Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহধর্মিণী – পাঁচকড়ি দে

    পাঁচকড়ি দে এক পাতা গল্প101 Mins Read0

    সহধর্মিণী – ৫

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    সংসার নিয়তির লীলা বুঝিয়া উঠা কঠিন। হেমাঙ্গিনী সুখী হইতে পারিল না। সে অবিরত নিজের হৃদয়ের সহিত প্রাণপণ যুদ্ধ করিতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই রমেন্দ্রের মূর্ত্তি তথা হইতে উৎপাটিত করিতে পারিল না। যতই বিবাহের দিন সন্নিকট হইয়া আসিতে লাগিল, সে ততই আরও বিমর্ষ, আরও অসুখী হইয়া পড়িল।

    অনন্তশক্তি নিয়তি অদ্ভুত লীলাময়ী। সর্বত্র তাহার অবাধ, অপ্রতিহত শক্তি। নিয়তির লেখা দেবতারও অপরিজ্ঞাত, মানুষ কোন ছার। যে রমেন্দ্রের দুই বৎসর যাবৎ কোনও সন্ধান নাই, হেমাঙ্গিনীর বিবাহের কয় দিন মাত্র পূর্ব্বে তিনিই এক দিন সহসা অপ্রত্যাশিতভাবে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

    দুরু দুরু বক্ষে অত্যন্ত সঙ্কোচের সহিত হেমাঙ্গিনী রমেন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ করিল। দুই বৎসরেও সে তাহাকে ভুলে নাই। সে তাঁহার দিকে মুখ তুলিয়া চাহিতে পারিল না, অবনত মস্তকে দাঁড়াইয়া রহিল।

    রমেন্দ্র বলিলেন, “পাস হইয়া বৰ্ম্মায় একটা চাকরী পাইয়া চলিয়া গিয়াছিলাম, এই দুই বৎসরের মধ্যে ছুটি পাই নাই।”

    হেমাঙ্গিনী মৃদুস্বরে বলিল, “সংবাদ দেন নাই কেন?”

    “সাহস করি নাই—আপনাকে পত্র লিখিতে সাহস করি নাই—কি জানি যদি বিরক্ত হন।”

    হেমাঙ্গিনী কথা কহিল না। তাহার কথা কহিবার ক্ষমতা ছিল না, আপাদমস্তক কাঁপিতেছিল, ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘর্ম্মরেখা দেখা দিয়াছিল।

    রমেন্দ্র বলিললেন, “এখন কিছু দিন কলিকাতায় থাকিব। পূর্ব্বের ন্যায় আপনাদের বাড়ীতে থাকিয়া আপনাদের তত্ত্ব লইতে পারি কি? আমি বড় লোক নহি—আপনারা বড়—“

    হেমাঙ্গিনীর বিশাল নেত্রদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হইয়া আসিল। তাহা দেখিয়া রমেন্দ্র ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “এ কি! আপনি কি আমি আসায়—হয় ত বিরক্ত করিলাম!”

    হেমাঙ্গিনী রুদ্ধকণ্ঠে বলিল, “না—বিরক্ত করেন নাই—আমি সুখী নই!”

    “সুখী নই! কেন—কেন—আপনি কি জানেন না—আমি কি আপনাকে সুখী করিতে চেষ্টা করিতে পারি না? আপনার মা এক সময়ে আমায় পুরস্কৃত করিতে চাহিয়াছিলেন। হেমাঙ্গিনী, হেম, আমি তোমায় তাঁহার নিকট চাহিলে তুমি কি অসন্তুষ্ট হইবে, রাগ করিবে?”

    অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া তাড়াতাড়ি হেমাঙ্গিনী বলিল, “না—না—এমন কাজ করিবেন না। আমার বিবাহ স্থির হইয়া গিয়াছে।”

    রমেন্দ্র হতাশভাবে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস টানিয়া বলিলেন, “স্থির হইয়া গিয়াছে!”

    হেমাঙ্গিনী অতি ম্রিয়মাণ কণ্ঠে বলিল, “হাঁ, আমি সুখী নই। আপনি আর এখানে আসিবেন না—আর আমার সঙ্গে দেখা করিবেন না।”

    “কে সে—কে তিনি—সতীশ—সতীশ বাবু?”

    “হাঁ, তাঁহার সঙ্গে আমার বিবাহ স্থির হইয়াছে।”

    হেম—হেম, আমি তোমার মন কি জানি না—আমি কি এমনই অন্ধ? আর আমি যে তোমাকে কিরূপ ভালবাসি, আজ দুই বৎসর ভালবাসিয়া আসিতেছি, তাহাও কি তুমি জান না? নিশ্চয় জান—এখনও বিবাহ হয় নাই।”

    হেমাঙ্গিনী এবার মস্তক তুলিল, কহিল, “আমি অস্বীকার করি না—আমি তোমায় ভালবাসি, তবে তোমার সঙ্গে আমার বিবাহ হইতে পারে না—তুমি আর কখনও আমার সঙ্গে দেখা করিও না।”

    “কেন—কেন?”

    এই বলিয়া রমেন্দ্র ব্যাকুলভাবে হেমাঙ্গিনীর হাত দু’খানি নিজের দুই হাতের মধ্যে লইলেন। হেমাঙ্গিনী হাত টানিয়া লইতে চেষ্টা পাইয়াও তাহা পারিল না, তাহার কমলায়ত চক্ষু দুটি জলে ভাসিয়া যাইতে লাগিল। সে বাষ্পরূদ্ধ কণ্ঠে কহিল, “ছেড়ে দাও—আমায় ভুলে যাও—আর কখনও দেখা করিও না!”

    “যদি যাইতে হয়, তবে হেম—হেম, বিদায়।”

    তিনি নিঃসজ্ঞভাবে হেমাঙ্গিনীর একটা হাত টানিয়া লইয়া নিজের ব্যথিত বুকের উপরে চাপিয়া ধরিলেন, এবং তখনই রুদ্ধশ্বাসে তথা হইতে প্রস্থান করিলেন।

    আর এক ব্যক্তি যে এই দৃশ্য দেখিলেন তাহা তাহারা কেহই জানিতে পারিলেন না। তিনি সতীশচন্দ্র। তিনি জানিতেন না, চিন্তাও করেন নাই যে রমেন্দ্রনাথ হেমাঙ্গিনীর নিকটে রহিয়াছে।

    তিনি সম্মুখে যে দৃশ্য দেখিলেন, তাহাতে ক্রোধে, ঈর্ষায় স্তম্ভিতপ্রায় দাঁড়াইয়া রহিলেন, তাঁহার চলচ্ছক্তি রহিত হইয়াছিল। তিনি তাহাদের সমস্ত কথা শুনিতে ও সমস্ত কাৰ্য্যই দেখিতে পাইয়াছিলেন। যাহার সহিত তাঁহার কয়েক দিন পরে বিবাহ হইবে, সে অপরের সহিত প্রেমালাপ করিতেছে! তাঁহার মস্তক হইতে প্রচণ্ড অগ্নিশিখা ছুটিল। তিনি হেমাঙ্গিনীর সহিত সাক্ষাৎ না করিয়া দ্রুত পদে পাগলের মত বাহির হইয়া গেলেন। কতক্ষণ তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়াছিলেন, তাহা তিনি নিজেই জানেন না। পথে পথে ঘুরিয়া মস্তিষ্ক কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইলে তিনি গৃহে ফিরিলেন। তিনি এ কথা নিজের মনেই রাখিলেন, হেমাঙ্গিনীকে কোন কথা বলিলেন না।

    হেমাঙ্গিনীও জানিতে পারিল না যে রমেন্দ্রের সহিত সেই সাক্ষাৎকার-দৃশ্য সতীশবাবু দেখিতে পাইয়াছেন। বিবাহ হইবার পূর্ব্বেই উভয়ে উভয়ের নিকটে হৃদয়ের কথা লুকাইলেন। এরূপ পরিণয়ের পরিণাম কিরূপ হইবে, তাহা এখন কেবল নিয়তির তমোময় গর্ভেই নিলীন রহিল।

    .

    সতীশচন্দ্রের সহিত হেমাঙ্গিনীর শুভ বিবাহ হইয়া গেল। সতীশচন্দ্র স্ত্রী ও শাশুড়ী উভয়কে লইয়া নিজের জমিদারী কালিপুরে চলিয়া গেলেন। হেমাঙ্গিনীর জননীকে আর বহুকাল শয্যাগত থাকিতে হইল না। শীঘ্রই তিনি স্বামীর সহিত অনন্তলোকে পুনারায় মিলিত হইলেন।

    তাহার পর তিন বৎসর অতীত হইয়াছে। এখন হেমাঙ্গিনী এক পুত্র ও এক কন্যার জননী। কিন্তু দিন দিন তাহার স্বাস্থ্য ভগ্ন হইতেছে। তজ্জন্য সতীশচন্দ্র অত্যন্ত ভাবিত হইয়া পড়িয়াছেন। অনেক চিন্তার পর এক দিন তিনি বায়ু-পরিবর্তনের নিমিত্ত তাহাকে মধুপুরে লইয়া যাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন, হেমও সম্মত হইল। তখন তাহারই আয়োজন হইতে লাগিল।

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    আশ্বিন মাস। শরতের মধুর সমীর-হিল্লোল সবে মাত্র ঝির ঝির করিয়া বহিতে আরম্ভ করিয়াছে। সেই সময় এক দিন প্রাতে কলিকাতা হইতে এক খানি ট্রেন মধুপুর স্টেশনে আসিয়া দাঁড়াইল। জন- কয়েক আরোহী গাড়ী হইতে নামিলেন। গাড়ী আবার মহাবেগে দৃষ্টির বহির্ভূত হইয়া গেল। যাঁহারা নামিলেন, তাহারা আমাদের পূর্ব্বের পরিচিত, আর কেহই নহেন, পুত্রকন্যাসহ সস্ত্রীক সতীশচন্দ্র

    হেমাঙ্গিনী এখনও পূর্ব্বের ন্যায় সেই কমল-কমা মাধুরীময়ী স্থির যৌবনা সুন্দরী আছে। তবে সে এখন স্বামীর সংসারের কর্ত্রী, স্বগৃহিণী হইয়াছে, আর তাহার সে যৌবনের বিলোল ভাব নেই।

    কোন্ বাড়ীতে সতীশচন্দ্র বাস করিবেন, তাহা তিনি জানিতেন না। রাখাল বাবু নামে তাঁহার এক পরিচিত বন্ধু মধুপুরে থাকিতেন। তাঁহাকেই পত্র লেখায় তিনি সতীশচন্দ্রের জন্য একটী বাড়ী ছয় মাসের জন্য ভাড়া করিয়াছেন। সে বাড়ী কিরূপ, ষ্টেশন হইতে কতদূর, তাহার কিছুই সতীশচন্দ্রের জানা নাই। ভাবিয়াছিলেন রাখাল বাবু ষ্টেশনে থাকিবেন;কিন্তু দেখিলেন, তিনি ষ্টেশনে আসেন নাই, একজন তাঁহার সম্পূর্ণ অপরিচিত লোক পাল্কী ও গরুর গাড়ী লইয়া অপেক্ষা করিতেছে।

    রাখাল বাবুকে না দেখিতে পাইয়া সতীশচন্দ্ৰ মনে মনে বিশেষ বিরক্ত হইলেন। স্ত্রীকে বলিলেন, “দেখিতেছি এসব লোকের ভদ্রতা জ্ঞান একেবারেই নাই।”

    হেম স্বামীর কথায় সায় দিতে পারিল না, ঘাড় নাড়িয়া স্বামীর কথার উদ্দেশ্যে বলিল, “তা’ নাও হইতে পারে, কোন বিশেষ কাজে বোধ হয় তিনি আসিতে পারেন নাই, নিশ্চয়ই লোক পাঠাইয়া থাকিবেন।”

    এই সময়ে একটী অপরিচিত লোক আসিয়া সতীশচন্দ্রের মুখের দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার নামই কি সতীশ বাবু?”

    সতীশচন্দ্র ঘাড় নাড়িয়া বলিল, “হাঁ আমারই নাম সতীশ বাবু।”

    সতীশচন্দ্র নীরব হইবামাত্র সেই লোকটা আবার বলিল, “রাখাল বাবু সকালে বিশেষ কাজে দেওঘর গিয়াছেন, আমি আপনার জন্য পাল্কী আর গাড়ী আনিয়াছি।”

    সতীশচন্দ্র ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, “ভাল, চল। কতদূর যাইতে হইবে?”

    “বেশী দূর নয়, পানিয়াখোলা।”

    পানিয়াখোলা! সে আবার কোথায়? সতীশচন্দ্র ভাল বুঝিতে পারিলেন না। ভৃত্যাদিগকে মাল- পত্র গাড়ীতে তুলিতে বলিয়া স্ত্রী ও পুত্রকন্যাকে পাল্কীতে তুলিয়া দিয়া দ্বারবানকে পাল্কীর সঙ্গে যাইতে বলিলেন, নিজে রাখাল বাবুর লোকের সহিত পদব্রজে পানিয়াখোলার দিকে চলিলেন।

    নূতন দেশে নূতন বাড়ীতে উঠিয়া সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া লইতে সতীশচন্দ্রের প্রায় সমস্ত দিনইটাই কাটিয়া গেল। বৈকালে স্থানটা একটু দেখিবার জন্য তিনি বাটী হইতে বাহির হইলেন। তিনি যে বাটীতে উঠিলেন তাহা অতি সুন্দর, কবি-কল্পনা কমনীয়। সম্মুখে অজয় নদ ঝির ঝির করিয়া বহিয়। চলিয়াছে, দুই পার্শ্ব নব-পল্লব-মন্ডিত-সরল-তরুরাজি-পরি বিবিধ বিহগকুলের কল- ধ্বনি-মুখরিত। নিকটে দুই তিনখানি বাড়ী ভিন্ন আর বাড়ী নাই; আর সেই বাড়ীগুলিও খালি, কেবলমাত্র এক একটি মালী বাস করে। অনুসন্ধানে জানিলেন, অন্যান্য লোক প্রায় সকলেই ষ্টেশনের ও থানার নিকটে বা রেলের অপর ধারে বাস করেন। সুতরাং সতীশ বাবু অতি নির্জন স্থানেই আসিয়া পড়িলেন। বায়ু পরিবর্তনর সত্যই স্থানটা বিশেষ উপযোগী।

    তিনি এদিক ওদিক ঘুরিয়া দুই একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করিয়া, রাখাল বাবুর বাড়ী অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিলেন। রাখাল বাবু সবে মাত্র দেওঘর হইতে তখনই ফিরিয়াছেন। তিনি সতীশচন্দ্রকে অতি সমাদরে বসাইলেন ও বলিলেন, “বিশেষ কাজে দেওঘর যাইতে বাধ্য হইয়াছিলাম, এইমাত্র ফিরিলাম; সেই জন্য ষ্টেশনে উপস্থিত থাকিতে পারি নাই, ক্ষমা করিবেন। মধুপুর কিরূপ দেখিতেছেন?”

    সতীশচন্দ্র বলিলেন, “স্থানটা নিতান্ত মন্দ নহে, তবে লোক জন বড় অল্প।”

    “এখনও বায়ু-পরিবর্তনের জন্য অনেকে আসিয়া উপস্থিত হ’ন নাই, ক্রমে অনেক লোক দেখিতে পাইবেন।”

    “এখানে ভাল ডাক্তার আছেন ত?”

    “হ্যাঁ, ডাক্তারের অভাব হইবে না—রেলের ডাক্তার-“

    সতীশচন্দ্র রাখাল বাবুকে বাধা দিয়া বলিলেন, “তাঁহাকে সব সময় ত পাওয়া যায় না?”

    “হাঁ, তাঁহাকে মাঝে মাঝে লাইনে যাইতে হয় বটে, তবে একজন বেশ ভাল ডাক্তার এখানে প্রাক্‌টিস করেন, বয়স বেশী নয়—”

    সতীশচন্দ্র ওষ্ঠ কুঞ্চিত করিয়া বলিলেন, “বয়স কম ডাক্তার! সে এখনও ডাক্তারীর কি শিখিয়াছে? আপনাকে প্রথমেই লিখিয়াছিলাম যে আমার স্ত্রীর শরীর ভাল নয়, তা’র পর ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে। এ অবস্থায় যেখানে ভাল ডাক্তার নাই, সেখানে আমার থাকা কিছুতেই হইতে পারে না। আপনি লিখিয়াছিলেন যে, এখানে খুব ভাল ডাক্তার আছে।”

    “হাঁ, আমরা তাঁহাকে খুব ভাল ডাক্তার বলিয়াই জানি। এই প্রায় দুই বৎসর তিনি এখানে আছেন, তাঁহার খুব প্রশংসা, সকলেই তাঁহাকে ডাকে—রমেন্দ্র বাবু—“

    রমেন্দ্র বাবু! সতীশচন্দ্র বিস্ময়-বিস্ফারিত নয়নে রাখাল বাবুর মুখের দিকে চাহিলেন, তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি নাম?”

    “রমেন্দ্র বাবু।”

    “কি কি?”

    রাখাল বাবু, সতীশ বাবুর স্বরে বিস্মিত হইয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিলেন, ভাবিলেন সতীশ কি আজকাল কানে কম শুনিতেছেন? স্বরটা বেশ একটু উচ্চে তুলিয়া বলিলেন, “রমেন্দ্রনাথ ঘোষ—আপনি কি তাঁহাকে চিনেন?”

    সতীশচন্দ্র কি বলিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু নিজেকে সামলাইয়া লইলেন, মৃদুস্বরে বলিলেন, “চিনি বলিয়াই মনে হয়, তিনি কতদূরে থাকেন?”

    “এই—বেশী দূরে নয়। প্রয়োজন মত সকল সময়েই তাঁহাকে পাইবেন।

    তাহার পর মধুপুর সম্বন্ধে আরোও নানা কথার পর সতীশচন্দ্র বিদায় লইলেন।

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    নূতন স্থানে আসিলে সকলেই ব্যস্ত হইয়া পড়ে। সতীশচন্দ্রের দাসদাসীগণও নানারূপে ব্যস্ত হইয়াছিল। খোকার ঝিও খোকাকে ভুলিয়া গিয়াছিল।

    কিন্তু খুকীর ঝির সে উপায় ছিল না, কারণ খুকীর এখনও স্বাধীনভাবে বিচরণের ক্ষমতা হয় নাই কাজেই সে সর্বদা ঝির কোলে কোলে থাকিতে বাধ্য হইত। খোকার ঝির নিকটে খোকা নাই দেখিয়া খুকীর ঝি জিজ্ঞাসা করিল, “খোকা বাবু কোথায়?”

    খোকা বাবুর পা হইয়াছিল, খোকা বাবু পা’র ব্যবহারও করিতে ছিল। খুকীর ঝির এই কথা শুনিয়া খোকার ঝি ভীতভাবে চারিদিকে চাহিল,—খোকা বাবু নিকটে নাই। সে তাহাকে খুঁজিতে বাহিরের দিকে চলিল।

    বাহিরে আসিয়া ঝি আর্তনাদ করিয়া উঠিল। তাহার আর্তনাদে সকলে বাহিরের দিকে ছুটিয়া আসিল, দেখিল উচ্চ রোয়াকের উপর হইতে খোকা বাবু নীচে পাথরের মেঝের উপর পড়িয়াছে, জ্ঞান নাই, কপাল হইতে রক্ত ছুটিতেছে।

    হেমাঙ্গিনীও ছুটিয়া আসিয়াছিল। সে সত্বর খোকাকে কোলে তুলিয়া লইল, তাহার পর অস্পষ্ট স্বরে বলিল, “বাবু—বাবু কোথায়? তাঁকে—”

    ভৃত্য বলিল, “তিনি বেড়াতে বেরিয়েছেন—কোন্ দিকে গিয়েছেন বলিতে পারি না।”

    “তবে যা শীঘ্র একজন ডাক্তার নিয়ে আয়।”

    তখন একজন ডাক্তারকে ডাকিতে ছুটিল। হেমাঙ্গিনী উন্মাদিনীর ন্যায় সংজ্ঞাহীন পুত্রকে ক্রোড়ে লইয়া গৃহমধ্যে আসিল।

    ক্ষণপরে ডাক্তার উপস্থিত হইলেন। তিনি হাঁপাইতেছিলেন, নিশ্চয়ই ছুটিয়া আসিয়াছিলেন। তিনি উপস্থিত হইবার পূর্ব্বেই খোকার সংজ্ঞালাভ হইয়াছিল। তিনি অতি যত্নে খোকার মাথা ধুইয়া বেণ্ডেজ বাঁধিয়া দিয়া বলিলেন, “ইহাকে উঠিতে দিবেন না, আমি এখনই একটা ঔষধ পাঠাইয়া দিতেছি, কোন ভয় নাই, সামান্য লাগিয়াছে।”

    ডাক্তার রমেন্দ্রনাথ। ভৃত্যের মুখে সংবাদ পাইয়াই তিনি ছুটিয়া আসিয়াছিলেন। এতক্ষণ হেমাঙ্গিনী বা রমেন্দ্রের পরস্পরকে দেখিবার সময় বা অবসর হয় নাই, বিশেষতঃ হেমাঙ্গিনী এক্ষণে প্রকৃতই রমেন্দ্রকে ভুলিয়া গিয়াছিল। রমেন্দ্রও যেরূপ ভাব দেখাইলেন, তাহাতে পূর্ব্বে যে কখনও তিনি হেমকে ভালবাসিতেন, সেরূপ চিহ্ন কিছুমাত্র সূচিত হইল না।

    রমেন্দ্র বাবু উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। তিনি মৃদু স্বরে বলিলেন, “বহুকাল পরে আপনার সহিত সাক্ষাৎ হইল।”

    হেম অবনত মস্তকে উত্তর দিল, “আমি আপনাকে দেখিয়াই চিনিতে পারিয়াছিলাম।”

    “আমি রাখাল বাবুর কাছে শুনিয়াছিলাম যে, আপনারা মধুপুরে আসিতেছেন।”

    “খোকার বিশেষ কিছু লাগে নাই ত?”

    “কিছু নয়—সামান্য, আমি মনে করিয়াছিলাম গুরুতর আঘাত লাগিয়াছে, ছেলে-পিলের এরূপ প্রায়ই হয়। এটাই কি আপনার বড় ছেলে?”

    “হাঁ, আর একটী মেয়ে আছে।”

    “আমি এখনই ঔষধটা পাঠাইয়া দিতেছি; এক দাগ খাওয়াইয়া দিবেন। সতীশ বাবুকে আমার নমস্কার জানাইবেন।

    রমেন্দ্র বাবু চলিয়া গেলেন। তিনি পথে কিয়দ্দুর আসিয়া ফিরিয়া দেখিলেন, হেমাঙ্গিনী জানালায় দাঁড়াইয়া আছে। রমেন্দ্র আর তাহার দিকে চাহিলেন না। তিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতেছিলেন, হেমাঙ্গিনীকে জানালায় দেখিয়া সত্বর পদে চলিয়া গেলেন। বোধ হয়, হেমাঙ্গিনীও তাঁহাকে দেখে নাই। প্রকৃতই তাহাদের উভয়ের মন হইতে পূর্ব্বকথা একরূপ সম্পূর্ণ তিরোহিত হইয়াছিল।

    কিন্তু একজন তাহা বুঝিল না। সতীশচন্দ্র গৃহে ফিরিতেছিলেন। তিনি দূর হইতে জানালায় দণ্ডায়মানা স্ত্রী ও পথে রমেন্দ্রকে দেখিলেন। তিনি রাখাল বাবুর নিকট রমেন্দ্রের নাম শুনিয়া তাহারই কথা মনে মনে আলোচনা করিতে করিতে ফিরিতেছিলেন, আর সেই রমেন্দ্র, তাঁহার স্ত্রী মধুপুরে উপস্থিত হইতে না হইতেই, তাঁহারই বাড়ীতে তাঁহার অনুপস্থিতিতে গোপনে তাঁহার স্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছিল। সে চলিয়া যাইতেছে, আর তাঁহার স্ত্রী জানালায় দাঁড়াইয়া তাহাকে দেখিতেছে! সতীশচন্দ্রের আপদ-মস্তক জ্বলিয়া উঠিল।

    রমেন্দ্র বাবু তাঁহাকে দেখিতে পান নাই, অন্য দিকে জরুরী কাজ থাকায় তিনি দ্রুত পদে মাঠের পথে অদৃশ্য হইলেন। সতীশচন্দ্র মনে মনে বলিলেন, “আমায় দেখিয়া পালাইল, আমার সহিত দেখা করিবার সাহস নাই। কেমন করিয়া থাকিবে? অনায়াসে গোপনে আমার স্ত্রীর সহিত দেখা করিয়া গেল, একদিনও দেরী সহিল না!”

    এই সময় যদি কেহ সতীশচন্দ্রকে বলিত, রমেন্দ্র প্রকৃতই তাঁহাকে দেখিতে পায় নাই, অন্য দিকে দরকারী কাজ থাকায় সত্বর-পদে চলিয়া গিয়াছেন, তাহা হইলে তিনি তখন সে কথা কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারিতেন না।

    বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করিয়াও সতীশচন্দ্রের মনের পরিবর্ত্তন হইল না। তিনি তাঁহার স্ত্রীকে ব্যগ্র, ব্যাকুল ও উৎকণ্ঠিত দেখিলেন। বস্তুতঃ হেমাঙ্গিনীর এ ভাব তাহার পুত্রের জন্য হইয়াছিল; কিন্তু সতীশ ভাবিলেন, রমেন্দ্রের সহিত দেখা হওয়াতেই তাহার এ ভাব হইয়াছে।

    স্বামীকে দেখিবামাত্র হেমাঙ্গিনী বলিয়া উঠিলেন, “এসেছ! আমি ভারি ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম একটা ভারি দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে।”

    সতীশ্চন্দ্র রাগত স্বরে বলিলেন “খুবই দুর্ঘটনা! তাহা আমি জানি—বলিতে হইবে না।”

    অসাবধানতার জন্য ছেলে আঘাত পাইয়াছে, ইহাতে স্বামী রাগত হইয়াছেন, ভাবিয়া হেমাঙ্গিনী বলিল, “বেশি গুরুতর কিছু হয় নাই, রমেন্দ্র বাবু এই কথা বলিলেন। তিনি এখানকার ডাক্তার। নিশ্চয় তাঁহাকে এখান হইতে বাহির হইয়া যাইতে দেখিয়াছ।”

    ক্রোধ দমন করিতে গিয়া সতীশচন্দ্রের কণ্ঠ যেন রুদ্ধ হইয়া গেল। কিয়ৎকাল পরে তিনি বলিলেন, “হাঁ, দেখিয়াছি। এখানে তিনি কি জন্য আসিয়াছিলেন?”

    ভীত হইয়া হেমাঙ্গিনী কহিল, “আমি ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলাম। আমি—”

    আগুনের মত জ্বলিয়া উঠিয়া সতীশচন্দ্র কহিল, “তুমি ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলে! কোন সাহসে তুমি তাহাকে এখানে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলে! আমি বাড়ী হইতে বাহির হইয়া যাইতে না যাইতেই তুমি তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলে! বোধ হয় পূর্ব্বের মত দেখা-সাক্ষাৎ হইয়াছিল?”

    হেমাঙ্গিনী অতি বিস্মিত স্বরে বলিল, “তুমি এ সব কি বলিতেছ? এ সব কি কথা!—আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না।

    সতীশচন্দ্র ভর্ৎসনার স্বরে কহিলেন, “তাহা পারিবে কেন? তোমার আগেকার ভালবাসার পাত্র রমেন্দ্রের কথা বলিতেছি। আমি একটু আড়াল হইবামাত্রই তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছ! খুব ভাল! কে তোমায় ইহার মধ্যে সংবাদ দিল যে সে এখানে থাকে? এত শীঘ্র কিরূপে জানিলে? না, বরাবরই জানিতে, আমায় বল নাই?”

    হেমাঙ্গিনী বিস্ময়-বিস্ফারিত নয়নে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া প্রায় রুদ্ধকণ্ঠে বলিল, “তোমার কি মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে?”

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    কিয়ৎকাল স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই একেবারে নীরব রহিলেন, কাহারও মুখে কথা নাই, নেত্রে পলক নাই, দেহে স্পন্দন নাই।

    হেমাঙ্গিনী নির্নিমেষনেত্রে ধীরে ধীরে বারংবার স্বামীর আপাদ-মস্তক দৃষ্টি সঞ্চালন করিতে লাগিল। সতীশচন্দ্র স্থিরদৃষ্টিতে হেমাঙ্গিনীর মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। বহুক্ষণ পর্য্যন্ত কাহারও মুখে কথা নাই। পরিশেষে সতীশচন্দ্র কথা বলিলেন, তাঁহার নয়নে প্রচণ্ড অনল, বদনে তীব্র হলাহল। তিনি বলিলেন, “দেখ, তোমায় স্পষ্ট বলিতেছি, যদি আর কখনও এই রমেন্দ্রের সঙ্গে তুমি গোপনে দেখা কর, তাহা হইলে তাহার আর রক্ষা থাকিবে না, এ বিষয়ে স্থির নিশ্চিত জানিও।”

    হেমাঙ্গিনী মস্তক উত্তোলিত করিল, তাহার ব্রীড়া-বিজড়িত নারীসুলভ গৰ্ব্ব উদ্দীপিত হইল, সুধাধার নয়নযুগল হইতে বিশ্বদাহী হুতাশন উদ্‌গীর্ণ হইতে লাগিল, অবমান-প্রদীপ্ত ক্ষোভে ও রোষে সর্ব্বাঙ্গ আষাঢ়ের কদম্বযষ্টির ন্যায় কাঁপিতে লাগিল, অবমানিতা দৃপ্তা সিংহী উচ্চ কণ্ঠে বলিল–গোপনে দেখা,—গোপনে দেখা করা কি—খোকা পড়িয়া গিয়া অজ্ঞান হইলে আমি চাকরদের শীঘ্র একজন ডাক্তার ডাকিয়া আনিতে বলি, তাহারা রমেন্দ্র বাবুকে ডাকিয়া আনে। আমি জানিতাম না যে তিনি এখানকার ডাক্তার। তিনি আসিয়া খোকার মাথা বাঁধিয়া ঔষধ দিয়া গিয়াছেন। তিনি এখানে আমার সঙ্গে দেখা করিতে আসেন নাই, তোমার ছেলেকে দেখিতে আসিয়াছিলেন। তুমি গোপনে দেখা করা কাহাকে বল?”

    এই বলিয়া মানিনী দৃপ্ত পাদবিক্ষেপে দামিনীর ন্যায় সে কক্ষ পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল। ইহাই রমণীর বিশেষত্ব—কোমল ও কঠোরের বিচিত্র মনোহর সমাবেশ। যে কুসুম-পেলবা পালকের সংস্পর্শেই মুচ্ছিত হইয়া পড়ে, আবার সেই মুহূর্ত্ত মধ্যে বজ্রের ন্যায় কঠোর প্রচণ্ড অনল-বর্ষী! অবমানিতা ভামিনী উত্তেজিতা ক্ষিপ্তা সিংহী। সাধ্য কি পাপ তার সম্মুখবর্ত্তী হয়।

    সতীশচন্দ্র কিয়ৎক্ষণ স্তম্ভিত হইয়া দণ্ডায়মান রহিলেন, তৎপরে যে কক্ষে তাঁহার পুত্র শয়িত ছিল, সেই কক্ষে প্রবেশ করিলেন। তখন যাহা যাহা হইয়াছিল, ঝির নিকটে সমস্তই শুনিলেন। কিন্তু ইহাতেও তাঁহার শান্তি জন্মিল না। ঈর্ষা ও ক্রোধ তাঁহার হৃদয়ে লেলিহান নরকাগ্নি প্রজ্বলিত করিয়া তুলিয়াছিল। বহুকাল হইতে যে ঈর্ষানল তাহার হৃদয়ে তুষাবৃত অগ্নির ন্যায় প্রধুমিত হইতেছিল, আজ তাহা যেন ঘৃতাহুতি পাইয়া ধক্ ধক্ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল।

    তিনি বিবাহে সুখী ভিন্ন অসুখী হ’ন নাই। হেমাঙ্গিনীর হৃদয়ে পূর্ব্বে যে ভাবই থাকুক না কেন, সে তাহা কখনও প্রকাশ করে নাই, সে সর্ব্বতোভাবে তাঁহাকে সুখী করিয়াছিল। কিন্তু ঈর্ষা এমনই ভয়ঙ্করী কালসর্পী যে তাহা একবার হৃদয়ে স্থান পাইলে সহজে কিছুতেই যায় না। আজ বহুকাল পরে রমেন্দ্রকে পত্নীর নিকটে দেখিয়া সুযোগ পাইয়া সেই ভীষণা কালসর্পী মস্তক উত্তোলন করিল।

    স্বামী ও স্ত্রীতে সে দিন আর একটাও কথা হইল না। সতীশচন্দ্র বাহিরে রহিলেন, অভিমানিনী হেমাঙ্গিনীও তাঁহার নিকট আসিল না।

    পরদিন সকালে রমেন্দ্রনাথ আসিলেন। তিনি সরলচিত্তে সতীশচন্দ্রের সহিত হস্ত-বিলোড়নের জন্য হাত বাড়াইলেন। সতীশচন্দ্র তাহা দেখিয়াও দেখিলেন না, হাত নাড়িয়া তাহাকে বসিতে ঈঙ্গিত করিলেন। কিন্তু রমেন্দ্র বসিলেন না, বলিলেন, “একটু ব্যস্ত আছি, একটী রোগী দেখিতে এখনই যাইতে হইবে। আপনার পুত্র কেমন আছে?”

    এই সময়ে রমেন্দ্রের কণ্ঠস্বর শুনিয়া হেমাঙ্গিনী তথায় আসিল। সে আসিয়া বলিল, “এখন ত ভাল বলিয়া বোধ হইতেছে, শুইয়া থাকিতে চায় না।”

    সতীশচন্দ্র রাগত ভাবে বলিলেন, “এ রকম অসাবধান লোকজন আমি আর কোথায়ও দেখি নাই। আমি সব ঝি চাকর দূর করিয়া দিব বলিয়াছি। ছেলেটা হয় ত মারা যাইতে পারিত?

    রমেন্দ্র বাবু বলিলেন, “তা’ও যে বড় অসম্ভব ছিল, তাহা নহে। একবার দেখিব।”

    হেমাঙ্গিনী বলিল, “এই পাশের ঘরে আছে, যান। আমি আসিতেছি।”

    রমেন্দ্রনাথ ভিতরে চলিয়া গেলেন। হেমাঙ্গিনী স্বামীকে বলিলেন, “এস, তুমি যাবে না?”

    সতীশচন্দ্র কেবলমাত্র রুগ্ন স্বরে সংক্ষেপে বলিলেন—”না”।

    হেমাঙ্গিনী ভিতরে গেল। একটু পরে সে ও ডাক্তারবাবু বাহিরে আসিলেন। রমেন্দ্রনাথ বলিলেন, “বেশ আছে, তবে এখনও উঠিতে দেওয়া কোন মতেই উচিত নয়। একটু জ্বর হইয়াছে, আজই জ্বর ছাড়িবার সম্ভাবনা, এই বিষয়ে একটু বিশেষ সাবধান থাকিবেন।”

    সতীশচন্দ্র বলিলেন, “আর কোন বিপদ্ নাই ত?”

    “না, কিছুমাত্র না। তবে উঠিলে জ্বর বাড়িবার সম্ভাবনা। কিছুতেই অন্ততঃ আর একটা দিন উঠিতে দিবেন না। কাল সকালে আবার দেখিয়া যাইব। বসুন।”

    রমেন্দ্রনাথ চলিয়া গেলেন। তাঁহার সরল সহজ নির্বিকার ভাবে সতীশচন্দ্র বিস্মিত, কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়াছিলেন। তিনি বহুক্ষণ নীরবে বসিয়া রহিলেন।

    খোকা উঠিলে তাহার জ্বর হইবার সম্ভাবনা, সুতরাং যাহাতে সে না উঠে, হেমাঙ্গিনী দাস- দাসীদিগকে সে বিষয়ে বিশেষ সাবধান করিয়া দিয়াছিল। কিন্তু ইহা সত্ত্বেও খোকা উঠিল, কেননা দাস-দাসীরা চিরকালই অসাবধান। খোকাবাবু ঘুমাইয়াছে, ভাবিয়া তাহারা পরস্পরে একটু গল্প করিতে বাহিরে গিয়াছিল, এই অবসরে খোকাবাবু একেবারে শয্যা হইতে উঠিয়া, বাহিরে রৌদ্রে যাইয়া দাঁড়াইল।

    কিয়ৎকাল পরেই তাহার ক্রন্দনে বাড়ী প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। খোকাবাবু দুই হস্তে মাথা চাপিয়া ধরিয়া চীৎকার করিতেছে, “মাথা গেল—মাথা গেল—বাবাগো–“

    দাসী কম্পিত হৃদয়ে ছুটিয়া গিয়া খোকাকে ভিতরে আনিল। বলা বাহুল্য সে ভৎসিত হইল। কিন্তু তাহাতে খোকা বাবুর জ্বর বন্ধ হইল না। খোকাবাবু জ্বরে অজ্ঞান হইয়া পড়িল, সুতরাং বাধ্য হইয়া সতীশচন্দ্ৰ স্বয়ং এবার রমেন্দ্রনাথকে ডাকিয়া পাঠাইলেন।

    রমেন্দ্রনাথ আসিয়া রোগী দেখিয়া ভ্রুকুটি করিয়া বলিলেন, “উঠিতে দিয়াছিলেন?”

    সতীশচন্দ্র যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা বলিলেন। শুনিয়া রমেন্দ্রবাবু বলিলেন “বড় অন্যায় হইয়াছে। যাহা হউক, ভয় নাই। জ্বরটা একটু বাড়িয়াছে মাত্র, তবে খুব সাবধানে রাখা আবশ্যক। লোক সঙ্গে দিন, ঔষধ পাঠাইয়া দিতেছি।”

    নবম পরিচ্ছেদ

    সতীশচন্দ্র মধুপুরে আসিবার পর আট দশ দিন কাটিয়া গিয়াছে। খোকা এখন অনেক ভাল আছে, তবে এখনও জ্বর সম্পূর্ণ যায় নাই। আর কোনও ভাল ডাক্তার না থাকায় সতীশচন্দ্র রমেন্দ্রনাথকেই পুনঃ পুনঃ ডাকিতে বাধ্য হইলেন, নিতান্ত অনিচ্ছাসত্বেও রমেন্দ্রনাথকে তাঁহার বাড়ী আসা সম্বন্ধে প্রতিবন্ধক দিতে পারিলেন না। প্রতিদিনই রমেন্দ্রনাথ দুই তিন বার আসিয়া খোকাকে দেখিয়া যাইতে লাগিলেন।

    এই কয় দিনেই মধুপুরের অনেকে সতীশচন্দ্রের সহিত আলাপ করিতে ও তাঁহার সংবাদ লইতে আসিয়াছিলেন। ইহার মধ্যে প্রফুল্লবাবু ও তাঁহার পত্নীর সহিত তাঁহাদের বেশ একটু ঘনিষ্ঠতা জন্মিয়াছিল। প্রফুল্ল বাবু ও তাঁহার স্ত্রী প্রায়ই তাঁহাদের বাড়ী আসিতেন। খোকা সেদিন বেশ ভাল আছে দেখিয়া সতীশচন্দ্র ও হেমাঙ্গিনী দাস-দাসীদের খোকাকে খুব সাবধানে রাখিতে বলিয়া প্ৰফুল্ল বাবুর বাড়ীতে বেড়াইতে গেলেন।

    প্রফুল্লকুমার মহাসমাদরে সতীশচন্দ্রকে বসাইলেন, তাঁহার পত্নী হেমাঙ্গিনীকেও বিশেষ যত্নে বাটীর ভিতর লইয়া গেলেন। একথা সে কথার পর প্রফুল্লকুমার বলিলেন,—”চলুন সতীশবাবু, নার্শারি দেখিয়া আসি।”

    সতীশ মৃদু হাসিয়া বলিলেন,—”বেশতো চলুন না।” উভয়ে নার্শারি দেখিতে বাহির হইলেন। সতীশচন্দ্র ও প্রফুল্লকুমার বাহির হইয়া যাইবার একটু পরেই তথায় ডাক্তার রমেন্দ্রনাথ আসিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রফুল্লকুমার কোথায় গিয়াছেন, তিনি তাহাই ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে সতীশচন্দ্রের একজন চাকর হাঁপাইতে হাঁপাইতে তথায় উপস্থিত হইয়া বলিল, “শীঘ্র আসুন।”

    হেমাঙ্গিনী ভিতর হইতে নিজের চাকরের গলা শুনিয়া সত্বর বাহিরে আসিয়া ব্যগ্রভাবে বলিল, “এমন করিয়া ছুটিয়া আসিলি কেন? নিশ্চয়ই খোকার অসুখ বাড়িয়াছে।”

    চাকর বলিল,—“খোকাবাবু কেমন করিতেছে, তাই ঝি আমাকে ডাক্তারবাবুর বাড়ীতে পাঠাইয়াছিল; সেখানে ডাক্তারবাবুর চাকর বলিল, তিনি এখানে আসিয়াছেন, সেই জন্য এখানে ছুটিয়া আসিয়াছি।”

    মায়ের প্রাণ। সতীশচন্দ্র কোন্ দিকে বেড়াইতে গিয়াছেন তাহা কেহ জানে না। হেমাঙ্গিনী আর এক পল দেরি করিতে পারিল না, সে রমেন্দ্রনাথের সহিত বাড়ীর দিকে ছুটিল।

    তখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। নিৰ্ম্মল নভোবক্ষে বিশ্ববিনোদন শারদ চন্দ্রোদয় হইয়াছে। প্রকৃতি সর্বত্র রজত-ধবল-জ্যোৎস্না প্লাবিতা। সুখ, মাধুর্য্য ও সৌন্দর্য্যের একত্র মনোহর মিলনে যেন বিশ্ব- সম্রাজ্ঞী সর্বত্র প্রেমের বিজয় ঘোষণা করিতেছেন। এই সময়ে হেমাঙ্গিনী ও রমেন্দ্র একত্র একসঙ্গে দ্রুতপদে পানিয়াখোলার দিকে যাইতেছিলেন। চাকরের তত তাড়া নাই, কাজেই সে তাঁহাদের অনেক পিছনে পড়িয়াছিল।

    দূর প্রান্তরমধ্যস্থ পথে প্রফুল্লকুমার ও সতীশচন্দ্র দণ্ডায়মান ছিলেন। তাঁহারা ইঁহাদের দেখিলেন। প্রফুল্লকুমার বলিলেন,—”আমাদের ডাক্তার বলিয়া বোধ হয় না? হাঁ—নিশ্চয়, সে ঐ রকম হাঁটে, সঙ্গে আবার স্ত্রীলোক! বাহবা বেশ!”

    সতীশচন্দ্র হাসিলেন। তিনি দূর হইতে তাঁহার স্ত্রীকে চিনিতে পারেন নাই। তাঁহারা উভয়ে প্রফুল্লকুমারের বাড়ীর দিকে ফিরিলেন। তথায় আরও দুই একটী ভদ্রলোক সমাগত হইয়াছিলেন। তাঁহাদের দেখিয়া প্রফুল্লকুমার হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আমাদের ডাক্তার ডুবিয়া ডুবিয়া জল খায়, এখানে না আসিয়া এক সুন্দরী লইয়া বেড়াইতে বাহির হইয়াছে।”

    একজন হাসিয়া বলিলেন,—“সতীশবাবুর স্ত্রী।”

    তিনি কোন কু-উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন নাই। তিনি আসিয়া শুনিয়াছিলেন যে ছেলের পীড়ার কথা শুনিয়া হেমাঙ্গিনী ডাক্তারের সহিত বাড়ীতে গিয়াছেন। কিন্তু সতীশের হৃদয়ে তাঁহার কথাটা যেন শেলবৎ বিদ্ধ হইল।

    প্রফুল্লকুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তিনি ডাক্তারের সহিত চলিয়া গিয়াছেন কেন?”

    যাহা ঘটিয়াছিল একজন তাহা বলিলেন। কিন্তু সতীশচন্দ্র কোন কথা বলিলেন না, তিনি অন্যমনস্ক ভাবে শূন্য-দৃষ্টিতে মাঠের দিকে চাহিয়াছিলেন। সুবিস্তীর্ণ দিগন্তপ্রশারী ক্ষেত্র রজতশুভ্র চন্দ্রকিরণে নৃত্য করিতেছে। উপরে নিমেষ সুনীল অম্বরকোলে শত শত নক্ষত্রমালা মধ্যে নিশামণি বিরাজিত। বাহ্য প্রকৃতি নৃত্যময়ী আনন্দবিহ্বলা। বহির্জগতের এমন বিমল শোভা ও আলো সত্ত্বেও সতীশচন্দ্রের হৃদয়খানি ধীরে ধীরে অমাবস্যার প্রগাঢ় কালিমা-লিপ্ত হইয়া উঠিতেছিল।

    তিনি বসিয়াছিলেন, সহসা চকিতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, “আমি চলিলাম, দেখি কি হইয়াছে।” তিনি চলিয়া গেলে একজন বলিলেন, “সতীশবাবু ছেলেকে বড় ভালবাসেন, ছেলের অসুখের কথা শুনিয়া কি রকম হইলেন, দেখিলেন!”

    বস্তুতঃ ছেলের জন্য সতীশচন্দ্র ওরূপ হ’ন নাই। প্রচণ্ড ঈর্ষা তাঁহার সমগ্র হৃদয় ব্যাপিয়া নিজের অমোঘ প্রভাব বিস্তার করিতেছিল।

    তিনি একটু পূর্ব্বে ছেলেকে সুস্থ দেখিয়া আসিয়াছেন, ইহার মধ্যে তাহার অসুখ বৃদ্ধি পাইবার কোন সম্ভাবনা ছিল না। তিনি তাই ভাবিলেন, উভয়ে একত্র নির্জ্জনে বেড়াইবার জন্যই হেমাঙ্গিনী ও রমেন্দ্র গোপনে পরামর্শ করিয়া এই অজুহাতে চলিয়া গিয়াছে। ছেলের অসুখের কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা! তিনি ক্রোধে আত্মহারা হইয়া গৃহাভিমুখে ছুটিলেন। ঈর্ষায় দেবতাও দানব হয়, সতীশ ত ক্ষীণদর্শী, দুৰ্ব্বলহৃদয় মানবমাত্ৰ।

    তিনি বাড়ীর নিকট আসিয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন না। কিয়ৎক্ষণ বাড়ীর চারিদিকে চোরের ন্যায় ঘুরিলেন, তাহার পর পা টিপিয়া টিপিয়া ধীরে ধীরে গৃহের ভিতর প্রবেশ করিয়া ভৃত্যকে মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোর মা আসিয়াছে?”

    সে বলিল, “হাঁ, ডাক্তার বাবুর সঙ্গে আসিয়াছেন। ডাক্তারবাবু খোকাবাবুকে দেখিতেছেন।” তিনি পা টিপিয়া টিপিয়া নিঃশব্দে সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলেন; দেখিলেন, তাঁহার স্ত্রী শয্যার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, রমেন্দ্র হেঁট হইয়া খোকার নাড়ী দেখিতেছেন।

    খোকা সতীশচন্দ্রকে প্রথম দেখিল, দেখিয়াই “বাবা বাবা” বলিয়া উঠিবার চেষ্টা পাইল।

    স্বামীকে দেখিয়া হেমাঙ্গিনী বলিল, “খোকা এখন বেশ আছে। ঝি কেন এত ব্যস্ত হইয়াছিল বলা যায় না।”

    সতীশচন্দ্র রাগতভাবে দাসীর দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “তুই কেন মিছামিছি ডাক্তার ডাকিতে লোক পাঠাইয়াছিলি?”

    দাসী বলিল, “পাঠাইব না! জ্বর বাড়িয়াছে, খোকা ভুল বকিতেছিল, আমার ভয় হ’ল। তোমরা কোথায় বেড়াইতে গিয়াছ বলিয়া যাও নি, তাই ভয় পাইয়া ডাক্তার বাবুর কাছে লোক পাঠাইয়াছিলাম।”

    রমেন্দ্র মুখ তুলিয়া বলিলেন, “এরূপ জ্বরে কখনও কখনও এরূপ হয়, ইহাতে ভয় পাইবার কথাই বটে!”

    ঔষধাদির ব্যবস্থা করিয়া রমেন্দ্রনাথ প্রস্থান করিলেন। হেমাঙ্গিনী কিয়ৎক্ষণ ছেলের নিকট থাকিয়া নিজ শয়ন কক্ষে আসিল। হেমাঙ্গিনী সবে মাত্র গৃহের ভিতর প্রবেশ করিয়াছে, এমন সময় সেই গৃহে সতীশচন্দ্র প্রবেশ করিলেন।

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপাঁচকড়ি দে রচনাবলী ২ (দ্বিতীয় খণ্ড)
    Next Article মৃত্যু-রঙ্গিনী – পাঁচকড়ি দে

    Related Articles

    পাঁচকড়ি দে

    নীলবসনা সুন্দরী – পাঁচকড়ি দে

    September 10, 2025
    পাঁচকড়ি দে

    মায়াবিনী – পাঁচকড়ি দে

    September 10, 2025
    পাঁচকড়ি দে

    হত্যাকারী কে – পাঁচকড়ি দে

    September 10, 2025
    পাঁচকড়ি দে

    গোবিন্দরাম – পাঁচকড়ি দে

    September 10, 2025
    পাঁচকড়ি দে

    মায়াবী – পাঁচকড়ি দে

    September 10, 2025
    পাঁচকড়ি দে

    হত্যা-রহস্য – পাঁচকড়ি দে

    September 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }