন কলেজ তাও জেনে নিই। কিন্তু মনে বাঁধলো। না থাক, প্রশ্নটার উত্তর জেনে কোনো লাভ নেই। তাকে করার মতো আরো অনেক প্রশ্ন আমার হাতে রয়েছে। “সেজন্যই টোকিওতে ফিরে এসেছ।”

    “আমি সেন্ডাইতেই থাকতে চেয়েছিলাম। সেন্ডাই না হলেও চলবে আমার। টোকিওর বাইরে অবস্থিত যে-কোনো কলেজে পড়তে পারলেই খুশি হতাম। কিন্তু তারা যখন আমাকে চলে আসতে বলল, আর কোনো উপায় ছিল না আমার। কারণ একটাই। তারা আমাকে এতদিন ‘পেলেপুষে’ বড়ো করেছেন।”

    “মিস্টার কাতসুরাগি তোমাকে ফিরে আসতে বলেছেন?”

    “হুম। অবশ্য তার পেছনের কারণটাও আমার জানা হয়ে গেছে।”

    “কী কারণ?”

    “সহজ ভাষায় বললে, তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। খুব দ্রুত কারো সাথে তিনি আমার বিয়ে দিয়ে আমাকে ‘ঝেড়ে’ ফেলতে চান। আর সেটার জন্য আমাকে তো তার পাশেই রাখতে হবে, তাই না?”

    “বুঝতে পেরেছি।” কথাগুলো বেশ অন্যরকম লাগলো, কিন্তু সবই বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে। “সেজন্যই আর নিতে না পেরে তুমি বাড়ির দেওয়াল টপকে পালিয়ে এসেছো।”

    “বুঝতে পেরেছেন তাহলে।”

    “তোমার পরিস্থিতিটা ধরতে পেরেছি। কিন্তু আসলেই কি তোমার ওখানে থাকতে ভালো লাগত না? বাড়ির কারো সাথেই কি তোমার ভালো সম্পর্ক ছিল না?”

    “সেটা বললে ভুল হবে।” প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করতে চাইলো। কিন্তু আগেরটাই প্যাকেটের সর্বশেষ সিগারেট ছিল। প্যাকেটটা চাপ দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলল। “জীবনটা ‘সিন্ডারেলা’র গল্প না। আর তাছাড়া আমাকে ওখানে কখনো অত্যাচার করা হয়নি। কিন্তু সবসময়ই সেখানে আমার প্রতি চাপা একটা বিদ্বেষ টের পেয়েছি। কারণ, দিনশেষে এটা তো মানতে হবে যে, আমি ওদের পরিবারের কেউ নই। যত বছরই কাটুক না কেন, আমি তাদের পরিবারের অংশ হতে পারবো না। তাদের পক্ষ থেকে আমাকে কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। আমি যদি না থাকতাম, তবে তারা নিখুঁত একটা পরিবার হতে পারতো। যতক্ষণ আমি ওখানে থাকি, প্রতিটা মুহূর্ত সোপ অপেরার অভিনেত্রী সেজে থাকতে হয় আমাকে। যা-ই বলি বা করি না কেন, নিজের কাছেই নিজেকে নকল মনে হয়।” সে এবার আমার দিকে তাকালো। “বুঝতে পেরেছেন এবার?”

    “কোনোমতে,” জবাব দিলাম। “আচ্ছা, কাতসুরাগিদের ব্যাপারে তোমার মতামত কী? তাদের সবাইকে তোমার কেমন মনে হয়? উদাহরণস্বরূপ, তোমার নতুন মাকে কেমন লাগে?”

    “প্রশ্নটা কিন্তু আমাকে বেশ কষ্ট দিল।” সে জোরে শ্বাস টেনে নিল। “আপনার কি মনে হয় এতকিছুর পরেও তাদের ভালো চোখে দেখব? তাও আবার সেই মানুষগুলোকে, যারা কিনা আমাকে সবসময় তাদের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে? সবসময় মুখে মেকি হাসির মুখোশ পরে থাকা মানুষগুলোকে?”

    ভালোই বলেছ, ভাবলাম আমি। “তাদের কন্যার ব্যাপারে তোমার কী মতামত? উম, কন্যা না বলে বোনই বলি। হাফ-সিস্টার।”

    “ওহ, তার কথা জিজ্ঞেস করছেন?” জুরি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছনের দিকে ঝুঁকিয়ে ফেলল। তার মুখচোখ দেখে বুঝলাম, ভেবেচিন্তে উত্তর তৈরি করছে। ঠিক ঐরকম ভঙ্গিতেই সে উত্তর দিল, “আমি তাকেও ঘৃণা করি।”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভবিষ্য পুরাণ – অনুবাদ : স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি)
    Next Article ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.