Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    লৌহকপাট – জরাসন্ধ (চারুচন্দ্র চক্রবর্তী)

    জরাসন্ধ (চারুচন্দ্র চক্রবর্তী) এক পাতা গল্প980 Mins Read0

    লৌহকপাট – ২.৮

    আট

    পূর্বদিকে বর্মা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম, মাঝখানে যে পর্বতসঙ্কুল ভূখণ্ড, তার নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম। সাহেবরা বলতেন চিটাগাঙ্ হিল ট্রাক। বাংলা দেশ। কিন্তু বাংলার সঙ্গে তার সম্পর্ক শুধু ভৌগোলিক, দৈহিক নয়, আত্মিকও নয়। বাংলার শ্যামলিমা আছে, নেই তার উন্মুক্ত বিস্তার। কোনও অবারিত মাঠের প্রান্তে নুইয়ে পড়ে না চুম্বনাকুল গগনললাট। কোনও আদিগন্ত নদীর বুকে নেমে আসে না স্খলিতাঞ্চলা সন্ধ্যা। বুকভরা মধু বধূ হয়তো আছে। কিন্তু কোনও স্তব্ধ অতলদীঘি কালো জলে পড়ে না তাদের অলক্তরঞ্জিত চরণচিহ্ন।

    এদেশেও জেল আছে, কিন্তু তার কৌলীন্য নেই। সে শুধু আকারে ছোট নয়, জাতেও ছোট। সুতরাং আমার চৌহদ্দির বাইরে কর্মসূত্রের টান যখন নেই, তখন আর কোনও সূত্র ধরে এই পাণ্ডব-বর্জিত দেশে কোনোদিন আমার পদধূলি পড়বে, এরকম সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু এ বিশাল বিশ্বের কোন্ কোণে কখন যে কার জন্যে বিধাতাপুরুষ দুটি অন্নের ব্যবস্থা করে রেখে দেন সে শুধু তিনিই বলতে পারেন। যা ছিল স্বপ্নের অগোচর, তাই একদিন বাস্তব ঘটনার রূপ নিয়ে দেখা দিল। সেমেন্টের তাঁবু ঘাড়ে করে আমার এক আত্মীয় টোল ফেলে ফিরছিলেন এই দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। হঠাৎ রোগশয্যায় পড়ে আমাকে স্মরণ করলেন। তার সঙ্গে যুক্ত হল তাঁর স্ত্রীর সাশ্রু অনুনয়। অতএব আমিও একদিন বাক্স-বিছানা ঘাড়ে করে মগের মুলুকে পাড়ি দিলাম।

    পার্বত্য চট্টগ্রাম। গিয়ে দেখলাম, শুধু পার্বত্য নয়, আরণ্য চট্টগ্রাম। যেদিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, দুর্ভেদ্য পাহাড় আর দুর্গম জঙ্গল। তারই বুক চিরে চলে গেছে শীর্ণ জলরেখা। তার নাম নদী। একটা বিশাল গাছের গুঁড়ির বুকের উপর থেকে কাঠ খুঁড়ে খুঁড়ে তৈরী হয়েছে খোন্দল। তার নাম নৌকা। তারই মধ্যে বসে যেতে হল দিনের পর দিন। হঠাৎ একদিন অসময়ে নৌকা থেমে গেল। সামনে এপার ওপার জোড়া বাঁধ। মাঝিদের কলরব শুনে কৌতূহল হল। লক্ষ্য করে দেখি, বাঁধ নয়, গজেন্দ্রগমনে নদী পার হচ্ছেন পাহাড়ী পাইথন। আর এক দিন। সবে সন্ধ্যা হয়েছে তখন। গলুই-এর উপর বসে নিশ্চিন্ত মনে বেসুরো গান ধরেছি, মাঝির চাপা ধমক শুনে থেমে গেলাম। দশহাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে জলপানরত চিতাবাঘ। শুধু আধি নয়, পথের বাঁকে লুকিয়ে আছে ব্যাধি। এমন জ্বর, যার কবল থেকে কাকেরও নিস্তার নেই। তারপর আছে মাছির ঝাঁক। ভীমরুলের চেয়েও বিষাক্ত। একবার ধরলে শুধু যন্ত্রণা নয়, সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেবে ক্ষত

    রাঙামাটি শহর থেকে দিনতিনেকের পথ। একখানি বসতিবিরল পাহাড়ী গ্রাম; বনের ফাঁকে ফাঁকে দু-একখানা চালাঘর। জঙ্গল-মুক্ত ঢালু পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট ক্ষেত। সেখানে “ঝুম্” চাষ করে মেয়ে-পুরুষের মিলিত দল। লাঙল গরুর বালাই নেই। অদ্ভুত হাতিয়ার দিয়ে মাটি খুঁড়ে কিংবা আঁচড় কেটে একই সঙ্গে পুঁতে বা ছড়িয়ে দেয় ধান মকাই আর নানারকম সবজির বীজ। যেমন যেমন তৈরী হয়, কেটে ঘরে তোলে ফসলের বোঝা।

    আমার আত্মীয়টির আস্তানা ছিল গ্রামের একেবারে শেষপ্রান্তে। আধমরা হয়ে আমি যখন গিয়ে পৌঁছলাম, তিনি তখন মরে সবে বেঁচে উঠেছেন। করবার বিশেষ কিছুই ছিল না। আমার এই সশরীরে উপস্থিতি, এইটুকু দিয়েই যেন তাঁকে কৃতার্থ করে দিলাম। বললাম, একটা কিছু টনিক-ঠনিক খেয়ে চট্‌পট্ সেরে ওঠো।

    উনি হেসে বললেন, তুমি কাছে বসে আছ, এইটাই আমার সব চেয়ে বড় টনিক। আর কিছু চাই না।

    সারাদিন তাঁর টনিক যুগিয়ে বিকেল বেলা রোদ যখন পড়ে আসে, পাহাড়ী পথ ধরে নিরুদ্দেশযাত্রায় বেরিয়ে পড়ি। সেদিন অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম। কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে খেয়াল হয়নি। সঙ্গে ছিল সেট্লমেণ্ট অফিসের এক চাপরাসী। অনুস্বার-কণ্টকিত কি একটা নাম, আজ আর মনে নেই। যেখানে গিয়ে পড়েছিলাম ওরই কাছাকাছি তার বাড়ি। দ্বিতীয়বার কোনও চিতাবাঘের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে এরকম ইচ্ছা ছিল না। তাই হাঁটার বেগটা বেশ একটু বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি চৌদ্দ-পনেরো বছরের পাহাড়ী মেয়ে নেমে আসছে সামনের ঐ পায়ে-চলা ঢালু পথ বেয়ে। তার পিঠে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নামছে একটা জরাজীর্ণ বৃদ্ধা, বোধহয় দৃষ্টিও নেই। আমরা পথ ছেড়ে দিয়ে বনের ধার ঘেঁষে দাঁড়ালাম। তারা অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। কিশোরী মেয়েটি একটিবার শুধু আমার দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল। দুটি কৌতূহল-ভরা কালো হরিণ-চোখ। সুশ্রী মুখখানি ঘিরে কেমন একটা বিষণ্ণ ম্লানিমা। আমারও কৌতূহল হল। আর একটু উঠে গিয়ে রাস্তার বাঁকে দাঁড়ালাম।

    ওরা নেমে গিয়ে যেখানে থামল, তার ঠিক সামনেই একটি পল্লব-ঘন বটের চারা। গোড়ায় বাঁধানো মাটির বেদি, যত্ন করে নিকানো। সঙ্গিনীকে ঘাসের উপর বসিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে গেল কিশোরী। আঁচলের বাঁধন খুলে বের করল দুটি ছোট ছোট মোমবাতি আর একটা দেশলাই। বাতি দুটো জ্বেলে পাশাপাশি বসিয়ে দিল বেদির উপর। তারপর একটুখানি পিছনে সরে এসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল, জানি না কার উদ্দেশে। অস্পষ্ট জড়িত কণ্ঠে বৃদ্ধা কি বলে উঠল তার পাহাড়ী ভাষায়। বোধহয় কোনও প্রশ্ন। কিন্তু কিশোরীর কাছ থেকে কোনও জবাব এল না। তারপর যেমন এসেছিল তেমনি করে আবার ওরা ফিরে চলল সন্ধ্যার ছায়া-ঢাকা চড়াই পথ ধরে। যাবার সময় আর একটা চকিত দৃষ্টি দিয়ে গেল আমার বিস্মিত মুখের উপর।

    আমরাও চলতে শুরু করলাম। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ নিঃশ্বাসের শব্দে পেছন ফিরে তাকালাম, ঠিক ওর মায়ের মতো দেখতে হয়েছে মেয়েটা’–স্নিগ্ধ কণ্ঠে যেন আপনমনে বলে উঠল চাপরাসী।

    —তুমি চেনো নাকি ওদের?

    —চিনি বইকি। ওই তো ওদের ঘর। মংখিয়ার মা আর মেয়ে।

    মংখিয়া! চমকে উঠলাম। নামটা যেন তড়িৎশিখার মতো জ্বলে উঠল আমার স্মৃতির অন্ধকারে। প্রশ্ন করলাম, কোন্ মংখিয়া? মংখিয়া জং?

    —হ্যাঁ বাবু। আপনি জানলেন কি করে?

    আমি জবাব দিলাম না। দীর্ঘ চৌদ্দ বছরের কৃষ্ণাবরণ ভেদ করে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল একখানা মঙ্গোলিয়ান ধাঁচের মুখ। তার উপর দুটি ভাসাভাসা অসহায় চোখ। মংখিয়া জং।

    .

    মংখিয়ার সঙ্গে দেখা আমার চিটাগাং জেলে। চৌদ্দ বছর—হ্যাঁ, তা হল বইকি। এই গাঁয়ের কথাই সে বলেছিল। পাহাড় কেটে কেটে অতি যত্নে তৈরী ছোট ছোট ক্ষেত। তার পাশ দিয়ে উঠে যে চড়াই পথ সেইখানে তার বাড়ি। ছোট সংসার। বিধবা মা, সতেরো বছরের বৌ আর তার কোলে একটি বছর খানেকের মেয়ে। ভোর হতেই সে বেরিয়ে যেত “ঝুম-এ। দু-তিনখানা গ্রাম ছাড়িয়ে দূর-পাহাড়ের কোলে। প্রায় একবেলার পথ। বেশীর ভাগ দিনই একা। ঘরের কাজ সেরে মেয়েকে শাশুড়ীর কাছে গছিয়ে কোনও কোনও দিন সিকিও তার সঙ্গ নেয়। সেদিনটা সে আসতে পারেনি। মংখিয়া একটা গোটা ভুট্টাক্ষেতের জঙ্গল সাফ করে ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিচ্ছিল খানিকক্ষণ। হাতে ছিল একটি নধর কচি ভুট্টার মোচা। ছাড়িয়ে মুখে তুলতে যাবে, পাহড়ের বাঁকের আড়াল থেকে ভেসে এল সুরের ঝঙ্কার। এ সুর তার চেনা। শুধু চেনা নয়, এর সঙ্গে ছিল তার প্রাণের টান। এতক্ষণ বুঝতে পারেনি, সকাল থেকে সকল কাজের মধ্যে এরই পানে পড়ে ছিল তার কান, এরই জন্যে মন ছিল তার উন্মুখ।

    জনহীন বনভূমি। তার উপর লুটিয়ে পড়ছে গানের ঢেউ। কখনও কাছে, কখনও মিলিয়ে যাচ্ছে দূর পাহাড়ের গায়ে। বেলা বেড়ে চলেছে। গাছের মাথায় ঝলমল করছে রোদ। ঘরে ফিরবার সময় হল। সে খেয়াল নেই মংখিয়ার। আবেশে বুজে আসছে চোখ দুটো। হঠাৎ মনে হল গান তো আর শোনা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল মংখিয়া। পাহাড়ের বাঁক ঘুরে এগিয়ে গেল। দু-তিনখানা ভুট্টাক্ষেত পার হয়ে নিঃশব্দে এসে দাঁড়াল একটি ঝোপের আড়ালে।

    —ওখানে লুকিয়ে কি হচ্ছে, শুনি?

    ধরা পড়ে গিয়ে উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠল মংখিয়া। তার সঙ্গে মিলিত হল কলহাস্যের কোমল ঝঙ্কার।

    —সিম্‌কি আসেনি কেন? প্রশ্ন করল নারীকণ্ঠ।

    —এসেছে বইকি। ঐ তো রয়েছে ওখানে—মংখিয়ার মুখে রহস্যের হাসি।

    —ইস্! তাহলে আর এত সাহস হত না।

    –কেন, ভয় কিসের?

    —থাক্, আর বাহাদুরি দেখিয়ে কাজ নেই। এবার বাড়ি যাও। বেলা হয়েছে।

    —বাড়িই তো যাচ্ছিলাম। এমন সময়—

    —-কী হল এমন সময়? মাথাটা বাঁদিকে হেলিয়ে মোহিনী ভঙ্গীতে তাকাল মেয়েটি।

    —কিছু না। এই নাও

    মংখিয়া হাত বাড়িয়ে ভুট্টাটা এগিয়ে ধরল।

    মেয়েটি হাত বাড়াল না, এগিয়েও গেল না। সেখানে দাঁড়িয়েই বলল, কি ওটা?

    —বাঃ! গান শোনালে বক্‌শিশ নেবে না?

    —চাই না অমন বক্‌শিশ—সমস্ত দেহে একটা দোলা দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল।

    —না, সত্যি। তোমার জন্যে নিয়ে এলাম।

    —ছুঁড়ে দাও ওখান থেকে।

    —হাত থেকে নেবে না বুঝি?

    —বাঃ! কেউ দেখে ফেলে যদি?

    —কেউ নেই এখানে।

    দ্যাখ, দেখছে—বলে আঙুল তুলে ধরল গাছের দিকে। একটা কাঠবেড়ালী ল্যাজ নাড়ছিল, আর মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিল বিজ্ঞের মতো।

    দুজনেই হেসে উঠল। মংখিয়া আর একটু কাছে এসে ভুট্টার মোচা তুলে দিল মেয়েটির হাতে।

    —দাঁড়াও, আমি একা খাব বুঝি? বলে মোচাটা ভেঙে অর্ধেকটা সে ফিরিয়ে দিল মংখিয়ার হাতে। সঙ্গে সঙ্গে আর একটা মিলিত হাসির উচ্ছ্বাস। কিন্তু উঠতে না উঠতেই সে যেন ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল। মেয়েটির হাত থেকে খসে পড়ে গেল ভুট্টার ভগ্নাংশ। দুজনের মিলিত ভীত দৃষ্টি ঝোপের আড়ালে গিয়ে স্থির হয়ে গেল। দৃপ্ত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিম্‌কি। ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। দিদির একান্ত কাছটিতে এসে তার চোখের উপর চোখ রেখে ফিফিস্ করে বলল, ছুঁয়ে দিলি! কণ্ঠে অপরিসীম বিস্ময়, তার সঙ্গে অভিমান-ক্ষুব্ধ অনুযোগ। দিদির কাছ থেকে কোনও সাড়া এল না। মাথাটা শুধু নুয়ে পড়ল বুকের উপর। দাঁড়িয়ে রইল নিষ্প্রাণ পুতুলের মতো।

    এবার স্বামীর দিকে ফিরে তাকাল সিম্‌কি। নির্বাক চাহনি। কিন্তু তার ভিতর থেকে নির্গত হল যে অগ্নিময়ী ভাষা, মংখিয়ার কাছে সেটা কিছুমাত্র অস্পষ্ট নয়। হঠাৎ দেহময় দীপ্ত তরঙ্গ তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াল। দৃঢ়হস্তে কোমরে জড়িয়ে নিল আঁচলখানা। তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল ঝড়ের মতো।

    সিমকি শোন্—এতক্ষণে স্বর ফুটল দিদির কণ্ঠে। কিন্তু শোনবার জন্যে সিম্‌কি আর তখন দাঁড়িয়ে নেই।—কী হবে! শুষ্ককণ্ঠে বলল মংখিয়ার দিকে ফিরে। চোখে সন্ত্রস্ত দৃষ্টি। মংখিয়া নিরুত্তর। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কি ভাবল। তারপর হাতে একটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গী করে ধীরে ধীরে রওনা হল বাড়ির পথে।

    প্রাচীনপন্থী হিন্দু-সমাজে যেমন ভাদ্রবৌ, মংখিয়াদের পাহাড়ী সমাজে তেমনি বৌ-এর বড় বোন। স্পর্শ করা শুধু সামাজিক অপরাধ নয়, মহাপাপ। হিন্দুসমাজে তার ক্ষমা আছে। কিঞ্চিৎ কাঞ্চনমূল্যে প্রায়শ্চিত্তের বিধানও বোধ হয় আছে কোনও রকম। কিন্তু মংখিয়ার সমাজ এখানে ক্ষমা-লেশহীন, নির্মম। এইজাতীয় অপরাধের প্রাথমিক বিচার করবেন গ্রামের মোড়ল। তিনি যদি তুষ্ট না হন, কিংবা তার বিচারের পরে যদি গ্রাম্যসমাজ রুষ্ট থেকে যায়, তখন অপরাধীর তলব পড়বে মহাপরাক্রান্ত মাজার দরবারে। মাজা—ইংরেজরা বলতেন বোমঙ্ চীফ (Bohomong Chief)। তিনিই ছিলেন চিটাগ হিল ট্র্যাকসের দালাই লামা। সমস্ত প্রজাকুলের দণ্ড-মুণ্ডের মালিক। বিস্তৃত তাঁর এক্তিয়ার। ধর্মীয় বা সামাজিক রীতিনীতি সংক্রান্ত অপরাধ শুধু নয়, খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি গুরুতর ক্রাইমও ছিল তাঁর অলিখিত এলাকার অন্তর্গত। দু-দিন তিনদিনের পথ বলে ব্রিটিশ সরকারের থানা পুলিস এসব ঘটনার সন্ধান পেত না, পেলেও অনেক সময় চুপ করে থাকত।

    বাড়ির কাছে আসতেই মংখিয়ার কানে গেল তার শিশুকন্যার কান্না। ছুটে এসে দেখল কেঁদে কেঁদে নীল হয়ে গেছে মেয়েটা। কেউ কোথাও নেই। মা তথাগত শিষ্যা। সংসারে থেকেও নেই। গ্রামোপান্তের ক্যাঙ্ থেকে এখনও তার ফিরবার সময় হয়নি। কিন্তু সিম্‌কি? এতক্ষণে বোধহয় মোড়লের বাড়ি গিয়ে দশঋনা করে লাগাচ্ছে তার নামে। মেয়েটা বাঁচল কি মরল, সে প্রশ্ন আজ তার কাছে অতি তুচ্ছ। অস্নাত, অভুক্ত, পরিশ্রান্ত মংখিয়ার মাথার ভিতরটায় অগ্নিবৃষ্টি হতে লাগল।

    তার অনুমান যে মিথ্যা নয়, জানা গেল একটু পরেই। বাড়ির বাইরে থেকে হাঁক দিল কর্কশ কণ্ঠ—মংখিয়া আছিস? মোড়লের চাকর। কিন্তু নিজেকে সে ছোটখাটো মোড়ল বলেই জানে, জাহিরও করে সেই রকম! একটা কড়া জবাব এসে গিয়েছিল মংখিয়ার মুখে, সামলে নিয়ে বেরিয়ে এল। খাড়া তলব। অমান্য করলে রক্ষা নেই। বিলম্ব করলেও বিপদ অনিবার্য।

    বারান্দায় বসে তামাক টানছিল মোড়ল। তার সামনে উঠানে দাঁড়িয়ে সিম্‌কি। কোমর জড়িয়ে তেমনি শক্ত করে বাঁধা আঁচলের বেড়। ফুলোফুলো চোখ দুটিতে সদ্য-ক্ষান্ত বর্ষণের চিহ্ন। উন্নত বুকে অদম্য উত্তেজনার স্পন্দন। মংখিয়া এসে যখন দাঁড়াল ও পাশটিতে, একবার মাত্র সেদিকে তাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য দিকে।

    —বৌ যা বলছে, সত্যি? প্রশ্ন করল মোড়ল।

    —হ্যাঁ, আমি ছুঁয়েছি ওর দিদিকে।

    হুঁকো থেকে মুখ তুলে বিস্ময়-বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মোড়ল। তারপর বলল, বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে, বলিস কি! ও হল তোর বড় শালী, গুরুজন। ওর পেছনে ঘুরে মরছিস কেন? ছুঁয়েই বা দিলি কোন্ আক্কেলে? এত বড় পাপ তো আর নেই!

    মংখিয়া নিরুত্তর, কয়েক মিনিট থেমে আবার বলল মোড়ল, তাছাড়া ও মেয়েটা মে একনম্বর নচ্ছার, সে তো আর কারও জানতে বাকি নেই। তা না হলে ওর মরদটাই বা ওকে ছেড়ে চলে যাবে কেন?

    এবার উত্তর দিল মংখিয়া, ছেড়ে যায়নি, রাঙামাটি গেছে চাকরি করতে।

    —চাকরি করতে, না আমার কপালে আগুন দিতে! অবরুদ্ধ কণ্ঠে গর্জে উঠল সিম্‌কি।

    হাত দিয়ে তাকে থামাবার ইঙ্গিত করে মোড়ল বলল, যাক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এবার শুদ্ধ হতে হলে মাথা মুড়োতে হবে, ক্যাঙে বাতি দিতে হবে বারো গণ্ডা, তারপর সমাজ-খাওয়ানো আছে। সেও অনেক টাকার ব্যাপার।

    সিম্‌কির দিকে ফিরে বলল, তুমি ঘরে যাও, বৌ। মাগীটাকে শায়েস্তা করবার ব্যবস্থা আমি করছি। মাথা মুড়ে, লোহা পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে—

    না—দৃঢ় গম্ভীর কণ্ঠে বাধা দিল মংখিয়া। ওর কোন দোষ নেই, দোষ আমার। ওর গায়ে যদি কেউ হাত তোলে, আমি তাকে ছেড়ে দেবো না।

    বটে! বিস্মিত ক্রুদ্ধ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল মোড়ল। তারপর নিজেকে সংযত করে বলল, বেশ। গায়ের জোরটা তাহলে মাজার কাছে গিয়েই দেখিয়ো।

    পরদিন থেকে আবার যথারীতি কাজে লেগে গেল মংখিয়া। ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ে কাস্তে নিয়ে। নিজের ক্ষেতে যেদিন কাজ থাকে না, জন খাটে অন্যের জমিতে। বেলা গড়িয়ে গেলে বাড়ি ফিরে আসে। নিঃশব্দে দুটো খেয়ে নিয়ে আবার কোথায় চলে যায়। মার সঙ্গে যোগাযোগ কোনোকালেই নেই। মেয়েটাকে আদর করত মাঝে মাঝে, তাও ছেড়ে দিয়েছে। বৌ-এর সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে অনেক রাতে যখন ঘরে ফেরে, তার আগেই মেয়ে কোলে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সিম্‌কি। ঘরের কোণে ঢাকা দেওয়া ভাত দুটো খেয়ে নিজের নির্দিষ্ট জায়গাটিতে শুয়ে সেও কখন ঘুমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙে, বৌ বিছানায় নেই।

    এমনি একটা রৌদ্রদগ্ধ দিন। মধ্যাহ্ন গড়িয়ে পড়েছে অপরাহ্ণের কোলে। মাঠের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিল মংখিয়া। ক্লান্ত এবং তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষুধার্ত। বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছে দুজন বিদেশী, কোমরে তকমা আঁটা। মানুষ নয়, যমদূত। মাজার পাইক। এক নিমেষেই চেনা গেল তাদের আকৃতি-প্রকৃতি এবং সংবর্ধনার বহর দেখে কোনোরকমে দুটো ভাত মুখে দিয়ে নেবার সময় চেয়েছিল মংখিয়া, ওরা তো হেসেই খুন। সকাল থেকে বসে বসে এই যে এতখানি সময় নষ্ট হল তাদের, সেটা একবার ভাবল না লোকটা? তারপর আবার ভাত খাবার সময় চাইছে!

    ঘরে ঢোকা হল না, দোরগোড়া থেকেই বেরিয়ে পড়তে হল। কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে মোড়ল, আর তার খানিকটা পেছনে গাছের আড়ালে পাওয়া গেল সিকির শাড়ির আভাস। মংখিয়ার চোখ দুটো দপ্ করে জ্বলে উঠল। কিন্তু সে জ্বালা সে লুকিয়ে রাখল নিজের কাছেই। একটিবার তাকিয়েই ফিরিয়ে নিল চোখ দুটো।

    মহাপ্রতাপান্বিত মাজার দরবার। তার চারদিক ঘিরে রয়েছে মধ্যযুগের নির্মম কঠোরতা। রাজকীয় জাঁকজমকের মাঝখানে বিচার আসনে বসে এজলাস করছেন বো চীফ। দুয়ে তাঁর আইনকানুন, দুর্লঙ্ঘ্য তাঁর বিধিনিষেধ। সে-সব যে ভঙ্গ করে, অমোঘ দণ্ডের হাত থেকে তার নিস্তার নেই। দণ্ড মানেই দৈহিক নিপীড়ন। অপরাধ ভেদে তার অমানুষিক বৈচিত্র্য। শুনেছি কত হতভাগ্য আসামী ঘর থেকে দরবারে এসেছে, আর ঘরে ফিরে যায়নি।

    মংখিয়ার অদৃষ্ট প্রসন্ন ছিল, আর দেহটাও ছিল পাথরের তৈরি। সেটাকে টেনে নিয়ে কোনো রকমে একদিন সে ঘরে গিয়ে পৌঁছল। কেমন করে আর কিসের জোরে, সে রহস্য সে নিজেও ভেদ করতে পারেনি।

    তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ক্যাঙ থেকে ফিরে বারান্দার উপর একটা অসাড় দেহ পড়ে থাকতে দেখে মা চমকে উঠেছিলেন। শুধু গোঙানি শুনে বুঝেছিলেন তার ছেলে ফিরে এসেছে মাজার দরবার থেকে। খানিকটা সুস্থ হবার পর ছেলেকে এদিকে ওদিকে তাকাতে দেখে বলেছিলেন, বৌ বাড়ি নেই। মোড়লের ওখানে গেছে বোধহয়। দাঁড়া, ডেকে নিয়ে আসি।

    না—শ্রান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলল মংখিয়া। সে স্বর শুনে মা-ও আর যেতে সাহস করেননি। পরদিন ছেলের পিঠে তেল মালিশ করতে করতে অনেকটা যেন কৈফিয়তের সুরে বললেন মা, ছেলেমানুষ। ঝোঁকের মাথায় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। এখন ভয়ে আসছে না।

    মংখিয়ার কাছ থেকে ভাল-মন্দ কোনও জবাব পাওয়া গেল না। একটু থেমে সুর চড়িয়ে বললেন মা, তাই বলে ঘরের বৌ পরের বাড়ি পড়ে থাকবে নাকি। বাড়ি আনতে হবে না? মংখিয়া এবারেও নিরুত্তর।

    তার পরদিন। রাত শেষ না হতেই মা চলে গেছেন মন্দিরে। মংখিয়াও কাটারি হাতে ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ল মাঠের পথে। খানিক দূর গিয়ে কি মনে করে আবার ফিরে এল। কিন্তু বাড়ি ঢুকল না। তেমনি মন্থর পায়ে এগিয়ে চলল মোড়লের বাড়ির দিকে। মোড়ল নেই। পুরো ঝুমের সময়, সেই রাত থেকে বেরিয়ে গেছে পাহাড়ে। তার বৌ আর দুটো ছেলেও গেছে খানিক পরে। কোথাও কারও সাড়াশব্দ নেই। মংখিয়া এগিয়ে চলল।

    ভিতরদিকের উঠানে ঘরের কোলে ছায়ায় বসে মেয়েকে স্তন দিচ্ছিল সিম্‌কি। নিঃশব্দ চরণে সামনে এসে দাঁড়াল মংখিয়া। সিম্‌কির দৃষ্টি ছিল মেয়ের মুখে। প্রথমটা কিছু জানতে পারেনি। হঠাৎ ছায়া দেখে চমকে উঠল। চকিত চোখে স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে কি দেখল সেই জানে। পালাতে গিয়েও পালাল না। যেমন বসে ছিল তেমনি রইল। শুধু অনাবৃত বুকের উপর আলগোছে টেনে দিল স্খলিত আঁচলখানা। মংখিয়া দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো। নিজের স্বপ্নাবৃত দেহের উপর সেই একাগ্র দৃষ্টি অনুভব করে সিকির ভীরু চোখে ফুটে উঠল লাজরক্ত মৃদু হাসি। স্নিগ্ধ তিরস্কারের সুরে বলল, অসভ্য কোথাকার তারপর মেয়ের মুখ থেকে স্তনাগ্র সরিয়ে নিয়ে বলল, আর খেতে হবে না। ঐ দ্যাখ্ কে এসেছে। মেয়ে হাসল। দন্তহীন অন্তরঙ্গ হাসি। মংখিয়া নত হয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিল। একটিবার তার কোমল কচি গাল দুটো ধরে আদর করল। তারপর তাকে মাটিতে নামিয়ে দিয়ে, দু-পা এগিয়ে এসে বৌ-এর গলায় বসিয়ে দিল কাটারির ঘা।

    মাথাটা যখন ছিটকে পড়ল মাটিতে, সেই শেষ স্নিগ্ধ হাসিটি বোধহয় তখনও তার চোখের কোণে মিলিয়ে যায়নি।

    .

    সংক্ষেপে এই হল মংখিয়া জং-এর খুনের ইতিহাস। শুনেছিলাম তার মুখ থেকে চিটাগাং জেলের বারো নম্বর সেল-এর সামনে বসে। গুছিয়ে সাজিয়ে বলা আত্ম-কাহিনী নয়, প্রশ্নের জাল ফেলে সংগ্রহ করা তথ্য। দোভাষী ছিল আমার অফিস-রাইটার (writer) গুণধর চাক্‌মা।

    বক্তার ভাষাকে ভাষান্তরে পৌঁছে দেওয়াই হল দোভাষীর কাজ। সে শুধু কাঠামো, তার মধ্যে সমূর্ত প্রাণের স্পন্দন কেউ আশা করে না। গুণধরের মুখ থেকে যে-কাহিনী সেদিন শুনেছিলাম, সেটা ভাষান্তর নয়, রূপান্তর—অন্তরের রং দিয়ে আঁকা। সেই ভাঙা- ভাঙা ইংরেজি বাক্যের মধ্যে ব্যাকরণ-নিষ্ঠার পরিচয় ছিল না, কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ছিল দরদী প্রাণের সনিষ্ঠ প্রকাশ। সে যেন অন্যের কথা নয়, দোভাষীর নিজেরই অনুতাপবিদ্ধ অন্তরের বেদনাময় রূপ।

    বেশ মনে আছে, শুনতে শুনতে কখন তন্ময় হয়ে পড়েছিলাম। এমন সময় হঠাৎ বাধা দিল একটা অতিপরিচিত ‘খটাস’ শব্দ। অর্থাৎ বড় জমাদার সবুট-সেলাম ঠুকে নিবেদন করলেন, ফাঁসিকা খানা আয়া, হুজুর। তার পেছনে কালিমাখা ‘চৌকাওয়ালার’ হাতে ঢাকা-দেওয়া অ্যালুমিনিয়মের থালা। খানা উদ্‌ঘাটিত হল। দেখলাম, শুধু খানা নয়, এই মৃত্যুপথযাত্রীর অন্নের থালার সঙ্গে জড়ানো জেলরক্ষীদের নীরব হৃদয়স্পর্শ।

    ভাতের পরিমাণটা বোধহয় দু-’ডাবু’, অর্থাৎ সাধারণ কয়েদীর যে বরাদ্দ তার ডবল। সেই অনুপাতে ডাল তরকারি। সেদিনটা ছিল মৎস্যদিবস, অর্থাৎ সাপ্তাহিক fish day। ভাতের স্তূপের উপর তার যে ভর্জিত খণ্ডটি লক্ষ্য করলাম তার আয়তনও চারজনের বরাদ্দের চেয়ে ছোট নয়। ফাঁসি-আসামীর জন্যে এই যে বিশেষ ব্যবস্থা, এর পেছনে জেল কোডের অনুশাসন নেই, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা অনুমোদন কিছুই নেই। এর মধ্যে যদি কোনও কোড় থাকে, তার রচয়িতা জেলখানার বহু-নিন্দিত সিপাই-জমাদার।

    খানা পরিবেশিত হল। সেই সঙ্গে জমাদারের পকেট থেকে বেরোল এক-বাণ্ডিল বিড়ি। এ বস্তুটিও খানার অঙ্গ। Condemned prisoner অর্থাৎ ফাঁসির জন্যে অপেক্ষমাণ বন্দীর সরকার-প্রদত্ত special privilege। অন্য কয়েদীরা এ দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত।

    ত্রি-সন্ধ্যা এই ফাঁসি-যাত্রীর খাদ্য-পরীক্ষা ছিল আমার আইনবদ্ধ কার্যতালিকার অঙ্গ। ঠিক পরীক্ষা নয়, নিরীক্ষা। কি উদ্দেশ্যে এ আইন রচিত হয়েছিল, আমি জানি না। বোধহয়, যে হত্যাকাণ্ড সরকারের নিজস্ব অধিকার, তার উপর আর কেউ অবৈধ হস্তক্ষেপ না করে, তার জন্যে এই হুঁশিয়ারি।

    .

    মংখিয়ার কাহিনীর বাকী অংশটা সংক্ষিপ্ত। সরকারী নথিপত্র থেকেই পাওয়া গেল তার বিবরণ। মাজাকে অগ্রাহ্য করে রক্তমাখা কাটারি হাতে সে সোজা গিয়ে উঠল ব্রিটিশ-সরকারের থানায়। শান্ত সহজ কণ্ঠে জানাল, এ দা দিয়ে বৌকে খুন করে এলাম। তোমাদের যা করবার কর।

    বিচারের সময় নিম্ন বা উচ্চ আদালতে এর বেশি আর বিশেষ কিছুই সে বলেনি। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও ব্যবস্থা তার ছিল না। সরকারী খরচে একজন তরুণ উকিল তার হয়ে লড়েছিলেন। তিনি বারংবার প্রশ্ন করেছিলেন মংখিয়াকে—এ কথা সত্যি নয় যে তোমার স্ত্রী ঐ মোড়লের উপপত্নী ছিল এবং ওর সঙ্গেই সে বসবাস করত?

    —না।

    —এ কথা কি সত্য নয় যে ঐ মোড়লের উপপত্নী থাকাকালীন অবস্থায় পাশের বাড়ির আর একজন লোকের সঙ্গে তার গোপন প্রণয় ছিল?

    –মিথ্যা কথা।

    —এবং সেই কারণে ঐ মোড়লই তাকে খুন করে তোমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে?

    —না, খুন আমি করেছি।

    খুনী মামলার বিচার-স্থল দায়রা আদালত এবং তার জন্যে রয়েছে বিচার-বিভাগের লোক, যাকে বলা হয় সেসন জজ। চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টসের ব্যবস্থা অন্যরকম। সেখানকার দায়রা বিচারের ভার ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারের হাতে। তিনিও নিজে থেকে কতকগুলো প্রশ্ন করেছিলেন খুনের রহস্য ভেদ করবার জন্যে। জানতে চেয়েছিলেন, কেন খুন করেছ? বৌ-এর বিরুদ্ধে কী তোমার অভিযোগ? কখন, কী অবস্থায়, কোন্ আক্রোশে নিজের বৌ-এর ঘাড়ে দিলে দা-এর কোপ?

    এসব কথার দু’চারটা জবাব দিয়েছিল মংখিয়া। ঠিক কি বলেছিল, তার পরে আর তার মনে নেই।

    আপীলের জন্যে মংখিয়ার কোনও আগ্রহ ছিল না। গুণধর চাকমা একরকম জোর করেই তাকে রাজী করেছিল। তারপর আমার কাছে এসে বলল, আপীলটা স্যার আপনাকে লিখতে হবে।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, কিন্তু আমি তো উকিল নই।

    গুণধর বললে, সেই জন্যেই তো বলছি। এখানে উকিলের বুদ্ধি চলবে না।

    —তবে কার বুদ্ধি চলবে শুনি?

    —বুদ্ধি নয়, চাই শুধু একটুখানি হার্ট-

    গুণধরের অনুরোধে কিনা জানি না, আপীল আমিই লিখেছিলাম। আপীল নয়, আবেদন। তার মধ্যে আইন ছিল না। সরকারের পক্ষের সাক্ষীদের কোথায় কোথায় অসঙ্গতি, কোথায় অত্যুক্তি, সে সব দেখিয়ে যুক্তি-জাল বিস্তারের চেষ্টাও ছিল না। শুধু ছিল খানিকটা উচ্ছ্বাস। স্ত্রীর কাছে কী পেয়েছিল মংখিয়া? প্রেম নয়, প্রীতি নয়, অণুমাত্র আনুগত্য নয়, শুধু লাঞ্ছনা, ঔদ্ধত্য আর আনুষঙ্গিক নির্যাতন। কোনও একটা মানুষের অন্তরের সমস্ত কোমলতা নিংড়ে ফেলে দিয়ে তাকে নির্মম কঠোর ক্ষিপ্ত করে তুলবার পক্ষে সেগুলো কি যথেষ্ট নয়? সে যদি সভ্য সমাজের লোক হত, হয়ত ঐ স্ত্রীকে সে বর্জন করত, ভেঙে দিত বিবাহবন্ধন, কিংবা হয়তো অন্তরে সঞ্চিত বিদ্বেষ লুকিয়ে রেখে তার সঙ্গেই অভিনয় করে যেত সারাজীবন। কিন্তু মংখিয়া সভ্য মানুষ নয়, পাহাড়ে জঙ্গলে স্বচ্ছন্দে বেড়ে-ওঠা প্রকৃতির হাতের মানুষ। সভ্যতার কপটতা তাকে স্পর্শ করেনি। আত্ম- সংযমের নামে আত্মপ্রবঞ্চনা সে শেখেনি। তাই তার বুকের ভেতরকার সমস্ত জিঘাংসা প্রচণ্ড বেগে বেরিয়ে এল ধ্বংসের নগ্ন মূর্তি নিয়ে। শিক্ষা-সংস্কৃতির মুখোশ পরে আমি আপনি যেখানে শানিয়ে শানিয়ে শুধু বাক্যবাণ প্রয়োগ করতাম, অরণ্যচারী বর্বর মানুষ মংখিয়া সেখানে বসিয়া দিল মৃত্যুর আঘাত

    তারপরে লিখেছিলাম, সভ্য মানুষের তৈরি যে আইন সুবিজ্ঞ বিচারক তাই দিয়ে বিচার করেছেন বুনো মানুষের আচরণ। মংখিয়া যে-খুন করেছে, যে-মন নিয়ে খুন করেছে, তাকে দেখতে হবে মংখিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে, তারই দৃষ্টি দিয়ে, শিক্ষা-মার্জিত সামাজিক মানুষের দৃষ্টি দিয়ে নয়। অনুভব করতে হবে তার সেই দুর্জয় অভিমান, যার তাড়নায় সে নিজের হাতে বিসর্জন দিয়ে এল তার সদ্য-বিকশিত-যৌবনা স্বর্ণপ্রতিমা, তার একমাত্র শিশু-সন্তানের জননী।

    সিকি মরল, কিন্তু শেষ হল না। তার মৃত্যুদাহের সমস্ত দুঃসহ জ্বালা সে দিয়ে গেল এই নারীহত্তার দেহমনে। তার কাছে কোথায় লাগে মৃত্যুদণ্ড! ফাঁসি তো তার শাস্তি নয়, শাস্তি।

    উপসংহারে লিখেছিলাম মংখিয়ার নিজের না হোক, যারা রয়ে গেল তার উপর একান্ত-নির্ভর—একটি নিষ্পাপ বৃদ্ধা, আর একটি নিরপরাধ শিশু,—তাদের মুখ চেয়ে এই হতভাগ্য বন্দী শুধু বেঁচে থাকবার করুণাটুকু কামনা করে।

    .

    ক’দিনের মধ্যেই আপীলের ফল বেরিয়ে গেল। অপ্রত্যাশিত কিছু নয়, এই রকম আবেদনের যেটা যথাযথ উত্তর। অর্থাৎ Appeal summarily dismissed — সরাসরি না-মঞ্জুর। তার কয়েকদিন পরেই কমিশনার সাহেব এলেন জেল পরিদর্শনে। এটা সেটা দেখবার পর ঢুকলেন ফাঁসি-ডিগ্রির চত্বরে। মংখিয়ার সেল্-এর সামনে দাঁড়িয়ে জেলর সাহেবকে প্রশ্ন করলেন, who wrote his appeal?

    —ডেপুটি জেলর মলয় চৌধুরী।

    —তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করতে পারি?

    ছুটতে ছুটতে এলেন জেলর সাহেব। বললেন, যাও, তোমার ডাক পড়েছে। তখন বলিনি যে ঐসব পাগলামো কোরো না? এ কি তোমার বাংলা মাসিকের প্রবন্ধ যে আবোলতাবোল যা খুশি লিখলেই হয়ে গেল! এবার বোঝো!

    সুপারের অফিসে অপেক্ষা করছিলেন কমিশনার। প্রবীণ শ্বেতাঙ্গ সিভিলিয়ান। কাছে যেতেই সাগ্রহে বলে উঠলেন, আপনি লিখেছিলেন আপীল? I congratulate you—বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, কিন্তু আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে পারিনি। স্ত্রীর আচরণ যতই উত্তেজক হোক, হঠাৎ রুখে গিয়ে ঝোঁকের মাথায় খুন করেনি মংখিয়া। It was a planned affair. ভেবেচিন্তে খুনের উদ্দেশ্য নিয়েই সে গিয়েছিল মোড়লের বাড়ি।

    আমি প্রতিবাদ করলাম না। সাহেব একটু অপেক্ষা করে আবার বললেন, তার চেয়ে বড় কথা,—বাই দি বাই, আপনি ম্যাডোনার ছবি দেখেছেন?

    বললাম, দেখেছি।

    ভাবগম্ভীর সুরে বললেন কমিশনার, আমার বিশ্বাস ওর চেয়ে সুন্দর, ওর চেয়ে পবিত্র সৃষ্টি সংসারে আর কিছু নেই। আপনার কি মনে হয়?

    বললাম, আমার ধারণাও তাই।

    সাহেব বললেন, মংখিয়ার চোখের সামনে ছিল সেই জীবন্ত ম্যাডোনা—A young mother suckling her little baby. যে-কোন একটা নারীমূর্তি নয়, তারই সুন্দরী তরুণী স্ত্রী, আর তার কোলে শুয়ে স্তন-পান করছিল যে শিশু সেও তারই প্রথম সন্তান। Can you imagine a purer sight। But it could not soften his mind—এতটুকু দাগ পড়ল না তার মনের ওপর। What a hardened criminal! আপনি বলেছেন সে করুণার পাত্র। Absurd! He deserves no mercy, মৃত্যুই তার উপযুক্ত দণ্ড!

    কমিশনার সাহেবের যুক্তি খণ্ডন করবার মতো কোনো তথ্য আমার হাতে ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত চুপ করেই ছিলাম। হয়তো ওঁর কথাই ঠিক। এই খুনী লোকটাকে আমি যা দেখাতে চেয়েছি, সেটা সে নয়। মানুষের অন্তরের কাছে তার কোনও দাবি নেই। তবু পরদিন সকালবেলা আবার যখন গিয়ে দাঁড়ালাম তার সেল-এর সামনে, আর সে চোখ তুলে তাকাল আমার দিকে,—তার বিশাল দেহের সঙ্গে অত্যন্ত বেমানান, ভীরু ভাবলেশ- বর্জিত ছোট ছোট দুটি চোখ,—আমার কেবলই মনে হতে লাগল, কোথায় যেন একটা ভুল রয়ে গেছে।

    ফাঁসির দিন ধার্য হল। তার কদিন আগে যথারীতি জিজ্ঞাসা করা হল আসামীকে, কাউকে দেখতে চাও?

    মংখিয়া বলল, অনেক দ্বিধা সঙ্কোচের পর, আমার মাকে যদি একবার—। সরকারী ব্যবস্থায় পাঁচ-ছ’-দিনের মধ্যেই তার মাকে নিয়ে আসা হল। সেই শীর্ণকায়া পার্বত্যরমণীর দিকে একবার তাকিয়েই বুঝলাম বার্ধক্য তাঁর দেহকে নুইয়ে দিলেও মনকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁকে দেখে একথা মনে হল না যে, তাঁর একমাত্র উপযুক্ত পুত্র এবং সংসারের একমাত্র অবলম্বন আজ মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্মরণ করেছে। জেল-গেট থেকে দুর্বল কিন্তু অবিচল পদক্ষেপে সেল-চত্বরে গিয়ে দাঁড়ালেন।

    ফাঁসি-ডিগ্রির লৌহকপাট খুলে দেওয়া হল। ফাঁসির আসামী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সেই দিকে। কাছে গিয়ে বললাম, বাইরে এসো। তোমার মা এসেছেন।

    অতি সন্তর্পণে সিঁড়ি বেয়ে উঠানে নেমে এল মংখিয়া। নত হয়ে হাত দুটো বাড়িয়ে ধরতে গেল তার মায়ের পা দুটো। চোখের নিমেষে দু-হাত ছিটকে পিছিয়ে গেলেন মা। হাত নেড়ে নিষেধের সুরে কি যেন বলে উঠলেন ক্রুদ্ধ তীক্ষ্ণ পাহাড়ী ভাষায়। সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল দোভাষী চাকমার গম্ভীর কণ্ঠ—Don’t touch me; you are a sinner.

    পরমুহূর্তেই কেমন কোমল হয়ে গেল বৃদ্ধার জড়িত স্বর। ডান হাতখানা উপরে তুলে বিড়বিড় করে বললেন, তথাগত তোমার মঙ্গল করুন।

    মংখিয়া মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইল সদ্য-তিরস্কৃত শিশুর মতো। দু-চোখের কোণ বেয়ে নেমে এল জলধারা। চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। মানুষ—জীবন্ত নয়, চিত্রার্পিত। তাদের সচকিত করে আবার শোনা গেল বৃদ্ধার সুস্পষ্ট তীক্ষ্ণ স্বর—কী চাও তুমি আমার কাছে?

    মংখিয়া চোখ তুলে তাকাল। ভগ্নকণ্ঠে বলল, চাইবার আমার কারও কাছেই কিছু নেই, মা। সেজন্য তোমায় ডাকিনি। একটা কথা শুধু বলে যাবো, তাই তোমায় কষ্ট দিয়েছি। মা অপেক্ষা করে রইলেন। ক্ষণিক বিরতির পর আবার শুরু করল মংখিয়া, আমি যখন আর থাকবো না, আমাদের বাড়ির সামনে যে জমিটুকু আছে, যেখানে সে দাঁড়িয়ে থাকত, ঝুম্ থেকে ফিরতে যেদিন দেরি হত আমার, সেইখানে, ঠিক্ সেই জায়গাটিতে একটা বটের চারা লাগিয়ে দিও। দেখো জল দিতে যেন ভুল না হয়। তারপর গাছ যেদিন পাতা মেলতে শুরু করবে, একটু মাটি দিয়ে গোড়াটা বাঁধিয়ে দিও। রোজ সন্ধ্যাবেলা তার নাম করে একটা করে বাতি জ্বেলে দিও সেই বেদির ওপর। মেয়েটা যদি বাঁচে, একটু বড় হলে তারই হাতে ছেড়ে দিও এ কাজের ভার। বোলো, এটা তার বাবার শেষ ইচ্ছা। মা, (চমকে উঠলাম তার সেই ডাক শুনে) এইটুকু, শুধু এই কাজটুকু আমার জন্যে তোমরা পারবে না?

    কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেল মংখিয়ার। চোখ দুটো দু-হাতে চেপে ধরে ছুটে চলে গেল তার নির্দিষ্ট সেল্-এর মধ্যে

    আরও কিছুক্ষণ তেমনি নিশ্চল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন তার মা। তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়ালেন ফিরে যাবার পথে। হঠাৎ মনে হল পা দুটো তার কেঁপে উঠল। শুধু পা নয় সমস্ত শরীর। গুণধর চাকমা ছুটে এল। তার সঙ্গে একজন ওয়ার্ডার। তাদের প্রসারিত হাতের উপর লুটিয়ে পড়ল তপঃক্ষীণা বৃদ্ধার সংজ্ঞাহীন শীর্ণ দেহ।

    ।। দ্বিতীয় পৰ্ব সমাপ্ত।।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডাইস লস্ট – জন মিল্টন
    Next Article ১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }