Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – আরিফ আজাদ

    লেখক এক পাতা গল্প165 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?

    ল্যাম্পপোস্টের অস্পষ্ট আলোয় একজন বয়স্ক লোকের ছায়ামূর্তি আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো। গায়ে মোটা একটি শাল জড়ানো। পৌষের শীত। লোকটা হালকা কাঁপছেও। আমরা খুলনা থেকে ফিরছিলাম। আমি আর সাজিদ।

    স্টেশন মাস্টার রুমের পাশে একটি বেঞ্চিতে লোকটা আঁটোসাঁটো হয়ে বসে আছে। স্টেশনে এরকম কত লোকই তো বসে থাকে। তাই সেদিকে আমার বিশেষ কোন কৌতূহল ছিল না। কিন্তু সাজিদকে দেখলাম সে দিকে এগিয়ে গেল।

    লোকটার কাছে গিয়ে সাজিয়ে ধপাস করে বসে পড়ল। আমি দূর থেকে খেয়াল করলাম লোকটার সাথে সাজিদ হেসে হেসে কথাও বলছে।

    আশ্চর্য ! খুলনার স্টেশন। এখানে সাজিদের পরিচিত লোক কোথা থেকে এলো? তাছাড়া লোকটিকে দেখে বিশেষ কেউ বলেও মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোন বাদাম বিক্রেতা। বাদাম বিক্রি শেষে ফোটেনি ওই জায়গায় বসেই রাত কাটিয়ে দেয়। আমাদের রাতের ট্রেন। এখন বাজে রাত দু’টো। এই সময় সাজিদের সাথে কারো দেখা করার কথা থাকলে তা তো আমি জানতামই। অদ্ভুত !আমি আর একটু এগিয়ে গেলাম। একটু অগ্রসর হয়ে দেখলাম ভদ্রলোকের হাতে একটি বইও আছে। দূর থেকে আমি বুঝতে পারিনি।

    সাজিদ আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকলো। আমি গেলাম। লোকটার চেহারা টা বেশ চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু সঠিক মনে করতে পারছিনা। সাজিদ বলল, -‘এইখানে বোস। ইনি হচ্ছেন হুমায়ুন স্যার।’

    হুমায়ুন স্যার? এই নামে কোন হুমায়ূন স্যারকে আমি তো চিনি না। সাজিদকে জিজ্ঞেস করতে যাব যে কোন হুমায়ুন স্যার, অমনি সাজিদ আবার বলল, -‘হুমায়ূন আজাদকে চিনিস না? ইন ইয়ার্কিইনি আর কি।’

    এরপর সে লোকটার দিকে ফিরে বলল, -‘স্যার, এ হল আমার বন্ধু আরিফ।’

    লোকটা আমার দিকে তাকালো না। সাজিদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে মৃদু হাসি। আমার তখনও ঘোর কাটছেই না। কি হচ্ছে এসব? আমিও ধপাস করে সাজিদের পাশে বসে পড়লাম।

    সাজিদ আর হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটার মধ্যে আলাপ হচ্ছে। এমন ভাবে কথা বলছে যেন, তারা পরস্পর পরস্পরকে অনেক আগে থেকেই চিনে।

    লোকটা সাজিদকে বলছে, -‘তোকে কত করে বলেছি, আমার লেখা ‘আমার অবিস্বাস’ বইটা ভালো মতো পড়তে। পড়েছিলি?’

    সাজিদ বলল, -‘হ্যাঁ স্যার। পড়েছি তো।’

    -‘তাহলে আবার আস্তিক হয়ে গেলি কেন? নিশ্চয়ই কোন ত্যাদড়ের ফাঁদে পড়েছিস? কে সে? নাম বল? পেছনে যে আছে, কি জানি নাম?’

    -‘ইডিয়েট আরিফ……..’

    -‘হ্যাঁ, এই ত্যাদড়ের ফাঁদে পড়েছিস বুঝি? দাড়া, তাকে আমি মজা দেখাচ্ছি…….।

    এই বলে লোকটা বসা থেকে উঠে গেল।

    সাজিদ জোরে জোরে বলে উঠল, -‘না না স্যার। ও কিছু জানে না।’

    -‘তাহলে?’

    -‘আসলে স্যার, বলতে সংকোচবোধ করলেও সত্য এটাই যে নাস্তিকতার উপর আপনি যেসব লজিক দেখিয়েছে সেগুলো এতটাই দুর্বল যে, নাস্তিকতার উপর আমি বেশিদিন ঈমান রাখতে পারিনি।’

    এইটুকু বলে সাজিদ মাথা নিচু করে ফেলল। লোকটার চেহারাটা মুহূর্তেই রুক্ষভাব ধারণ করলো। বললো, -‘তার মানে বলতে চাইছিস, তুই এখন আমার চেয়েও বড় পন্ডিত হয়ে গেছিস? আমার চেয়েও বেশি পড়ে ফেলেছিস? বেশি বুঝে ফেলেছিস?’

    তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে।

    লোকটা বলল, -‘যাগ গে, একটা সিগারেট খাবো। ম্যাচ নাই। তোর কাছে আছে?’

    -‘জি স্যার’- এই বলে সাজিদ ব্যাগ খুলে একটি ম্যাচ বের করে লোকটার হাতে দিল। সাজিদ সিগারেট খায় না, তবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তার ব্যাগে থাকে সব সময়।

    লোকটা সিগারেট ধরালো। কয়েকটা জোরে জোরে টান টান দিয়ে ফুস করে একমুখ ধোঁয়া ছাড়লো। ধোয়াগুলো মুহূর্তেই কুণ্ডলী আকারে স্টেশন মাস্টারের ঘরের রেলিং বেয়ে উঠে যেতে লাগল উপরের দিকে। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি।

    লোকটার কাশি উঠে গেল। কাশতে কাশতে লোকটা বসা থেকে উঠে পরল। এই মুহূর্তে উনার সিগারেট খাওয়ার আর সম্ভবত ইচ্ছে নেই। লোকটা সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরোটিকে নিচে ফেলে পা দিয়ে একটি ঘষা দিল। অমনি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরোটি থেতলে গেল।

    সাজিদের দিকে ফিরে লোকটা বলল, -‘তাহলে এখন বিশ্বাস করিস যে স্রষ্টা বলে কেউ আছে?’

    সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।

    -‘স্রষ্টা এই বিশ্বলোক, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্বাস করিস তো?’

    আবার সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।

    এবার লোকটা এত অদ্ভুত ভয়ংকর রকম হাসি দিলো। এই হাসি এতটাই বিদঘুটে ছিল যে, আমার গা ছমছম করতে লাগল।

    লোকটি বলল, -‘তাহলে বল দেখি স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?’

    এই প্রশ্নটি করে লোকটি আবার সেই বিদঘুটে হাসিটা হাসল। গা ছমছমে।

    সাজিদ বলল, -‘স্যার বাই ডেফিনিশন, স্রষ্টার কোন সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না। যদি বলি X-ই সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টি করেছে, তৎক্ষণাৎ আবার প্রশ্ন উঠবে তাহলে X এর সৃষ্টিকর্তা কে? যদি বলি Y, তাহলে আবার প্রশ্ন উঠবে, Y এর সৃষ্টি কর্তা কে?এভাবেই চলতে থাকবে। কোন সমাধানে যাওয়া যাবেনা।’

    লোকটি বলল, -‘সমাধান আছে।’

    -‘কি সেটা?’

    -‘মেনে নেওয়া যে -স্রষ্টা নাই, বাস !’ এইটুকু বলে লোকটি আবার হাসি দিল। হা হা হা হা।

    সাজিদ আপত্তি জানালো। বলল, ‘আপনি ভুল স্যার।’

    লোকটি চোখ কপালে তুলে বললো, -‘কী? আমি ভুল? আমি?

    -‘জি স্যার।’

    -‘তাহলে বল দেখি, স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো? উত্তর দে। দেখি কত বড় জ্ঞানের জাহাজ হয়েছিস তুই।’

    আমি বুঝতে পারলাম এই লোক সাজিদকে যুক্তির গেরাকলে ফেলার চেষ্টা করছে।

    সাজিদ বলল, -‘স্যার গত শতাব্দীতে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে আছে। মানে এটার কোনো শুরু নেই। তারা আরও ভাবতো, এটার কোন শেষ নেই। তাই তারা বলত যেতো এটার শুরু শেষ কিছুই নাই। সুতরাং এটার জন্য একটা সৃষ্টিকর্তারও দরকার নাই।

    কিন্তু থার্মোডাইনামিক্স এর তাপ ও গতির সূত্র গুলো আবিষ্কার হওয়ার পর এই ধারণা তো পুরোপুরিভাবে ব্যানিশ হয়ই, সাথে পদার্থ বিজ্ঞানেও ঘটে যায় এক বিপ্লব। থার্মোডাইনামিক্স এর তাপ ও গতির দ্বিতীয় সূত্র বলছে, ‘এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত ও নিরবিচ্ছন্ন উত্তাপ অস্তিত্ব থেকে পর্যায়ক্রমে উত্তাপহীন অস্তিত্বের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই সুত্রটাকে উল্টো থেকে প্রয়োগ কখনোই সম্ভব নয়। অর্থাৎ, কম উত্তাপ অস্তিত্ব থেকে এটাকে বেশি উত্তাপ অস্তিত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। এই ধারণা থেকে প্রমাণ হয় মহাবিশ্বও চিরন্তন নয়। এটা অনন্ত কাল ধরে এভাবে নেই। এটার একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে। থার্মোডাইনামিক্স এর সূত্র আরো বলে, -এভাবে চলতে চলতে একসময় মহাবিশ্বের সকল শক্তির অবক্ষয় ঘটবে। আর মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে।

    লোকটি বলল, -‘উফফফ ! আসছেন বৈজ্ঞানিক লম্পু। সহজ করে বল ব্যাটা।’

    সাজিদ বলল, -‘স্যার একটা গরম কফির কাপ টেবিলে রাখা হলে, সেটা সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে তাপ হারাতে হারাতে ঠান্ডা হতেই থাকবে। কিন্তু সেটা টেবিলে রাখার পর যে পরিমাণ গরম ছিল, সময়ের সাথে সাথে সেটা আরো বেশি গরম হয়ে উঠবে-এটাও অসম্ভব। এটা কেবল ঠান্ডাই হতে থাকবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখা যাবে কাপটা সমস্ত তাপ হারিয়ে একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে থার্মোডাইনামিক্স এর সূত্র।’

    -‘হুম, তো?’

    -‘এর থেকে প্রমান হয়, মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। তারও প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেয়েছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি তত্ত্বের উপর এ যাবৎ যতগুলো থিওরি বিজ্ঞানী মহলে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, প্রমাণের দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী থিওরি হলো বিগ ব্যাং থিওরি। বিগ ব্যাং থিওরি বলছে, -মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে বিস্ফোরণের ফলে। তাহলে নিশ্চিত যে মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে।’

    লোকটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো

    সাজিদ আবার বলতে শুরু করল, -‘স্যার আমরা সহজ সমীকরণ পদ্ধতিতে দেখব স্রষ্টাকে সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কিনা, মানে স্রষ্টার সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে কিনা।

    সকল সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে এবং শেষ আছে……….. ধরি এটা সমীকরণ (১)

    মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি……… এটা সমীকরণ (২)

    এখন সমীকরণ ১ আর ২ থেকে পাই-

    সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে। মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি, তাই এটারও একটা শুরু এবং শেষ আছে।

    তাহলে, আমরা দেখলাম উপরের দুটি শর্ত পরস্পর মিলে গেল এবং তাতে থার্মোডায়নামিক্সের তাপ ও গতিসূত্রের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি।

    -‘হু’

    -‘আমার তৃতীয় সমীকরণ হচ্ছে -স্রষ্টা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’

    তাহলে খেয়াল করুন, আমার প্রথম সত্যের সাথে কিন্তু তৃতীয় শর্ত ম্যাচ হচ্ছে না। আর প্রথম শর্ত ছিল -সকল সৃষ্টির শুরু আর শেষ আছে। কিন্তু তৃতীয় শর্তে কথা বলছি স্রষ্টা নিয়ে। তিনি সৃষ্টি নন, তিনি স্রষ্টা। তাই এখানে প্রথম শর্ত খাটে না। তাপ গতি সূত্রটি এখানে আর খাটছে না। তার মানে, স্রষ্টার শুরুও নেই, শেষও নেই। অর্থাৎ, তাকে নতুন করে সৃষ্টির প্রয়োজন নাই। তার মানে স্রষ্টার আরেকজন স্রষ্টা থাকারও প্রয়োজন নাই। তিনি অনাদি, অনন্ত।

    এইটুকু বলে সাজিদ থামল। হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটি কপালের ভাঁজ দীর্ঘ করে বললেন, -‘কি ভং চং বুঝালি এগুলো? কিসব সমীকরণ টমিকরন? এসব কি? সোজা শাপ্টা বল। আমাকে অঙ্ক শিখাচ্ছিস? Law of Causality সম্পর্কে ধারণা আছে? Law of Causality মতে, সবকিছুর পেছনেও একটা কারন থাকতে হবে।’

    সাজিদ বলল, -‘স্যার, উত্তেজিত হবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে অঙ্ক শিখাতে যাব কোন সাহসে? আমি শুধু আমার মতো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছি।’

    -‘কচু করেছিস তুই। Law of Causality দিয়ে ব্যাখ্যা কর।’ –লোকটা উচ্চস্বরে বলল।

    -‘স্যার, Law of Causality বলবত হয় তখনই, যখন থেকে Time, Space এবং Matter জন্ম লাভ করে, ঠিক না?  কারণ আইনস্টাইনের থিওরী অফ রিলেটিভিটিও স্বীকার করে যে, Time জিনিসটা নিজেই Space আর Matter এর সাথে কানেক্টেড। Cause এর ধারণা তখনই আসবে যখন Time-Space-Matter এই ব্যাপার গুলো তৈরি হবে। তাহলে, যিনিই এই Time-Space-Matter এর স্রষ্টা তাকে কি করে আমরা Time-Space-Matter এর বাটখারা তে বসিয়ে Law of Causality দিয়ে বিচার করব? স্যার এটা তো লজিক বিরুদ্ধ, বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।’

    লোকটা চুপ করে আছে। কিছু হয়তো বলতে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই আবার সাজিদ বলল, -‘স্যার আপনি Law of Causality’র যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটা ভুল।’

    লোকটা আবার রেগে গেল। রেগেমেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল, -‘এই ছোকরা ! আমি ভুল বলেছি মানে কি? তুই কি বলতে চাস আমি বিজ্ঞান বুঝিনা?’

    সাজিব বলল, -‘না না স্যার, একদম তাই বলিনি। আমার ভুল হয়েছে। আসলে বলা উচিত ছিল যে- Law of Causality সংজ্ঞা বলতে গিয়ে আপনি ছোট্ট একটা জিনিস মিস করেছেন।’

    লোকটির চেহারা এবার একটু স্বাভাবিক হল। বলল, -‘কি মিস করেছি?’

    -‘আপনি বলেছেন Law of Causality মতে, সবকিছুরই একটি Cause থাকে। আসলে এটা স্যার সেরকম নয়। Law of Causality হচ্ছে Everything which has a beginning has a cause. অর্থাৎ, এমন সবকিছু, যেগুলোর একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে কেবল তাদেরই cause থাকে। স্রষ্টার কোন শুরু নেই, তাই স্রষ্টাকে Law of Causality দিয়ে মাপা যুক্তি এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।’

    লোকটার মুখটা কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল। বলল। -‘তুই কি ভেবেছিস, এরকম ভারি ভারি কিছু শব্দ ব্যবহার করে কথা বললে আমি তোর যুক্তি মেনে নিব? অসম্ভব।’

    সাজিদ এবার মুচকি হাসলো। হেসে বলল, -‘স্যার, আপনার হাতে একটি বই দেখছি। ওইটা কি বই?’

    -‘এটা আমার লেখা বই –‘আমার অবিশ্বাস’।’

    -‘স্যার ঐটা আমাকে দিবেন একটু?’

    -‘এই নে ধর।’

    সাজিদ বইটা হাতে নিয়ে উল্টালো। উল্টাতে উল্টাতে বলল, -‘স্যার, এই বইয়ের কোন লাইনে আপনি আছেন?’

    লোকটা ভুরু কুঁচকে বলল, -‘মানে?’

    -‘বলছি এই বইয়ের কোন অধ্যা, য় কোন পৃষ্ঠায়, কোন লাইনে আপনি আছেন?’

    -‘তুই অদ্ভুত কথা বলছিস। আমি বইয়ে থাকবো কেন?’

    -‘কেন থাকবেন না? আপনি এর স্রষ্টা না?’

    -‘হ্যাঁ।’

    -‘এই বইটা কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি। আপনিও কি কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি, স্যার?’

    -‘খুবই স্টুপিড টাইপ প্রশ্ন। আমি এই বই এর স্রষ্টা। এই বই তৈরি সংজ্ঞা দিয়ে কি আমাকে ব্যাখ্যা করা যাবে?’

    সাজিদ আবার হেসে দিল। বলল, -‘না স্যার এই বই তৈরির যে সংজ্ঞা, সে সংজ্ঞা দিয়ে মোটেও আপনাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ঠিক সেভাবে এই মহাবিশ্ব যিনি তৈরি করেছেন, তাঁকেও তাঁর সৃষ্টির Time-Space-Matter- Cause এসব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না।

    আপনি কালি কলম বা কাগজের তৈরি নন, তার উর্ধে। কিন্তু আপনি Time-Space-Matter- Cause এর উর্ধ্বে নন। আপনাকে এগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু, সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন এমন একজন, যিনি নিজেই Time-Space-Matter- Cause এর সৃষ্টিকর্তা। তাই তাকে Time-Space-Matter- Cause দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। তিনি এসব এর উর্দ্ধে। অর্থাৎ তার কোন Time-Space-Matter- Cause নাই। অর্থাৎ, তার কোন শুরু-শেষ নাই। অর্থাৎ, তার কোন সৃষ্টিকর্তা নাই।

    লোকটি উঠে দাঁড়ালো। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো, -‘ভালো ব্রেইনওয়াশড ! ভালো ব্রেইনওয়াশড ! আমরা কি এমন তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম? হায় আমরা কি এমন তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম? এটা বলতে বলতে লোকটা হাটা ধরল। দেখতে দেখতেই উনি স্টেশনে মানুষের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলেন।

    ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙ্গার পর আমি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে ছিলাম। ঘড়িতে সময় দেখলাম। রাত দেড়টা বাজে। সাজিদের বিছানার দিকে তাকালাম। দেখলাম, সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে। আমি উঠে তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে যে বইটা পরছে২, সেটার নাম ‘আমার অবিশ্বাস’। বইয়ের লেখক হুমায়ুন আজাদ।

    সাজিদ বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো। তার ঠোঁটের কোনায় একটি অদ্ভুত হাসি।

    আমি বিরাট একটা শক খেলাম। নাহ ! এটা হতে পারে না স্বপ্নের উপর কারো হাত নেই-আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – ২ – আরিফ আজাদ
    Next Article শার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }