Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    আহমেদ রিয়াজ লেখক এক পাতা গল্প114 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ভারত অভিযান

    আলেকজান্ডার ভারতে প্রবেশ করেন খৃষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দের বসন্তে। এসে পৌছান ইন্ডাজ নদের তীরে। এই ইন্ডাজ নদই হচেছ সিন্ধুনদ। তার ভূগোলবিদরা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, ভারতের ওপারেই মহাসাগর। তারপরে আর কিছুই নেই। ওই মহাসাগরই পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। যদিও পারস্য সাম্রাজ্যের মতো ভারত অতো বড় ছিল না, তবে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন আলেকজান্ডার ভারতীয় উপমহাদেশের সত্যিকার আকার সম্পর্কে জানতেন না। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভারত জয় করতে পারলেই পুরো পূর্ব দুনিয়া তার অধীনত হবে।

    ভারতে এসেই আলেকজান্ডার আমন্ত্রণ জানালেন গান্ধারার সকল গোষ্ঠীপ্রধানকে। গোষ্ঠীপ্রধানদের বললেন তার অধীনতা মেনে নিতে এবং তাকে ন্যায়সম্মতভাবে তাদের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিতে। টাক্সিলার শাসক আম্ভি (গ্রিক নাম অফিস) আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন। সিন্ধুনদ থেকে ঝিলম পর্যন্ত ছিল আম্ভির বিশাল রাজত্ব। কিন্তু কিছু পাহাড়ী গোষ্ঠী আলেকজান্ডারের বশ্যতা মেনে নিল না। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্যাম্বোজার অ্যাসপাসই এবং অ্যাসকেনই। এদের ভারতীয় নাম ছিল অ্যাশভানাস এবং অ্যাশকাভানাস।

    আলেকজান্ডার নিজে ঢালরক্ষী বাহিনী, পদাতিক বাহিনী, অশ্বারোহী বাহিনী এবং অশ্বারোহী বল্লমবাহিনীর সেনাপতির দায়িত্ব নিলেন। তাদের নেতৃত্ব দিলেন ক্যাম্বোজার একগুঁয়ে গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। অ্যাসপাইরা থাকত কুনার বা অ্যালিশাং উপত্যকায়, গরিয়ানরা থাকত গরিয়াস উপত্যকায় আর অ্যাসকেনইরা থাকত সোয়াত ও বানার উপত্যকায়। আলেকজান্ডারের বাহিনীর জন্য এসব পাহাড়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব দুরূহ ছিল। বিশেষ করে তারা যখন দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন তো আরো কঠিন হয়ে পড়ল সেই দুর্গ দখল করা। কারণ দুর্গগুলো ছিল খুবই সুরক্ষিত। তবু লড়াই চালিয়ে গেলেন আলেকজান্ডার। অ্যাসপাইদের হারাতে গিয়ে কাঁধে প্রচণ্ড সপসইদের ৪০ হাজার মানুষকে ক্রিতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিলেন।

    অন্যদিকে অ্যাসকেনইরা আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে লড়াই করল বিশাল এক বাহিনী নিয়ে। তাদের বাহিনীতে ছিল ৩০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য, ৩৮ হাজার পদাতিক সৈন্য এবং ৩০টি হাতি। তারা বীরবিক্রমে লড়াই করল আলেকজান্ডারের বাহিনীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অরা, বাজিরা এবং মাসাগার মতো নগরগুলোকেও তাদের সাথে মিলে লড়াইয়ের আবেদন জানাল। মাসাগা দুর্গে আলেকজান্ডারের বাহিনীর সাথে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী লড়াই হলো। এই লড়াইয়ে আলেকজান্ডার তার হাঁটুতে তীরের আঘাত পান। মাসাগার শাসক এই যুদ্ধে মারা যান। আলেকজান্ডার ভাবলেন মাসাগা তার অধীনত হয়েছে। কিন্তু মাসাগার যোদ্ধারা আলেকজান্ডারের অধীনতা এত সহজে মেনে নেননি। তারা মাসাগার শাসকের মায়ের কাছে গিয়ে তাদের নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। মাসাগার শাসকের মা ক্লিওফিস শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত বর্বর মেসিডোনদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। লড়াই করতে করতে একসময় মাসাগার পুরুষ যোদ্ধার সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই যুদ্ধে মারা যায়। তাতেও দমেননি ক্লিওফিস। উপত্যকার বিভিন্ন লােকালয় থেকে নারী যোদ্ধা জোগাড় করে লড়াই চালিয়ে গেলেন।

    আলেকজান্ডার বেশ হতাশ হলেন। মাসাগার শাসকের মৃত্যুর পর তিনি ভেবেছিলেন এই পাহাড়ী উপত্যকা তিনি জয় করেছেন। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর লড়াই চালিয়ে যাওয়া দেখে তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। যুদ্ধনীতি অনুসারে কোনো নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নীতি বিরুদ্ধ ছিল। নারীদের যুদ্ধ করতে দেখেই তিনি মাসাগায় ঢুকে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, শহরের ব্যাপক ক্ষতিও করলেন। নগরীতে যত ভবন ছিল, সব গুড়িয়ে দিলেন। এরপর অরায় অ্যাসকেনিয়ানদের আরেকটি দুর্গেও চালালেন ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ।

    অরা ও মাসাগায় আলেকজান্ডারের হত্যাযজ্ঞ থেকেও কিছু অ্যাসকেনিয়ান পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন অরনসের এক উঁচু পাহাড়ী দুর্গে। আলেকজান্ডার সেখানেও গেলেন তাদের ধাওয়া করে। কিন্তু পাহাড়ী এলাকায় তাদের কারো চিহ্ন খুঁজে পেলেন না। চোখের নিমেষে যেন তারা হারিয়ে গেল। খুঁজে পেলেন না পাহাড়ী দুর্গও। নাছোড়বান্দা আলেকজান্ডার। ঠিকই তাদের খুঁজে বের করলেন পায়ের চিহ্ন ধরে ধরে। চারদিনের এক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর দখল করলেন দুর্গম অরনসের পাহাড়ী দুর্গ। অরনসের দুর্গও রেহাই পায়নি আলেকজান্ডারের নির্মম হত্যাযজ্ঞ থেকে। এখানেও মারা গেল প্রচুর উপজাতি পাহাড়ী মানুষ।

    আলেকজান্ডারের নির্মমতা কতখানি ভয়ঙ্কর ও হিংস্র ছিল, সেটা জানা যায় তার জীবনীলেখক ভিক্টর হ্যানসনের লেখা থেকে। ভিক্টর হ্যানসন লিখেছেন, লড়াইয়ে হারার পর অ্যাসাকেনিয়ানরা শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণ করে। তবু আলেকজান্ডার আত্মসমর্পণকারী যোদ্ধাদের রেহাই দেননি। নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঠিক একইভাবে হত্যা করেছেন অরা এবং অরনসে আত্মসমর্পণকারী যোদ্ধাদের। ঝড় বইয়ে দিয়েছেন এসব পাহাড়ী দুর্গে। প্রত্যেকটা দুর্গের সেনানিবাসেই রক্তবন্যা বয়েছে।

    অরনস জয় করার পর, সিসিটেককে অরনসের প্রাদেশিক শাসক বানালেন আলেকজান্ডার। এই সিসিটেক অরনস অভিযানে আলেকজান্ডারকে সাহায্য করেছিলেন।

    খৃষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে আলেকজান্ডার সিন্ধুনদ পাড়ি দেন। সিন্ধু পার হলে পাঞ্জাব এলাকা। এ এলাকা শাসন করতেন রাজা পুরু। গ্রিকরা বলত পুরাস। রাজা হিসেবে পুরু ছিলেন খুবই প্রভাবশালী। লম্বায় সাতফুট এবং কঠিন শাসক। যোদ্ধা হিসেবেও রাজা পুরুর সুনাম ছিল।

    হাইডাসপাস নদীর কিনারে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ ঘটালেন রাজা পুরু। আলেকজান্ডারও এমন একটা জায়গায় তার সৈন্য সমাবেশ করালেন, যাতে গ্রিকসৈন্যদের যুদ্ধ করতে কষ্ট না হয়। কিন্তু রাজা পুরু এই যুদ্ধে এগিয়ে ছিলেন একটা দিক থেকে তিনি হাতি নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিলেন।

    যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেই গ্রিক সৈন্যদের দিকে এগিয়ে গেল হাতি। পায়ের তলায় পিষে মারতে লাগল মেসিডোনিয়ান ও গ্রিক সৈন্যদের। হাতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসহায় হয়ে পড়ে আলেকজান্ডারের বাহিনী। দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে তারা। বেশ বিশৃঙ্খল হয়ে যায় সুশিক্ষিত আলেকজান্ডারের বাহিনী। একপ্রকার পরাজয়ের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় দুঃসাহসী আলেকজান্ডারের দল।

    আলেকজান্ডার আলোচনায় বসলেন হেফাস্টিয়নের সাথে। জানতে চাইলেন কী করা যায়?

    হেফাস্টিয়নও বুঝতে পারছেন না, এই বিশাল হস্তিবাহিনীর সাথে কেমন করে যুদ্ধ করা যায়। তবে একটা বুদ্ধি দিলেন। আলেকজান্ডার তার দলে সব ধরনের মানুষ রাখতেন। ডেকে পাঠালেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের। তখনই শুরু হলো বর্ষা কাল। এই বর্ষায় নদীর দুকূল প্লাবিত হতে শুরু করল । আলেকজান্ডারের বাহিনীর দুর্ভোগ আরো বাড়ল। কারণ বর্ষার সাথে তাদের কোনো পরিচয় ছিল না। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরাও তাই কোনো পরামর্শ দিতে পারলেন না। ভারতীয় আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাষ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ওই অবস্থাতেই লড়াই চালিয়ে গেলেন আলেকজান্ডার এবং ঘুরে দাঁড়ালেন। আর ঘুরে দাঁড়িয়েই হারিয়ে দিলেন রাজা পুরুকে। রাজা পুরুর দুই ছেলেকে হত্যা করলেন। রাজা পুরুর সাথে সন্ধিও করে ফেললেন। এর ফলে সিন্ধু নদীর ওপারে পাঞ্জাব পর্যন্ত আলেকজান্ডারের রাজত্ব বিস্তৃত হলো। পুরুর সাহসিকতায় মুগ্ধ হলেন আলেকজান্ডার এবং তার এই প্রদেশের শাসনকর্তা বানিয়ে দিলেন। এতে বরং রাজা পুরুর শাসনকৃত অঞ্চল আরো বেড়ে গেল। কারণ রাজা পুরুর যতখানি রাজত্ব ছিল, আলেকজান্ডার আরো কিছু অঞ্চল জয় করে পুরো এলাকার শাসনভার তাকেই দিয়েছিলেন।

    রাজা পুরুর সাথে আলেকজান্ডারের এ লড়াই হাইডাইসপাসের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই হাইডাসপাসই হচ্ছে এখনকার ঝিলম নদী। এই যুদ্ধেই আলেকজান্ডার তার অতি এক আপনজনকে হারান। সে হচ্ছে বুকাফেলাস। এই বুকাফেলাসের পিঠে চেপেই আলেকজান্ডার গ্রিস ও এশিয়া জয় করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন তার বাহিনীর অশ্বারোহী যোদ্ধাদের। প্রতিটা যুদ্ধেই বুকাফেলাস ছিল তার সাথে। কাজেই বুকাফেলাসের মৃত্যুতে গভীর শােকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। আর এখানেই বুকাফেলাসের নামে দুটো নগর মিলে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন নগরের নাম দেন বুকাফেলিয়া।

    এরপরও আলেকজান্ডারের বাহিনী সিন্ধুনদ ধরে বিভিন্ন অঞ্চল জয় করতে করতে পুরুর রাজ্যের আরো পূর্বে চলে এলো। একেবারে গঙ্গা নদী পর্যন্ত। গঙ্গার এ অঞ্চলের তখনকার রাজা ছিলেন নন্দ বংশের রাজা মাগধা বা মগধ। গঙ্গা পাড়ি দিলেই মাগধা রাজার রাজত্ব। আলেকজান্ডার তার সৈন্যদের গঙ্গা পাড়ি দেয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু এই কদিনে ভারতীয় যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ে মেসিডোনিয়ানরা। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল জয় করতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। সবচেয়ে কঠিন কঠিন যুদ্ধ হয়েছে ভারতে। ভারতের আগে অন্য কোনো অঞ্চল তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ এতটা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। যদিও তারা সবকটি যুদ্ধেই জয়ী হয়েছে। তবু ভবিষ্যতে এরচেয়ে আরো কোনো ভয়ানক প্রতিরোধের মুখে যে পড়তে হবে না, সেটা কেউ বলতে পারে না। ভারত সম্পর্কে তাদের আভিধানিক জ্ঞান খুবই অল্প। নেই বললেই চলে। আর আলেকজান্ডার ভারতকে ঠিক যতখানি বিশাল ভেবেছিলেন, বাস্তবে তারচেয়েও বড় ছিল।

    ততদিনে বর্ষা শেষ হয়ে এল। আলেকজান্ডার তার বাহিনীর উদ্দীপনা জোগাতে ব্যর্থ হলেন। সত্যিই তারা খুব পরিশ্রান্ত ছিল। হাইফাসিস নদীর কাছে এসে তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে বসল। তারা আরো পূর্বে যেতে অসম্মতি জানালো। কারণ তারা জানে না এর শেষ কোথায়? রাজা পুরুর সাথে ভয়ানক লড়াইয়ের পর তার সৈনিকদের সাহস কমে গিয়েছিল। তবু অক্লান্ত চেষ্টায় কোনো রকমে রাজি করিয়ে ২০ হাজার পদাতিক এবং দুই হাজার অশ্বারোহী যোদ্ধার সমাবেশ করেছিলেন গঙ্গার তীরে। কিন্তু যখন তাদের গঙ্গা পাড়ি দিতে নির্দেশ দিলেন, তখনই তারা আরো হিংস্র হয়ে ওঠল। সরাসরি প্রতিবাদ জানাল। তারা আগেই জেনে নিয়েছিল গঙ্গা বত্রিশ ফার্লং চওড়া এক বিশাল নদী। এর গভীরতা একশ ফ্যাদম। শুধু তাই নয়, এর অপর পার তখন ছেয়ে গিয়েছিল অসংখ্য পদাতিক যোদ্ধা, অশ্বারোহী যোদ্ধা এবং হাতিতে। গাঙ্গোত্রি অববাহিকার সকল রাজা তাদের সমাবেশ করিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল আশি হাজার অশ্বারোহী যোদ্ধা, দুই লাখ পদাতিক যোদ্ধা, আট হাজার রথ এবং ছয় হাজার হাতি। এই বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হতে চাইছিল না কেউ। দিনের পর দিন মেসিডোনিয়ান যোদ্ধাদের প্রশংসা করে আলেকজান্ডারের কোনো বক্তব্যেই কাজ হলো না। শেষ পর্যন্ত আলেকজান্ডার তার এক সেনাপতি কয়েনাসের সাথে বৈঠকে বসলেন। আলেকজান্ডারও বুঝতে পারলেন তার বাহিনীর মনোবল একেবারেই ভেঙে গেছে। কাজেই তিনি তাদের ফিরতি পথ ধরার নির্দেশ দিলেন। তবে ফিরতি পথ ধরলেন ভারতের দক্ষিণ দিয়ে। যদিও তিনি ভেবেছিলেন তিনি পথিবীর একেবারে দক্ষিণ কিনারে চলে এসেছেন। তার ধারণা ছিল তারা প্রায় সাগরের কাছাকাছি রয়েছেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে আলেকজান্ডার তখন পাঞ্জাবে ছিলেন। পাঞ্জাবেই তার সৈন্যরা বিদ্রোহ করে বসে। সিন্ধু নদেই আলেকজান্ডার একটি যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করান। এই যুদ্ধজাহাজে করে অ্যাডমিরাল নিরকাসের নেতৃত্বে অর্ধেক সৈন্য পাঠিয়ে দিলেন পারস্য উপসাগরের দিকে। তাদের নির্দেশ দিলেন সিন্ধুর উৎসমুখ হয়ে পারস্য উপসাগরের মাথায় যেতে। ওই পথটা মেসিডোনিয়ানদের অজানা ছিল। আর নিজে স্থলপথে বাকি সৈন্যসামন্ত নিয়ে রওনা দিলেন বর্তমান বেলুচিস্তানের দিকে। এই পথে যেতে যেতে তিনি সাক্ষাৎ পেলেন ভারতীয় দার্শনিকদের। তখনকার ভারতীয় দার্শনিক বলতে ব্রাহ্মণদেরই বোঝাত। এই ব্রাহ্মণরা তখন রাজত্বের কারণে বিখ্যাত ছিলেন। তাদের সাথে দর্শন নিয়ে তর্ক করতেন। আর তখনই তিনি ভারতীয়দের কাছে একজন বিখ্যাত দার্শনিক ও দুঃসাহসী বীরযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেলেন। তিনি ঢুকে পড়লেন ভারতীয় লোককাহিনীতে। তবে অন্য নামে।

    এভাবে চলতে চলতে একসময় তিনি মালি গোষ্ঠীর গ্রামের কাছে চলে এলেন। তার দলের কে একজন তখন এই মালিদের গল্প করছিল আলেকজান্ডারের কাছে। দক্ষিণ এশিয়ায় তখনকার ভারতীয় গোষ্ঠীদের মধ্যে মালিরা ছিল সেরা যুদ্ধবাজ। যুদ্ধবাজ মালিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসাহী হলেন আলেকজান্ডার। হঠাৎ আক্রমণ করে বসলেন মালিদের। প্রচণ্ড লড়াই হলো মালিদের সাথে। মালি তীরন্দাজদের একটি তীরের আঘাতে ভয়াবহ আহত হলেন তিনি। তীরটি আলেকজান্ডারের বুক ভেদ করে ফুসফুসে ঢুকে পড়েছিল। গল গল করে রক্ত বেরুচ্ছিল তার বুক থেকে। মেসিডোনিয়ান যোদ্ধারা ভেবেছিল তাদের রাজা নিহত হয়েছেন। এতে আরো হিংস্র হয়ে পড়ে তারা। মালি গ্রাম তছনছ করে দেয়। ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায় মালিদের ওপর। তাদের রোষানল থেকে মালি যোদ্ধারা তো রেহাই পায়—ই নি, বাদ যায়নি সাধারন পুরুষ, নারী আর শিশুরাও। শেষ পর্যন্ত আলেকজান্ডারের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে মালি। মালি থেকে তার সেনাপতিরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এই মালিই হচ্ছে বর্তমান মুলতান।

    মালি জয় করে জেনারেল ক্রিটারাসের নেতৃত্বে রওনা দেন কারমেনিয়ার দিকে। এই কারমেনিয়া হচ্ছে বর্তমানে ইরানের দক্ষিণাঞ্চল। এরপর তারা পাড়ি দেন আরো পশ্চিমে ভয়ঙ্কর গেডরোসিয়ান মরুভূমি। গেডরোসিয়ান মরুভূমি বর্তমানে ইরানের পশ্চিমাঞ্চল এবং পাকিস্তানের মাকরানের কিছু অংশ।

    সিন্ধু অঞ্চলের জন্য তার রাজত্বের প্রাদেশিক শাসক নিযুক্ত করেন এক সেনাপতি পিথিয়নকে। পরবর্তী দশ বছর অর্থাৎ খষ্টপর্ব ৩১৬ অব্দ পর্যন্ত পিথিরাস এখানকার শাসনকর্তা ছিলেন। দশ বছর পর পাঞ্জাবের শাসনভার চলে যায় ইয়োডোমাসের কাছে। এর আগেই খৃষ্টপূর্ব ৩২১ অব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য গ্রিক প্রাদেশিক শাসকদের হারিয়ে ভারতে মৌর্য সাম্রাজ্যের পত্তন করেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ
    Next Article কমিউনিকেশন হ্যাকস – আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিক

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }