Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    আহমেদ রিয়াজ লেখক এক পাতা গল্প114 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্ব

    এরপর আলেকজান্ডার আরো এগুতে চাইলেন। তার ইচ্ছে একেবারে ভারত অভিযানটাও সেরে ফেলবেন। কিন্তু এর মধ্যেই দেখা দিল নতুন দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বটা মেসিডোনিয়ার অনেক পুরনো একটি বিষয়। মেসিডোনিয়ার জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্ব।

    সুবিশাল সাম্রাজ্যের রাজা আলেকজান্ডার। তবু মেসিডোনিয়ানরা কথা বলত তাদের মাতৃভাষায়। আলেকজান্ডারের দেশের ভাষা মেসিডোনিয়ান। কিন্তু অনেক বয়স্ক গ্রিকরা এই ভাষা বুঝতে পারত না। আলেকজান্ডারের একজন জীবনীলেখক পুটার্কও নিশ্চিত করে জানান, আলেকজান্ডার তার দেশের সাধারন মানুষের ভাষাতেই কথা বলতেন। পুটার্ক লিখেছেন, তিনি তার দেহরক্ষীদের খাটি মেসিডোনিয়ান ভাষায় চিল্কার করে ডাকতেন। আর এ কারণেই তিনি কিছু বড় বড় ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলেন। এছাড়াও আলেকজান্ডার গ্রিক ভাষায় কথা বলতেন। তবে গ্রিক ভাষায় কথা বলতেন হােমারকে ভালোবেসে আর তার গুরু অ্যারিস্টটলকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। তারপরও তখন তার এমন কিছু আচরণ ছিল, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল যে তিনি গ্রিকদের খুব একটা সরল চোখে দেখেন না। একটি যুদ্ধের ঠিক আগের অবস্থা বর্ণনা করেছেন তার আরেক জীবনীলেখক কাটিয়াস। আলেকজান্ডারের দলে তখন নানান জাতির যোদ্ধাদের সমাবেশ। ভিন্ন ভিন্ন জাতির যোদ্ধাদের সেনাপতিদের সাথে আচরণগত পার্থক্য দেখিয়েছিলেন আলেকজান্ডার। তবে এই পার্থক্যটা ছিল একেবারেই মানসিক। জীবনীকার কার্টিয়াস রাফাস তৃতীয় আলেকজান্ডার গ্রন্থে একটি যুদ্ধের ঠিক আগের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেনঃ

    সৈন্যদের একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে তিনি (আলেকজান্ডার) তাদের নাম ধরে ডাকতে থাকলেন। সৈন্যরাও যে যেখানে ছিলেন সেখান থেকেই তাদের উপস্থিতি জানিয়ে দিলেন। আর যেসব মেসিডোনিয়ান তার সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং এখন এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে সেই সব মেসিডোনিয়ানদের খুব উৎসাহ ও সাহস দিলেন। এবং তিনি তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও তাদের প্রয়োজনীয়তা বার বার জানালেন। তারাই হচ্ছে পৃথিবীর মুক্তিদাতা। এবং একদিন তাদের নাম থাকবে হারকিউলিস ও প্যাটার লিবারের সাথে। একদিন তারা ঠিকই পৃথিবী জয় করবে। ব্যাকট্রিয়া এবং ভারত হবে মেসিডোনের প্রদেশ। তারপর গ্রিকদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মনে করিয়ে দিলেন ওরাই তাকে গ্রিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উত্তেজিত করে তুলেছিল। এরাই তাদের প্রাসাদ আর শহর পুড়িয়েছিল। আর ইলিরিয়ান ও ট্রাকিয়ারদের বলতেন লুটেরার দল। তিনি তাদের শত্রুপক্ষের জ্বলজ্বলে সোনার সারিও বলতেন।

    এত কিছুর পরও আলেকজান্ডার থেবস নগরী ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আর তার সাম্রাজ্যকে বলা হতো মেসিডোনিয়ান সাম্রাজ্য, গ্রিক সাম্রাজ্য নয়। তার বাহিনীতে যেখানে মেসিডোনিয়ান যোদ্ধা ছিল ৩৫ হাজার, সেখানে গ্রিক যোদ্ধার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭ হাজার ছয়শ।

    এশিয়ার বিশাল অংশ জয় করার পরে আলেকজান্ডারের চালচলনেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে। আলেকজান্ডার তার রাজদরবারে আসতেন পারসিয়ান ঐতিহ্যের পোশাক পরে। তাছাড়া তার দরবারের সাজসজ্জাও ছিল পারস্যের ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে। পারসিয়ান রীতি—নীতিও প্রচলিত ছিল তার দরবারে। তার মধ্যে প্রস্কিনেসিস ছিল একটি। এই রীতিতে অভিজাত নাগরিকের হাতে চুমু খেতে হয়। এই রীতিটা গ্রিকরা পছন্দ করত না।

    আলেকজান্ডার চাইতেন ইউরোপিয়ানরা যাতে এশীয়দের শিষ্টাচারের প্রতি নমনীয় হয়। বিশেষ করে রাজার সামনে যাতে অন্তত এশীয় রীতি—নীতি পালন করা হয়। তার গ্রিক রাজদরবারেও এই রীতি থাকা উচিত বলে তিনি জানিয়ে দেন। কিন্তু মেসিডোনিয়ানরা এসব সমর্থন করত না। পারসিয়ান পোশাক পরা রাজার সামনে আসতেও অস্বস্তি বোধ করত তারা।

    খৃষ্টপূর্ব ৩৩০ অব্দ। আলেকজান্ডারের কিছু সেনাপতি তাকে মারার পরিকল্পনা করল। এর প্রধান কারণই ছিল, এশীয়দের মতো তার আচরণ। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেল। চক্রান্তকারীদের গুরু ছিলেন তার অশ্বারোহী বাহিনীর কমান্ডার ফিলোটাস। ফিলোটাস আলেকজান্ডারের বন্ধুদের একজন ছিলেন। আলেকজন্ডার তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে আলেকজান্ডার আসলে ফিলোটাসকে হত্যা করেছেন। এর একটা গোপন কারণও ছিল। এই গোপন কারণের বুদ্ধি তিনি তার গুরু অ্যারিস্টটলের কাছ থেকে নিয়েছিলেন।

    চক্রান্তকারীদের মধ্যে তার বাহিনীর উচচপদস্থ অনেক সেনাকর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন। আলেকজান্ডার তাদেরও শাস্তি দিলেন। এ ছাড়াও তার বাহিনীর যে—ই তার জীবনের জন্য হুমকি বলে তিনি মনে করেছিলেন, অভিযোগ না থাকলেও তাকেই বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছিলেন। এটা এক ধরনের বরখাস্ত করা।

    আলেকজান্ডার মনের অজান্তেই মেসিডোনিয়ান ভাষায় কথা বলতেন। অনেক পণ্ডিতের মতে মেসিডোনিয়ান হচ্ছে একেবারে আলাদা একটি ইন্দোইউরােপিয়ান ভাষা। মেসিডোনিয়ান ভাষার উচ্চারণ শুনলেই স্পষ্ট বোঝা যায় প্রাচীন গ্রিক উচ্চারণ থেকে অনেক দূরের ভাষা এটি। তবে এই ভাষার উচ্চারণের সাথে ট্রাসিয়ান এবং ইলিরিয়ান ভাষার উচ্চারণ অনেক কাছাকাছি।

    এক অনুষ্ঠানে আলেকজান্ডার হত্যা করেছিলেন মেসিডোনের এক সেনাপতি ক্লেটিয়াসকে। আলেকজান্ডার তাকে বর্শা নিয়ে তাড়া করেছিলেন।

    আলেকজান্ডারের গ্রিক সেনাকর্মকর্তাদের একজন ছিলেন ক্যালিসথেনেস। তিনি ছিলেন অ্যারিস্টটলের ভাইয়ের ছেলে। তার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল। চক্রান্তকারীদের একজন হিসেবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন আলেকজান্ডার । তবে তার বন্ধুদের কথা প্রায়ই তিনি বলতেন। তাদের জন্য শোক করতেন। আবার কখনো হুমকিও দিতেন, একদিন নিজেই আত্মহত্যা করবেন।

    আসলে আলেকজান্ডার তখন অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। তার মেজাজ সবসময়ই রুক্ষ থাকত।

    কিছু কিছু ইতিহাসবিদ এসব ঘটনার সাথে ভিন্নমত দেন। তাদের মতে আলেকজান্ডার যখন আফগানিস্তান পর্যন্ত গিয়ে ভারত অভিযানে যেতে চাইছিলেন, তখনই কিছু সৈনিক বেঁকে বসেছে। এদের মধ্যে সাধারন সৈনিকের চেয়ে সেনাপতিরাই আপত্তি জানাচ্ছিল বেশি। আবার বেশিরভাগ মেসিডোনিয়ান সেনাপতিরই আপত্তি ছিল আরো অভিযানে। কারণ সুদীর্ঘ সময় ধরে তারা দেশের বাইরে। পরিবার পরিজনের সাথে দেখা নেই ছয় বছরেরও বেশি সময়। আলেকজান্ডারের রাজ্য জয়ের অভিযান তো তারাই শুরু করেছিল। তাদের পরেই অন্যান্য অঞ্চলের সৈনিকরা আলেকজান্ডারের বাহিনীতে আসে। সুতরাং তারাই আর সাম্রাজ্য বাড়ানোর পক্ষে নয়।

    কিন্তু আলেকজান্ডার সুবিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও তার রাজ্য জয়ের তৃষ্ণা তখনও মেটেনি। তিনি ছটফট করছেন ভারত অভিযানের জন্য। এদিকে মেসিডোনিয়ান সৈনিকদের প্ররােচনায় সৈনিকদের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে। এ অবস্থায় যে কোনো অভিযান বিপজ্জনক। বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে তার বাহিনী। এই বাহিনী নিয়ে কোনো যুদ্ধ জয় সম্ভব নয়। কী করবেন ঠিক ভেবে উঠতে পারছেন না আলেকজান্ডার।

    বন্ধু হেফাস্টিয়নের সাথে গোপনে আলোচনা করলেন। তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে জানার পর, হেফাস্টিয়ন ছাড়া আর কাউকে তার বিশ্বাস নেই।

    আলেকজান্ডার আক্ষেপ করে বললেন, কী বিশাল সাম্রাজ্য আমাদের। এই সাম্রাজ্যকে আরো বড় করার সুযোগ আমাদের সামনে। অথচ বোকাগুলো আমার বিরুদ্ধেই কি না ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। তা—ও আবার আমারই স্বদেশীগুলো হচ্ছে সবচেয়ে পাজি। এখন আমি কী করি হেফাস্টিয়ন?

    হেফাস্টিয়ন তখন রাজার প্রধান পরামর্শদাতা। কারণ একমাত্র হেফাস্টিয়নকেই রাজা পুরোপুরি বিশ্বাস করেন। হেফাস্টিয়ন কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। তারপর বললেন, আমিও কিছু ভাবতে পারছি না। এ সময় যদি অ্যারিস্টটল থাকতেন।

    তখনই বিদ্যুত খেলে গেল আলেকজান্ডারের মাথায়। আরে তাই তো! শুরু অ্যারিস্টটলের কথা তো তার মনে নেই। অ্যারিস্টটল এখন আছেন এথেন্সে। তার কাছ থেকে বুদ্ধি আনা যায়।

    আলেকজান্ডার হেফাস্টিয়নকে বললেন, তুমি যাও না বন্ধু অ্যারিস্টটলের কাছে। আমার জন্য সবচেয়ে ভালো পরামর্শটা নিয়ে এসো।

    হেফাস্টিয়ন বললেন, সগডিয়ান থেকে এথেন্স অনেক দূর। তাহলে আমাকে অনেকদিন আপনার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। এখানে আপনি একা হয়ে যাবেন। আপনাকে একা রাখা ঠিক না। আমি গেলে অনেকেই সন্দেহ করতে পারে। আমাদের পুরো পরিকল্পনাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে । তারচেয়ে বিশ্বস্ত কোনো সৈনিককে পাঠালে ভালো হয়।

    আলেকজান্ডারেরও মনে ধরল কথাটা। সে রাতেই বিশ্বস্ত এক সৈনিককে পাঠালেন এথেন্স, অ্যারিস্টটলের আস্তানায়।

    কয়েকমাস পর সে সৈনিক হাজির হলেন অ্যারিস্টটলের বাড়ি। আলেকজান্ডারের বার্তা পৌছে দিলেন অ্যারিস্টটলের কাছে। এবং তার পরামর্শের আশায় বললেন, আমাদের মহামান্য রাজা জানতে চেয়েছেন এখন তিনি কী করবেন?

    অ্যারিস্টটল কেবল মন দিয়ে সৈনিকের কথা শুনলেন। কিন্তু কোনো কথা বললেন না। কিছুক্ষণ পর অ্যারিস্টটল হঠাৎ বাগানে চলে গেলেন। সৈনিকও তার পিছন পিছন গেলেন। ভাবলেন এই বুঝি জবাব দেবেন অ্যারিস্টটল। সৈনিকটি দেখলেন অ্যারিস্টটল তার বাগানে ঢুকে গাছপালা ছাঁটতে শুরু করে দিলেন বিশাল বড় এক ছুরি দিয়ে। গাছের বড় বড় ডালগুলো তিনি কেটে ফেললেন, যাতে ছোট ডালগুলো পর্যাপ্ত আলো—বাতাস পায়। তারপর হেঁটে ফেলা ডালগুলো বাগানের এক কোনায় নিয়ে জড় করে মাটিতে পুঁতে দিলেন। মুখে বললেন, এগুলো একসময় ভালো সার হবে।

    বলেই আবার এসে বসলেন নিজের বসার ঘরে। সৈনিকটিও তার পিছন পিছন এসে বসলেন। তখন অ্যারিস্টটল তার কাছে জানতে চাইলেন, আমার কাছে কি তোমার আর কিছু জানার আছে?

    সৈনিকটি বললেন, আমাদের মহামান্য রাজা যা জানতে তার জবাবের অপেক্ষায় আছি আমি।

    অ্যারিস্টটল মুচকি হেসে বললেন, রাজার প্রশ্নের জবাব তো দেয়া হয়ে গেছে।

    অবাক হলেন সৈনিক। দেয়া হয়ে গেছে! কখন! অ্যারিস্টটল তো কোনো জবাবই দেননি। তাহলে কখন দিলেন জবাব? বিনীত হয়ে বললেন, হুজুর। আমি তাহলে আমাদের মহামান্য রাজাকে জবাবে কী বলবো?

    অ্যারিস্টটল বললেন, কিছুই বলতে হবে না। কেবল আমি যা যা করেছি, তার সবটুকু খুলে বলবে। ওতেই চলবে। এবার যাও। ওদিকে এতদিনে কী হয়েছে কে জানে।

    ফিরতি পথ ধরলেন সৈনিক। ফিরে এলেন কয়েকমাস পর। বিশ্রামও নিলেন না। সোজা চলে এলেন আলেকজান্ডারের কাছে। তাকে দেখেই আলেকজান্ডার জানতে চাইলেন, আমার গুরুর কাছ থেকে কী পরামর্শ নিয়ে এসেছ শুনি?

    সৈনিক থতমত খেয়ে গেলেন আলেকজান্ডারের কথা শুনে। তিনি তো কোনো জবাব আনতে পারেননি। কোনো রকমে বললেন, হুজুর আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি তার কাছ থেকে কোনো জবাব আনতে পারিনি।

    আরেকজান্ডার বললেন, কেন, তার সাথে তোমার দেখা হয়নি?

    সৈনিক বললেন, হয়েছে হুজুর। তিনি আমার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো জবাব দেননি।

    আলেকজান্ডার রেগে উঠতে শুরু করেছেন। একে তো তার বাহিনীর মধ্যে তাকে হত্যা করার চক্রান্ত চলছে, তারওপর তিনি ভারত জয় না করে ফিরবেন। নানান দুশ্চিন্তায় তার মাথা সবসময় গরম থাকত। প্রচণ্ড বদমেজাজে থাকতেন তিনি। কাউকেই তার বিশ্বাস হয় না। আলেকজান্ডারের মনে হলো এই সৈনিক তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে না তো? তার গুরুর কাছ থেকে পরামর্শ এনে সেটা তার চক্রান্তকারীদের কাছে ফাঁস করে দেয়নি তো আবার!

    আলেকজান্ডার ভালো মতো তাকালেন সৈনিকটির দিকে। দীর্ঘ পথশ্রমে ক্লান্ত। মনে হয় না কোথাও থেমেছে। ওদিকে মেসিডোনের কিছু সৈনিক পার্থিয়ার দিকে যাত্রা করেছে। তিনি জানেন চক্রান্তকারীদের যত দূরে রাখা যায় ততই ভালো। ওরাই আবার সৈনিকের কাছ থেকে কিছু জেনে নিয়েছে কি নিশ্চিত হতে চাইলেন। বললেন, পথে কোথাও থেমেছিলে?

    সৈনিক বললেন, কোথাও থামিনি। একটানা পথ চলেছি। কেবল মহান অ্যারিস্টটলের বাড়িতে কিছুক্ষণ থেমেছিলাম। আপনার কথাগুলো তাকে গুছিয়ে বলার জন্যই থামতে হয়েছিল। নইলে ওটুকুও থামতাম না। কিন্তু তিনি তো কোনো পরামর্শই দিলেন না।

    আলেকজান্ডার ভাবলেন তবে কি তার গুরুও তার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের পক্ষে? তাহলে কি তিনি পক্ষত্যাগ করেছেন? গ্রিক হয়ে একজন মেসিডোনিয়ান রাজার বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না? তিনিও তাকে ঈর্ষা করছেন? তবু কেন যেন গুরু অ্যারিস্টটলের এমন স্বভাব মেনে নিতেই পারছেন না তিনি।

    আলেকজান্ডার বললেন, তিনি তোমাকে কোনো কথাই বলেননি?

    সৈনিকটি বললেন, না হুজুর। তিনি আমাকে কোনো কথাই বলেননি। কেবল আমার কথা শুনেছেন। আমি ফেরার সময় যখন জানতে চাইলাম আমাদের মহামান্য রাজার জন্য কী জবাব নিয়ে যাবো, তিনি বলেছিলেন জবাব তো দেয়া হয়ে গিয়েছে। অথচ তিনি আপনার প্রশ্নের কোনো জবাবই দেননি।

    নাহ! ব্যাপারটা বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছে। আলেকজান্ডারের কৌতূহল হচ্ছে খুব। তিনি আবার জানতে চাইলেন, আর কী কী বলেছেন তিনি?

    সৈনিকটি বলল, তিনি বাগানে গিয়ে অবশ্য একটা কথা বলেছিলেন। তার আগে তিনি আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে সোজা বাগানে চলে গেলেন। বাগানে গিয়ে গাছের বড় বড় ডাল কাটলেন। তারপর হলুদ পাতাঅলা বড় বড় ডালগুলো মাটিতে পুঁতে দিয়ে বললেন, এগুলো পঁচে সার হবে। ব্যস, এটুকুই। বলেই তিনি আবার বসার ঘরে এসে বসে রইলেন। আমি আবারও জবাব জানতে চাইলাম। তখনই তিনি বললেন, জবাব তো দেয়া হয়ে গেছে। কেবল আমি যা যা করেছি তা খুলে বলবে। তারপরই আমাকে পাঠিয়ে দিলেন।

    এবার খুশিতে ভরে ওঠল আলেকজান্ডারের মন। সত্যি কি কৌশলে জবাব দিয়েছেন গুরু অ্যারিস্টটল। তিনি নিজে যতটুকু হুশিয়ার, তার গুরু তার চেয়ে বেশি হুশিয়ার। তিনি যদি কোনো জবাব দিতেন কিংবা জবাব জানিয়ে চিঠি লিখতেন তবে তা চক্রান্তকারীদের কাছে প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর যদি দূত হিসেবে যাওয়া এই সৈনিকটি চক্রান্তকারীদের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। সব পরিকল্পনা ফাস হয়ে যেত। কী দারুণভাবে জবাব দিলেন বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। বড় বড় ডাল মানে হচ্ছে বুড়ো সেনাপতি আর সৈনিক। বুড়ো ডালপালা হেঁটে দেয়ার মানে হচ্ছে প্রবীণ সৈনিকদের সরিয়ে দাও। কচি আর ছোটডালগুলোর আলো—বাতাস দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ওদের জায়গায় তরুণদের বসাও। আর বড় ডালগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার অর্থ হচ্ছে চক্রান্তকারীদের নিশ্চিহ্ন করে দাও যাতে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে চক্রান্তকারীদের পরিণাম কী হতে পারে। গুরুর প্রতি মনে মনে অশেষ শ্রদ্ধা জানালেন আলেকজান্ডার। সৈনিককে নিদের্শ দিলেন, এবার তুমি বিশ্রাম করতে যাও। কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবে অ্যারিস্টটলকে দেখতে গিয়েছিলে রাজার পক্ষ থেকে।

    বন্ধু হেফাস্টিয়নকে তখনই ডেকে পাঠালেন আলেকজান্ডার। তার সাথে পরামর্শ করলেন অ্যারিস্টটলের পাঠানো সাংকেতিক বার্তা নিয়ে।

    এরপরই আলেকজান্ডার তার বাহিনীর বয়স্ক সৈনিকদের সরিয়ে দিলেন। প্রবীণ সেনাপতিদের বরখাস্ত করলেন। বাদ গেলেন না পারমেনিয়নও। আলেকজান্ডারের নির্দেশে পারমেনিয়েনকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আর যারা তার প্রাণবিনাশী সেনাপতি ছিল, তাদের মৃত্যুদণ্ড দিলেন নানা উপায়ে। প্রবীণ সেনাপতিদের জায়গায় যোদ্ধাদের থেকেই তরুণদের সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবার শৃঙ্খলা ফিরে এল তার বাহিনীতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তরুণ সেনাপতিরা যুদ্ধের জন্য ছটফট করতে লাগলেন। আলেকজান্ডার বুঝলেন, এবার তার ভারত জয় করার সময় হয়েছে। কাজেই তিনি যাত্রা শুরু করলেন ভারত অভিযানে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ
    Next Article কমিউনিকেশন হ্যাকস – আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিক

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }