Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মা – আনিসুল হক

    লেখক এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. মা

    ৮
    শহরের মুক্তিযোদ্ধা আর আজাদের বন্ধুবান্ধবদের মনে পড়ে যে, আজাদের মায়ের দুঃস্বপ্নের দৃশ্যটাই শেষতক ইউনুস চৌধুরীর জীবনে বাস্তব রূপ লাভ করেছিল ৷ এখান থেকে ওখান থেকে কৃষ্ণের ষোলশ গোপিনী না হলেও চৌধুরীর জীবনে নারী-ভক্তের উপস্থিতি সাফিয়া বেগম টের পেতে শুরু করেন ৷
    এরই মধ্যে একজন ছিলেন যিনি চৌধুরীর আত্মীয়া, বিবাহিতা, আর সম্পর্কে তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী ৷ তাঁর সঙ্গে মেলামেশাটা সাফিয়া বেগম একদমই সহ্য করতে পারতেন না ৷
    মহিলা নিউ ইস্কাটনের বাসায় একবার বেড়াতেও এসেছিলেন ৷ অতিথি-বৎসল সাফিয়া বেগম সব ধরনের অতিথির ঝামেলা হাসিমুখে সহ্য করলেও এই মহিলাকে সহ্য করতে পারেননি ৷ সম্ভবত তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাঁকে ভবিষ্যতের অশনিসংকেত জানান দিচ্ছিল ৷
    সাফিয়া বেগম স্বামীকে বলেন, ‘এই মহিলাকে আপনি আমার বাসা থেকে যেতে বলেন ৷ আমি আর এক মুহূর্তও তাকে এই বাড়িতে দেখতে চাই না ৷’
    চৌধুরী সাহেব তখন তরলের গুণে বেশ উচ্চমার্গে অবস্থান করছিলেন ৷ তিনি বলেন, ‘কেন ? থাকতে পারবে না কেন ?’
    ‘কারণ ওই মহিলা ভালো না ৷ তার স্বভাব-চরিত্র চালচলন আমার ভালো ঠেকছে না ৷’
    ‘কিন্তু আমার কাছে ভালো ঠেকছে ৷’
    ‘তা তো ঠেকবেই ৷ আপনার সাথে তার কী সম্পর্ক, আমি বুঝি না ৷ ছি-ছি-ছি ৷ উনি না আপনার সম্পর্কে ভাবি হয় ?’
    ‘নিজের তো আর ভাবি না ৷’
    ‘নিজের ভাবি না হলেই আপনি একটা ছেলের বাবা হয়ে আরেকটা ছেলের মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখবেন ?’
    ‘কী সম্পর্ক ?’
    ‘তা আমি কী জানি ?’
    ‘তাহলে কথা বলো কেন ?’
    ‘আপনি তাকে বের করে দেবেন, এই হলো আমার শেষ কথা!’
    ‘যদি বের করে না দেই ৷’
    ‘তাহলে আমি বের করে দেব ৷ সে এখানে এসেছে কোন অধিকারে ?’
    ‘তুমি অধিকারের কথা জিজ্ঞাসা করো ৷ তাহলে আমি তাকে অধিকার দিব ৷ সে এখানে থাকবে আমার স্ত্রীর অধিকার নিয়ে ৷’
    ‘খবরদার ৷ এই কথা শোনার আগে আমার মরণ হলো না কেন ?’
    ‘আমার হক আছে, আমি চারটা পর্যন্ত বিবাহ করতে পারি ৷ তুমি তো শরিয়ত মানো, নামাজ রোজা ইবাদত বন্দেগি করো, তুমি আমার হক মানবা না ?’
    ‘না ৷ মানব না ৷ শরিয়তে আছে চারটা বিয়ে করা যাবে ৷ কিন্তু চার বউকে একদম এক সমান নজরে দেখতে হবে ৷ কাউকে এক সরিষা পরিমাণ বেশি বা কম ভালোবাসা যাবে না ৷ আবার একটু কম বা বেশি অপছন্দও করা যাবে না ৷ সেটা কারো পক্ষে করা সম্ভব না ৷ কাজেই দুই বিয়ে করা ধর্মের মতে উচিত না ৷’
    ‘তুমি বেশি বোঝো ? তুমি জানো আমার পায়ের নিচে তোমার বেহেশত ৷’
    ‘যে স্বামী স্ত্রীর হক আদায় করতে পারে না, তার পায়ের নিচে বেহেশত থাকতে পারে না ৷’
    ‘কথা পেঁচিও না ৷ আমি ওকে বিয়ে করবই ৷’
    ‘আপনি ওই মহিলাকে বিয়ে করলে আমার মুখ আর জীবনেও দেখবেন না ৷ বড় ভাইয়ের বউকে বিয়ের কথা ভাবে, আমি কী আজরাইলের পাল্লায় পড়েছি ৷’
    ‘আমি তোমাকে আরো গয়না দেব ৷ তোমার নামে একটা জাহাজ লিখে দেব ৷’
    ‘আপনার গয়নায় আমি থুতু দেই ৷’
    ‘কী বললা তুমি ?’
    ‘আপনাকে মিনতি করে বলি ৷ আপনি ওই মহিলাকে ছাড়েন ৷ এই বাড়ি-টাড়ি সব আমি আপনার নামেই লিখে দেব ৷ তবু পাগলামি ছাড়েন ৷’
    ‘না, আমি ওকে বিবাহ করবই ৷’
    ‘তাহলে আপনি আমার মরা মুখ দেখবেন ৷’
    সাফিয়া বেগম কেঁদেকেটে অন্য ঘরে চলে যান ৷ পাশের ঘরে আজাদ ৷ সে সব কথা শুনছে ৷ তার মাথা গরম হচ্ছে ৷ অথচ ঠিক করতে পারছে না সে কী করবে ৷ মা-বাবা ঝগড়া করছেন ৷ বাবা আরেকটা বিয়ে করতে চাইছেন ৷ বাড়িতে এইসব হতে থাকলে তার বুঝি কষ্ট হয় না ? তার বুঝি খারাপ লাগে না ? তার বুঝি ইচ্ছা হয় না নিজের ওপরে শোধ নিতে ৷ তার কান দুটো গরম হয়ে ওঠে ৷ সে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে জোরে গান ছেড়ে দেয় ৷ শক্তিশালী গানের যন্ত্র মাথায় তোলে পুরোটা বাড়িকে ৷
    মহিলাকে চৌধুরী আপাতত বিদায় করেন ইস্কাটনের বাসা থেকে ৷
    কিন্তু তাঁর জীবন থেকে নয় ৷ মাঝখানে কিছুদিন চৌধুরী ব্যয় করেন তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের আনজাম সম্পন্ন করতে ৷ তাঁর বৃদ্ধ পিতা আর মাতার অনুমতি আদায় করেন দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারে ৷ আজাদের দাদা-দাদী বিয়ের অনুমতি দিতে খুব বেশি কুন্ঠা দেখান না ৷ ছেলে তাঁদের শিক্ষিত হয়েছে, বড় হয়েছে, আর টাকাকড়ি আয়-উন্নতি করেছে কত! তার তো একাধিক স্ত্রী থাকতেই পারে ৷ মহিলার দিক থেকেও আইনগত প্রস্তুতির ব্যাপার ছিল ৷ তাঁকে প্রথম স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স নিতে হয় ৷ তারপর চৌধুরীর কয়েকজন অতি ঘনিষ্ঠ নিকটাত্মীয় আর বন্ধুর উপস্থিতিতে মগবাজারের এক আত্মীয়ের বাসায় এক রাতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় ৷
    রাত তখন একটার মতো বাজে ৷ সাফিয়া বেগমের বিশ্বস্ত পরিচারিকা জয়নব এসে খবর দেয়, ‘আম্মাজান, আব্বায় আরেকটা বিয়া কইরা বউ নিয়া এ বাড়িতেই আইছে ৷’
    সাফিয়া বেগম মুহূর্তখানেক স্তব্ধ হয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকেন ৷ মুহূর্তখানেকই শুধু ৷ তখন পুরোটা পৃথিবী নৌকার মতো একবারের জন্যে দোল খেয়ে ওঠে ৷ তারপর স্থির হয় ৷ তিনি পরিস্থিতি অনুধাবন করার চেষ্টা করেন ৷ তাঁর সমস্ত শরীর সংকল্পে নড়ে ওঠে ৷ মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত গলিত আগুনের ধারা বয়ে যায় ৷ তিনি কর্তব্য স্থির করেন ৷ পরিচারিকাকে বলেন, ‘আজাদকে এখানে আসতে বলো ৷’ তাঁর কন্ঠস্বরে প্রতিজ্ঞার ধাতব টঙ্কার ৷
    আজাদ আসে ৷ তার মাথার চুল এলোমেলো, চোখের নিচে কালির আভাস, পরনে নিদ্রাপোশাক ৷ সে নিচের পাটির দাঁত ওপরের পাটির সামনে আনছে ৷
    মা বলেন, ‘আমি এখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি ৷ আর কোনো দিন আমি তোর বাবার মুখ দেখব না ৷ তুই কি এই বাড়িতে থাকবি, না আমার সাথে যাবি ?’
    আজাদের সাত-পাঁচ ভাবার দরকার নাই ৷ সে বলে, ‘তোমার সাথে যাব ৷’
    ‘চল ৷ বইপত্র গুছিয়ে নে ৷ তাড়াতাড়ি কর ৷ ৫ মিনিট টাইম দিলাম ৷’
    আজাদ তার ঘরে যায় ৷ তার জিনিসপত্র গোছাতে থাকে ৷ স্কুলের ব্যাগে বইপত্র গোছানোই আছে ৷ কিন্তু তা-ই তো সব নয় ৷ কত কাপড়চোপড় ৷ কতশত গল্পের বই, কমিক্সের বই ৷ খেলনা শত পদের ৷ ক্যামেরা, আর আছে সত্যিকারের একটা রিভলবার ৷ তাদের একটা বন্দুকের দোকানও আছে ৷ সেখান থেকে রিভলভারটা সে নিয়েছে, তার নামেই লাইসেন্স করে ৷
    আজাদ কোনটা রাখবে, কোনটা নেবে! রিভলবারটা সে সঙ্গে নেয় ৷ এটা এই গণ্ডগোলের সময়ে কাজে লাগতে পারে ৷ সে আর তার মা একা বের হচ্ছে ৷ রাত্রির এই ঘন অন্ধকারের অজানা পেটের ভেতরে ঢুকে যাবে তারা ৷ কোথায় যাবে, কী হবে, সবই অনিশ্চিত ৷ তার টেপ রেকর্ডারে রুমীর কন্ঠে একটা কবিতার আবৃত্তি টেপ করা আছে ৷
    বীরশিশু ৷
    মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে,
    মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে,
    তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে,
    দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে…
    এমন সময় হারেরেরেরে,
    ওই যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে…
    ওই ডাকাতদলের হাত থেকে মাকে কে রক্ষা করেছিল ? তার ছেলেই তো ৷
    পাড়ার লোকে সবাই বলত শুনে,
    ‘ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে ৷’
    আর আজাদের মায়ের যদি কিছু হয়! কে তাঁকে বাঁচাবে বিপদ-আপদ থেকে! আজাদকেই তো দায়িত্ব নিতে হবে ৷
    আজাদ তার স্কুলের ব্যাগের মধ্যে রিভলবার আর বুলেট তুলে নেয় ৷
    সাফিয়া বেগম এই বাড়ির কোনো কিছু সঙ্গে নেবেন না ৷ যাকে বলে একবস্ত্রে যাওয়া, তা-ই তিনি যাবেন ৷ কিন্তু তাঁর বাবার দেওয়া গয়নাগুলো আলমারিতে একটা আলাদা বাঙ্যে তোলা আছে ৷ এগুলো না নেওয়াটা উচিত হবে না ৷ এগুলো চৌধুরীর নয় ৷ আর তা ছাড়া আজাদ থাকবে তাঁর সঙ্গে ৷ তাকে তো মানুষ করতে হবে ৷ পড়াতে হবে ৷ খাওয়াতে হবে ৷ পরাতে হবে ৷
    তিনি আলমারি খোলেন ৷ রাশি রাশি গয়নার মধ্যে থেকে কেবল নিজের পিতৃদত্তটুকুন একটা পুঁটলিতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৷ ‘বাদশা, গাড়ি বের করো ৷’
    বাদশা বাড়ির ড্রাইভার ৷ বেগম সাহেবার নির্দেশে সে গাড়ি বের করে ৷ পোর্চে রাখে ৷
    আজাদ আর তার মা বেরিয়ে আসে ঘর থেকে ৷ বাড়ির কাজের লোক, আশ্রিতজন, আত্মীয়স্বজন সব নীরবে তাকিয়ে থাকে তাদের চলে যাওয়ার দিকে ৷ তাদের মাথার ওপর থেকে যেন ছায়া সরে যাচ্ছে ৷
    পরিচারিকা জয়নব কেঁদে ওঠে ৷ সাফিয়া বেগম চাপা গলায় তাঁকে ধমকে দেন, ‘পাড়ার লোকদের রাতের বেলায় জাগিয়ে তুলবি নাকি ? বাড়িতে কি লোক মারা গেছে ? চুপ ৷’
    আজাদ আর তার মা বারান্দা পেরোয় ৷ বারান্দার চারদিকে লাইট ৷ আজাদের পায়ের কাছে নিজের অনেকগুলো ছায়া তাকে ঘিরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ ছায়াগুলোর দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে ৷ টমি, স্প্যানিয়েল কুকুরটা, কী করবে বুঝে উঠছে না ৷ একবার আজাদের কাছে আসছে, একবার ভেতরে ঢুকছে ৷ আজাদ সেদিকে তাকাবে না ৷ তারা গিয়ে গাড়িতে ওঠে ৷ গাড়ি স্টার্ট নেয় ৷ দারোয়ান দৌড়ে এসে সদর দরজা খুলে দেয় ৷ মেম সাহেব বেরিয়ে যাচ্ছেন, সঙ্গে ছোট সাহেব, সে সালাম দেয় ৷ গাড়ি গেট পেরোয় ৷
    আজাদ আর তার মায়ের পেছনে ইস্কাটনের বাড়ির গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার শব্দ রাত্রির নীরবতা ভেদ করে প্রকটিত হয়ে উঠলেও তারা পেছনে তাকায় না ৷
    জীবনে শেষবারের মতো সাফিয়া বেগম তাঁর নিজ নামে রেজিস্ট্রিকৃত ইস্কাটনের রাজপ্রাসাদতুল্য বাড়িটা ছেড়ে চলে যান ৷
    গাড়ি ইস্কাটন থেকে বেরিয়ে অগ্রসর হতে থাকে ফরাশগঞ্জের দিকে ৷ রাতের রাস্তাঘাট দেখতে অন্য রকম লাগে ৷ দোকানপাট বন্ধ ৷ রাস্তাজুড়ে নেড়ি কুকুরের রাজত্ব ৷ সেকেন্ড শো সিনেমা দেখে দর্শকরা ফিরছে ৷ নিয়ন সাইন জ্বলছে এখানে-ওখানে ৷ হঠাৎ হঠাৎ একটা দুটো রিকশা ৷ সেই রিকশার যাত্রী আর চালক দুজনকেই মনে হয় ঘুমন্ত ৷ হয়তো গাড়ির হেড লাইটের আলো চোখে পড়ায় তারা চোখ বন্ধ করে ফেলে বলে এ রকম মনে হয় আজাদের ৷ গাড়ি গিয়ে ফরাশগঞ্জের বাসার সামনে থামে ৷ এ বাসাটায় এখন সাফিয়া বেগমের নিজের ছোট বোন শোভনা আছে ছেলেমেয়ে নিয়ে ৷ আছে জায়েদ, চঞ্চল, মহুয়া, টিসু, কচি প্রমুখ আজাদের খালাতো ভাইবোনেরা ৷ এদের বাবা আবার সম্পর্কে চৌধুরীর ভাই হয় ৷ জিনিসপত্র নিয়ে আজাদ নামে ৷ মায়ের সঙ্গে তেমন কিছু নাই ৷ শুধু একটা ছোট্ট থলে ছাড়া ৷ ড্রাইভার বলে, ‘আম্মা, আমি কি থাকব ?’ মা মাথা নেড়ে ‘না’ বলেন ৷ আজাদ ডোরবেল টিপলে প্রথমে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না ৷ আজাদ ফের বেল টেপে ৷ ভেতর থেকে শোনা যায় আজাদের খালা শোভনার কন্ঠস্বর : ‘কে ?’ ‘আমি আজাদ’ উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যায় ৷ খালার চোখেমুখে শাড়িতে ঘুমের চিহ্ন ৷ তিনি বলেন, ‘এত রাতে যে, বুবু ?’ সাফিয়া বেগম তাঁর প্রশ্নের জবাব দেন না ৷ সিঁড়ি ভেঙে সোজা ওঠেন তিনতলার একলা ঘরটায় ৷ এটা আগে ছিল আজাদের ঘর ৷ তিনি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন ৷
    আজাদ আর তার খালা সাফিয়া বেগমকে অনুসরণ করে তিনতলা পর্যন্ত এসে বারান্দায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৷ খালা বলেন, ‘কী রে ? বুবু রাগ ?’
    ‘হুঁ ৷’
    ‘কেন ?’
    ‘আব্বা বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে এসেছেন ৷’
    ‘বলিস কি!’ শোভনা বেগম এমনভাবে আর্তনাদ করে ওঠেন যেন তার নিজের স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে এইমাত্র ঘরে ঢুকল ৷ তারপর তিনি নিজেও নীরব হয়ে যান ৷
    সাফিয়া বেগম পাঁচ দিন তিনতলার ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখেন ৷ একটাবারের জন্যেও দরজা খোলেন না ৷
    তাঁর ছোটবোন শোভনা, বোনের ছেলেমেয়েরা আর আজাদ প্রথম দিন দুপুর থেকে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে ৷ সাফিয়া বেগম স্পষ্ট গলায় বলেন, ‘এই, দরজায় ধাক্কা দিবি না ৷ সবাই সবার নিজের কাজে যা ৷’
    তাঁর কন্ঠস্বরে কী একটা ক্ষমতা ছিল, কেউ আর তাঁকে জ্বালাতন করে না ৷ সবাই নিচে নেমে যায় ৷
    পরের দিন আবার সকালে সবাই চিন্তিত উদ্বিগ্ন মুখে তিনতলার ঘরের সামনে জড়ো হয় ৷ তারা দরজায় ধাক্কা দিতে আরম্ভ করলে তিনি আবার শান্ত কিন্তু গম্ভীর কন্ঠে বলেন, ‘এই, বলেছি না, দরজায় ধাক্কা দিবি না ৷’
    সবাই আবার নেমে যায় ৷
    তৃতীয় দিন সকালে ফের সবাই ভীষণ চিন্তিত হয়ে সাফিয়া বেগমের বন্ধ দরজার সামনে অবস্থান নেয় ৷ জায়েদের মা শোভনা বেগম আজাদকে শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘বল, তুমি কিছু খাবে না ? না খেয়ে মরে যাবে ? তাহলে আমি বাঁচব কাকে নিয়ে ? আমাকে দেখবে কে ?’ আজাদ এত কিছু বলতে পারে না ৷ শুধু বলে, ‘মা কিছু খাবা না ? না খেয়ে মরবা নাকি ?’
    মা বলে, ‘না খাব না ৷ খিদে পায়নি ৷ খিদে লাগলে নিজেই খাবার চেয়ে নেব ৷’
    চতুর্থ দিনে সবাই ভাবে, সাফিয়া বেগম নিশ্চিত মরতে যাচ্ছেন ৷ শোভনা বলেন, ‘বুবু, তুমি কি আত্মহত্যা করবা ? তাইলে তো তোমার দোজখেও জায়গা হবে না ৷’
    সাফিয়া বেগম বলেন, ‘না, আমি মরব না ৷ একটা আজরাইলের জন্যে আমি মরব না ৷’
    ‘ঘর থেকে বার না হও, কিছু একটা খাও ৷ জানলা দিয়া ভাত দেই ?’
    সাফিয়া বলেন, ‘তুই বেশি কথা বলিস ৷ চুপ থাক ৷’
    ওই দিন রাতেই চৌধুরী সাহেবের গাড়ি দেখা যায় ফরাশগঞ্জের বাসার সামনে ৷ জায়েদ এসে খবর দেয় আজাদকে, ‘দাদা, আপনের আব্বায় আইছে ৷’
    আজাদ তখন তার সঞ্চয় থেকে তার জিনিসটা বের করে ৷ রিভলবার ৷ এটা সে সঙ্গে এনেছিল ভবিষ্যতে কোনো না কোনো কাজে লাগতে পারে, এ আশায় ৷ কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে কাজে লেগে যাবে, সে বুঝতে পারে নাই ৷ সে রিভলবারের মধ্যে গুলি ভরে ৷ তারপর রিভলবারটা হাতে নিয়ে তিনতলার সিঁড়ির মুখে দাঁড়ায় ৷
    চৌধুরী নিচের তলার ঘর পর্যন্ত ঢোকেন ৷ তাঁকে গৃহবাসীরা সাবধান করে দেয়, যেন তিনি ওপরে না ওঠেন ৷ তাঁকে আরো বলা হয়, তিনি যদি ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন, তাহলে আজাদের হাতের অস্ত্র গর্জে উঠতে পারে ৷ সে তার মাকে পাহারা দিয়ে রেখেছে ৷
    চৌধুরী ফিরে যান ৷
    বদ্ধ ঘরের জানালার অন্যপাশ থেকে ঘটনা বিবৃত করা হয় সাফিয়া বেগমকে ৷ সাফিয়া বেগম সব শোনেন ৷ পঞ্চম দিন সকালে তিনি বন্ধ দরজা খুলে দেন ৷
    জায়েদের মা তাঁর জন্যে ভাত আনেন ৷ তরকারি আনেন ৷ তিনি বলেন, ‘মাছমাংস কেন এনেছ ? এইসব নিয়ে যাও ৷ খালি একটু ডাল-ভাত দাও ৷ আর শোনো, আমাকে একটা শাদা শাড়ি দাও ৷ আমার স্বামী তো আর আমার কাছে জীবিত নাই ৷ আমি কি আর রঙিন শাড়ি পরতে পারি!’
    বাড়ির পরিচারিকারা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসে যে, বড় আম্মার পোষা জিন আছে ৷ তারাই তাঁকে এ পাঁচ দিন খাবার সরবরাহ করেছে ৷ না হলে পাঁচ-পাঁচটা দিন একটা দানা মুখে না দিয়ে কেউ বাঁচতে পারে!
    এর পরের তিনটা বছর তিনি কারো সঙ্গে বলতে গেলে কথাই বলেননি ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাগানবাড়ি রহস্য – আনিসুল হক
    Next Article মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }