Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হুতোমপ্যাঁচার নক্সা – কালীপ্রসন্ন সিংহ

    কালীপ্রসন্ন সিংহ এক পাতা গল্প211 Mins Read0

    ১.২৭ পদ্মলোচন দত্ত ওরফে হঠাৎ অবতার

    পদ্মলোচন দত্ত ওরফে হঠাৎ অবতার

    বাবু পদ্মলোচন ওরফে হঠাৎ অবতার ১১১২ সালে তাঁর মাতামহ নাউ-পাড়ামুষুলীর মিত্তিরদের বাড়ী জন্মগ্রহণ করেন। নাউপাড়ামুষুলী গ্রামখানি মন্দ নয়, অনেক কায়স্থ ও ব্রাহ্মণের বাস আছে, গাঁয়ের জমিদার মজফ্‌ফর খাঁ মোছলমান হয়েও গরু জবাই প্রভৃতি দুঙ্কর্মে বিরত ছিলেন। মোল্লা ও ব্রাহ্মণ উভয়কেই সমান দেখতেন—মানীর মান রাখতেন ও লোকের খাতির ও সেলামাল্কীর গুণা কত্তেন না; ফরাসীতে তিনি বড় লায়েক ছিলেন, বাঙ্গলা ও উর্‌দুতেও তাঁর দখল ছিল। মজফ্‌ফর খাঁ গায়ের জমিদার ছিলেন বটে, কিন্তু ধোপা-নাপিত বন্ধ করা, হুঁকা মারা, ঢ্যালা ফালা, বিয়ে ও গ্রাম ভাটীর হুকুম হাকাম ও নিষ্পত্তি করার ভার মিত্তিরবাবুদের উপরই দেওয়া হয়। পূৰ্ব্বে মিত্তিরবাবুদের বড় জলজলাট ছিল মধ্যে পরিবারের অনেকে মরে যাওয়ায় ভাগাভাগী ও বহু গোষ্ঠী নিবন্ধন কিঞ্চিৎ দৈন্যদশা পড়তে হয়েছিল; কিন্তু পূৰ্ব্বোপেক্ষা নিঃস্ব হলেও গ্রামস্থ লোকদের কাছে মানের কিছুমাত্র ব্যত্যয় হয়নি।

    পদ্মলোচনের জন্মদিনটি সামান্য লোকের জন্মদিনের মত অমনি যায়নি; সেদিন—হঠাৎ মেঘাড়ম্বর করে সমস্ত দিন অবিশ্রাম বৃষ্টি হয়–একটি সাপ আঁতুড় ঘরের দরজায় সমস্ত রাত্রি বসে ফোঁস ফোঁস করে, আর বাড়ীর একটি পোষা টিয়ে পাখী হঠাৎ মরে গিয়ে দাঁড়ে ঝুলে থাকে। পদ্মলোচনের পিতামহী এ সকল লক্ষণ শুভ নিমিত্ত বিবেচনা করে, বড়ই খুসী হয়ে আপনার পর্‌বার একখানি লালপেড়ে সড়িী ধাইকে বক্সি, দেন। অভ্যাগত ঢুলি ও বাজন্দরেরাও একটি সিকি আর এক হাঁড়ি নারকেল লাডু পেয়েছিল! ক্রমে মহা আনন্দে আট্‌কৌড়ে সারা হলো, গায়ের ছেলেরা “আটকৌড়ে বাট্‌কৌড়ে ছেলে আছে ভাল, ছেলের বাবার দাড়িতে বসে হাগ” বলে কূলো বাজিয়ে আটকড়াই, বাতাসা ও এক এক চকচকে পয়সা নিয়ে, আনন্দে বিদেয় হলো! গোভাগাড় থেকে একটা মরা গরুর মাথা কুড়িয়ে এনে আঁতুড়ঘরের দরজায় রেখে ‘দোরষষ্ঠী’ বলে হলুদ ও দূৰ্ব্বো দিয়ে পুজো করা হলো। ক্রমে ১৫ দিন ২০ দিন, তক মাস সম্পূর্ণ হলে গাঁয়ের পঞ্চাননতলায় ষষ্ঠীর পুজো দিয়ে আঁতুড় ওঠান হয়।

    ক্রমে পদ্মলোচন শুক্লতিথিগত চাঁদের মতন বাড়তে লাগলেন! গুলিদাণ্ডা, কপাটী কপাটী, চোর চোর, তেলি হাত পিছলে গেলি প্রভৃতি খেলায় পদ্মলোচন প্রসিদ্ধ হয়ে পড়লেন। পাঁচ বছরে হাতে খড়ি হলো, গুরু মহাশয়ের ভয়ে পদ্মলোচন পুকুরপাড়ে, নল বনে ও বাঁশবাগানে লুকিয়ে থাকেন, পেট কামড়ানি ও গা বমি বমি প্রভৃতি অন্তঃশীলে রোগেরও অভাব রইলো না; ক্রমে কিছুদিন এই রকমে যায়, একদিন পদ্মলোচনের বাপ মলেন, তাঁর মা আগুন খেয়ে গেলেন; ক্রমে মাতামহ, মামা ও মামাতো ভেয়েরাও একে একে অকালে ও সময়ে সল্লেন; সুতরাং মাতামহ মিত্তিরদের ভিটে পুরুষশূন্য প্রায় হলো। জমিজমাগুলি জয়কৃষ্ণের মত জমিদারে কতক গিলে ফেলে, কতক খাজনা না দেওয়ায় বিকিয়ে গেল। সুতরাং পদ্মলোচনকে অতি অল্পবয়সে পেটের জন্যে অদৃষ্ট ও হাতযশের উপর নির্ভর কত্তে হলো। পদ্মলোচন কলকেতায় এসে এক বাসাড়েদের বাসায় পেটভাতে ফাইফরমাস, কাপড় কোঁচানো ও লূচি ভাজা প্রভৃতি কৰ্ম্মে ভর্ত্তি হলেন—অবকাশ মত হাতটাও পাকান হবে—বিশেষতঃ কুঠেলরা লেখা-পড়া শেখাবেন, প্রতিশ্রুত হলেন।

    পদ্মলোচন কিছুকাল ঐ নিয়মে বাসাড়েদের মনোরঞ্জন করতে লাগলেন, ক্রমে দু-এক বাবুর অনুগ্রহপাপ্তির প্রত্যশায় মাথালে জায়গায় উমেদারী আর কল্লেন। সহরের যে বড়মানুষের বৈঠকখানায় যাবেন, প্রায় সর্ব্বত্রই লোকারণ্য দেখতে পাবেন; যদি ভিতরকার খবর দ্যান, তা হলে পাওনাদার, মহাজন, উঠনোওয়ালা দোকানদার, উমেদার, আইবুড়ো ও বেকার কুলীনের ছেলে বিস্তর দেখতে পাবেন—পদ্মলোচনও সেই ভিড়ের মধ্যে একটি বাড়লেন; ক্রমে অষ্টপ্রহর ঘণ্টার গরুড়ের মত উমেদারিতে অনবরত এক বৎসর হাঁটাহাঁটা ও হাজিরের পর দুচারখানা সই-সুপারিসও হস্তগত হলো; শেষে এক সদয়হৃদয় মুছুদ্দী আপনার হাউসে ওজোন সরকারী কর্ম্ম দিলেন।

    পদ্মলোচন কষ্টভোগের একশেষ করেছিলেন; ভদ্দরলোকের ছেলে হয়েও তাকে কাপড় কোঁচানো, লুচি ভাজা, বাজার করা, জল তোলা প্রভৃতি অপকৃষ্ট কাজ স্বীকার কত্তে হয়েছিল; ক্রমশঃ লুচি ভাজতে ভাজতে ক্রমে লুচি ভাজায় তিনি এমনি তইরি হয়ে উঠলেন যে, তার মত লূচি অনেক মেঠাইওয়ালা বামুনেও ভাজতে পাত্তো না! বাসাড়েরা খুসী হয়ে তারে ‘মেকর’ খেতাব দেয়। সুতরাং সেই দিন থেকে তিনি ‘মেকর পদ্মলোচন দত্ত’ নামে বিখ্যাত হলেন!

    ভাষা কথায় বলে “যখন যার কপাল ধরে–যখন পড়তা পড়তে আরম্ভ হয়, তখন ছাইমুটো ধল্লে সোণমুটো হয়ে যায়। ক্রমে পদ্মলোচন দত্তের শুভদৃষ্ট ফলতে আরম্ভ হলো, মুদী অনুগ্রহ করে শিপসরকারী কর্ম্ম দিলেন। সাহেবরাও দত্তজার বিলাকী ও কাজের হুসিয়ারিতে সন্তুষ্ট হতে লাগলেন পদ্মলোচন ততই সাহেবদের সন্তুষ্ট করবার অকসুর খুঁজতে লাগলেন—একমনে সেবা কক্সে ভয়ঙ্কর সাপও সদয় হয়; পুরাণে পাওয়া যায় যে, তপস্যা করে অনেকে হিন্দুদের ভূতের মত ভয়ানক দেবতাগুলোকেও প্রসন্ন করেছে! ক্ৰম সায়েবরা পদ্মলো:নর প্রতি সন্তুষ্ট হয় তার ভাল করার চেষ্টায় রইলন; একদিন হাউসের সদরমেট কর্ম্মে জবাব দিলে সায়েবরা মুছুদ্দীকে অনুরোধ করে পদ্মলোচনকে সেই কর্ম্মে ভর্ত্তি কল্লেন!

    পদ্মলোচন শিপসরকার হয়েও বাসড়েদের আশ্রয় পরিত্যাগ করেন নি; কিন্তু সদরমেট হয়ে সেখানে থাকা আর ভাল দেখায় না বলেই, অন্যত্র একটু জায়গা ভাড়া করে একখানি খেলার ঘর প্রস্তুত করে রইলেন। কিন্তু এ অবস্থায় তাঁরে অধিকদিন থাকতে হলো না। তাঁর অদৃষ্ট শীঘ্রই লুচির ফোসকার মত ফুলে উঠলো–বের জল পেলে কনেরা যেমন ফেঁপে ওঠে, তিনিও তেমনি ফাঁপতে লাগলেন। ক্রমে মুচ্ছুদ্দীর সঙ্গে সায়েবদের বড় একটা বনিবনাও না হওয়ায় মুচ্ছুদ্দী কৰ্ম্ম ছেড়ে দিলেন, সুতরাং সায়েবদের অনুগ্রহধর পদ্মলোচন, বিনা ডিপজিটে মুচ্ছুদ্দী হলেন।

    টাকায় সকলই করে! পদ্মলোচন মুচ্ছুদ্দী হবামাত্র অবস্থার পরিবর্ত্তন বুঝতে পাল্লেন। তার পরদিন সকালে খেলার ঘর বালাখানাকে ভাংচাতে লাগলো—উমেদার, দালাল, প্যায়দা, গদিওয়ালা ও পাইকার ভরে গেল। কেউ পদ্মলোচনবাবুকে নমস্কার করে হাঁটুগেড়ে জোড়হাত করে কথা কয়, কেউ ‘আপনার সোণার দোত কলম হোক’ ‘লক্ষপতি হোন’ ‘সম্বৎসরের মধ্যে পুওর সন্তান হোক’ অনুগতের হুজুর ভিন্ন গতি নাই’ প্রভৃতি কথায় পদ্মলোচনকে তুঁদুলে পাউরুটী হতেও ফোলাতে লাগলেন–ক্রমে দুরবস্থা দুষ্কর লোচ্চার মত মুখে কাপড় দিয়ে লুকুলেন–অভিমানও অহঙ্কারে ভূষিত হয়ে সৌভাগ্যযুবতী বারাঙ্গনা সেজে তাঁরে আলিঙ্গন কল্লেন, হুজুকদারেরা আজকাল ‘পদ্মলোচনকে পায় কে’ বলে ঢ্যাঁকা পিটে দিলেন, প্রতিধ্বনি রেও বামুন, অগ্রদানী ও গাইয়ে বাজিয়ে সেজে এই কথাটি সর্ব্বত্র ঘোষণা করে বেড়াতে লাগলেন–সহরে ঢি ঢি হয়ে গেল—পদ্মলোচন একজন মস্ত লোক।

    কলকেতা সহরে কতকগুলি বেকার জয়কেতু আছেন। যখন যার নতুন বোলবোলাও হয়, তখন তাঁরা সেইখানে মেশেন, তাঁকেই জগতের শ্রেষ্ঠ দেখান ও অনন্যমনে তাঁরই উপাসনা করে, আবার যদি তাঁর চেয়ে কেউ উঁচু হয়ে পড়েন, তবে তাঁরে পরিত্যাগ করে উঁচু দলে জমেন; আমরা ছেলেবেলা বুড়ো ঠাকুরমার কাছে ‘ছাঁদন দড়ি ও গোদা নড়ির’ গল্প শুনেছিলাম, এই মহাপুরুষেরা ঠিক সেই ‘ছাঁদন দড়ি গোদা নড়ি।’ গল্পে আছে, রাজপুত্তুর জিজ্ঞাসা কল্লো, “ছাঁদন দড়ি গোদা নড়ি! এখন তুমি কার?–না আমি যখন যার তখন তার?” তেমনি হতোমপ্যাঁচা বলেন, সহুরে জয়কেতুরাও যখন যার তখন তার!!

    জয়কেভু ভদ্দরলোকের ছেলে, অনেকে লেখাপড়াও জানেন; তবে কেউ কেউ মূর্ত্তিমতী মা। এঁদের অধিকাংশই পৌত্তলিক, কুলীন বামুন, কায়স্থ কুলীন, বেকার, পেনশুনে ও ব্রকোদই বিস্তর! বহুকালের পর পদ্মলোচনবাবু কলকেতা সহরে বাবু বলে বিখ্যাত হন। প্রায় বিশ বৎসর হলো সহরের হঠাৎ বাবুর উপসংহার হয়ে যায়, তন্নিবন্ধন ‘জয়কেতু’ ‘মোসাহেব’ ‘ওস্তাদজী’ ‘ভড়জা’ ‘ঘোষজা’ ‘বোসজা’ প্রভৃতি বরাখুরেরা জোয়ারের-বিষ্ঠার মত ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন, সুতরাং এখন পদ্মলোচনের “তর্পণের কোশায়” জুড়াবার জায়গা পেলেন।

    জয়কেতুরা ক্রমে পদ্মলোচনকে ফাঁপিয়ে তুল্লেন, পড়তাও ভাল চল্লো—পদ্মলোচন অ্যাম্বিসনের দাস হলেন, হিতাহিত বিবেচনা দেনদার বাবুদের মত গা ঢাকা হলেন। পদ্মলোচন প্রকৃত হিন্দুর মুখোস পরে সংসার-রঙ্গভূমিতে নাবলেন;–ব্রাহ্মণের পার্দ্ধলো খান–পা চাটেন—দলাদলির ও হিন্দুধর্মের ঘোঁটি করেন—ঠাকরুণ বিষয় ও সখীযংবাদ গাওনার পক্ষে প্রকৃত ব্লটীংপেপার; পদ্মলোচনের দোর্দ্দণ্ড প্রতাপ! বৈঠকখানায় ব্রাহ্মণ অধ্যাপক ধরে না, মিউটিনীর সময়ে গবর্ণমেণ্ট যেমন দোচোখখাত ভলেটীয়ার জুটিয়েছিলেন, পদ্মলোচন বাবু হয়ে সেইরূপ ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত সংগ্রহ কত্তে বাকি রাখলেন না! এসিয়াটিক সোসাইটির মিউজিয়মের মত বিবিধ আশ্চর্য জীব একত্র কল্লেন—বেশীর ভাগ জ্যান্ত!!

    বাঙ্গালী বদমায়েস ও দুর্ব্বুদ্ধির হাতে টাকা না থাকলে সংসারের কিছুমাত্র ক্ষতি কত্তে পারে না, বদমায়েশী ও টাকা একত্র হলে হাতী পর্য্যন্ত মারা পড়ে, সেটি বড় সোজা ব্যাপার নয়, শিবকেষ্টো বাঁড়ুয্যে পর্য্যন্ত যাতে মারা যান! পদ্মলোচনও পাঁচজন কুলোকের পরামর্শে বদমায়েসী আরম্ভ কল্লেন—পৃথিবীর লোকের নিন্দা করা, খোঁটা দেওয়া বা টিট্‌কারী করা তার কাজ হলো; ক্রমে তাতেই তিনি এমনি চোড়ে উঠলেন যে, শেষে আপনাকে আপনি অবতার বলে বিবেচনা কত্তে লাগলেন; পারিষদেরা অবতার, বলে তাঁর স্তব কত্তে লাগলো; বাজে লেকে ‘হঠাৎ অবতার’ খেতাব দিলে-দর্শক ভদ্দর লোকেরা এই সকল দেখে শুনে অবাক হয়ে ক্ল্যাপ দিতে লাগলেন।

    পদ্মলোচন যথার্থই মনে মনে ঠাউরেছিলেন যে, তিনি সামান্য মনুষ্য নন, হরি হরি, নয় পীর কিম্বা ইহুদিদের ভাবী মেসায়া!—তারই সফলতা ও সার্থকতার জন্য পদ্মলোচন বুজরুকী পর্য্যন্ত দেখাতে ত্রুটী করেন নাই।

    বিলাতী জিজেষ্ক্রাইষ্ট এক টুকরো রুটিতে একশ লোক খাইয়েছিলেন–কানা ও খোঁড়া ফুঁয়ে ভাল কত্তেন! হিন্দু মতের কেষ্টও পূতনা বধ, শকটভঞ্জন প্রভৃতি অলৌকিক কাৰ্য্য করেছিলেন। পদ্মলোচন আপনারে অবতার বলে মানাবার জন্যে সহরে হুজুক তুলে দিলেন যে, “তিনি একদিন বারো জনের খাবার জিনিসে একশ লোক খাইয়ে দিলেন।” কাণ খোঁড়ারা সর্ব্বদাই হবেড়ীর ধ্বজবজ্রাঙ্কুশযুক্ত পদ্মহস্ত পাবার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন, বুড়ী বুড়ী মাগীরা ক্ষুদে ক্ষুদে ছেলে নিয়ে ‘হাতবুলানো’ পাইয়ে আনে, পদ্মলোচন এইরূপ নানাবিধ বুজরুকী প্রকাশ কত্তে লাগলেন। এই সকল শুনে চতুষ্পাঠীওয়ালা মহাপুরুষের মড়কের শকুনির মত নাচতে লাগলেন—টাকার এমনি প্রতাপ যে, চন্দ্রকে দেখে রত্নাকর সাগরও কেঁপে ওঠেন—অন্যের কি কথা! ময়রার দোকানে যত রকমারি মাছি, বসন্তি বোলতা আর ভোঁভূয়ে ভোমরা দেখা যায়, বইয়ের দোকানে তার কটা থাকে সেথায় পদার্থহীন উই পোকার—আন্‌সাড়ে আরুসুলার দল, আর দু একটা গোডিমওয়ালা ফচকে নেংটি ইঁদুর মাত্র।

    হঠাৎ টাকা হলে মোজ যে রকম গরম হয়, এক দম গাঁজাতেও সে রকম হয় না, হঠাৎ অবতার হয়েও পদ্মলোচনের আশা নিবৃত্ত হবে তারও সম্ভাবনা কি? কিছু দিনের মধ্যে পদ্মলোচন কলকেতা সহরের একজন প্রধান হিন্দু হয়ে পড়েন তিনি হাই তুল্লে হাজার ভুঁড়ি পড়ে–তিনি হাঁচলে জীব জীব জীব শব্দে ঘর কেঁপে উঠে! ‘ওরে ওরে ওরে!’ ‘হুজুর’ ও ‘যো হুকুমের’, হল্লা পড়ে গেল, ক্রমে সহরের বড় দলে খবর হলো যে, কলকেতার ন্যাচরাল হিষ্টীর দলে একটি নম্বরে বাড়লো।

    ক্রমে পদ্মলোচন নানা উপায়ে বিলক্ষণ দশ টাকা উপায় কত্তে লাগলেন, অবস্থার উপযুক্ত একটি নতুন বাড়ী কিনলেন, সহরের বড়মানুষ হলে যে সকল জিনিপত্র ও উপাদানের আবশ্যক, সভাস্থ আত্মীয় ও মোসাহেবের ক্রমশঃ সেই সকল জিনিস সংগ্রহ করে ভাণ্ডার ও উদর পুরে ফেল্লেন; বাবু স্বয়ং পছন্দ করে (আপন চক্ষে সুবর্ণ বর্ষে) একটি অবিদ্যাও রাখলেন।

    বেশ্যাবাজীটি আজকাল এ সহরে বাহাদুরীর কাজ ও বড়মানুষের এলবাত পোষাকের মধ্যে গণ্য। অনেক বড়মানুষ বহুকাল হলো মরে গেচেন, কিন্তু তাদের রক্ষিতার বাড়ীগুলি আজও মনুমেন্টের মত তাঁদে স্মরণার্থে রয়েছে—সেই তেতলা কি দোতলা বাড়ীটি ভিন্ন তাদের জীবনে আর এমন কিছু কাজ হয় নি, যা দেখে সাধারণে তাদের স্মরণ করে। কলকেতার অনেক প্রকৃত হিন্দু দলপতি ও রাজারাজড়ারা রাত্রে নিজ বিবাহিত স্ত্রীর মুখ দেখেন না। বাড়ীর প্রধান আমলা, দাওয়ান মুচ্ছুদ্দিরা যেমন হুজুরদের হয়ে বিষয় কৰ্ম্ম দেখেন—স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণের ভারও তাঁদের উপর আইন মত অর্শায়, সুতরাং তাঁরা ছাড়বেন কেন? এই ভয়ে কোন কোন বুদ্ধিমান স্ত্রীকে বাড়ীর ভিতরের ঘরে পূরে চাবি বন্ধ করে বাইরের বৈঠকথানায় সারা রাত্রি অবিদ্যা নিয়ে আমোদ করেন, তোপ পড়ে গেলে ফরসা হবার পূর্ব্বে গাড়ী বা পাল্কী করে বিবিসাহেব বিদায় হন—বাবু বাড়ীর ভিতর গিয়ে শয়ন করেন।–স্ত্রীও চাবি হতে পরিত্রাণ পান। ছোকরাগোছের কোন কোন বাবুরা বাপ-মার ভয়ে আপনার শোবার ঘরে স্ত্রীকে একাকিনী ফেলে আপনি বেরিয়ে যান; মধ্য রাত্রি কেটে গেলে বাবু আমোদ লুটে ফেরেন ও বাড়ীতে এসে চুপি চুপি শোবার ঘরের দরজায় ঘা মারেন, দরজা খোলা পেলে বাবু শয়ন করেন। বাড়ীর আর কেউই টের পায় না যে, বাবু রাত্রে ঘরে থাকেন না। পাঠকগণ! যারা ছেলে বেলা থেকে “ধৰ্ম্ম যে কার নাম, তা শোনে নি, হিতাহিত বিবেচনার সঙ্গে যাদের সুদূর সম্পর্ক, কতকগুলি হতভাগা মোসাহেবই যাদের হাল” তারা যে এই রকম পশুবৎ কদাচারে রত থাকবে, এ বড় আশ্চাৰ্য নয়! কলকেতা সহর এই মহাপুরুষদের জন্য বেশ্যাসহর হয়ে পড়েছে, এমন পাড়া নাই, যেখানে অন্তত দশ ঘর বেশ্যা নাই, হেয় প্রতি বৎসর বেশ্যার সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে বই কমছে না। এমন কি, এক জন বড়মানুষের বাড়ীর পাশে একটি গৃহস্থের সুন্দরী বউ কি মেয়ে বার কবার যো নাই, তা হলে দশ দিনেই সেই সুন্দরী টাকা ও সুখের লোভে কুলে জলাঞ্জলি দেবে—যত দিন সুন্দরী বাবুর মনস্কামনা পূর্ণ না করবে, তত দিন দেখতে পাবেন, বাবু অষ্ট প্রহর বাড়ীর ছাদের উপর কি বারান্দাতেই আছেন, কখন হাসচেন, কখন টাকার তোড়া নিয়ে ইসারা কোরে দেখাচ্চেন। এ ভিন্ন মোসাহেবদেরও নিস্তার নাই; তাঁরা যত দিন তাঁরে বাবুর কাছে না আনতে পারেন, ততদিন মহাদায়গ্রস্ত হয়ে থাকতে হবে, হয় ত সে কালের নবাবদের মতে “জান বাচ্চা এক গাড়” হবার হুকুম হয়েচে! ক্রমে কলে কৌশলে সেই সাধ্বী স্ত্রী বা কুমারীর ধর্ম্ম নষ্ট করে শেষে তাড়িয়ে দেওয়া হবে—তখন বাজারে কশার করাই তার অনন্যগতি হয়ে পড়ে! শুধুই এই নয় সহরের বড় মানুষেরা অনেকে এমনি লম্পট যে স্ত্রী ও রক্ষিত মেয়েমানুষ-ভোগেও সন্তুষ্ট নন, তাতেও সেই নরাধম রাক্ষসদের কাম-ক্ষুধাও নিবৃত্তি হয় না—শেষে আত্মীয়া যুবতীরাও তার ভোগে লাগে।–এতে কত সতী আত্মহত্যা করে, বিষ খেয়ে এই মহাপাপীদের হাত এড়িয়েছে। আমরা বেশ জানি, অনেক বড়মানুষের বাড়ী মাসে একটি করে প্রাণহত্যা হয় ও রক্তকম্বলের শিকড়, চিতের ডাল ও করবীর ছালের নুন-তেলের মত উঠনো বরাদ্দ আছে। যেখানে হিন্দুধর্মের অধিক ভড়ং, যেখানে দলাদলির অধিক ঘোঁট ও ভদ্দরলোকের অধিক কুৎসা, প্রায় সেখানেই ভিতর বাগে উদোম এলো, কিন্তু বাইরে পাদে গেরো!

    হায়! যাদের জন্মগ্রহণে বঙ্গভুমির দুরবস্থা দূর হধা প্রত্যাশা করা যায়, যার প্রভূত ধনের অধিপতি হয়ে স্বজাতি, সমাজ ও বঙ্গভূমির মঙ্গলের জন্য কায়মনে যত্ন নেবে, না সেই মহাপুরুষেরাই সমস্ত ভয়ানক দোষ ও মহাপাপের আকর হয়ে বসে রইলেন; এর বাড়া আর আক্ষেপের বিষয় কি আছে? আজ একশ বৎসর অতীত হলো, ইংরাজের এ দেশে এসেছেন, কিন্তু আমাদের অবস্থার কি পরিবর্ত্তন হয়েছে? সেই নবাবী আমলের বড়মানষী কেতা, সেই পাকান কাচা, সেই কোঁচান চাদর, লপেটা জুতো ও বাবরী চুল আজও দেখা যাচ্চে; বরং গৃহস্থ মধ্যস্থ লোকের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়, কিন্তু আমাদের হুজুরেরা যেমন, তেমনই রয়েচেন। আমাদের ভরসা ছিল, কেউ হঠাৎ বড়মানুষ হলে রিফাইণ্ড গোচের বড়মানুষীর নজীর হবে, কিন্তু পদ্মলোচনের দৃষ্টান্তে আমাদের সে আশা সমূলে নিৰ্ম্মল হয়ে গেল–পদ্মলোচন আবার কফিনচোরের ব্যাটা ম্যকমারা হয়ে পড়লেন, কফিনচোর মরা লোকের কাপড় চুরি কত্তো মাত্র–অবিদ্যা রেখে অবধি পদ্মলোচন স্ত্রীর সহবাস পরিত্যাগ কল্লেন, স্ত্রী চরে খেতে লাগলেন। পূৰ্ব্ব সহবাস বা তার হাতযশে পদ্মলোচনের গুটি চার ছেলে হয়েছিল; ক্রমে জ্যেষ্ঠটি বড় হয়ে উঠলো, সুতরাং তার বিবাহে বিলক্ষণ ধূমধাম হবার পরামর্শ হতে লাগলো!

    ক্রমে বড়বাবুর বিয়ের উজ্জুগ হতে লাগলো; ঘটক ও ঘটকীর বাড়ী বাড়ী মেয়ে দেখে বেড়াতে লাগলেন—“কুলীনের মেয়ে, দেখতে পরমা সুন্দরী হবে, দশ টাকা যোত্তর থাকবে এমনটি শীগগির জুটে ওঠা সোজা কথা নয়। শেষে অনেক বাছা-গোছা ও দেখা-শুনার পর শহরের আগড়োম ভোঁম সিঙ্গির লেনের আত্মারাম মিত্তিরের পৌত্তুরীরই ফুল ফুটলো! আত্মারামবাবু খাস হিন্দু, কাপ্তেনীর কৰ্ম্মে বিলক্ষণ দশ টাকা উপায় করেছিলেন, আত্মারামবাবুর সংসারও রাবণের সংসার বল্লে হয়–সাত সাতটি রোজগেরে ব্যাটা, পরীর মত পাঁচ মেয়ে, আর গড়ে গুটি চল্লিশ পৌত্তুর পৌত্তুরী; এ সওয়ার ভাগ্নে, জামাই কুটুম্বসাক্ষাৎ বাড়ীতে গিজ গিজ করে,–সুতরাং সৰ্বগুণাক্রান্ত আসামি পদ্মলোচনের বেয়াই হবার উপযুক্ত স্থির হলেন। শুভলগ্নে মহা আড়ম্বর করে লগ্নপত্রে বিবাহের দিন স্থির হলো; দলস্থ সমুদায়, ব্রাহ্মণেরা মর্য্যাদামত পত্রের বিদেয় পেলেন, রাজভাট ও ঘটকেরা ধন্যবাদ দিতে চল্লো; বিয়ের ভারী ধূম! সহরে হুজুক উঠলো পদ্মলোচনবাবুর ছেলের বিয়ের পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ–গোপাল মল্লিক ছেলের বিয়েতে খরচ করেছিলেন বটে, কিন্তু এতো নয়।

    দিন আসচে দেখতে দেখতেই এসে পড়ে। ক্রমে বিবাহের দিন ঘনিয়ে এলো বিয়েবাড়ীতে নহবৎ বসে গেল। অধ্যক্ষ ভট্টাচার্য্য ও দলস্থদের ঘোঁট বাদন সুরু হলো—ত্রিশ হাজার জোড়া শাল, সোণার লোহা ও ঢাকাই সাড়ী, দু লক্ষ সামাজিক ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদলে বিতরণ হলো; বড়মানুষদের বাড়ীতেও ও শাল ও সোণাওয়ালা লোহা, ঢাকাই কাপড়, গেদরা কদ্দক, গোলাব ও আতর, এক এক জোড়া শাল সওগাদ পাঠান হলো! কেউ আদর কবে গ্রহণ কল্লেন, কেউ কেউ বলে পাঠালেন যে, আমরা টুলি বা বাজন্দরে নই যে, শাল নেবো! কিন্তু পদ্মলোচন হঠাৎ অবতার হয়ে শ্রীরামচন্দ্রের মত আত্মবিস্মৃত হয়ে ছিলেন, সুতরাং সে কথা গ্রাহ্য কল্লেন না। পারিষদ, মোসাহেব ও বিবাহেব অধ্যক্ষেরা বলে উঠলেন—বেটার অদৃষ্টে নাই।

    এদিকে বিয়েব বাইনাচ আরম্ভ হলো, কোথাও রূপোর বালা লাল কাপড়ের তকমাধরা ও উর্দ্ধী-পরা চাকরেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোথাও অধ্যক্ষেরা গড়ের বাজ্ঞা আনবার পরামর্শ কচ্চেন—কোথাও বরের সজ্জা তইরির জন্য দজ্জিরা একমনে কাজ কচ্চে—চারিদিকেই হৈ হৈ ও রৈ রৈ শব্দ। বাবুর দেওয়া শালে শহরের অর্ধেক লোকেই লালে লাল হয়ে গেল, ঢুলি ও বাজন্দরেরা তো অনেকের বিয়েতেই পুরাণ শাল পেয়ে থাকে, কিন্তু পদ্মলোচনের ছেলের বিয়ের সুন্দর লোকেও শাল পেয়ে লাল হয়ে গেলেন!

    ১২ই পৌষ শনিবার বিবাহের লগ্ন স্থির হয়েছিল! আজ ১২ই পৌষ, আজ বিবাহ। আমরা পূর্ব্বেই বলেছি যে, সহরে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল, “পদ্মলোচনের ছেলের বিয়ের পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ।” সুতরাং বিবাহের দিন বৈকাল হতে রাস্তায় ভয়ানক লোকারণ্য হতে লাগলো, পাহারা ওয়ালারা অতি কষ্টে গাড়ীঘোড়া চলবার পথ করে দিতে লাগলো। ক্রমে সন্ধ্যার সময় বর বেরুলো;–প্রথমে কাগজের ও অব্বরের হাতঝাড়, পাঞ্জা ও সিঁড়ি ঝাড় রাস্তার দুপাশে চল্লো। ঐ রেশালার আগে আগে দুটি চলতি নবত ছিল; তার পেছনে গেট–দালান ও কাগজের পাহাড়ের উপর হরপার্ব্বতী, নন্দী, ষাঁড়, ভৃঙ্গী, সাপ ও নানারকম গাছ–তার পেছনে ঘোড়াপঙ্খী, হাতীপঙ্খী, উটপঙ্খী, ময়ূরপঙ্খীগুলির ওপরে বারোজন করে দাঁড়ি, মেয়ে ও পুরুষ সওদাগর সাজা ও দুটি করে ঢোল। তার আশে পাশে তক্তনামার উপর ‘মগের নাচ’ ‘ফিরিঙ্গির নাচ’ প্রভৃতি নানাপ্রকার সাজা সং! তার পশ্চাৎ এক শ’ ঢোল, চল্লিশটি জগঝম্প ও গুটি যাইটেক ঢাক মায় রোষোনচৌকী—শানাই, ভোড় ও ভেপু তার কিছু অন্তরে এক দল নিমখাসা রকমের চুনোগলীর ইংরেজী বাজনা। মধ্যে বাবুর মোসাহেব, ব্রাহ্মণ, পণ্ডিত, পারিষদ, আত্মীয় ও কুটুম্বরা। সকলেরই এক রকম শাল, মাথায় রুমাল জড়ান, হাতে একগাছি ইষ্টিক, হঠাৎ বোধ হয় যেন এক কোম্পানী ডিজার্মড সেপাই! এই দলের দুই ধারে লাল বনাতের খাশ গেলাস ও রূপোর ডাণ্ডিতে রেসমের নিসেনধরা তক্‌মাপরা মুটে ও ক্ষুদে ক্ষুনে ছোঁড়ারা; মধ্যে খোদ বরকৰ্ত্তা, গুরু-পুরোহিত, বাছালো বাছালো ভূঁড়ে ভূঁড়ে ভটচায্যি ও আত্মীয় অন্তরঙ্গরা; এর পেছনে রাঙ্গামুখোইংরেজী বাজনা, সাজা সায়েব-তুরুক-সওয়ার, বরের ইয়ারবস্ক, খাস দরওয়ানরা, হেড খানসামা ও রূপের সুখাসনখানির চারিদিকে মায় বাতি বেললণ্ঠন, টাঙ্গান, সাম্নে রূপোর দশডেলে বসান ঝাড়, দুই পাশে চামরধরা দুটো ছোঁড়া; শেষে বরের তোরঙ্গ, প্যাটরা, বাড়ীর পরামাণিক, সোনার দানা গলায় বুড়ী বুড়ী গুটীকত দাসী ও বাজে লোক; তার পেছনে বরযাত্রীর গাড়ীয় সার–প্রায় সকলগুলির উপয় এক এক চাকর ডবল বাতিদেওয়া হাত লণ্ঠন ধরে বসে যাচ্চে।

    ব্যাণ্ড, ঢাক, ঢোল ও নাগরার শব্দে, লোকের বল্লা ও অধ্যক্ষদের মিছিলের চীৎকারে কলকেতা কাঁপতে লাগলো; অপর পাড়ার লোকেরা তাড়াতাড়ি ছাতে উঠে মনে কল্লে ওদিকে ভয়ানক আগুন লেগে থাকবে। রাস্তার দুধারি বাড়ীর জানালা ও বারাণ্ডা লেকে পুরে গেল। বেশ্যারা “অহা দিব্বি ছেলেটি যেন চাদ!” বলে প্রশংসা কত্তে লাগলো। হুতোমুপচা অন্তরক্ষি থেকে নক্সা নিতে লাগলেন। ক্রমে বর কনের বাড়ী পৌঁছিল। কাকর্ত্তারা তাদর সওষণ করে বরুবাত্তোরদের অভ্যর্থনা কল্লেন–পাড়ার মৌতাতি বুড়ো ও বওয়াটে ছোঁড়ারা গ্রামভটির জন্য বরকর্ত্তাকে ঘিরে দাঁড়ালো –বর সভায় গিয়ে বসলো, ঘটকের ছড়া পড়তে লাগলো, মেয়েরা বার থেকে উঁকি মাত্তে লাগলো, ঘটকের মিত্তিরবাবুর কুলজী আউড়ে দিলে, মিত্তিরবাবু কুলীন, সুতরাং বল্লালী রেজেষ্টারীতে তাঁর বংশাবলী রেজেষ্টারী হয়ে আছে, কেবল দত্তবাবুর বংশাবলীটি বানিয়ে নিতে হয়।

    ক্রমে বরযাত্রী ও কন্যাযাত্রীরা সাপ্টা জলপান করে বিদেয় হলেন! বর স্ত্রী-আচারের জন্য বাড়ীর ভিতর গেলেন। ছাদনাতলায় চারিটি কলাগাছের মধ্যে আল্পনা দিয়ে একটি পিঁড়ে রাখা হয়েছিল, বর চোরের মত হয়ে সেইখানে দাঁড়ালে, মেয়েরা দাঁড়া-গুয়া পান বরণডালা, মঙ্গলের ভাঁড়ওয়ালা কুলো ও পিদ্দিম দিয়ে বরণ কল্লেন, শাঁখবাজানো ও উলু উলুর চোটে বড়ি সরগরম হয়ে উঠলো; ক্রমে মায় শ্বাশুড়ী এয়োরা সাতবার বরকে প্রদক্ষিণ কল্লেন–শ্বাশুড়ী বরের হাতে মাকু দিয়ে বল্লেন, “হাতে দিলাম মাকু একবার ভ্যা কর তা বাপু!” বর কলেজ বয়, আড়চোখে এয়োদের পানে তাকাচ্ছিলেন ও মনে মনে লঙ্কা ভাগ কচ্ছিলেন, সুতরাং “মনে মনে কল্লেন” বল্লেন—শালাজেরা কান মলে দিলে, শালীর গালে ঠোনা মাল্লে। শেষে গুড়চাল, __তাক, অষুদ বিষুদ ফুরুলে, উচ্ছুগ্‌গু করবার জন্য কনেকে দালানে নিয়ে যাওয়া হলো। শাস্ত্রমতে মন্ত্র পড়ে কনে উচ্ছুগ্‌গু হলেন, পুরুত ও ভট্টাচার্য্যেরা সন্দেশের সরা নিয়ে সল্লেন; বরকে বাসরে নিয়ে যাওয়া হলো। বাসরটিতে আমাদের চূড়ান্ত হয়। আমরা তো অ্যাতো বুড়ো হয়েছি, তবু এখনোও বাসরের আমোদটি মনে পড়লে, মুখ দে লাল পড়ে ও আবার বিয়ে কর্ত্তে ইচ্ছে হয়।

    ক্রমে বাসরের অমোদের সঙ্গেই কুমুদিনী অস্ত গেলেন। কমলিনীর হৃদয়রঞ্জন প্রকৃত তেজীয়ান হয়েও যেন তার মানভঞ্জনের জন্যই কোমলভাব ধারণ করে উয়দ হলেন। কমলিনী নাথের তাদৃশ দুর্দ্দশা দেখেই যেন সরোবরের মধ্যে হাসতে লাগলেন; পাখীরা “ছি ছি! কামোন্মত্তদের কিছুমাত্র কাণ্ডজ্ঞান থাকে না;” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। বায়ু মুচকে মুচকে হাসতে লাগলেন–দেখে ক্রোধে সূৰ্য্যদেব নিজ মূর্ত্তি ধারণ কল্লেন; তাই দেখে পাখীরা ভয়ে দূর-দূরান্তরে পালিয়ে গেল। বিয়েবাড়িতে বাসি বিয়ের উজ্জুগ হতে লাগলো। হলুদ ও তেল মাখিয়ে বরকে কলাতলায় কনের সঙ্গে নাওয়ান এমন হলো, বরণডালায় বরণ ও কতক তুকতাকের পর বর-কনে গাঁটছড়া কিছুক্ষণের পর খুলে দেওয়া হলো।

    এদিকে ক্রমে বরযাত্রী ও বরের আত্মীয়-কুটুম্বরা জুটতে লাগলো। বৈকালে পুনরায় সেই রকম মহাসমারোহে বর-কনেকে বাড়ী নে যাওয়া হলো। বরের মা বর-কনেকে বরণ করে ঘরে নিলেন! এক কড়া দুধ দরজার কাছে আগুনের ওপর বসান ছিল, কনেকে সেই দুধের কড়াটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা কর। হলো “মা! কি দেখচো? বল যে আমার সংসার উৎলে পড়চে দেখছি।” কনেও মনে মনে তাই বল্লেন। এ সওয়ায় পাঁচ গিন্নীতে নানা রকম তুকতাক কল্লে পর বর-কনে জিরুতে পেলেন; বিয়েবাড়ীর কথঞ্চিৎ গোল চুকলো—ঢুলিরা ধেনো মদ খেয়ে আমোদ কত্তে লাগলো। অধ্যক্ষের প্রলয় হিন্দু; সুতরাং একটা একটা অগিতোলা দুর্গোমণ্ডা ও এক ঘটী গঙ্গাজল খেয়ে বিছানায় আড় হলেন-বর কনে আলাদা আলাদা শুলেন–অঞ্জ একত্রে শুতে নাই, বে-বাড়ীর বড়গিন্নীর মতে আজকের রাত–কালরাত্রির।

    শীতকালের রাত্রি শীগগির যায় না। এক ঘুম, দু ধুম, আবার প্রস্রাব করে শুলেও বিলক্ষণ এক ঘুম হয়। ক্রমে গুডুম করে তোপ পড়ে গেলো—প্রাতঃস্নানের মেয়েগুলো বকতে বকতে রাস্তা মাথায় করে যাচ্চে—বুড়ো বুড়ো ভটচায্যিরা স্নান করে “মহিম্নঃ পারন্তে” মহিম্নস্তব আ ওড়াতে আওড়াতে চলেছেন। এদিকে পদ্মলোচন অবিদ্যার বাড়ী হতে বাড়ী এলেন; আজ তার নানা কাজ! পদ্মলোচন প্রত্যহ সাত আট্টার সময় বেশ্যালয় থেকে উঠে আসেন, কিন্তু আজ কিছু সকালে আসতে হয়েছিল। সহরের অনেক প্রকৃত হিন্দু বুড়ো বুড়ো দলপতির এক একটি জলপাত্র আছে এ কথা আমরা পূর্ব্বেই বলেচি; এদের মধ্যে কেউ রাত্রি দশটার পর শ্রীমন্দিরে যান একেবারে সকাল বেলা প্রাতঃস্নান করে টিপ, তেলক ও ছাপা কেটে গীতগোবিন্দ ও তসর পরে হরিনাম কত্তে কষ্ট্রে বাড়ী ফেরেন–হঠাৎ লোকে মনে কত্তে পারে শ্ৰীযুত গঙ্গাস্নান করে এলেন। কেউ কেউ বাড়ীতেই প্রিয়তমাকে আনান; সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত হলে ভোরের সময় বিদেয় দিয়ে স্নান করে পূজা কত্তে বসেন-যেন রাত্তিরে তিনি নন–পদ্মলোচনও সেই চাল ধরেছিলন।

    ক্রমে আত্মীয় কুটুম্বেরাও এসে জমলেন, মমসাহেবরা “হুজুর! কলকেতায় এমন বিয়ে হয় নি–হবে না” বলে বাবুর ল্যাজ ফোলাতে লাগলেন। ক্রমে সন্ধ্যার কিছু পূর্ব্বে ফুলশয্যার তত্ত্ব এলো, পদ্মলোচন মহাসমাদরে কনের বাড়ীর চাকর-চাকরাণীদের মহা অভ্যর্থনা কল্লেন, প্রত্যেককে একটি করে টাকা ও একখানি করে কাপড় বিদেয় দিলেন। দলস্থ ও আত্মীয়েরা কিছু কিছু করে অংশ পেলেন। বাকী ঢুলী ও রেশালার লোকেরা বক্সিস পেয়ে, বিদেয় হলো; কোন কোন বাড়ীর গিন্নী সামগ্রী পেয়ে হাঁড়ি পূরে শিকেয় টাঙ্গিয়ে রাখলেন; অধিক অংশ পচে গেল, কতক বেরালে ও ইঁদুরে খেয়ে গেল, তবু গিন্নীরা পেট ভরে খেতে কি কারেও বুক বেধে দিতে পাল্লেন না—বড়মানুষদের বাড়ীর গিন্নীরা প্রায়ই এই রকম হয়ে থাকেন, ঘরে জিনিষ পচে গেলেও লোকের হাতে তুলে দিতে মায়া হয়। শেষে পচে গেলে মহারাণীর খানায় ফেলে দেওয়া হয়, সেও ভাল। কোন কোন বাবুরও এ স্বভাবটি আছে, সহরের এক বড়মানুষের বাড়ীতে দুর্গাপূজার সময়ে নবমীর দিন গুটি ষাইটেক পাঁঠা বলিদান হয়ে থাকে; পুৰ্ব্ব পরম্পরায় সেগুলি সেই দিনেই দলস্থ ও আত্মীয়ের বাড়ী বিতরিত হয়ে আসছে। কিন্তু আজকাল সেই পাঁঠাগুলি নবমীর দিন বলিদান হলেই গুদামজাত হয়; পূজার গোল চুকে গেলে, পূর্ণিমার পর সেইগুলি বাড়ী বাড়ী বিতরণ হয়ে থাকে, সুত্রং ছয় সাত দিনের মরা পচা পাঁঠা কেমন উপাদেয়, তা পাঠক আপনিই বিবেচনা করুন। শেষে গ্রহীতাদের সেই পাঠা বিদেয় কত্তে ঘর হতে পয়সা বার কত্তে হয়! আমরা যে পূর্ব্বে আপনাদের কাছে সহরের সর্দ্দার মূর্খের গল্প করেচি ইনিই তিনি!

    এ দিকে ক্রমে বিবাহের গোল চুকে গেল; পদ্মলোচন বিষয়কৰ্ম্ম কত্তে লাগলেন। তিনি নিত্যনৈমিত্তিক দোল দুর্গোৎসব প্রভৃতি বার মাসে তের পার্ব্বণ ফাঁক দিতেন না, ঘেঁটু পূজাতেও চিনির নৈবিদ্য ও সখের যাত্রী বরাদ্দো ছিলো, আপনার বাড়ীতে যে রকম ধূম করে পূজো আচ্ছা করেন, রক্ষিতা মেয়েমানুষ ও অনুগত দশ বারো জন বিশিষ্ট ব্রাহ্মণের বাড়ীতে তেমনি ধূমে পূজো করাতেন। নিজের ছেলের বিবাহের সময়ে তিনি আগে চল্লিশ জন আইবুড়ো বংশজের বিয়ে দিয়ে দেন। ইংরেজি লেখাপড়ার প্রাদুর্ভাবে রামমোহন রায়ের জন্মগ্রহণে ও সত্যের জ্যোতিতে হিন্দুধর্ম্মের যে কিছু দুরবস্থা দাঁড়িয়েছিলো, পদ্মলোচন কায়মনে তার অপনয়নে কৃতসংকল্প হলেন। কিন্তু তিনি, কি তার ছেলেরা দেশের ভালোর জন্য একদিনও উদ্যত হন নি—শুভ কৰ্ম্মে দান দেওয়া দূরে থাকুক, সে বৎসরের উত্তর-পশ্চিমের ভয়ানক দুর্ভিক্ষেও কিছুমাত্র সাহায্য করেন নি, বরং দেশের ভালো করবার জন্য কেউ কোন প্রস্তাব নিয়ে তাঁদের কাছে উপস্থিত হলে তারে কৃশ্চান ও নাস্তিক বলে তাড়িয়ে দিতেন—এক শ বেলেল্লা বামুন ও দু শ মোসাহেব তাঁর অন্নে প্রতিপালিত হতো—তাতেই পদ্মলোচনের বংশ মহা পবিত্র বলে সহরে বিখ্যাত হয়। লেখা-পড়া শেখা বা তার উৎসাহ দেওয়ার পদ্ধতি পদ্মলোচনের বংশে ছিল না, শুদ্ধ নামটা সই কত্তে পাল্লেই বিষয় রক্ষা হবে, এই তাঁদের বংশপরম্পরার স্থির সংস্কার ছিল। সরস্বতী ও সাহিত্য ঐ বংশের সম্পর্ক রাখতেন না! ঊনবিংশতি শতাব্দীতে হিন্দুধৰ্ম্মের জন্য সহরে কোন বড়মানুষ তার মত পরিশ্রম স্বীকার করেন নাই। যে রকম কাল পড়েছে, তাতে আর কেউ যে তাদৃক যত্নবান হন, তারও সম্ভাবনা নাই। তিনি যেমন হিন্দুধর্মের বাহ্যিক গোঁড়া ছিলেন, অন্যান্য সৎকৰ্ম্মেও তার তেমনি বিদ্বেষ ছিল; বিধবাবিবাহের নাম শুনলে তিনি কানে হাত দিতেন, ইংরেজী পড়লে পাছে খানা খেয়ে কৃশ্চান হয়ে যায়, এই ভয়ে তিনি ছেলেগুলিকে ইংরাজী পড়াননি, অথচ বিদ্যাসাগরের উপর ভয়ানক বিদ্বেষ নিবন্ধন সংস্কৃত পড়ানও হয়ে উঠে নাই, বিশেষতঃ শূদ্রের সংস্কৃততে অধিকার নাই, এটিও তাঁর জানা ছিল; সুতরাং পদ্মলোচনের ছেলেগুলিও “বাপকা বেটা সেপাইকা ঘোড়া”র দলেই পড়ে।

    কিছুদিন এই রকম অদৃষ্টচর লীলা প্রকাশ করে, আশী বৎসর বয়সে পদ্মলোচন দেহ পরিত্যাগ কল্লেন-মৃত্যুর দশ দিন পূর্ব্বে একদিন হঠাৎ অবতারের সর্বাঙ্গ বেদনা করে। সেই বেদনাই ক্রমে বলবর্তী হয়ে তার শয্যাগত কল্লে–তিনি প্রকৃত হিন্দু, সুতরাং ডাক্তারী চিকিৎসায় ভারী দ্বেষ কত্তেন, বিশেষতঃ তাঁর ছেলেবেলা পর্য্যন্ত সংস্কার ছিল, ডাক্তার অষুধ মাত্রেই মদ মেশান, সুতরাং বিখ্যাত বিখ্যাত কবিরাজ মশাইদের দ্বারা নানা প্রকার চিকিৎসা করান হয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শেষে আত্মীয়েরা কবিরাজ মশাইদের সঙ্গে পরামর্শ করে শ্ৰীশ্রী ঁভাগীরথীতটস্থ কল্লেন, সেখানে তিন রাত্তির বাস করে মহাসমারোহে প্রায়শ্চিত্তের পর সজ্ঞানে রাম ও হরিনাম জপ কত্তে কত্তে প্রাণত্যাগ করেন।

    পাঠক! আপনি অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে বহু দূর এসেছেন। যে পদ্মলোচন আপনাদের সম্মুখে জন্মালেন, আবার মলেন, শুদ্ধ তাঁর নিজের চরিত্র আপনারা অবগত হলেন এমন নয়, সহরের অনেকের চরিত্র অবগত হলেন। সহরের বড়মানুষদের মধ্যে অনেকেই পদ্মলোচনের জুড়িদার, কেউ কেউ দাদা হতেও সরেস! যে দেশের বড়লোকের চরিত্র এই রকম ভয়ানক, এই রকম বিষময়, সে দেশের উন্নতি প্রার্থনা করা নিরর্থক। যাদের হতে উন্নতি হবে, তাঁরা আজও পশু হতেও অপকৃষ্ট ব্যবহারের সর্ব্বদাই পরিচয় দিয়ে থাকেন তাঁরা ইচ্ছা করে আপনা আপনি বিষময় পথের পথিক হন; তাঁরা যে সকল দুষ্কৰ্ম্ম করেন, তার যথারূপ শাস্তি নরকেও দুষ্প্রাপ্য।

    জন্মভূমি-হিতচিকীর্ষুরা আগে এই সকল মহাপুরুষদের চরিত্র সংশোধন করবার যত্ন পান, তখন দেশের অবস্থায় দৃষ্টি করবেন; নতুবা বঙ্গদেশের যা কিছু উন্নতি প্রার্থনায় যত্ন দেবেন, সকলই নিরর্থক হবে।

    “আলালের ঘরের দুলাল” লেখক—বাবু, টেকচাঁদ ঠাকুর বলেন, “সহরের মাতাল বহুরূপী;” কিন্তু আমরা বলি, সহরের বড় মানুষের নানারূপী—এক এক বাবু এক এক তরো, আমরা চড়কের নক্সায় সেগুলিই প্রায়ই গড়ে বর্ণন করেচি, এখন ক্রমশঃ তারি বিস্তার বর্ণন করা যাবে-তারি প্রথম উঁচুকে দল খাস হিন্দু; এই হঠাৎ অবতারের নক্সাতেই আপনারা সেই উঁচুকেতার খাস হিন্দুদের চরিত্র জানতে পাল্লেন—এই মহাপুরুষেরাই রিফমেশনের প্রবল প্রতিবাদী, বঙ্গসুখ-সৌভাগ্যের প্রলয় কণ্টক ও সমাজের কীট।

    হঠাৎ অবতারের প্রস্তাবে পাঠকদের নিকট আমরাও কথঞ্চিৎ আত্ম-পরিচয় দিয়ে নিয়েছি; আমরা ক্রমে আরো যত ঘনিষ্ঠ হবো, ততই রং ও নক্সার মাঝে মাঝে সং সেজে আসবে;-আপনারা যত পারেন, হাততালি দেবেন ও হাসবেন!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা : চার্বাক ও হিউম – কালী প্রসন্ন দাস
    Next Article গীতা – কালীপ্রসন্ন সিংহ

    Related Articles

    কালীপ্রসন্ন সিংহ

    মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত)

    July 28, 2025
    কালীপ্রসন্ন সিংহ

    গীতা – কালীপ্রসন্ন সিংহ

    July 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.