Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হুতোমপ্যাঁচার নক্সা – কালীপ্রসন্ন সিংহ

    কালীপ্রসন্ন সিংহ এক পাতা গল্প211 Mins Read0

    ১.২৬ নাক-কাটা বঙ্ক

    নাক–কাটা বঙ্ক

    হরিভদ্দর খুড়োর কথামত–এ সকল প্রলয় জুয়াচুরী জেনেও আমরা এক দিন সন্ধ্যার পর সিমলে পাড়ার বঙ্কবিহারিবাবুর বাড়ীতে গেলুম। বেহারিবাবু উকিলের বাড়ীর হেড কেরাণী—আপনার বুদ্ধি কৌশলেবলেই বাড়ী ঘর-দোর ও বিষয়-আশায় বানিয়ে নিয়েছেন, বাবা মাস ঘাঁতে ঘোঁতে ফেরেন–যে রকমে হোক, কিছু আদায় করাই উদ্দেশ্য।

    বঙ্কবেহারিবাবু ছেলেবেলায় মাতামহের অন্নেই প্রতিপালিত হতেন, সুত্রাং তার লেখাপড়া ও শারিরিক তদ্বিরে বিলক্ষণ গাফিলী হয়। একদিন মামার বাড়ী খেলা কত্তে কত্তে তিনি পাতকোর ভিতরে পড়ে যান,—তাতে নাকটি কেটে যায়, সুতরাং সেই অবধি সমবয়সীরা আদর করে “নাককাটা বঙ্কবেহারি” বলেই তারে ডাকতো; শেষে উকীল-বাড়ীতেও তিনি ঐ নামে বিখ্যাত হয়ে পড়েন। বঙ্কবহারিবাবুরা তিন ভাই, তিনি মধ্যম; তাঁর দাদা সেলারদের দালালী কত্তেন, ছোট ভাইয়ের পাইকেরের দোকান ছিল। তিন ভায়েই কাঁচা পয়সা রোজগার করেন, জীবিকাগুলিও রকমারী বটে! সুতরাং নানাপ্রকার বদমায়ের পাল্লায় থাকবে, বড় বিচিত্র নয়–অল্প দিনের মধ্যেই বঙ্কবেহারিবাবুরা সিমলের একঘর বিখ্যাত লোক হয়ে উঠলেন। হঠাৎ কিছু সঙ্গতি হলে, লোকের মেজাজ যেরূপ গরম হয়ে ওঠে, তা পাঠক বুঝতে পারেন; (বিশেষতঃ আমাদের মধ্যে কোন দুই একজন বঙ্কবেহারিবাবুর অবস্থার লোক না হবেন)। ক্রমে বঙ্কবেহারিবাবু ভদ্রলোকের পক্ষে প্রকৃত জোলাপ হয়ে পড়লেন।

    হাইকোর্টের অ্যাটর্নীর বাড়ীর পায়দা ও মালী পর্য্যন্ত সকলেই আইনবাজ হয়ে থাকে; সুতরাং বঙ্কবেহারিবাবু যে তুখোড় আইনবাজ হবেন, তা পূর্ব্বেই জানা গিয়েছিলো। আইন আদালতের পরামর্শ, জাল জালিয়াতে তালিমে, ইকুটীর খোচ ও কমলার প্যাঁচে-বঙ্কবেহারিবাবু দ্বিতীয় শুভঙ্কর ছিলেন! ভদ্দর লোকমাত্ৰকেই তাঁর নামে ভয় পেতে হত; তিনি আকাশে ফাঁদ পেতে চাঁদ ধরে দিতে পারেন, হয়কে নয় করেন, নয়কে হয় করেন; এমন কি টেকচাঁদ ঠাকুরের ঠক্ চাচাও, তাঁর কাচে পরামর্শ নিতেন।

    আমরা সন্ধ্যার পর বঙ্কবেহারিবাবুর বাড়ীতে পৌঁছিলাম। আমাদের বুড়ো রাম ঘোড়াটির মধ্যে বাতশ্লেষ্মার জ্বর হয়, সুতরাং আমরা গাড়ী চড়ে যেতে পারি নাই। রাস্তা হতে একজন ঝাঁকামুটে ডেকে তার ঝাঁকায় বসেই যাই, তাতে গাড়ীর চেয়ে কিছু বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু ঝাঁকামুটে অপেক্ষা পাহারাওয়ালাদের ঝোলায় যাওয়ায় আরাম আছে। দুঃখের বিষয় এই যে, সেটি সব সময়ে ঘটে না। পাঠকেরা অনুগ্রহ করে যদি ঐ ঝোলায় একবার সোয়ার হন, তা হলে জন্মে আর গাড়ী-পাল্কী চড়তে ইচ্ছা হবে না; যাঁরা চড়েছেন, তাঁরাই এর আরাম জানেন—যেন স্প্রীংওয়ালা কৌচ!

    আমরা বঙ্কবেহারিবাবুর বাড়ীতে আরো অনেকগুলি ভদ্রলোককে দেখতে পেলেম, তাঁরাও “সোণা করার” বুজরুকী দেখতে সভাস্থ হয়েছিলেন। ক্রমে সকলের পরম্পর আলাপ ও কথাবার্ত্তা থামলে সন্ন্যাসী যে ঘরে ছিলেন, আমাদেরও সেই ঘরে যাবার অনুমতি হলো। সেই ঘরটি বঙ্কুবাবুর বৈঠকখানার লাগাও ছিল, সুতরাং আমরা শুধু পায়েই ঢুকলেম। ঘরটি চারকোণা সমান; মধ্যে সন্ন্যাসী বাগছাল বিছিয়ে বসেচেন; সাম্নে একটি ত্রিশূল পোত হয়েচে, পিতলের বাঘের উপর চড়া মহদেব ও এক বাণলিঙ্গ শিব সাম্নে শোভা পাচ্ছেন; পাশে গাঁজার হুঁকো-সিদ্ধির ঝুলি ও আগুনের মালসা। সন্ন্যাসীর পেছনে দু জন চেলা বসে গাঁজা খাচ্ছে, তার কিছু অন্তরে একটা হাপর, জাল হাতুড়ি ও হামাদিস্তে পড়ে রয়েছে—তারাই সোণা তইরির বাহ্যিক আড়ম্বর।

    আমাদের মধ্যে অনেকে, সন্ন্যাসীকে দেখে ভক্তি ও শ্রদ্ধার আধার হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম কল্লেন; অনেকে নিমগোছের ঘাড় নোয়ালেন, কেউ কেউ আমাদের মত গুরুমশায়ের পাঠশালের ছেলেদের ন্যায় গণ্ডার এণ্ডায় সার দিয়ে গোলে হরিবোলে সাল্লেন-শেষে সন্ন্যাসী ঘাড় নেড়ে সকলকেই বসতে বল্লেন।

    যে মহাপুরুষদের কৌশলে হিন্দুধর্মের জন্ম হয়, তারাই ধন্য। এই কন্ধকাঁটা। এই ব্ৰহ্মদত্তি! এই রক্তদন্তী কালী—শেতলা। ছেলেদের কথা দুরে থাকুক, বুড়ো মিলেদেরও ভয় পাইয়ে দেয়। সন্ন্যাসী যে রকম সজ্জা-গজ্জা করে বসেছিলেন, তাতে মানুন বা নাই মানুন, হিন্দু সন্তান মাকেই শেওরাতে হয়েছিল! হায়! কালের কি মহিমা—সে দিন যার পিতামহ যে পাথরকে ঈশ্বরজ্ঞানে প্রণাম করেছে—মুক্তির অনন্যগতি জেনে ভক্তি করেছে, আজ ত্যর পৌত্তর সেই পাথরের ওপোর পা তুলতে শঙ্কিত হচ্চে না। রে বিশ্বাস! তোর অসাধ্য কৰ্ম্ম নাই। যার দাস হয়ে একজনকে প্রাণ সমর্পণ করা যায়, আবার তারই কথায় তারে চিরশত্রু বিবেচনা হয়, এর বাড়া আর আশ্চর্য কি! কোন্ ধৰ্ম্ম সত্য? কিসে ঈশ্বর পাওয়া যায়? তা কে বলতে পারে! সুতরাং পূর্ব্বে যারা ঘোরনদী বজ্রে, জলে, মাটী ও পাথরে ঈশ্বর বলে পূজে গেছে, তারা যে নরকে যাবে, আর আমরা কি বুধবারে ঘণ্টাখানেকের জন্য চক্ষু বুজে ঘাড় নেড়ে কান্না ও গাওনা শুনে, যে স্বর্গে যাব–তারই বা প্রমাণ কি? সহস্র সহস্র বৎসরে শত শত তত্ত্ববিং ও প্রকৃতিজ্ঞ জ্ঞানীরা যারে পাবার উপায় অবধারণে অসমর্থ হলো, আমি যে সামান্য হীনবুদ্ধি হয়ে তাঁর অনুগৃহীত বলে অহঙ্কার ও অভিমান করি, সে কতটা নির্বুদ্ধির কর্ম্ম! ব্রহ্মজ্ঞানী যেমন পৌত্তলিক, কৃশ্চান ও মোছলমানদের অপদার্থ ও অসার বলে জানেন, তারাও ব্রাহ্মদের পাগল ও ভণ্ড বলে স্থির করেন। আজকাল যেখানে যে ধর্মে রাজমুকুট নত হয়, সেখানে সেই ধৰ্ম্মই প্রবল। কালের অব্যর্থ নিয়মে প্রতিদিন সংসারের যেমন পরিবর্তন হচ্চে, ধৰ্ম্ম, সমাজ, রীতি ও নিয়মও এড়াচ্চে না। যে রামমোহন রায় বেদকে মান্য করে তার সুত্রে ব্রাহ্মধৰ্ম্মের শরীর নির্মাণ করেছেন, আজ একশ বছরও হয় নাই, এরই মধ্যে তার শিষেরা সেটি অস্বীকার করেন-ক্ৰমে কৃশ্চানীর ভড়ং ব্রাহ্মধর্মের অলঙ্কার করে তুলেছেন-“আরও কি হয়! এই সকল দেখে শুনেই বুঝি কতকগুলি ভদ্রলোক ঈশ্বরের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেন না। যদি পরমেশ্বররের কিছুমাত্র বিষয়জ্ঞান থাকতো, তা হলে সাধ করে ‘ঘোড়ার ডিম’ ও ‘আকাশকুসুমের’র দলে গণ্য হতেন না। সুতরাং একদিন আমরা তারে একজন কাণ্ডজ্ঞানহীন পাড়াগেঁয়ে জমিদার বলে ডাকতে পারি।

    সন্ন্যাসী আমাদের বসতে বলে অন্য কথা তোলবার উপক্রম কচ্চেন, এমন সময়ে বঙ্কুবেহারীবাবু এসে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম কল্লেন—সে দিন বঙ্কুবেহারিবাবু মাথায় একটি জরীর কাবুলী তাজ, গায়ে লাল গাজের একটি পিরহান, “বেচে থাকুক বিদ্দেসাগর চিরজীবী হয়ে’ পেড়ে শান্তিপুরের ধুতি ও ডুরে উড়ুনী মাত্র ব্যবহার করেছিলেন, আর হাতে একখানি লাল রঙ্গের রুমাল ছিল—তাতে রিংসমেত গুটিকত চাবী ঝুলছিল।

    বঙ্কবেহারীবাবুর ভূমিকা, মিষ্টি আলাপ, নমস্কার ও স্যেকহ্যাণ্ড চুকলে পর, তার দাদা সন্ন্যাসীকে হিন্দীতে বুঝিয়ে বল্লেন যে, এই সকল ভদ্দর লোকেরা আপনার বুজরুকী ও ক্যারামত দেখতে এসেছেন; প্রার্থনা—অবকাশমত দুই একটা জাহার করেন, তাতে সন্নাসীও কিছু কষ্টের পর রাজী হলেন। ক্রমে বুজরুকীর উপক্রমণিকা আরম্ভ হলো, বঙ্কবেহারীবাবু প্রোগ্র্যাম স্থির কল্লেন, কিছুক্ষণ দেখতে দেখতে প্রথমে ঘটের উপর থেকে একটি জবাফুল তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। ঘটের উপর থেকে জবাফুল বর্ষাকালের কড়কটে ব্যাঙের মত থপসি করে লাফিয়ে উঠলো, সন্ন্যাসী তার দুহাত তফাতে বসে রয়েচেন—এ দেখলে হঠাং বিস্মিত হতেই হয়। সুতরাং ঘর শুদ্ধ লোক খণিকক্ষণ অবাক হয়ে রইলেন সন্ন্যাসীর গম্ভীরতা ও দর্পভরা মুখখানি তই অহঙ্কারে ফুলে উঠতে লাগলো। এমন সময়ে এক জন চেল এক বোতল মদ এনে উপস্থিত কল্লেদ দুর্ব হয়ে যাবে। পাছে ডবল বোতল বা অন্য কোন জিনিষ বলে দর্শকদের সন্দেহ হয়, তার জন্য সন্ন্যাসী একখানি নতুন সরায় সেই বোতলের সমুদায় মদটুকু ঢেলে ফেল্লেন, ঘর মদের গন্ধে তর্‌র্‌ হয়ে গ্যালো–সকলেরই স্থির বিশ্বাস হলো, এ মদ বটে।

    সন্ন্যাসী নতুন সরায় মদ ঢেলেই একটি হুঙ্কার ছাড়িলেন, ক্ষুদে ক্ষুদে ছেলেরা আঁতকে উঠলো, বুড়োদের বুক গুর গুর কত্তে লাগলো; একজন চেলা নিকটে এসে জিজ্ঞাসা কল্লে, “গুরু! এ কটোরেমে ক্যা হয়?” সন্ন্যাসী, “দুধ হো বেটা!” বলে তাতে এক কুশী জল ফেলবামাত্র সরার মদ দুধের মত সাদা হয়ে গেল—আমরাও দেখে শুনে গাধা বনে গেলুম। এইরকম নানা প্রকার বুজরুকী ও কার্দ্দানী প্রকাশ হতে হতে রাত্রি এগারোটা বেজে গেল; সুতরাং সকলের সম্মতিতে বঙ্কবাবুর প্রস্তাবে সে রাত্রের মত বেদব্যাসের বিশ্রাম হলো; আমরা রামরকমের একটা প্রণাম দিয়ে, একটি উল্লুক হয়ে বাড়ীতে এলেম। একে ক্ষুধাও বিলক্ষণ হয়েছিল, তাতে আমাদের বাহন ঝাঁকামুটেটি যে রাৎকাণা, তা পূৰ্ব্বে বলে নাই; সুতরাং তার হাত ধরে গুটি গুটি করে আধ ক্রোশ পথ উজোন ঠেলে তাকে কাঠের দোকানে পৌঁছে রেখে, তবে বাড়ী যাই। দুঃখের বিষয়, আবার সে রাত্রে বেড়ালে আমাদের খাবারগুলি সব খেয়ে গিয়েছিল; দোকানগুলিও বন্ধ হয়ে গ্যাচে। সুতরাং ক্ষুধায় ও পথের কষ্টে আমরা হতভম্ব হয়ে, সে রাত্রি অতিবাহিত করি!

    আমরা পূর্ব্বেই বলে এসেছি, “দশ দিন চোরের এক দিন সেধের”। ক্রমে অনেকেই বঙ্কবাবুর বাড়ীর সন্ন্যাসীর কথা আন্দোলন কত্তে লাগলেন, শেষে এক দিন আমরা সন্ন্যাসীর জুচ্চরি ধত্তে স্থির প্রতিজ্ঞ হয়ে, বন্ধুবাবুর বাড়ীতে গেলেম!

    পূর্ব্বদিনের মত জবাফুল তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো, এমন সময়ে মেডিকেল কলেজের বাঙ্গালা ক্লাশের একজন বাঙ্গাল ছাত্র লাফিয়ে গিয়ে সন্ন্যাসীর হাত ধরে ফেল্লেন। শেষে হুড়োমুড়িতে বেরুলো জবাফুলটি ঘোড়ার বালুঞ্চি দিয়ে, তাঁর নখের সঙ্গে লাগান ছিল!

    সংসারের গতিই এই! একবার অনর্থের একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র বেরুলে, ক্রমে বহুলী হয়ে পড়ে। বালুঞ্চি বাঁধা জবাফুল ধরা পড়তেই, সকলেই একত্র হয়ে সন্ন্যাসীর তোবড়া-তুবড়ি খানা-তল্লাসী কত্তে লাগলেন; একজন ঘুর্ত্তে ঘুৰ্ত্তে ঘরের কোণ থেকে একটা মরা পাঁটা বাহির কল্লেন। সন্ন্যাসী একদিন ছাগল কেটে প্রাণ দান দেন, সেই কাটা ছাগলটি সরাতে না পেরে, ঘরের কোণেই (ফ্লোরওয়ালা মেজে নয়) পুতে রেখেছিলেন, তাড়াতাড়িতে বেমালুম করে মাটী চাপাতে পারেন নাই, পাঁটার একটি সিং বেরিয়েছিল-–সুতরাং একজরে পায় ঠ্যাকাতেই অনুসন্ধানে বেরুলো; সন্ন্যাসী আমাদের সাক্ষাতে যে মদকে দুধ করেছিলেন, সেদিন তারও জাঁক ভেঙ্গে গেল, সেই মজলিসের একজন সব আসিষ্টাণ্ট সার্জ্জন বল্লেন যে, আমেরিকান (মার্কিণ আনীস) নামক মদে জল দেবা মাত্র সাদা দুধের মত হয়ে যায়। এই রকম ধরপাকড়ের পর বেহারীবাবুও সন্ন্যাসীকে অপ্রস্তুত করেন। আমরা রৈ রৈ শব্দে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেলেম, হরিভদ্দর খুড়ো সন্ন্যাসীর পেতলের শিবটি কেড়ে নিলেন, সেটি বিক্রী করে নেপালে চরস কেনেন ও তাঁরও সেইদিন থেকে এই রকম বুজরুক সন্ন্যাসীদের উপর অশ্রদ্ধা হয়।

    পূর্ব্বে এই সকল অদৃষ্টচর ব্যাপারের যে রকম প্রাদুর্ভাব ছিল এখন তার অংশে আধগুণও নাই। আমরা সহরে কদিন কটা উৰ্দ্ধবাহু, কটা অবধূত দেখতে পাই? ক্রমে হিন্দুধর্মের সঙ্গে সঙ্গে এ সকল জুয়াচ্চরীরও লাঘব হয়ে অসচে; ক্রেতা ও লাভ ভিন্ন কোন ব্যবসাই স্থায়ী হয় না; সুতরাং উৎসাহদাতা-বিরহেই এই সকল ধৰ্ম্মানুসঙ্গিক প্রবঞ্চনা উঠে যাবে। কিন্তু কলকেতা সহরের এমনি প্রসবক্ষমতা যে এখনও এমন এক একটি মহাপুরুষের জন্ম দিচ্চেন যে, তারা যাতে এই সকল বদমায়েসী চিরদিন থাকে, যাতে হিন্দুধৰ্ম্মের ভড়ং ও ভণ্ডামোর প্রাদুর্ভাব বাড়ে সহস্র সৎকাৰ্য্য পায়ের নীচে ফেলে তার জন্যই শশব্যস্ত! একজনেরা তিন ভাই ছিল, কিন্তু তিনটিই পাগল; একদিন বড় ভাই তার মাকে বলে যে “মা! তোমার গর্ভটি দ্বিতীয় পাগলা গারদ।” সেই রকম একদিন আমরাও কতো সহরকে “রত্নগর্ভা।” বলেও ডাকতে পারি–কলকেতার কি বড় মানুষ, কি মধ্যাবস্থ এক একজন এক একটি রত্ন!! এই দৃষ্টান্তে আমরা বাবু পদ্মলোচনকে মজলিসে হাজির কল্লেম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা : চার্বাক ও হিউম – কালী প্রসন্ন দাস
    Next Article গীতা – কালীপ্রসন্ন সিংহ

    Related Articles

    কালীপ্রসন্ন সিংহ

    মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত)

    July 28, 2025
    কালীপ্রসন্ন সিংহ

    গীতা – কালীপ্রসন্ন সিংহ

    July 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.