Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মা – আনিসুল হক

    লেখক এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. মা

    ৩
    তখনও আদমজীর বাড়ি হয়নি ৷ বাওয়ানির বাড়িও ছিল খুব বিখ্যাত, কিন্তু সেটা আজাদদের ইস্কাটনের বাড়ির তুলনায় ছিল নিষ্প্রভ ৷ আজাদের বাবা ইউনুস চৌধুরী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, টাটা কোম্পানিতে চাকরি করতেন, ছিলেন বোম্বেতে, কানপুরে, কলকাতায় ৷ কানপুরেই জন্ম হয় আজাদের ৷ ইউনুস চৌধুরী আর সাফিয়া বেগমের একটা মেয়ে হয়েছিল, তার নাম ছিল বিন্দু, কিন্তু সে বেশি দিন বাঁচেনি ৷ বসন্ত কেড়ে নিয়েছিল তার জীবন ৷ প্রথম মেয়েকে হারিয়ে সাফিয়া বেগম অনেকটা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন, ফলে তাঁর কোলে যখন আজাদ এল, তিনি আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো করে আগলে রাখতে শুরু করলেন ছেলেকে ৷ আজাদের একটা ছোট ভাইও হয়েছিল পরে, বিক্রমপুরে, কিন্তু সাত দিনের মাথায় সেও মারা যায় আঁতুড়ঘরেই ৷ ফলে আগে-পরে আজাদই ছিল সাফিয়া বেগমের একমাত্র সন্তান ৷ অন্ধের যষ্টি বাগধারাটা আজাদ আর তার মায়ের বেলায় প্রয়োগ করা যেতে পারত ৷ আজাদ ছিল পাকিস্তানের প্রায় সমবয়সী, তবে আজাদই একটু বয়োজ্যেষ্ঠ ৷ তাঁর জন্ম হয় ১১ই জুলাই, ১৯৪৬ ৷ আজাদি আজাদি বলে যখন পাগল হয়ে উঠেছিল সারা ভারতবর্ষ, তখনই আজাদের জন্ম বলে তার নাম রাখা হয় আজাদ ৷ ১৯৪৭-এর আগস্টে ভারত-পাকিস্তান দুটো দেশ আলাদা হওয়ার পর বোম্বে থেকে চৌধুরী সাহেব চলে আসেন ঢাকায় ৷ নিয়তির হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে চলে আসেন তিনি ৷ আসবার ইচ্ছা তেমন ছিল না তাঁর, কিন্তু সাফিয়া বেগম জন্মভূমি ফেলে রেখে অন্য দেশে রয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না একেবারেই ৷ ইউনুস চৌধুরী বিক্রমপুরের ছেলে, মেদিনীমণ্ডল গ্রামে তাঁর পৈতৃক নিবাস ৷ টাটা কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় এসে ইউনুস চৌধুরী ব্যবসা শুরু করেন ৷ নানা ধরনের ব্যবসা ৷ যেমন সাপ্লাই আর কন্ট্রাকটরি ৷ প্রভূত উন্নতি করেন তিনি, বিষয়-সম্পত্তি বাড়তে থাকে অভাবনীয় হারে ৷ লোকে বলে, ইউনুস চৌধুরীও বলে বেড়ান, এসবের মূলে ছিল একজনের সৌভাগ্য : আজাদের মা ৷ বউয়ের ভাগ্যেই সৌভাগ্যের সিংহদুয়ার খুলে যায় চৌধুরীর ৷ যদিও তাত্তি্বকেরা এ রকম ব্যাখ্যা দিতে পারে যে, পাকিস্তান কায়েম করাই হয়েছিল মুসলমান মুৎসুদ্দি ও উঠতি ধনিকদের স্বার্থকে নিরঙ্কুশ করার জন্যে, সে-সুযোগ কাজে লাগান ইউনুস চৌধুরী; তবু, চৌধুরী নিজেই তাঁর বৈষয়িক উন্নতির জন্য তাঁর স্ত্রীর ভাগ্যকে মূল্য দিতেন ৷ আসলে, এটা দৃষ্টিগ্রাহ্য যে, বিয়ের পরই ধীরে ধীরে ভাগ্য খুলতে থাকে তাঁর ৷ ইউনুস চৌধুরী যে কানপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়েছেন, তার টাকা যুগিয়েছেন সাফিয়া বেগম ৷ ঢাকায় আসার পর তিনি যে ব্যবসাপাতি শুরু করেন, তারও প্রাথমিক মূলধন যুগিয়েছিলেন সাফিয়া বেগমই, বাবার কাছ থেকে বিয়ের সময় পাওয়া গয়নার কিয়দংশ বিক্রি করে ৷ পাকিস্তানে চলে আসার পর আস্তে আস্তে আজাদের বাবা হয়ে ওঠেন ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, চিত্তরঞ্জন কটন মিলের চেয়ারম্যান, একুয়াটি শিপিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ৷ একটা কাস্টম ফোর্ড গাড়ি ছিল তাঁর ৷ গাড়ির নম্বর ছিল ইপিডি ৪৩৪৯ ৷ জনশ্রুতি আছে যে, ইরানের শাহ পাহলভি যখন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন, তখন তাঁর গাড়ি হিসাবে ব্যবহারের জন্য ইউনুস চৌধুরীর গাড়ি সরকার ধার নিয়েছিল ৷ এ রকমও শোনা যায়, প্রিন্স ফিলিপ শিকারে এসে আজাদদের বাসায় উঠেছিলেন ৷ ভিন্নমতও শোনা যায়, না ঠিক বাসায় ওঠেননি, চৌধুরীর গাড়িটা প্রিন্সের জন্যে ধার নিয়েছিল সরকার, আর আজাদের বাবা তাদের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন ৷
    যা-ই হোক না কেন, আজাদের বাবা ছিলেন এই শহরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি ৷
    আর আজাদদের ইস্কাটনের বাড়িটা ছিল শহরের সবচেয়ে দর্শনীয় বাড়ি ৷ বহু লোক শুধু বাড়ি দেখতেই এ ঠিকানায় আসত ৷
    স্মৃতিচারণকারীদের মনে পড়ে যায়, এই বাড়ির একটা রেকর্ড রয়ে গেছে ৩৫ মিলিমিটার সেলুলয়েডে ৷ ডাকে পাখি, খোলো আঁখি, দেখো সোনালি আকাশ, বহে ভোরের বাতাস-সিনেমার এই গানটা শুটিং হয়েছিল এই বাসাতেই ৷ টেলিভিশনের ছায়াছবির গানের অনুষ্ঠানে এটা অনেকবার দেখানো হয়েছে ৷
    সিনেমার ওই গানের অংশটা খেয়াল করে দেখলেই বোঝা যাবে বড় জব্বর ছিল ওই বাড়িটা ৷
    আজাদ ছিল বাড়ির একমাত্র ছেলে ৷
    আর আজাদের মা সাফিয়া বেগম ছিলেন বাড়ির সুখী গৃহিণী ৷ ছোটখাটো মানুষটার শাড়ির আঁচলে থাকত চাবি ৷ তিনি বাড়িময় ঘুরে বেড়াতেন ৷ আর আল্লার কাছে শোকর করতেন ৷ জাহানারা ইমামের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরোয়-আজাদের মাকে তিনি দেখেছেন এ রকম : ‘ভরাস্বাস্থ্যে গায়ের রঙ ফেটে পড়ছে, হাতে-কানে-গলায় সোনার গহনা ঝকমক করছে, চওড়া পাড়ের দামি শাড়ির আঁচলে চাবি বাঁধা, পানের রসে ঠোঁট টুকটুকে, মুখে সব সময় মৃদু হাসি, সনাতন বাঙালির গৃহলক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি ৷’
    ইউনুস চৌধুরী সেদিন বলেছেন, ‘ওগো শুনছ, আজাদের মা! বাড়িটা আমি তোমার নামেই রেজিস্ট্রি করিয়েছি ৷ এ বাড়ির মালিক তো তুমি ৷’
    সাফিয়া বেগম রাগ করেছেন ৷ ‘আমি বিষয়-সম্পত্তির কী বুঝি ? এটা আপনি কী করেছেন ? না না ৷ আপনার বাড়ি আপনি নিজের নামে রেখে দিন ৷’
    ইউনুস চৌধুরী হেসে উঠেছেন ৷ ছাদ কাঁপানো হাসি ৷ ‘তুমি তো আমার আছই ৷ তাইলে বিষয়-সম্পত্তিও আমার আছে ৷ কেন, ফরাশগঞ্জের বাড়িও তো আমি তোমার নামে রেখেছি ৷ হা-হা-হা ৷’ তারপর হাসি থামিয়ে বলেছেন, ‘তোমার বরাতেই আমার বরাত খুলেছে ৷ বাড়িটা তোমার নামেই রাখাটা ন্যায্য ৷’
    স্বামীর কথা শুনে আশ্বস্ত বোধ করলেও কী এক অজানা আশঙ্কায় সাফিয়া বেগমের মনটা তবু যেন কেন কেঁপে উঠেছে ৷ বেশি সম্পত্তির মালিক হওয়া ভালো নয় ৷ টাকা-পয়সা বেশি হলে মানুষ বদলে যায় ৷ আর আজাদের বাবা লোকটা দেখতে এত সুন্দর-তিনি লম্বা, তাঁর গাত্রবর্ণ ফরসা, গাঢ় ভুরু, উন্নত কপাল, উন্নত নাক, উজ্জ্বল চোখ, ভরাট কন্ঠস্বর-সব মিলিয়ে তিনি এমনি যে মেয়ে-মাত্রই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য ৷ আরেকটা ছবি, হয়তো অকারণেই, সাফিয়া বেগমের মনের পটে মাঝে মধ্যে উদিত হতে থাকে ৷ বোম্বে থাকতে ইউনুস চৌধুরী একটা মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন কৃষ্ণের চরিত্রে, একদিকে রাধা, অন্যদিকে অনেকগুলো গোপিনী কৃষ্ণের জন্যে প্রাণপাত করছে, এই দৃশ্য প্রেক্ষাগৃহের সামনের আসনে বসে দেখেছিলেন সাফিয়া বেগম, বহুদিন আগে, কিন্তু এ দৃশ্যটা মাঝে মধ্যেই দুঃস্বপ্নের মতো তাঁকে তাড়া করে ফেরে ৷
    এই বাড়ি এত বড়, তবু যেন মনে হয় ফরাশগঞ্জের বাড়িই ভালো ছিল ৷ তিনতলার ও-বাড়িটা এত জাঁকজমকঅলা নয়, কিন্তু যেন ওই বাড়িটাতে তিনি নিজেকে খুঁজে পেতেন ৷ ইস্কাটনের বাড়িটা বাড়াবাড়ি রকমের বড় ৷ এটায় নিজেকে কেমন অথৈ বলে মনে হয় ৷ তাই তো তিনি চাবি আঁচলে বেঁধে বাড়িময় ঘুরে বেড়ান ৷ চাকর-বাকর, মালি-বাবুর্চি, দারোয়ান-ড্রাইভার মিলে বাড়ি সারাক্ষণই গমগম করছে ৷ আর আছে আত্মীয়স্বজন, আশ্রিতরা ৷ বাড়িতে রোজ রান্না হয় ৫০ জনের খাবার ৷ তাদের কে কী খায়, না খায়, এসব দিকেও খুবই খেয়াল রাখেন আজাদের মা ৷ আল্লাহতায়ালা তাঁদের দু হাত ভরে দিয়েছেন, সেখান থেকে আল্লাহর বান্দাদের খানিকটা দেওয়া-থোয়া করলে তো তাঁদের কমছে না, বরং ওদেরও হক আছে এসবের ওপর ৷
    ফরাশগঞ্জের তিনতলা বাড়িটাই যেন তাঁর বেশি প্রিয় ছিল বলে মনে হয় ৷ ওখান থেকে আজাদের স্কুলও ছিল কাছে ৷ আজাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল ইনফ্যান্ট ক্লাস থেকেই ৷ একেক দিন একেক পোশাক আর জুতো-মোজা পরে সে যখন স্কুলের দিকে রওনা হতো, ছেলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সাফিয়া বেগমের চোখে অশ্রু এসে যেত ৷ আনন্দের অশ্রু, মায়ার অশ্রু ৷ ছেলেটা দেখতেও হয়েছে মাশাল্লাহ চোখজুড়োনো ৷ নিজের ছেলে বলে কি তাকে বেশি সুন্দর দেখছেন ? না ৷ ফরসা, লম্বা, নাকটা টিকালো, চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ ৷ স্বাস্থ্যও মাশাল্লাহ ভালো ৷ কাছেই বুড়িগঙ্গা ৷ স্টিমারের শব্দ শোনা যেত ৷ রাত্রিবেলা যখন স্টিমারের সিটির আওয়াজ আসত কানে, কিংবা সার্চ লাইটের বিক্ষিপ্ত আলোয় হঠাৎ হঠাৎ ঝলকে উঠত আকাশ, বাড়ির ছাদ, মাওয়ার সারেং পরিবারের মেয়ে সাফিয়া বেগমের মনটা নিজের অজান্তেই চলে যেত তাঁর শৈশবের দিনগুলোতে ৷ তাঁদের মাওয়ার বাড়িতে ছিল নতুন টিনের চকচকে বড় বড় ঘর, তাতে নানা নকশা কাটা, টিনের চালে টিন-কাটা মোরগ, বাতাসে ঘুরছে আর বাতাসের দিক বলে দিচ্ছে ৷ দূর থেকে লোকে দেখতে আসত তাদের পৈতৃক বাড়িটা ৷ তাঁর বাবার সারেং হওয়ার কাহিনীটাও কিংবদন্তির মতো ভাসছে মাওয়ার আকাশে-বাতাসে : তাঁর বাবা ভাগ্যান্বেষণে উঠে পড়েছিলেন এক ব্রিটিশ জাহাজে, স্টিম ইঞ্জিনচালিত জাহাজ ৷ কী কারণে ব্রিটিশরা তাঁকে ছুড়ে ফেলেছিল গনগনে কয়লার আগুনে, তারপর তাঁকে ফেলে দিয়েছিল সমুদ্রের জলে, কিন্তু তিনি মারা যাননি ৷ তখন ব্রিটিশ নাবিকেরা বলাবলি করতে লাগল, এই ছেলে যদি বাঁচে, তাহলে সে একদিন কাপ্তান হবে ৷ অগি্নদগ্ধ শরীরটাকে নিয়ে আসা হলো মাওয়ায়, তাঁকে ডুবিয়ে রাখা হতো কেঁচোর তেলে, মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তোলা হতো কেঁচো আর কেঁচো, তখন সারেংবাড়ির আশপাশে লোকজনের প্রধান কাজ দাঁড়িয়ে যায় কোদাল হাতে খুরপি হাতে মাটি খোঁড়া আর কেঁচো ধরা, বড় বড় চাড়িতে কেঁচো সব কিলবিল করছে, মোটা কেঁচো, চিকন কেঁচো, লাল কেঁচো, কালচে কেঁচো, সেসব পিষে তৈরি করা হচ্ছে তেল, আর সেই তেল দু বেলা মাখা হতো আজাদের নানার শরীরে, এই আশ্চর্য ওষুধের গুণে তিনি বেঁচে যান, সেরে ওঠেন এবং শেষতক ফিরিঙ্গিদের ভবিষ্যদ্বাণীকে অব্যর্থ প্রমাণ করে হয়ে ওঠেন জাহাজের কাপ্তান ৷ ধনসম্পদের মালিক হন, মাওয়ার সবচেয়ে দর্শনীয় বাড়িটার অধিকারী হন ৷ সারেংবাড়ির মেয়ে হিসাবে সাফিয়া বেগমের মাথা সব সময় উঁচুই ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে হবে, মাওয়ার দিনগুলোতে, বিয়ের আগে, নিজের বিবাহোত্তর জীবনের যে সুখ-সম্পদময় ছবি সাফিয়া কল্পনা করতেন, নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সওদাগরি বড় নৌকাগুলোর দিকে তাকিয়ে যে বিত্তবৈভবশালী সওদাগর বরের কথা তিনি ভাবতে পারতেন, বিয়ের রাতে বিশেষভাবে রিজার্ভ করা লঞ্চে করে শ্বশুরবাড়ি বিক্রমপুর যাওয়ার পথে নদীর বাতাস চুলে-মাথায়-ঘোমটায় মাখতে মাখতে যে ঐশ্বর্যময় ভবিষ্যতের ছবি তিনি আঁকতে পেরেছিলেন, তার জঙ্গিতম সংস্করণের চেয়েও আজ তিনি পেয়েছেন বেশি ৷ এই বোম্বে কানপুর, এই ঢাকার ফরাশগঞ্জের বাড়ি, আবার ইস্কাটনে দুবিঘা জমির ওপর নিজের প্রাসাদোপম বাড়ি ৷
    তাঁরা ফরাশগঞ্জের বাড়িতে থাকতেই আজাদদের স্কুলে একটা মজার কাণ্ড ঘটেছিল ৷ ব্রাদার ফুল জেম তখন সেন্ট গ্রেগরির প্রিন্সিপ্যাল ৷ সে-সময় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন এক বিখ্যাত বাঙালি ৷ ভালো ছাত্র হিসাবে যাঁর নামডাক এখনও রয়ে গেছে কিংবদন্তি হিসেবে ৷ তাঁর ছেলে পড়ত সেন্ট গ্রেগরিতে ৷ গভর্নর সাহেব একদিন স্কুলের শিক্ষকসহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দাওয়াত করলেন নিজের বাসভবনে ৷ উদ্দেশ্য, তাঁদের ভালো করে খাওয়াবেন ৷ সে দাওয়াতে আজাদরাও ছিল আমন্ত্রিত ৷ ভোজনপর্ব যা হলো তা ঐতিহাসিকই বলা চলে ৷ তবে খেতে খেতে শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হলো গুঞ্জন ৷ কারণ গভর্নর জানাচ্ছেন, আজকের এই মজলিশের উপলক্ষ হলো তাঁর সেন্ট গ্রেগরিতে অধ্যয়নরত ছেলের ভালো ফল ৷ শিক্ষকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-গর্ভনরের ছেলে তো মোটেও ভালো ফল করেনি! তাহলে গভর্নর কেন এত বড় পার্টি এত ধুমধামের সাথে দিলেন ? পরে জানা গেল ঘটনার গোমর ৷ একই নামে দুজন ছাত্র আছে ক্লাসে ৷ এর মধ্যে অপরজনের রেজাল্ট খুবই ভালো ৷ গভর্নরের ছেলে সেই চমৎকার প্রগ্রেসিভ রিপোর্টটা তুলে দিয়েছে তার বাবার হাতে ৷ সেটা দেখেই বাবা উচ্ছ্বসিত হয়েছেন-বাহ্, এক বছরেই ছেলের এত উন্নতি ৷ যাক, ছেলে তাঁর বাবার নাম রেখেছে ৷ কী সুখের বিষয়! দাওয়াত করো সবাইকে ৷ সেই দাওয়াত খেয়ে শিক্ষকদের সবার মনমেজাজ অন্তত এক মাস খারাপ ছিল ৷
    শুধু মন নয়, পেটও খারাপ ছিল ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাগানবাড়ি রহস্য – আনিসুল হক
    Next Article মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }