Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মা – আনিসুল হক

    লেখক এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪০. মা

    ৪০
    আজকে আজাদের প্রথম অপারেশনে যাওয়া ৷ দুপুরবেলা বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শেভ করতে করতে আজাদ মাকে বলে, ‘মা, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি ৷ আজকে রাতে ফিরব না ৷’
    মা বলেন, ‘কোথায় যাচ্ছিস ?’
    আজাদ বলে, ‘যাব একদিকে ৷ দোয়া কোরো ৷ ইনশাল্লাহ কালকে ফিরে আসব ৷’
    মা বলেন, ‘একা যাবি ?’
    আজাদ বলে, ‘না ৷ কাজী, জুয়েল ওরাও যাবে ৷ মা, আর কিছু জিজ্ঞেস কোরো না ৷’
    মায়ের বুকটা ধক করে ওঠে ৷ শরীরটা অবশ অবশ লাগে ৷ তিনি বুঝতে পারেন, ছেলে আজকে এমন কোথাও যাবে, যেটা ঠিক সে বলতে চায় না ৷ তিনিও আর বাড়তি কিছু জিজ্ঞেস করেন না ৷
    শেভ করা হয়ে গেলে ছেলের মুখের দিকে তিনি তাকান ৷ ছেলের ফরসা গাল ৷ শেভ করার পরে সবুজ হয়ে আছে ৷ তিনি বলেন, ‘ভাত খেয়ে যাবে তো ?’
    আজাদ বলে, ‘হুঁ ৷’
    মা তাড়াতাড়ি করে ভাত বাড়েন ৷ আজকে তরকারি তেমন ভালো নয় ৷ যুদ্ধের কারণে আজাদের ব্যবসাপাতি বন্ধ ৷ ঘরে টানাটানি চলছে ৷ বাজার তেমন করে আর করা হয় না ৷ ছেলে তাঁর কী খেয়ে যাবে ? তিনি তাড়াতাড়ি একটা ডিম ভাজতে চলে যান ৷ তখন তাঁর মনে হয়, ছেলের পরীক্ষার দিনে তিনি তাকে কিছুতেই ডিম খেতে দিতেন না, দেখতেও দিতেন না ৷ আজ ছেলে তাঁর যে অগি্নপরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, তাতে তো ডিম খেতে অসুবিধা নাই ৷ নিশ্চয় নাই ৷
    আজাদেরও মনের মধ্যে উত্তেজনা ৷ উত্তেজনা বেশি হলে তার বারবার পেশাব পায় ৷ সে এরই মধ্যে দুবার জলবিয়োগ করে এসেছে ৷ সে কোনো দিকে তাকাচ্ছে না ৷ ঘাড় না ঘুরিয়ে সামনে নাকের দিকে তাকিয়ে থাকছে ৷ ব্যাপারটা আর কারো চোখে ধরা পড়ছে না বটে, মায়ের চোখে ঠিকই পড়ছে ৷ মা অবশ্য কিছুই বলছেন না ৷
    আজাদের বাঁ চোখের পাতা লাফাতে শুরু করে দেয় ৷ এটা কেন হচ্ছে ? এর মানে কী ?
    আজাদ ভাত খেতে বসে ৷ ভাতও সে খাচ্ছে মুখ নিচু করে ৷ মা লক্ষ করেন, আজাদ ভাত মুখে নিয়ে চিবোচ্ছে না, গিলে ফেলছে, বারবার গেলাসে করে পানি খাচ্ছে ৷ মা মুখটা হাসি হাসি করে বলেন, ‘আস্তে আস্তে খাও বাবা, চিবিয়ে চিবিয়ে খাও ৷ পানি পরে খেও ৷’
    মা যখন সিরিয়াস হয়ে যান, তখন আজাদকে ‘তুমি’ করে বলেন ৷
    ভাত খেয়ে উঠে আজাদ কাপড়-চোপড় গোছাতে থাকে ৷ একটা ছোট্ট হাতব্যাগে দুটো ঘরে-পরার কাপড় নেয় ৷ কাজটা করার সময় সে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে, এলভিস প্রিসলির গান ৷
    তারপর বোনদের ঘরে উঁকি দেয় ৷ মহুয়ার একটা বাচ্চা হয়েছে ৷ সে ঘরে যাওয়া যাবে কি না, কে জানে ৷ দরজায় দাঁড়িয়ে সে গানের আওয়াজ বাড়িয়ে দিয়ে তারপর গলা খাঁকারি দেয় ৷ তারপর বলে, ‘মহুয়া, শরীর ঠিক আছে ?’
    ‘জি দাদা ৷’
    ‘বাবুটা রাতে খুব কেঁদেছে মনে হলো ?’
    ‘জি দাদা ৷ কী যে হইছিল ৷’
    ‘কিরে কচি, তোর কী অবস্থা ? রোজ দশটা করে অঙ্ক করতে বলেছিলাম, করেছিস ?’
    ‘জি দাদা ৷’ কচি ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় ৷ দাদা যদি এখন খাতা আনতে বলে তাহলেই সে ধরা পড়ে যাবে ৷
    দাদা তেমন কিছুই বলে না ৷ সে বেঁচে যায় ৷
    ‘জায়েদ কই ?’ আজাদ বলে ৷
    মা বলেন, ‘ও তো বাইরে গেছে ৷’
    আজাদ বলে, ‘ওকে বেশি বাইরে যেতে মানা কোরো ৷’
    মা বলেন, ‘ও তোকে মানে বেশি ৷ তুই একদিন ভালো করে কড়া করে বুঝিয়ে বলিস ৷’
    ‘আচ্ছা ৷’ আজাদ তার ঘরে আসে আবার ৷ জর্জ হ্যারিসনের গান লেখা কাগজটা সঙ্গে নেয় ৷ সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার ঠিক আছে কিনা পরখ করে ৷ তারপর মায়ের সামনে এসে তাঁর মুখের দিকে তাকায় ৷ এই প্রথম সে গত এক ঘন্টায় মায়ের মুখের দিকে তাকাল ৷ ঠোঁটটা কামড়ে ধরে মুখে একটা ঝাঁকি দিয়ে সে বলে, ‘যাই তাহলে ৷’
    মা বলেন, ‘বাবা, যাই না, বলো আসি ৷’
    আজাদ বলে, ‘আসি ৷ দোয়া কোরো ৷’
    মা বলেন, ‘সাবধানে থেকো ৷ সাবধানে চোলো ৷ বিসমিল্লাহ করে বের হয়ো ৷ বিপদে লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সোবহানাকা পোড়ো ৷ মাথা ঠাণ্ডা রেখো ৷’
    আজাদ একটা বড় শ্বাস টেনে নিয়ে বলে, ‘ওকে ওকে ৷’
    সে আর পেছনে তাকায় না ৷ সোজা বের হয়ে বেবিট্যাক্সি স্টান্ডের দিকে যায় ৷
    মা তাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেন ৷ ছেলে অদৃশ্য হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকেন তার চলে যাওয়ার দিকে ৷
    কাজী কামালের নেতৃত্বে জনা-দশেক মুক্তিযোদ্ধা যাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জে পাওয়ার স্টেশন কীভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায়, সেটা সার্ভে করতে ৷ মেজর খালেদ মোশাররফ কাজী কামালকে মেলাঘর থেকে অস্ত্রশস্ত্র আর লোকজন দিয়ে পাঠিয়েছেনই সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ৷ এটা করতে পারলে ঢাকা শহরের বেশির ভাগটা অন্ধকার হয়ে পড়বে ৷ এর আগে দুবার যোদ্ধারা চেষ্টা করেছিল এটা উড়িয়ে দিতে, পারেনি ৷ এবার কাজী কামালের দল বেশ ভারী ৷ ১০ জনের গ্রুপ নিয়ে সে ঢুকেছে ঢাকায় ৷ একটা সাড়ে তিন ইঞ্চি রকেট লাঞ্চারও আনা হয়েছে ৷ ৮ টা রকেট শেল ৷ ভীষণ ভারী ৷ রকেট লাঞ্চার চালানোর জন্যে আর্টিলারির গানার দেওয়া হয়েছে ৷ তার নাম ল্যান্স নায়েক নুরুল ইসলাম ৷ আর আছে কানা ইব্রাহিম ৷ এক চোখ কানা তার ৷ কোনোভাবে যদি পাওয়ার স্টেশনের ভেতরে ঢোকা না যায়, বাজার থেকে শেল মারলে কী হয়! এই হলো মেলাঘরের পরামর্শ ৷ অস্ত্রের মধ্যে আরো আছে দুটো এসএলআর, সঙ্গে আন্যার্গা লাঞ্চার ৷ প্রত্যেকের জন্যে একটা করে স্টেনগান, চারটা ম্যাগাজিন, দুটো গ্রেনেড আর অসংখ্য বুলেট ৷
    ভাদ্র মাস ৷ আকাশে মেঘ ৷ তাই একটা গুমোট ভাব ৷ সন্ধ্যার পরে বাড্ডার ওপারের পিরুলিয়া গ্রামের হাইড আউট থেকে দুটো নৌকাযোগে গেরিলারা রওনা হয় সিদ্ধিরগঞ্জের দিকে ৷ বেরুনোর আগে আজাদ বুকপকেট থেকে বের করে একবার দেখে নেয় জর্জ হ্যারিসনের গানের কপিটা ৷ তারপর আবার সেটা রাখে যথাস্থানে ৷ তারা দুটো নৌকায় ওঠে ৷ একটা নৌকায় বদি, কাজী, জুয়েল, আরো দুজন ৷ আরেকটা নৌকায় আজাদ, জিয়া, ইব্রাহিম, রুমী ৷ নৌকা চলতে শুরু করলে বাতাস এসে গায়ে স্পর্শ রাখে, একটুখানি শীতল হয় শরীর ৷ এখনও অন্ধকার তেমন ঘন হয়ে নামেনি ৷ আজাদ উত্তেজিত ৷ তার হাতে একটা স্টেনগান ৷ বলা যায় না, হয়তো আজই তার শত্রুর দিকে গুলি ছোড়ার উদ্বোধন হতে পারে ৷ উত্তেজনা গোপন করতে সে গান ধরেছে, তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে, আমরা কজন নায়ের মাঝি, হাল ধরেছি, শক্ত করে রে ৷ সামনের নৌকা থেকে তার গান শুনে জুয়েল বলে, ‘ঢেউয়ের সাগর নারে, এইটা আসলে ডোবা ৷ গানটা হইব : ব্যাঙ-ডাকা এই রামপুরা বিল পাড়ি দিমু রে, আমরা কয়জন কাউবয়…’
    সামনে কাজী কামালদের নৌকা ৷ সবাই যার যার স্টেনগান নৌকার পাটাতনে নামিয়ে রেখেছে ৷ কারণ কেউ অস্ত্র দেখে ফেললে তাদের আসার উদ্দেশ্যই মাটি হয়ে যাবে ৷ কিন্তু বদি কিছুতেই তার স্টেনগান নামিয়ে রাখবে না ৷ সে রেখেছে তার কোলের ওপরে ৷
    কাজী কামাল এই অপারশেনের কমান্ডার ৷ সে বলে, ‘বদি, স্টেনটা নামায়া রাখো ৷’
    বদি গম্ভীর গলায় বলে, ‘আপনেরা নামায়া রাখছেন রাখেন ৷ আমারে কন ক্যান ৷ আর্মি আসলে কি বুড়া আঙুল টাইনা ইনডেঙ্ দিয়া গুলি করব ? নেভার ৷ আই অ্যাম আ ফাইটার অ্যান্ড আই অ্যাম অলওয়েজ রেডি টু শুট…’
    আজাদ বদির কথা শুনে অবাক ৷ কাজী না এই অপারেশনের কমান্ডার ৷ তার আদেশ কি বদির মেনে নেওয়া উচিত ছিল না ৷
    দুই নৌকা ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে পাওয়ার স্টেশনের কাছাকাছি ৷ সব নিস্তব্ধ ৷ কেবল নৌকার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না ৷ অন্ধকার ধীরে ধীরে বাড়ছে ৷ আকাশে মেঘ থাকায় তারা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না ৷ তবে এখানে-ওখানে বিলের মধ্যে ঝোপের ওপরে জোনাকি দেখা যাচ্ছে ৷ আর একটা কিটিকিটি শব্দও যেন আছে ৷ ঝোপেঝাড়ে কি ঝিঁঝিও ডাকছে নাকি ? এর মধ্যে আবার শেয়ালের ডাকও কানে আসে ৷ সামনের নৌকায় কাজী সিগারেট ধরায় ৷ লাইটারের আলোয় হঠাৎ চমকে ওঠে আজাদ ৷ কাজীর মুখে লাইটারের আলো পড়ায় ওর মুখটা কিছুক্ষণের জন্যে ভেসে ওঠে আজাদের চোখে ৷ বন্ধুর মুখ দেখে সে খানিকটা স্বস্তি বোধ করে ৷
    আজাদ বলে, ‘আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি ?’
    ‘ও শিয়োর’-জিয়া জবাব দেয় ৷
    আজাদ একটা সিগারেট ধরায় ৷ তার কাছে ব্যাপারটাকে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে ৷ নাজ বা গুলিস্তান সিনেমা হলে সে কত কত যুদ্ধ-চলচ্চিত্র দেখেছে ৷ আজকে সে নিজেই এক যুদ্ধ-অভিযানের কুশীলব ৷
    তাদের নৌকা দুটো এগিয়েই চলেছে ৷ সবাই একদম চুপ ৷ কারণ তারা প্রায় সিদ্ধিরগঞ্জের কাছাকাছি এসে পড়েছে ৷ দূরে পাওয়ার স্টেশনের আলো দেখা যাচ্ছে ৷ ওখানে আছে পাকিস্তানি সৈন্যদের সতর্ক প্রহরা ৷ তাদের জন্যে এটা খুবই স্পর্শকাতর ও সংরক্ষিত এলাকা, সন্দেহ নাই ৷
    ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ৷ এতক্ষণে অন্ধকারের সঙ্গে চোখ খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে ৷ অন্ধকারের মধ্যেও নিজেদের কে কোথায় বসে আছে, দেখা যাচ্ছে ৷
    আজাদ একটা শ্বাস নেয় জোরে ৷ সেই শ্বাস নেওয়ার শব্দটাও তার কানে প্রবলভাবে বাজে ৷ সে কি ভয় পাচ্ছে ?
    হঠাৎই সামনে একটা নৌকার মতো নড়তে দেখা যায় ৷ কী নৌকা, কাদের নৌকা, অন্ধকারে কিছু বোঝা যায় না ৷ তবে তাদের মাঝি বাঙালি ৷ সে হাঁক ছাড়ে, ‘কে যায়!’ রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করে সেই হাঁক প্রলম্বিত হয়ে বিলের ঢেউয়ে ঢেউয়ে যেন আছড়ে পড়ে ৷
    আজাদ ভাবে, হয়তো কোনো সাধারণ নৌকা ৷ বাঙালি কেউ যাচ্ছে ৷ কাজী জবাব দেয়, ‘সামনে যাই ৷’
    কাজীর গলার স্বরটাকে যেন খানিকটা, মাঝির স্বরের তুলনায়ও এই পরিবেশে, আগন্তুকের মতো শোনায় ৷
    ওই নৌকাটা কাছে আসতেই দেখা যায় : সর্বনাশ ৷ ওই নৌকায় পাকিস্তানি মিলিটারি ৷ একটা মুহূর্ত সময় শুধু ৷ আজাদ এখন কী করবে ? তার সামনে কাজীদের নৌকা ৷ সে ফায়ার ওপেন করলে তো কাজীরা মারা পড়বে ৷ তার নিজেকে দিশেহারা লাগে ৷ বদি কারো নির্দেশের অপেক্ষা না করে স্টেন তুলে ব্রাশফায়ার করে ৷ পুরো ম্যাগাজিন খালি করে দেয় ৷ এই শান্ত নিরিবিলি অন্ধকারে অসাড় হয়ে শুয়ে থাকা বিলটার ওপরে আর মেঘভারে নিথর আকাশটার নিচের সমস্ত স্তব্ধতা তখন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ৷ প্রতিপক্ষ নৌকা থেকেও গুলি বর্ষিত হয় ৷ অন্ধকারে ফুটে ওঠে আগুনের ফুলকি ৷ বারুদের গন্ধ বাতাসের ভেজা গন্ধে এসে মেশে ৷
    আজাদ ঠকঠক করে কাঁপে ৷ সামনে শোনা যায় নৌকার ডুবে যাওয়ার শব্দ আর মানুষের আর্তনাদ ৷ মানুষ সাঁতার কাটার চেষ্টা করছে, তাই জলে উঠছে আলোড়ন ৷
    আজাদ এরই মধ্যে নৌকার পাটাতনে রাখা অস্ত্র তুলে নিয়েছে ৷ ফায়ার করার জন্যে সে প্রস্তুত ৷ কিন্তু কমান্ডারের অর্ডার ছাড়া ফায়ার করাটা উচিত হবে না ৷ সে চিৎকার করে অর্ডার চায়, ‘কাজী, কাজী…’
    কাজী তাড়াতাড়ি বলে, ‘ডোন্ট ফায়ার, ডোন্ট ফায়ার ৷’
    আজাদ বলে, ‘ওকে ৷ ওকে ৷’
    কাজী বলে, ‘এই, ওই নৌকা এদিকে আনো ৷ এইটা ফুটা হইয়া গেছে ৷ পানি উঠতেছে ৷ কাম শার্প ৷’
    আজাদদের নৌকা তাড়াতাড়ি সামনে যায় ৷ এদিকে অন্ধকারে বদির গলা, ‘হেল্প মি, আই অ্যাম গোয়িং টু বি ড্রাউন্ড ৷’ টর্চের আলোয় দেখা যায় বদি পানিতে ভাসছে ৷ ও বোধহয় পড়ে গিয়েছিল ৷ ভাসমান বদিকে নৌকায় তোলা হয় ৷ কাজীরাও নৌকা বদল করে উঠে পড়ে আজাদদেরটায় ৷ ওরা এসে আজাদদের নৌকায় উঠতে না উঠতেই প্রথম নৌকাটা ডুবে যায় ৷
    কাজী বলে, ‘দেয়ার বোট হ্যাজ বিন টোটালি ডেস্ট্রয়েড ৷ লেট্স রিট্রিট ৷ স্পিডবোট নিয়া আবার অ্যাটাক করতে আইতে পারে ৷’
    পাকিস্তানি সৈন্যদের নৌকাটা ডুবে গেছে ৷ সৈন্যরা হয় গুলিবিদ্ধ অথবা নিমজ্জিত ৷
    চারদিক অন্ধকার ৷
    একমাত্র নৌকাটি দ্রুত বাইতে বাইতে তারা ফিরে আসছে ৷ দুই নৌকার মাঝি একই নৌকায় ৷ তারা জোরে জোরে দাঁড় বাইছে ৷
    জুয়েল বলে, ‘আমার আঙুলে কী যেন হইছে রে ৷’
    পেন্সিল টর্চ জ্বালিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখা যায়, ডান হাতের তিনটা আঙুল গুলিতে জখম ৷ রক্তে জায়গাটা একাকার ৷ মনে হয় গুলি আঙুল ভেদ করে বেরিয়ে গেছে ৷
    আজাদের শরীর কাঁপছে ৷ উত্তেজনায় ৷ জুয়েলের হাতে রক্ত দেখে সে বুঝতে পারে, তারা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরছে ৷
    দুই মাঝি নৌকা বাইছে ৷ মনে হচ্ছে, তবুও নৌকার গতি বড় শ্লথ ৷ আজাদ আর জিয়া পানি সেচা থালা হাতে নিয়ে বৈঠা বাওয়ার কাজ করছে ৷
    কাজী কামাল হ্যা-হ্যা করে হাসে ৷ ‘আজাদ, আওয়ার এলভিস প্রিসলি, ইজ রোয়িং দ্য বোট ৷ দিস ইজ ফানি ৷’
    আজাদ বলে, ‘আরে আমি বিক্রমপুরের পোলা না ? গ্রামে গিয়ে কত নৌকা বেয়েছি ৷’ এবার নৌকা সত্যি দ্রুত এগোচ্ছে ৷ অবশেষে বিলের শেষে ডাঙা দেখা যায় ৷ আকাশে মেঘের ফাঁকে একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে ৷ শাদা পেয়ালায় পানি নিয়ে রংমাখা তুলি ছেড়ে দিলে যেমন রঙগুলো ছড়াতে থাকে, চাঁদের ওপরে মেঘগুলোকে দেখা যাচ্ছে তেমনি ৷ শেয়ালের ডাক কানে আসছে, কুকুরদের সম্মিলিত প্রতিবাদধ্বনিও ৷ জোনাকি এখন অনেক ৷
    ডাঙা এসে গেছে ৷ নৌকা ঘাটে ভিড়লে সবাই নৌকা থেকে অবতীর্ণ হয় ৷
    রাতটা পিরুলিয়া গ্রামের হাইড আউটেই কাটায় তারা ৷ এটাও আজাদের জন্যে এক নতুন অভিজ্ঞতা ৷ কাঁচা ঘর ৷ প্রাকৃতিক শৌচাগার ৷
    জুয়েলের দিকে তাকিয়ে আজাদের মায়া লাগতে শুরু করে ৷ তার হাতের রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না ৷ আহা বেচারা এর পরে ব্যাট করতে পারবে তো ৷
    হারিকেনের আলোয় জুয়েলের রক্তকে মনে হচ্ছে খয়েরি ৷
    এই হারিকেনের আলোতেই বদি একটা চটিবই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে ৷ কী বই ? আজাদ এগিয়ে যায় ৷ দেখে আলবেয়ার কামুর দি আউট সাইডার ৷ বদির বই পড়ার বাতিকটা গেল না!
    কাজী কামাল বেরিয়ে যায় ফার্স্ট এইডের জন্যে সরঞ্জাম জোগাড় করতে ৷ আজাদ বলে, ‘জুয়েল, ব্যথা করছে ?’
    জুয়েল বলে, ‘হেভি আরাম লাগতেছে ৷ দেশের জন্যে রক্ত দেওয়াও হইল, আবার জানটাও রাখা হইল ৷ কইয়া বেড়াইতে পারুম, দেশের জন্যে যুদ্ধ কইরা আঙুল শহীদ হইছিল ৷ হা-হা-হা ৷’
    আজাদ জুয়েলের কথায় হাসতে পারে না ৷ বোঝাই যাচ্ছে তার খুবই ব্যথা লাগছে ৷ সে ব্যথা ভোলার জন্যে রসিকতা করার চেষ্টা করছে ৷
    কাজী কামাল তুলা আর ডেটল জোগাড় করে আনে ৷ জুয়েলের হাতে ফার্স্ট এইড দেওয়া হয় ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাগানবাড়ি রহস্য – আনিসুল হক
    Next Article মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }