Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মা – আনিসুল হক

    লেখক এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৮. মা

    ১৮
    আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ৷ মালিবাগের বাসা থেকে তারা চলে এসেছে তেজকুনিপাড়ায় আরেকটু ভালো বাসায় ৷ মালিবাগের বাসাটা একেবারেই যা-তা ছিল ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি আজাদ চেষ্টা করছে একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে ৷
    ক্লাস করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় সে ৷ ক্লাস করে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয় ৷ ব্যবসা থেকে অল্প-বিস্তর টাকা আসছে ৷ ফলে তার বন্ধুদের অনেকের চেয়েই সে সচ্ছল ৷ স্টেডিয়ামে প্রভিন্সিয়াল হোটেলে গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ানোর বেলায় তার নামটাই আগে আসে ৷ এ কারণে বন্ধুদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাও আছে ৷
    ফারুক বলে, ‘চল দোস্তো, বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে যাই ৷’
    ‘ক্যান ? ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কী ?’
    ‘ফাংশান আছে ৷ লেখক সংঘের অনুষ্ঠান ৷’
    ফারুকের আবার লেখালেখির বাতিক আছে ৷ সে লেখক সংঘের অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হতে চায় না ৷
    আজাদ বলে, ‘লেখকদের ফাংশানে গিয়ে আমি কী করব ? আমি তো লেখক না ৷ আমি বড়জোর দলিল লেখক সমিতির মেম্বার হতে পারি ৷’
    ‘আরে মেয়ে আসবে অনেক ৷ চল যাইগা ৷’
    মেয়ে দেখার লোভেই আজাদ, ফারুক, ওমর-সবাই মিলে বিকালে গিয়ে হাজির হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ৷ পাকিস্তান লেখক সংঘের আয়োজনে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে ৷ পাঁচ দিন ধরে হবে ৷ অনুষ্ঠানের নাম মহাকবি স্মরণ উৎসব ৷ রবীন্দ্রনাথ, ইকবাল, গালিব, মাইকেল মধুসূদন আর নজরুলকে নিয়ে একেক দিন অনুষ্ঠান হবে ৷ আজকে পালিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ দিবস, আগামীকাল ইকবাল দিবস, পরশু ৭ই জুলাই ১৯৬৮ গালিব দিবস, ৮ই জুলাই মাইকেল দিবস আর ৯ই জুলাই নজরুল দিবস পালিত হবে পরপর ৷
    বর্ষাকাল ৷ আজকে সারা দিন বৃষ্টি হয়নি, তবে আকাশে মেঘ থাকায় গরমটা বেশি লাগছে ৷
    আজাদরা যখন ঢোকে তখন আনিসুজ্জামান প্রবন্ধ পড়ছেন ৷ ফারুক মন দিয়ে বক্তৃতা শোনে ৷ আনিসুজ্জামান চমৎকার শাদা খদ্দরের পাঞ্জাবি পরে এসেছেন ৷ তাঁকে দেখতেও লাগছে নায়কের মতো ৷ ফারুক আনিসুজ্জামানের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ ৷ যেমন সুলিখিত, তেমনি সুপঠিত ৷ আনিসুজ্জামানের গলার স্বরও মাশাল্লাহ লা-জবাব ৷ রবীন্দ্রনাথ যে বাংলা ভাষাটাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁর কোনোই সন্দেহ নাই ৷ তবে প্রবন্ধের দিকে তেমন মন নাই আজাদের ৷ সে উসখুস করে ৷ ওমর বলে, ‘দোস্তো, বাম দিক থাইকা তিন নম্বর মাইয়াটারে দেখ ৷’
    বক্তৃতা শেষ ৷ এবার ঘোষকের আগমন ৷ উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন আতিকুল ইসলাম ৷ তিনি বলেন, ‘এবার আবৃত্তি করবেন গোলাম মুস্তাফা ৷’ করতালিমুখর হয়ে ওঠে মিলনায়তন ৷ গোলাম মুস্তাফা সিনেমার নায়ক ৷ টিভিতেও নাটক করেন ৷ তাঁকে অনেকে চেনে ৷
    গোলাম মুস্তাফা না দেখেই রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ আবৃত্তি করতে থাকেন ৷
    প্রথমে তিনি আবৃত্তি করেন প্রশ্ন ৷ ‘ভগবান তুমি দূত পাঠায়েছ বারে বারে দয়াহীন সংসারে…’ এই কবিতাটা তেমন বড় নয় ৷ তারপর তিনি শুরু করেন পৃথিবী ৷ ‘আজ আমার প্রণতি গ্রহণ করো, পৃথিবী, শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে…’ এত বড় কবিতা তাঁর মুখস্থ! এ যে দেখছি শ্রুতিধর ৷ ভদ্রলোক আবৃত্তি করেনও ভালো ৷ আজাদের মনটা ভালো হয়ে যায় ৷ ওমর উঠে একবার সামনে গিয়ে আবার ফিরে আসে ৷ তার চোখে যে মেয়েটা পড়েছে, তাকে সামনে থেকে দেখাটাই বোধ করি তার উদ্দেশ্য ৷ গোলাম মুস্তাফার আবৃত্তি শেষ হলে আজাদ বলে, ‘চল যাই ৷ গরম ৷’
    ফারুক বলে, ‘মনিরুজ্জামান আর সিকান্দার আবু জাফরের আবৃত্তিটা শুনে গেলে হয় না ৷’
    ‘হয় ৷’ ওমর ফিরে এসে বলে ৷ সে মেয়েটাকে কেমন দেখল তার রিপোর্ট পেশ করার জন্যে জিভ গোল করে তালুতে একটা শব্দ করে ৷ মানে, দোস্তো, জিনিসটা জব্বর ৷
    অনুষ্ঠান শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এসে তারা দেখে বৃষ্টি পড়ছে ৷ ‘মুশকিল হলো তো’-আজাদ বলে ৷
    বর্ষাকাল, বৃষ্টি তো হবেই ৷ ফারুক অবলীলায় বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে দাঁড়ায়, ‘চলে আয়, ভিজতে ভিজতে যাই ৷’
    ওমর বলে, ‘না আরেকটু থাকি ৷’ হলের বাইরে ছাদের নিচে গাদাগাদি ভিড় ৷ সেখানে সে দাঁড়িয়ে থাকে ৷ বোধহয় ওই মেয়েটাও ওখানেই দাঁড়িয়ে ৷
    বৃষ্টি দেখে আজাদের মনটা একটু খারাপ হয় ৷ কেন খারাপ হয় সে জানে না ৷ বোধহয় জানে ৷ তার মিলির কথা মনে পড়ছে ৷ মেয়েটা পাকিস্তানে কোথায় পড়ে আছে, কে জানে! কেনই বা সে তার জীবনে এল, কেনই বা এভাবে হারিয়ে গেল ৷ আজাদ ফারুকের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়-’চল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যাই ৷’
    ‘চল ৷ আরে আমি তো তা-ই বলছি ৷ ভিজে গিয়ে সর্দি বাধাই যদি, তুই ব্রান্ডি খাওয়াবি ৷ ব্যস’-ফারুক বলে ৷
    ‘এই ওমর চলে আয়’-আজাদ ডাকে ৷ বন্ধু দুজন তাকে ফেলেই চলে যাওয়ার উদ্যোগ করেছে দেখে ওমরও তাদের পিছু নেয় ৷
    ‘কী ব্যাপার, তুই আমাদের সাথে আসলি যে’-আজাদ বলে ৷
    ‘তোরা বেটা ভিজতে ভিজতে রওনা দিলি কেন ? একটা রিকশা তো অন্তত পাওয়া যাইত’-ওমর বলে ৷
    ‘তিনজনে এক রিকশায় উঠলে ভিজতেই হতো’-আজাদ বলে ৷
    ‘তুই আসলি ক্যান ৷ ওই মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তারপরে আসতি’-ফারুক বলে ৷
    ‘মেয়ে ? কোন মেয়ে ?’ ওমর বিস্মিত হওয়ার ভাব দেখায় ৷
    ‘ওই যে তোর হেভি জিনিস’-আজাদ মনে করিয়ে দেয় ৷
    ‘আরে না ৷ আমি একটা বুকলেট পাইছি ৷ সেইটার জন্যে দেরি করতেছিলাম ৷ ওইটা ভিজাইতে চাই না’-ওমর বলে ৷
    ‘কী বুকলেট ?’ ফারুক জানতে চায় ৷
    ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আদালতে দেওয়া শেখ মুজিবের জবানবন্দি’-ওমর বলে ৷
    ‘আরেব্বাস ৷ এটা এত তাড়াতাড়ি বই হইয়া বার হইয়া গেছে ৷ দেখি’-ফারুক বলে ৷
    ‘না ৷ বৃষ্টিতে ভিজাতে চাই না ৷ পরে দেখিস’-ওমর নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেয় ৷
    বৃষ্টি থেমে যায় ৷ তারা দৌড়ে একটা বারে ঢোকে ৷ বেয়ারা তোয়ালে এনে দেয় ৷ আজাদ ব্রান্ডির অর্ডার দেয় ৷ প্রথম প্রথম ঘরটা বেশ অন্ধকার লাগছিল ৷ ধীরে ধীরে তারা ধাতস্থ হলে চারপাশ পরিষ্কার দেখা যায় ৷ বেয়ারা পানীয় পরিবেশন করে ৷ তারা চিয়ার্স বলে গেলাস উঁচিয়ে আরম্ভ করে ৷ ব্রান্ডির গেলাসে চুমুক দিতে দিতে ওমর বলে, ‘এই, মাথার ওপরের লাইটটা জ্বালাও ৷’ আলো খানিকটা বেড়ে গেলে সে পেটের কাছে কাপড়ের নিচে গচ্ছিত রাখা বুকলেটটা বের করে শেখ মুজিবের জবানবন্দি পড়তে থাকে ৷ একটু পরে তরলের মাত্রা একটু বেশি হলে সে জোরে জোরে পড়া শুরু করে দেয় ৷ বলে, ‘দোস্তো, শেখ সাহেবরে অ্যারেস্ট করার ডিসক্রিপশনগুলা খুবই ইন্টারেস্টিং ৷ ‘৫৮ সালের পর থাইকা আইয়ুব আমলে শেখ সাহেব তো দুই দিনও জেলের ভাত না খাইয়া থাকে নাই ৷’
    ‘এই দ্যাখ : ১৯৫৮ সালের ১২ই অক্টোবর তাহারা পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সে আমাকে গ্রেফতার করে এবং দেড় বৎসরকাল বিনা বিচারে আটক রাখে ৷ আমাকে এইভাবে আটক রাখাকালে তাহারা আমার বিরুদ্ধে ছয়টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করে, কিন্তু আমি ঐসব অভিযোগ হইতে সসম্মানে অব্যাহতি লাভ করি… ১৯৬২ সালে বর্তমান শাসনতন্ত্র জারির প্রাক্কালে যখন আমার নেতা মরহুম শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হয়, তখন আমাকেও জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স বলে কারান্তরালে নিক্ষেপ করা হয় এবং প্রায় ছয় মাস বিনা বিচারে আটক রাখা হয়…
    ‘আমার প্রতিষ্ঠান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ছয় দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং দেশের উভয় অংশের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণের অনুকূলে জনমত যাচাই ও গঠনের জন্য ছয় দফার পক্ষে জনসভা অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হয় ৷
    ‘ইহাতে প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য সরকারী নেতৃবৃন্দ ও সরকারী প্রশাসনযন্ত্র আমাকে ‘অস্ত্রের ভাষা’য় ‘গৃহযুদ্ধ’ ইত্যাদি হুমকি প্রদান করে এবং একযোগে এক ডজনেরও অধিক মামলা দায়ের করিয়া আমাকে হয়রানি করিতে শুরু করে ৷’
    ফারুক বলে, ‘এই বেটা, তুই কি এখন পুরা বইটা পড়বি নাকি! শালা মাতালের কাণ্ড দ্যাখো ৷’
    ওমর বলে, ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব ৷ এই জায়গাটা মোস্ট ইন্টারেস্টিং ৷ খালি গ্রেপ্তার আর জামিন আর গ্রেপ্তার ৷ হয়রানি কাকে বলে ৷ আরে বেটা শোন না, ১৯৬৬ সালের এপ্রিলে আমি যখন খুলনায় একটি জনসভা করিয়া যশোর হইয়া ঢাকা ফিরিতেছিলাম তখন তাহারা যশোরে আমার পথরোধ করে এবং আপত্তিকর বক্তৃতা প্রদানের অভিযোগে ঢাকা হইতে প্রেরিত এক গ্রেফতারি পরোয়ানাবলে এইবারের মতো প্রথম গ্রেফতার করে ৷’
    আজাদ মনে হয় একটু বেশি খেয়ে ফেলেছে ৷ তার মাথা ঝিমঝিম করছে ৷ শেখ মুজিব তো সারা প্রদেশ ঘুরে দুই পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য ভালোই তুলে ধরছেন, আর তাঁর বক্তৃতা শুনলে গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়, মনে হয় এক্ষুনি দেশ স্বাধীন করতে না পারলে আর মুক্তি নাই, কিন্তু তাতে কি ? আজাদ কি তার মিলিকে ফিরে পাবে ? মিলি কেন পাকিস্তানেই রয়ে গেল ? মিলিকে কিন্তু সে কোনো দিন মুখফুটে বলেনি যে তাকে তার ভালো লাগে ৷ বরং মিলিই বলেছিল ৷ বলেছিল, খালাকে বলেছি আপনার কথা ৷ তার মানে মাকেও বলা হয়ে গেল… কী বলা হলো… আপনার কথা ? আপনার কথাটা কী ? এই যে আপনার আমার সম্পর্ক… মিলি, আমাকে তোমার কেমন লাগে ? কেমন লাগত আসলে ? তাহলে একবার ‘বিদায়’ বলে যাবে না ? এভাবে… ‘বেয়ারা… আরেক পেগ…’
    ওমর পড়েই চলেছে শেখ সাহেবের জবানবন্দি… ‘আমাকে যশোরের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থিত করা হইলে তিনি আমাকে অন্তবর্তীকালীন জামিন প্রদান করেন ৷ আমি ঢাকার সদর দক্ষিণ মহকুমা প্রশাসকের সম্মুখে উপস্থিত হইলে তিনি আমার জামিনে অসম্মত হন, কিন্তু মাননীয় দায়রা জজ প্রদত্ত জামিনবলে আমি সেইদিনই মুক্তি পাই এবং নিজগৃহে গমন করি ৷ সেই সন্ধ্যায়ই আটটায় পুলিশ পুনরায় আপত্তিকর বলিয়া কথিত এক বক্তৃতার উপর সিলেট হইতে প্রেরিত এক গ্রেফতারি পরোয়ানাবলে আমার বাসগৃহ হইতে আমাকে গ্রেফতার করে ৷ পুলিশ সেই রাত্রেই আমাকে সিলেট লইয়া যায় ৷ পরদিন প্রাতে আমাকে আদালতে উপস্থিত করা হইলে সিলেটের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট আমার জামিনের আবেদন বাতিল করিয়া আমাকে কারাগারে প্রেরণ করেন ৷ পরদিন সিলেটের মাননীয় দায়রা জজ আমাকে জামিন প্রদান করেন ৷’
    আজাদ বলে, ‘আরে এ তো খালি গ্রেফতার করে আর ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দেয় না, আবার দায়রা জজ জামিন দেয়, আবার পরদিন গ্রেফতার করে… এই একই কথা তুই আর কত পড়বি…’
    ‘পড়েন স্যার পড়েন ৷’ আশপাশে সব বেয়ারা ভিড় করে শুনছে ৷ বারের খদ্দেররাও আশপাশের টেবিলে বসে কান খাড়া করে আছে শেখ মুজিবের জবানবন্দি শোনার জন্যে ৷ আরে এ তো মুশকিল হলো ৷
    ওমর পড়ে চলে, ‘কিন্তু মুক্ত হইবার পূর্বেই পুলিশ পুনরায় আপত্তিকর বলিয়া কথিত এক বক্তৃতা প্রদানের অভিযোগে আমাকে কারা দরজায়ই গ্রেফতার করে ৷ এবারের গ্রেফতারি পরোয়ানা মোমেনশাহী হইতে প্রেরণ করা হইয়াছিল ৷ সেই রাত্রে পুলিশ পাহারাধীনে আমাকে মোমেনশাহী লইয়া যাওয়া হয় এবং একইভাবে মোমেনশাহীর মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট আমার জামিন প্রদানে অস্বীকৃত হন…’
    ‘এবং পরের দিন জেলা দায়রা জজ আমাকে জামিন প্রদান করেন ৷ ঠিক ?’ ফারুক বলে ৷
    ‘ঠিক’-ওমর সায় দিয়ে গেলাস হাতে নিয়ে চুমুক দেয় ৷
    ‘তারপর স্যার ?’ বেয়ারা বলে ৷
    ‘১৯৬৬ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে-সম্ভবত ৮ই মে, আমি নারায়ণগঞ্জে এক জনসভায় বক্তৃতা করি এবং রাত্রে ঢাকায় নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করি ৷ রাত একটায় পুলিশ ডিফেন্স অফ রুল-এর ৩২ ধারায় আমাকে গ্রেফতার করে ৷ একই সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠানের বহুসংখ্যক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়… ইহাদের মধ্যে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহাম্মদ… বড় তালিকা পইড়া শেষ করন যাইব না ভাইসব…’ ওমরের মুখ দিয়ে থুতু ছিটে বের হয়ে ফারুকের গায়ে পড়লে সে একটা চাপড় মারে ওমরের পিঠে, ওমর দুই পৃষ্ঠা গ্রেফতারের তালিকা পার হয়ে পড়ে : অধিকন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক ইত্তেফাককেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে…. তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে দীর্ঘকালের জন্য কারারুদ্ধ রাখিয়া তাহার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করে… প্রায় ২১ মাস আটক রাখিবার পর ১৯৬৮ সালের জানুয়ারীর ১৭/১৮ তারিখে রাত একটার সময় আমাকে তথাকথিত মুক্তি দেওয়া হয় এবং কারাগারের ফটক হইতে কতিপয় সামরিক ব্যক্তি দৈহিক বল প্রয়োগ করিয়া আমাকে ঢাকা সেনানিবাসে লইয়া আসে এবং একটি রুদ্ধ কক্ষে আটক রাখে…
    হঠাৎ একজন বেয়ারা এসে ওমরের কানের কাছে মুখ নামায়, ফিসফিস করে বলে, ‘স্যার, টিকটিকি স্যার, বইটা লুকায়া ফেলেন… ৷’ সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতারা সব নিজ নিজ গেলাস নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার অভিনয় শুরু করে ৷
    ফারুক বলে, ‘চল দোস্তো কাইটা পড়ি ৷’
    তারা বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, আজ বোধহয় ঢাকা ভেসেই যাবে ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাগানবাড়ি রহস্য – আনিসুল হক
    Next Article মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }