Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প310 Mins Read0

    অ্যা কিডন্যাপিং – ৪

    চার

    আমার রুমে ঢুকে জুতো না খুলেই জুরি নাক কুঁচকে ঘরের গন্ধটা নেওয়ার চেষ্টা করলো।

    “কোনো বাজে গন্ধ করছে নাকি?”

    “না না। ভেবেছিলাম, অধিকাংশ পুরুষদের রুমের মতো এখানেও একটা বোঁটকা গন্ধ থাকবে। না পেয়ে খানিকটা অবাক হলাম। বরং খুব সুন্দর একটা গন্ধ টের পাচ্ছি। মিন্টের গন্ধ নাকি ওটা?”

    “ওটা? ডিয়োড্রেন্টের গন্ধ। ঘরে কোনো প্রকার বাজে গন্ধ আমার সহ্য হয় না। নিজের গন্ধ হলেও তাতে ছাড় দেই না।”

    এক বেডরুমের ঘর আমার। জুরি লিভিংরুমের সোফাতে আরাম করে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে বলল, “আপনি তো ঘরদোর বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন।”

    “একসপ্তাহ পরপর ঘর পরিষ্কার করি।”

    “তাই? আপনাকে দেখে কিন্তু তা মনেই হবে না।”

    “যদি ব্যাপারটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে পারো, তবে কাজটাকে কিছুই মনে হবে না। খালি একটা নিয়ম মানলেই চলবে। অতিরিক্ত কোনো কিছু ঘরে রাখা যাবে না। অতিরিক্ত কিছু ঘরে জমা হলেই আমি সেটা ফেলে দিই। আর এই নিয়মটা মানলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা কোনো ব্যাপারই না। এক সপ্তাহে ব্যবহার করার জন্য তুমি প্রায় দশহাজার আশি মিনিট পাও। সেখান থেকে কেবল তিরিশ মিনিট সময় দিলেই এরকম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সম্ভব। যদি তুমি তিরিশ মিনিট সময় একাজে ব্যবহার করো, তবে বাকি দশহাজার পঞ্চাশ মিনিট সময় আরামে কাটাতে পারবে। কিন্তু ঐ তিরিশ মিনিট পরিশ্রম না করলে বাকি দশ হাজার পঞ্চাশ মিনিটের পুরোটা সময় তোমাকে অস্বস্তিতে কাটাতে হবে।”

    জুরি আমার কথা শুনতে শুনতে মুখটা বিকৃত করে ফেলল। “কোনো ধরনের ড্রিংকের ব্যবস্থা আছে এখানে?”

    “কফির পটটা চড়িয়ে দেবো?”

    উত্তর দিল না। দেওয়ালে ঝোলানো একটা সুইডিশ বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আনমনে উত্তর বলল, “মদ-টদ পেলে কিন্তু মন্দ হতো না।”

    নির্লজ্জ মেয়ে দেখছি। যাই হোক, সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতের জন্য তাকে ছাড় দেবো। “আচ্ছা। ঘরে বিয়ার, স্কচ, বারবন, ব্র্যান্ডি আর সাকে আছে।” মুখে মুখে হিসাব করে বললাম। “কোনটা নেবে?”

    জুরি পা ভাঁজ করে বসলো। “আমাকে একটা ডম পেরিনিয়ন দেবেন। পিঙ্ক ‘

    তাকে খুব কষে একটা থাপ্পড় লাগাতে মন চাচ্ছে। কিন্তু নিজেকে থামালাম। “সাধারণত ফ্রিজে দুটো-তিনটে ডম পেরিনিয়ন থাকে, কিন্তু গতকাল সেগুলো শেষ করে ফেলেছি। তবে ওয়াইন আছে। চলবে?”

    জুরি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “কিই বা আর করার আছে। তাহলে আমার জন্য রেড

    ওয়াইন আনুন।”

    বোধহয় আমার সামনে একজন ভদ্রমহিলা সাজার চেষ্টা করছে। তবে ওকে আর ঘাটালাম না। “যথা আজ্ঞা, মাদমোয়েজেল।”

    কাপবোর্ডে একটা ওয়াইনের বোতল থাকার কথা। ইতালিয়ান ওয়াইনের এই বোতলটা বেশ কিছুদিন আগে উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। কর্কটা খোলার জন্য একটা স্ক্রু-ওপেনার ব্যবহার করলাম।

    গ্লাসটা কয়েকবার নাড়িয়ে ওয়াইনে চুমুক দিয়ে বেশ কিছু সময় নিয়ে সেটা পান করতে লাগলো সে। এক্ষুনি হয়তো ফস করে বলবে, মদটা তার রুচির সাথে যায় না বা ওরকম কিছু।

    কিন্তু অনুমানটা ব্যর্থ হলো। মুখ দেখে বুঝলাম সে এই ওয়াইনে সন্তুষ্ট হয়েছে। “হুম, বেশ স্বাদ ওয়াইনটার।”

    “শুনে ভালো লাগলো। ওয়াইন নিয়ে তোমার বাছবিচার আছে নাকি?”

    “না, তেমন কিছু নেই।” সে অভদ্রের মতো না করে দিল। “যদি কোনো ওয়াইন খাওয়ার পর আমার ভালো লাগে, তবে ওটাই বেছে নিই আমি। ওয়াইনটা কে বানিয়েছে, কখন বানিয়েছে-অতকিছু মনে রাখা আমার কাছে খুব কঠিন লাগে।”

    “কিন্তু তুমি তো একটু আগে ডম পেরিনিয়ন-এর কথা বললে।

    “আসলে ঐ একটা শ্যাম্পেইনই চিনি আমি। পাপা সবসময় এটা বলেন, ‘ডম পেরিনিয়নের সাথে শ্যাম্পেইনের কোনো ফারাক নেই। ওটার কাছে বাকি পানীয়গুলো দাঁড়াতেই পারে না।”

    মাথায় কাতসুতোশি কাতসুরাগির চেহারাটা ভেসে উঠল। অবশ্য কথাটার প্রতিবাদ করতে ভুললাম না। “শ্যাম্পেইন হলো একধরনের ফিজি ওয়াইন। শুধু ডম পেরিনিয়নই একমাত্র শ্যাম্পেইন নয়, আরো অনেক শ্যাম্পেইন আছে পৃথিবীতে।”

    জুরি মাথা ঝেঁকে উত্তর দিলো, “আসলে শ্যাম্পেইন জিনিসটা খুব গোপনে কেবল ফ্রান্সের শ্যাম্পেইন প্রদেশের হুভিলের মঠে বানানো হতো। আস্তে আস্তে গোটা প্রদেশে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। শ্যাম্পেইন বানানোর প্রক্রিয়াটা আবিষ্কার করেন ঐ মঠেরই ভান্ডারকর্তা। নাম ডম পেরিনিয়ন। সেজন্যই ডম পেরিনিয়ন হচ্ছে প্রকৃত ওয়াইন।”

    “বাহ, অসাধারণ।” আমি আমার সস্তা ওয়াইনে চুমুক দিলাম। “বেশ জ্ঞান লাভ করলাম।”

    বমি পাচ্ছিল। কাতসুরাগিও বোধহয় মদ খাওয়ার সময় গ্লাস হাতে নিয়ে এরকম জ্ঞানগর্ভ কথা প্রসব করে।

    “যাই হোক, আগের কথাই ফিরে যেতে চাচ্ছি।” বললাম।

    “খেলা নিয়ে?” স্বাভাবিকভাবেই জুরির মুখচোখে উত্তেজনা খেলে গেল।

    “অবশ্যই। আমি আরেকবার নিশ্চিত হতে চাচ্ছি তুমি এই খেলা খেলতে রাজি কিনা।”

    “যদি রাজি না হতাম, তাহলে এখানে কেন আসতাম?”

    “সোজাসুজি উত্তর দাও। তুমি কি আমার এই ‘কিডন্যাপিং গেম’ খেলতে রাজি আছো? যদি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ থাকে, আমাকে এক্ষুনি জানিয়ে দাও। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি তোমাকে জিনিসটা ভেবে নেওয়ার সময় দিতে রাজি আছি।”

    আমার কথাগুলো শুনে তার মুখে একটা বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। “আর কতবার বলবো যে, বাড়ি থেকে মজা করার জন্য পালিয়ে যাইনি আমি? তাছাড়া কাতসুরাগির বিরুদ্ধে আমার নিজেরও কিছু ক্ষোভ আছে। আমি খেলায় অংশ নিতে রাজি।”

    “ঠিক আছে। তাহলে কাজ শুরুর আগে একবার টোস্ট হয়ে যাক।” দুজনের গ্লাসেই ওয়াইন ঢাললাম। নিজের গ্লাসটা ওপরে তুলে ধরলাম। “জয় যেন আমাদেরই হয়।”

    জুরি নিজের গ্লাসটাও উঁচিয়ে আমার গ্লাসের সাথে টোকা লাগালো।

    তবে এখনো খেলা শুরু করার জন্য কোনো অসাধারণ পরিকল্পনা করিনি। এখনো সবই অলীক চিন্তা হিসেবে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অনেকদিন পর উত্তেজিত বোধ হতে লাগলো। অনেকদিন পর খেলার জন্য যোগ্য একজন প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছি।

    “দুটো জিনিস আমি পরীক্ষা করে নিতে চাই।” তর্জনী তুলে ধরলাম। “প্ৰথমত, বাড়ি থেকে বের হবার পর তুমি কি কারো সাথে যোগাযোগ করেছ? ধরো, তোমার বান্ধবী বা এরকম কেউ?”

    জুরি সাথে সাথে উত্তর দিল। “আমি কখনোই সেটা করব না। ওরা যদি বলে দেয়, তবে আমি বিপদে পড়ে যাবো।”

    “ঠিক। তাহলে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যাই। গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত তুমি যা যা করেছ তা আমাকে ধাপে ধাপে বলো। হুম, তুমি বলেছিলে যে, একটা ফ্যামিলি রেঁস্তোরাতে খেতে গিয়েছিলে। কোন রেঁস্তোরা?”

    “এতটা গভীরে যেতে হবে কেন আপনাকে?”

    “কারণ, তোমার সাথে এখন পর্যন্ত কার কার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে, তা জেনে নিতে চাই। যদি কোনো কারণে কেউ তোমার চেহারাটা মনে রাখে তবে বিপদ হতে পারে।”

    “বিপদ হবে না।”

    “শোনো। বলো তো, অপরাধীরা কেন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায়? কারণ, তাদের চলাফেরার মধ্যে কোনো ধরনের সাবধানতা থাকে না। কোথায় কোথায় তুমি ছাপ ফেলে এসেছ, তা তোমাকে মনে রাখতে হবে। নাহলে পুলিশের গতিবিধি অনুমান করতে পারবে না। ‘“

    “কিন্তু আপনার কি মনে হয় যে, ঐ রেঁস্তোরার ওয়েট্রেস আমার চেহারা মনে রাখতে পারবে? প্রতিদিন তাকে হাজার হাজার কাস্টোমার সামলাতে হয়। বাজি ধরে বলতে পারি, সে কখনো তাদের দিকে ভালোভাবে চেয়েও দেখে না।”

    “সেটা হলেই ভালো। কিন্তু তোমার চেহারাটা কেউ মনে রেখেছে কিনা, তা বের করতে হবে।”

    জুরি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “হোটেলের সামনে যে ডেনি’স চেইন রেঁস্তোরাটা আছে না? হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা ডানে মোড় নিয়ে ঐ রেঁস্তোরাতে ঢুকেছিলাম। ওখানে বসে একটা শ্রিম্প ডোরিয়া, একটা সালাদ আর এককাপ কফি খেয়েছি।”

    ফোন স্ট্যান্ডের ওপর রাখা নোটপ্যাড আর কলমটা হাতে নিলাম। সংক্ষেপে টুকে নিলাম : ডেনি’স, শ্রিম্প ডোরিয়া, সালাদ, কফি। “কাউন্টারে গিয়ে বসেছিলে?”

    “না, জানালার পাশের একটা সিটে বসেছিলাম। স্মোকিং এরিয়াটা ফাঁকাই ছিল।”

    “ওখানে গিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করে বসোনি তো?”

    “আমার জানামতে, না।”

    “অন্য কোনো কাস্টোমার কি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল?”

    “আমার দিকে কেন তাকাবে?”

    “তুমি বেশ সুন্দরী, তাই অনেক পুরুষ তোমার সাথে খাতির জমাতে চাইতেই পারে। সেজন্য তাকানোটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।” জুরির সুন্দর অবয়বের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে জবাব দিলাম।

    কথাটা শোনা পর না হেসে সে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। “ওরকম কেউ থাকতে পারে, তবে আমার চোখে পড়েনি কাউকে। ওসব জায়গায় কারো দিকে তাকাতে আমার ভালো লাগে না। এমনিতেও সবার থেকে যতটা সম্ভব চোখ এড়িয়ে চলি।”

    “ভালো বলেছ।” এবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “রেঁস্তোরা থেকে বের হবার পর কী কী করেছ?”

    “একটা দোকানে গিয়ে কয়েকটা স্ন্যাকস আর জুস কিনেছি।” বুঝতে পারলাম, হোটেলের বিছানায় যেসব স্ন্যাকস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, সেগুলোর কথা বলছে।

    “কোথাকার দোকান?”

    “রেঁস্তোরার মুখোমুখি দোকানটাতে।”

    দোকানটা আমার ভালোমতোই চেনা ছিল। বিয়ার পাওয়া যেত ওখানে। তাই মধ্যরাতে ঘর থেকে বেরিয়ে ওখানে বিয়ার কেনার জন্য চলে যেতাম। “শুধু স্ন্যাকস আর জুস কিনেছ, তাই তো? ওখানকার কোনো বিক্রেতার সাথে কথা বলোনি?”

    “ঐ সময় দোকানে যে বিক্রেতা ছিল, সে ছিল মধ্যবয়স্ক এক বুড়ো। দোকানের রেজিস্টার চালাতেই তার বেগ পেতে হচ্ছিল, কথা বলবে কখন?”

    “তাহলে তুমি দোকান থেকে বেরিয়ে সোজা ঘরে চলে এলে।”

    সে সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়াচ্ছে দেখে আবার শুরু করলাম। “হোটেলের লোকজন কি তোমাকে দেখেছে?”

    “কে জানে।” জুরি মাথা বাঁকালো। “হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কের সামনে দিয়ে হেঁটে গেছি, তাই কেউ আমাকে দেখতেও পারে। এরকম কিছু যে হতে পারে তা আমি চিন্তাও করিনি।”

    “বুঝতে পেরেছি। সমস্যা নেই।”

    হাতের নোটপ্যাডে নজর দিলাম। তারমানে জুরিকে দেখেছে রেঁস্তোরার সেই ওয়েট্রেস, দোকানের সেই বুড়ো বিক্রেতা আর পোলার হোটেলের স্টাফ। কিন্তু যদি তার কথাটা সত্য বলে ধরে নিই, তবে সে ওদের কারো মনে ছাপ ফেলার মতো কিছু করেনি।

    “যদি পুলিশ প্রকাশ্যে তদন্ত করা শুরু করে, তবে ঝামেলা হতে পারে। যদি তোমার ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তবে দেখা যাবে এদের কেউ তোমাকে মনে রেখেছে।”

    “অসম্ভব।”

    “আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু এরকম ‘অসম্ভব’ ব্যাপার ঘটে বলেই হাজার পরিকল্পনা সত্ত্বেও অপরাধী ধরা পড়ে যায়। আমাদের শান্ত থাকলে চলবে না।”

    “তাহলে আমাদের কী করা উচিত?”

    “তোমার ছবি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। হ্যাঁ, স্বীকার করছি, তার জন্য যেই ‘বাক্য’টা ব্যবহার করতে হবে, তা অনেক নাটুকে হয়ে যাবে। তারপরেও মনে হচ্ছে, ‘বাক্য’টা ব্যবহার করতেই হবে।”

    “কোন বাক্য?”

    “কিডন্যাপিং নাটকগুলোতে একটা বাক্য তুমি প্রায়ই শুনে থাকবে : যদি আপনি পুলিশে সাথে যোগাযোগ করেন তবে আপনার সন্তানকে খুন করে ফেলা হবে। বলতেও লজ্জা লাগছে।”

    না?”

    “আচ্ছা। কিন্তু কথাটা তো আমাদের একসময় না একসময় বলতেই হতো, তাই

    “কেন?”

    “ইয়ে মানে…”

    নোটপ্যাডটা রেখে হাতের গ্লাসে বোতলের বাকি ওয়াইনটুকু ঢেলে নিলাম। সোফাতে পা উঠিয়ে আয়েশ করে বসে বললাম, “দেখো, আমরা যাই বলি না কেন, তোমার বাবা পুলিশের কাছে যাবেই। তিনি ওরকম ধাঁচেরই মানুষ। তাই তাকে বলেও তেমন একটা লাভ নেই। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করবেন না। একটা কথার কথা বাদে আর কিছুই না। অন্য কোনো উপায় থাকলে বাক্যটা ব্যবহার করতাম না।”

    জুরি চুপ করে বসে ছিল। সে নিজেও জানে, কাতসুতোশি কাতসুরাগি মানুষটা সামান্য কিডন্যাপারের হুমকিতে ভয় পাওয়ার মানুষ নন।

    “তবে আমার মনে হয় না পুলিশ ওসব তথ্য প্রকাশ করবে। তবুও সাবধানতার মার নেই। মূল কাজ শেষ হবার পর কী কী ঘটতে পারে, সে ব্যাপারেও আমাদের এখনই ভেবে নিতে হবে। তুমি অবশ্য নিরাপদেই থাকবে, কিন্তু বাইরে বের হবার সময় কোনোভাবেই কোনো পাপারাজ্জির চোখে পড়া চলবে না। আমরা কিন্তু এখনো নিশ্চিত না, গতকাল থেকে আজকে পর্যন্ত কে কে তোমাকে দেখেছে।”

    কথাগুলো শুনে তার চোখগুলো বড়োবড়ো হয়ে গেল। “কাজটায় সফল হবার পর কী কী হতে পারে, তাও ভেবে ফেলেছেন?”

    “অবশ্যই। কাজ শেষে কী কী ঘটতে পারে, কী কী আশা করা উচিত তা আগে ভেবে না নিলে কখনোই গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব না।”

    “আর এই কাজের সমাপ্তিতে কি আমাদের জয়লাভ করা সম্ভব?”

    “সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি সবসময়ই জয়লাভের চিন্তা করেই কাজে আগাই। না, ভুল বললাম। আমি এমন টাইপের মানুষ, যে কিনা জয়লাভ বাদে আর কোনো কিছুই কল্পনা করতে পারে না।” গ্লাসের বাকি থাকা তেঁতো স্বাদের ওয়াইনে চুমুক দিলাম।

    “যদি সবকিছু পরিকল্পনা মোতাবেক আগায়, তবে বিদেশে চলে যাবো। তাই মিডিয়ার খপ্পরে পড়া নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে।”

    “ভালো চিন্তা। তবে সাংবাদিকদের পিছু ছাড়া করা বেশ শক্ত হবে। অবশ্য তাদেরকে ছবি না তোলার জন্য রাজি করানো যেতে পারে।”

    “হুম, তাই করব।” সে বাধ্যগত স্বরে উত্তর দিল। অবাক হলাম। সে তো এরকমভাবে কথা বলে না।

    “তাহলে চলো ধরে নিই, তুমি পালিয়ে যাবার পর যে যে তোমাকে দেখেছে, তাদের একটা ব্যবস্থা হলো।” হাতে আবার নোটপ্যাড আর কলমটা তুলে নিলাম। “পালানোর আগে তুমি কী কী করেছ আমাকে খুলে বলো।”

    “পালানোর আগে?”

    “গতকাল রাতে দেওয়াল টপকানোর পর থেকে বাকিটুকু আমি নিজের চোখে দেখেছি। তার আগ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, তুমি যা যা করেছ—সব খুলে বলো। যদি পারো, সারাদিন তুমি সবার সাথে কীরকম আচার-আচরণ করেছ, তাও বলো আমাকে।”

    “তাহলে ধরে নিচ্ছি এসব জানাও গুরুত্বপূর্ণ?”

    “যদি না হতো, তবে কি প্রশ্নটা করতাম?” প্যাডে অধৈর্যভাবে কলম দিয়ে দুবার টোকা দিলাম। “তুমি কি পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছো? কেউ কিডন্যাপ হলে পুলিশ প্রথমেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে কখন এবং কীভাবে সে কিডন্যাপড হয়েছে। কারণ, ওগুলো সম্পর্কে ভালোমতো জানতে পারলে অপরাধীকে ধরা অনেকখানি সহজ হয়ে যায়। সংক্ষেপে বলছি, তাহলে ব্যাপারটা ধরতে পারবে। ধরো, তারা বের করে ফেললো যে, কারো পক্ষে তোমাকে কোনোভাবেই কিডন্যাপ করা সম্ভব নয়। তখন তারা কি করবে বুঝতে পেরেছ? তারা সন্দেহ করা শুরু করবে এটা আদৌ কিডন্যাপিং ছিল কিনা!”

    জুরির মুখটা ঝুলে গেল। তবে আমার কথাটা সে ধরতে পেরেছে। “সত্যি বলছি, কারো সাথে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি।” জোর দিয়ে কথাটা বলল।

    “ওরকম আবছা আবছাভাবে কথাটা বললে সেটা বিশ্বাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।”

    সে আমার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকালো। “আমি ওভাবেই কথা বলি।”

    “তাহলে তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করি। সর্বশেষ কার সাথে তোমার দেখা হয়েছিল?”

    “উমম… সেটা বোধহয়,” মাথা বাঁকিয়ে চিন্তা করতে লাগলো সে। “চিহারু… সম্ভবত।”

    “সে কে?”

    “পাপার দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে।”

    “আচ্ছা, তোমার সৎবোন। তার নাম তাহলে চিহারু। চিহারু নামটা সে কীভাবে লিখে?”

    “‘সহস্র’ আর ‘বসন্ত’ শব্দ দুটো থেকে চিহারু।” সে ঘোঁৎ করে উঠল। “কী বোগাস একটা নাম।”

    “আমার কাছে কিন্তু ততটা খারাপ লাগছে না। আচ্ছা, এবার বলো কখন তার সাথে তোমার দেখা হয়েছিল? ঘরেই তো, তাই না?”

    “রাতের খাবারের পর। আটটার দিকে। আমি বাথরুমের সিংকে হাত ধুচ্ছিলাম, এমন সময় সে ভেতরে ঢুকলো। তবে তার সাথে আমার কোনো ধরনের বাক্যবিনিময় হয়নি…অন্তত তাই তো মনে হয়।”

    “তারপর?”

    “তারপরে আমার রুমে ফিরে গিয়ে টিভি দেখতে শুরু করলাম। ব্যাপারটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এভাবে সকাল পর্যন্ত পুরোটা সময় আমি একলা থাকি।”

    “সত্যি তো? ব্যাপারটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

    জুরি নিতান্ত অনিচ্ছায় মাথা ঝাঁকালো। “রাতের খাবার-দাবারের পালা চুকে যাওয়ার পর প্রত্যেকেই নিজের ঘরে ঢুকে যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই কারো সাথে আমার দেখা হয়নি। চিহারু প্রায়ই অন্য কোথাও রাত কাটিয়ে আসে। তবে সেটা তার বাবা-মা জানে না। ব্রেকফাস্টের আগে ফিরে এলেই তার আর সমস্যা হয় না।”

    ঐ বিশাল প্রাসাদে কেবল চারটে মানুষ থাকে…হুম, এভাবে ভাবলে অবশ্য জুরির কথাটা বিশ্বাস করাই যায়। “তারমানে তুমি, তোমার মা আর চিহারু একসাথে রাতের খাবার খেতে বসেছিলে?”

    কাতসুরাগির ঐ সময়ে বাসায় থাকার কথা নয়। ঐ সময়টাতে সে কোজুকার সাথে ব্যবসায়িক ডিনার সারছিল। বোধহয় ঐ সময়েই সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে করতেই সে কোজুকাকে অর্ডার দিয়েছিল— শুনসুকে সাকুমাকে প্রজেক্ট থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হোক।

    “ঐ সময়ে আমি একা একা রাতের খাবার খেয়েছি।”

    “একা? কেন?”

    “বাকি দুজন নাকি তখন বাইরে বেরিয়েছিল। এরকম প্রায় সময়ই ঘটে। তবে এরকম একা খেতে পারলেই বরং আমার ভালো লাগে।”

    “তারমানে তুমি রাতের খাবারটা নিজেই বানিয়ে নিয়েছিলে?’

    কথাটা ভাবতেও অবাক লাগছিল। কিন্তু জুরি মাথা নেড়ে কথাটা নাকচ করে দিল। “অবশ্যই না। মিস সাকি আমাদের সবার জন্য রান্নাবান্না করেন। ওহ হো, মিস সাকি ও রাতের খাবারের সময় উপস্থিত ছিলেন।”

    “মিস সাকি? ইনি কে? ওঁর কথা তো আমাকে আগে বলোনি।”

    “তিনি আমাদের কাজের লোক। ওসাকির মতো দূর জায়গা থেকে তিনি প্রত্যেক দিন আমাদের বাসায় কাজ করতে আসেন।’”

    তারমানে তাদের একজন কাজের লোকও ছিল। অবশ্য চিন্তা করে দেখলে ব্যাপারটা খুব আশ্চর্যজনক লাগে না।

    “তিনি কতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের বাড়িতে কাজ করেন?”

    “সঠিকটা আমার জানা নেই। তবে আমার ধারণা, তিনি বিকেলের দিকে আমাদের বাসায় আসেন। ঘরদোর পরিষ্কার, লন্ড্রি, বাজার, আর রাতের খাবার বানানোর দায়িত্ব তার। কাজের ওপর নির্ভর করে বাসায় ফিরে যান। তবে রাতের খাবার বানানো শেষ হলেই তিনি চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। গতরাতে আমি যখন খাচ্ছিলাম, তিনি রান্নাঘর পরিষ্কার করছিলেন।”

    “তারমানে তোমার খাওয়া শেষ হতেই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন।”

    “খুব সম্ভবত।”

    “খাবার খেতে খেতে তার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে?”

    “অবশ্যই। একসাথে থাকবো আর কথা বলবো না, সে কি হয়?”

    “কী নিয়ে কথা বলেছিলে? ঘর থেকে পালানোর ব্যাপারে না তো?”

    “ওটা নিয়ে কেন বলব? ঐ মুহূর্তে সেটা আমার মাথাতেও আসেনি।”

    “বুঝলাম।” নোটপ্যাডে লেখা চিহারুর নামটা কলম দিয়ে গোল দাগ করে দিলাম। “তুমি আমাকে গতরাতে বলেছিলে, কাতসুরাগিদের সাথে তুমি আর থাকতে চাও না। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। সেটার জন্যই কোনোরকমের পরিকল্পনা ছাড়াই তুমি ঘর থেকে পালিয়ে এসেছ। আচ্ছা, খাওয়া শেষে চিহারুর সাথে তোমার কথা হয়েছিল না? তখন কি কিছু ঘটেছে?”

    কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য জুরির মুখটা প্রাণহীন হয়ে গেল। যেন আচমকা কেউ তার মুখে একটা মুখোশ পরিয়ে দিয়েছে। সে হাত ভাঁজ করে মুখ ফুলিয়ে উত্তর দিলো, “সে অভিযোগ করেছিল যে, আমি নাকি তার ক্রিম ব্যবহার করেছি।”

    “ক্রিম?”

    “কসমেটিক ক্রিম। ওয়াশরুমের ক্রিমের কৌটা থেকে আমি খানিকটা ব্যবহার করেছিলাম।”

    “আচ্ছা।” মাথা নাড়লাম। “এরপরেই তোমাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে।”

    “না, ঝগড়া করিনি। আমাদের মধ্যে কখনোই ঝগড়া বাঁধে না। এরকম কোনো পরিস্থিতি শুরু হতে গেলে আমি নিজের দোষ স্বীকার করে সবার আগেই ক্ষমা চেয়ে নিই। প্রায়ই ঘটে ব্যাপারটা, তাই ক্ষমা চাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল সে অন্যান্য দিনের তুলনায় অতিরিক্ত বেয়াড়া আচরণ করছিল। ক্ষমা চেয়েও তাকে থামানো সম্ভব হচ্ছিল না।”

    “তাই তুমি বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে পালিয়ে গেলে?”

    “ঘরে ফিরে যাওয়ার পরেও ওর কথাগুলোর কারণে অসহ্যবোধ হওয়া শুরু করছিল। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। যাই হোক। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি এই বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকতে চাই না।”

    একদম গ্রেড স্কুলের বাচ্চাদের মতো, আমি ভাবলাম। কিন্তু তার সামনে কিছু বললাম না।

    হাতের নোটের দিকে তাকিয়ে তথ্যগুলো গোছানোর চেষ্টা করলাম। আমাকে সে যা যা তথ্য দিয়েছে, তা দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য একটা গল্প বানাতে হবে। তাতে কোনো ত্রুটি থাকা চলবে না।

    “তুমি একটু আগে বলেছিলে যে, চিহারু প্রায়ই বাইরে রাত কাটিয়ে আসে। তুমি নিজে কি কখনও ওরকম করেছ? গতকালকে ঘর থেকে পালিয়ে এসেছ তুমি। কিন্তু চিহারুর মতো কখনো বাইরে রাত কাটিয়ে এসেছ?”

    “হুম, কিন্তু চিহারুর মতো এত নিয়মিত না। নিজের ‘জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা’কে তো আমারও উপভোগ করতে হবে, তাই না?”

    “তোমার জীবনের ‘সবচেয়ে সুন্দর সময়’। বাহ।” যদি ত্রিশোর্ধ্ব কারো মুখে এই কথাটা শুনতাম, তবে তাকে বুড়োর হদ্দি মনে হতো। কিন্তু একটা যুবতি মেয়ের মুখে কথাটা শুনে তেমন খারাপ লাগছে না। বরং কথাটা যৌক্তিকই মনে হচ্ছে। কেন? “আর সেজন্যই তুমি গতকাল দেওয়াল টপকে বেরিয়ে এসেছিলে?”

    “সাধারণত পেছনের দরজা দিয়েই বের হই। কিন্তু গতকাল বের হবার সময় ঠিক করেছিলাম, যেভাবেই হোক কোনো সিকিউরিটি ক্যামেরার চোখে পড়া চলবে না। তাই দেওয়াল টপকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে গেলে ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে যেতাম।”

    “বাইরে বের হওয়া তাহলে একদম সোজা? আগে কখনো বাইরে সারারাত কাটিয়ে এসেছো?”

    “হুম…এক-দুইবার বোধহয়।” তার মুখ দেখে মনে হলো সে ঐ সময়গুলো মনে করার চেষ্টা করছে।

    “ওহ হো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা করতেই ভুলে গিয়েছি। তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”

    “আপাতত আমি সিঙ্গেল। আসলে যখন কেউ জানতে পারে যে আমি কাতসুরাগি পরিবারের মেয়ে, তখন থেকে তারা আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে।”

    “এই জেনারেশনের ছেলেপিলের একদমই কলিজা নেই দেখছি। একটা রাজকন্যাকে বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েও কেউ হাতছাড়া করে! আচ্ছা, তারমানে তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথেই ঘোরাফেরা করো?”

    “অবশ্যই। কলেজের বান্ধবীই সবাই মোটামুটি।”

    “ঘুরতে বের হতে চাইলে নিজে থেকেই ওদের সাথে যোগাযোগ করো, ঠিক না?”

    “হ্যাঁ। কিন্তু মাঝেমধ্যে হুট করে ঘুরতে বের হই। অনেক জায়গাতেই আমি নিয়মিত কাস্টোমার, তাই অনেক চেনা-পরিচিত মুখও পেয়ে যাই।”

    ওর মতো একটা কম বয়সি মেয়ের মুখে ‘নিয়মিত কাস্টোমার’ শব্দটা শুনে একটু অন্যরকম বোধ হলো। তবে এখন তার রাতে বের হবার একটা ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে।

    “যাই হোক।” তার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমি কি মোবাইল সাথে নিয়ে বের হয়েছ?”

    “না, মোবাইলটা যন্ত্রণা দেয় বলে রেখে এসেছি।”

    “যন্ত্রণা?”

    “কারণ, ওরা যদি জানতে পারে আমি পালিয়ে গেছি কিংবা হারিয়ে গেছি, সবার আগে আমাকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করবে। ফোন বারবার বাজতে থাকলে আমার খুবই বিরক্তি লাগে। আর যদি গোটা সময়টা মোবাইল বন্ধ করেই রাখতে হয়, তবে ওটা এনে কিই বা লাভ? যদি ফোন করতেই হয়, পাবলিক ফোন ব্যবহার করলেই হবে।”

    “তোমার লজিক্যাল কথাবার্তা ভালো লেগেছে।” বেশ কয়েকবার মাথা নেড়ে তার কথায় সম্মতি জানাচ্ছিলাম। না, ওকে অযথা প্রশংসা করে লাভ নেই আমার। “কিন্তু তার জন্য নতুন করে একটা সমস্যার উদয় হয়েছে। তুমি যেহেতু মোবাইলটা ফেলে এসেছ, সেহেতু পুলিশ এটা আদৌ ‘কিডন্যাপ’ কিনা সন্দেহ করতে পারে।”

    “কেন? এমনও তো হতে পারে, ওটা ভুলে ফেলে এসেছি।”

    “একটা অল্পবয়স্ক আধুনিক মেয়ে বাইরে বের হবার সময় তার মোবাইলের কথা ভুলে যাবে? টাকাপয়সা ভুলতে পারে, কিন্তু মোবাইল? অবশ্যই সেটা গোয়েন্দাদের চোখে অদ্ভুত লাগবে। কীভাবে সেই সন্দেহটা দূর করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের এখন ভাবতে হবে।”

    “অনেকেই তো তাড়াহুড়োয় মোবাইল নিতে ভুলে যায়।”

    “তাহলে তোমার কাছে আমার প্রশ্ন—তোমার এমন কিসের তাড়াহুড়ো ছিল? তুমি তো কারো সাথে দেখা করার জন্য বের হওনি।”

    “হয়তো শেষ ট্রেনটা মিস হয়ে যাবে, এমন দুর্ভাবনা ছিল আমার?”

    ঘোঁৎ করে উঠলাম। “তুমি? তুমি এমন একটা মেয়ে, যে কিনা ট্রেনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তোমার বাসার সামনের রাস্তা থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে অতদূর চলে গেছ। তবে তোমার চিন্তাটা কিন্তু খারাপ না।” নোটপ্যাডে কলম দিয়ে টোকা দিতে দিতে বললাম। “তুমি আমাকে বলেছ যে, বেশ কয়েকটা দোকানে তোমার নিয়মিত যাওয়া- আসা হয়। ওগুলোর একটাও কি মধ্যরাতে বন্ধ হয়?”

    জুরি বৃদ্ধাঙুলির নখ কামড়াতে কামড়াতে চিন্তা করতে লাগলো। তারপর মুখ খুললো, “শিবুইয়ার ‘ডাউট’ দোকানটা কিন্তু মধ্যরাতে বন্ধ হয়ে যায়।”

    “আচ্ছা তাহলে ওটাকে হিসাবে নেওয়া যাক। তাহলে প্রথম থেকে শুরু করছি। চিহারুর ঘ্যানঘ্যান শুনে তুমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলে। তাই মন ভালো করার জন্য ভাবলে শিবুইয়ার ‘ডাউট’ এ যাওয়া যাক। তাড়াহুড়ো না করলে ওটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দ্রুত বের হতে গিয়ে ভুলে মোবাইলটা ফেলে এসেছ। যা যা বললাম, একটাও কি অস্বাভাবিক লাগছে শুনতে?”

    “নাহ।” সে উত্তর দিলো। কিন্তু তাকে দেখে বুঝলাম, খুব গভীরভাবে ভেবে উত্তরটা দেয়নি।

    অবশ্য আমি তার বিচার-বুদ্ধির ওপর ভরসা রাখছিলাম না। তাই আশা করি সমস্যা হবে না। “এখন তোমাকে কোথা থেকে কিডন্যাপ করা হলো, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।”

    এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা মনে হচ্ছে। এখানে আটকে গেলে গোটা পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যাবে।

    মাথায় গোটা পরিকল্পনাটা কল্পনা করে দেখলাম। ধরি, আমিই সেই কিডন্যাপার। আমি কাতসুরাগিদের মেয়েকে কিডন্যাপ করব বলে ঠিক করেছি। কোথা থেকে তাকে তুলে নেওয়া সোজা হবে? কোথা থেকে তাকে তুলে নিলে কারো চোখে পড়ব না?

    “এগুলোর মধ্যে কেবল একটা জায়গার কথাই মাথায় আসছে। তুমি বাসার দেওয়াল টপকে বের হবার পর একটা ট্যাক্সি নিলে। যদি কেউ তোমাকে কিডন্যাপ করতে চায়, তবে তাকে ট্যাক্সিতে ওঠার আগের সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। গোটা রাস্তাটাই অন্ধকার ছিল, আশেপাশে কোনো পথচারিও ছিল না। হুম, ঐ সময়টাই তোমাকে তুলে নেবার জন্য ভালো।”

    “তুলে নেওয়া, মানে জোর করে টেনেহিঁচড়ে তুলে নেওয়ার কথা বলছেন?”

    “অবশ্যই। মুহূর্তের মাঝে, তুমি কোনো ধরনের চিৎকার চেঁচামেচি করার আগেই সে তোমাকে তুলে নেবে।” চোখ বুজে গোটা জিনিসটা কল্পনায় দেখার চেষ্টা করলাম। স্থান : ডেনচেনফুর রেসিডেনশিয়াল এলাকা। জুরি একা একা রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে। তার পেছন থেকে একজন কিডন্যাপার গাড়ি করে তাকে অনুসরণ করছে। ধীরে ধীরে গাড়িটা আগাচ্ছে। তার পাশে এসে অকস্মাৎ গাড়িটা থেমে গেল। পেছনের দরজা খুলে একজন ঝট করে বের হলো।

    “হুম, ওভাবে কিডন্যাপ করতে হলে কমপক্ষে দুজন থাকতে হবে।” চোখ বুজেই বললাম। “ড্রাইভার সিটে একজন আর পেছনে বসা একজন। দরজা খুলে বের হয়েই সে রুমাল দিয়ে তোমার মুখ চেপে ধরবে। তুমি তখন ভয় পেয়ে জমে গেছ। রুমালটাতে ক্লোরোফর্ম থাকতে হবে…” মাথা নাড়লাম। “ক্লোরোফর্ম ব্যবহার খুবই সাদামাটা হয়ে গেছে আজকাল। আচ্ছা, তাহলে সেটার জায়গায় ইথার ব্যবহার করা যাক। আন্যাস্থেশিয়ার সময় এটা ব্যবহার করে। কিডন্যাপারের তাহলে ভালো মেডিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে।”

    “কোনটা ব্যবহার করলাম, তাতে কি কিছু আসে-যায়? জিনিসটা তো পুলিশ এমনিতেই পরীক্ষা করতে পারবে না।”

    চোখ খুলে বিতৃষ্ণার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। “আমি গোটা ঘটনাটা কল্পনায় নিখুঁতভাবে সাজাচ্ছি। আর সেজন্য কিডন্যাপিং কীভাবে হলো, কিডন্যাপার কয়জন, তাদের চরিত্র— সবই ভেবে নেওয়ার দরকার আছে।”

    “এতটা গভীরভাবে ভাবার দরকার আছে?” জুরি ব্যঙ্গভাবে জিজ্ঞেস করলো।

    “যেসব কিডন্যাপাররা ধরা পড়ে, তাদের কেউই কিন্তু আগে গোটা পরিকল্পনাটা কল্পনা করে সবগুলো দিক যাচাই করে না। নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে। আর সেজন্যই ধরা পড়ে। পালিয়ে যাওয়ার আগে কী করছিলে তা কেন জিজ্ঞেস করেছি- আশা করি বুঝতে পেরেছ।”

    সে আমার কথাগুলো ধরতে পেরেছে কিনা তাতে নিশ্চিত ছিলাম না। তবে চুপচাপ থেকে কথাগুলো শুনলো।

    কথা বলা থামালাম না। “যেসব কিডন্যাপাররা তোমাকে ইথার দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছে, তাদের এক্ষুনি গাড়ি করে সেখান থেকে কেটে পড়তে হবে। আগে থেকেই তাদের গন্তব্য ঠিক করে রাখা আছে। সেখানে তাদের দিন চালানোর মতো খাবার- দাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের একটা ফোনের লাইন আছে, সাথে একটা কম্পিউটার। একটা টিভিও রয়েছে। তোমাকে আটকে রেখে ওখানে তারা দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে পারবে।”

    “আর সেই জায়গাটা কোথায়?”

    “হুম, এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাবধানে সেটা বেছে নিতে হবে। এমনভাবে বেছে নিতে হবে, যাতে সেটা কিডন্যাপারদের চরিত্রের সাথে মিলে যায়।”

    “পারলে কিডন্যাপারদের চরিত্র একটু ‘কুল’ দেখে বানাবেন।”

    “খুব নিরুপায় না হলে সেটা করা যাবে না। উদাহরণ দিয়েই বলি, কিডন্যাপারদের অত্যন্ত সাবধানী আর নাছোড়বান্দা টাইপের হতে হবে। একই সাথে তারা দ্রুত আর দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”

    “তাই নাকি।”

    “ভেবে দেখো ব্যাপারটা। যেভাবে তোমাকে কিডন্যাপ করা হলো, সেখান থেকে কিন্তু তাদের ব্যাপারে কয়েকটা জিনিস জানা যায়। প্রথমত, কাতসুরাগিদের মেয়েটা যে প্রায়ই বাড়ি থেকে গোপনে বেরিয়ে পড়ে—এটা তাদের জানা। তাই তারা সুযোগের জন্য অনেকদিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিল। এখান থেকে তাদের নাছোড়বান্দা স্বভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। আর দ্বিতীয়ত, সুযোগ পাওয়ামাত্র তারা কিন্তু কিডন্যাপিং করতে পিছুপা হয়নি। সেখান থেকে তাদের দুঃসাহসের প্রমাণটাও পাই।”

    “আচ্ছা, বুঝলাম।” জুরি মাথা নাড়লো। এবার বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকালো। “একটা প্রশ্ন করতে পারি?”

    “কী?”

    “কিডন্যাপারদের আস্তানাতে কি আমাকে বেঁধে রাখা হবে?”

    “সেটা নিয়ে এখনো ভাবছি। কেন, হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

    “উমম…” সে জিহ্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিল। “আমাকে কি ওখানে ধর্ষণ করা হবে?”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভবিষ্য পুরাণ – অনুবাদ : স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি)
    Next Article ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.