Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর – আলি দস্তি

    লেখক এক পাতা গল্প431 Mins Read0
    ⤷

    ১.১ জন্ম পরিচিতি

    প্রথম অধ্যায় । নবি মুহাম্মদ । জন্ম পরিচিতি

    ‘পথ খুঁজি আমি, কিন্তু কাবা-মসজিদের পথ নয়। জানি ঐ কাবায় আছে একদল পৌত্তলিক আর এর মসজিদে একদল পূজারী।’ – জালালুদ্দিন রুমি।

     

    মক্কায় ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আমিনা বিনতে ওহাব এক শিশুর জন্ম দেন। শিশুর চোখ খোলার আগে তাঁর পিতা আবদুল্লাহ মারা যান। আর শিশুর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর মা আমিনা মারা যান। এরপর শিশুটির দেখাশোনার ভার বর্তায় তাঁর প্রভাবশালী ও উদার পিতামহ আব্দুল মোতালেবের উপর। কয়েক বছর পর শিশুর পিতামহও মারা যান। ঐ শিশুর অনেক বিত্তবান চাচা থাকা সত্ত্বেও লালন-পালনের দায়িত্ব নেন তাঁর সবচেয়ে দরিদ্র চাচা আবু তালিব। দরিদ্র অথচ সাহসী আবু তালিবের যত্নেলালিত এই শিশুই পরে বিকাশিত হন বিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং একজন অনন্যসাধারণ মহাপুরুষ রূপে। সম্ভবত ইতিহাসে এই লব্ধপ্রতিষ্ঠিত মহামানবের দৃষ্টান্ত আর কখনো দেখা যায়নি বা যাবেও না।

    এই অসাধারণ ব্যক্তির জীবন নিয়ে সহস্র পুস্তক রচিত হয়েছে। বিশেষত তাঁর জীবনের শেষ তেইশ বছরের ঘটনাপ্রবাহ, এবং সমস্ত কিছু যা তিনি বলেছেন এবং করেছেন তা নিয়ে প্রচুর লেখা রয়েছে। বিদগ্ধজন এবং গবেষকেরা এই মহাপুরুষের জীবনের উপর যত কাজ করেছেন তা আর কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তির উপর হয়নি। এতদসত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তাঁর উপর যুক্তিসিদ্ধ এবং বস্তুনিষ্ঠ কোনো পুস্তক, যার মধ্যে কোনো অতিরঞ্জিত উগ্র যুক্তিহীন এবং কাল্পনিক ব্যাপার নেই-এরকম বই বোধহয় রচিত হয়নি।

    দেখা যায় যে মুসলিম এবং অন্যান্যরা যাঁরা মুহাম্মদের জীবন নিয়ে ব্যগ্র, তাঁরা ঐতিহাসিক সত্য অগ্রাহ্য করেন। তাঁরা সর্বদা মুহাম্মদকে এক কাল্পনিক অতিমানব বা কাপড়ে ঢাকা দ্বিতীয় ঈশ্বর হিসেবে পরিচিত করতে সচেষ্ট। এটা করতে গিয়ে তারা মানুষ মুহাম্মদকে বারেবারে উপেক্ষা করে গেছেন। এর ফলে তারা প্রকৃতিতে কার্যকারণের যে অমোঘ নিয়ম বিদ্যমান তা এড়িয়ে গেছেন। তাই তাঁদের বর্ণনায় শুধু দেখা যায় কাল্পনিক এবং অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।

    মুহাম্মদের জীবনের প্রথম চল্লিশ বছর, অর্থাৎ ৬১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, তেমন কিছু জানা যায় না। নবির জীবনীতে অথবা লোকপ্রবাদেও এই সময়ের কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে তৃতীয় হিজরি বা নবম শতাব্দীতে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এবং কোরানের তফসিরকারক আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জরির আল-তাবারি সুরা বাকারার ২৩ নম্বর আয়াতের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে এক ভিত্তিহীন দাবি করেন। এ থেকে বোঝা যায় সেই সময় সাধারণ মানুষ নবির জীবন-কাহিনী নিয়ে প্রচুর কাল্পনিক বক্তব্যে বিশ্বাস করতো। এমন কী কাল্পনিক লোককথার প্রভাব থেকে তাবারির মতো ঐতিহাসিকও মুক্ত ছিলেন না। সুরা বাকারা’র ঐ আয়াতে বলা হয়েছে : ‘আমি আমার দাসের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকলে তোমরা তার মতো কোনো সুরা আনো। আর তোমরা যদি সত্য বল, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সব সাক্ষীকে ডাকো।’ (২:২৩)। তাবারি এই আয়াতের তফসির করতে গিয়ে নিজস্ব মন্তব্য যোগ করেছেন : ‘নবুওত প্রাপ্তির পূর্বে মক্কায় একবার লোকমুখে কথা রটলো যে, আল্লাহ মুহাম্মদ নামে এক ব্যক্তিকে তাঁর প্রেরিত পুরুষ (রসুল) হিসেবে পাঠাবেন এবং পূর্ব ও পশ্চিমে যা কিছু আছে তার সবই ঐ ব্যক্তির আয়ত্তে আসবে। সে-সময় মক্কার চল্লিশজন নারী গর্ভবতী ছিল। গর্ভবতী প্রত্যেক মাতা চাচ্ছিলেন তার শিশু সেই প্রেরিত পুরুষ হোক। তাই শিশুর জন্মের সাথে সাথে প্রত্যেক মাতা তার পুত্রের নাম মুহাম্মদ রাখলেন।’

    উপরের উক্তি যে বাস্তবতাবর্জিত তা বলা নিম্প্রয়োজন। সে সময় মক্কায় কেউ এই ধরনের গুজব শুনেনি অথবা কেউই মুহাম্মদ নামে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ সমন্ধে অবহিত ছিল না। মুহাম্মদের অভিভাবক আবু তালিব এ-ব্যাপারে কিছু না জেনেই অথবা কিছু না শুনেই এবং ইসলামে দীক্ষিত না হয়েই মারা যান। নবুওতের স্বীকৃতি পাবার পূর্বে মুহাম্মদ কোনোদিনও ভাবতে পারেননি যে তিনি নবি হতে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় সুরা ইউনুসের ১৬ আয়াতে : ‘বলো, আল্লাহর তেমন ইচ্ছা থাকলে আমি তোমাদের কাছে এটি পড়তাম না, আর তিনি তোমাদেরকে এ-বিষয়ে জানাতেন না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে দীর্ঘকাল কাটিয়ে দিলাম, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?”(১০:১৬)। মক্কার ইতিহাসে কখনো জানা যায় না যে,৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র চল্লিশজন নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এবং প্রত্যেকেই তার শিশুর নাম রাখেন মুহামদ। এটা কী বিশ্বাসযোগ্য যে, সেসময় মুহামদ তাঁর সমবয়সী ও একই নামধারী চল্লিশজন খেলার সাখী পেয়েছিলেন?

    ঐতিহাসিক ওয়াকেদিনবির জন্ম সম্পর্কে তাবরি থেকে ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। ওয়াকেদি লিখেছেন ; মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়েই মুহাম্মদ উচ্চারণ করেন- আল্লাহ সবার উর্ধ্বে। এক মাস বয়সে মুহাম্মদ হামাগুড়ি দিতে থাকেন, দুই মাসে দাঁড়িয়ে যান, তিন মাসে হাঁটতে শুরু করেন, চার মাসে দৌড়াতে পারেন এবং নয় মাস বয়সে তীর ছুড়তে থাকেন। উল্লেখ্য মির্জা জানি কাশানি (মৃত্যু ১২৬৮ হিজরি বা ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর নাকাত আল-কাফ” বইয়েও বাহাই মতাদর্শের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আলি মুহাম্মদ সিরাজি সম্পর্কে একই ধরনের বক্তব্য লিখেছেন। যদিও বাহাই সম্প্রদায় পরে এই ধরনের প্রচারণাকে চাপা দেবার প্রয়াস চালায়। মির্জা কাশানির বক্তব্য অনুযায়ী সাইয়েদ আলি জন্মের সাথে সাথে নাকি উচ্চারণ করেছিলেন : ‘আল্লাহই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। যা-হোক ওয়াকেদি যেমনটা বলেছেন মক্কায় এধরনের অলৌকিক কিছু হয়ে থাকলে তখনকার পৌত্তলিক মক্কাবাসীরা নিশ্চয়ই জানতেন এবং মুহাম্মদের কাছে শুরুতেই মাথা নত করতেন।’

    উপরে উল্লেখিত উদাহরণ থেকে সে-সময়কার মুসলমানদের মধ্যে অবাস্তব এবং ইতিহাসের নামে কাল্পনিক কাহিনী রচনার প্রবণতা দেখা যায়। আবার অনেক পাশ্চাত্য খ্রিস্টান লেখক কোনো যুক্তিপূর্ণ আলোচনা ছাড়াই মুহাম্মদকে মিথ্যাবাদী, ভণ্ড, যোদ্ধা, ক্ষমতালোভী এবং লম্পট বলে প্রচার করে থাকেন। আদতে এই দুই দলের কেউই হজরত মুহাম্মদ সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে বাস্তব এবং প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেননি। এর কারণ হতে পারে ভাবাদর্শের প্রতি গভীর আসক্তি। রাজনৈতিক, ধর্মীয় অথবা গোত্রীয় হোক, সে পুরুষ অথবা নারীই হোক অন্ধভাবাদর্শে বিভোর একজন ব্যক্তি তার পরিষ্কার বিশ্লেষণী চিন্তা করতে অক্ষম। ভাল-মন্দ সম্পর্কে তার পূর্বধারণা তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। হৃদয়ে প্রোথিত ব্যক্তিপ্রেম কিংবা ব্যক্তি-ঘৃণা এবং উগ্র মৌলবাদী চিন্তা ও সংস্কার তাকে ঘিরে রাখে সবসময়। এর ফলাফল হয় কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে তিনি কুয়াশাচ্ছন্ন এবং অবাস্তব কল্পনায় বিভোর থাকেন।

    নিঃসন্দেহে হজরত মুহাম্মদ একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। যেসব গুণের জন্য মুহামদকে অন্যদের থেকে পৃথক করা যেতে পারে সেগুলো হচ্ছে-তাঁর তীক্ষ্ণবুদ্ধি, চিন্তার গভীরতা এবং তৎকালীন সর্বপ্রকার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড আপোষহীন মনোভাব। তাঁর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল অসাধারণ ইচ্ছাশক্তি এবং কর্মশক্তি যা দিয়ে তিনি একাই পাপকার্যের বিরদ্ধে লড়ে গেছেন। প্রতারণা এবং অনৈতিকতার বিরুদ্ধে তিনি সবাইকে সাবধান করে দিয়েছেন। অন্যায়, অসত্য, স্বার্থপরায়ণতাকে তিনি প্রবলভাবে তিরস্কার করেছেন। বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং হতদরিদ্রের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন আজীবন। স্বদেশবাসীকে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মূর্তিপূজার জন্য ভর্ৎসনা করেছেন। স্বাভাবিকভাবে মক্কাবাসী যারা তখন সম্মানিত এবং ক্ষমতাশালী ছিল তারা নবির কথায় কর্ণপাত করেননি। নবির আহ্বানে সাড়া দেয়ার অর্থ ছিল, তাদের শত বছরের লালিত সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা এবং ধর্মবিশ্বাস পরিহার করা। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় বিশ্বাস তাদের কাছেও ছিল একমাত্র সত্য এবং এই বিশ্বাসের বাইরে ভিন্ন কিছু তারা চিন্তা করতে পারতেন না।

    তবে মক্কার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে সবচেয়ে যে বিষয়টি অসন্তুষ্টির কারণ ছিল তা হলো মুহাম্মদ তাঁদের শতাধিক বছরের সনাতন সামাজিক কাঠামো ভেঙে দিতে চাচ্ছিলেন। অথচ মুহাম্মদের সামাজিক পদমর্যাদা ছিল তাদের চেয়ে নিচুতে। মুহাম্মদ কুরাইশ গোত্রের হলেও তাঁর সামাজিক পদমর্যাদা তাদের পর্যায়ে ছিল না। এর কারণ হচ্ছে ছোটবেলা থেকেই মুহাম্মদ ছিলেন এতিম এবং লালিত-পালিত হয়েছিলেন তাঁর এক চাচার অনুগ্রহে। মুহাম্মদের শৈশব কেটেছে চাচা এবং প্রতিবেশীদের উটের রাখাল হিসেবে। জীবিকার তাগিদে অলপ বয়সে খাদিজা নামের এক বিত্তবান মহিলার কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন তিনি। তখন মুহাম্মদের কিছুটা সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তথাপি মুহাম্মদ কুরাইশ নেতাদের কাছে একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এই অপাংক্তেয়া ব্যক্তি সহসা নিজেকে আল্লাহর এক নবি বলে ঘোষণা করে কুরাইশদের উপর কর্তৃত্ব দাবি করে তাদেরকে নতুন ধর্মীয় শিক্ষা দিতে চাইলেস্বাভাবিকভাবেই কুরাইশরা তা মানতে রাজি ছিলেন না।

    ইসলাম প্রচারের শুরুর দিকে কুরাইশ নেতাদের মনোভাব বোঝা যায় ওয়ালিদ বিন আল-মুগিরার একটি দাম্ভিক উক্তিতে। মুহাম্মদের নবুওতির প্রারম্ভে ওয়ালিদ বিন আল-মুগিরা ছিলেন কুরাইশদের মাখজুম গোত্রের প্রভাবশালী নেতা। তিনি মারা যান ৬১৫ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময়ে। ওয়ালিদ বিন আল-মুগিরা একবার মন্তব্য করেছিলেন : যখন কুরাইশরা আমার মতো নেতা পেয়েছে এবং বানু তামিমের নেতা হচ্ছে ওরওয়া বিন মাসুদ, তখন মুহামদ কেমন করে নিজেকে নবি দাবি করেন?”কোরানের সুরা জুখরুফে মুগিরার বক্তব্য উঠে এসেছে এভাবে ; আর এরা বলে কোরান কেন অবতীর্ণ হল না দুই জনপদের (মক্কা ও তায়েফের) কোনো বড়লোকের ওপর? এরা কি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ বণ্টন করে? আমি তাদের পার্থিব জীবনে তাদের মধ্যে জীবিকা বণ্টন করি, আর এককে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নত করি যাতে তারা একে অপরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তার চেয়ে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনেক ভালো। (৪৩: ৩১-৩২)।

    ঐ সময়ে মাখজুম গোত্র মক্কায় বেশ সুবিধাজনক পর্যায়ে ছিল। কুরাইশদের মধ্যে আবদে মনাফ বংশ একাধিক কয়েকটি ছোট দলে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল তাঁর পুত্রদের বিভাজনের ফলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাশেম বংশ এবং ধনাঢ্য আবদে শামস বংশ ও তাঁর পুত্র উমাইয়া বংশ। মুহাম্মদ জন্মেছিলেন হাশেম বংশে। আবু জেহেল তখন মাখজুম গোত্রের পরবর্তী প্রধান হবেন ঠিক হয়েছিলেন। মুহাম্মদের নবুওতি নিয়ে আবু জেহেল আরেকটি বংশের নেতা আকনাস বিন শারিককে বলেন,”প্রাধান্য বিস্তারের ক্ষেত্রে আমরা আবদে মনাফের প্রধান প্রতিদ্বন্দী। সর্ববিষয়েই আমরা প্রায় তাঁদের সমকক্ষ হয়ে এসেছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে তাঁদের একজন নবুওতির দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। বানু মনাফ এইভাবেই পুনরায় আমাদের উপর তাঁদের প্রভুত্ব টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে। ”

    এই বক্তব্যগুলি থেকে মুহাম্মদের নবুওতি নিয়ে আমরা কুরাইশ নেতাদের মনোভাব বুঝতে পারি। বোঝাই যায় তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক। তারা কোনোভাবে একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন না। আবার তাদের মধ্য থেকেই একজন ব্যক্তি ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদেরকে ধর্ম শিক্ষা দিতে আসছেন-এটা তারা কোনোভাবে মানতে পারছিলেন না। কোরানের বিভিন্ন আয়াতে তাদের এই প্রতিবাদ-আপত্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন সুরা আনআম ; আয়াত ৮; সুরা হুদ ; আয়াত ১৩-১৪; সুরা ফুরকান ; আয়াত ৭-৮। কুরাইশরা বললেন, আল্লাহ যদি সত্যি পরিচালিত করতে চাইতেন তবে কোনোভাবেই তাদের মধ্য থেকে একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ করতেন না। তিনি কোনো ফেরেশতা বা দেবদূত পাঠিয়ে দিতেন। তাদের এই বক্তব্যের উত্তরে আকাশ থেকে এক ফেরেশতাকেই ওদের কাছে রসুল করে পাঠাতাম।” (সুরা বনি-ইসরাইল ; আয়াত ৯৫)।

    আসল কথা হচ্ছে মক্কার নেতারা মুহাম্মদের ভিন্নধরনের চিন্তাভাবনা এবং ভাবধারা প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা করতে চাইলেন না। তারা আগ্রহী হয়ে মুহাম্মদের কোনো কথা শুনতে রাজি ছিলেন না। মুহাম্মদের চিন্তাভাবনায় তাদের সমাজের উন্নতি হতে পারে এই মনোভাব তাদের মধ্যে কখনো ছিল না। তারা যুক্তি এবং সুসংগতভাবে মুহাম্মদের মতামতের সত্যতা যাচাইয়ে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না। তবে যে কোনো সমাজ যতই খারাপ হোক না কেন, ঐ সমাজে সবসময়ই কোনো না কোনো সৎ মানুষ পাওয়া যায় যারা নির্মোহ এবং নির্মল চিন্তার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করতে পারেন, সেই সত্য যে কেউ বলুক না কেন। মক্কাবাসীর মধ্যে হজরত আবু বকরকে ধরা যেতে পারে প্রথম ব্যক্তি, যিনি মুহাম্মদের বাণীর সত্যতা উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন। আবু বকরের উদাহরণ দেখে আরও কয়েকজন কুরাইশ ব্যক্তি, যেমন আব্দুর রহমান বিন আউফ, উসমান বিন আফফান, জুবায়ের বিন আল-আওয়াম, তালহা বিন উবায়দুল্লাহ এবং সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস ইসলাম গ্রহণ করেন। আবার প্রত্যেক সমাজেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতদরিদ্র লোক থাকেন যারা সমাজের ধনী ব্যক্তির সম্পদের কোনো কিছুই পান না। ফলে এরা প্রচলিত সমাজধারার প্রতি থাকেন বিক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট। মক্কার এই দুই দল মুহাম্মদের মতবাদের প্রশংসা করে তাঁর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এই পরিস্থিতিতে সংঘাত ছিল অনিবার্য। মক্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ছিল বিত্তবানদের সমর্থক এবং বিত্তবানরাও তাদের সম্পদ ও অর্থের জন্য ছিল গর্বিত। যে মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘু জনতা মুহাম্মদের সমর্থক ছিলেন তারা ভাবলেন মুহাম্মদের নতুন মতবাদের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হবে। ফলে সমাজে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সবরকম ত্যাগ এবং লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। নবি জীবিত থাকালীন সময়ে এই অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পরিমিত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এই আন্দোলন ক্রমশ গতিশীল হতে থাকে। ফলে জনসাধারণের মাঝে মুহাম্মদ হয়ে পড়েন একজন অতিমানব এবং তারা তাঁকে ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ হতে যে-সব গুণের দরকার সেই গুণাবলী দ্বারা আবৃত করে ফেলেন। এদিকে ঈশ্বর বা আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক।

    নবি মুহাম্মদ সম্পর্কে এ-ধরনের অলীক কল্পনা কেমন করে দ্রুত প্রসার লাভ করেছিল তার একটা উজ্জ্বল উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। উদাহরণটি অত্যন্ত পরিষ্কার এবং অখণ্ডনীয়। মুসলমানরা মনে করেন কোরানই হচ্ছে একমাত্র চূড়ান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ। কোরানের মক্কি সুরা বনি-ইসরাইলের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে এক রাতে নবি স্বর্গে ভ্রমণ করেছেন। আয়াতটি খুব সরল এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যাখ্যাসাধ্য। আয়াতে বলা হয়েছে : ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর দাসকে তাঁর নিদর্শন দেখাবার জন্য রাত্রে সফর করিয়েছিলেন মসজিদ-উল-হারাম থেকে মসজিদ-উল-আকসায়, যেখানে পরিবেশ তাঁরই আশীবাদপূত। তিনি তো সব শোনেন, সব দেখেন।’(১৭:১)। আয়াতটিতে যা বলা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে আধ্যাতিক ভ্রমণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। এধরনের আধ্যাত্মিক ভ্রমণ আরও অনেক ভাবতান্ত্রিক ব্যক্তিরও হয়েছে বলে শোনা যায়।

    কিন্তু মুসলমানরা এই অতি সাধারণ ভ্রমণকে বিস্ময়কর, অযৌক্তিক এবং অবাস্তব বক্তব্য দ্বারা সজ্জিত করেছেন। এই আয়াত সম্পর্কে আমি তফসির আল-জালালাইনের অপেক্ষাকৃত কিছুটা সংযত ব্যাখ্যার উদ্ধৃতি দিব। তফসির আল-জালালাইন হচ্ছে কোরানের বিশ্বস্ত তফসির-বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। কোরানের সুন্নি তফসিরগুলোর মধ্যে একে ধ্রুপদী মর্যাদা দেয়া হয়। মিশরের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ জালালউদ্দিন আল-মাহালি এই তফসির লেখা শুরু করেন ১৪৫৯ সালে এবং তাঁর ছাত্র জালালউদ্দিন আল-সুয়ুতি লেখাটি শেষ করেন তাঁর মৃত্যুর আগে ১৫০৫ সালে। আল-মাহালি এবং আল-সুয়তি দুজনের নামই জালাল, তাই তাঁদের নামানুসারে এই তফসিরের নামকরণ হয় তফসির আল-জালালাইন’, যার অর্থ হচ্ছে, দুইজন জালালের তফসির।

    ধারণা করা হয় তাঁরা দুজনেই ধর্মকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সমস্ত দলীয়-উপদলীয় কোন্দলের উর্ধ্বে ছিলেন। তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কোরানের আয়াতের ব্যাখ্যা দেয়া এবং এর প্রসঙ্গ জানানো। তথাপি তাঁরা তফসিরে সুরা বনি-ইসরাইলের প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে অপ্রমাণিত বক্তব্য নবি মুহাম্মদের মুখের উপর বসিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কি উদ্দেশ্য ছিল-ব্যাখ্যাও প্রসঙ্গ জানানো নাকি তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের মধ্যে যেসব কাহিনী প্রচলিত ছিল সেগুলোর সংক্ষিপ্তসার দেয়া? যাহোক নবির যেসব উদ্ধৃতি তাঁরা দিয়েছেন তফসিরে, সেগুলোর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। হাদিস সংকলনকারীরাও নবির উপর অর্পিত কথাবার্তার ব্যাপারে প্রচলিত সংবাদের প্রমাণের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এই চেষ্টার পরও এটা প্রমাণ করে না যে, নবি আদৌ একথাগুলো বলেছিলেন। তাই হাদিস-সংকলনকারীদের তথ্যও নির্ভরযোগ্য নয়। তফসির আল-জালালাইনের লেখকদ্বয় তাঁদের ব্যাখ্যার কোনো সূত্রও দিতে পারেননি। ফলে বোঝা যায় খুব সম্ভবত তাঁরাও হয়তো নিজেরা এই কাহিনী বিশ্বাস করতেন না।

    তফসির আল-জালালাইন’-এ রয়েছে নবি বলেছেন : ‘ঐ রাতে জিব্রাইল আসলেন। জিব্রাইলের সাথে ছিল একটা চতুষ্পদী জন্তু যা দেখতে গাধার চেয়ে বড় আবার খচ্চরের চেয়ে ছোট। এই জন্তুর পায়ের খুর ছিল বহির্মুখী। আমি এই জন্তুর উপরে বসলাম এবং পবিত্র মসজিদের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। সেখানে পৌছালে আমি বোরাকটির (সেই জন্তু) লাগাম বেঁধে দিলাম সেই আংটার সাথে যাতে নবিরা তাঁদের বাহন পশুকে বেঁধে দিতেন। সেই দূরের মসজিদে গিয়ে আমি তিনবার ভূমিতে মাথা নত করে প্রার্থনা করলাম। যখন বাইরে এলাম তখন জিব্রাইল আমাকে দুটি পাত্র দিলেন। একটি পাত্র ছিল দুধভর্তি আর আরেকটি পাত্র ভর্তি ছিল সুরায় আমি যখন দুধ-ভর্তি পাত্র গ্রহণ করলাম তখন জিব্রাইল তা সমর্থন করলেন। তারপরে আমরা উড়ে গেলাম প্রথম স্বর্গে। আমরা প্রথম স্বর্গের ফটকে পৌছালে একজন রক্ষী চিৎকার করে আওয়াজ দিলেন : “এখানে কে? জিব্রাইল উত্তর দিলেন : এখানে আছে জিব্রাইল। ফটকরক্ষী জিজ্ঞাসা করল : আপনার সাথে কে? জিব্রাইল উত্তর দিলেন : মুহাম্মদ। রক্ষী আবারও জিজ্ঞাসা করলেন : “তাঁকে কী ডাকা হয়েছে?’ জিব্রাইল উত্তর দিলেন: “হ্যাঁ। এরপর রক্ষী স্বর্গের ফটক খুলে দিলেন। হজরত আদম আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলেন এবং বললেন : ‘আপনাকে স্বাগতম। (এভাবে নবি মুহাম্মদ সপ্তস্বর্গ ভ্রমণ করলেন এবং প্রত্যেকটি স্বর্গেই একজন নবি তাঁকে স্বাগতম জানালেন।) সপ্তম স্বর্গে পৌছে আমি দেখলাম হজরত ইব্রাহিম সেই জনপ্রিয় স্থানে হেলান দিয়ে বসে আছেন। এ-স্থানেই প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন কিন্তু কেউ বাইরে আসেন না। এরপরে জিব্রাইল আমাকে নিয়ে যান সর্বশেষ লোট গাছের কাছে। এই গাছের এক একটি পাতা ছিল হাতির কানের মতো বড়। এরপর আমি এক দৈববাণী পেলাম যাতে আমাকে আদেশ করা হলো প্রতিদিন এবং রাতে পঞ্চাশবার নামাজ পড়ার। আমি যখন ফিরে আসছিলাম তখন নবি মুসা আমাকে বললেন : “পঞ্চাশবার নামাজ পড়া বেশি হয়ে যাবে। আপনি আল্লাহকে অনুরোধ করুন নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য। আল্লাহ নামাজের সংখ্যা কমিয়ে চল্লিশ করে দিলেন। এরপর নবি মুসা বললেন : ‘আমি আমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি এই ব্যাপারে। তারা এক দিন এবং এক রাতে চল্লিশবার নামাজ পড়তে সক্ষম নয়। আমি আবার আল্লাহর কাছে গেলাম…। (সংক্ষিপ্তভাবে বলতে হয় মুহাম্মদ আল্লাহর কাছে অনুরোধ করতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ নামাজের সংখ্যা পাঁচে নামিয়ে আনেন।)

    নবির রাত্রি-ভ্রমণ নিয়ে তফসির আল-জালালাইন-এ যা লেখা হয়েছে তা ইরানের বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী সুন্নি চিন্তাবিদ আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জরির আল-তাবারির (৮৩৯-৯২৩ খ্রিস্টাব্দ) বিখ্যাত তফসির অথবা তফসিরকারক আবু বকর আতিক নিশাপুরির রচনার তুলনায় নিতান্ত নগণ্য। মুহামদের রাত্রি-ভ্রমণ ঘিরে মুসলিমদের মধ্যে যে ধরনের কাহিনী প্রচারিত হয়েছে তা দুঃসাহসিক অভিযানের মতোই শোনায়। মিশরীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং একসময়ের শিক্ষামন্ত্রী মুহাম্মদ হোসেন হায়কলং আধুনিককালের অত্যন্ত যুক্তিবাদী লেখক। তিনি নবি মুহাম্মদের জীবনী লিখেছেন ১৯৩৩ সালে। তাঁর বইয়ে সশরীরে নবির রাত্রি ভ্রমণকে অস্বীকার করলেও একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন কিছুটা পরিবর্তিত রূপে। এই বর্ণনা তিনি পেয়েছেন ফরাসি লেখক এমিলি ভারমেনগেমের মুহাম্মদের জীবনীভিত্তিক লেখা বই থেকে।

    যারা কোরানের সাথে পরিচিত তারা জানেন যে, কোরান হচ্ছে মুহাম্মদের নবি-জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার প্রতিফলক। কোরান থেকেই বোঝা যায় নবি কখনো এই ধরনের বর্ণনা দেননি। এ-ধরনের উপকথা সাধারণ জনগণের কালপনিক আবিষ্কার। গভীরভাবে বিশ্বাসী সাধারণ জনগণ মনেমনে ভাবতেন যাঁরা ওহি পেয়ে থাকেন তাঁরা শাসকদের মতো ক্ষমতাশালী এবং প্রভাবশালী। সুরা বনি-ইসরাইলের প্রথম তিনটি আয়াতে আধ্যাত্মিক ব্যাপার বলা হয়েছে। এই সুরার ৯৩ নম্বর আয়াতে নবিকে বলা হয়েছে . . . . বলো, আমার প্রতিপালকের পবিত্র মহিমা! আমি একজন মানুষ, সুসংবাদদাতা রসুল ছাড়া আর কী?” (১৭৯৩)। সূরা আশ-শুরার ৫১ আয়াতে বলা হয়েছে : এ কোনো দেহধারী মানুষের জন্য নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন কোনো প্রত্যাদেশ ছাড়া, পর্দার অন্তরাল ছাড়া, বা আল্লাহর ইচ্ছা প্রকাশ করবে তাঁর অনুমতি নিয়ে এমন কোনো ফেরেশতা প্রেরণ না করে। তিনি তো সর্বোচ্চ জ্ঞানী। (৪২:৫১)। আল্লাহ যেখানে নিজেই নবিকে প্রত্যাদেশ পাঠিয়ে দিচ্ছেন সেখানে নবির ভূলোক থেকে উর্ধ্বলোকে ভ্রমণের কোনো প্রয়োজন ছিল না। যদিও ধরে নেয়া যায় ঐ ভ্রমণের প্রয়োজন ছিল তাহলেও ডানাবিশিষ্ট চতুষ্পদ পশুর পিঠে চড়ে আকাশে উড্ডীয়মান হওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? যাকে বলা হয়ে থাকে দূরের মসজিদ সেটা কী স্বর্গে পাড়ি দেবার পথে ছিল কি? আল্লাহ যদি সর্বত্র বিদ্যমান তবে আল্লাহর কী মানুষের প্রার্থনার প্রয়োজন আছে? এবং নবি যখন স্বর্গে পৌছালেন তখন কেন ফটকরক্ষীদের নবির আগমনবার্তা আগে জানানো হয়নি?

    সরল বিশ্বাসী মানুষ কার্যকারণ বিষয়ে বাস্তববাদী নন। তারা মনে করেন নবি বহু দূরের ভ্রমণে যাবেন, এজন্য তাঁর এক বাহন দরকার। এক ডানাবাহী পশু এই কাজে সক্ষম হবে, যা পায়রার মতো উড়ে যেতে পারবে, তাই তারা ধারণা করতেন। সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন তাঁর রাজকীয় দ্যুতি দিয়ে নবির চোখ ধাঁধিয়ে দিবেন। তাই স্রষ্টা জিব্রাইলকে আদেশ দিলেন নবিকে স্বর্গের বিস্ময় দেখাতে এবং জিব্রাইলের ডানার সংখ্যা ৬০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বুখারি শরীফের হাদিসে, যা জিব্রাইলকে অতি দ্রুতগামী বলে ধারণা দেয়, ভলিউম ৬, বুক ৬০ নম্বর ৩৮০] । একজন প্রতাপশালী রাজা রাজ্যের খরচ মেটানোর জন্য তাঁর কর্মচারীকে কর আদায়ের আদেশ দেন। রাজার অর্থমন্ত্রী রাজাকে সাবধান করে দেন যেন উন্নয়নের জন্যে প্রজাদের উপর অধিক কর চাপানো না হয়। এমনিভাবে আমাদের স্রষ্টা বান্দাদের কাছ থেকে তাঁর প্রার্থনা দাবি করেন। তখন নবি আজি করলেন দিন-রাতে পঞ্চাশবার নামাজ আদায় করা অতিরিক্ত হয়ে যাবে।

    মুহাম্মদের মহানুভবতা প্রশ্নাতীত। ইতিহাসে যেসব মহামানবের উল্লেখ আমরা পাই তার মধ্যে মুহাম্মদ অতুলনীয়। তাঁর সমসায়িক সমাজ বিবেচনা করলে বোঝা যায় তিনি যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনয়ন করেছেন তা অনন্যসাধারণ। আলেকজান্ডার, সিজার, নেপোলিয়ন, হিটলার, সাইরাস, চেঙ্গিস খান অথবা তৈমুর লং এদের সাথে নবি মুহাম্মদের কোনো তুলনা হয় না। এই নেতাদের পেছনে ছিল সামরিক বাহিনী এবং গণসমর্থন। কিন্তু মুহাম্মদ যা আয়ত্ত করেছেন তা সবই এক বৈরী সমাজের বিরুদ্ধে একা রিক্তহস্তে লড়াই করে।

    বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা সম্ভবত ভুদিমির ইলিচ লেনিন। মুহাম্মদের সাথে হয়তো লেনিনের তুলনা করা যেতে পারে। বিশ বছর ধরে (১৯০৪-১৯২৪) লেনিন অবিশ্রান্ত কর্মশক্তি, দক্ষতা, প্রতাপ এবং একাগ্রতার সাথে তাঁর অবিচল নীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন, নিরলসভাবে লিখে গেছেন এবং বহুদূর থেকে নিজ দেশে বিপ্লবী কার্যক্রম সজীব রেখেছিলেন। রাশিয়ার সমাজ তখন তাঁর প্রতি ছিল অতিশয় বিরূপ। তথাপি সত্যিকারের প্রথম কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গঠন না করা পর্যন্ত লেনিন বিশ্রাম নেননি। এটা নিশ্চিত যে সাফল্য অর্জন করতে লেনিনকে অনেক অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। অপরপক্ষে বলা যায় লেনিনের পূর্বেই রাশিয়ায় এক বিপ্লবী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। শতসহস্র বিপ্লবী এবং প্রচুর বিক্ষুব্ধ জনতা লেনিনকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। মুহাম্মদের সাথে লেনিনের একটি পার্থক্য হচ্ছে যে মুহাম্মদ সারা জীবন কাটিয়েছেন দারিদ্রতায়, অথবা স্বেচ্ছায় অনাড়ম্বর জীবন বেছে নিয়েছিলেন।

    স্বাভাবিকভাবে মহাপুরুষদের প্রস্থানের পর তাঁদের ঘিরে ভক্তবৃন্দ দ্বারা অনেক লোককাহিনী রচিত হয়। সময়ের সাথে সাথে তাঁদের দুর্বল দিকগুলিও চাপা পড়ে যায়। শুধু ভালো দিকগুলি প্রচার করা হয়। অনেক চিন্তাবিদ এবং শিল্পীদের নৈতিক জীবন নিখুঁত ছিল বলা যায় না। তা সত্ত্বেও তাঁদের কীর্তি বেঁচে থাকে এবং প্রশংসিত হয়। ইরানের বিশিষ্ট মুসলিম মনীষী নাসির উদ্দিন তুসি” (১২০১১২৭৪ খ্রিস্টাব্দ) কেমন করে মঙ্গোলীয় শাসক হালাকু খানের মন্ত্রী হলেন তা আমরা জানি না। নাসির উদ্দিন তুসির ব্যক্তিগত জীবনে নীতি-বহির্ভূত কার্য সত্ত্বেও দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও স্থাপত্যবিদ্যার উপর তাঁর প্রচুর রচনার জন্যে পারস্যের একজন ঐতিহাসিক সমানিত ব্যক্তি হয়ে আছেন। আশ্চর্য হবার কিছু নেই একজন বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক নেতার মৃত্যুর পর তাঁকে প্রচুর কাল্পনিক সদগুণ এবং যোগ্যতা দিয়ে আবৃত করা হয়। সমস্যা হচ্ছে এই প্রক্রিয়া পরিমিত বোধের মধ্যে না থেকে বেশিরভাগ সময়ই অমার্জিত, বাণিজ্যিক এবং অযৌক্তিক হয়ে পড়ে।

    লক্ষ লক্ষ শিশুর মতো নবি মুহাম্মদেরও জন্ম ছিল স্বাভাবিক। তাঁর জন্মের সাথে কোনো কিছু অস্বাভাবিক ছিল না। কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নবির এই জন্ম নিয়ে অযথাই অলৌকিক ব্যাখ্যা, উপাখ্যান দাঁড় করানো হয় এবং প্রচুর লোক তা বিশ্বাসও করে। যেমন বলা হয়ে থাকে নবির জন্মের সাথে সাথে ইরাকের প্রাচীন শহর তাসিবনের ধনুকাকৃতির খিলানে ফাটল ধরেছিল এবং পারস্যের ফার্সে রাজ্যে অবস্থিত খাজেরুন অগ্নিমন্দিরের আগুনও নিভে যায়। এ-ধরনের ঘটনা যদি ঘটেও থাকে তবে তার সাথে নবির জন্মের কী সম্পর্ক? আর এগুলি কেমন করে মহান সৃষ্টিকর্তার সতর্কবার্তা হতে পারে?

    যুক্তি, পর্যবেক্ষণ এবং গণিত অনুযায়ী যে কোনো ঘটনার পিছনে কারণ থাকে। বিশ্বের সমস্ত ঘটনা তা নৈসর্গিক, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক হোক না কেন, সবকিছুর পিছনে কার্যকারণ অবশ্যই আছে। অনেক সময় এই কারণ প্রতীয়মান হয় দ্রুত। যেমন সূর্যালোক দেয় উষ্ণতা এবং আলো, অনিয়ন্ত্রিত আগুন দগ্ধ করে, পাম্প দিয়ে উত্তোলন না করলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর জানা না গেলে অনেক সময় এই নিয়ম প্রতীয়মান হয় না আমাদের কাছে। যেমন কোনো ব্যাধির উপশম কিংবা আপাত রহস্যময় অন্যকিছু।

    মক্কায় এক শিশুর জন্মের সাথে পারস্যের ফার্সের অগ্নিমন্দিরের আগুন নিভে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাসিবনের ধনুকাকৃতির খিলানে কোনো ফাটল ধরলে তা হয়তো ভূমিধ্বসের জন্য হতে পারে। পরবর্তীকালে ভক্তবৃন্দ যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা ছাড়াই এই ঘটনাগুলিকে স্রষ্টার সাবধানবাণী হিসেবে প্রচার করতে থাকেন। এই গুজব প্রচারের উদ্দেশ্য হতে পারে যে ইরাকের তাসিবনের অধিবাসীদেরকে এবং বিশেষ করে ইরানের রাজাকে জানিয়ে দেয়া যে, স্রষ্টা তাদের উপর এক মহাদুর্যোগ প্রেরণ করতে যাচ্ছেন। আর ফার্সের অগ্নিমন্দিরের রক্ষকদের এক শিশুর জন্ম সংবাদ জানিয়ে দেয়া যে, এই শিশু তাদের অগ্নিপূজা বন্ধ করে দিবেন। কিন্তু এটা কেমন করে সম্ভব যে, ইরানের রাজা কিংবা জরথুস্ত্রের পুরোহিতরা বহু দূরের মক্কার এক শিশুর জন্মের সাথে তাসিবনের খিলানের ফাটল ও অগ্নিমন্দিরের আগুন নিভে যাওয়ার সাথে সমিলন ঘটাবে? যেখানে নবি মুহামদই তাঁর ধর্মীয় প্রচারণা শুরু করেন জন্মের চল্লিশ বছর পর। মুহামদের বয়স যখন চল্লিশ বছর তখন আল্লাহ তাঁকে নতুন ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত করেন। সর্বজ্ঞানী এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন স্রষ্টা কেন ইসলাম আগমনের চল্লিশ বছর আগেই তাদের জানিয়ে দিবেন? কোরানে রয়েছে আল্লাহ যে মুহাম্মদকে ধর্মপ্রচারক হিসেবে নিয়োগ দিবেন এ-ব্যাপারে মুহাম্মদের কাছে কোনো পূর্বাভাষ ছিল না। প্রাক-ইসলামি আরবের অবস্থা থেকে কোরানের এই দাবির সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহ যদি মুহাম্মদের জন্মের অসাধারণ গুরুত্ব সবাইকে জানাতে চাইতেন তবে কেন তিনি খোদ মক্কাবাসীদেরকেই ইশারা দিলেন না? সর্বশক্তিমান আল্লাহ চাইলে কাবা ঘরের মূর্তিগুলোকে ভেঙে দিতে পারতেন এবং ছাদকে ধ্বসিয়ে দিতে পারতেন নিমিষে। দূরদেশের অগ্নিমন্দিরের আগুন নেভানোর চাইতে কাবার এই ঘটনা হতো কুরাইশদের জন্য এক শক্তিশালী সতর্কবাণী। এছাড়া প্রশ্ন থেকে যায় নবি হবার সাথে সাথে কেন আল্লাহ তাঁর নবিকে দিয়ে কোনো ব্যতিক্রমী কাজ দেখালেন না? এমনটা হলেই কুরাইশরা নবি সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে যেতেন, এবং আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষকে তেরো বছর ধরে শক্রতা ও শত উৎপীড়ন সহ্য করতে হতো না। সত্য ধর্ম ইসলামের প্রভাবে কেন পারস্যের জরথুস্ত্র ধর্মাবলম্বী বাদশাহ খসরু পারভেজের (৫৭০-৬২৮ খ্রিস্টাব্দ) অন্তর প্রভাবিত হলো না? তাহলে তো তিনি ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে নবির লেখা চিঠি পড়ে রাগে ছুড়ে ফেলে দিতেন না, মুহাম্মদের বার্তাবাহক আব্দুল্লাহ ইবনে হুদহাফা আস-সামিকে অপমান করে তাড়িয়ে দিতেন না; এবং ইরানিরা তাদের সম্রাটের উদাহরণ অনুসরণ করে সবাই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতেন। ফলে তাদেরকে আর আরব মুসলমানদের সাথে কাদেসিয়া ও নেহাবন্দের ভয়ানক লড়াইয়ে পরাজয়ের গ্লানি বহন করতে হতো না?

    অনেকদিন পূর্বে আমি ফরাসি দার্শনিক জোসেফ আর্নেস্ট রেনানের (১৮২৩-১৮৯২) লেখা Vie de Jesus (যিশুর জীবনী, ১৮৬৩) বইটি পড়ি। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যিশুর জীবনকাহিনীকে বাস্তবানুগ এবং প্রাণবন্তভাবে প্রকাশ করেছেন। এর কিছুদিন পরে আমি জার্মানির বিশিষ্ট ইতিহাস-গবেষক এমিল লুদভিগের(১৮৮১-১৯৪৮) লেখা ‘The Son of Man: The Story of Jesus ( ১৯২৮) বইটা পড়ি। লুদভিগের মতে যিশুর জীবনকাহিনী নিয়ে অন্য রেফারেন্স বইয়ে যতটুকু বাস্তবসমত বলে মনে হয়েছে ততটুকুই তিনি লিখেছেন। কারণ তাঁর মতে এই বিষয়ে বিশ্বস্ত ঐতিহাসিক দলিল দুষ্প্রাপ্য এবং দুর্লভ। আমার এই ক্ষুদ্র বইয়ে আমি নবি মুহাম্মদের ৬৩ বছরের জীবনের মধ্যে ২৩ বছরের সুদীর্ঘ বিবরণ দিতে পারব না। আমি স্বীকার করে নিতে চাই আর্নেস্ট রেনানের মতো মেধা ও সংবেদনশীলতা আমার নেই। এমন কী আমার নেই এমিল লুদভিগের মতো গবেষণা করার দক্ষতা। যে নবির আধ্যাত্মিক এবং বিশাল নৈতিক শক্তি মানব-ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল, তাঁর চরিত্র পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণনার জন্য একজন লেখকের এই ধরনের গুণাবলী অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। আমার এই নাতিদীর্ঘ লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে নবির জীবন সম্বন্ধে একটা সীমিত রূপরেখা দেখানো এবং তাঁকে ঘিরে অযথাই যেসব অলীক কাহিনী এবং মিথ প্রচলিত রয়েছে দীর্ঘদিন তার অবসান ঘটানো। এই বই লেখার অনুপ্রেরণা আমি পেয়েছি কোরান অধ্যয়ন করে এবং ইসলামের জন্ম ও বিকাশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে।

    আরও সত্যি করে বললে বলতে হয় আমার লেখার তাগিদ এসেছে এক মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া এবং পর্যবেক্ষণ থেকে। আমার পর্যবেক্ষণ এই যে, গোঁড়া, অন্ধবিশ্বাস একজন মানুষের কাণ্ডজ্ঞান বা বিশ্লেষণী চিন্তাভাবনাকে ভোঁতা করে দিতে পারে। আমরা সবাই জানি শিশুকালে সামাজিকীকরণের সময় আমাদের মনে যেসব ধারণা প্রবিষ্ট করানো হয় তা পরবর্তীতে সবসময় আমাদের চিন্তার পটভূমিতে থাকে। ফলে যেকোনো অযৌক্তিক ভাবনাও যদি আমাদের মনে আসে তবে আমাদের শিশুকালে লব্ধ ভাবধারণার সাথে মিলিয়ে তার বৈধতা দিতে চাই। স্বল্প কিছু বিরল ব্যক্তি ছাড়া অনেক বিদ্বান ব্যক্তিও এই প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। অযৌক্তিকতা অথবা কালপনিক ভাবনাকে বাস্তব বলে গ্রহণের জন্য প্রায়শ তাঁরা সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করেন না অথবা করলেও তখনই করেন যখন তা তাঁদের মনে প্রোথিত ধারণার সাথে খাপ খেয়ে যায়। মানবজাতি পর্যবেক্ষণ এবং ন্যায্য বিচারবিবেচনার অধিকারী। মানুষ তার এই জ্ঞানের জন্য নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু যখন ধর্ম ও রাজনৈতিক ঘটনাবলী সামনে আসে তখন মানুষ তার বিচার-বুদ্ধি, বিশ্লেষণী চিন্তা এবং যৌক্তিকতাকে পদদলিত করে ফেলে।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleতেইশ নম্বর তৈলচিত্র – আলাউদ্দিন আল আজাদ
    Next Article কিশোর রহস্য রোমাঞ্চ গল্পসমগ্র ১ – আলী ইমাম

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }