Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প1251 Mins Read0

    ১.০১ ভাল করে সকাল হয় নি

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়
    অখণ্ড সংস্করণ । তিন পর্বে সম্পূর্ণ

    প্রসঙ্গত

    যতদূর মনে পড়ে, ষাটের দশকে প্রখ্যাত কথাশিল্পী নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় গোল পার্কের কাছে পঞ্চাননতলায় নতুন বাড়ি কিনে চলে আসেন। আমার লেখালেখির শুরু থেকেই তার সঙ্গে পরিচয়। তিনি এবং তার স্ত্রী আশা বৌদি অপার স্নেহে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন।

    আমি দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। নারায়ণদা পঞ্চাননতলায় চলে আসায় যোগাযোগের অনেক সুবিধা হল। ছুটির দিনে প্রায়ই তাদের বাড়ি চলে যেতাম। একদিন কথায় কথায় দেশভাগের প্রসঙ্গ উঠল। বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান লেখকদের অনেকেই তখন জীবিত। কিন্তু দাঙ্গা ও দেশভাগের মতো বাঙালি জীবনের এমন ভয়াবহ বিপর্যয় তাদের লেখায় কেন যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়নি তা নিয়ে আমার যথেষ্ট আক্ষেপ ছিল। নারায়ণদা পূর্ব বাংলার মানুষ। তার দু’চারটি ছোট গল্প এবং উপন্যাসে দাঙ্গা ও দেশভাগের কিছু চিত্র অবশ্যই আছে। তাকে বড় আকারে এই বিষয়ে একটি উপন্যাস লেখার আর্জি জানিয়েছিলাম। নারায়ণদা বলেছেন, অনেক কাল আগে দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন। পূর্ব বাংলা তার স্মৃতিতে যতটা আছে, অনুভূতিতে ততটা নেই। তিনিই বরং আমাকে এ বিষয়ে লিখতে বলেন। কেননা দেশভাগের কারণে জন্মভূমি থেকে আমাকে উৎখাত হয়ে চলে আসতে হয়। দেশ হারানোর সেই যন্ত্রণা আমি চিরকাল ভোগ করে চলেছি।

    নারায়ণদা’র কথায় কয়েক মাস পর লেখাটা শুরু করি। নামকরণ হয় ‘কেয়াপাতার নৌকো’। সেই সময় সাপ্তাহিক ‘অমৃত’ পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক ছিলেন কবি মণীন্দ্র রায়। কিভাবে জানতে পেরে উপন্যাসটা দ্রুত শেষ করে পান্ডুলিপি তাকে দেবার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। ‘অমৃত’-এ ধারাবাহিকভাবে ১৯৬৮-৬৯ সালে এটি প্রকাশিত হয়। নারায়ণদা এবং মণিদা দুজনেই প্রয়াত। এই উপন্যাস লেখার প্রেরণা দান এবং প্রকাশের জন্য শ্রদ্ধেয় দুই অগ্রজকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।

    দীর্ঘ বত্রিশ বছর পর দৈনিক বর্তমান পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক কাকলি চক্রবর্তী এবং তার সহকারী সাহানা নাগচৌধুরীর অফুরান আগ্রহ ও তাগিদে ২০০১ ও ২০০২ সালের শারদীয় ‘বর্তমান’ পত্রিকায় ‘কেয়াপাতার নৌকো’র শেষ পর্বটি লিখি। পর পর দু’বছরে তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্ব হিসেবে প্রকাশিত হলেও আসলে এটি তৃতীয় পর্ব। এবং শেষ পর্বও। দুই অংশের প্রকাশকালের মধ্যে ছিল এক বছরের ব্যবধান। পাঠক যাতে সেই হারিয়ে না ফেলেন সেজন্য এটিকে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্ব, এভাবে ভাগ করা হয়েছিল।

    তিন পর্বে সম্পূর্ণ ‘কেয়া পাতার নৌকো’র অখণ্ড সংস্করণ এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত হল।

    প্রসঙ্গত জানাই, এই গ্রন্থের পরবর্তী আরও দু’তিনটি খণ্ড লেখার পরিকল্পনা আছে। সেগুলি প্রকাশিত হবে ভিন্ন ভিন্ন নামে। প্রধান কিছু চরিত্র একই থাকবে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে আরও অসংখ্য মানুষ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর অনন্ত জীবনযুদ্ধের কাহিনী এই উপন্যাসগুলিতে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করব। সেগুলির পটভূমি হবে বিশাল। দেশভাগের পরবর্তী অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাঙালির সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে যে মহা সংকট ঘনিয়ে এসেছে তার চিত্র কতটা ধরতে পারব, জানি না। কারণ আমার বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। যদি আরও কয়েক বছর কর্মক্ষম থাকি, এই কাজটি শেষ করতে চাই। যদি তা সম্ভব হয়, আমার লেখক জীবনের বৃত্ত মোটামুটি সম্পূর্ণ হবে।

    গ্রন্থকার

    .

    প্রথম পর্ব

    ১.০১

    ভাল করে সকাল হয় নি এখনও। স্টিমারের গতি হঠাৎ মন্থর হয়ে এল।

    উনিশ শ’চল্লিশের অক্টোবর। বার বছরের বিনু বাংলা মাস আর সালও জানে। আশ্বিন, তের শ’ সাতচল্লিশ।

    এত ভোরে রোদ ওঠে নি। উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম, তিন দিক আবছা অন্ধকারে মলিন। তার ওপর পাতলা নরম সিল্কের মতো কুয়াশা। শুধু পুব দিকটায় আলো আলো একটু আভা ফুটেছে। বাতাস বইছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, কখনও পুবে-পশ্চিমে আড়াআড়ি। শরতের বাতাস–এলোমেলো, ঝিরঝিরে, সুখদায়ক। তার গায়ে হিমের আমেজ মাখানো।

    মস্ত জলপোকার মতো স্টিমারটা এতক্ষণ যেন হাত-পা ছুঁড়ে এলোপাতাড়ি সাঁতার কাটছিল, এখন গা ভাসিয়ে দিয়েছে।

    গতি কমে এসেছিল, ইঞ্জিনের ধকধকানিও ক্রমশ স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। দু’ধারের বড় বড় চাকা দু’টো আগের মতো গর্জন করে জল কাটছে না, আলতোভাবে নদীকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘুরে যাচ্ছে।

    এই ভোরবেলাতেই ঝাঁকে ঝাঁকে শঙ্খচিল বেরিয়ে পড়েছে। গলায় সাদা বর্ডার দেওয়া খয়েরি রঙের পাখিগুলো স্টিমারটাকে ঘিরে সমানে চক্কর দিচ্ছে। তাদের চোখ কিন্তু জলের দিকে। মাছের রুপোলি শরীর দেখতে পেলেই হয়, সঙ্গে সঙ্গে ছোঁ দিয়ে পড়ছে। মুহূর্তে বাঁকানো ঠোঁটে শিকার বিধিয়ে উঠে আসছে। আর বকেরা? তাদেরও ধ্যান-জ্ঞান মাছেরই দিকে।

    জলের ধার ঘেঁষে ডেকের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল বিনু। একপাশে তার বাবা অবনীমোহন, আরেক পাশে দুই দিদি-সুধা আর সুনীতি। মা আসেন নি, এত ভোরে ওঠা তাঁর বারণ। চিরদিনই মা অসুস্থ, রুগ্ণ। ভোরের ঠাণ্ডা জলো হাওয়া লাগালে শরীর আরও খারাপ হবে, তাই কেবিনে শুয়ে আছেন।

    অবনীমোহনের বয়স পঞ্চাশের মতো। বেশ লম্বা, সুপুরুষ। মোটা ফ্রেমের চশমার ভেতর বড় বড় দূরমনস্ক চোখ। এত বয়সেও গায়ের রং উজ্জ্বল। চামড়া টান টান, একটি ভাজও তার ওপর পড়ে নি। চুল উষ্কখুষ্ক, সাদা-কালোয় মেশানো। সাদার ভাগটা কম, তবু ওই রংটা তার চেহারায় নতুন মহিমা এনে দিয়েছে।

    সুনীতির বয়স একুশ, সুধার আঠার। দু’জনের চেহারার ছাঁচ একরকম। ভুরু এত সুন্দর আর সরু, মনে হয়, খুব যত্ন করে তুলি দিয়ে আঁকা। সুনীতি ফর্সা না, শ্যামাঙ্গী। কচিপাতার কোমল আভার মতো কী যেন তার গায়ে মাখানো। সুধার রং টকটকে, তার দিকে তাকিয়ে পাকা ধানের কথা মনে পড়ে যায়। দু’জনেরই হাত-পা-আঙুল, সবেতেই দীঘল টান। পানপাতার মতো মুখ, থাক থাক কোঁচকানো চুল, ছোট্ট কপাল আর সরু চিবুকে মনোরম একটি ভঁজ। দু’জনের চোখই টানা টানা, আয়ত। সুনীতির কুচকুচে কালো মণিদুটো যেন ছায়াচ্ছন্ন সরোবর। সুধার চোখের মণি কালো নয়, নীলচে।

    সুনীতির দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়, সে বয়স-সচেতন। এর মধ্যেই চেহারায় গম্ভীর ভাব এনে ফেলেছে। সুধা কিন্তু একেবারে উলটো–নিয়ত ছটফটে, চঞ্চল। গাম্ভীর্য বলে কোনো শব্দ তার হাজার মাইলের ভেতরে নেই। অকারণ ছটফটানি আর ছেলেমানুষি সবসময় তাকে ঘিরে আছে।

    দু’চোখে অপার বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে বিনু। স্টিমার এখন যেখানে, সেখান থেকে নদীর তীর খুব কাছে, আধ মাইলের মধ্যে। গাছপালা, সবুজ বনানী, ফাঁকে ফাঁকে দু’একটা বাড়িঘর চোখে পড়ছে। অন্য পাড়টা অনেক দূরে, ধুধু, দুর্বল রেখায় আঁকা জলছবির মতো অস্পষ্ট।

    নদীর ঠিক মাঝখানটায় ঝাঁপসা কুয়াশার ভেতর অসংখ্য কালো কালো বিন্দু বিচিত্র সংকেতের মতো ছড়িয়ে আছে। মা বলেছেন ওগুলো জেলেডিঙি, সারারাত নদীময় ঘুরে ঘুরে নাকি ইলিশ মাছ ধরে। দূর-দূরান্তের ডিঙিগুলোই না, ছইওলা অনেক নৌকো লক্ষ্যহীনের মতো কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে। স্টিমার যত আস্তেই চলুক, নদী তোলপাড় করে উঁচু-উঁচু পাহাড় প্রমাণ ঢেউ উঠছে আর নৌকোগুলো মাতালের মতো অনবরত টলছে।

    নদী জুড়ে আরেকটা দৃশ্য চোখে পড়ছিল। চাপ চাপ, ঝক ঝক কচুরিপানা বেগুনি ফুলের বাহার ফুটিয়ে ভেসে যাচ্ছে।

    বিনুরাই শুধু নয়, প্রায় সব যাত্রীই রেলিঙের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে স্টিমারের এদিকটা অনেকখানি কাত হয়ে গেছে।

    যাত্রীরা সবাই প্রায় কথা বলছিল। কে যেন গলা চড়িয়ে কাকে ডাকল, কেউ কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে সরু করে শিস দিচ্ছে, হঠাৎ উচ্ছ্বাসে কেউ এক কলি গেয়ে উঠল। টুকরো টুকরো কথা, শিসের আওয়াজ-মিলে মিশে একাকার হয়ে মৃদু গুঞ্জনের মতো অনেকক্ষণ ধরে বিনুর কানে বেজে চলেছে। বাবা আর দিদিরাও কী যেন বলাবলি করছে, বিনু বুঝতে পারছিল না। সে শুধু তাকিয়ে আছে। অসীম বিস্ময় ছাড়া তার আশেপাশে আর কিছুই নেই এখন।

    নদী বলতে বিনুর অভিজ্ঞতায় কলকাতার বড় গঙ্গাই শেষ কথা। হাওড়া পুলের ওপর দাঁড়িয়ে যতবার গেরুয়া রঙের প্রবাহটি দেখেছে ততবারই সে অবাক হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে এই পারাপারহীন জলরাশির দৃশ্য তাকে যেন বিহ্বল করে ফেলেছে।

    একসময় অবনীমোহনের ডাক শোনা গেল, বিনু–

    বিনু সাড়া দিল না। দু’চোখ মেলে যেমন দেখছিল, দেখতে লাগল।

    অবনীমোহন আবার ডাকলেন।

    নদীর দিকে চোখ রেখে অন্যমনস্কের মতো সাড়া দিল বিনু, কী বলছ?

    আমরা এসে গেছি। ওই যে দেখতে পাচ্ছিস, মনে হচ্ছে ওটাই রাজদিয়ার স্টিমারঘাট। ওখানে আমাদের নামতে হবে। অবনীমোহন সামনের দিকে আঙুল বাড়িয়ে দিলেন।

    অবনীমোহনের আঙুল যেদিকে, বিনুর চোখ এবার সেদিকে ঘুরে গেল। এখনও বেশ খানিকটা দুরে, তবু নিশ্চল জেটি, দুতিনটে গাধাবোট, লোকজনের চলাফেরায় বড়সড় একটা গঞ্জের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিনুর ছোট্ট বুকের ভেতর সিরসিরিয়ে আনন্দের ঢেউ খেলতে লাগল। শেষ পর্যন্ত রাজদিয়ায় আসা হল তা হলে। কতকাল ধরে মা’র মুখে ওই জায়গাটার কথা শুনে আসছে সে। রাজদিয়ায় আসার ইচ্ছা তার অনেক দিনের।

    ওধার থেকে বড়দি সুনীতি বলল, এক্ষুনি স্টিমার জেটিঘাটে ভিড়বে। চল বাবা, কেবিনে গিয়ে মালপত্তর গুছিয়ে নিই।

    অবনীমোহন বললেন, তাড়া কি, রাজদিয়াই তো লাস্ট স্টেশন। ওখানে গিয়ে স্টিমারটা নিশ্চয়ই বেশ কয়েক ঘন্টা পড়ে থাকেবে। ধীরেসুস্থে লটবহর গুছোলেও চলবে।

    ছোটদি সুধা ব্যস্ত গলায় বলল, দাদু আমাদের নিতে স্টিমারঘাটে আসবেন তো?

    অবনীমোহন বললেন, নিশ্চয়ই আসবেন।

    তোমার চিঠি দাদু পেয়েছেন?

    পাওয়া উচিত। আজ কী বার?

    মনে মনে হিসেব করে সুধা বলল, বুধবার।

    অবনীমোহন বললেন, গেল বুধবারে জি.পি.ও’তে গিয়ে ডাকে দিয়েছি। সাতদিনে চিঠিটা কি আর আড়াই শ’, তিন শ’ মাইল রাস্তা পেরুতে পারে নি?

    সুধা বলল, আরেকটা কথা ভেবে দেখেছ?

    কী রে?

    আমাদের তো কাল পৌঁছবার কথা ছিল। স্টিমার চড়ায় আটকে গিয়েছিল বলে আজ এলাম। তোমার চিঠি যদি পেয়েও থাকেন দাদু, কাল এসে ঘুরে গেছেন। জেটিঘাটে আজ আর কি আসবেন?

    আসবেন রে, আসবেন।

    সুধাটা চিরদিনের ভীতু। তার খুঁতখুঁতুনি কাটল না, দাদু না এলে কী যে হবে! তুমি তো আবার কখনও এখানে আসো নি। রাজদিয়ার রাস্তাঘাট কিছুই চেন না।

    অবনীমোহন হেসে ফেললেন, তোকে অতশত ভাবতে হবে না। দাদু আসবেনই, দেখে নিস। আর যদি না-ই আসেন, ঠিকানা তো জানি। খুঁজে ঠিক বার করে ফেলব। তা ছাড়া আমি না চিনি, তোর মা চেনে। বারকয়েক সে এখানে এসেছে।

    সুধা আর কিছু বলল না। মুখ দেখে মনে হল না খুব একটা ভরসা পেয়েছে।

    এদিকে স্টিমারটা জেটিঘাটের দিকে যত এগিয়ে চলেছে, যাত্রীদের ব্যস্ততা ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেছে। আগের সেই মৃদু অস্পষ্ট গুঞ্জনটা হইচই, হট্টগোলের রূপ নিয়েছে। ধুপধাপ শব্দ, বাক্স-প্যাটরা টানাটানির আওয়াজ, চেঁচামেচি, চিৎকার। নিমেষে চারদিক চকিত হয়ে উঠল।

    বিনু ভাবছিল পরশু দিন এই সময়টা তারা ছিল কলকাতায়, ভবানীপুরের বাড়িতে। দুপুর থেকে মালপত্র বাঁধাছাঁদা, গোছগাছ আরম্ভ হয়েছিল। তারপর সন্ধেবেলা শিয়ালদা গিয়ে ঢাকা মেল ধরেছে। কাল সকালে এসেছিল গোয়ালন্দ। সেখানে থেকে এই স্টিমারটায় পাড়ি জমিয়েছে। কাল রাত্তিরেই তাদের রাজদিয়া পৌঁছে যাবার কথা। কিন্তু বিপদ বাধিয়েছিল নদীর একটা চড়া। আট দশ ঘন্টার মতো স্টিমারটাকে আটকে রেখেছিল।

    সে কি আজকের কথা! খুব ছেলেবেলায় যেটাকে বলা যায় চেতনার প্রত্যুষ, সেই তখন থেকে রাজদিয়ার নাম শুনে আসছে বিনু।

    বিনুর জন্ম কলকাতায়। পুবে বেলেঘাটা, পশ্চিমে বড় গঙ্গা, উত্তরে বাগবাজার, দক্ষিণে টালিগঞ্জ কলকাতার চার সীমার ভেতর এত মজা, এত চমক, এত ঘটনার মেলা সাজানো যে যুগযুগান্ত কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু অবনীমোহন মানুষটা স্বভাব-যাযাবর, কোথাও যদি দুটো দিন পা পেতে বসেন! হাতে কটা দিন ফালতু এসে গেল তো সংসার তুলে নিয়ে পাড়ি দিলেন রাজপুতানায় কি সৌরাষ্ট্রে, মগধে অথবা কোশলে। বার বছরের ছোট্ট জীবনে অনেক দেশ দেখেছে বিনু। ছোটনাগপুরের বনভূমি, দাজিলিং-পাহাড়, কাশীর গঙ্গার ঘাট, প্রয়াগে কুম্ভমেলা, অজন্তার গুহায় গুহায় চমৎকার চমৎকার সব শিল্প এবং আরও কত কী। কিন্তু এত কাছের রাজদিয়াটাই শুধু দেখা হয় নি। অথচ কত আগেই না তারা এখানে আসতে পারত!

    পুজোর সময়টা প্রতি বছর কলকাতায় দাদুর চিঠি যায়, তার ইচ্ছা একবার অন্তত বিনুরা রাজদিয়ায় বেড়াতে আসুক। চিঠি এলেই মা বলতেন, চল না, এবার ওখানে ঘুরে আসি। ফি বছর যেতে লিখছেন। বাবা বলতেন, এ বছরটা থাক। গিরিডিতে একটা বাড়ি ঠিক করে ফেলেছি। আসছে বার না হয় রাজদিয়া যাওয়া যাবে। মায়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এত ক্ষীণ যে, বাবার ওপর দাগ কাটতে পারত না। দ্বিতীয় বার তিনি আর এ ব্যাপারে অনুরোধ করতেন না।

    প্রতি বছর মায়ের রাজদিয়ামুখি মনটাকে অবনীমোহন একরকম জোর করে অমরকন্টকে, নৈনিতালে কিংবা মধুপুরের দিকে ফিরিয়ে দিতেন। এবার কী খেয়াল হয়েছে, টিকিট কেটে ঘর সংসার তুলে নিয়ে ঢাকা মেলে গিয়ে উঠেছেন। বাবা হয়তো ভেবে থাকবেন, বৃদ্ধ মানুষটি বার বার অনুরোধ করেছেন অথচ একবারও যাওয়া হচ্ছে না। এটা উচিত নয়। অনুচিত তো বটেই,অন্যায়ও।

    বিনু শুনেছে, দাদুর সঙ্গে সম্পর্কটা খুব কাছের নয়। মায়ের কিরকম মামা হন। কিন্তু কে বলবে তিনি আপনজন নন।

    বার বছরের বিনু ক্লাস সেভেনে পড়ে। অনেক কিছু বুঝতে পারে সে। তার অনুভবের সীমা বহুদূর বিস্তৃত। দাদুর চিঠি সে পড়েছে। সেগুলোতে যে আন্তরিকতা, যে স্নেহপূর্ণ মাধুর্যের সুরটি থাকে, বিনুকে তা অভিভূত করেছে। কোনওদিন দাদুকে দেখে নি বিনু, লু মনে হয়েছে তার মতো মমতাময়, মধুর মানুষ জগতে খুব বেশি নেই। রাজদিয়া বার বার তাকে গোপনে হাতছানি দিয়ে গেছে।

    দেখতে দেখতে রোদ উঠে গেল। সূর্যটা কোথায় লুকিয়ে ছিল, জলের তলার কোন অজানারহস্যময় দেশ থেকে যেন হঠাৎ লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। নরম সাদা রেশমের মতো যে কুয়াশার চাদরটা আকাশ এবং নদীকে আবছাভাবে ঢেকে রেখেছিল, এখন আর তা নেই। নদী জুড়ে কত যে ঢেউ! সোনার টোপর মাথায় দিয়ে তারা টলমল করে চলেছে। আকাশটা এতক্ষণে স্পষ্ট হয়েছে। আশ্বিনের অগাধ, অসীম নীলাকাশ।

    নীলাকাশ কি আগে আর দেখে নি বিনু? কলকাতার আকাশ অবশ্য বার মাস ধুলোয় ঢাকা, ধোঁয়ায় মাখা। কিন্তু বাবার সঙ্গে যখন বাইরে বেড়াতে গেছে, নির্মল আকাশ কতবার তার চোখে পড়েছে। শিলং পাহাড়ের মাথায় যে আকাশ, লছমনঝোলায় যে আকাশ কিংবা চিরিমিরিতে যে আকাশ, সবই তো মনোরম। কিন্তু এখানকার মতোটি আগে আর কখনও দেখে নি বিনু। আকাশ যে এত উজ্জ্বল, এত ঝকঝকে, নীলকান্ত মণির মতো এমন দীপ্তিময়, কে জানত! তার গায়ে থোকা থোকা ভারহীন সাদা মেঘ জমে আছে। শরৎকালটা যেন তার সবটুকু বিস্ময় নিয়ে বিনুর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

    বিশাল রাজহাঁসের মতো দুলতে দুলতে গম্ভীর বাঁশি বাজিয়ে স্টিমারটা একসময় জেটিঘাটে গিয়ে ভিড়ল। সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালি জেলার মাল্লারা বিচিত্র সুর করে মোটা মোটা কাছি ছুঁড়ে দিতে থাকে। জেটিতে আরেক দল মাল্লা তৈরিই ছিল, কাছি লুফে মুহূর্তে লোহার থামে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল। বাঁধাছাঁদা হলে খালাসিরা কাঠের ভারী গ্যাংওয়ে ফেলে জেটির সঙ্গে স্টিমারটাকে জুড়ে দিল।

    জেটিঘাটে অনেক মানুষ। গাদাগাদি করে উগ্রীব দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখ এদিকে। এই স্টিমারে যারা এল, খুব সম্ভব তাদের নিতে এসেছে ওরা।

    স্টিমারটা জেটিতে ভিড়বার আগে থেকেই চাঞ্চল্য শুরু হয়েছিল। এখন সেটা তুমুল হয়ে উঠেছে। রেলিঙের কাছে যে ভিড়টা ছিল, দ্রুত পাতলা হয়ে ডেকে, কেবিনে আর বাঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছে। ওদিকে জেটি থেকে একদল হিন্দুস্থানী কুলি বর্গীর মতো হানা দিয়েছে। একটু পর কুলিদের মাথায় মালপত্র চাপিয়ে যাত্রীমিছিল গ্যাংওয়ে বেয়ে জেটির দিকে নামতে লাগল।

    বিনুরা কিন্তু এখনও রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাছাকাছি আসতে পাড়টা পরিষ্কার দেখা গেল। জেটিঘাটের ডান দিকে নৌকোঘাট। ছইওলা প্রকান্ড প্রকান্ড কত যে নৌকো লগি পুঁতে সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে! এক সঙ্গে এত নৌকো আর এত বড় বড় নৌকো আগে কখনও দেখে নি বিনু। ওপরে উঁচু বাঁধের মতো রাস্তায় চেরা বাঁশের বেড়া আর টিনের চালের অগুনতি দোকান। কিসের দোকান বোঝা যাচ্ছে না। লোকজন, কদাচিৎ দু’একটা সাইকেল চোখে পড়ছে।

    সুধা অস্থির হয়ে উঠল, সবাই নেমে গেল। বাবা, আমরা স্টিমারে পড়ে থাকব নাকি?

    চাইলেও থাকতে দেবে না রে। অবনীমোহন হাসলেন, একটু দাঁড়া, হুড়োহুড়িটা কমুক। তারপর নামব।

    স্টিমার ফাঁকা হয়ে এলে বিনুদের নিয়ে কেবিনে ফিরলেন অবনীমোহন। সুরমা নিজের বিছানায় বসে আছেন। চোখ দুটি জানালার বাইরে ফেরানো। কখন তার ঘুম ভেঙেছে, টের পাওয়া যায়নি।

    সুরমা সুধা সুনীতি আর বিনুর মা। বয়স চল্লিশ বেয়াল্লিশ, এক-আধ বছর বেশিও হতে পারে। তিনি যে সুধা সুনীতির মা, বলে দিতে হয় না। পানপাতার মতো অবিকল সেই মুখ, সেই রকম টানা টানা চোখ, থাক থাক কোঁচকানো চুল, উঁচলো চিবুকে তেমনি ভাজ। নিজের চেহারার নিজের সুষমার সবটুকুই অকাতরে তিনি মেয়েদের দিয়ে দিয়েছেন, আলাদা করে কিছুই রাখেন নি। একটা জিনিসই শুধু তার নেই যা সুধা সুনীতির আছে, সেটা স্বাস্থ্য।

    জ্ঞান হবার পর থেকে মা’কে কোনওদিন সম্পূর্ণ সুস্থ দেখে নি বিনু। সারাদিনই প্রায় শুয়ে থাকেন। হাঁটাহাঁটি, সংসারের কাজকর্ম, সব বারণ। কথা বলতে কষ্ট হয়। এক-আধটু যাও বলেন তা ফিসফিসিয়ে, আধফোঁটা গলায়। গায়ে মাংস নেই, হাত-পা আর কণ্ঠার হাড় বেরিয়ে পড়েছে। রোগা দুর্বল শরীরে রেখাময়, শিথিল চামড়া। গায়ের রং একসময় ছিল পাকা সোনা, এখন মোমের মতো ফ্যাকাসে। চোখের কোলে রক্তের লেশ নেই, কাগজের মতো তা সাদা। দৃষ্টি কেমন যেন ক্লান্ত, দীপ্তিহীন। তাকিয়ে থাকতেও তার বুঝি কষ্ট হয়। সুরমাকে ঘিরে জীবনের এতটুকু লাবণ্যও আর ঝলমল করে না, তার সব আলো সব আভা নিবে গেছে।

    বিনু শুনেছে, তার জন্মের এক বছর পর একটা ভাই হয়েছিল। দু’মাসের বেশি সে বাঁচে নি। নিজেও মরেছে, মাকেও মেরে রেখে গেছে। অনেক দিন ভুগবার জন্যই বোধ হয় মা’র ওপর গাঢ় মলিন ছায়া অনড়।

    স্ত্রীকে ভাল করে দেখে নিয়ে অবনীমোহন বললেন, এ কী!

    কী বলছ! জানালার বাইরে থেকে চোখ দুটি ভেতরে নিয়ে এলেন সুরমা।

    মুখটুখ ধুয়েছ দেখছি, জল পেলে কোথায়?

    কেবিনে জলের ব্যবস্থা নেই। তার জন্য অনেকটা ঘুরে ইঞ্জিন-ঘরের কাছে যেতে হয়। সুরমা জানালেন, সেখান থেকেই হাতমুখ ধুয়ে এসেছেন।

    বকুনির সুরে অবনীমোহন বললেন, একা একা অতটা রাস্তা তোমার যাওয়া উচিত হয় নি। দুর্বল শরীর, পড়ে উড়ে গেলে এক কান্ডই হত।

    সুরমা বললেন, আজ আমার শরীর খুব ভাল লাগছে। জানো, এতখানি গেছি এতখানি এসেছি, কিন্তু একটুও হাঁপাই নি।

    অর্ধেক আনন্দের সঙ্গে অর্ধেক বিস্ময় মিশিয়ে অবনীমোহন বললেন, সত্যি বলছ?

    হ্যাঁ, সত্যি।

    যাক, পা দিতে না দিতেই রাজদিয়া টনিকের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তোমার স্বাস্থ্য ফেরাবার জন্যে কত জায়গায় নিয়ে গেছি, কিছুই হয় নি। রাজদিয়া যদি তোমাকে আগের মতো সুস্থ করে দেয়, বুঝব এমন জায়গা পৃথিবীতে নেই।

    সুরমা বোধ হয় অবনীমোহনের কথা শুনতে পেলেন না। আপন মনে বললেন, কত কাল পর এখানে এলাম। কী ভাল যে লাগছে! তার ছায়াচ্ছন্ন, ক্লান্ত চোখে একটুখানি আলো যেন ফুটি ফুটি করছে।

    ধীরে সুস্থে জিনিসপত্র গুছিয়ে দুটো কুলি ঠিক করলেন অবনীমোহন, তাদের জিম্মায় সেসব দিয়ে স্ত্রীর দিকে ফিরলেন, অনেকখানি যেতে হবে, তোমার হাত ধরে নিয়ে যাই?

    সুরমা বললেন, হাত ধরতে হবে না, আমি এমনিই যেতে পারব।

    ঠিক পারবে তো?

    হ্যাঁ, গো, হ্যাঁ।

    আগে আগে সুরমা চললেন, তারপর সুধা সুনীতি, একেবারে শেষে অবনীমোহন। আর বিনু।

    একটু পর গ্যাংওয়ে পেরিয়ে সবাই জেটিতে এসে পড়ল। জেটিঘাটের ভিড় এখন হালকা হয়ে গেছে। দু’চারটি উৎসুক মুখ শুধু এদিকে সেদিকে ছড়ানো। বিনু চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিক দেখতে লাগল। যে অল্প ক’টি লোক এখনও রয়েছে তার ভেতর কোন মানুষটি দাদু, বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আদৌ তিনি এসেছেন কিনা, কে জানে।

    বেশি দূর যেতে হল না। জেটিঘাটের মাঝামাঝি আসতে চোখে পড়ল, একজন বৃদ্ধ উন্মুখ হয়ে প্রতিটি যাত্রীকে লক্ষ করছেন। তাঁর পাশে আট ন’ বছরের ছোট একটি মেয়ে।

    বুড়ো মানুষটির গায়ের রং কালো। মাঝারি চেহারা, মাথাটা বকের পাখার মতো ধবধবে, মুখময় তিন চারদিনের জমানো দাড়ি। এত বয়সেও মেরুদণ্ড একেবারে সোজা। দু’চোখ স্নেহের রসে যেন ভাসো ভাসো, এখন অবশ্য কিছুটা উক্তষ্ঠিত। চুলের রং বদল, শরীরে কিছু ভার নামানো আর চামড়ায় এলোমেলো আঁচড় কাটা ছাড়া সময় তেমন কিছুই করে উঠতে পারে নি। এত বয়সেও শরীর বেশ শক্তই আছে। স্বাস্থ্যের ভিত রীতিমতো মজবুত। বৃদ্ধকে ঘিরে এমন এক সরলতা মাখানো যাতে মনে হয়, তার বয়স্ক দেহের ভেতর চিরকালের এক শিশুর বাস। পরনে খাটো ধুতি, খদ্দরের ফতুয়া, পায়ে লাল ক্যাম্বিসের জুতো।

    ছোট মেয়েটির চুল কোঁকড়া কোঁকড়া। নাকটি একটু বোচাই হবে। ফুলো ফুলো নরম লালচে গাল। রুপোর কাজললতার মতো চোখের কালো মণি দু’টো টলটল করছে। একটু নাড়া দিলেই টুপ করে ঝরে পড়বে। নীল ফ্রক লাল জুতোয়, মনে হয়, মোমের পুতুলটি।

    সুরমা খুব আস্তে আস্তে পা ফেলছিলেন। চলতে চলতে বৃদ্ধটির কাছে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। একটুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ঝকে তার পা ছুঁলেন।

    বৃদ্ধের চোখ আলো হয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি সুরমাকে তুলে চিবুকে হাত রেখে বললেন, আমার রমু না?

    হ্যাঁ, মামা। সুরমা মাথা নাড়লেন।

    বিনু এই প্রথম জানতে পারল, একটা আদরের নাম আছে মা’র-রমু।

    বৃদ্ধ বললেন, আসতে পারলি তবে! কত বছর ধরে চিঠি লিখছি। তার স্বরে স্নেহের সঙ্গে অনুযোগ মেশানো।

    কী করব বল– সুরমা বললেন, কত রকম ঝামেলা ঝামেলা—

    তো হিল্লিদিল্লি যাস কী করে? এখানে আসতেই যত কষ্ট!

    অস্ফুট গলায় সুরমা কী একটা উত্তর দিলেন, কেউ শুনতে পেল না।

    বৃদ্ধ বললেন, কতকাল পর তোকে দেখলাম। সেই বিয়ের সময় শেষ দেখা। তখন তুই একেবারে ছেলেমানুষ। ক’বছর বয়েসে যেন বিয়ে হয়েছিল তোর?

    লাজুক সুরে সুরমা বললেন, সতের।

    বৃদ্ধ বললেন, সে কি আজকের কথা! তুই নিজে এসে না বললে চিনতেই পারতাম না। মুখের আদল টাদল, চেহারা, কত বদলে গেছে।

    সুরমা হাসলেন।

    বৃদ্ধ আবার বললেন, স্টিমার থেকে কত লোক নেমে গেল কিন্তু কেউ আমার কাছে দাঁড়াচ্ছে না। এত লোকের ভিড়ে কে যে আমার রমু বুঝতে পারছি না। একবার তো ভাবলাম, তোরা এবারও এলি না। বলতে বলতে হঠাৎ সচেতন হয়ে উঠলেন যেন, তোর চেহারার এ কী হাল হয়েছে!

    সুরমা মলিন হাসলেন, ক’বছর ধরে সমানে ভুগছি। ছোট ছেলেটা হবার পর থেকে শরীর একেবারে ভেঙে গেছে। নিজেও সে বাঁচল না, আমাকেও জন্মের মতো পঙ্গু করে রেখে গেল।

    ইস, কী স্বাস্থ্য ছিল আর কী দাঁড়িয়েছে! ক’খানা শুকনো হাড় ছাড়া কিছুই তো নেই। তা বাপু এই যে এলে, শরীর টরীর সারিয়ে নাও। তারপর যাবার কথা মুখে আনবে।

    সুরমা কিছু বললেন না। মৃদু একটু হাসি তার মুখে আবছাভাবে লেগে রইল।

    বিনু বুঝে ফেলেছে, এই বুড়ো মানুষটিই তার দাদু। চিঠি পড়ে দাদুর নামটা সে জেনেছে হেমনাথ মিত্র।

    হেমনাথ হঠাৎ অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, ওই দেখ, কী ভুলো মন আমার। মেয়েকে নিয়েই মেতে আছি। অবনীমোহন কোথায়? আমার দাদা আর দিদিভাইরা?

    অবনীমোহন সামনে এগিয়ে এসে প্রণাম করলেন। হেমনাথ বললেন, বেঁচে থাকো বাবা, শতায়ু হও।

    অবনীমোহন বললেন, আপনার শরীর কেমন আছে মামাবাবু?

    খুব ভাল। অসুখ বিসুখ আমার কাছে বড় একটা ঘেঁষে না। লাস্ট টেন ইয়ারসে দু’বার মোটে জ্বর হয়েছিল। তার আগে কিছু হয়েছিল কিনা, মনে নেই। সে যাক, তোমরা কেমন আছ বল।

    আমরা খুব খারাপ নেই, তবে আপনার ভাগনীকে নিয়ে বিপদে পড়েছি।

    তা তো দেখতেই পাচ্ছি।

    অবনীমোহন কিছু বললেন না।

    হেমনাথ বললেন, রাস্তায় আসতে কষ্ট-টষ্ট হয় নি তো?

    ট্রেনে ভালই এসেছিলেম। তবে স্টিমার চড়ায় ঠেকে যাওয়ায় ঘন্টাকয়েক আটকে থাকতে হয়েছিল।

    হেমনাথ বললেন, কাল একবার স্টিমারঘাটে এসেছিলাম, চড়ায় আটকাবার কথা শুনে গেছি। সুজনগঞ্জের ভাটিতে ক’বছর ধরে মস্ত চর পড়ছে। প্রায়ই স্টিমার ওখানে আটকে যায়।

    একটু কী ভেবে অবনীমোহন বললেন, মামীমা কেমন আছেন?

    সুরমা এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তার স্বভাবের রং মৃদু। খুব আস্তে আস্তে আধফোঁটা, আধবোজা গলায় কথা বলেন। নিজের দুর্বল শরীর, ক্ষীণ জীবনীশক্তি, সব ভুলে গিয়ে এখন প্রায় চেঁচামেচিই শুরু করলেন, তাই তো, মামীমাকে দেখতে পাচ্ছি না। স্টিমারঘাটে এল না যে! শরীর খারাপ হয় নি তো?

    না, ভালই আছে। হেমনাথ বললেন, তোরা আসবি, তাই ভোরবেলা উঠেই রান্নবান্না নিয়ে মেতেছে। বলতে বলতে হঠাৎ কী লক্ষ করে বললেন, এ কি অবনী!

    হেমনাথের স্বরে বিস্ময় ছিল। অবাক হয়ে অবনীমোহন বললেন, আজ্ঞে–

    তোমার চুল এর ভেতরেই পাকতে শুরু করেছে দেখছি। এটা কিরকম হল!

    “আজ্ঞে, পঞ্চাশ বছর প্রায় পেরুতে চলোম–

    “উঁহু উঁহু, যত বয়েসই হোক, বাপ-খুড়ো মামা-জেঠা, গুরুজনরা বেঁচে থাকতে ছেলেমেয়েদের চুল পাকতে নেই।

    অবনীমোহন নিঃশব্দে হাসলেন। অন্যরাও হেসে উঠল।

    হেমনাথ কী বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই সুরমা বলে উঠলেন, মামা, তুমি কিন্তু মেয়ে-জামাই পেয়ে সব ভুলে গেছ। তোমার দাদা আর দিদিভাইরা–

    হেমনাথ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, আরে তাই তো। কোথায় ওরা?

    সুধা আর সুনীতি এগিয়ে এসে প্রায় একই সঙ্গে প্রণাম করল।

    পায়ের কাছ থেকে উঠে দাঁড়াতেই আঙুলের ডগায় দু’জনের মুখ তুলে ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছুক্ষণ দেখলেন হেমনাথ। তারপর মুগ্ধ গলায় বললেন, বাঃ বাঃ! তুমি নিশ্চয়ই সুধাদিদি আর তুমি সুনীতিদিদি।

    হেমনাথ ঠিক ঠিক চিনতে পেরেছেন। বাইশ চব্বিশ বছর দেখাসাক্ষাৎ ছিল না, তবে চিঠিপত্রে ভাগনীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। নিজের সন্তানদের কে কিরকম দেখতে হয়েছে, কার স্বভাব কেমন, পড়াশোনায় কে ভাল কে মন্দ, সব কথা মামাকে জানানো চাই সুরমার।

    সুধা বলল, হ্যাঁ, আমি সুধাই। সুনীতি বলল, আমি সুনীতি। কিন্তু চিনলেন কেমন করে?

    হেমনাথ বললেন, সে একটা মন্তর আছে, তাই দিয়ে চিনে ফেলেছি। আঙুলের প্রান্তে চিবুক ধরাই ছিল। হঠাৎ চোখে মুখে দুর্ভাবনার রেখা ফুটিয়ে হেমনাথ বললেন, তোমরা এসেছ, এর চাইতে আনন্দের আর কিছু নেই। কিন্তু দিদিভাইরা, একটা মুশকিলে ফেলে দিলে যে।

    কী মুশকিল দাদু? সুনীতিকে ঈষৎ উদ্বিগ্ন দেখাল।

    তোমার হলে দু’জন, আর ঘরে আছেন একজন। এই তিনজনের ভেতর এখন কাকে যে পাটরানী করি! শেষ পর্যন্ত একটা গৃহযুদ্ধ না বেধে যায়।

    সুনীতি কিছু বলল না। মুখ টিপে হাসতে লাগল।

    সুধা কিন্তু ঝঙ্কার দিয়ে উঠল, বুড়ো থখুড়ে। আবদার কত! আপনার পাটরানী হতে আমার বয়েই গেছে।

    আমুদে গলায় হেমনাথ বললেন, বুড়ো বলে দাগা দিলে ভাই।

    কলকল করে সুধা কী বলতে যাচ্ছিল, সেই সময় ভিড় ঠেলে বিনু হেমনাথের পা ছুঁল। চকিত হেমনাথ বললেন, কে রে? কে রে? পরক্ষণেই চওড়া বিশাল একখানা বুকের ভেতর ধরা পড়ে গেল বিনু।

    সুরমা বললেন, ও তোমার দাদাভাই মামা। সবার সঙ্গে কথা বলছ, গল্প করছ, ওর দিকে একবারও তাকাচ্ছ না। এ কি সহ্য হয়? তাই নিজেই আলাপ টালাপ করে নিতে এগিয়ে এসেছে। হিংসের একখানা পুঁটুলি।

    ভারি অন্যায় হয়ে গেছে। সবার আগে দাদাভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করা উচিত ছিল। বুকের ভেতর থেকে বার করে এনে বিনুকে দুহাতে ওপরে তুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন হেমনাথ।

    যেভাবে হেমনাথ ঘোরাচ্ছেন ফেরাচ্ছেন তাতে বিনুর মনে হল, এই বয়সেও মানুষটি যুবকের মতো শক্তিমান।

    হেমনাথ বললেন, দাদাভাইয়ের নামটা যেন কী?

    সুরমা বললেন, বিনু।

    বিনু গম্ভীর গলায় বলল, বিনয়কুমার বসু।

    ঠিক ঠিক। হেলাফেলা করে ন্যাড়া বোঁচা একটা নাম বললেই হল? তার সঙ্গে গয়না-টয়নাগুলো। জুড়ে দিতে হবে না? বলে বিনুর দিকে তাকালেন হেমনাথ। কৌতুকে তার চোখ ঝকমক করছে। বললেন, আমার ইচ্ছে, নামটা একেবারে জেনারেলিসিমো বিনয়কুমার বসু হোক। কি, পছন্দ তো?

    জেনারেলিসিমো শব্দটা বিনুর অজানা। তবু মনে হল, ওটার মধ্যে ঠাট্টা আছে। সে লজ্জা পেয়ে গেল।

    হেমনাথ আবার বললেন, দাদাভাইকে তো বীরপুরুষের মতো দেখতে, বাঘ মারতে পার?

    বিনু উত্তর দিতে যাচ্ছিল, সুধা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, বাঘ! জানো দাদু, সেবার ছোটনাগপুরে খরগোশ দেখে ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।

    ছোটদিটা চিরকালের বিভীষণ। ঠিক সময়টিতে শত্রুতা করবার জন্য সে যেন ওত পেতেই আছে। বিনুর ইচ্ছা হল, সুধার বেণী ধরে কষে টান লাগিয়ে দেয়। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে সদিচ্ছাটাকে এই মুহূর্তে কাজে লাগানো গেল না। পারলে অবশ্য সুধাকে ভস্মই করে ফেলত। কটমট করে একবার তাকিয়ে আপাতত বিনুকে নীরব থাকতে হল।

    হেমনাথ জিজ্ঞেস করলেন, কোন ক্লাসে পড়?

    বিনু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই মনে হল, প্যান্ট ধরে কে টানছে। টানটা অনেকক্ষণ ধরেই অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছিল, বিনু খেয়াল করে নি। তলার দিকে তাকাতেই দেখতে পাওয়া গেল। সেই মেয়েটাকোঁকড়া কোকড়া যার চুল, লালচে ফুলো ফুলো গাল, রুপোর কাজললতার মতো চোখ-ঘোট মুঠিতে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে তার প্যান্টের নিচের দিকটা ধরে আছে।

    চোখাচোখি হতেই মেয়েটা আরও জোরে টান লাগাল। ফিসফিসিয়ে বলল, নামো, নামো বলছি।

    হেমনাথ বোধ হয় লক্ষ করেছিলেন। গলার স্বরে লম্বা টান দিয়ে বললেন, ওরে হিংসুটে, দাদাকে নামতে বলা হচ্ছে!

    আগের মতো সুর করে মেয়েটা এবার হেমনাথকে বলল, ওকে নামিয়ে দাও, শিগগির নামিয়ে দাও–

    হেমনাথ বললেন, কেন, নামাব কেন?

    বিনুর প্যান্ট ধরে মেয়েটা টানছিলই। বলল, আমি তোমার কোলে উঠব।

    দুষ্ট বদমাশ মেয়ে, আমার কোলটা একেবারে মৌরুসিপাট্টা করে নিয়েছ!

    মেয়েটা কী বুঝল, সে-ই জানে। জোরে জোরে চুল ঝাঁকিয়ে সমানে বলতে লাগল, নামিয়ে দাও, নামিয়ে দাও–

    সুধা-সুনীতি-সুরমা-অবনীমোহন, সবাই সকৌতুকে দেখছিলেন। সুরমা বললেন, মেয়েটা কে গো মামা? এতক্ষণ খেয়াল করি নি–এক্কেবারে জাপানি পুতুল। আর কেমন পুটুর পুটুর কথা বলছে।

    ওর নাম ঝিনুক। হেমনাথ বললেন, ভবতোষকে তোর মনে আছে?

    কোন ভবতোষ?

    লাহিড়ীবাড়ির ভবতোষ। রাজেন লাহিড়ীর ছেলে।

    চোখ কুঁচকে ভাবতে চেষ্টা করলেন সুরমা। স্মৃতির ঝাঁপি খুলতে পারলেন কিনা, বোঝা গেল না। অনিশ্চিতভাবে বললেন, নামটা চেনা চেনা লাগছে, মুখটা মনে করতে পারছি না। কতকাল আগে রাজদিয়াতে এসেছিলাম, সে কি আজকের কথা!

    হেমনাথ বললেন, ঝিনুক ভবতোষের মেয়ে।

    সুরমা কোমল গলায় ডাকলেন, এস ঝিনুক, আমার কাছে এস।

    তোমার কাছে যাব না। জেদী স্বরে বায়না জুড়ে দিল ঝিনুক, আমি দাদুর কোলে উঠব, দাদুর কোলে উঠব।

    এই মনোরম ছেলেমানুষির খেলাটা আরও কিছুক্ষণ হয়তো চলত। কিন্তু তার আগেই হিন্দুস্থানী কুলিরা চেঁচিয়ে উঠল, চলিয়ে বাবুজি, বহুত দের হো যাতা– সুরমারা হেমনাথকে দেখে দাঁড়িয়ে যেতে কুলিরাও দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এখন তারা অস্থির হয়ে উঠেছে।

    হেমনাথ যেন এতক্ষণে স্থান-কাল সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠলেন, ওই দেখ, জেটিঘাটে দাঁড়িয়েই গল্প জুড়ে দিয়েছি। চল চল–আস্তে আস্তে তিনি বিনুকে নামিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে কাণ্ডটা ঘটল, লাফ দিয়ে ঝিনুক তার কোলটি দখল করে বসল। তারপর বিজয়িনীর মতো সগর্বে একবার বিনুর দিকে তাকাল।

    বিনুর ইচ্ছা হল, পা ধরে টেনে মেয়েটাকে নামিয়ে দেয়। অস্পষ্টভাবে মনে হল, দাদুকে খুব সহজে দখল করা যাবে না।

    ঝিনুককে কোলে নিয়েই চলতে শুরু করলেন হেমনাথ। বিরক্ত গলায় বললেন, তোকে নিয়ে আর পারি না ঝিনুক- হেমনাথের বিরক্তি যে স্নেহেরই আরেক নাম তা বলে দিতে হয় না।

    হেমনাথ আগে আগে চলেছেন। সুরমারা তার পিছু পিছু এগুতে লাগলেন।

    যেতে যেতে হেমনাথ পেছন ফিরলেন। আলতো গলায় ডাকলেন, রমু–

    কী বলছ মামা? সুরমা উৎসুক চোখে তাকালেন।

    এই ঝিনুকটা, বুঝলি– গাঢ়, বিষাদময় স্বরে হেমনাথ বললেন, বড় দুঃখী রে, বড় দুঃখী–

    সুরমার চোখেমুখে উৎকণ্ঠা ফুটল। বললেন, দুঃখী! কেন?

    খুব আস্তে আস্তে হেমনাথ বললেন, পরে বলব। এসেছিস যখন সব জানতে পারবি।

    সুরমা আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।

    বার বছরের বিনু দুঃখী শব্দটা জানে। চকিতে সে একবার ঝিনুককে দেখে নিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়
    Next Article আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    ছোটগল্প – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.