Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দ্য পিরামিড – ইসমাঈল কাদরী

    ইসমাঈল কাদরী এক পাতা গল্প137 Mins Read0

    কাউন্টার পিরামিড

    প্রথম আক্রমণটা আসল ডিসেম্বরের এক পড়ন্ত দুপুরে।

    আকাশের অজানা উত্তর প্রান্ত থেকে নেমে এলো এক আলোর ঝলক। কারণটা কেউ বুঝতে পারলো না। একেবারে সর্বশেষ মুহূর্তে বজ্রটি দুভাগে বিভক্ত হয়ে মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়লো। তারা যেনো সত্যিকারে পরাজয় বরণ করেছিলো।

    স্বর্গবাসীর সাথে পিরামিডের গভীর একটা সন্ধি রয়েছে এটা ভেবে অনেকেই প্রগাঢ় আনন্দ অনুভব করলো। অথচ একটা ব্যাপারে কেউ সতর্ক ছিলো না যে স্বর্গবাসীরা যা করতে পারে নি পিরামিডের সাথে মর্ত্যবাসীরা ইতোমধ্যে সেটা করে

    সেটা করে ফেলেছে। তারা পিরামিডের অভ্যন্তরে ঢুকে গোয়েন্দাগিরি করেছে এবং যা পেয়েছে চুরি করে নিয়ে গেছে। পিরামিডের ভেতরের অনেক কিছু এখন তাদের হাতে।

    পিরামিডের ভেতর ডাকাতি হয়েছিলো বেশ কয়েক বছর আগে। খুব সাবধানে চুরির সকল নিদর্শন চিহ্নসমূহ মুছে ফেলা হয়েছিলো। ফলে প্রাথমিকভাবে কেউ তেমন কোনো চিহ্ন খুঁজে পায় নি। হতে পারে সত্য কখনোই প্রকাশিত হবে না। এমন কি এ নিয়ে লেখকদের কিছু লেখার আশাও করা যাবে না। তারা কোনো কিছু এ ব্যাপারে ভাববে না। তাদের সে অধিকার নেই।

    ঠিক এ সময়ে একদল সুপণ্ডিত লেখক এই অভিযোগে গ্রেফতার হলো যে তারা বেশ কিছু নিষিদ্ধ ঐতিহাসিক বিষয় এবং প্রাসাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করছে। এ নিয়ে গবেষণা করছে লেখালেখি করছে। সবাই ধারণা করলো এই অপরাধে হয়তো তারা কোনো বিচারের সম্মুখীন হবে। তাদের সাজা হবে।

    তাদেরকে ধরে আনা হলো। তারা ইতিহাসের অনেক কথা জানে। আর তাই তাদের বিশেষ বিচারের ব্যবস্থা করা হলো। তারা চালাকি ও কৌশলেও পারদর্শী। তারা সমাজের উঁচু শ্রেণির অনেক মানুষের অনেক কিছু জানে। এ বিষয়ে তাদের ধারণা রয়েছে।

    খুব বাজে একটা সময়ে শিক্ষিত সমাজের মধ্যে বজ্রপাতের মতো একটা খবর ছড়িয়ে পড়লো যে ঐতিহাসিক বিষয়গুলো এখন আর কোনো রাজকীয় বা বুদ্ধিদীপ্তিক বিষয় নয়। এখন এ বিষয়গুলোও চুরি হচ্ছে। মানুষ এ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।

    লোকজন এই প্রথমবারের মতো শুনতে পেলো যে মমির শরীরের পেচানো কাপড়গুলো খোলা হয়েছে এবং এটাকে অপবিত্র করা হয়েছে। শয়তানের পিরামিডের ভেতর ঢুকে এর মমিগুলোকে অশুচি করেছে।

    সবাই বড় কোনো ধরনের পাপের ফলে বিপর্যয়ের শঙ্কায় ভুগছিলো। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকেই চুরি করা হলো।

    সত্যিকার অর্থে অনেকেই পুরো বিষয়টা বিশ্বাসই করতে পারছিলো না। তাহলে মিশরীয় ঐতিহাসিকরা সত্যি সত্যি শাবল, খুন্তা, কোদাল নিয়ে তাদের কৌতূহল দমানোর জন্য মরুভূমির গভীরে পিরামিডের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। এটাও কি সম্ভব। তবে আস্তে আস্তে ধোয়াটে এই পুরো ঘটনাটা পরিষ্কার হতে শুরু করলো। পিরামিডের অভ্যন্তরে কোনো চুরি হয়েছে কিনা এ বিষয়টা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা দল আবিষ্কার করলো যে পিরামিডের ভেতরে শুধু গোপন পথগুলোই খোলা হয় নি বরং এর অভ্যন্তরে পাথরের যে কফিনটা ছিলো সেটাকেও উন্মুক্ত করা হয়েছে। তারা দস্যুদের ব্যবহৃত নানা রকম মুখোশের অস্তিত্বও খুঁজে পেলো।

    তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, দস্যুদল মমিগুলো যেখানে ছিলো সেখানেই রেখে গেছে। মমিও যে দস্যুদের লক্ষ্য বস্তু হতে পারে এ বিষয়টা চিন্তা করে লোকজন ভয়ে শিহরিত হয়ে উঠছিলো। কেউ ঠিক মতো বলতে পারলো না আসলে ডাকাত দল মমিগুলোকে নিয়ে কী করতে চেয়েছিলো।

    কেউ কেউ ধারণা করলো তারা মমিগুলো বর্ববরদের মতো পুড়িয়ে ফেলতে চাইছিলো। আবার কেউ ধারণা করলো দস্যুদল মমিগুলোকে উত্তরের দূর দেশে নিয়ে এগুলো নিলামে উঠিয়ে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করেছিলো।

    সব কিছু ছাপিয়ে মানুষের কৌতূহল এখন কবে এ ষড়যন্ত্রের মূল উদঘাটন করা হবে। কবে সেটা আলোর মুখ দেখবে।

    গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মানুষের মুখে মুখে যে সব গুজব ছড়িয়ে পড়ছিলো তা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগের মাঝে ছিলো। বিশেষ করে এ প্রাসাদের আভ্যন্তরীণ গোপন রহস্যের ব্যাপারটা হয়তো মানুষের কাছে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। একটা বিষয় নিয়ে তারা চিন্তা করছিলো যে কীভাবে প্রথম ফারাওদের মমি নিয়ে আর পিরামিডের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এরকম একটা খবর কীভাবে ছড়িয়ে পড়লো। যদিও বিষয়টা খুব স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছিলো। তাদের মিশন ছিলো নিরাপত্তা আর গোপনীয়তার মাঝেই।

    গোপন নিরাপত্তাবাহিনীর লোকেরা একদল পণ্ডিত লেখক ঐতিহাসিকের কাছ থেকে কিছু তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করলো যেখানে রাষ্ট্রের নতুন গোপন ইতিহাসের বিষয়ে অদ্ভুত কিছু ধারণা দেওয়া আছে। যেখানে পিরামিড বিষয়ে অজানা সব কথা লেখা আছে। রাষ্ট্রের ইতিহাস নিয়ে তাদের এ ধ্যান ধারণা কর্তৃপক্ষের চিন্তা ভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলো। যদিও মূল প্রাসাদে বিষয়টাকে জানানো হয়েছিলো কিন্তু কেউ তেমন একটা গুরুত্ব দেয় নি। যার ফলে সব কিছু কেমন ভাসা ভাসা রয়ে গেলো। কিন্তু এর পরেও বিশেষ গাছের পাতায় লিখিত অনেকগুলো চিঠিতে ফারাও মেকিরিনোসকে নতুন এ বিপদ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিলো। চিঠিগুলো পরিমাণে অনেক বেশি ছিলো যে সুমেরিয়ানদের মতো যদি এগুলোকে পাথর খণ্ডে লেখা হতো তাহলে অনেকগুলো মহিষের গাড়ি লাগতো এ চিঠিগুলোকে বহন করার জন্য।

    বিষয়টা ফারাও মেকেরিনোসের কাছে পৌঁছার পর সবাই একটু নড়ে চড়ে বসলো। কারা এই ঐতিহাসিক যারা পিরামিড আর রাষ্ট্রের ইতিহাস নিয়ে ফারাওদের মৃত্যু খবর আর তাদের মমি নিয়ে অদ্ভুত সব রটনা আর ইতিহাস লিখে চলছে। তাদের পরিচয়টা কী? তারা কারা?

    গোয়েন্দাদের একটা দল সমস্ত খোঁজ খবর সংগ্রহ করে অবশেষে এক সকালে সন্দেহভাজন ঐতিহাসিকদের গ্রেফতার করলো।

    তাই আর দেরি করা হলো না। তাদের গ্রেফতার করেই সরাসরি তথ্যানুসন্ধানের কাজে কর্তৃপক্ষ নেমে পড়লো। গোয়েন্দা সংস্থা তরুণ এই ঐতিহাসিকদের প্রথম যে বিষয়টা উদ্ধার করতে চাইলো সেটা হলো তারা কোত্থেকে প্রথম রাজপ্রাসাদের এবং রাষ্ট্রের এই আভ্যন্তরীণ ইতিহাস সংগ্রহ করেছে।

    অনেক রকমের ভয়াবহ শাস্তি দেওয়ার পর তারা স্বীকার করলো যে তারা পিরামিড আর ফারাও-এর মমির বিষয়ে অতি গোপন খবরগুলো সর্বপ্রথম পেয়েছে একদল দস্যুদের কাছ থেকে। এ দস্যুদল পিরামিডের ভেতর গুপ্ত সম্পদ চুরি করতে গিয়েছিলো। তাদের সাথে কথা বলার পরই তারা নতুন এই তথ্যগুলো পায়। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদেরকে আরো বিস্তারিত জিজ্ঞেস করলে তারা অপারগতা প্রকাশ করে। তখন তাদের উপর নেমে আসে আরো কঠিন এবং ভয়াবহ শাস্তি। এক সময় তারা একজন ডাকাতের নাম স্বীকার করে যে পিরামিডের অভ্যন্তরে ফারাও-এর মমি খুলে দেখেছিলো এবং ফারাও এর গলার মধ্যে আঘাত জনিত কারণে মৃত্যুর চিহ্ন দেখেছিলো। সে ডাকাতের নাম হলো আবদেল গোরনা। যাকে সবাই এক চক্ষু বলে চেনে। কারণ তার একটা চোখ অনেক আগে থেকেই নষ্ট ছিলো। তাকে যখন গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো তখন সে কিছুতেই স্বীকার করছিলো না। একবার সে বললো যে, ফারাও ডিডাফুরির মমির গলায় সে আঘাতের চিহ্ন দেখেছে স্বপ্নে। কিন্তু অবশেষে সে বাধ্য হলো সব কিছু স্বীকার করতে।

    তাকে সাথে করে নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা পিরামিডের ভেতর চলে গেলো। তারা সেখানে দস্যুদের ব্যবহৃত বিশেষ রাসায়নিক মুখোশের চিহ্ন দেখতে পেলো। তারা আরো দেখতে পেলো যে পাথরের তৈরি মমি রাখার কফিনের ডালাটার মুখ খোলা। তারা যখন আরো নিবিড়ভাবে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলো তখন হঠাৎ করেই জরুরিভাবে প্রাসাদের প্রধান বার্তাবাহক সম্রাটের কাছ থেকে নির্দেশ নিয়ে এলো যে তদন্তের আর দরকার নেই। এই তদন্ত নিষ্প্রয়োজনীয়।

    এর পরই ঘটে গেলো আচানক ঘটনা। রহস্যের নতুন এক পর্দা উন্মোচিত হলো। অধিকাংশ সময় দেখা যায় সত্যকে যতোই চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় সেটা এক সময় ঠিকই বের হয়ে আসে। ঐতিহাসিকদের ধ্যান-ধারণায় চিন্তায়-চেতনায় যে বিষয়টা ঘুরপাক খায় সেটা হয়ে ওঠে সর্বসাধারণের মনের কথা। তদন্ত কমিটি ঐতিহাসিকদের দলিলপত্র আর দস্যুদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে আরো নানা রকম তথ্য খুঁজে পেলো। তারা দেখলো যে ফারাও এর মমির গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন, শরীরে ছুরির আঘাতের চিহ্ন। তারা ফারাও রাজত্বের রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরের রাজনীতির নতুন এক পর্দা সবার সামনে খুলে দিলো। তাদের এ সমস্ত তদন্তের ফলাফল থেকে যদি কোনো ইতিহাস গ্রন্থ লেখা হয় তাহলে তার নাম হবে ‘মমিদের দিয়ে সঠিক ইতিহাসের উন্মোচন, অথবা, সাধারণভাবে মমির ইতিহাস, কিংবা নতুন ইতিহাস।

    এ ঘটনার পর বাতাসে কেমন একটা চাপা আর অশুভ ভাব ভেসে বেড়াচ্ছিলো। অপরাধি সেই ঐতিহাসিকগণ আর এক চক্ষু ডাকাত এল্ গোরনা মারা গেছে অনেক দিন হয়। কিন্তু তারা যে বিষয়টার উদ্ভব ঘটিয়ে দিয়েছিলো তার আলোচনা চলছিলো দীর্ঘ দিন। তুমি ইতোপূর্বে তার পিরামিড আর মমি নিয়ে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের বিষয়ের এ আলোচনার মতো অন্য কোনো আলোচনা পাবে না যেটা মতো বেশি জায়গায় পুনরাবৃত্তি হয়েছে যে এর আগে আর অন্য কিছুই সে রকম হয় নি।

    রাতের বেলা লোকেরা এখানে সেখানে বিভিন্ন জনের সাথে বচসা করে বেড়ায়। গল্প গুজব করে। পিরামিড নিয়ে নানা মুখরোচক বাণী ছড়িয়ে দেয়। এ সব কিছুই হয়েছিলো সেই ডাকাতি, আর পিরামিডের কারণে। পিরামিডের সাথে মিশরের ভবিষ্যৎ, এর খ্যাতি সুখ্যাতি, পিরামিডের অভিশাপ ইত্যকার নানা বিষয় নিয়ে লোকজন তর্ক-বিতর্ক করতো। ঘুরে ফিরে আসতো পিরামিডের কথা।

    ‘বোঝার চেষ্টা করো।’ লোকজন বলাবলি করতো যারা সব সময় রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলতে অভ্যস্ত ছিলো। পিরামিড নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করতে পারে এটাও কি সম্ভব? এ পিরামিড হলো মিশরের প্রাণ। এর জন্যই মিশর আজকে এ অবস্থানে আসছে। পিরামিড ছাড়া মিশরকে কখনোই মিশর বলে ডাকা সম্ভব ছিলো না।’

    যারা পিরামিডকে নিয়ে সন্দেহ করতো প্রতিউত্তরে তারা বলতো যে পিরামিডের অনেক আগেই মিশরের গোড়া পত্তন হয়েছে। তোমার কি মনে হয় এই যে গ্রিক, ব্যাবিলন, ট্রোজেন এদেরকি উন্নতির জন্য পিরামিডের দরকার পড়েছে?’ পিরামিড কী করেছ এদের জন্য?

    ‘সাবধান, আস্তে কথা বলো। তুমি প্রিয় মাতৃভূমিকে দুষ্ট রাষ্ট্রগুলোর সাথে তুলনা করছো। তোমার উচিৎ এ ধরনের কথা বলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।’

    শুধু তাই না, সময় যতো গড়াতে লাগলো পিরামিড নিয়ে ততোই মানুষের সংশয় সন্দেহ বাড়তে লাগলো। কেউ কেউ এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে শুরু করলো। কেউ কেউ অলিক সব কল্পনা আর ভাবনা জুড়ে দিতে শুরু করলো পিরামিডকে নিয়ে। কারো কারো মতে, এটা একদিন বাতাসে মিলিয়ে যাবে, কেউ বলে পিরামিড থেকে অদ্ভুত সব দৃশ্য আর আকার আকৃতি বের হয়ে আসছে যা ইতোপূর্বে দেখা যায় নি। বিষয়টা শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়ালো যে মানুষ · সকালে ঘুম থেকে উঠে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে দেখে পিরামিডগুলোর কী অবস্থা। আসলেই সেগুলো আছে কিনা। না কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে।

    পিরামিড নিয়ে সবাই এতোবেশি চিন্তা করতে শুরু করলো যে এক সময় তারা বলা শুরু করলো, পিরামিড ছাড়া কি মিশরের অস্তিত্ব টিকে থাকবে। নাকি শেষ হয়ে যাবে। ইতিহাস রচিত হবে এর।

    লোকজন পিরামিড বলতো ঠিকই কিন্তু তারা মূলত এ পিরামিড বলে ফারাওদের বোঝাতে চাইতো। তারা সরাসরি লাগামহীনভাবে এক সময় ফারাওদের রাজত্বকে দোষারোপ করা শুরু করলো। বিশেষ করে বর্তমান যে ফারাও তার সময়টাকে নয় বরং ফারাও চিওপসের রাজত্বকালীন সময়টাকে নিন্দা করতে থাকলো যখন সবচেয়ে বড় পিরামিডটা তৈরি হয়েছিলো। সে সময়।

    চিওপসের সময়কালে তার রাজত্ব আর চিওপসের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে তাকে আবার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছিলো। লোকজন লোকজন তাই বলাবলি করতো যে এটা হয়তো হচ্ছিলো পররাষ্ট্র কূটনীতিকদের প্রভাবের কারণে কিংবা ফারাও চিওপসের পিরামিডটা ছিলো সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। যার ফলে তার প্রতি ঈর্ষাবশতও এমনটা ঘটতে পারে। তবে ঘটনা যাই হোক চিওপসকে বাদ দিয়ে লোকজন এখন তার স্মৃতিস্তম্ভ পিরামিড নিয়ে নানা রকম কথা-বার্তা চালাচালি করছিলো। সে কথার কোনো কুলকিনারা ছিলো না।

    মিশরের এ মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত নানা রকমের গুঞ্জনে একটা নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছিলো। পিরামিড নিয়ে অতীতের বেদনাতুর স্মৃতিকথা, নানা রকম দুঃখ কষ্টের কাহিনী বলতে বলতে মানুষ অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলো। তারা কষ্ট অনুভব করছিলো।

    ‘তারা যখন পিরামিডটা তৈরি করছিলো আমি তখন একেবারেই বিবস্ত্র নিঃস্ব। আমি আমার এই দুই খোলা হাতে তাদের সাথে কাজে লেগে পড়লাম। আমি আঠারো নাম্বার স্তরে দুই হাজার আটশো পাথর ওঠা-নামার কাজ করেছিলাম।’

    আরেকজন তার অভিজ্ঞতার কথায় বললো যে, তারা ঊনপঞ্চাশ নম্বর স্তরে কি অমানুষিক পরিশ্রম করে কাজ করেছে।

    মেম্ফিস শহরের মাঝামাঝি জায়গায় একটি পানশালায় এক কবি বসে বসে চিওপসের বিরুদ্ধে একটা কবিতা লিখলো। তার নাম আমেন হেরোনেম, বয়সের ভারে সে ক্লান্ত। চোখের পাতা অশ্রুশিক্ত। সে পানশালায় বসে তার কবিতা আবৃত্তি করতে থাকলো :

    আমি দেখলাম একটা বাজ পাখিকে ডানা মেলে উড়ছে আকাশে

    ঘুরে ঘুরে সে কাঁদছে, আর অশ্রুপাত করছে।

    ‘আমি যখন ভেবেছিলোাম আমাকেও যেতে হবে পিরামিড তৈরিতে তখন এটা ভেবে আমি প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। কী হবে আমার স্ত্রী সন্তানদের। তুমি কি অন্যান্যদের দেখেছিলে কীভাবে তারা তখন মাথা নত করে রেখেছিলো। বিশেষ করে নিবোনেফকে!’

    পানশালার এই ভীড়ের মধ্যে একজন শ্রোতা যে মনে করার চেষ্টা করছিলো যে নিবোনেফকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো কারণ এই কবি আমেনহেরোনেম তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ তুলেছিলো। এখন সে এই পাগল মতিভ্রম কবিকে আবার সেই কথাটা মনে করিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু কেমন একটা সংশয় তাকে পেয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর সে আবার শুনতে পেল কবির লাইনগুলো, একটি বাজ পাখি ডানা মেলে’…

    তখন সে নিজের মনকে বোঝাতে লাগল এই বলে যে কুকুরে কুকুরের মাংস খায়, তাতে আমার কী?’

    একই রকম দৃশ্য প্রায় প্রতিটি পানশালায় আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছিলো। যে লোকগুলো চিওপসের সময় ঘোষণা করেছিলো যে আমরা নির্দোষ আর আমরা ফারাও এর প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত তারাই আজ বলছে, আমরা অত্যাচারিত, আমরা পিরামিডের পতন চাই।’

    অনেক দূর প্রদেশ থেকে আগত লোকেরা তথ্য দিতে থাকলো যে কোনো পাথরখাদ থেকে পিরামিডের জন্য পাথর আনা হয়েছিলো আবার কোথায় পিরামিডের ঠিক কোন জায়গাটায় তাদের প্রিয় লোকগুলো কাজ করতে গিয়ে হারিয়ে গেছে।

    ধর্মীয় পুরোহিতদের কাছে রক্ষিত দলিলপত্রগুলো যেনো বারবার চিৎকার করে বলছিলো, ‘আমরা চাই জাতীয় বিষয়গুলো যেনো গোপন না থেকে প্রকাশিত হয়।’

    যার ফলে সবাই আবার প্রতিশোধ নেবার জন্য একই সময়ে প্রস্তুতি নিতে থাকলো।

    এ পিরামিডের জন্য আমাদের অনেক দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছে। আমরা এর থেকে কখনো বের হতে পারব না।’ একটা বুড়ো হাত উচিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।

    লোকজন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো, পিরামিড তৈরি নিয়ে অনেকে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা, দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে বলতে বুক চাপড়ে এগোতে লাগলো। অনেকে পানশালা থেকে মদ্যমাতাল হয়ে গান গাইতে লাগলো,

    তুমি যখন বিকিয়ে দিলে আমাকে সাত নম্বর সারিতে
    তোমার হৃদয় নিশ্চই তখন আনন্দে নাচছিলো
    তুমি বুড়ো বেশ্যা।

    এ সব খবরগুলোই ফারাও মেকেরিনিউসের কাছে পৌঁছাচ্ছিলো। মানুষের দাবী ক্রমশই খারাপ একটা পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। গোয়েন্দারা এখানে সেখানে কান পেতে সবার কথা শুনে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নিচ্ছিলো। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির এক চুলও উন্নতি হলো না।

    এক সকালে এক ব্যক্তি ফারাও এর কাছে ছুটে আসলো। সে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা স্বপ্ন দেখেছে। সে দেখেছে ফারাও চিওপসের পিরামিডটা বরফে ঢেকে যাচ্ছে।

    এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার কেউ সাহস করলো না। কারণ সকলেই বরফকে ভয় পায়। ফারাও মেকেরিনিউস বিষয়টা নিয়ে নিজেও চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

    এটা পরিষ্কার হচ্ছিলো যে পিরামিড অন্য জগতের সাথে সম্পর্ক করছে। এটা বরফকে আচ্ছাদিত করেছে ভয়ের সাথে। এটা কেবল এখানে সেখানে ভ্রমণ করে ফিরছে। আর এটা খুবই দীর্ঘ সময়।

    তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না এই স্বপ্নটা কি সুলক্ষণ না কুলক্ষণ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সি-হক – রাফায়েল সাবাতিনি
    Next Article জেমস বন্ড সমগ্র – ইয়ান ফ্লেমিং
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.