Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    লেখক এক পাতা গল্প361 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মৃত্যুঘণ্টা – ২৭

    সাতাশ

    দুবাইয়ের নীলচে জলের মেরিনা থেকে সরে যাচ্ছে চল্লিশ ফুটি, পুরনো কেবিন ক্রুযার। ওটার মালিক ছিলেন মিনা মোবারকের স্বামী, মারা গেছেন কয়েক বছর আগে গাড়ি দুর্ঘটনায়।

    প্রথম থেকেই বিপত্নীক ভাইয়ের মেয়ে কিশোরী মোনা ও শিশু মিনতির লালন-পালনের জন্য মন ঢেলে দিয়েছিলেন নিঃসন্তান মিনা মোবারক। গত দশ বছরে আরও বেড়ে গেছে ভালবাসা। একমাত্র উদ্দেশ্য ভাইয়ের দুই মেয়েকে ভাল রাখা।

    কেবিন ক্রুয়ারের পেছনে আছে রানা। পাইলটিং করছেন মিনা মোবারক। পেছনে দুবাই শহরের কোটি ঝলমলে হরেকরঙা বাতি। এখনও দূরে দেখা যাচ্ছে বুর্জ আল আরব হোটেলের নিচ থেকে ওঠা কালো ধোঁয়া। শহরের এত আলোর কারণে মাথার ওপরের আকাশে নক্ষত্র উধাও। সাগরে পঞ্চাশ ফুটের মধ্যে কোনও জলযান নেই। রানার মনে হলো, ওরা হারিয়ে যাচ্ছে সাগরের গভীর শূন্যতায়।

    বোটে ওঠার পর ডক্টর মোবারক সম্বন্ধে মোনার কাছে জানতে চেয়েছে রানা। ওর জানা দরকার, কোন্ ধরনের লোকের সঙ্গে মিশছিলেন তিনি। এমন কোনও তথ্য পাওয়া যেতে পারে, যেটা পরে কাজে আসবে। এদিকে মোনা আর ওর ছোট বোনের কারণে কঠিন হয়ে গেছে পরিস্থিতি। যখন-তখন ওদের ওপর হামলা হবে।

    রানা প্রশ্ন শুরু করতেই বাধা দিয়েছে মোনা। ছোট বোনকে নিয়ে গেছে সামনের কেবিনে। মিনতিকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তারপর আসবে। রানার মনে হয়েছে, বাবার মৃত্যু-সংবাদ পেয়ে খুব দ্রুত শোক কাটিয়ে উঠেছে মোনা। একই কথা খাটে মিনা মোবারকের ক্ষেত্রে। শান্ত হাতে রাতের সাগরে নিয়ে চলেছেন কেবিন ক্রুযার।

    বাবার ভালবাসা পায়নি মিনতি, বড় হয়েছে ফুফুর কাছে। তাই বাবার মৃত্যু-সংবাদ বড় ধরনের ঝাঁকি দেয়নি বাচ্চা মেয়েটাকে। তার ওপর গুরুতরভাবে অসুস্থ। কেবিন ক্রুয়ারে ওঠার সময় রানা দেখেছে, খুব কষ্ট হয়েছে বেচারির। মোনা বলেছে, খুব জটিল আর্থ্রাইটিস মিনতির। এ ছাড়া, ভারী পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতে হয় বয়স্ক মানুষের মত।

    হঠাৎ ডক্টর মোবারকের একটা প্রশ্ন জেগে উঠল রানার মনে। মাঝে মাঝে ওই বিষয়ে ভাবতেন ভদ্রলোক। আমাদের মত মানুষকে শাস্তি দিচ্ছেন স্রষ্টা। আমাদের উচিত ছিল না এতকাল বেঁচে থাকা।

    ডক্টর মোবারকের মনে এসব এসেছে হয়তো মিনতির অসুখ হওয়ার পর। বোনের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন অসুস্থ মেয়েকে। সত্যিকারের প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, তিনি কি চেষ্টা করেননি ওই রোগের ওষুধ আবিষ্কার করতে? নাকি তাঁরই এক্সপেরিমেন্টের কারণে মেয়েটার এই অবস্থা? নিজ হাতে তৈরি করেছিলেন এমন এক ড্রাগ, যেটা কমিয়ে দেয় আয়ু? প্রয়োগ করেছিলেন নিজের শিশু মেয়ের ওপর? ডক্টর মোবারকের ল্যাবে বয়স্ক ইঁদুর দেখেছে এলেনা। কিছুই উড়িয়ে দেয়া যায় না।

    হয়তো এ কারণেই স্রষ্টার প্রতিশোধের কথা ভেবেছেন। এমন এক জেনেটিকস বিজ্ঞানী, যিনি খেলেছেন জীবন বা আয়ু নিয়ে। রেলিঙে হাত রেখে চুপ করে আঁধার সাগরে চোখ রাখল রানা। সামনে খুলে গেল কেবিনের দরজা। পাশে এসে দাঁড়াল মোনা। ওর বাহুতে হাত রেখে নীরবে যেন জানাচ্ছে কৃতজ্ঞতা। ফিরে মোনার চোখে তাকাল রানা। খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা।

    ‘কিছু প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন,’ বলল রানা। ‘তোমার বাবা যাদের সঙ্গে মিশছিলেন, তাদের সম্পর্কে কতটা জানো তুমি?’

    রানার বাহু থেকে হাত সরিয়ে দূরে তাকাল মোনা। ‘খুব বেশি কিছু জানি না। আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসার পর আলাদা পথে হেঁটেছি। দু’জনের যোগাযোগ হয়েছে কখনও,

    কিন্তু … ‘ চুপ হয়ে গেল মোনা। ফিরল রানার দিকে। ‘তোমাকে বলেছি, আগে অন্তত বারোবার ঝগড়া হয়েছে।’

    ‘কী কারণে?’

    ‘কারণ অন্যরকম জীবন চেয়েছি।’

    ‘তা হলে এক সঙ্গে কাজ করতে কেন? অনেকের সঙ্গে পরিচয় ছিল তোমার।

    আবারও সাগরে চোখ রাখল মোনা। ‘বাবার সঙ্গে কাজ করেছি মিনতির জন্যে।

    এসবের সঙ্গে জড়িত বাচ্চা মেয়েটার অসুখ। তার সঙ্গে মিশে গেছে কাল্টের বিপদ।

    ‘কাল্টের হয়ে কাজ করতে গেলেন কেন তিনি?’

    ‘তাঁর পছন্দ মত কোথাও ভাল সুযোগ ছিল না। বাধ্য হয়েই ওই নিষ্ঠুর লোকগুলোর হয়ে কাজ করতে রাজি হন।’

    ‘কত দিন ধরে কাজ করেন?’

    ‘অন্তত এক বছর,’ বলল মোনা। রানার চোখে চোখ রেখেও সরিয়ে নিল দৃষ্টি। ‘বাবাকে খুব নির্যাতন করেছে?’

    অদ্ভুত প্রশ্ন।

    নরম সুরে বলল রানা, ‘ওরা তাঁকে খুন করেছে।’

    ‘জানি। কিন্তু মৃত্যু এক কথা, আর প্রচণ্ড কষ্ট দেয়া অন্য কিছু। কখনও চাইনি বাবাকে কষ্ট দিক কেউ। মৃত্যুর চেয়েও বেশি কষ্ট আছে। আফ্রিকায় জেনারেলরা ভয়ঙ্কর সব শাস্তির কথা বলত, মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলত।’

    চুপ করে থাকল রানা।

    ‘রানা, একবার বল, বাবাকে কষ্ট দেয়নি ওরা,’ ভেজা কণ্ঠে বলল মোনা।

    মিথ্যা বলতে বাধল রানার, সংক্ষেপে বলল, ‘এ ধরনের লোক সহজে মরতে দেয় না।’

    সাগরের অন্ধকারে তাকাল মোনা। আড়ষ্ট হয়ে গেছে দেহ। সামলে নিতে চাইছে অশ্রু।

    প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল রানা, ‘আসলে কী হয়েছে মিনতির?’

    পাশের গদিওয়ালা বেঞ্চে বসে বলল মোনা, ‘জানতে চাও আসলে কী হয়েছে ওর?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘বলতে পারো কী হচ্ছে।’

    ‘এখনও হচ্ছে?’ নরম সুরে জানতে চাইল রানা।

    মাথা দোলাল মোনা। ‘হ্যাঁ, ওর যা হচ্ছে, তা ঘটছে সবারই। কিন্তু তার ভেতর তফাৎ আছে।’

    রানার মনে পড়ল, বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকার কথা। কবে যেন পড়েছিল, এ ধরনের এক-দু’জন বাচ্চা ছেলে-মেয়ে পাওয়া গেছে, যারা অকালে বুড়িয়ে যায়। বেশি দিন বাঁচে না।

    কানের ওপর থেকে এক গোছা চুল সরিয়ে দিল মোনা, হাতের ইশারা করল রানাকে পাশে বসতে।

    বসল রানা। বুঝতে পারছে, অনেক কথা জমে আছে মোনার মনে।

    ‘সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি জলদি বয়স বাড়ছে মিনতির,’ বলল মোনা।

    নীরব থাকল রানা।

    ‘মিনতির বয়স মাত্র এগারো বছর,’ বলল মোনা, ‘আমার চেয়ে বারো বছরের ছোট, কিন্তু বেড়ে গেছে অস্টিওপোরোসিস। ছানি পড়ছে চোখে। শক্ত করে কেউ ধরলে ছড়ে যায় ত্বক, রক্ত পড়ে। বেশি দিন নেই ডায়ালাইসিস করতে হবে। ফেইল করছে ওর কিডনি।’

    ভাবল রানা, সত্যি, বড় অদ্ভুত মানুষের জীবন!

    ‘জটিল জেনেটিক ডিযিয, বিজ্ঞানীরা নাম দেন প্রোজেরিয়া বা ওয়ার্নার সিনড্রোম। স্বাভাবিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছে না মিনতির ত্রুটিযুক্ত ডিএনএ।’

    ‘প্রাকৃতিকভাবে এমন হচ্ছে ওর?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘হ্যাঁ।’

    আস্তে করে শ্বাস নিল রানা। এসব দুঃসংবাদের ভেতরেও ওর ভাল লাগল, এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে মেয়ের ক্ষতি করেননি ডক্টর মোবারক।

    ‘যা করার করছেন স্রষ্টা,’ বলল মোনা, ‘যদি তাঁর অস্তিত্বের ওপর বিশ্বাস রাখো আর কী!’

    ‘চিকিৎসা করে রুখে দেয়া যায় না ওই অসুখ?’ জানতে চাইল রানা।

    আবছা হাসি ফুটে উঠল মোনার ঠোঁটে, চোখে অশ্রু। যেন খুঁজছে এমন এক প্রশ্নের জবাব, যেটা কখনও পাবে না। করুণ শোনাল ওর কণ্ঠ: ‘আমরা চেষ্টা করছি।’ মুখ অন্য দিকে সরিয়ে চোখ মুছে ফেলল।

    ‘তুমি আর তোমার বাবা,’ মন্তব্যের সুরে বলল রানা। ‘তোমরা গবেষণা করে বের করতে চেয়েছ ওষুধ।’

    মাথা দোলাল মোনা।

    ‘আফ্রিকায় ওই কাজেই ব্যস্ত ছিলে? তাই বিপদের ঝুঁকি নিতেও তোয়াক্কা করোনি?’

    মাথা দোলাল মোনা। ‘আমার মা মারা যান মিনতিকে প্রসব করতে গিয়ে। এক বছর পর ধরা পড়ল ওর ওই রোগ। যে- কোম্পানির হয়ে কাজ করতেন বাবা, সেখানে বললেন এই রোগ নিয়ে গবেষণা করতে চান। তাঁর লাগবে তাদের দামি স ইকুইপমেন্ট। দরকার ফাণ্ড। কিন্তু সাহায্য করতে চাইল ন তারা।’

    চুপ করে থাকল রানা।

    ‘তাদেরকে গোপন করে এক্সপেরিমেন্ট করতে লাগলেন বাবা। হয়তো বোকার মতই। আর কী-ই বা করতেন? ওরা যখ জানল, খুব রেগে গেল। চাকরি হারালেন বাবা। ডেটা ও স্যাম্প নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। হাতে যথেষ্ট টাকা নেই যে গবেষণ করবেন। সতেরো বছর বয়সে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পেলাম জেনেটিকস-এ। কিন্তু কিছু দিন পর লেখাপড়া ছেড়ে সাহায্য করতে চাইলাম বাবাকে। জোর করে গেলাম তাঁর সঙ্গে আফ্রিকায়।’

    বোটের পাইলট হাউসের দিকে তাকাল মোনা। ‘মিনা ফুফুর সঙ্গে রয়ে গেল মিনতি। প্রথমে গেলাম কোস্টা রিকা, তারপর কঙ্গো। আমাদের মনে হয়েছিল; ঠিক জায়গায় গেছি। গবেষণা করতে বাধা ছিল না। ভাবতাম, কয়েক বছরের ভেতর আবিষ্কার করব ওই রোগের ওষুধ।’

    বিষণ্ণ হাসল মোনা। ‘কত ভুলই না ‘ভবেছি।’

    অসহায় এক বাবা ও তার জেদি মেয়ের মন বুঝল রানা। দিনরাত কাজ করেছে ওরা। রানা আগে ভেবে পায়নি, কেন তরুণী মেয়েকে অত বিপদে রেখে পাগলের মত গবেষণার পেছনে সময় দিতেন ডক্টর মোবারক। আসলে মোনার চেয়েও অসহায় শিশু মেয়েকে বাঁচাতে জান দিতেও আপত্তি ছিল না তাঁর।

    কেবিন ক্রুয়ারের সামনের কেবিনের দিকে তাকাল রানা। বাচ্চা মেয়েটা এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। ‘কী কারণে হয় এই রোগ?’

    ‘কয়েক ধরনের টাইপ আছে,’ বলল মোনা। ‘মিনতির বেলায় ডিএনএর টেলোমারগুলোর আয়ু কমছে। সবারই তাই হয়। আমাদের সেল ভেঙে গেলে কমে টেলোমার। কিন্তু মিনতির ক্ষেত্রে তা অনেক জলদি হচ্ছে। প্রোজেরিয়ার কোনও কোনও রোগী অন্যভাবে আক্রান্ত হয়। তাদের চোখে ছানি পড়ে না। বোঝাও যায় না চট্ করে বাড়ছে বয়স। কিন্তু মিনতির বেলায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সব সেল। প্রায় ফুরিয়ে এসেছে ওর টেলোমার।’

    আবারও দূরের সাগরে তাকাল মোনা। ‘নতুন কোনও ব্রেস্থূ না হলে বারো বছর হওয়ার আগেই মারা যাবে মিনতি।’

    রানার মনে হলো, ওর বুকে চেপে বসেছে কয়েক টন ওজনের পাথর। মনে পড়ল লুবনার কথা। ওকেও বাঁচতে দেয়নি একদল পশু। কিন্তু মিনতির ব্যাপারটা অন্যরকম, ওকে বাঁচতে দিতে চাইছে না প্রকৃতি।

    ‘তার মানে, টাকা জোগাড় করা, রিসার্চ করা, বিপজ্জনক লোককে মিথ্যা বলা, সবই ডক্টর মোবারক করেছেন মিনতির জন্যে?’

    আস্তে করে মাথা দোলাল মোনা। ‘তুমি কি এর চেয়ে কম কিছু করতে, রানা?’

    কেন যেন বুকে অসহায় রাগ টের পেল রানা। আসলে কিছুই তো করার নেই ওর!

    ডক্টর মোবারক প্যারিসে গোপনে গবেষণা করছিলেন। ওটার সঙ্গে সম্পর্ক নেই এই রোগের। ভুল পথে যাচ্ছিলেন তিনি।

    মার্ভেল ড্রাগ্‌স্‌ কর্পোরেশন চকচকে সব বিজ্ঞাপন দিলেও তারা মোনার সাহায্য নিয়ে অনেক দূর এগোতে পেরেছে। তার মানে এটা নয় যে, আবিষ্কার হয়েছে তারুণ্যের চিরকালীন ফোয়ারা। আরেকটা কথা মনে পড়ল রানার। ডক্টর মোবারকের ট্রায়াল ৯৫২-র সঙ্গে মিল কেন মোনার গবেষণায়?

    ‘মার্ভেল ড্রাগস্‌ কর্পোরেশনের প্রথম মালিকদের একজন তোমার বাবা, ওখানে থেকেই গবেষণা করতে পারতেন,’ বলল রানা।

    ‘ডিরেক্টররা রাজি হননি, আগেই দামি সব গবেষণা করতে গিয়ে নিজের মালিকানা বিক্রি করে দিয়েছিলেন বাবা,’ বলল মোনা।

    ওর ফুফু এসে বসলেন বেঞ্চে। শেষ কিছু কথা শুনেছেন। ‘বড়দা একা গবেষণা করতে গিয়ে শেষ করে ফেলেছিল প্রায় সব টাকা। তার ওপর পেছনে লেগে গিয়েছিল একদল খারাপ লোক।

    সবাই চুপ হয়ে যাওয়ায় জানতে চাইল রানা, ‘মোনা, মিনতির মত রোগীর জন্যে কোনও ওষুধ আবিষ্কার করেছে তোমার কর্পোরেশন?’

    একটু দ্বিধা নিয়ে বলল মোনা, ‘এখনও না। গবেষণা করছি আমরা।’

    ‘তা হলে হোটেলে যে বিজ্ঞাপন…’

    ‘ফাণ্ড পাওয়ার জন্যে,’ বলল মোনা। ‘প্রোজেরিয়া সারাতে পয়সা খরচ করবে না কেউ। ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক নয়। বিরল রোগ। রোগী না পেলে কার কাছে ওষুধ বিক্রি করে টাকা তুলবে? ওষুধ আবিষ্কার করলেও একেক ডোযের জন্যে পড়বে হয়তো দশ মিলিয়ন ডলার।’

    ‘কোনও অনুদান পাওয়া যাবে না?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘চেষ্টা করেছেন বাবা, সফল হননি।’ দুবাই শহরের দিকে তাকাল মোনা। ‘ওই শহরে এমন লোক আছে, যারা টাকা পুড়িয়েও শেষ করতে পারবে না। পড়ে আছে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আমাদের তো নেই। বাবা সবই শিখিয়েছেন আমাকে। এটাও শিখিয়ে দিয়েছেন, বড়লোকের কাছে হাত পেতে নিজেকে ছোট কোরো না।’

    চুপ হয়ে গেল মেয়েটা। একটু পর বলল, ‘দয়া করবে এমন লোকের কাছে চাইনি। এমন লোক বেছে নিয়েছি, যারা অনুরোধ করবে তাদের টাকা নিয়ে জরুরি গবেষণা সফল করতে। এখন মার্ভেল ড্রাগ্‌স্‌ কর্পোরেশনের কাছে যথেষ্ট ফাণ্ড আছে। মিথ্যা বলতে হবে না, লুকিয়ে কাজ করতে হবে না, বাবা যেমন চেয়েছেন, তেমন করেই গবেষণা করতে পারব।’

    একটু গর্ব টের পেল রানা মেয়েটার কণ্ঠে। মার্ভেল ড্রাগ্‌স্‌ কর্পোরেশনে আছে মোনার ক্ষমতা। এক ধাপ এগিয়ে গেছে ওর বাবার দেখিয়ে দেয়া পথে। লাখে লাখে কোটিপতি টাকা খরচ করবে অমৃতের মত ওষুধ পেতে। আমেরিকার এফডিএ-এর মত সংগঠনের মতই পাশে পাবে মোনা একদল যোগ্য গবেষককে।

    ‘আসলে দীর্ঘায়ু হতে হলে টাকা চাই,’ একটু তিক্ত সুরে বলল মোনা। ‘বড়লোকরা দীর্ঘায়ু হবে। কিন্তু তার মানে এমন নয় যে, সুন্দর হয়ে উঠবে পৃথিবী। আসলে এসব নিয়ে ভাবি না। আমার চিন্তা মিনতিকে ঘিরে।’ আবারও চুপ হয়ে গেল মোনা। বুঝতে পারছে, গবেষণা করার সুযোগও আসলে নেই। ভয়ঙ্কর খারাপ কিছু চাই, তাই ওকে গবেষণায় বাধ্য করতে চাইছে একদল পশু।

    ‘তোর বাবা চেয়েছিল গোপনে গবেষণা করতে,’ বললেন মিনা মোবারক, ‘নইলে এত বিপদে পড়ত না। কখনও চায়নি, চিরকালের জন্যে মানুষ বেঁচে থাকুক।’

    ‘এক ডিভিডিতে ওঁর বক্তৃতা শুনেছি,’ বলল রানা। ‘জোর করে পৃথিবীর লোকের আয়ু কমাবার কথা বলেছেন। অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলেছেন। …এসব কি বলেছেন হতাশা থেকে?’

    বিব্রত চেহারা হলো মোনার। ‘আসলে ওসব বিশ্বাস করতেন না। বোঝাতে চেয়েছেন, সামনে বড় বিপদে পড়বে মানবজাতি। জন্ম-নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যামিলি প্ল্যানিঙের বিষয়ে দায়িত্বশীল বাবা- মাদেরকে বোঝাতে জোর দিতেন। এখন তো ওষুধের গুণে আগের অবস্থা নেই যে, দশটা ছেলে-মেয়ে হলে বাঁচবে দু’জন।’

    ‘আমি বিচারক নই, ডক্টর মোবারককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বুঝতে চাইব না, তিনি ঠিক বলেছেন না ভুল,’ বলল রানা। বড়জোর বলব, বাধ্য হয়ে একদল খারাপ লোকের সঙ্গে মিশতে গিয়ে তোমাদের তিনজনকে ফেলে দিয়েছিলেন মস্ত ঝুঁকির ভেতর।’ মোনার দিকে তাকাল। ‘আমি দুঃখিত, সঠিক সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু চিঠিতে তিনি লিখেছেন, দারুণ কিছু আবিষ্কারের খুব কাছে পৌঁছে গেছেন। আমার ভুল না হয়ে থাকলে, ওই পর্যায়েই খুন হন। মোনা, তুমি কি বলতে পারবে কী নিয়ে গবেষণা করছিলেন ডক্টর?’

    নিষ্পাপ চোখে রানাকে দেখল মোনা। দৃষ্টিতে একই সঙ্গে গর্ব ও জ্ঞানের ছটা। ‘কয়েক বছর গবেষণা করার পর অন্য পথে হাঁটেন বাবা। দীর্ঘায়ু প্রাণীদের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করেন। একবার দেখল সামনের কেবিন। ‘বাবার গবেষণা থেকে যা বেরিয়ে এসেছিল, সে অনুযায়ী মিনতির দেহে কিছু সেল যুক্ত করেছি। ওগুলো এখন ওর দেহের অংশ। মনে হচ্ছে, কাজও করছে। বাড়ছে ওর আয়ু।’

    ‘এটাই কি ব্রেথু?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘বাবা ভাবতেন, প্রকৃতি যেহেতু কমিয়ে দিচ্ছে টেলোমার, তা হলে প্রকৃতির বুকেই আছে তার উল্টো কিছু। অর্থাৎ, অমৃত ধরনের জিনিস। অনেক কাহিনিতে আমরা পড়েছি, হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকতেন কেউ কেউ। বাস্তবেও হয়তো তা সম্ভব। বাবার এক ইরানিয়ান আর্কিওলজিস্ট বন্ধু ছিল। নাম আবু রশিদ। বলতে পারো, দু’জনই পাগলাটে মানুষ। তাঁরা দু’জন মিলে খুঁজতে শুরু করেছিলেন অমৃত। রশিদের ধারণা ছিল, তিনি মরুভূমির বালিতে হারিয়ে ফেলেছেন অমৃত তৈরির ফরমুলা।’

    আবু রশিদের কথা শুনে সতর্ক হয়ে উঠেছে রানা।

    ‘আবু রশিদ আর বাবার স্বপ্ন ছিল, পাবেন অমৃত,’ বলল মোনা। ‘মরুভূমিতে রশিদ নাকি পেয়েছিলেন তামার এক ‘লিপি। ওটার লেখা অনুযায়ী: পৃথিবীতে আছে প্রায় স্বর্গের উদ্যানের মত এক বাগান।’

    ‘যেখানে আছে অমৃত,’ রানার মনে হলো গভীর সাগরে সাঁতরে চলেছে, কিন্তু কোথাও নেই ঠাঁই, ‘কোথায় ছিল ওই বাগান?’

    ‘জানি পাগল ভাবছ তাঁদের দু’জনকে,’ বলল মোনা। ‘কিন্তু রশিদ ভাবতেন ঠিকই খুঁজে পাবেন ওই উদ্যান। আর তাঁর কথা বিশ্বাস করেছিলেন বাবা। ভাবতেন, বাগানের ওই অমৃত পেলে বাঁচাতে পারবেন মিনতিকে।’

    ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল রানা, ‘ওঁরা জানতেন কোথায় আছে ওই বাগান?’

    ‘রশিদ ভাবতেন, ওই উদ্যান স্রষ্টার অদ্ভুত এক অলৌকিক কিছু। বাবা ভাবতেন, অমৃতের মত কিছু পাওয়া গেলে তা হবে বিজ্ঞানের অলৌকিক ঘটনা। সত্যিই হয়তো কখনও আর মরতে হবে না মানুষকে। ‘

    ‘চিরকালীন জীবন?’ মোনার চোখে তাকাল অবাক রানা।

    মাথা দোলাল মেয়েটা। ‘পবিত্র প্রায় সব মহাগ্রন্থে আছে জীবন ফিরিয়ে দেয়া গাছ বা জীবন-বৃক্ষের কথা।’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমা – আনিসুল হক
    Next Article রাইফেল, রোটি, আওরাত – আনোয়ার পাশা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }