Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মা – আনিসুল হক

    লেখক এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩৫. মা

    ৩৫
    যুদ্ধের খোঁজে ঢাকার ছাত্ররা বেরিয়ে পড়ে অনেকেই, যেমন বাচ্চু পায়ে হেঁটে চলে যায় দাউদকান্দি হয়ে কুমিল্লা, সেখান থেকে শুনতে পায় যুদ্ধ হচ্ছে মিরেরসরাইয়ে, তারপর পায়ে হেঁটে চলে যায় চট্টগ্রাম, সেখান থেকে ফিরে আসে ঢাকায়, তারপর পেয়ে যায় ২ নম্বর সেক্টর থেকে পাঠানো বার্তা, খালেদ মোশাররফ গেরিলা অপারেশনের জন্যে ঢাকার ছাত্রদের চান, গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে সীমান্তের ওপারে মেলাঘর যেতে থাকে ছাত্ররা ৷ জুনের প্রথম সপ্তাহে মেজর খালেদ মতিনগর থেকে মাইল দশেক দূরে মেলাঘরে একটু ঘন জঙ্গলের মধ্যে স্থাপন করেন এই নতুন ক্যাম্প ৷ তারও আগে অবশ্য ক্যাম্প হয়েছিল বঙ্নগর ৷ সেখান থেকে মতিনগর ৷ সেখানে যোগ দেয় মানিক, ওমর, মাহবুব, আসাদ ৷ বাস্কেটবল খেলোয়াড় কাজী কামাল মতলবে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বাড়ি হয়ে পৌঁছে যায় মতিনগর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে, ছয়-সাত জনের একটা দলের সদস্য হিসেবে ৷ শহীদুল্লাহ খান বাদল, আশফাকুস সামাদ, মাসুদ ওমর এর আগেই পৌঁছে গেছে ৷ পৌঁছে যায় শাহাদত চৌধুরী, যুদ্ধদিনে যাকে ডাকা হবে শাচৌ বলে ৷ শাচৌ মেজর খালেদ মোশাররফের প্রিয় তরুণে পরিণত হবেন, আর শহীদুল্লাহ খান বাদল কাজ করে যাবে সেক্টর টু-র হেডকোয়ার্টার মতিনগরের গুরুত্বপূর্ণ এক স্টাফ হিসেবে, যতক্ষণ না তাকে যুদ্ধের শেষের দিকে এসে বাম সন্দেহে সরিয়ে নেওয়া হবে কলকাতায় ৷
    প্রতিটা তরুণের নিজের ঘরদোর মা-বাবা ছেড়ে যুদ্ধে যাওয়ার আছে একেকটা স্মরণীয় গল্প ৷
    বদিউল আলম ঢাকায় এক সময় বিখ্যাত বা কুখ্যাত ছিল এনএসএফ-এর নেতা হিসাবে ৷ কিশোরগঞ্জের ছেলে বদি ছাত্র হিসাবে ছিল দারুণ মেধাবী ৷ লম্বা, একটু ময়লাটে গায়ের রঙ ৷ ‘৭১ সালে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ৷ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে সে ১৯৬৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল ৷ এই উজ্জ্বল পটভূমি নিয়েও বদি যে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সমর্থক ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এনএসএফে যোগ দিয়েছিল, তার কারণ খুব একটা রাজনৈতিক নয় ৷ এদের যোগ দেওয়ার কথা ছিল ছাত্র ইউনিয়নেই, কিন্তু কী একটা কথা কাটাকাটি থেকে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের কয়েক বন্ধু এনএসএফে ঢুকে পড়ে ৷ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় ক্যাম্পাসে তারা চলাফেরা করত দাপটের সঙ্গে ৷ এই সময় জিন্নাহ হলের এনএসএফ নেতা বদি-সালেকের নাম উচ্চারিত হতো একই নিঃশ্বাসে, মধ্যখানে একটা ঊহ্য হাইফেনসমেত এবং ভয়ের সঙ্গেই ৷ সৈয়দ আশরাফুল হকের মনে পড়ে, ক্রিকেটার হিসেবে আশরাফুলকে বদি একটু প্রশ্রয়ের চোখে দেখত, ক্যাম্পাসে দেখা হলে জিজ্ঞেস করত, ‘কী আশরাফুল, কেমন আছ’, এতেই আশরাফুল শ্লাঘা অনুভব করত, ‘দেখছস, কত বড় গুণ্ডা আমার খোঁজখবর নিতাছে ৷’
    অন্যদিকে শহীদুল্লাহ খান বাদল ছিল এসএসসি আর এইচএসসি দু পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকারকারী এক অবিশ্বাস্য তরুণ ৷ সে যুক্ত ছিল বামপন্থী চিন্তা আর আদর্শের সঙ্গে ৷ বদির সঙ্গে তার গোলযোগ ছিল প্রকাশ্য ৷ অর্থনীতি বিভাগের নির্বাচনের সময় ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে এনএসএফের গণ্ডগোল বাধলে বাদল আর বদির দূরত্বও প্রায় শত্রুতায় পরিণত হয় ৷ এর পরে ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরাও শরীরচর্চা ইত্যাদির দিকে মন দেয় ৷ একদিন জিমন্যাসিয়ামে বাদলরা ব্যায়াম করছে, তারা পড়ে যায় বদি ও তার দলের সামনে, বদিরা ধাওয়া দেয় বাদলদের ৷
    ‘৬৯-এর গণআন্দোলনের সময় থেকে বদিউল আলমরা এনএসএফে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে ৷ ডাকসুর জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী এনএসএফের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও গণআন্দোলন সমর্থন করেন এবং এরপর থেকে ছাত্রসমাজের স্বাধিকার তথা স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে থাকেন ৷ বদিউল আলমরাও মনেপ্রাণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থক হয়ে ওঠে ৷
    ২৫শে মার্চের গণহত্যাযজ্ঞ শুরুর পর ২৭শে মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়া হলে বদি তার বন্ধু তৌহিদ সামাদকে নিয়ে হাজির হয় ধানমন্ডি ৫ নম্বরে শহীদুল্লাহ খান বাদলের ডেরায় ৷ তৌহিদ সামাদের বাসা ছিল ৪ নম্বরে ৷ বদিকে দেখে শহীদুল্লাহ খান বাদলের মনে নীরব প্রশ্ন জাগে : এই এনএসএফের গুণ্ডাটাকে কেন নিয়ে এসেছে তৌহিদ ?
    বদিউল বলে বাদলকে, ‘লিসেন ৷ ইউ কমিউনিস্ট ৷ হয়্যার আর দি আর্মস ৷ লেট্স গো অ্যান্ড ফাইট ৷ নিশ্চয় যুদ্ধ হচ্ছে, নিশ্চয় আর্মস পাওয়া যাবে ৷ চলো ৷ যুদ্ধ করব ৷’
    কিন্তু শহীদুল্লাহ খান বাদলের চোখমুখ থেকে বদিউল আলমের ব্যাপারে সন্দেহ দূরীভূত হয় না ৷ বদিকে এড়িয়ে যায় বাদল ৷ সে যায় মাসুদ ওমরের বাসায়, সঙ্গে আশফাকুস সামাদ, কী করা যায় এই নিয়ে আলোচনা করে তারা ৷ সেখানে আবার এসে হাজির হয় বদি ৷ অবাক হওয়া বাদলের মুখের দিকে তাকিয়ে বদি সন্দেহরেখা পড়ে ফেলে অন্তর্যামীর মতো ৷ তারপর সে তার পকেটে হাত দেয় ৷ বের করে একটা ব্লেড ৷ একটানে বদি নিজের হাত কেটে ফেলে খানিকটা ৷ ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয় তার হাত থেকে ৷ তারপর সে বাদলের হাত টেনে নিয়ে সামান্য কাটে ৷ বাদলের কাটা জায়গা থেকে রক্ত বেরিয়ে এলে বদি নিজের রক্ত মিশিয়ে দেয় বাদলের রক্তের সঙ্গে ৷ বলে, ‘ফ্রম টুডে উই আর ব্লাড ব্রাদারস ৷’
    শহীদুল্লাহ খান বাদল, মুক্তিযুদ্ধের ১৪ বছর পরেও, আজাদের মাকে দাফন করে ফিরে আসবার পরের দিনগুলোয়, সেইসব কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন ৷ তাঁর মনে পড়ে, এর পরে তার এতদিনকার প্রতিপক্ষ বদিউল আলমের সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে চড়ে তারা ওই ২৭শে মার্চেই পুরোটা শহর প্রথমে চক্কর মারে ৷ প্রত্যক্ষ করে শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আগুন, ধোঁয়া, রক্ত, লাশের স্তূপ-পাকিস্তানিদের ভয়াবহ নৃশংসতার সাক্ষ্যগুলো ৷ তারা যুদ্ধের সন্ধানে যায় মেজর খালেদ মোশাররফের শ্বশুরবাড়িতে, বাদলদের আত্মীয় হন এই মেজর ৷ দূর থেকেই দেখতে পায় ইতিমধ্যে এ বাড়িতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যরা ৷ সেখানে উপায়ান্তর করতে না পেরে বদি প্রস্তাব দেয় কিশোরগঞ্জের দিকে যাত্রার ৷ একটা অনুমান হলো, ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী বাঙালি সৈন্যদের পাওয়া যেতে পারে কিশোরগঞ্জে ৷ বাদলের একটা আশা ছিল, কমিউনিস্টদের কতগুলো মুক্তাঞ্চল থাকে, সিলেটে এ রকম একটা মুক্তাঞ্চল আছে সুনীলদার ৷ ওখানে পৌঁছা গেলে একটা উপায় হবেই ৷
    বন্ধু তৌহিদ সামাদের কাছ থেকে টাকা ধার নেয় তারা, ৩০০ বা ৪০০ টাকা, তারপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে তারা চারজন-বদি, বাদল, আশফাকুস সামাদ আশফি আর মাসুদ ওমর ৷
    যুদ্ধে কাজী কামালের যাওয়ার কথা ফতেহ চৌধুরীর সঙ্গে ৷ নির্দিষ্ট দিন নির্দিষ্ট সময়ে একটু দেরি করে ফতেহ চৌধুরীর বাসায় পৌঁছায় কাজী কামাল ৷ ফতেহ নয়, দেখা পায় তার ভাই শাহাদত চৌধুরীর ৷ শাহাদত বলে, ‘তুমি দেরি করে ফেলেছ ৷ ওরা তো তোমার জন্যে ওয়েট করতে করতে শেষে চলে গেল ৷ এখনও সদরঘাট যাও ৷ দেখা পেতেও পারো ৷ মতলবের লঞ্চে খোঁজো ৷’
    কাজী কামাল বেরিয়ে যায় ঝড়ের বেগে ৷ সদরঘাটে গিয়ে ঠিকই ধরা পায় সে ফতেহদের ৷ ফতেহ তাকে বলে, ‘আসছ, ভালো করছ ৷ কিন্তু প্রত্যেকের ১৭০ টাকা লাগবে পথের খরচ আর হাতখরচ হিসাবে ৷ তোমার টাকা আনছ!’ কাজী কামালের মুখ শুকিয়ে যায় ৷ সে তো টাকা আনেনি ৷ যুদ্ধে যেতে যে টাকা লাগে, তা সে জানবে কী করে! ‘আমি আইতাছি’ বলে সে লঞ্চ থেকে নেমে যায় ৷
    ফতেহ চিন্তায় পড়ে যায় ৷ কাজী কি আবার টাকা জোগাড় করতে বাসায় ফিরে গেল নাকি ? লঞ্চ যদি ছেড়ে দেয় ? তাহলে তো তাদের কাজীকে ছেড়েই চলে যেতে হবে ৷
    কাজী কামাল কিন্তু লঞ্চে ফিরে আসে মিনিট দশেকের মধ্যেই ৷ তার হাতে তখন টাকা ৷ সে টাকাটা ফতেহর হাতে তুলে দেয় ৷ ফতে বিস্মিত ৷ ‘টাকা পেলে কই ?’ কাজী কামাল তার বাঁ হাতের কব্জি দেখায় ৷ সেখানে ঘড়ির বেল্ট পরার শাদা দাগটা রয়ে গেছে, কিন্তু ঘড়িটা নাই ৷ ‘বুঝলা না, ফুটপাতে নাইমা ঘড়িটা বেইচা দিয়া আইলাম ৷’ তার মুখে বিজয়ীর হাসি ৷
    রুমী তার মা জাহানারা ইমামকে বলে, ‘মা, আমি যুদ্ধে যাব ৷’ জাহানারা ইমাম মুশকিলে পড়েন ৷ তার ছেলের কী-বা এমন বয়স ৷ কেবল আইএসসি পাস করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে ৷ আবার আমেরিকার ইলিনয় ইনস্টিটিটিউট অফ টেকনোলজিতেও সে ভর্তি হয়ে গেছে ৷ ৫ মাস পরে ওখানে তার ক্লাস শুরু হবে ৷ কদিন পরই তার আমেরিকার উদ্দেশে ফ্লাই করার কথা, সে কিনা বলছে যুদ্ধে যাবে ৷ জাহানারা ইমামের মাতৃহৃদয় বলে, না, রুমী যুদ্ধে যাবে না ৷ সে আমেরিকা যাবে পড়তে, নিরাপদে থাকতে, দেশে ফিরে এসে স্বাধীন দেশের সেবা করবে ৷ অন্যদিকে তাঁর সচেতন দেশপ্রেমিক স্বার্থত্যাগী হৃদয় বলছে, এ শুধুই স্বার্থপরের মতো কথা ৷ দেশের জন্যে দেশের ছেলে তো যুদ্ধে যাবেই ৷ তুমি কেন তাকে আটকে রাখতে চাও ৷ মা বলে ? আর ছেলেরা মায়ের ছেলে নয়! তখন, জাহানারা ইমামের মনে হয়, অন্য ছেলেদের মতো যদি রুমী বিছানায় কোলবালিশ শুইয়ে রেখে চুপিসারে চলে যেত, তাঁকে আর এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না ৷ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তিনি ছেলেকে শিখিয়েছেন, মাকে লুকিয়ে কোনো কিছু করতে যেও না ৷ যা করতে চাও, মাকে জানিয়ে কোরো ৷ এখন ? রুমী বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন, সে যুদ্ধে যাওয়ার সপক্ষে যুক্তি দেয়, সে যুক্তির তোড়ে হেরে যান মা, শেষে বলেন, ‘যা, তোকে দেশের জন্যে কুরবানি করে দিলাম ৷ যা তুই যুদ্ধে যা ৷’
    মুক্তিযোদ্ধারা জানে, পরে বহুদিন রুমীর মা জাহানারা ইমাম তার এই উক্তির জন্য আফসোস করেছেন, অবোধ মাতৃহৃদয় বারবার দগ্ধ হয়েছে অনুশোচনায়, কেন তিনি কুরবানি কথাটা বলতে গেলেন, আল্লাহ বুঝি তার কুরবানি কথাটাই কবুল করে নিয়েছিলেন ৷
    আর হাবিবুল আলমের মনে পড়ে যায় যে পাশবালিশ বিছানায় শুইয়ে রেখে এক ভোরে তিনিও পালিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অজানা প্রান্তর আর অনিশ্চিত জীবনের উদ্দেশে ৷
    এপ্রিলের ৭ বা ৮ তারিখ ৷ আহমেদ জিয়া, আলমদেরই এক বন্ধু, আলমদের ইস্কাটনের বাসায় আসে ৷ বলে, ‘দোস্ত, একটু রাজশাহী হাউসে আসতে পারবি ?’
    ‘ক্যান রে ?’
    ‘আছে, ঘটনা আছে ৷’ জিয়া কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে, ‘মেজর খালেদ মোশাররফ ডাকছে ৷’
    ‘কই ?’
    ‘ফ্রন্টে ৷ উনি তো ওনার ফোর বেঙ্গল নিয়া ২৭শে মার্চেই রিভোল্ট করছে ৷ মুক্তিবাহিনীতে উনি ঢাকার ছাত্র চান ৷ তুই যাবি কি যাবি না, এটা আলোচনা করব ৷ আরো দুই-একজন আসবে ৷ তুই আয় ৷ তুই তো স্কাউট ৷’
    হাবিবুল আলম বলে, ‘মেজর খালেদ মোশাররফের নাম তো শুনি নাই ৷ মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণাটা শুনছি রেডিওতে ৷ ওনার ঘোষণা শুনেই বুঝছি বাঙালি সৈন্যরা যুদ্ধ করতেছে ৷ আমাদেরকেও যেতে হবে ৷’
    ‘আয় বিকালে রাজশাহী হাউসে ৷ চিনেছিস তো, রমনা থানার কাছে ৷’
    ‘চিনি ৷ লিচ্যাংয়ের বাসা তো ?’
    বিকালবেলা রাজশাহী হাউসে মিটিং ৷ হাবিবুল আলমের অস্থির লাগে ৷ সে কল্পনায় নিজেকে দেখতে পায় যুদ্ধের ময়দানে ৷ কিন্তু কে এই মেজর খালেদ মোশাররফ ? তাকে সে চেনে না ৷ তার নাম শোনেনি ৷ কিন্তু মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণাটা তার কানে বাজছে ৷
    বিকালবেলা হাবিব হাজির হয় রাজশাহী হাউসে ৷ তারা ছাদে ওঠে ৷ কাইয়ুম, জিয়া, লিচ্যাং আর হাবিব ৷ লিচ্যাং-ও তাদের কমন বন্ধু ৷ তার ভালো নাম ইরতিজা রেজা চৌধুরী ৷ সে একটু শারীরিকভাবে আনফিট ৷ সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ৷ বয়স কুড়ির কোঠায় ৷ কেউ হয়তো ২১, কেউ ২২ ৷ চৈত্র মাস শেষ হয়ে আসছে ৷ আজকের বিকালটা বেশ গুমোট ৷ সবাই ঘামছে ৷ তবে হঠাৎ করেই হাওয়া বইতে শুরু করে ৷ বসন্তের বিখ্যাত বাতাস ৷ কপালের ঘামে বুলিয়ে দেয় শীতল পরশ ৷ তাদের আরাম লাগে ৷
    জিয়া মুখ খোলে-’আমি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর টু থেকে আসতেছি ৷ ওখানে আমি ট্রেনিং নিচ্ছি ৷ আমাকে পাঠাইছেন ক্যাপ্টেন হায়দার ৷ আমার সাথে আসছে আশফি ৷ আশফাকুস সামাদ ৷ খালেদ ফোর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে রেগুলার আর্মি গঠন করছেন ৷ তার সাথে যোগ দিছেন বর্ডারের ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স ৷ ঢাকা থাকবে খালেদ মোশাররফের আওতায় ৷ এখন ঢাকার ছেলে দরকার ৷ মেজর খালেদ মোশাররফ ক্যাপ্টেন হায়দারকে বলছেন, ঢাকায় ছাত্র পাঠাও ৷ ঢাকা থেকে আরো আরো ছাত্রকে নিয়া আসো ৷ আসলে ওনারা চাইছেন ঢাকায় গেরিলা অপারেশন শুরু করতে ৷ যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ৷ এ জন্য ঢাকার ছাত্র দরকার ৷ ক্যাপ্টেন হায়দারকে একবার দেখলেই তোদের পছন্দ হবে ৷ যুদ্ধের শুরুতেই সিলেটে ক্যাপ্টেন হায়দারের হাতে গুলি লাগে ৷ তার বাম হাতে প্লাস্টার আছে ৷ সেই জন্য উনি ফ্রন্টে যেতে পারতেছেন না ৷ হেডকোয়ার্টারে থেকে যুদ্ধের পরিকল্পনা করতেছেন ৷ এখন বল তোরা, যাবি কি-না ৷’
    অবশ্যই যেতে হবে ৷ আলম ভাবে ৷ না যাওয়ার প্রশ্নই আসে না ৷ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময় ৷ লিচ্যাং বলে, ‘আমার কী হবে ? আমিও তো যেতে চাই ৷’
    হঠাৎ নীরবতা নেমে আসে ওই আড্ডায় ৷ লিচ্যাং যেতে চায় ৷ কিন্তু ও তো খানিকটা শারীরিক প্রতিবন্ধী ৷ ওকে নেওয়া তো ঠিক হবে না ৷
    জিয়াই নীরবতা ভঙ্গ করে ৷ বলে, ‘লিচ্যাং তুই ঢাকাতেই থাক ৷ এখন যুদ্ধ মানে তো শুধু বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়া নয় ৷ আরো নানাভাবে যুদ্ধ করা যায় ৷ ঢাকায় যখন ফ্রিডম ফাইটাররা ঢুকবে, তুই তাদেরকে আশ্রয় দিবি ৷ খবর দিবি ৷ এই যে তোর বাসায় আজকে মিটিং হচ্ছে, এটাও তো মুক্তিযুদ্ধেই অংশ নেওয়া ৷’
    পরদিন হাবিবুল আলমের বাসায় মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ জিয়া আসে ৷ কীভাবে তারা পাড়ি দেবে সীমান্ত, এ বিষয়ে শলা করতে ৷ সঙ্গে আসে যমজ ভাই মুনির ও মিজান ৷ ঠিক হয়, আলম খবর দেবে কাইয়ুমকে, কাইয়ুম শ্যামলকে, জিয়া নিজেই খবর দেবে মুনীর চৌধুরীর ছেলে ভাষণকে, আর তারা যাত্রা শুরু করবে পরদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরির কাছের পেট্রলপাম্প থেকে ৷
    আগামীকাল যাত্রা ৷ হাবিব আলম রাত্রিবেলা দু চোখের পাতাই এক করতে পারে না ৷ তার বাসা থেকে সে বিদায় নেবে কী করে ? আব্বা-আম্মাকে বলে বিদায় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না ৷ সে হলো বাড়ির একমাত্র ছেলে ৷ আর তার বোন আছে চারটা ৷ বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তিনি থাকেন তিন সন্তানসহ খুলনায়, স্বামী পাকিস্তান নেভির অফিসার ৷ এ বাসায় থাকে তিন বোন ৷ তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বের হওয়াও মুশকিল ৷ তার ওপর হাবিবুল আলম থাকে বাসার দোতলায় ৷ কাঠের খাড়া সিঁড়ি দোতলা থেকে সোজা নেমে গেছে নিচতলার যে জায়গাটায়, সেখানে সারাক্ষণই কেউ না কেউ বসে থাকে, আসা-যাওয়া করে, কাজ করে ৷
    হাবিব একটা ছোট্ট পিআইএ মার্কা ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে ৷ এটা সে ব্যবহার করেছিল স্কাউটের প্রতিনিধি হিসাবে গত ডিসেম্বরে তার অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় ৷
    ভোরের আজান হচ্ছে ৷ হাবিবুল আলম বিছানা ছাড়ে ৷ মশারি টানানোই থাকুক ৷ সে পাশবালিশটাকে শুইয়ে দেয় বিছানায় ৷ ঢেকে দেয় একটা চাদর দিয়ে ৷ তারপর একটা চিঠি লেখে বাসার সবার উদ্দেশে ৷ ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যাচ্ছি ৷ আমার জন্যে চিন্তা কোরো না ৷ দোয়া কোরো ৷’ চিঠিটা পড়ার টেবিলে রেখে একটা বই দিয়ে চাপা দেয় সে ৷ তারপর কাঁধে ব্যাগটা ফেলে আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে বাইরে বারান্দায় আসে ৷ একটা টিনের চালা পার হতে হবে ৷ তারপর কাঠের ফ্রেম ৷ সেখান থেকে একটা লাফ দিয়ে নিচতলায় নামা যাবে ৷ তাহলেই কেবল সিঁড়িটা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ৷ একটা একটা করে পা বিড়ালের মতো সতর্কতায় ফেলে সে কার্নিশে চলে আসে ৷ তারপর দোতলার মেঝেসমান উচ্চতা থেকে একটা লাফ দিয়ে এসে পড়ে দিলু রোডের সরু-গলিতে ৷ মাটিতে পড়ে যায় সে, ওঠে, তারপর হাত ঝেড়ে রওনা হয় অজানার উদ্দেশে ৷
    সীমান্ত পেরিয়ে তারা এসে পৌঁছায় মতিনগরে ৷ সেক্টর টুর হেডকোয়ার্টারে ৷ সেখান থেকে তাদের পাঠানো হয় কাঁঠালিয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে ৷ তারা যোগ দেয় ২ নম্বর প্লাটুনে ৷ তার মানে এরই মধ্যে ১ নম্বর প্লাটুন গড়ে উঠেছে, যারা আগে এসেছে তারা তাতে যোগ দিয়েছে ৷ ১ নম্বর প্লাটুনের কমান্ডার হলেন আজিজ ৷ ছাত্রলীগের ঢাকা কলেজের ভিপি ৷ ২ নম্বর প্লাটুনের কমান্ডার হয় জিয়া ৷
    জিয়াসহ হাবিব আলমেরা সেকেন্ড প্লাটুনের সবুজ রঙের তাঁবুতে ঢোকে ৷ দেখতে পায় আরো ৭/৮ জন সেখানে আছে ৷ অর্থাৎ সব মিলে দাঁড়াল ১২/১৩ জন ৷ তাঁবুর এক পাশের ঢাকনা খুলে রাখা হয়েছে ৷ তবু তাঁবুর ভেতরটা গরম ৷
    একদিন পরে, ২ নম্বর প্লাটুনের ছাত্রযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তখনকার কিংবদন্তি সেক্টর টু-র প্রধান মেজর খালেদ মোশাররফ ৷ সঙ্গে আসেন ক্যাপ্টেন হায়দার, শহীদুল্লাহ খান বাদল প্রমুখ ৷ খালেদ মোশাররফ লম্বা, ফরসা, তার পরনে নীল রঙের ট্রাউজার, গায়ে হলদে রঙের ফুলহাতা শার্ট, কোমরে পিস্তল ৷ ছাত্রযোদ্ধাদের সামনে তিনি দেন এক সম্মোহনী ভাষণ ৷ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার শাসকদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব তিনভাবে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সামরিক ক্ষেত্রে ৷ এ লড়াইয়ে ছাত্রদের ভূমিকা হবে খুবই গুরুত্বপর্ণ ৷ তোমাদের দিয়েই চলবে আমাদের গেরিলা ওয়ারফেয়ার অব সেক্টর টু ৷ তোমরা যারা এসেছ, তারা মনে রেখো, একবার শুরু করলে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই, এখনও চলে যেতে পারো, পরে আর পারবে না, হয় জিততে হবে, নয়তো মরতে হবে ৷ তবে মনে রেখো, স্বাধীন দেশের সরকার জীবিত গেরিলাদের চায় না, নো গভর্নমেনট ওয়ান্টস অ্যান অ্যালাইভ গেরিলা, নিতে পারে না, দেশ স্বাধীন হলে তোমাদের কী হবে আমি বলতে পারব না, তবে যদি তোমরা আত্মত্যাগ করো, যদি শহীদ হও, তাহলে সেটা হবে তোমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্যবহার, এই মৃত্যু হবে বীরের মৃত্যু, দেশের জন্য মৃত্যু, মাতৃভূমির জন্যে মৃত্যু, মায়ের জন্যে মৃত্যু ৷’
    শাহাদত চৌধুরী ওরফে শাচৌকে যে মেজর খালেদ তাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন, তার একটা কারণ ছিল ৷ সেটা হলো শাচৌয়ের সঙ্গে ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলের স্বাভাবিক যোগাযোগ ৷ শাচৌ, দেখা যাচ্ছে, ঢাকা গেলে সঙ্গে করে আনেন আলতাফ মাহমুদের সুর করা নতুন গান, আরো পরমাশ্চর্য, তিনি একবার সঙ্গে করে আনলেন দুটি কবিতা ৷ সেই কবির নাম বলা বারণ, কিন্তু খালেদ মোশাররফকে বলতে তো মানা নাই ৷ শামসুর রাহমান ৷ শামসুর রাহমান রয়ে গেছেন অবরুদ্ধ বাংলাদেশে, কিন্তু গোপনে লিখে শাচৌয়ের হাতে পাঠিয়েছেন একজোড়া আশ্চর্য কবিতা ৷ গোপনে সেই কবিতা বয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মেলাঘরের ক্যাম্পে খালেদের হাতে পৌঁছে দিলেন শাচৌ ৷ সুলতানা কামাল পড়ে শোনাল কবিতা দুটো, খালেদসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ৷
    স্বাধীনতা তুমি
    রবিঠাকুরের অজর কবিতা অবিনাশী গান
    স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল, ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দোলানো
    মহান পুরুষ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
    আর
    তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা
    তোমাকে পাওয়ার জন্যে
    আর কতকাল ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
    আর কতকাল দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
    তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    সকিনা বিবির কপাল ভাঙল
    সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর ৷
    কবিতা দুটো শুনে পুরো ক্যাম্প উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছিল ৷ এর পরে শাচৌ আর আলম অবসর পেলে যেতেন কবি শামসুর রাহমানের বাড়ি ৷ কবিও খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করতেন গেরিলাদের ৷ এই গেরিলাদের দেখেই শামসুর রাহমান লেখেন তাঁর আরেকটা অসাধারণ কবিতা-গেরিলা ৷ ওই কবিতাটা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন শাচৌ, যখন পড়ে শোনানো হলো, আবেগে চোখ ভিজে এসেছিল অনেকেরই ৷
    দেখতে কেমন তুমি ? কী রকম পোশাক আশাক
    পরে করো চলাফেরা ? মাথায় আছে কি জটাজাল ?
    পেছনে দেখতে পারো জ্যোতিশ্চক্র সন্তের মতন ?
    টুপিতে পালক গুঁজে অথবা জবরজং ঢোলা
    পাজামা কামিজ গায়ে মগডালে একা শিস দাও
    পাখির মতন কিংবা চাখানায় বসো ছায়াচ্ছন্ন ৷
    দেখতে কেমন তুমি ?-অনেকেই প্রশ্ন করে, খোঁজে
    কুলুজি তোমার আঁতিপাঁতি ৷ তোমার সন্ধানে ঘোরে
    ঝানু গুপ্তচর, সৈন্য, পাড়ায় পাড়ায় ৷ তন্ন তন্ন
    করে খোঁজে প্রতিঘর ৷ পারলে নীলিমা চিরে বের
    করত তোমাকে ওরা, দিত ডুব গহন পাতালে ৷
    তুমি আর ভবিষ্যৎ যাচ্ছ হাত ধরে পরস্পর ৷
    সর্বত্র তোমার পদধ্বনি শুনি, দুঃখ-তাড়ানিয়া;
    তুমি তো আমার ভাই, হে নতুন, সন্তান আমার ৷
    শাহাদত চৌধুরী আজ যুদ্ধের ১৪ বছর পরেও স্মরণ করতে পারেন, ভাই আর সন্তান বলে সম্বোধন করার এই শেষ পঙ্ক্তিটা তাদের শরীরে কী রকম বিদ্যুৎ খেলিয়ে দিয়েছিল ৷
    ট্রেনিং শেষে হাবিবুল আলমের প্রথম ঢাকা আগমন আর ঢাকায় প্রথম অপারেশন ছিল মেজর নূরুল ইসলাম শিশুর স্ত্রী আর দু কন্যাকে ঢাকা থেকে মতিনগর নিয়ে যাওয়া ৷ এ জন্যে নুরুল ইসলাম পুরস্কার হিসেবে হাবিবুল আলমকে দিতে চেয়েছেন একটা চায়নিজ এসএমজি আর কাজী কামালকে একটা চায়নিজ পিস্তল ৷ এর আগে কাজী কামাল কাইয়ুমকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় এসে মেজর শাফায়াত জামিলের স্ত্রী ও দু পুত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছে ৷ এবার মেজর নুরুল ইসলাম শিশুর পরিবারকে নিতে কাজী কামালের ডাক পড়লে হাবিবও তার সঙ্গে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করে, কারণ হাবিব শিশুর বাসাটা আগে থেকেই চেনে ৷ আর কাজী কামালকে হাবিবুল আলম আগে থেকেই চেনে বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসাবে, তাকে ডাকে কাজী ভাই বলে, হাবিবুল আলম নিজেও ফার্স্ট ডিভিশন লিগে হকি খেলে থাকে ৷
    এই পিস্তলটা কাজী জিতে নিতে সক্ষম হয়, হাবিবও জিতে নেয় এসএমজিটা, মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারকে তারা সীমান্তের ওপারে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের সঙ্গে ৷ এই পিস্তলটার কথা ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে মনে পড়ে যায় এ জন্য যে, জুয়েলের খুব লোভ ছিল পিস্তলটার ওপর ৷ আজাদদের বাসা থেকে ধরা পড়ার দিনও জুয়েল তার পাশে এই পিস্তলটা রেখেছিল ৷ ওখান থেকেই কাজী কামাল পিস্তলটাকে হারায় আর হারায় আজাদকে, জুয়েলকে, বাশারকে ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাগানবাড়ি রহস্য – আনিসুল হক
    Next Article মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }