Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মা – আনিসুল হক

    লেখক এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩৩. মা

    ৩৩
    ২৫শে মার্চ রাতে সারাটা শহরে পাকিস্তান আর্মি কোন জাহান্নাম প্রতিষ্ঠা করেছে, তার বর্ণনা আস্তে আস্তে ঢাকাবাসী জানতে, বুঝতে, উপলব্ধি করতে শুরু করে ৷ ২৭শে মার্চ কারফিউ উঠিয়ে নেওয়ার পরে যারা রাস্তায় বেরোয়, তারা দেখতে পায় শুধু লাশ আর লাশ ৷ রাজারবাগের আশেপাশে যাদের বাসা ছিল, তারা ওই রাতে প্রত্যক্ষ করেছে, সারা রাত গুলির মধ্যে কোনো রকমে মাথা বাঁচিয়ে উপলব্ধি করেছে পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংসতা ৷ কামান মর্টার দিয়ে গোলা তো ছোড়া হয়েইছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে, চারদিক থেকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের ক্যাম্পে ৷ পানির ট্যাঙ্কে যে বাঙালি পুলিশ পজিশন নিয়েছিল, তারা মারা গেছে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ হয়ে ৷ আলতাফ মাহমুদের বাসা ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের খুব কাছে ৷ তাঁরা দেখতে পেয়েছিলেন সেই দোজখের খানিকটা ৷ ভোর হতে না হতে প্রতিরোধকারী বাঙালি পুলিশরা আর টিকতে না পেরে একজন-দুজন করে পালিয়ে যাচ্ছিল এদিক-ওদিক ৷ তাদেরই দুজন আসে আলতাফ মাহমুদের বাসায় ৷ তারা তাদের পোশাক খুলে সাধারণ লুঙ্গি-শার্ট ধার নিয়ে পরে অস্ত্র রেখে পালিয়ে যায় ৷ এ রকম পলায়নপর বাঙালি পুলিশদের আশ্রয় দিয়েছিল, পোশাক দিয়েছিল আশপাশের অনেক বাঙালি পরিবার ৷ নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর মনে আছে, ২৫শে মার্চ রাতে রাস্তায় গাছ কেটে, সুয়ারেজ পাইপ ফেলে তারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল ৷ ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে ট্যাঙ্ক, আরমার্ড কার নিয়ে আর্মি রাস্তায় নেমে আসে গুলি করতে করতে ৷ রাতের বেলা জোনাকি সিনেমা হলের কাছে হাসানের বাসায় আশ্রয় নেয় সে, সারা রাত রাজারবাগে পুলিশের সঙ্গে পাকিস্তানি আর্মির যুদ্ধ হয়, ভোরবেলা বাচ্চু বেবির বাসা হয়ে পল্টন লাইনের নিজের বাসায় ফিরছে গলিপথে, দেখতে পায় বাঙালি পুলিশরা পালিয়ে যাচ্ছে ৷ বাচ্চুদের কাছেও তারা অস্ত্র রেখে যায় ৷ তখনও ধোঁয়া উড়ছে শান্তিনগরে, রাজারবাগে, জোনাকির সামনে রাস্তায় লাশ পড়ে আছে ৷
    ২৬শে মার্চ ১৯৭১ ৷ বাইরে কারফিউ ৷ আজাদ আর বাশার বাসায় বসে আছে ৷ কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না ৷ মায়ের কঠোর নিষেধ, বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না ৷ জায়েদ উসখুস করছে, তার মতলব একবার গলির মুখে গিয়ে দেখে ঘটনা কী ? মাঝে মধ্যে ট্যা-ট্যা করে গুলির শব্দ ভেসে আসছে ৷ ছাদে গিয়ে তাকালে এদিকে-ওদিকে ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায় ৷ আবার গোলাগুলির শব্দ ৷ খুব কাছে থেকে আসছে শব্দ ৷ মনে হয় শেল এসে পড়ছে এই বাসারই ওপরে ৷ আজাদের মা দৌড়ে আসেন ৷ ‘আজাদ কোথায় ? আয় ৷ আয় ৷ শুয়ে পড় ৷ জায়েদ কোথায় ? এই তুই আবার উঠে পড়ছিস কেন ? শো বলছি ৷’
    একটু পরে আবার শব্দ থেমে যায় ৷ আজাদ রেডিও অন করে ৷ রেডিও পাকিস্তান থেকে একটা অপরিচিত কন্ঠ ভেসে আসছে ৷ কোনো অবাঙালি হবে হয়তো ৷ না ইংরেজি, না উর্দু, না বাংলা, এক অদ্ভুত ভাষায় সে ঘোষণা পাঠ করে চলেছে ৷ সবই সামরিক বিধি ৷ টিক্কা খানের সামরিক বিধি বমন করে চলেছে রেডিওটা ৷ কী করা যাবে, কী করা যাবে না, অ্যালার্ন হচ্ছে ৷ আর বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ৷ আজাদ রেডিওর নব ঘোরাতে থাকে ৷ আকাশবাণী শোনা যায় ৷ এদের খবরটা শুনলে হয় ৷ আকাশবাণীর ইংরোজি খবরে বলা হয় : ওয়েস্ট পাকিস্তান হ্যাজ অ্যাটাক্ড ইস্ট পাকিস্তান ৷
    আবার গুলির শব্দ ৷ সবাই চুপ করে আছে ৷
    কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ তাদের বাসার দরজায় কে যেন ধাক্কা দেয় ৷ কে ? এই ঘোর দুর্যোগের মধ্যে কে ?
    বাসার সবার নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাবে, এমন নিস্তব্ধতা ৷
    আবার কড়া নাড়ার শব্দ ৷
    আজাদ বলে, ‘কে ?’ কিন্তু তার গলা থেকে শব্দ ঠিকমতো বেরুচ্ছে না ৷ সে কেশে গলা পরিষ্কার করে নেয় ৷ কে ? সে এবার স্পষ্ট গলায় বলে ৷
    মা ছুটে আসেন ৷ ফিসফিস করে বলেন, ‘আজাদ, তুই ওই ঘরে যা ৷ আমি দেখছি ৷’ মা জানালার বদ্ধ কপাটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন কে ৷ বুঝতে পারেন না ৷
    তারপর জানালাটা খুলে বারান্দায় তাকান ৷ না কেউ না ৷
    ২৭শে মার্চ ৷ আজ সকালে কারফিউ নাই ৷ দুপুর থেকে আবার শুরু হবে ৷ আজাদ আর বাশার বের হয় ৷ রেললাইনের পথ ধরে ছুটে চলেছে হাজার হাজার মানুষ ৷ নারী-পুরুষ, শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা ৷ প্রত্যেকের হাতে সাধ্যমতো ব্যাগ, সুটকেস, পোটলা ৷ কারো কোলে বাচ্চা ৷ সবার চোখেমুখে ভয় ৷ সবাই যেন এই মৃত্যুপুরী ছেড়ে পালিয়ে কোনো রকমে পেতে চাইছে একটুখানি জীবনের শরণ ৷ একটা ছোট্ট ছেলে মাথায় একটা বড় ট্রাঙ্ক নিয়ে চলেছে ৷ আজাদ আর বাশার কেউ কোনো কথা বলে না ৷ তারা আরেকটু এগিয়ে যায় ৷ আউটার সার্কুলার রোডে হোটেল দ্য প্যালেসের সামনে দেখতে পায় পড়ে আছে একটা লাশ ৷ আজাদ চমকে ওঠে ৷ কিন্তু এটা কিছুই নয় ৷ আরো অনেক লাশ তাদের দেখতে হবে ৷ তারা রাজারবাগের দিকে এগোয় ৷ পথে পথে ছড়িয়ে আছে লাশ ৷ গুলিবিদ্ধ শরীর থেকে বেরুনো রক্ত শুকিয়ে পড়ে আছে রাস্তায় ৷ পুলিশ ব্যারাক থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে ৷ কুকুরে টানাটানি করছে লাশ নিয়ে ৷ কত যে লাশ পড়ে আছে ইতস্তত, ইয়ত্তা নাই ৷
    আজাদ আর বাশার এতক্ষণ কেউ কোনো কথা বলেনি ৷
    হঠাৎ বাশার রাস্তার ধারে বসে পড়ে ৷
    আজাদ জিজ্ঞেস করে, ‘কী হলো ?’
    বাশার একবার ‘ওয়াক’ করে ওঠে ৷
    ‘খারাপ লাগছে ?’
    ‘হুঁ ৷’
    আজাদ দেখতে পায়, বাশারের পুরোটা কপাল ঘামছে ৷ বোধহয় তার পেটের ভেতরটা গুলিয়ে উঠছে ৷ বমি করবে নাকি সে ? কিন্তু সকালে তারা নাশতা করে বের হয়নি ৷ দুজনেরই পেট খালি ৷ বমি হবে না ৷ শুধু পিত্ত উগড়ে উঠবে ৷ কষ্ট হবে ৷
    আজাদ একটা কাগজ কুড়িয়ে এনে বাশারের মাথায় বাতাস করে ৷ সঙ্গীর বিবমিষা দেখে তারও বমি পাচ্ছে ৷
    বাশারের চোখেমুখে একটু পানি ছিটাতে পারলে হয়তো ওর ভালো লাগত ৷ ওই যে দূরে রাস্তার ধারে একটা পানির কল দেখা যাচ্ছে ৷ আজাদ বলে, ‘দাঁড়াও, তোমার জন্যে একটু পানি নিয়ে আসি ৷ চোখেমুখে দেবে ৷’
    পানির কলের কাছে সে যায় বটে, কিন্তু পানি সে নেবে কী করে ? আঁজলা ভরে পানি নিলেও বাশারের কাছে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে না ৷ সে পকেট থেকে রুমাল বের করে ৷ ভিজিয়ে নেয় রুমালটা ৷ তারপর বাশারের কাছে এসে ভেজা রুমাল দিয়ে বাশারের চোখ-মুখ-কান-ঘাড় মুছে দেয় ৷ বাশারের খানিকটা আরাম লাগে ৷ সে বলে, ‘এখন ঠিক আছি ৷ চলো বাসায় ফিরে যাই ৷’
    তারা বাসায় ফিরে আসে ৷ মা চিল্লাচিলি্ল শুরু করে দিয়েছেন, ‘এই, তোরা কই গিয়েছিলি ? বলে যাবি না ? নাশতা না করে কেউ বাইরে যায়!’
    দুপুরের আগে হঠাৎ তাদের বারান্দায় বুটের শব্দ ৷ দরজায় নক ৷ জায়েদ এগিয়ে গিয়েছিল ৷ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে : সর্বনাশ ৷ দুইজন সৈন্য ৷ মিলিটারি সদস্য ৷ তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ৷ সে প্রমাদ গোনে ৷
    জায়েদ দৌড়ে ভেতরে আসে ৷ আজাদ আর বাশার তখন রেডিওর নব ঘোরাচ্ছে ৷ কোন রেডিও কী বলে, শোনা দরকার ৷ আকাশবাণী, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, ঢাকা-সবই সে একের পর এক শুনছে ৷ জায়েদ গিয়ে হাজির সেখানে-’দাদা দাদা ৷’ জায়েদের কন্ঠে ফিসফিসানি ৷
    ‘কী হয়েছে ?’
    ‘দাদা’, জায়েদ কথা থামিয়ে প্রথমে একটা শ্বাস নেয়, তারপর বলে, ‘বাসাত মিলিটারি আইছে ৷’
    ‘মিলিটারি ?’ আজাদ আর বাশার একই সঙ্গে বলে ওঠে ৷ তাদের হতবিহ্বল দেখায় ৷ তারা এখন কী করবে ?
    দরজা থেকে তখন শোনা যায়, ‘আজাদ, আজাদ আছ নাকি ?’
    বাঙালির গলা ৷ আজাদ এগিয়ে যায় বারান্দার দরজায় ৷ ‘কে ?’ সে কন্ঠ উঁচিয়ে বলে ৷
    ‘আমি সালেক ৷ তোমার সেন্ট গ্রেগরির ফ্রেন্ড ৷’
    আজাদ তাড়াতাড়ি দরজা খোলে ৷ সালেক চৌধুরী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ৷ এ বাসাতেও সে একবার এসেছে ৷ আর্মিতে আছে ৷ ‘আসো, আসো ৷’
    সালেক ভেতরে ঢোকে ৷ সেনাবাহিনীর পোশাকে তাকে একটু অন্যরকম যে লাগছে না, তা নয় ৷ তার সঙ্গে তার এক সহকর্মী হবে ৷
    সালেক ঢুকেই বলে, ‘দরজা বন্ধ করে দাও ৷ ও আমার বন্ধু ক্যাপ্টেন মাহমুদ ৷ মাহমুদ, এই হলো আজাদ ৷ তোমাকে তো এর কথা বলেইছি ৷ আজাদ, শোনো ৷ ক্যান্টনমেন্টের অবস্থা খারাপ ৷ আমরা পালিয়ে এসেছি ৷ পালিয়ে চলে যাব ৷ তুমি এক কাজ করো, আমাদের দুজনকে তোমার দু সেট কাপড় দাও ৷ কারফিউ আরম্ভ হওয়ার আগেই ঢাকা ছাড়তে হবে ৷’
    আজাদ বলে, ‘বসো ৷ দিচ্ছি ৷’
    মা এগিয়ে আসেন ৷ সব শোনেন ৷ তার চোখেমুখে উদ্বেগ ৷ তিনি বলেন, ‘বাবারা, তোমরা কিছু খেয়েছ ?’
    সালেক বলে, ‘খালাম্মা, খেতে হবে না ৷ আগে ঢাকার বাইরে যেয়ে নিই ৷’
    মা বলেন, ‘বাবা, আমি ভাত তুলে দিয়েছি ৷ ভাত খেয়ে তারপর যেও ৷’
    সালেক বলে, ‘সময় হবে না খালাম্মা ৷’
    জায়েদ তখন পাশের ঘরের দরজার সামনে দিয়ে বারবার হাঁটাচলা করছে, আর বোঝার চেষ্টা করছে, কারা এল ৷ পরে যখন বোঝে, এ তো সালেক ভাই, তখন সে ঢোকে এ ঘরে ৷ টেবিলের ওপরে দুটো অস্ত্র রাখা ৷ সেসবের দিকে তার অভিনিবেশ ৷
    আজাদ তাদের দুজনকে প্যান্ট-শার্ট আর স্যান্ডেল দেয় ৷ তারা কাপড় পাল্টে নেয় ৷ অস্ত্র দুটো তারা নেয় একটা চটের বস্তায় ৷ তারপর সালেক বলে, ‘আজাদ উঠি রে ৷’
    আজাদ বলে, ‘কোন দিকে যাবা ?’
    সালেক বলে, ‘জানি না ৷ আল্লাহ ভরসা ৷’
    মা আসেন ৷ ‘বাবা, আর পাঁচটা মিনিট বসো ৷ ভাত হয়ে এসেছে ৷’
    সালেক আর মাহমুদ ঘড়ি দেখে ৷ ‘না খালাম্মা ৷ হাতে সময় আছে আর আধঘন্টা ৷ এর মধ্যে সদরঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে যেতে চাই ৷’
    ‘তাহলে বাবা একটু চিঁড়া ভিজিয়ে দিই ৷ গুড় দিয়ে মেখে দিই ৷ খেয়ে যাও ৷’
    মা দৌড়ে চিঁড়া ভেজাতে যান ৷ সালেক বলে, ‘খালাম্মা ৷ নাহ্ ৷ থাকুক, দেরি হয়ে যাবে ৷ আমরা যাই ৷’
    চিঁড়া ভেজানোই থাকে ৷ সালেক আর মাহমুদ সিভিল ড্রেসে বেরিয়ে যায় ৷ ঘরে পড়ে থাকে তাদের সামরিক পোশাক, বেল্ট, জুতা, টুপি ৷
    মা সেগুলো একটা বস্তায় ভরে রান্নাঘরের পেছনে কাঠের স্তূপের আড়ালে রেখে আসেন ৷
    জায়েদের চোখ পড়েছে বেল্ট দুটোর দিকে ৷ এক ফাঁকে সে বেল্ট দুটো সরিয়ে নেবে, মনে মনে পরিকল্পনা আঁটে ৷
    তবে এ পরিকল্পনা সে বাস্তবায়িত করতে পারে না ৷ দুদিন পরই কারফিউয়ের বিরতিতে আম্মার নির্দেশে পুরোটা বস্তা মাথায় করে নিয়ে সে ফেলে দিয়ে আসে এফডিসির পুকুরে ৷
    ২৭শে মার্চ দুপুরের দিকে, কয়েক ঘন্টার জন্যে কারফিউ তুলে নেওয়ার অবকাশে, জুয়েল এসে হাজির সৈয়দ আশরাফুল হকের বাসায় ৷ ডোরবেল টেপে ৷ বাসার লোকজন উঁকি দিয়ে দেখে, কে এল ৷ জুয়েলকে দেখে দারোয়ান বলে, ‘কে ?’
    জুয়েল বলে, ‘আমি জুয়েল ৷ বাবু আছে ?’
    সৈয়দ আশরাফুল এসে গেট খোলে ৷
    ‘কী ব্যাপার ?’
    ‘শোনো নাই, মুশতাক ভাইরে মাইরা ফেলছে!’
    ‘কোন মুশতাক ?’
    ‘তোমগো আজাদ বয়েজ ক্লাবের মুশতাক ভাই ৷’
    ‘কও কী ?’
    আশরাফুলের মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে ৷ আজাদ বয়েজ ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ক্রীড়ানুরাগী মুশতাক ভাইকে মেরে ফেলেছে ? সে ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘কেমনে ?’
    ‘ডিডিএসএর সামনে হের গুলি খাওয়া লাশ পইড়া আছে ৷ হাত দুইটা নাকি উপরে ধরা ৷ মনে হয় উর্দুতে কিছু একটা বুঝাইতে চাইছিল, পারে নাই ৷ অনেকে দেখতে যাইতেছে ৷ যাবা ?’
    ‘চলো ৷’
    তারা দুজন বেরিয়ে পড়ে ঢাকা ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ের উদ্দেশে ৷
    আশরাফুলের সামনে লাশের বর্ণনা দেবার সময়ও জুয়েল বুঝতে পারেনি আসলে গুলি খেয়ে মৃত্যু ব্যাপারটা কী! কিন্তু ডিডিএসএ কার্যালয়ে গিয়ে যখন মুশতাক ভাইয়ের চিৎ হওয়া উন্মুক্ত শরীরটা গুলিবিদ্ধ আর রক্তাক্ত অবস্থায় সে দেখে, তখন একটা মানুষের এ রকম অন্যায় প্রতিকারহীন মৃত্যু যেন সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না ৷ লোকটার সঙ্গে তিন দিন আগেও তাদের দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে ৷ এখন কীভাবে শুয়ে আছে দুদিনের বাসি লাশটা ৷
    ঢাকার অনেক ক্রিকেটারকেই ক্রিকেট খেলতে উদ্বুদ্ধ করা, ক্রিকেটের বিষয়ে একাগ্র ও পরিশ্রমী হতে বলার কাজটা মুশতাক ভাই করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে ৷
    সেই মুশতাক ভাইকে এভাবে মেরে ফেলা হবে ? জুয়েলের চোয়ালটা শক্ত হয়ে ওঠে ৷ সে কামড়ে ধরে নিচের ঠোঁট ৷
    আর ভয়ে আশরাফুলের শরীর ওঠে গুলিয়ে ৷
    হঠাৎ শোনা যায়, কে যেন ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল ৷
    জুয়েল আর আশরাফুল লোকটার দিকে তাকায় ৷ আজাদ বয়েজ ক্লাবের পিয়ন খয়বার ৷ ওদিকে দেখা যাচ্ছে ক্রিকেটার রকিবুল হাসানও এসে গেছেন ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাগানবাড়ি রহস্য – আনিসুল হক
    Next Article মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }