Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – আরিফ আজাদ

    লেখক এক পাতা গল্প165 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্রষ্টা কি এমন কিছু বানাতে পারবে যেটা স্রষ্টা নিজে তুলতে পারবে না

    ছুটির দিনে সারা দিন রুমে বসে থাকা ছাড়া আমার আর কোন কাজ থাকেনা। সপ্তাহের এই দিনটি অন্য সবার কাছে ঈদের মতো মনে হলেও আমার কাছে এই দিনটি খুবই বিরক্তিকর। ক্লাশ, ক্যাম্পাস, আড্ডা এসব স্তিমিত হয়ে যায়।

    এই দিনটি আমি রুমে শুয়ে-বসে, ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলেও, সাজিদ এই দিনের পুরোটা সময় লাইব্রেরীতে কাটিয়ে দেয়। লাইব্রেরীতে ঘুরে ঘুরে নানান বিষয়ের উপর বই নিয়ে আসে।

    আজ সকালেও সে বেরিয়ে গেছে লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে। ফিরবে জুমার আগে। হাতে থাকবে একগাদা মোটা মোটা বই।

    বাসায় আমি একা ভাবলাম একটু ঘুমাব। অনেক রাত পর্যন্ত বসে বসে অ্যাসাইনমেন্ট রেডি করেছি। চোখদুটো জবা ফুলের মতো টকটকে লাল হয়ে আছে। আমি হাই তুলতে তুলতে যেই ঘুমোতে যাবো, অমনি দরজার দিকে থেকে কেউ একজনের কাশির শব্দ কানে এলো।

    ঘাড় ঘুরিয়ে সে দিকে তাকাতেই দেখলাম, একজন বড় বড় চোখ চশমার ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আগাগোড়া চোখ বুলিয়ে নিলাম। পরনে শার্ট-প্যান্ট, চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। লোকটার চেহারায় সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ‘ফেলুদা’ চরিত্রের কিছুটা ভাব আছে। লোকটা আমার চোখাচোখি হতেই পিক করে হেসে দিল। এরপর বললো, -‘এটা কি সাজিদের বাসা?’

    প্রশ্নটা আমার গায়ে লাগলো। সাজিদ কি বাইরের সবাইকে এটাকে নিজের একার বাসা বলে বেড়ায় নাকি? এই বাসার যা ভাড়া, তা সাজিদ আর আমি সমান ভাগ করে পরিশোধ করি। তাহলে চুক্তি মতে বাসাটা তো আমারও।

    লোকটা যতটা উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করেছে, তার দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে আমি বললাম, -‘এটা সাজিদ আর আমার দু জনেরই বাসা।’

    লোকটা আমার উত্তর শুনে আবারো পিক করে হেসে দিল। ততক্ষনে লোকটা ভিতরে চলে এসেছে।

    সাজিদকে খুঁজতে এরকম প্র্যায়ই অনেকেই আসে। সাজিদ রাজনীতি না করলেও, নানারকম স্বেচ্ছাসেবী মূলক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছে।

    লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, -‘সাজিদ মনে হয় ঘরে নেই, না?’

    আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, -‘জি না। বই আনতে গেছে। অপেক্ষা করুন, চলে আসবে।’

    লোকটাকে সাজিদের চেয়ারটা টেনে বসতে দিলাম। তিনি বললেন, -‘তোমার নাম?’

    -‘আরিফ।’

    -‘কোথায় পড়ো?’

    -‘ঢাবি তে।’

    -‘কোন ডিপার্টমেন্ট?’

    -‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’

    লোকটা খুব করে আমার প্রশংসা করলো। এরপর বলল, -‘আমি প্রথম ভেবেছিলাম তুমিই সাজিদ।’

    লোকটার কথা শুনে আমার ছ নম্বার হাঁইটা মুহূর্তেই মুখ থেকে গায়েব হয়ে গেল। ব্যাপারটা কি? এই লোক কি সাজিদ কে চিনে না?

    আমি বললাম, -‘আপনি সাজিদের পরিচিত নন?’

    -‘না।’

    -‘তাহলে?’

    লোকটা একটু ইতঃস্তত বোধ করলো মনে হচ্ছে। এরপর বলল, -‘আসলে আমি একটি প্রশ্ন নিয়ে এসেছি সাজিদের কাছে। প্রশ্নটি আমাকে করেছিল একজন নাস্তিক। আমি আসলে কারো কাছে এটার কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাইনি, তাই।’

    আমি মনে মনে বললাম, -‘বাবা সাজিদ, তুমি তো দেখি এখন সক্রেটিস বনে গেছো।

    পাবলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তোমার দ্বারস্থ হয়।’

    লোকটার চেহারায় একটি গম্ভীর ভাব আছে। দেখলেই মনে হয় এই লোক অনেক কিছু জানে, বোঝে। কিন্তু কি এমন প্রশ্ন, যেটার জন্য কোন ফেয়ার এন্সার উনি পাচ্ছেন না?

    কৌতুহল বাড়লো।

    আমি মুখে এমন একটি ভাব আনলাম, যেন আমিও সাজিদের চেয়ে কোনো অংশে কম নযই। বরং তার চেয়ে কয়েক কাঠি সরেশ। এরপর বললাম, -‘আচ্ছা, কি সেই প্রশ্ন?’

    লোকটা আমার অভিনয়ে বিভ্রান্ত হলো। হয়তো ভাবলো, আমি সত্যিই ভালো কোন উত্তর দিতে পারবো।

    বললো, -‘খুবই ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন। স্রষ্টা সম্পর্কিত।’

    আমি মনে মনে তখনি প্রায় লেজেগোবরে অবস্থা। কিন্তু মুখে বললাম, -‘প্রশ্ন যে খুবই ক্রিটিক্যাল, সেটা তো বুঝেছি। নইলে ঢাকা শহরে এই জ্যাম-ট্যাম  মাড়িয়ে কেউ এত কষ্ট করে এখানে আসে?’

    আমার কথায় লোকটা আবারো বিভ্রান্ত হল এবং আমাকে ভরসা করলো। এরপর আমাকে বলল, -‘আগেই বলে নিই, প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ/না’ হতে হবে।’

    -‘আপনি আগে প্রশ্ন করুন, তারপর উত্তর কি হবে দেখা যাবে’ -আমি বললাম।

    -‘প্রশ্নটা হচ্ছে- স্রষ্টা কী এমন কোন কিছু বানাতে পারবে, যেটা স্রষ্টা উঠাতে পারবে না?’

    আমি বললাম, -‘আরে, এ তো খুবই সহজ প্রশ্ন। হ্যাঁ বলে দিলেই তো হয়। ল্যাটা চুকে যায়।’

    লোকটা হাসল। মনে হল, আমার সম্পর্কে ওনার ধারনা পাল্টে গেছে। এই মুহূর্তে উনি আমাকে গবেট, মাথামোটা টাইপ কিছু ভাবছেন হয়তো।

    আমি বললাম, -‘হাসলেন কেন? ভুল বলেছি?’

    লোকটা কিছু না বলে আবার হাসল। এবার লোকটা হাসি দেখে আমি নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। প্রশ্নটা আবার মনে করতে লাগলাম।

    স্রষ্টা কি এমন কোনো কিছু বানাতে পারবে, যেটা স্রষ্টা উঠাতে পারবে না।

    আবার চিন্তা করতে লাগলাম। উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে ধরে নিচ্ছি যে, জিনিসটা বানাতে পারলেও সেটা তুলতে পারবে না। আরে এটা কিভাবে সম্ভব? স্রষ্টা পারেনা এমন কোন কাজ আছে নাকি আবার? আর, একটা জিনিস উঠানো কি এমন কঠিন কাজ যে স্রষ্টা সেটা পারবে না?

    আবার চিন্তা করতে লাগলাম। উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে ধরে নিচ্ছি যে- স্রষ্টা জিনিসটা উঠাতে পারলেও বানাতে পারবে না।

    ও আল্লাহ ! কি বিপদ ! স্রষ্টা বানাতে পারবে না এটা কিভাবে সম্ভব? হ্যাঁ বললেও আটকে যাচ্ছি, না বললেও আটকে যাচ্ছি।

    লোকটা আমার চেহারার অস্থিরতা ধরে ফেলেছে। মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করলো। আমি ভাবছি তো, ভাবছিই।

    এর একটু পরে সাজিদ এলো। সে আসার পরে লোকটার সাথে তার প্রাথমিক আলাপ শেষ হলো। এর মাঝে লোকটা সাজিদকে বলে দিয়েছে যে, আমি প্রশ্নটার প্যাঁচে কিরকম নাকানী-চুবানী খেলাম, সেটা। সাজিদ আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হেসে নিল।

    এরপর সাজিদ তার খাটে বসলো। হাতে কি কাগজের ঠোঙার মধ্যে বুট ভাজা। বাইরে থেকে কিনে এনেছে। সে বুটের ঠোঙ্গাটা লোকটার দিকে ধরে বলল, -‘নিন, এখনও গরম আছে।’

    লোকটা প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েও করল না। কেন করলো না কে জানে।

    লোকটি সাজিদকে এবার তার প্রশ্ন সম্পর্কে বলল। প্রশ্নটি হল-

    ‘স্রষ্টা কি এমন কিছু বানাতে পারবে, যেটা স্রষ্টা নিজেই তুলতে পারবে না?’

    এই বলে লোকটা এবার প্রশ্নটিকে ভেঙ্গে বুঝিয়ে দিল। বলল, -‘দেখ, এই প্রশ্নের উত্তরে যদি ‘হ্যাঁ’ বলো, তাহলে তুমি ধরে নিচ্ছ যে, স্রষ্টা জিনিসটি বানাতে পারলেও তুলতে পারবে না। কিন্তু আমরা জানি স্রষ্টা সর্বশক্তিমান। কিন্তু, যদি স্রষ্টা জিনিসটি তুলতে না পারে, তিনি কি আর সর্বশক্তিমান থাকেন? থাকেন না।

    যদি এই প্রশ্নের উত্তরে তুমি ‘না’ বলো, তাহলে তুমি স্বীকার করছ যে, সেরকম কোন জিনিস স্রষ্টা বানাতে পারবেন না যেটা তিনি তুলতে পারবেন। এখানেও স্রষ্টার ‘সর্বশক্তিমান’ গুণটি প্রশ্নবিদ্ধ। এই অবস্থায় তোমার উত্তর কি হবে?’

    সাজিদ লোকটির প্রশ্নটি মন দিয়ে শুনল। প্রশ্ন শুনে তার মধ্যে তেমন কোন ভাব লক্ষ্য করিনি। নর্মাল।

    সে বলল, -‘দেখুন সজীব ভাই, আমরা কথা বলবো লজিক দিয়ে, বুঝতে পেরেছেন?’

    এরমধ্যে সাজিদ লোকটির নামও জেনে গেছে। কিন্তু এই বৃদ্ধ লোকটিকে সে ‘আঙ্কেল’ কিংবা ঢাকা শহরের নতুন রীতি অনুযায়ী ‘মামা’ না ডেকে ‘ভাই’ কেন ডাকলো? বুঝলাম না।

    লোকটি মাথা নাড়ালো। সাজিদ বলল, -‘যে মুহূর্তে আমার যুক্তির শর্ত ভাঙবো, ঠিক সেই মুহূর্তে যুক্তি আর যুক্তি থাকবে না। যেটা তখন হবে কু যুক্তি। ইংরেজিতে বলে Logical Fallacy সেটা তখন আত্মবিরোধের জন্ম দিবে, বুঝেছেন?’

    -‘হ্যাঁ’-লোকটা বলল।

    -‘আপনি প্রশ্ন করেছেন স্রষ্টার শক্তি নিয়ে। তার মানে, প্রাথমিকভাবে আপনি ধরে নিলেন যে, একজন স্রষ্টা আছেন, রাইট?’

    -‘হ্যাঁ’

    -‘এখন স্রষ্টার একটি অন্যতম গুন হলো- তিনি অসীম, ঠিক না?’

    -‘হ্যাঁ, ঠিক।’

    -‘এখন আপনি বলছেন, স্রষ্টা এমন কিছু বানাতে পারবে কিনা, যেটা স্রষ্টা তুলতে পারবে না। দেখুন, আপনি নিজেই বলেছেন, এমনকিছু আই মিন Something, রাইট?’

    -‘হ্যাঁ’

    -‘আপনি ‘এমনকিছু’ বলে আসলে জিনিসটার একটা আকৃতি, শেইপ, আকার বুঝিয়েছেন, তাই না? যখনই Something ব্যবহার করেছেন, তখন মনে মনে সেটার একটা শেইপ আমরা চিন্তা করি, করি না?’

    -‘হ্যাঁ, করি।’

    -‘আমরা তো এমন কিছুকেই শেইপ বা আকার দিতে পারি, যেটা আসলে সসীম, ঠিক?’

    -‘হ্যাঁ, ঠিক।’

    -‘তাহলে এবার আপনার প্রশ্নে ফিরে যান। আপনি ধরে নিলেন যে স্রষ্টা আছে। স্রষ্টা থাকলে তিনি অবশ্যই অসীম। এরপর আপনি তাকে এমন কিছু বানাতে বলছেন, যেটা সসীম। যেটার নির্দিষ্ট একটা মাত্রা আছে, আকার আছে, আয়তন আছে। ঠিক না?’

    -‘হ্যাঁ’

    -‘পরে শর্ত দিলেন, তিনি সেটা তুলতে পারবে না। দেখুন, আপনার প্রশ্নের লজিকটাই ঠিক নেই। একজন অসীম সত্ত্বা একটি সসীম জিনিস তুলতে পারবে না, এটা তো পুরোটাই লজিকের বাইরে প্রশ্ন। খুবই হাস্যকর না? আমি যদি বলি, উইসান বোল্ট কোনদিনও দৌড়ে ৩ মিটার অতিক্রম করতে পারবেনা। সেটা কি হাস্যকর ধরনের যুক্তি নয়?’

    সজিব নামের লোকটা এবার কিছু বললেন না। চুপ করে আছেন।

    সাজিদ উঠে দাঁড়ালো। এরমধ্যেই বুট ভাঁজা শেষ হয়ে গেছে। সে বইয়ের তাকে কিছু বই রেখে আবার এসে নিজের জায়গায় বসল। এরপর আবার বলতে শুরু করল-

    ‘এর প্রশ্নটি করে মূলত আপনি স্রষ্টার ‘সর্বশক্তিমান’ গুণটাকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করে প্রমাণ করতে চাইছেন যে, আসলে স্রষ্টা নেই।

    আপনি ‘সর্বশক্তিমান’ টার্মটি দিয়ে বুঝাচ্ছেন, যে স্রষ্টা মানে এমন এক সত্ত্বা, যিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, রাইট?’

    লোকটি বলল, -‘হ্যাঁ, স্রষ্টা মানেই তো এমন কেউ, কেউ যিনি যখন ইচ্ছা, তাই করতে পারেন।’

    সাজিদ মুচকি হাসলো। বললো, -‘আসলে সর্বশক্তিমান মানে এই না যে, তিনি যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সর্বশক্তিমান মানে হল- তিনি নিয়মের মধ্যে থেকেই সবকিছু করতে পারেন। নিয়মের বাইরে গিয়ে তিনি কিছু করতে পারেন না। করতে পারেন না বলাটা ঠিক নয়, বলা উচিত তিনি করেন না। এর মানে এই না যে, তিনি সর্বশক্তিমান নন বা তিনি স্রষ্টা নন। এর মানে হল এই -কিছু জিনিস তিনি করেন না, এটাও কিন্তু তার স্রষ্টা হবার গুণাবলী। স্রষ্টা হচ্ছেন সকল নিয়মের নিয়ন্ত্রক। এখন তিনি নিজেই যদি নিয়মের বাইরের হন -ব্যাপারটি তখন ডাবলস্ট্যান্ড হয়ে যায়। স্রষ্টা এরকম নন। তার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তিনি সেই বৈশিষ্ট্যগুলো অতিক্রম করেন না। সেগুলো হলো তার মোরালিটি। এগুলো আছে বলেই তিনি স্রষ্টা, নাহলে তিনি স্রষ্টা থাকতেন না।

    সাজিদের কথায় এবার আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম। -‘স্রষ্টা পারে না, এমন কি কাজ থাকতে পারে?’

    সাজিদ আমার দিকে ফিরল। ফিরে বলল, -‘স্রষ্টা কি মিথ্যা কথা বলতে পারে? ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারে? ঘুমাতে পারে? খেতে পারে?’

    আমি বললাম, -‘আসলেই তো।’

    সাজিদ বলল, -‘এগুলো স্রষ্টা পারে না বা করেন না। কারণ এগুলো স্রষ্টার গুণ এর সাথে কন্ট্রাডিক্টরি। কিন্তু এগুলো করে না বলে কি তিনি সর্বশক্তিমান নন? না। তিনি এগুলো করেন না কারন, এগুলো তার মোরালিটি সাথে যায় না।’

    এবার লোকটি প্রশ্ন করল, -‘কিন্তু, এমন জিনিস তিনি বানাতে পারবেন না কেন, যেটাতে তিনি তুলতে পারবেন না?’

    সাজিদ বলল, -‘কারন, স্রষ্টা যদি এমন জিনিস বানান, যেটা স্রষ্টা তিনি তুলতে পারবেন না- তবে জিনিসটাকে অবশ্যই তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে হবে। স্রষ্টা যে মুহূর্তে এরকম জিনিস বানাবেন, সে মুহূর্তেই তিনি স্রষ্টা হবার অধিকার হারাবেন। তখন স্রষ্টা হয়ে যাবে তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ঐ জিনিসটি। কিন্তু এটাতো স্রষ্টার নীতিবিরুদ্ধ।  তিনি এটা কিভাবে করবেন?’

    লোকটা বলল, -‘তাহলে এমন জিনিস কি থাকা উচিত নয়, যেটা স্রষ্টা বানাতে পারলেও, তুলতে পারবে না?’

    -‘এমন জিনিস অবশ্যই থাকতে পারে, তবে যেটা থাকা উচিত নয়, তা হলো এমন প্রশ্ন।’

    -‘কেন?’

    এবার সাজিদ বলল, -‘যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, নীল রঙের স্বাদ কেমন? কি বলবেন? বা, ৯ সংখ্যাটির ওজন কত মিলিগ্রাম, কি বলবেন?’

    লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো মনে হল। বলল, -‘নীল রঙের আবার স্বাদ কি? ৯ সংখ্যাটির ওজনই হবে কি করে?’

    সাজিদ হাসলো। বললো, -‘নীল রঙের স্বাদ কিংবা ৯ সংখ্যাটির ওজন আছে কি নেই তা পরের ব্যাপার। থকেতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তবে যেটা থাকা উচিত নয় সেটা হল, নিল রং এবং নয় সংখ্যাকে নিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন।’

    সাজিদ বলল, -‘ফাইনালি আপনাকে একটি প্রশ্ন করি। আপনার কাছে দুটি অপশন। হয় ‘হ্যাঁ’ বলবেন, নয়তো ‘না’। আমি আবার বলছি, হয় ‘হ্যাঁ’ বলবেন নয়তো ‘না’।’

    লোকটা বলল, -‘আচ্ছা।’

    -‘আপনি কি আপনার বউকে পেটানো বন্ধ করেছেন?’

    লোকটি কিছুক্ষণ চুপ মেরে চিল। এরপর বলল, -‘হ্যাঁ’

    এরপর সাজিদ বলল, -‘তার মানে আপনি একসময় বউ পেটাতেন?’

    লোকটা চোখ বড় বড় করে বলল, -‘আরে, না, না।’

    এবার সাজিদ বলল, -‘হ্যাঁ না হলে কি? ‘না’?’

    লোকটা এবার ‘না’ বলল।

    সাজিদ হাসতে লাগলো। বলল, -‘তার মানে আপনি এখনো বউ পেটান?’

    লোকটা এবার রেগে গেলো। বলল, -‘আপনি ফাউল প্রশ্ন করছেন। আমি কোনদিনও বউ পেটায় নি। এটা আমার নীতিবিরুদ্ধ।’

    সাজিদ বলল, -‘আপনিও স্রষ্টাকে নিয়ে একি ফাউল প্রশ্ন করেছেন। এটা স্রষ্টার নীতিবিরুদ্ধ।

    আমার প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে- আপনি একসময় বউ পেটাতেন। যদি ‘না’ বলেন, তাহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন আপনি এখনো বউ পেটান। আপনি না ‘হ্যাঁ’ বলতে পারছেন, না পারছেন ‘না’ বলতে। কিন্তু, আদতে আপনি বউ পেটান না। এটা আপনার নীতিবিরুদ্ধ। সুতরাং, এমতাবস্তায় আপনাকে এরকম প্রশ্ন করাই উচিত না। এটা লজিকাল ফ্যালাসির মধ্যে পড়ে যায়। ঠিক সেরকম স্রষ্টাকে ঘিরেও এরকম প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। কারণ, এই প্রশ্নটি নিজেই নিজের আত্মবিরোধী।

    নীল রঙের স্বাদ কেমন, বা ৯ সংখ্যাটির ওজন কত মিলিগ্রাম, এরকম প্রশ্ন যেমন লজিকাল ফ্যালাসি এবং এই ধরনের প্রশ্ন যেমন থাকা উচিত নয়, তেমনি ‘স্রষ্টা’ এমনকিছু বানাতে পারবে কিনা যেটা স্রষ্টা উঠাতে পারবে না। এটাও একটা লজিকাল ফ্যালাসি। কু-যুক্তি। এরকম প্রশ্ন থাকা উচিত নয়।

    সেদিন লোকটি খুব শকড হলেন। ভেবেছিলেন হয়তো এই প্রশ্নটি শুনেই ডিগবাজি খাবে। কিন্তু বেচারাকে এরকম ধোলাই করবে বুঝতে পারেনি। সেদিন উনার চেহারাটা হয়েছিল দেখার মত। বউ পেটানোর লজিকটা মনে হয় উনার খুব গায়ে লেগেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – ২ – আরিফ আজাদ
    Next Article শার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }