Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    লেখক এক পাতা গল্প361 Mins Read0
    ⤷

    মৃত্যুঘণ্টা – ১

    এক

    আহত বিড়ালের মত করুণ সুরে ওয়ার্ড-ওয়ার্ড শব্দে বিলাপ করছে মরুভূমির ঝোড়ো হাওয়া। থম মেরে তাঁবুতে বসে দমকা বাতাসের মাতম শুনছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর আবু রশিদ। এক ঘণ্টাও হয়নি খাড়া করেছেন তিনি এই তাঁবু। বাইরে জোরালো ফড়াৎ-ফড়াৎ শব্দে তাঁবুর পাতলা দেয়ালে চাপড় মারছে এখন দমকা হাওয়া, যে-কোনও মুহূর্তে বালির গর্ত থেকে হ্যাঁচকা টানে উপড়ে নেবে খুঁটি, ছেঁড়া পাতার মত উড়াল দেবে এই পলকা আশ্রয়। ক্রমেই আরও বাড়ছে প্রলয়ঙ্করী ঝঞ্ঝার তোড়।

    দক্ষিণ ইরান, উনিশ শ’ ঊনআশি।

    ওদিক থেকে মন সরিয়ে প্রাচীন কবরে চোখ রাখলেন আবু রশিদ। ক্যানভাসের তাঁবু ভেদ করে আসছে দিনের কাদাটে- ধূসর আলো, কিন্তু পৌঁছুবে না পাঁচ ফুট গভীর কবরের মেঝেতে। তার প্রয়োজনও নেই, নিজ কাজ ঠিকই করছে লণ্ঠনের হলদে রশ্মি।

    কবরের সংকীর্ণ মেঝেতে শুয়ে আছে এক নরকঙ্কাল, ঊরুর পাশেই ধাতব টিউব। ওটাকে এখনও দু’হাতে জাপ্টে ধরে আছে প্রাচীন মানুষটা।

    খুব সাবধানে ধাতব টিউবটা তুলে নিলেন আবু রশিদ।

    ওটা সম্ভবত তামার তৈরি। একসময়ে খাপের ভেতর ছিল, কিন্তু বিগত সাত হাজার বছর ধরে নিষ্ঠুর মরুভূমির নিচে থেকে ক্ষয়ে গিয়ে ওই চামড়া এখন ক’ ফালি জীর্ণ আবর্জনা।

    আবু রশিদের পেছনে বসে আছে রোদে পোড়া এক তরুণ। সোনালি কোঁকড়ানো চুল, জুলফি মিশেছে দাড়ির সঙ্গে। ব্যস্ত হয়ে ঝোড়ো হাওয়ার আওয়াজ ছাপিয়ে ট্র্যানস্টির রেডিয়োতে ধরতে চাইছে বিবিসির বার্তা। বারবার ফাইন টিউন করছে, কিন্তু বারবারই ওকে কাঁচকলা দেখিয়ে আরও বাড়ছে ঝড়ের তাণ্ডব, হারিয়ে যাচ্ছে সংবাদ-পাঠকের দুর্বল কণ্ঠ

    ‘ধুৎ!’ খুব সাবধানে ডায়াল নেড়ে আরেকটু ভাল সিগনাল চাইল তরুণ।

    ঘাড় ফিরিয়ে ওকে দেখলেন আবু রশিদ। ‘ওটা রাখো, টম।’ হাতের ইশারা করলেন এগিয়ে আসতে। ‘বুঝতে পারছ, কী পেয়েছি আমরা? পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কবর! বলতে পারো, এই লোক ছিল প্রায় আদমের বয়সী একজন!’

    টম কনোরি আমেরিকান অ্যানথ্রপোলজিস্ট, মাত্র কিছু দিন আগে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। আবু রশিদের দক্ষিণ ইরান পুরাকীর্তি খনন কাজে যোগ দেয়ার জন্যে এসেছে সে এবং তার মত আরও কয়েকজন আমেরিকান তরুণ। মূল কাজ চলছে এখান থেকে মাত্র বিশ মাইল পুবে। রশিদের ধারণা, তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন ইরানের সবচেয়ে প্রাচীন বসতি। ওটা এমন কী ইরাক সীমান্তবর্তী ‘আর’ শহরের চেয়েও পুরনো। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা আবিষ্কার করেছেন সেই আমলের বাণিজ্যপথ। আর সেটা অনুসরণ করে এখানে এসেই পেয়েছেন এই হাজার হাজার বছর আগের কবর।

    রহস্যময় কবর উন্মোচিত হতে না হতেই আকাশের কালো, গম্ভীর মুখ দেখে বুঝে গেলেন প্রফেসর, এবার সহজে মুক্তি নেই তাঁদের। টমের সাহায্য নিয়ে তাড়াহুড়ো করে দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন আশ্রয়স্থল। আগে ভাবেননি, পরিবেশ এতই খারাপ হবে যে ঠাঁই নিতে হবে তাঁবুর ভেতর। বলতে গেলে প্রায় হঠাৎ করেই এল সাইমুম। যদিও, তার আগে পুরো দুটো দিন মুখ গোমড়া করে ছিল আকাশ। ঘণ্টাখানেক আগে নর্তন-কুর্দন শুরু করেছে খেপা প্রকৃতি। চুপ করে বসে থাকা ছাড়া এখন কিছুই করার নেই, কিন্তু সময়টা পুরো নষ্ট করেননি তিনি, এগিয়ে নিয়েছেন খনন কাজ। এবার চারপাশটা ভালভাবে খুঁজে দেখবেন বলে ঠিক করেছেন, এমন সময় রেডিয়োতে তেহরানের রাজনৈতিক আঙিনার দুর্যোগের দুঃসংবাদ এল। সব শুনে মুখ শুকিয়ে গেল টম কনোরির।

    ‘পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, স্যর,’ বলল তরুণ টম।

    ‘তুমি কী করে বুঝলে? রেডিয়োতে তেমন কিছুই তো বলছে না।’

    ‘বোঝা তো সহজ,’ জোর দিয়ে বলল টম, ‘বন্ধ করে দিয়েছে এয়ারপোর্ট। তেহরানের দিকে আসা সব বিমান গিয়ে নামছে আশপাশের সব দেশে।’

    শাহ্ ও আমেরিকানদের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন যত বেড়েছে, আবু রশিদের দলের আমেরিকান ছাত্রের সংখ্যা ততই কমেছে, তারা সময় থাকতে ত্যাগ করেছে এই দেশ। রয়ে গেছে শুধু টম কনোরি ও তার এক বন্ধু। টমের এখন আফসোস হচ্ছে, জীবনের ওপর এই মারাত্মক ঝুঁকি না নিলেই ভাল করত ওরা।

    ‘ওরা চাইছে পলাতক শাহকে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে,’ বলল টম, ‘সেজন্যে জিম্মি করছে বিদেশি… বিশেষ করে আমেরিকানদেরকে।’

    গত কয়েক মাসে খুবই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বিশাল এই দেশ। এবার বুঝি ফুরিয়ে এল সাধারণ মানুষের ওপর শাহের দুঃসহ নির্যাতন। অত্যাচারী ওই দানবের চারপাশের দেয়াল ও ছাত ভেঙে পড়েছে তাসের ঘরের মত। আর এই পরিবর্তন যে আসবেই, তা অনেক আগেই বুঝেছেন আবু রশিদ। কিন্তু দুঃখ তার, আজ যে-লোকের পেছনে জড় হয়েছে জনতা, সে নিজে এক নিষ্ঠুর মনের ধর্মান্ধ লোক। শুধু তা-ই নয়, সত্য ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জেঁকে বসেছে সে অশিক্ষিত মানুষের হৃদয়ে। মহানবীর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ও পবিত্র কুরআনের আয়াত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজ লোকদের বুঝিয়েছে: আসলে প্রয়োজনে আত্মহত্যা করা জায়েজ। তাতে সমস্যা হবে না বেহেস্তে প্রবেশে।

    এখনও অনেকে আশা করছেন, যারা শাহ্-র বিরুদ্ধে লড়ছে, তারা দেশে কায়েম করবে গণতন্ত্র। কিন্তু বেশিরভাগ পর্যালোচক ভাবছেন, এবার সত্যিই মধ্য যুগে ফিরবে ইরান। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে আল্লার কাছে প্রার্থনা করেন রশিদ, যেন বড় কোনও সর্বনাশ না হয় দেশটার। কিন্তু মনে মনে জানেন, একবার ভালভাবে পেণ্ডুলাম দুলিয়ে দিলে, ওটা যাবেই উল্টো পথে। শাহ্র অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া দেখা দেবেই। তখন নতুন দলের অন্ধ-ক্রোধের বলি হবে নিরপেক্ষ অনেকে। হয়তো তাদেরই একজন হবেন তিনি।

    ‘তেহরান এখান থেকে বহু দূরে,’ বললেন রশিদ। ‘তবুও ভাবছ, ঝড়ের ভেতর এক শ’ মাইলেরও বেশি মরুভূমি পাড়ি দেবে ওরা দু’জন আমেরিকানকে হাতের মুঠোয় পেতে?’

    চারপাশে তাকাল টম কনোরি। জোর আওয়াজ তুলে তাঁবুর ওপর আছড়ে পড়ছে তুমুল হাওয়া। ওর মনে হলো, সত্যিই, মাত্র দু’জন আমেরিকানকে বাগে পেতে এত কষ্ট করবে না বিপ্লবীরা।

    ‘তা ছাড়া, তুমি রোদে পুড়ে প্রায় আমার মতই তামাটে,’ বললেন রশিদ। ‘দরকার পড়লে বোরকা পরিয়ে দেব, মুখটা ঢেকে নিলেই সবাই ভাববে তুমি আমার বিবি।’

    ‘তাতেও দারুণ কষ্ট পাব মনে, স্যর,’ বলল টম।

    মুচকি হাসলেন রশিদ। ‘আমারই কি ভাল লাগবে নাকি তা হলে! ধেড়ে এক যুবক আমার বউয়ের অভিনয় করছে!’

    খুবই উদ্বিগ্ন টম, কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড পর ঠোঁটে দেখা দিল দুষ্টু হাসি। একবার মাথা নেড়ে মেঝেতে রেডিয়ো রেখে ক্রল করে চলে এল ট্রেঞ্চের মত কবরের পাশে। ‘বলুন তো, আপনি আসলে কীজন্যে এত উত্তেজিত?’

    ‘মনোযোগ দাও, টম,’ ধাতব টিউব দেখালেন রশিদ। মুড়িয়ে রাখা পাতে কিছু চিহ্ন। আঁকা বা রং করা হয়নি। যেন বড় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গভীর দাগ বসিয়ে দেয়া হয়েছে পাতের বুকে।

    চোখ বিস্ফারিত হলো টম কনোরির। ‘তার মানে, ডেড সি এলাকা থেকে পাওয়া ওই তাম্রলিপির মত?’

    ‘ঠিক তা-ই,’ সায় দিলেন রশিদ। ‘আমাদের থিয়োরি ঠিক হলে, এই ধাতব পাত হয়তো আজ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বেশি পুরনো তাম্রলিপি। অর্থাৎ, সাত হাজার বছর আগের!, হয়তো এক শ’টা তথ্য জানতে পারব আমরা দুর্মূল্য এই জিনিস থেকে— জানব সেই সময়ের সমাজ সম্পর্কে।’

    সাবধানে কবরে নেমে পড়লেন তিনি, কিছুই এলোমেলো না করে চলে গেলেন পাথরের এক ট্যাবলেটের সামনে। ঘোড়ার রোমের ব্রাশ দিয়ে ওটার ওপর থেকে বালি সরাতেই, দেখা দিল ছোট একটা সিম্বল। তখনই রশিদ বুঝলেন, ওই ট্যাবলেট পাথরের নয়, কাদা বা অ্যাডোবি দিয়ে তৈরি। পরে শুকিয়ে নেয়া হয়েছে আগুনে বা রোদে। পাথরের না হলেও খুব পোক্ত মনে হলো ওটাকে।

    সতর্ক হয়ে খোদাই করা চিহ্নের ওপর ফুঁ দিলেন রশিদ। ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করলেন ওপরের অংশ।

    ওপর থেকে লণ্ঠনের আলো ফেলল টম কনোরি।

    হলদে আলোয় অক্ষরগুলো দেখলেন রশিদ।

    ‘কী বুঝছেন, স্যর?’ জানতে চাইল টম।

    বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি টের পেলেন রশিদ একই সঙ্গে চেপে বসল হতাশা। ‘প্রোটো-এলামাইট।’ অত্যন্ত প্রাচীন আমলে লেখা, কিন্তু দুঃখজনক, আজও এসব লেখার অর্থ উদ্ঘাটন করতে পারেনি কেউ। কখনও অনুবাদ হয়নি এই জিনিস।

    চোয়াল শক্ত হলো আবু রশিদের। না, রহস্যময় লেখা হিসেবে রয়ে যাবে কাদার তৈরি এই ট্যাবলেটও। কঙ্কালের হাত থেকে নেয়া তামার লিপি আবারও দেখলেন। কাদার ট্যাবলেটের মতই একই ভাষায় কিছু লেখা।

    একবার মাথা দোলালেন রশিদ, এখন আর ঝড়ের শোঁ-শোঁ আওয়াজ শুনছেন না। আবারও চোখ রাখলেন ট্যাবলেটের মাঝের চিহ্নে। ওটা বৃত্তের মত, কিন্তু চারদিকে চারটে খাঁজ। দেখতে অনেকটা কমপাসের কাঁটার মত। বৃত্তের ভেতরে চারকোনা এক অংশ, তার বুকে খাড়া আয়তক্ষেত্র।

    সবমিলে এই সিম্বল মোটেও প্রোটো-এলামাইট স্ক্রিপ্টের মত নয়। গভীর চাপ দিয়ে তৈরি। ট্যাবলেটের অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে মিল নেই এই চিহ্নের। তবুও মনে হলো, আগেও দেখেছেন ওটা।

    ঝোড়ো হাওয়ার ভেতরেও শোনা গেল যিপার টেনে তোলার আওয়াজ। এই ঝঞ্ঝায় কে এল দেখতে ঘুরে তাকালেন রশিদ। তাঁবুতে ঢুকেছে দ্বিতীয় আমেরিকান ছাত্র, পিটার ক্যাস্টিল, ভয়ে ফ্যাকাসে মুখ।

    ‘তাঁবুর ফ্ল্যাপ বন্ধ করো,’ তাড়া দিলেন রশিদ। চোখে-মুখে এসে পড়ছে এক রাশ বালি।

    ‘এখান থেকে চলে যেতে হবে,’ রশিদের দিকে না চেয়ে সরাসরি টম কনোরিকে বলল ক্যাস্টিল।

    ‘পিটার!’ ধমকের সুরে বললেন রশিদ।

    ‘ওরা আসছে,’ জবাবে বলল তরুণ, ‘সব খনন এলাকায় যাচ্ছে আমেরিকানদেরকে বন্দি করতে।’

    রশিদের দিকে তাকাল টম কনোরি।

    ‘এবার আসবে এখানে, ট্রাকে করে আসছে,’ জোর দিয়ে বলল ক্যাস্টিল। ‘ওদের সঙ্গে আছে বন্দুক। জান বাঁচাতে চাইলে পালাতে হবে।’

    ‘তোমার কোনও ভুল হচ্ছে না তো, পিটার?’ জিজ্ঞেস করল টম কনোরি।

    ‘এমি আর ফারহানকে গুলি করেছে। তার আগে বলেছে ওরা বিশ্বাসঘাতক। তখন পালাতে শুরু করি আমরা।’

    ‘অন্যরা ঠিক আছে?’ জানতে চাইল টম।

    মাথা নাড়ল ক্যাস্টিল। যা দেখে এসেছে, তাতে চোখে-মুখে নিদারুণ ভয়। ‘না, ওরা ভাল নেই।’

    ট্যাবলেটের দিকে ঘুরলেন রশিদ, দ্রুত চলছে মগজ। ভীষণ অসুস্থ বোধ করছেন। এমি বা ফারহান তাঁরই ছাত্র, ইরানিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করত। অন্যতম সেরা ছাত্র। খুন হয়ে গেছে বিপ্লবীদের হাতে।

    ‘মিস্টার রশিদ, পালাতে হবে আমাদেরকে,’ মিনতির সুরে বলল ক্যাস্টিল।

    রশিদ বুঝতে পারছেন, ছেলেটা ঠিকই বলেছে। আসলে তাঁরই ভুল, গ্রামের দিকে এভাবে লেলিহান আগুনের মত বিপ্লব ছড়িয়ে পড়বে, মোটেও বুঝতে পারেননি।

    ‘শুনুন,’ ফুল ভলিউমে রেডিয়ো ছাড়ল টম কনোরি।

    স্ট্যাটিকের ভেতর ভাঙা ভাঙাভাবে এল সংবাদ পরিবেশকের কথা: ‘…ওরা এখন দখল করছে আমেরিকান এম্বেসি, চারপাশের রাস্তা ভরে গেছে ভিড়ে। জ্বলছে আমেরিকার পতাকা। সবাই চিৎকার করে বলছে, আমেরিকা নিপাত যাক…

    ‘বাঁচতে চাইলে পালাতে হবে,’ বলল কনোরি।

    মাথা দোলালেন রশিদ। যদিও মেনে নিতে পারছেন না। ব্যস্ত হয়ে টুকটাক কিছু জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছে কনোরি। আনমনে মাটির ট্যাবলেট দেখলেন রশিদ। আশ্চর্য, আগে কোথায় দেখেছেন ওই সিম্বল?

    তাঁবু থেকে বেরোল ক্যাস্টিল। দরজায় থেমে ঘুরে রশিদকে দেখল কনোরি। ‘আসুন, এখানে থাকলে মরবেন।’

    ‘আমার কিছুই হবে না,’ বললেন রশিদ।

    ‘ভুল ভাবছেন,’ বলল তরুণ, ‘ওরা জানে, আপনি কাজ করেন আমেরিকানদের সঙ্গে। আমাদেরকে এখানে না পেলেও আপনাকে পাবে। তখন আর জানে বাঁচতে দেবে না।’

    যুক্তিটা বুঝলেন রশিদ, কিন্তু মন চাইছে না পালাতে। বুঝতে পারছেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেয়ে যাওয়ার খুব কাছে পৌঁছে গেছেন। সেটা বিপ্লব বা অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের চেয়েও অনেক জরুরি কিছু।

    ‘এই সিম্বল, আগেও দেখেছি,’ ট্যাবলেট দেখালেন তিনি

    ওঁউওঁ-ওঁউওঁ শব্দে হাহাকার করছে ঝোড়ো হাওয়া, থরথর করে কাঁপছে গোটা তাঁবু। এসব বিপদ যেন কিছুই নয়, চুপ করে দাঁড়িয়ে মাথা খাটাতে চাইছেন রশিদ।

    ‘ওটা আগে দেখুন বা না দেখুন, এখন কিছুই যায় আসে না,’ বলল টম কনোরি।

    ‘ভুল বললে!’

    ‘স্যর, আপনি যদি মরেই যান, সিম্বল দিয়ে কী করবেন?’

    আবারও ফ্ল্যাপের ভেতর মাথা ঢোকাল ক্যাস্টিল। ‘ওরা ট্রাক ছেড়ে দিচ্ছে।’

    আসলেই কিছু করার নেই। রশিদ বুঝে গেছেন; তাঁকে যেতেই হবে। শেষবারের মত সিম্বলটা দেখলেন তিনি। মনে গেঁথে নিলেন চিহ্নটা, তারপর কবর থেকে উঠে দরজার দিকে যেতে গিয়েও থামলেন, খপ করে তুলে নিলেন কঙ্কালের কাছ থেকে পাওয়া তামার লিপিটা।

    তাঁবু থেকে বেরোবার সময় শপথ করলেন, জান থাকতে বিপ্লবীদের হাতে পড়তে দেবেন না তাঁর আবিষ্কার। এক হাতে টেনে তুললেন তাঁবুর একটা খুঁটি। বাকি কাজ সারল দমকা হাওয়া। ভেতরে বাতাস ঢুকতেই বেলুনের মত ফুলে উঠল তাঁবু, মরুভূমির ওপর দিয়ে সুতো কাটা, মস্ত এক ঘুড়ির ভঙ্গিতে উড়ে গেল।

    চল্লিশ গজ দূরে অপেক্ষা করছে বড় এক ডিজেল ট্রাক। এরই ভেতর ওদিকে দৌড় শুরু করেছে ক্যাস্টিল ও কনোরি।

    ‘আসুন, স্যর!’ চিৎকার করল ক্যাস্টিল।

    চোখের ওপর হাত রেখে ঝড়ের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে ট্রাকের দিকে ছুটলেন রশিদ। কিছুক্ষণ পর দুই আমেরিকানের পেছনে উঠে পড়লেন ট্রাকের বেডে। বসে আছে আরও তিনজন। ক্যাব ভরে গেছে আগেই।

    দূরে আবছা রোদে আয়নার ঝিলিক দেখলেন রশিদ। ওদিক থেকে আসছে বেশ কয়েকটা গাড়ি। একটু পরেই পৌঁছে যাবে এখানে।

    হাতে সময় নেই। চালু হলো ট্রাক।

    গিয়ার বদলাতে গিয়ে হোঁচট খেল ট্রাক, মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন রশিদ। হাত থেকে ছুটে গেছে তাম্রলিপি। ট্রাকের বেডের পেছনে খটাং করে পড়েই ছিটকে চলে গেল নিচের বালিতে। এদিকে গতি তুলেছে ট্রাক।

    হায়-হায় করে উঠলেন রশিদ। প্রায় ক্রল করে চলে গেলেন ট্রাকের বেডের শেষ মাথায়। ঠিক করেছেন লাফিয়ে নেমে পড়বেন। অবশ্য, কয়েক সেকেণ্ড পর বুঝলেন, অনেক জোরে ছুটছে ট্রাক। ঘুরে খপ করে কনোরির বাহু ধরলেন তিনি। ‘ড্রাইভারকে থামতে বলো! খুবই জরুরি!’

    ঝড়ের মাতম আর ডিজেল ইঞ্জিনের আওয়াজের ওপর দিয়ে প্রায় হারিয়ে গেল তাঁর কথা।

    ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে!’ চিৎকার করে বলল কনোরি।

    ‘না!’ প্রায় উন্মাদ হয়ে উঠলেন রশিদ, ঠিক করেছেন দ্রুতগামী ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামবেন। কিন্তু শক্ত হাতে তাঁর কাঁধ চেপে ধরল কনোরি

    ‘আমাকে ছেড়ে দাও!’

    ‘না, স্যর। অনেক দেরি হয়ে গেছে! ওটা আর পাবেন না!’

    এরই ভেতর অন্তত তিরিশ মাইল বেগে ছুটছে ট্রাক। বিপ্লবীরা আসছে পুব থেকে। ট্রাক থেকে নেমে পড়লে বাঁচতে পারবেন না রশিদ।

    হতাশার কারণে শিথিল হলো তাঁর দেহ। কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিল কনোরি। ঝড়ের ভেতর দিয়ে বহু দূরে তাকালেন রশিদ। দমে গেছে মনটা। দেখা গেল না তাম্রলিপি।

    মাত্র দু’মিনিটে সাগরের ঢেউয়ের মত ঝোড়ো বালির তলে হারিয়ে যাবে ওটা। হয়তো এক ঘণ্টার ভেতর বালিতে বুজে যাবে সব গর্ত, অথবা সময় নেবে কয়েক দিন। চিহ্ন না থাকলে চিরকালের জন্যেই হারিয়ে যাবে ওই কবর। কেউ জানবে না ওটাতে কী আছে।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমা – আনিসুল হক
    Next Article রাইফেল, রোটি, আওরাত – আনোয়ার পাশা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }