Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রক্ত সমীক্ষা – আর্থার কোনান ডয়েল

    লেখক এক পাতা গল্প85 Mins Read0
    ⤷

    ০১. মিঃ শার্লক হোমস

    রক্ত সমীক্ষা
    অধ্যায় ০১

    [সামরিক চিকিৎসা বিভাগ থেকে অবসরপ্রাপ্ত জন এইচ, ওয়াটসন, এম, ডি-র স্মৃতি-চারণা থেকে পুনর্মূদ্রণ]

    ০১. মিঃ শার্লক হোমস

    ১৮৭৮ সালে আমি লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রী লাভ করি এবং সেনাবিভাগে সার্জনদের জন্য নির্ধারিত পাঠক্রমে যোগদানের জন্য নেট্‌লি যাত্রা করি। সেখানকার পাঠ শেষ করে যথারীতি সহকারী সার্জনরূপে পঞ্চম নর্দাম্বারল্যাণ্ড রেজিমেণ্টের সঙ্গে যুক্ত হয়। সিএ সময়ে ঐ রেজিমেণ্টের কর্মস্থল ছিল ভারতবর্ষ। আমি সেখানে যোগদান করবার আগেই দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধ বেধে যায়। বোম্বাইতে জাহাজ থেকে নেমেই জানতে পারলাম আমার রেজিমেণ্ট গিরিবর্ত্মের ভিতর দিয়ে অগ্রসর হয়ে ইতিমধ্যেই শত্রুপক্ষের দেশে প্রবেশ করেছে। আমার মত আরও অনেক অফিসারের সঙ্গে যাত্রা করে নিরাপদেই কান্দাহার পৌঁছলাম এবং আমার রেজিমেণ্টকে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নতুন কর্মভার গ্রহণ করলাম।

    সেই অভিযান অনেকের জন্যই এনে দিল সম্মান আর পদোন্নতি, কিন্তু দুর্ভাগ্য  আর বিপদ ছাড়া আমাকে সে আর কিছুই দিল না। আমার বাহিনী থেকে সরিয়া আমাকে বার্কশায়ার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করা হলে এবং তাদের সঙ্গেই মাইওয়ান্দের মারাত্মক যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করলাম। সেখানেই একটি ‘যেজাইল’ বুলেট আমার কাঁধে বিদ্ধ হয়ে একখানা হাড় ভেঙে চুরমার করে দিল আর সাবক্লেভিয়ান ধমনীটা ঘেসড়ে গেল। আমার আর্দালি মারের প্রভুভক্তি আর সাহসের জন্যই খুনে গাজীদের হাত থেকে কোনরকমে বেঁচে গেলাম। একটা ভারবাহী ঘোড়ায় চাপিয়ে সে আমাকে নিরাপদে বৃটিশ লাইনে নিয়ে এল।

    যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট এবং দীর্ঘস্থায়ী কষ্টভোগের ফলে দুর্বল অসহায় অবস্থায় একদল আহত সৈনিকের সঙ্গে আমাকে পেশোয়ারের বেস-হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হল। সেখানেই ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগলাম। ক্রমে ওয়ার্ডের ভিতরে হাঁটাচলা করা আর বারান্দায় রৌদ্রে একটু-আধটু বেড়াবার মত স্বাস্থ্যও ফিরে পেলাম। হঠাৎ ভারতের অভিশাপ আন্ত্রিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। কয়েক মাস আমার জীবনের কোন আশাই ছিল না। অবশেষে আমার যখন সেরে উঠলাম তখন আমি এতই দূর্বল ও শীর্ণকায় হয়ে পড়লাম যে একটা মেডিক্যাল বোর্ড স্থিত করলেন,–আর একটি দিনও নষ্ট না করে আমাকে লণ্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। তদনুসারে আমাকে সৈন্যবাহী জাহাজ ‘ওরোণ্টেস’-এ তুলে দেওয়া হল এবং তার এক মাস পরে পোর্টসমাউথ জেটিতে নামলাম। নষ্টস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের কোন আশাই তখন ছিল না, তবু স্নেহময় সরকার স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য নয় মাস সময় দিলেন।

    ইংলণ্ডে আত্মীয়-স্বজন কেউ ছিল না। কাজেই আমি তখন বাতাসের মত স্বাধীন, অবশ্য দৈনিক এগারো সিলিং ছয় পেনি আয়ে একজন লোক যতটা স্বাধীন হতে পারে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই আমি লণ্ডনে হাজির হলাম, কারণ লণ্ডন হচ্ছে এমন একতা বড় ডোবা যেখানে সারা সাম্রাজ্যের যত ভ্রমণবিলাসী আর আলস্যপরায়ণ লোকেরা এক দূর্বার টানে এসে মিলিত হয়। স্ট্রাণ্ড-এর একটা প্রাইভেট হোটেলে আরামহীন অর্থহীন জীবন কাটতে লাগল। পকেটে যা টাকা ছিল তার তুলনায় একটু বেশী স্বাধীনভাবেই চলতে লাগলাম। ফলে ক্রমে আর্থিক অবস্থা এতই ভীতিপ্রদ হয়ে উঠল যে অবিলম্বেই বুঝতে পারলাম হয় মহানগরী ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যেতে হবে, আর না হয় জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ণ পাল্টাতে হবে। শেষের বিকল্পটাই বেছে নিলাম। স্থির করলাম, হোটেল ছেড়ে কোন স্বল্পব্যয়সাধ্য অঞ্চলে একটা বাসা নেব।

    যেদিন এই সিদ্ধান্ত করলাম সেইদিনই ‘ক্রাইটেরিয়ন বার’-এ দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় কে যেন কাঁধে হাত রাখল। ফিরে দাঁড়িয়েই চিনতে পারলাম—স্ট্যামফোর্ড, বার্টস-এ আমার অধীনে ড্রেসার ছিল। লণ্ডনের বিপুল জনারণ্যে পরিচিত মুখের দর্শন পাওয়া একজন সঙ্গীহীন লোকের কাছে খুবই সুখকর। এর আগে স্ট্যামফোর্ড আমার বিশেষ বন্ধুস্থানীয় ছিল না, কিন্তু সেদিন তাকে আমি সাগ্রহে অভ্যর্থনা জানালাম। সেও আমাকে দেখে খুশিই হল। আনন্দের আতিশয্যে তাকে ‘হোলবর্ণ’ এ মধ্যাহ্ন ভোজনের আমন্ত্রণ জানালাম এবং একটা এক্কাগাড়ি নিয়ে দুজনে যাত্রা করলাম।

    লণ্ডনের জনবহুল রাজপথ দিয়ে সশব্দে যেতে যেতে সবিস্ময়ে সে প্রশ্ন করল, ‘শরীরটাকে কি করে ফেলেছ ওয়াটসন? বাখারির মত শুকিয়ে গেছ, গায়ের রঙ হয়েছে বাদামের মত।‘

    আমার অভিযানের একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ তাকে দিলাম। সে বিবরণ শেষ হতেই আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম। আমার দুর্ভাগ্যের কাহিনী শুনে সমবেদনার সুরে সে বলল, ‘আহা বেচারি! এখন কি করবে?’

    ‘একটা বাসা খুঁজছি’, আমি জবাব দিলাম। ‘যুক্তিসঙ্গত ভাড়ায় একটা আরামদায়ক বাসা পাওয়া যায় কিনা সেই সমস্যারই সমাধান করতে চেষ্টা করছি।‘

    আমার সঙ্গী মন্তব্য করল, ‘খুব আশ্চর্য তো! তুমিই দ্বিতীয় ব্যক্তি যে ঐ কথাগুলি আজ আমাকে বললে।‘

    ‘প্রথম ব্যক্তিটি কে?’ আমি প্রশ্ন করলাম।

    ‘লোকটি হাসপাতালের কেমিক্যাল লেবরেটরিতে কাজ করে। আজ সকালেই সে দুঃখ করছিল। একটা ভাল বাসা সে পেয়েছে। কিন্তু ভাড়াটা তার আয়ত্তের বাইরে। অথচ একজন অংশীদারও সে পাচ্ছে না।‘

    আমি চেঁচিয়ে বললাম, ‘সে যদি বাসার এবং ভাড়ার এজজন অংশীদার সত্যিই চায়, তাহলে আমিই সেই লোক। সঙ্গীহীন থাকার চাইতে একজন অংশীদার আমারও পছন্দ।’

    মদের পাত্রের উপর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে স্ট্যামফোর্ড বলল, ‘শার্লক হোমসকে তুমি এখনও চেন না। স্থায়ী সঙ্গী হিসাবে তুমি হয় তো তাকে পছন্দ করবে না।‘

    ‘কেন? তার বিরুদ্ধে কি বলবার আছে?’

    ‘না, এর কোন দোষের কথা আমি বলছি না। তবে তার চিন্তাভাবনাগুলো একটু অদ্ভুত ধরনের—বিজ্ঞানের কতকগুলি শাখায় বেশ উৎসাহী। আমি যতদূর জানি, লোকটি বেশ ভদ্র।’

    ‘ডাক্তারী ছাত্র নিশ্চয়’, আমি বললাম।

    ‘না—সে যে কি হতে চায় সেবিষয়ে আমার কোন ধারণাই নেই। আমার বিশ্বাস সে শরীর-সংস্থান বিদ্যায় বেশ পারদর্শী। একজন প্রথম শ্রেণীর রসায়নবিদও বটে। কিন্তু আমি যতদূর জানি সে কোনকালে নিয়মিত কোন ডাক্তারীশাস্ত্রের পাঠ নেয় নি। তার পড়াশুনাও অত্যন্ত আগোছালো আর খামখেয়ালি। কিন্তু নানা বিষয়ে জ্ঞান সে এত সঞ্চয় করেছে যে তার অধ্যাপকদেরও তাক লেগে যায়।’

    আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কি কোনদিন জানতে চাও নি সে কি হতে পারে?’

    ‘না। তার মনের হদিস করা সোজা কাজ নয়। তবে খেয়াল জাগলে তার মুখে কথার খই ফোটে।’

    আমি বললাম, ‘তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। যদি কারও সঙ্গেই বাস করতে হয়, আমি পড়াশুনা-করা চুপচাপ লোকই পছন্দ করি। অত্যধিক গোলমাল বা উত্তেজনা সহ্য করবার মত শক্তি এখনও ফিরে পাই নি। ও দুটো বস্তুই আফগানিস্থানে এত বেশী পেয়েছিলাম যে আর যতদিন বেঁচে থাকব ওতেই চলে যাবে। তোমার ওই বন্ধুর সঙ্গে কেমন করে দেখা হতে পারে?’

    সঙ্গী উত্তরে বলল, ‘নিশ্চয় সে লেবরেটরিতে আছে। হয় সে সপ্তাহের পর সপ্তাহ সে স্থানই মাড়ায় না, আর না হয় তো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে কাজ করে। তুমি চাও তো খাওয়া শেষ করে একসঙ্গেই সেখানে পারি।’

    ‘নিশ্চয় যাব’ আমি বললাম। তারপরই আলোচনা অন্য পথে মোড় নিল।

    যে ভদ্রলোকের সহ-বাসিন্দা হবার প্রস্তাব এইমাত্র করলাম, হোলবর্ণ থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে যাবার পথে তার সম্পর্কে আরও কিছু বিবরণ স্ট্যামফোর্ড আমাকে জানান। বলল, ‘তার সঙ্গে যদি মানিয়ে চলতে না পার, তাহলে কিন্তু আমাকে দোষ দিও না। মাঝে মাঝে লেবরেটরিতে দেখা-সাক্ষাতের ফলে তার যেটুকু পরিচয় পেয়েছি তার বেশী কিছু আমি জানি না। তুমিই এক প্রস্তাব করেছ, কাজেই আমাকে যেন দায়ী করো না।’

    আমি বললাম, ‘মানিয়ে চলতে না পারলে সরে গেলেই হবে। তারপর সঙ্গীর দিকে একটু কড়া চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘দেখ স্ট্যামফোর্ড, মনে হচ্ছে বিশেষ কোন কারণে তুমি এ ব্যাপারে নিজেকে জড়াতে চাইছ না। লোকটির মেজাজ খুব খাপ্পা নাকি? না আর কিছু? রেখে-ঢেকে কথা বলো না।’

    সে হেসে বলল, ‘অনির্বচনীয়কে ভাষায় প্রকাশ করা সহজ নয়। আমার বিচারে হোমস একটু অতি-বৈজ্ঞানিক ধাতের লোক—প্রায় অনুভূতিহীন। অনিষ্টসাধনের উদ্দেশ্য নয়, শুধুমাত্র ফলাফল সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভের গবেষণার খাতিরেই সে তার বন্ধুকে একচিমটে উদ্ভিজ্জ উপক্ষার ক্ষেতে দিচ্ছে, তাও কল্পনা করা যায়। তার প্রতি সুবিচার করতে হলে বলতে হয়, ওই একই কারণে সমান তৎপরতার সঙ্গে সে নিজেও ওটা খেতে পারে। নির্দিষ্ট ও সঠিক জ্ঞানার্জনের প্রতি তার একটা নেশা আছে বলে মনে হয়।’

    ‘এটা তো খুব ভালো কথা।’

    ‘ভাল, তবে বাড়াবাড়ি ঘটতে পারে। যখন কেউ ব্যবচ্ছেদ-কক্ষে মৃত প্রাণীকে লাঠি দিয়ে পিটাতে শুরু করে, তখন সে ব্যাপারটা বড়ই কিম্ভুতকিমাকার হয়ে ওঠে।’

    ‘মৃত প্রাণীকে লাঠির বাড়ি!’

    ‘হ্যাঁ। মৃত্যুর পরে শরীরে আঘাতের দাগ কতটা পড়ে সেটা পরীক্ষা করে দেখবার জন্য তাকে এরকম করতে আমি নিজের চোখে দেখেছি।’

    ‘তারপরেও তুমি বলছ, সে মেডিক্যালের ছাত্র নয়?’

    ‘না। ইশ্বর জানেন তার পড়াশুনার উদ্দেশ্য কি। কিন্তু আমরা তো এসে পড়েছি। তার সম্পর্কে নিজেই তোমার ধারণা গড়ে নিও।’ বলতে বলতে একটা সংকীর্ণ গলিতে মোড় নিয়ে ছোট পাশের দরজার ভিতর দিয়ে হাসপাতালের একটা অংশে প্রবেশ করলাম। এ জায়গা আমার পরিচিত। বিনা সাহায্যেই ঠাণ্ডা পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে উঠে লম্বা বারান্দা ধরে এগোতে লাগলাম। দুই পাশে সাদা দেওয়াল আর বাদামী দরজার সারি। প্রায় শেষ প্রান্তে নীচু খিলানওয়ালা যে পথটা বেরিয়ে গেছে সেটা ধরে এগিয়ে গেলেই কেমিক্যাল ল্যাবরেটারি।

    উঁচু ঘর। চারদিকে অসংখ্য বোতল। কতক সাজানো, কতক ছড়ানো। এখানে-সেখানে চওড়া নীচু টেবিল। তার উপর বকযন্ত্র, টেস্ট-টিউব আর ছোট বুনসেন বাতি, তার থেকে নীল কাঁপা-কাঁপা শিখা বেরুচ্ছে। ঘরে একটিমাত্র ছাত্র কোণের টেবিলে উপুড় হয়ে কাজ করছে। আমাদের পায়ের শব্দ শুনে যে একবার ফিরে তাকাল। তারপর সোজা দাঁড়িয়ে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। আমার সঙ্গীর দিকে চোখ ফেলে ‘পেয়েছি! পেয়েছি!’ বলে চীৎকার করতে করতে সে একটা টেস্ট-টিউব হাতে নিয়ে আমাদের দিকে ছুটে এল। ‘এমন একটা রি-এজেন্ট আমি পেয়েছি একমাত্র হিমোগ্লোবিন দ্বারাই যার থেকে তলানি পড়ে, আর কিছুর দ্বারাই নয়।‘ একটা সোনার খনি আবিষ্কার করলেও বোধ হয় এর চাইতে বেশী আনন্দে তার চোখ-মুখ উদ্ভাসিত হত না।

    ‘ডাঃ ওয়াটসন, মিঃ শার্লক হোমস’, আমাদের দু-জনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে স্ট্যামফোর্ড বলল।

    বেশ জোরের সঙ্গে আমার হাত চেপে ধরে সে সাদরে বলল, ‘কেমন আছেন? মনে হচ্ছে, আপনি আফগানিস্থানে ছিলেন?’

    ‘সেকথা আপনি জানলেন কেমন করে?’ আমি সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলাম।

    মুচকি হেসে সে বলল, ‘ও কথা থাক।’ এখন সমস্যাটা হচ্ছে হিমোগ্লোবিন নিয়ে। আমার এই নতুন আবিষ্কারের গুরুত্ব আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন?’

    আমি জবাব দিলাম, ‘রসায়নের দিক থেকে নিঃসন্দেহে ইণ্টারেস্টিং, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে—‘

    ‘বলেন কি? চিকিৎসা-আইনের ক্ষেত্রে এতবড় আবিষ্কার গত কয়েক বছরের মধ্যে হয় নি। আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে রক্তের দাগের বিষয়ে আমরা একটা অভ্রান্ত পরীক্ষা পেয়ে যাচ্ছি। চলুন তো ওখানে!’ আগ্রহের আতিশয্যে আমার কোটের আস্তিন চেপে ধরে যে টেবিলে সে কাজ করছিল সেখানে আমাকে টেনে নিয়ে গেল। ‘কিছুটা তাজা রক্ত নেওয়া যাক,’ বলে একটা লম্বা ভোঁতা সূঁচ আঙুলে ঢুকিয়ে দিল, আর ফোঁটা কয়েক রক্ত একটা পাত্রে ধরে নিল। ‘এবার এইটুকু রক্ত এক লিটার জলে মিশিয়ে দিলাম। দেখতে পাচ্ছেন, মিশ্রণটার রঙ বিশুদ্ধ জলের মত হয়ে গেল। এতে রক্তের অনুপাত দশ লক্ষে একের বেশী হবে না।’ কথা বলতে বলতে সে ঐ পাত্রে কয়েক টুকরো সাদা স্ফটিক ফেলে দিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা স্বচ্ছ তরল পদার্থ যোগ করল। দেখতে দেখতে মিশ্রণটায় মেহগেনি রঙ ধরল, আর কাঁচের পাত্রটার নীচে কিছু বাদামী রঙের তলানি পড়ল।

    ‘হাঃ! হাঃ!’ সে হাততালি দিয়ে হেসে উঠল, যেন ছোট শিশু একটা নতুন খেলনা পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে। ‘এটা কি বলুন তো?’

    ‘একটা কোন সূক্ষ্ম পরীক্ষা বলে মনে হচ্ছে,’ আমি বললাম।

    ‘সুন্দর! সুন্দর! পুরনো “গুয়াইকাম” পরীক্ষাটা যেমন গোলমেলে তেমনি অনিশ্চিত। রক্ত কণিকার অনুবীক্ষণিক পরীক্ষাটাও তাই। রক্তের দাগটা কয়েক ঘণ্টা পুরনো হয়ে গেলে তো পরের পরীক্ষাটা একেবারেই মূল্যহীন। অথচ এই পরীক্ষাটা তাজা বা বাসি উভয় রক্তের বেলায়ই সমান কার্যকরী। এই পরীক্ষাটা যদি আগে আবিষ্কৃত হত, তাহলে শত শত লোক যারা আজও পৃথিবীর মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা অনেক আগেই তাদের কৃত অপরাধের শাস্তি ভোগ করত।’

    ‘সত্যি!’ আমি আস্তে আস্তে বললাম।

    ‘খুনের মামলাগুলি ক্রমাগত একটি পয়েণ্টের উপরই ঝুলে থাকে। হয় তো খুনের কয়েক মাস পরে একটা লোকের উপর সন্দেহ পড়ল। তার কাপড়-চোপড় পরীক্ষা করে বাদামী দাগ পাওয়া গেল। সেগুলো রক্তের দাগ, কাদার দাগ, মরচের দাগ, ফলের দাগ, না আর কিছু? এই প্রশ্ন অনেক বিশেষজ্ঞকেই বিচলিত করেছে। কিন্তু কেন? কারণ, কোন নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা-ব্যবস্থা ছিল না। এবার “শার্লক হোমস পরীক্ষা”টা পাওয়া গেল, সুতরাং আর কোন অসুবিধা রইল না।’

    কথা বলার সময় তার চোখ চকচক করছিল। বুকের উপর হাত রেখে সে এমনভাবে মাথা নীচু করল যেন কল্পনার চোখে দেখা এক সপ্রশংস জনতাকে অভিবাদন জানাচ্ছে।

    তার উৎসাহ দেখে বিস্মিত হয় আমি বললাম, ‘আপনাকে অভিবাদন জানানো উচিত।’

    ‘গত বছর ফ্রাংকফোর্টে ভন বিস্‌কর্ফের কেসটাই ধরুন। এ পরীক্ষাটা তখন চালু থাকলে নির্ঘাৎ তার ফাঁসি হত। আরও ধরুন, ব্রাডফোর্ডের ম্যাসন, কুখ্যা মুলার; মঁৎপেলিয়ের-এর লেফেভার এবং নিউ অর্লিয়ান্সের স্যামসন। এ রকম আরও এককুড়ি কেসের কথা আমি বলতে পারি যেখানে এই পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে অপরাধের প্রমাণ হতে পারত।’

    স্ট্যামফোর্ড হেসে বলল, ‘আপনি দেখছি অপরাধের একটি জীবন্ত পঞ্জিকা। এবিষয়ে আপনি একখানি পত্রিকা বের করতে পারেন। তার নাম দিন “অতীতের পুলিশী সমাচার”।’

    আঙুলের মাথায় একটুকরো প্লাস্টার জড়াতে জড়াতে শার্লক হোমস বলল, ‘পত্রিকাটিকে খুব কৌতূহলোদ্দীপক করা যায় কিন্তু।’ তারপর হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠল, ‘কিন্তু আমাকে সাবধান হতে হবে। কারণ আমাকে নানারকম বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়।’ সে তার হাতখানা বাড়িয়ে ধরল। দেখলাম, তার সারা হাত কড়া এসিডে বিবর্ণ হয়ে গেছে এবং তাতে আগাগোড়া টুকরো টুকরো প্লাস্টার জড়ানো।

    একটা তিন-পায়া উঁচু টুলে নিজে বসে আর একটা টুল পা দিয়ে আমার দিকে ঠেলে দিয়ে স্ট্যামফোর্ড বলল, ‘একটা কাজে আমরা এসেছি। আমার এই বন্ধু একটা আস্তানা খুঁজছেন। আপনি বলেছিলেন একজন অংশীদার খুঁজে পাচ্ছেন না, তাই আপনাদের দুজনকে দেখা করিয়ে দিলাম।’

    আমার সঙ্গে এক বাসায় থাকার প্রস্তাবে শার্লক হোমসকে খুশিই মনে হল। বলল, ‘বেকার স্ট্রীটে একটা “সুইট” দেখেছি। আমাদের দুজনের বেশ কুলিয়ে যাবে। আশা করি তামাকের কড়া গন্ধে আপনার আপত্তি হবে না?’

    জবাব দিলাম, ‘আমি নিজেও ধূমপান করি।’

    ‘তাহলে তো ভালই হল। নানারকম রাসায়নিক পদার্থ আমার কাছে থাকে। মাঝে মাঝে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। তাতে আপনার অসুবিধা হবে না তো?’

    ‘মোটেই না।’

    ‘ভেবে দেখি—আমার আর কি দোষ আছে। মাঝে মাঝে আমি চুপচাপ থাকি, পরপর কয়েকদিন হয় তো মুখই খুলি না। তখন যেন মনে করবেন না যে আমি খুব রেগে আছি। স্রেফ আমাকে একা থাকতে দেবেন, ব্যাস সব ঠিক হয়ে যাবে। এবার আপনার কি বলার আছে বলুন। একসঙ্গে থাকবার আগে দুজনেরই পরস্পরের দোষ-ত্রুটিগুলি জানা থাকা ভাল।’

    তার জেরায় আমি হেসে উঠলাম। বললাম, ‘আমার একটা কুকুরের বাচ্চা আছে। আমার স্নায়ুগুলো খুব দূর্বল হয়ে পড়েছে, তাই হট্টগোল পছন্দ করি না। সময়ে অসময়ে ঘুম থেকে উঠি। আলসেমি করি। ভাল অবস্থায় আরও কিছু কিছু দোষ আছে, তবে আপাতত ঐগুলিই প্রধান।’

    উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সে প্রশ্ন করল, ‘হট্টগোল বলতে কি আপনি বেহালা বাজানোটাকে ধরেছেন?’

    ‘সেটা বাদকের উপর নির্ভর করে,’ আমি জবাব দিলাম। ‘বেহালার ভাল বাজনা তো দেবতাদের উপভোগ্য। কিন্তু বাজনা যদি বাজে হয়—’

    হো-হো করে হেসে সে বলল, ‘বাস, বাস, তাহলে ঠিক আছে। ধরে নিচ্ছি ব্যবস্থাটা পাকা, অবশ্য যদি বাসাটা আপনার পছন্দ হয়।’

    ‘কখন দেখা যায়?’

    ‘কাল দুপুরে এখানে আসুন। একসঙ্গে গিয়ে সব পাকা করে ফেলব,’ সে জবাব দিল।

    করমর্দন করে আমি বললাম, ‘ঠিক আছে। কাল দুপুরে।’

    সে আবার কাজে মন দিল। আমরা হোটেলের দিকে পা বাড়ালামা।

    হঠাৎ থেমে স্ট্যামফোর্ডের দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলাম, ‘ভাল কথা, আমি আফগানিস্থান থেকে এসেছি উনি বুঝলেন কি করে?’

    একটু রহস্যময় হাসি হেসে সঙ্গী বলল, ‘ঐটেই তাঁর বৈশিষ্ট্য। উনি যে কি করে সবকিছু বোঝেন, সেটা আরও অনেকে জানতে চেয়েছে।’

    হাত ঘসতে ঘসতে আমি বললাম, ‘ওঃ! সেটা তাহলে একটা রহস্য? বেশ আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। আমাদের দুজনের মিলন ঘটিয়েছ বলে তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তুমি তো জান, “মানুষের উপযুক্ত পাঠ্য বিষয়ই হল মানুষ।’

    বিদায় নেবার সময় স্ট্যামফোর্ড বলল, ‘তাহলে ওকে পাঠ কর। যদিও খুব জটিল সমস্যায় পড়বে। আমি বাজি রেখে বলতে পারি, তুমি তাকে যতটা জানতে পারবে তার চাইতে অনেক বেশী সে তোমাকে জানতে পারবে। নমস্কার।‘

    ‘নমস্কার।’ অপরিচিতের সম্পর্কে প্রচুর আগ্রহন নিয়ে হোটেলের দিকে পা বাড়ালাম।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনতুন দশ রহস্য – আর্থার কোনান ডয়েল
    Next Article শার্লক হোমসের অভিযান – আর্থার কোনান ডয়েল

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }