Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প137 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. রইসউদ্দিন যখন মোল্লা

    ০২.

    রইসউদ্দিন যখন মোল্লা কফিলউদ্দিনের সাথে কথা বলছিলেন তখন বাঁশের বেড়ার অন্য পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিউলি তাঁদের কথাবার্তা শুনছিল। পাগল ধরনের একটা মানুষ তাকে বাঁচানোর জন্যে সেই কোথা থেকে এখানে চলে এসেছে চিন্তা করে শিউলির চোখে পানি এসে গেল। শিউলি চোখ মুছে বাঁশের বেড়ার ফোকর দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে শুনতে পেল কফিলউদ্দিন বলছেন যে সে পালিয়ে গেছে। তারপর শুনল যে সে নাকি বজ্জাতের ঝাড়, বাপ-খাড়ি মা-খাগি আবাগীর বেটি। শুনে হঠাৎ শিউলির মাথায় রক্ত উঠে গেল। ইচ্ছে হল ছুটে গিয়ে কফিলউদ্দিনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নখ দিয়ে মুখ আঁচড়ে দেয়। কিন্তু সে কিছুই করল না। গত ছয় মাসে সে যেসব জিনিস শিখেছে তার মাঝে এক নম্বর হচ্ছে যে, সবসময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। মাথা-গরম করে কোনোকিছুই করা যায় না, কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবকিছু করা যায়।

    যেমন ধরা যাক বিড়ালের দুধ খাওয়ার ঘটনাটা। মাসখানেক আগে এক সন্ধ্যেবেলা দেখা গেল রান্নাঘরে বিড়াল এসে দুধ খেয়ে, দুধের ডেকচি উলটে সব দুধ ফেলে গেছে। হালকা-পাতলা কফিলউদ্দিনের পাহাড়ের মতো স্ত্রী এসে শিউলির ঘাড়ে ধরে গালে একটা চড় কষিয়ে দিয়ে বললেন, “হারামজাদি, চোখের মাথা খেয়ে ফেলেছিস নাকি? পাকঘরেরর দরজা খুলে রাখলি যে?”

    শিউলি বলল, “চাচি, আমি ভোলা রাখি নাই।”

    পাহাড়ের মতো বিশাল মহিলা তার শরীর ঝাঁকিয়ে ছুটে এসে শিউলির পিঠে গুমগুম করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললেন, “আবাগীর বেটি–আমার মুখের উপরে কথা!”

    শিউলি তাই কোনো কথা বলল না। তার নিজের আম্মার কথা মনে পড়ে চোখ ফেটে পানি এসে যাচ্ছিল, কিন্তু সে একটুও কাঁদল না। চাচির দিকে তাকিয়ে মনে-মনে বলল, “দেখা যাবে কে আবাগীর বেটি! আমি তোমারে এমন শিক্ষা দেব চাচি তুমি জন্মের মতো সিধা হয়ে যাবে।”

    চাচিকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায় শিউলি তখন সেইটা নিয়ে কয়েকদিন চিন্তা করল। যেহেতু চাচি ছোটখাটো পাহাড়ের মতো বিশাল তাই তার উচিত শাস্তি হবে যদি তাকে খানিকক্ষণ দৌড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো যায়। একজন মোটা মানুষ নিজে থেকে কখনো দৌড়াবে না, তাকে দৌড়ানোর উপায় হচ্ছে ভয় দেখানো। চাচি সবচেয়ে যে-জিনিসটাকে ভয় পান সেটা হচ্ছে মাকড়শা। ঘরে যদি ছোট একটা মাকড়শাও থাকে তা হলে চাচি চিৎকার হৈচৈ শুরু করে দেন যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ-একজন এসে সেটাকে আঁটাপেটা করে ঘরছাড়া না করছে। কাজেই শিউলি ঠিক করল চাচিকে আর একটা বিশাল গোবদা মাকড়শাকে এক জায়গায় রাখতে হবে। সেই জায়গাটি কী হতে পারে সেটা নিয়ে কয়েকদিন চিন্তা করে শিউলির মনে হল যে সবচেয়ে ভালো হয় যদি মাড়কশাটাকে তাঁর মশারির ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। মশারির ভেতরে মাকড়শাটা ছুটে বেড়াবে। চাচি ষাড়ের মতো চাচাতে চাঁচাতে মশারি ছিঁড়ে নিচে এসে পড়বে, সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে একটা বিতিকিচ্ছি ব্যাপার হবে। তখন তার উচিত শিক্ষা হবে।

    এই পুরো ব্যাপারটার একমাত্র কঠিন অংশটুকু হচ্ছে মশারির ভেতরে মাকড়শাটাকে ঢোকানো। লুকিয়ে একটা মাকড়শা ছেড়ে দিলে লাভ নেই–চাচি হয়তো খেয়ালও করবে না। মাকড়শাটাকে ছাড়তে হলে তাকে দেখিয়ে একেবারে তার চোখের সামনে।

    আরও দুইদিন চিন্তা করে শিউলি ঠিক করল ব্যাপারটা কী করে করা হবে। শিউলি লক্ষ করেছে চাচি ঘুমানোর আগে প্রতিদিন তাঁর পানের বাটা নিয়ে মশারির ভেতরে ঢোকেন। বিছানায় বসে বসে চাচি জর্দা দিয়ে দুই খিলি পান খেতে খেতে কফিল চাচার সাথে দুনিয়ার বিষয় নিয়ে ঝগড়া করেন। মাকড়শাটা রাখতে হবে পানের বাটার ভেতরে। চাচি যেই পানের বাটা খুলবেন গোবদা মাকড়শাটা তিরতির করে চাচির হাত বেয়ে উঠে আসবে–এর পরে আর কিছু দেখতে হবে না।

    ভালো দেখে স্বাস্থ্যবান একটা মাকড়শা খুঁজে সেটাকে ধরে একটা কৌটার মাঝে রাখতে শিউলির কয়েকদিন লেগে গেল। শেষ পর্যন্ত যেদিন ঠিক ঘুমানোর আগে মাকড়শাটাকে কৌটা থেকে পানের বাটার মাঝে ঢুকিয়ে সেটাকে ঢাকনাটা দিয়ে আটকে দিতে পারল সেদিন শিউলির বুক উত্তেজনায় একেবারে ঢিবঢ়িব করতে লাগল। রাত্রিবেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে উঁকি মেরে দেখল চাচি পানের বাটা হাতে বিছানায় ঢুকলেন, মশারিটা ভালো করে গুঁজে দিতে দিতে কফিল চাচার সাথে ঝগড়া শুরু করলেন। দুজন ঝগড়া করতে করতে উঠে বসলেন এবং চাচি তাঁর দুই খিলি পান তৈরি করার জন্যে পানের বাটা খুললেন। তারপর যা একটা ব্যাপার ঘটল তার কোনো তুলনা নেই।

    বিশাল গোবদা মাকড়শাটা আট পায়ে চাচির হাত বেয়ে তিরতির করে উঠে এল। চাচি ঠিকই চিৎকার করে তাঁর সেই দেহ নিয়ে লাফিয়ে উঠে মাকড়শাটাকে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করলেন। মাকড়শাটা ভয় পেয়ে তার শাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। তখন চাচি দুই হাত দুই পা ছুঁড়ে বিছানায় লাফাতে লাফাতে তার শাড়ির ভেতরে এখানে সেখানে হাত ঢুকিয়ে খোঁজাখুজি করতে লাগলেন। শাড়ি তাঁর পায়ে পেঁচিয়ে গেল, তিনি তাল সামলাতে না পেরে দড়াম করে কফিল চাচার ওপর আছাড় খেয়ে পড়লেন। চাচির পাহাড়ের মতো শরীরের ভারে কফিল চাচার মনে হয় তার শরীরের সব কয়টা হাড় ভেঙে গেল। তিনি একেবারে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলেন। দুজন তখন মশারিতে জড়িয়ে মশারির দড়ি ছিঁড়ে বিছানা থেকে নিচে এসে পড়লেন। সেই অবস্থাতে মাকড়শাটা চাচির শরীরের উপর দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল এবং চাচি সেই অবস্থায় কফিল চাচাকে মশারিতে পেঁচিয়ে তাঁকে উঁচড়াতে ছ্যাচড়াতে মশারিসহ ছুটতে ছুটতে ঘর থেকে একেবারে কয়েক লাফে বারান্দায় পার হয়ে উঠানে হাজির হলেন।

    সবাই ভাবল ঘরে ডাকাত পড়েছে, তারা লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে এল। চাচি আর কফিল চাচাকে এই অবস্থায় দেখে ব্যাপারটা কী বুঝতেই অনেকক্ষণ লেগে গেল। শেষ পর্যন্ত চাচি মশারি ছিঁড়ে বের হয়ে এলেন। শাড়ি খুলে শুধু পেটিকোট, ব্লাউজ পরে তাঁর দৌড়াদৌড়ি যা একটা মজার দৃশ্য হল সে আর বলার মতো নয়।

    অনেকদিন পর শিউলির সেই রাত্রে খুব আরামের একটা ঘুম হয়েছিল। এতদিন পরে কফিল চাচার কথা শুনে শিউলি বুঝতে পারল তাঁকেও একটা কঠিন শাস্তি দেবার সময় হয়েছে। খুব ভালো করে শাস্তি দিতে হলে চিন্তা-ভাবনা করে ঠাণ্ডা মাথায় একটা বুদ্ধি বের করতে হয়। কিন্তু এখন সেরকম চিন্তা-ভাবনা করার সময় কোথায়? কফিল চাচা যখন বলেছে সে পালিয়ে গেছে কাজেই সে পালিয়েই যাবে। তবে পালিয়ে যাবার আগে কফিল চাচাকে একটা ভালো শিক্ষা দিয়ে যেতে হবে। আগের বার তাকে খুব ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হয়েছে যেন কেউ তাকে ধরতে না পারে। এবার তাকে ধরতে পারলেও ক্ষতি নেই। শিউলি বাড়ির পেছনে কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করে মোটামুটি একটা বুদ্ধি বের করে ফেলল।

    মাত্র অল্প কয়দিন আগে সে সুপার গু জিনিসটা আবিষ্কার করেছে। চাচির প্রিয় একটা কাপের হ্যাঁন্ডেলটা ভেঙে গিয়েছিল তখন শহর থেকে এই সুপার গু আনা হয়েছে। এক ফোঁটা গু ব্যবহার করে হ্যাঁন্ডেলটা ম্যাজিকের মতো লাগিয়ে ফেলেছিল, দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এটা কখনো ভেঙেছে। মজার ব্যাপার হল হ্যাঁন্ডেলটা লাগানোর সময় হাতে গু লেগে গিয়েছিল। সেই গু এমনই শক্তভাবে লেগেছে যে আর তোলার উপায় নেই! মানুষের চামড়ার সাথে জিনিস জুড়ে দেবার মতো এরকম জিনিস মনে হয় পৃথিবীতে আর একটাও নেই। শিউলি ঠিক করল এই সুপার গ্লু দিয়েই সে তার কফিল চাচাকে শাস্তি দেবে। কোনো একটা জিনিস সে কফিল চাচার শরীরের সাথে পাকাঁপাকিভাবে লাগিয়ে দেবে। সবচেয়ে ভালো হত যদি দুইটা ঠোঁট একসাথে লাগিয়ে দিতে পারত, তা হলে জন্মের মতো তাকে গালাগালি করা বন্ধ হয়ে যেত, কিন্তু সেটা তো আর এখন সম্ভব নয়। যদি খুব ঠাণ্ডা মাথায় কয়েকদিন চিন্তা করার সুযোগ পেত তা হলে সে নিশ্চয়ই একটা বুদ্ধি বের করে ফেলত। কিন্তু তার হাতে মোটেই সময় নেই। যেটাই সে করতে চায় করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি।

    প্রথম তার একটা কাগজ দরকার যেখানে কিছু লেখা আছে। এ-বাড়িতে লেখাপড়ার বিশেষ চল নেই। খুঁজেপেতে একটা লেখা-কাগজ বের করতে তার অনেকক্ষণ সময় লেগে গেল। বাড়িতে কোথাও ছিল না বলে রান্নাঘরের ডালের ঠোঙা থেকে ছিঁড়ে বের করতে হল। কাগজটা হাতে নিয়ে সে পা টিপে টিপে বড় ঘরে ঢুকল। কফিল চাচার চশমাটা থাকে একটা টেবিলের উপরে, সুপার গুটা থাকে জানালার তাকে। সুপার গুটা হাতে নিয়ে সে কফিল চাচার চশমার দুই উঁটিতে দুই ফোঁটা আর চশমার যে-অংশটা নাকের উপর চেপে বসে থাকে সেখানে দুই ফোঁটা লাগিয়ে নিল। তারপর চশমাটা যেখানে থাকার কথা সেখানে রেখে কফিল চাচাকে খুঁজে বের করল, বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি কাকে জানি গালিগালাজ করছিলেন। শিউলি কফিল চাচার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “চাচা!”

    কফিল চাচা খেঁকিয়ে উঠে বললেন, “কী হয়েছে?”

    “পুলিশ।”

    এই কথাটায় অবিশ্যি ম্যাজিকের মতো কাজ হল। চোখ কপালে তুলে বললেন, “কোথায়?”

    “এই বাইরে ছিল এখন অন্যদিকে হেঁটে গেছে। আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিল।”

    “আমার কথা?” কফিলউদ্দিনকে হঠাৎ কেমন জানি ফ্যাকাশে দেখায়।”আমার কথা কী জিজ্ঞেস করেছে?”

    “আপনি কখন বাসায় থাকেন কী করেন এইসব। ছেলেধরার সাথে যোগাযোগ আছে কি না সেটাও জিজ্ঞেস করেছে।”

    কফিলউদ্দিন কেমন যেন চিমশে মেরে গেলেন। শিউলি বলল, “পুলিশের হাতে অনেক কাগজ ছিল। সেখানে থেকে এই কাগজটা নিচে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ টের পায় নাই, আমি তুলে এনেছি।”

    “দেখি দেখি–” বলে কফিল চাচা শিউলির হাতের কাগজটা প্রায় ছোঁ মেরে নিলেন। চশমা ছাড়া কিছু পড়তে পারেন না তাই খড়ম খটখট করে ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর থেকে চশমাটা নিয়ে নাকের ডগায় চাপিয়ে নিয়ে কাগজটা পড়ার চেষ্টা করতে লাগলেন।

    শিউলির বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করল। সুপার গু খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে, আর কিছুক্ষণ চশমাটা নাকের ডগায় রাখতে পারলেই হবে। শিউলি ডোক গিলে জিজ্ঞেস করল, “কী লেখা আছে কাগজে?”

    “বুঝতে পারলাম না। দেখে মনে হয় ইংরেজি ট্রান্সলেশন। আমি গরুকে খাওয়াই–আই ইট কাউ।”

    “তাই লেখা?”

    “হুম।”

    “অন্য পৃষ্ঠায় কী লেখা?”

    কফিল চাচা অন্য পৃষ্ঠায় কী লেখা সেটা পড়তে শুরু করলেন। খানিকটা পড়ে শিউলির দিকে তাকালেন, “তুই সত্যি এই কাগজটা পেয়েছিস?”

    “হ্যাঁ এটাই।”

    কফিলউদ্দিন আবার কাগজটা পড়লেন, পড়ে গম্ভীর হয়ে গেলেন। শিউলি জিজ্ঞেস করল, “কী লেখা আছে চাচা?”

    “এখানে লেখা, একটি বাঁদর একটি তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া উপরে উঠিতেছে। প্রতি মিনিটে দুই ফুট উপরে উঠিয়া পরের মিনিটে–” কফিল চাচা এবার কড়াচোখে শিউলির দিকে তাকালেন, “তুই সত্যি এইটা পেয়েছিস?”

    শিউলি মাথা চুলকাল, “এইটাই তো মনে হল।”

    কফিলউদ্দিন আবার কাগজটা পড়তে শুরু করলেন। উপর থেকে নিচে–নিচে থেকে উপরে, ডান থেকে বামে–বাম থেকে ডানে এবং শিউলি তখন সটকে পড়ল। তাঁর কাজ শেষ, এখন তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার সময়। কিন্তু তার কাগজটা কেমন হয়েছে না দেখে সে কেমন করে যায়?

    কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ সে বাড়ির ভেতর থেকে বিকট চিৎকার শুনতে পেল, মনে হল কফিল চাচা ডাক ছেড়ে একটা আর্তনাদ দিয়েছেন।

    বাইরে যেসব বাচ্চাকাচ্চা খেলছিল তাদের পিছুপিছু শিউলিও বাড়ির ভেতরে এসে ঢুকল। দেখতে পেল উঠানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কফিল চাচা তার চশমাটা খোলার চেষ্টা করছেন এবং খুলতে না পেরে একটু পরেপরে একটা বিকট আর্তনাদ দিচ্ছেন। পাহাড়ের মতো মোটা শরীর নিয়ে চাচিও হাজির হলেন, মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, “এইরকম করে চাঁচাচ্ছেন কেন?”

    “চশমা!”

    “চশমা কী হয়েছে?”

    “খোলা যাচ্ছে না।”

    “খোলা যাচ্ছে না! ঢং নাকি?” এই বলে চাচি চশমা ধরে একটা টান দিলেন এবং কফিল চাচা একেবারে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিলেন। দেখা গেল সত্যি চশমা খোলা যাচ্ছে না এবং হঠাৎ করে চাচির মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।

    “মাথাটা নিচু করেন দেখি।”

    কফিন চাচা মাথাটা কচ্ছপের মতো নিচু করলেন। চাচি খুব ভালো করে পরীক্ষা করে আরও গম্ভীর হয়ে গেলেন। কফিল চাচা শুকনো গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে?”

    “মনে হচ্ছে চামড়ার সাথে আটকে গেছে।”

    কফিল চাচা কাঁদোকাঁদো গলায় বললেন, “আটকে গেছে?”

    “হ্যাঁ।”

    “সেটা কেমন করে হয়?”

    আশেপাশে যারা ছিল তারা সবাই তখন কফিল চাচার চশমা পরীক্ষা করতে শুরু করে, সবাই একটু করে টানাটানি করে আর প্রত্যেকবারই কফিল চাচা বিকট একটা করে আর্তনাদ করে ওঠেন। কফিল চাচার ফুপাতো ভাই–বাজারের জামে মসজিদের পেশ ইমাম, খানিকক্ষণ টানাটানি করে বললেন, “মনে হয় কেটে খুলতে হবে।”

    “কেটে?” কফিল চাচা আর্তনাদ করে বললেন, “নাক-কান কেটে?”

    “তাই তো মনে হচ্ছে।”

    চাচি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “কিন্তু এটা হল কেমন করে?”

    কফিল চাচার ফুপাতো ভাই দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, “হয়।”

    “হয়?”

    “হ্যাঁ। বাজানের কাছে শুনেছি একবার করবে লাশ নামাতে গিয়ে একজন কবর থেকে উঠতে পারে না। পা মাটির সাথে লেগে গেছে। একেবারে এইরকম–এখন চশমা নাকের সাথে লেগে গেছে।”

    “কিন্তু কারণটা কী?”

    “গজব।” কফিল চাচা ভাঙা গলায় বললেন, “গজব?”

    “হ্যাঁ। আল্লাহর গজব। আল্লাহর হক আদায় না করলে গজব হয়। এতিমের হক আদায় না করলেও হয়। তওবা করো, দান-খয়রাত করো। এতিমের হক আদায় করো—”

    শিউলি বুঝল এখন তার পালিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। সবাই যখন নাকের উপর চশমা এঁটে বসার কারণটা বের করার চেষ্টা করছে, টানাটানি করে সেটা খোলার চেষ্টা করছে তখন পেছন থেকে শিউলি সটকে পড়ল। যেতে যেতে শুনল কফিল চাচা একটু পরেপরে বিকট গলায় চিৎকার করছেন।

    গ্রামে পথে দুই মাইল হেঁটে, নৌকায় নদী পার হয়ে শেষ অংশটুকু বাসে গিয়ে শিউলি শেষ পর্যন্ত স্টেশনে পৌঁছাল। ট্রেন চলে গেলে সে খুব বিপদে পড়ে যেত, কিন্তু কফিলউদ্দিনের বাড়িতে থাকলে তার যে বিপদ হতে পারে তার তুলনায় এই বিপদটি কিছুই না।

    স্টেশনে খোঁজাখুঁজি করতেই সে পাগল ধরনের মানুষটিকে পেয়ে গেল–একটা বেঞ্চে বসে কিছু-একটা খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবছে। একেবারে কাছে গিয়ে দাঁড়ানোর পরেও যখন মানুষটি তাকে দেখল না তখন সে শার্টের কোনা ধরে টানল, মানুষটা তখন কেমন জানি একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বলল, “কে?”

    শিউলি জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমি শিউলি।”

    .

    ঝিকঝিক করে ট্রেন যাচ্ছে, জানালার কাছে শিউলি বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। তার এক হাতে একটা পেপসির বোতল আর অন্য হাতে একটা আপেল। আপেলটিতে ঘ্যাঁচ করে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে সেটা কচকচ করে খেতে খেতে শিউলি বলল, “এই বিলাতি পেয়ারাটা খেতে কী মজা দেখেছ?”

    রইসউদ্দিন বললেন, “এটার নাম আপেল।”

    “আপেল? এটাকে বলে আপেল?”

    শিউলি হাতের আধখাওয়া আপেলটার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি ভেবেছিলাম আপেল আরও ছোট হয়, বরইয়ের মতন।”

    শিউলি ঘ্যাঁচ করে আরও একটা কামড় দিয়ে আবার কচকচ করে আপেল খেতে খেতে হাতের পেপসিটাকে দেখিয়ে বলল, “এইটাকে কী বলে?”

    “এটার নাম পেপসি।”

    “পেপসি?”

    শিউলি হি হি করে হাসতে হাসতে বলল, “ধরছি, মারছি, খাইছি, পেপসি! হি। হি হি!”

    শিউলি অকারণে হাসতে থাকে এবং রইসউদ্দিন একটা বিচিত্র আতঙ্ক নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকেন। যে-ছোট মেয়েটার জীবন বাঁচানোর জন্যে তিনি মোটামুটি পাগলের মতো ছুটে গেছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় আবিষ্কার করেছেন, তার জীবন নেবার জন্যে স্বয়ং আজরাইল এলেও সে মনে হয় তাঁকে ঘোল খাইয়ে ফিরিয়ে দেবে। এত ছোট একটা মেয়ে কেমন করে এরকম চালাক-চতুর এবং ভয়ংকর হয় রইসউদ্দিন কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না। সবচেয়ে যেটা ভয়ের ব্যাপার সেটা হচ্ছে এই ভয়ংকর বাচ্চাটিকে তিনি নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন–এটা যদি আত্মহত্যা না হয় তা হলে আত্মহত্যা কাকে বলে?

    শিউলি পেপসির বোতল থেকে বড় এক চুমুক পেপসি নিয়ে মুখে সেটা কুলকুচা করে খানিকটা পিচিক করে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ অকারণে আবার হি হি করে হেসে উঠল। রইসউদ্দিন শুকনো-মুখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললেন, “তুমি যে আমার সাথে চলে আসছ তোমার

    ভয় করছে না?”

    শিউলি মাথা নাড়ল, “করছে।”

    “তা হলে?”

    “কফিল চাচার কাছে থাকলে ভয় আরও বেশি হত। মনে নাই কফিল চাচা কেটেকুটে আমার কলিজা বিক্রি করতে যাচ্ছিল?”

    “কলিজা না, কিডনি।”

    “এক কথা।”

    শিউলি পেপসির বোতলে আরেকটা লম্বা চুমুক দিয়ে বলল, “কফিল চাচাকে একেবারে উচিত শাস্তি দিয়ে এসেছি। একেবারে টাইট করে দিয়ে আসছি!”

    রইসউদ্দিন ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী শাস্তি দিয়েছ?”

    শিউলি তখন পেপসির বোতলে চুমুক দিতে দিতে কফিলউদ্দিনের নাকের ডগায় কীভাবে পাকাঁপাকিভাবে তার চশমাটা সুপার গ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে এসেছে সেটা বর্ণনা করল এবং বলতে বলতে হাসির চোটে একসময় তার নাক দিয়ে খানিকটা পেপসি বের হয়ে এল।

    শিউলির বর্ণনা শুনে রইসউদ্দিনের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। তিনি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে শিউলির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। খানিকক্ষণ পর একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে শুকনো গলায় বললেন, “তু-তু-তুমি কি মাঝে মাঝেই মানুষকে শাস্তি দাও?”

    শিউলি মাথা নাড়ল, “দেই।”

    “কেন দাও?”

    “রাগ উঠে যায় সেইজন্যে দেই।”

    “রা-রাগ উঠে যায়?”

    “হ্যাঁ। কেউ বদমাইশি করলেই আমার রাগ উঠে যায়। চাচি যেইবার খামোকা আমাকে মারল সেইবারও আমার রাগ উঠে গিয়েছিল। তারেও শাস্তি দিয়েছিলাম।”

    “কী শাস্তি দিয়েছিলে?”

    শিউলি ঘটনাটা বর্ণনা করার আগেই হাসতে হাসতে একবার বিষম খেয়ে ফেলল। পুরো ঘটনাটা তার মুখে শোনার পর হঠাৎ করে রইসউদ্দিনের মনে হতে লাগল তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করে চিঁচি করে বলেন, “তোমার আসলেই কোনো আত্মীয়স্বজন নেই?”

    “আছে। আমার ছোট চাচা আছে।”

    “কে? ঐ যে রাইচউদ্দিন?”

    শিউলি তার পেপসির শেষ ফোঁটাটা খুব তৃপ্তির সাথে শেষ করে বলল, “না, ঐটা বানানো। কফিল চাচাকে শান্ত রাখার জন্যে বলেছিলাম। আমার আসল চাচা আমেরিকা থাকে।”

    “কী নাম?”

    “পুরো নাম কী?”

    শিউলি খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “পুরো নাম তো জানি না।”

    “কী করেন তোমার চাচা?”

    “আমাকে পিঠে নিয়ে দৌড়ান, পেটে কাতুকুতু দেন।”

    রইসউদ্দিন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “আর কী করেন? কোথায় কাজ করেন?”

    “সেটা তো জানি না।”

    শিউলির মুখ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, “খুব সুন্দর চেহারা রঞ্জু চাচার, একেবারে সিনেমার নায়কদের মতো।”

    “আমেরিকায় কোথায় থাকেন জান?”

    ”না, জানি না।”

    শিউলি হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে গেল। এই দুষ্টু মেয়েটার চেহারায় সবকিছু মানিয়ে যায়, গাম্ভীর্যটা একেবারেই মানায় না। সেই বেমানান চেহারায় বলল, রঞ্জু চাচা আমাকে খুব আদর করেন। যদি শুধু খবর পান তা হলেই আমেরিকা থেকে এসে নিয়ে যাবেন।

    রইসউদ্দিন চুপ করে রইলেন। শিউলি তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি আমেরিকায় রঞ্জু চাচাকে খবর পাঠাতে পারবে?”

    রইসউদ্দিন শিউলির দিকে তাকালেন, নায়কের মতো চেহারার একজন মানুষ যে শিউলিকে কাঁধে নিয়ে দৌড়ায়, পেটে কাতুকুতু দেয়, যার সম্পর্কে একমাত্র তথ্য যে তার নাম রঞ্জু-তাকে আমেরিকার পঁচিশ কোটি মানুষের মাঝে থেকে খুঁজে বের করে শিউলির খবরটা পৌঁছাতে হবে। রইসউদ্দিনের কী বলবেন বুঝতে পারলেন না, কিন্তু শিউলির চোখের দিকে তাকিয়ে তার মায়া হল, তিনি নরম গলায় বললেন, “পারব শিউলি। তুমি চিন্তা কোরো না, আমি তোমার চাচাকে খবর পাঠাব।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবুবুনের বাবা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article বকুলাপ্পু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }