Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য পিরামিড – ইসমাঈল কাদরী

    ইসমাঈল কাদরী এক পাতা গল্প137 Mins Read0

    অপবিত্রতার স্পর্শে

    প্রাচীন লিপিগুলোতে বলা হয় যে, পিরামিড রাতে যখন চাঁদ অস্ত যায় তখন স্বর্গবাসীদের সাথে তার যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। রহস্যময় সব আলো তখন পিরামিডের ভেতর দিয়ে একেবারে মাটির গভীরে যেখানে কালো পাথরগুলো মাটি, কাদার সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে সেখানে গিয়ে মেশে। সে রহস্যময় স্বর্গীয় রশ্মি পিরামিডের ভেতর রাখা মৃতদেহের কংকালের ভেতরও গিয়ে পড়ে। কয়েক মুহূর্তের জন্য তখন মৃতদেহের চোখের কটরের ভেতর যেনো প্রাণ ফুটে ওঠে, এক খুব উজ্জ্বল আলো তখন দেখা যায় সেই মৃত দু চোখের ভেতর।

    পিরামিডের মৃতদেহগুলো এখন পাশাপাশি পরস্পরে শুয়ে আছে যেভাবে একদিন তারা পৃথিবীর রাজত্বে পাশাপাশি বেঁচে ছিলো। তখন তারা কেবলই জীবিত ছিলো।

    চিওপসের পিরামিড, আর এর পাশেই আরেকটা পিরামিড যেটা প্রথমটার চেয়ে অনেক ছোট এই দুটো পিরামিডই এক সাথে তৈরি করা হয়েছিলো চিওপসের জন্য। সেফরোনের পিরামিড, এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে বিশাল সিংহ মূর্তির স্কিনিংস। তার পরেই আছে স্ত্রী পিরামিড। এর পরে ডিডোফিরির অসম্পূর্ণ পিরামিডটা দাঁড়িয়ে আছে। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অনড়।

    স্ত্রী পিরামিডটাই প্রথম মরুভূমির দস্যুদের দিয়ে আক্রান্ত হয়, পরে ধ্বংস হয়। সেটা ছিলো গ্রীষ্মের এক গরম স্যাতস্যাতে রাত। বাইরে দস্যুদল তাদের হাতে শাবল, কোদালসহ আরো নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিলো। শাবল হাতে নিয়ে তারা পিরামিডের বাইরে উত্তেজনায় কাঁপছিলো। কারণ, ইতোপূর্বে তারা এই ধরনের স্মৃতিসৌধের ভেতর ঢুকে চুরি করার চেষ্টা করে নি। এটাই তাদের প্রথম। বেশ কয়েকটা রাত ধরে তারা পিরামিডগুলোর আশেপাশে ঘুর ঘুর করলো। বিক্ষিপ্তভাবে দেখলো সবকিছু এগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলো। কোন্ পিরামিডটা দিয়ে তাদের চুরি করার কাজটা শুরু করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। কারণ পিরামিডগুলোর সবগুলো গোপন পথ পুরোপুরি ধ্বংস করে এর ভেতরে ঢোকা খুব সহজ কাজ বলে মনে হচ্ছিলো না। প্রাথমিকভাবে তারা স্ত্রী পিরামিড এবং ডেডেফেরির অসম্পূর্ণ পিরামিডটা নিয়েই একটু ইতস্তত করছিলো। তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। (সম্ভাব্য কারণ হলো, তারা পাথরের একটি ভালো অংশ নিয়েছিলো। এখানে ছিলো পারাফোসের কন্যা। তারা এখানে কিছু নিতে চেয়েছিলো।

    নানা রকম সুবিধা অসুবিধা লাভ লোকসান বিপদের কথা চিন্তা করে কোন পিরামিডটা দিয়ে তাদের কাজের শুরু করা যায় সেটা নিয়ে তারা দীর্ঘক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করলো। অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে স্ত্রী পিরামিডটাকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়েই তারা তাদের কাজের শুরু করবে। আর যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে তারা সব সময় মেয়েদের অসম্মান করতে পছন্দ করতো, এবং মেয়েদেরকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতো তাই স্ত্রী পিরামিড দিয়ে তাদের ধ্বংস কার্যক্রম শুরু করাটাই ছিলো স্বাভাবিক।

    আর তাই তারা সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করলো। তারা তাদের ভেতর থেকে তাদেরকে বাছাই করতে পারলো না। তারা এর সুবিধা- অসুবিধাগুলো খুঁজে দেখলো। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিলো স্ত্রী পিরামিডের প্রতি। তারা তুরনার দৃষ্টিতে দুটো পিরামিডের দিকে তাকালো। তারা দুটি নারীকে সেবক হিসেবে পেতে আক্রমণ করে তাদের অভিযুক্ত করলো। তাদের মনে হলো তারা কোনো সাধারণ ও স্বাভাবিক নারী।

    বিষয়টা তারা যতোটা কঠিন ভেবেছিলো তার চেয়ে অনেক সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে পিরামিডের ভেতর মূল গ্যালারিতে তারা ঢুকে পড়লো। সামনে যতো জঞ্জাল আর আবর্জনা ছিলো এগুলো দূর করতে তাদের তেমন বেগ পেতে হলো না। সকাল থাকতেই পিরামিডের মূল যে কুঠুরি যেখানে পাথরে নির্মিত খাটিয়ার ভেতর মমি করা শবদেহু রাখা হয়েছিলো তার কাছাকাছি পৌঁছে গেলো।

    তারা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। ফলে তাদেরকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। রাত যখন গভীর হয়ে গেলো তখন দলের সবচেয়ে বয়স্ক নেতা ব্রনজিজো বিশাল ভারি দরজাটা সরানোর চেষ্টা করলো। এই নামের কারণ সে ছিল সবার অগ্রজ। কিন্তু কালো এই পাথরের দরজাটা এতোই মজবুত ছিলো যে সেটাকে এক চুলও নড়ানো গেলো না।

    ‘তোমরা এক সাথে এগোও।’ সে তার পুরো দলটাকে একত্রে ধাক্কা দিতে দিতে বললো।

    ধাক্কাধাক্কি করতে করতে এক সময় তারা বিশাল দরজাটা খুলে হুড়মুড়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো। ব্রনজিজো প্রথম উঠে দাঁড়ালো। তারা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে, লণ্ঠনের অলো অন্ধকারে স্বর্ণালংকার এর উপর পড়লে সেটাকে সত্যিকার ঔজ্বল্যের চেয়ে আরো বেশি চকচকে দেখায়। তাই তারা হাতের লণ্ঠনের আলো কমিয়ে দিলো। ব্রনজিজো তার হাত দিয়ে আশপাশের সমস্ত সম্পদ অলঙ্কার একত্রিত করলো। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড়িয়ে বলতে থাকলো, ‘অভিশপ্ত বেশ্যা।

    সব কিছু গুছিয়ে নেবার পর সে পাথরের তৈরি শবদেহ রাখার পাথরের তৈরি কফিনের পাশে দাঁড়ালো। সবাই দেখলো যে ব্রনজিজো তার হাতের শাবলটা দিয়ে পাথরের কফিনের ফাটা অংশে চাপ দিয়ে খুলতে চেষ্টা করলো।

    মমিটা যে ঘরে রাখা হয়েছিলো সে ঘরের সমস্ত অলঙ্কার যখন তারা চামড়ার বেগের ভেতর ঢুকিয়ে নিলো তখন তারা ভাবছিলো যে পাথরের কফিনের ভেতর নিশ্চই আরো মহামূল্যবান স্বর্ণালংকার জমা করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কফিনের মমিটাকে তখন সৌন্দর্যের দিক থেকে খুবই কৃষকায় লাগছিলো।

    ‘লণ্ঠনটা এভাবে নাড়াচাড়া করো না।’ তুধালি চিৎকার করে লণ্ঠনবাহককে বললো। কারণ এভাবে বাতিটা নাড়াচড়ার কারণে সে মমির চেহারাটা ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলো না। কেমন যেনো তার কাছে আবছা মনে হচ্ছিলো।

    একজন গোরদস্যু হিসেবে সে আগে থেকেই জানতো যে একবার যদি কফিনটাকে খোলা হয় তাহলে হয়তো মমির চোখের তীব্রতায় সামনের সবকিছুই জ্বলে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। যদিও এমন পরিস্থিতিতে সে এখন পর্যন্ত পড়ে নি। কিন্তু এমন একটা বিশ্বাস তার সব সময় ছিলো।

    তারা সবাই যখন দেয়াল স্পর্শ করতে করতে অন্য কোনো দরোজা খুঁজে বের করার জন্য হাতরে বেড়াচ্ছিলো তখন সবাই দেখলো যে এক চোখ কানা লোকটা খোলা কফিনের উপর ঝুকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে।

    ‘হেই তুমি এটার উপর ঝুকে পড়ে কী করছো?’ ব্রনজিজো জিজ্ঞেস করলো।

    এক চক্ষু লোকটা তখন তার একমাত্র চোখটা পিট পিট করে উঠলো।

    ‘আমি মমি করা এই রাজকুমারীর শরীরের কাপড়ের প্যাচ খুলে ওর ভেতরের সৌন্দর্য দেখতে চাচ্ছি। ও কেমন ছিলো দেখতে এটা ভেবে আমি সব সময়ই তন্ময় হয়ে যেতাম।’

    ‘এটা একটা বেশ্যার শরীর ছাড়া আর কিছুই না’। ব্রনজিজো এক পাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো। ‘তোমার এখন উচিৎ এই সমস্ত আজেবাজে কাজ ফেলে আরেকটা দরজা খুজে পেতে আমাদেরকে দরকার মতো সাহায্য করা।’

    ‘আরে তুমি আবারো কী করছ?’ তুধালি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো। সে দেখতে পেল এক চোখ কানাটা সত্যি সত্যি মমির পেচানো কাপড়গুলো খোলার চেষ্টা করছে।

    ‘দেখো ওর চেহারাটা কেমন আস্তে আস্তে কালো হয়ে যাচ্ছে।

    আমি ভাবতে পারছিনা কীভাবে সে রাজমাতা হতে পারে।

    ‘স্বর্গের দোহাই এটাকে ফেলে এখন আমাদের সাথে চলো।’ তুধালি বললো।

    সে বেশ ভয়ে ভয়ে জড়াজড়ি করে তার অন্যান্য সাথীদের সাথে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু এক চক্ষু লোকটা হাতে প্রায় নিঃশেষিত একটা মশাল দিয়ে দেয়ালের মাঝে বিভিন্ন ধরনের চিত্র আর আঁকি ঝুঁকিগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে চেষ্টা করছিলো। অনেকগুলো শব্দকে মনে হলো অস্পষ্ট।

    ‘কি এক আকর্ষণীয় বেশ্যা মেয়ে ছিলো সে। ব্রনজিজো তার হাতের ছুরি দিয়ে দেয়ালের চিত্রগুলো স্পর্শ করে বললো। দেখতে পেলো দুটি অর্ধপিরামিড।

    তারা সবাই যখন পাশেই বিপরীত আরেকটা ঘরে ঢুকলো তখন সেখানে তার দুটো হিরোগিফসের লাইন দেখতে পেলো। দেখতে পেলো দুটি অর্ধপিরামিড।

    ‘এখানে কী লেখা হয়েছে?’ ব্রনজিজো জিজ্ঞেস করলো। কারণ সে পড়তে পারে না।

    তুধালি চিত্রগুলোর কাছাকাছি গিয়ে মন্ত্রপাঠের মতো অর্থ উদঘাটন করতে করতে বললো, ‘হুম.ম. এই বুড়ো এক চোখের শয়তানটাই ঠিক।’

    ‘জারজের বাচ্চা তুমি আগে এটা আমাকে পড়ে শোনাও। হেয়ালি পরেও করতে পারবে।’ তারপরেও তা করো।

    ‘হি হিহি’। আরেকজন হাসতে লাগলো। তারপর বললো, কালক্ষেপণ না করে ‘এখানে খুব নোংরা কথা লেখা আছে। লেখা আছে ফারাও এর মেয়ে পুরুষদের ভোগের বিষয়ে খুব কুরুচিপূর্ণ ছিলো।

    শালী সত্যিকারই একটা বেশ্যা ছিলো।’ ব্রনজিজো মন্তব্য করলো। তারপর সবাইকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে বললো, ‘অনেক হয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যেতে হবে। আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে এই জায়গাটায় আবদ্ধ আছি।’

    তারা যখন বের হয়ে আসছিলো তখন তুধালি দেখলো এক চক্ষু বুড়োটা একটা কফিনের উপর ঝুকে কী যেনো করছে। তাকে বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছিলো। কেমন যেনো রোগাটে। দুর্বল। আর বিমর্ষ।

    ‘কী হয়েছে তোমার?’ তুধালি জিজ্ঞেস করলো।

    ‘বুঝতে পারছি না। আমার খুব খারাপ লাগছে।

    ‘তোমরা সবাই দ্রুত এখান থেকে বের হয়ে এসো।’ ব্রনজিজো নির্দেশ দিলো।

    আমাদের হয়তো এখানে কোনো ভুল হয়েছে।

    ‘তোমরা হয়তো জানো মমির শরীর থেকে বের হওয়া গন্ধ মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেয়, আচ্ছন্ন করে ফেলে।’

    ‘যেভাবেই হোক এখান থেকে বের হয়ে আসো।’

    “ঠিক বলেছো! সবাই যার যার যন্ত্রপাতি নিয়ে উঠে পড়ো।’

    অনেকক্ষণ ধরে পিরামিডের গ্যালারিতে তাদের পায়ের শব্দগুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো।

    তারা যদিও শপথ করেছিলো যে তারা কখনো আর পিরামিডের ভেতর প্রবেশ করবে না। কিন্তু দু টা ঋতু পার হওয়ার পর তারা উপলব্ধি করতে পারলো যে, তারা পিরামিড ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। বাঘ যেমন একবার মানুষের রক্ত মাংসের স্বাদ পেলে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারাও পিরামিডের ভেতর সেই মমিগুলোর কাছে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে পড়লো। এবার তারা মাটি খোরার শাবল, অন্যান্য যন্ত্রপাতিসহ শরীরে এবং মুখে বিশেষ ধরনের মুখোশ পরে তাদের ত্বকে বিশেষ ধরনের তৈলাক্ত জিনিস মেখে পাথরের কফিনে রাখা মমির কাছে গেলো। যেনো মমি থেকে কোনো রাসায়নিক কিছু বের হয়ে তাদের ক্ষতি করতে না পারে।

    স্ত্রী পিরামিডটাকে পুরোপুরি নষ্ট আর অপবিত্র করার খবরটা তখনো আবিষ্কৃত হয় নি। যার ফলে তারা খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছিলো না।

    যখন তারা চিন্তা করলো যে, ডিডোফিরির পিরামিডটা নিয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ নেই কারণ পিরামিডটা দীর্ঘদিন অসম্পূর্ণ আর অযত্নে পড়ে আছে তখন পিরামিডের ভেতরের সম্পদ চুরির বিষয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস আরো অনেক গুণ বেড়ে গেলো।

    তাদের বাবা, তার বাবা তার বাবা এভাবে চৌদ্দপুরুষ ধরে তারা চুরি ডাকাতি আর কবরখুঁড়ে তার সম্পদ হস্তগত করার পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। রাজনীতিতে তারা কখনো মনোযোগ দেয় নি। কেবল তাই নয়, এ ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহও ছিলো না। খুব বেশি হলে কখনো কখনো তারা সরাইখানায় কফি খেতে খেতে রাজকীয় কিছু বিষয়ে এমনিতেই খোশগল্পে মেতে উঠতো। এর বেশি কিছু না। মাঝে মাঝে তারা এর তার কাছ থেকে শুনতে পেতো যে এই ফারাও ডিডোফিরি ছিলো ফারাওদের মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত। যদিও তারা সবাই এখন সম্মানিত পিরামিডগুলোর ভেতর মমি হয়ে শুয়ে আছে। এই যে সবচেয়ে সম্মানিত ফারাও কী আছে তার এখন, শুধু শরীরের ভষ্ম ছাড়া।

    মহাকালের এই পরিবর্তনের ঢেউ এই ডাকাত দলকে স্পর্শ করে না। এই বিষয়গুলো তাদের কাছে কেবল হাস্যকর মনে হয়।

    এক মিচমিচে আঁধার কালো রাতে মরুভূমির দস্যুদল পিরামিডের গোড়ায় আবার একত্রিত হলো। তারা সময় নষ্ট না করে পাথর উঠিয়ে পিরামিডের ভেতর ঢোকার গোপন পথটা বের করতে থাকলো। এবার কাজটা করতে তাদের বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। গোপন পথ বের করতে গিয়ে তাদের অনেকগুলো পাথর সরাতে হয়েছিলো।

    অবশেষে তারা যখন ভেতরে ঢোকার সিঁড়ির পথটা খুঁজে পেয়েছে ততোক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। ভেতরে ঢোকার পর এখন তাদের সবচেয়ে কঠিন কাজটা করতে হচ্ছিলো। তারা মমিগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে মমির কফিন খোলার আগে তাদের মুখগুলো বিশেষ ওষুধ মিশ্রিত সেই কাপড় দিয়ে ঢেকে নিলো। শুধু তাদের চোখ দুটো খোলা রাখলো। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলো।

    তারপর সবাই যখন মমির কফিনের চারপাশে নানা রকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্বর্ণালংকার গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলো তখন এক চক্ষু ডাকাতটি একটা খোলা কফিনের উপর ঝুকে পড়ে কি যেনো দেখছিলো। ডাকাত দল নেতা ব্রোনজিজো প্রথম বিষয়টা লক্ষ্য করলেন। ‘হেই তুমি আবার এখন এই মমিটার উপর উঠে কী করছো?’ সে বললো।

    ‘এদিকে এসে দেখে যাও। এক চক্ষু বললো।

    তারা সবাই কাছে এসে দেখলো এক চক্ষু হাত দিয়ে মমির মুখ থেকে সুতো দিয়ে পেচানো কাপড় খুলতে শুরু করেছে।

    তুধালি আর মশাল হাতে যে লোকটা ছিলো তারা ঘৃণায় মুখ কুচকে ফেললো।

    ‘দেখ, শুধু এই চিহ্নটার দিকে তাকাও।’ এক চক্ষু ফিসফিস করে বললো। ‘তুমি দেখতে পাবে এ লোকটাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।

    ‘হিম-ম-ম।’ ব্ৰনজিজো বললো। ‘তুমি ঠিকই বলেছো। এর গলাটা মুরগির গলার মতো পেচিয়ে রাখা হয়েছে।

    ‘কী? তুমি কী বললে?’ মশাল হাতের লোকটা ঔৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। তার চোখে কেবল জানার বিস্ময়।

    ‘আমরা কী নিয়ে কথা বলছি?’ তুধালি প্রতি উত্তরে বললো। ‘একজন ফারাওকে এখানে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।’

    ব্রনজিজো এবার মেঘশীতল চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বললো, “কেন এখন, আমরা শুধু দস্যু ছাড়া আর কিছুই না। এটা অনেক উঁচু রাজনৈতিক বিষয়। এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা আমাদের কাজ নয়। ঠিক আছে। হেই তুমি।’ সে এক চক্ষুকে সম্বোধন করে বললো, ‘এটা তোমারও কাজ নয় যে তুমি বসে বসে ফারাও এর গলা পরীক্ষা করবে। তোমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে না। ঠিক আছে?’

    ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’ এক চক্ষু বললো। ‘তোমাকে আর চিৎকার করতে হবে না। তুমিতো চিৎকার করে পিরামিড ভেঙে ফেলবে।’

    ‘আমি ওখানে যদি যেতে চাই তাহলে অবশ্যই চিৎকার করে কথা বলব। তোমাকে একটা বিষয় বুঝতে হবে যে আশপাশে অনেক সৈন্য আর সরকারি লোকজন রয়েছে। তারা যদি আমাদের পায় তাহলে কুচি কুচি করে কাটবে। আর একটা বিষয় রাজনীতি নিয়ে আমার সাথে কোনো কথাবার্তা বা আলোচনা চলবে না। তুমি রাজনীতির কি পরিণতি ইতোপূর্বে দেখেছো। আমি কি বিষয়টা পরিষ্কার করতে পেরেছি?’

    ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমরা এখন তোমার কথা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।’ এক চক্ষু বললো।

    তারা যখন বের হয়ে এলো তখন ঘন অন্ধকার হয়ে গেছে। আকাশে নক্ষত্ররাজি ঝিকিমিকি করে জ্বলতে লাগলো। তারা তাদের মুখোশগুলো পিরামিডের ভেতর রেখে সারি বেঁধে বের হয়ে আসছিলো। বাইরে খুব ঠাণ্ডা ছিলো। তুধালি যে পায়ের ছাপ ফেলে হাঁটার মধ্যে দক্ষ ছিলো সে হাঁটতে হাঁটতে তার অন্যান্য সাথীদের পায়ের চিহ্নগুলো মুছে ফেলছিলো।

    সে ইতোপূর্বে যে কথাগুলো শুনলো তা কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না।

    ‘ফারাওকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। সে বিড় বিড় করে বলছিলো।

    দিনের শুরুতে তারা আবার সেফরানের পিরামিডের ভেতর ঢুকলো। সিংহ মূর্তিটি তখনো অন্ধকারের চাঁদর গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে ছিলো। দিনের নিভু নিভু আলোতে শুধু এর কেশরাশিগুলো ঝিক ঝিক করছিলো। সে দৃশ্য ছিলো সত্য অদ্ভুদ।

    দস্যুদলটি খুব দ্রুত পা চালিয়ে সিংহমূর্তিটি অতিক্রম করছিলো। তারা কিছুতেই সিংহমূর্তিটির স্থির দৃষ্টির দিকে তাকাতে চাচ্ছিলো না। কারণ লোকেরা বলে স্কিনিংস নাকি মানুষের চেতনাকে আচ্ছাদিত করে ফেলে।

    এক চক্ষু লোকটা তখন সবার পেছনে হেঁটে হেঁটে আসছিলো। তার মনে হচ্ছিলো যে, মাথার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। সে মমির ঘার উল্টানো দৃশ্যটা কিছুতেই মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে পারছিলো না। এগুলো নিশ্চই আবার তার ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন হয়ে আসবে। বার বার মনের অজান্তে ভেসে উঠবে।

    সে শেষবারের মতো আবার স্কিনিংসের দিকে চোখ তুলে তাকালো। সকালের সূর্যটা এখন এর চোখের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। তাদের শূন্য চোখগুলো তাকে কেমন অসাড় করে দিচ্ছে। এ প্রথম সে এ রকম কোনো অনুভূতির সামনে পড়লো।

    তার ইচ্ছে করলো চিৎকার করে বলতে, “স্কিনিংস তুমি আমার ভাইদের সাথে কী করেছো? তুমি তাকে কীভাবে হত্যা করেছো?

    কিন্তু তার কণ্ঠের স্বর বুকের ভেতর জমাট বেঁধে রইলো। সে কিছু বলতে পারলো না। নিশ্চুপ, অসহায়ের মতো কেবল নিজের অজান্তে প্রশ্নের বাণ ছুঁড়লো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সি-হক – রাফায়েল সাবাতিনি
    Next Article জেমস বন্ড সমগ্র – ইয়ান ফ্লেমিং
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.