Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বুরুন্ডির সবুজমানুষ – ১০

    ম্যাকুইনার তাঁবুতে প্রবেশ করার আগে মুহূর্তের জন্য সুদীপ্তরা দাঁড়িয়ে পড়ল, ম্যাকুইনার তাঁবুর ঠিক পেছনে একটা ঝাঁকড়া গাছের সাথে বাঁধা আছে ওটুম্বা। জায়গাটা আধো-অন্ধকার। শুধু তাঁবুর সামনের অগ্নিকুণ্ডের মৃদু আভা গিয়ে পড়েছে সেখানে। স্পষ্ট বোঝা না গেলেও ওটুম্বা সম্ভবত তাকিয়ে দেখছে সুদীপ্তদের।

    তার দিকে একবার তাকিয়ে সুদীপ্তরা প্রবেশ করল তাঁবুতে। ম্যাকুইনা তাঁবুর দরজার দিকে পিছন ফিরে কী যেন করছিলেন। পায়ের শব্দে চমকে উঠে পিছন ফিরলেন তিনি। সুদীপ্ত খেয়াল করল ম্যাকুইনার হাতটা তার কোমরের রিভলভারের কাছে চলে গেল। অর্থাৎ তিনি এখন বেশি সতর্ক হয়ে গেছেন। ম্যাকুইনার তাঁবুতে বেশ কয়েকটা কাঠের প্যাকিং বাক্স রয়েছে। ম্যাকুইনা ইশারায় সুদীপ্তদের তার ওপর বসতে বললেন। বসল সুদীপ্তরা। ম্যাকুইনা বসলেন তাদের মুখোমুখি আর একটা বাক্সর ওপর।

    সুদীপ্তদের একবার জরিপ করে নিয়ে ম্যাকুইনা গম্ভীরভাবে বললেন, ‘বলুন, আপনারা কী আলোচনা করতে এসেছেন?’

    সুদীপ্তই আলোচনা শুরু করল। বলল, ‘আপনি ওটুম্বার ব্যাপারে নতুন কিছু ভাবলেন?’ ম্যাকুইনা জবাব দিলেন, ‘না, নতুন কিছু ওর সম্বন্ধে আমার ভাবার নেই। আমার ভাবনা তো আগেই আপনাদের বলেছি। সবুজ বানরের সন্ধান যতক্ষণ না ও দিচ্ছে, ততক্ষণ ওর মুক্তি নেই।’

    হেরম্যান এবার শান্তভাবে বললেন, ‘ওর সঙ্গী দুজন তো গ্রামে ফিরে গেছে। ওরা ওদের সর্দারকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য যদি আক্রমণ করে তাহলে রাইফেল দিয়ে ওদের কতক্ষণ ঠেকিয়ে রাখবেন? তাছাড়া মাসাইটার ওপর ওদের তিরের প্রভাব তো সকলে নিজের চোখেই দেখলাম। ওরা নিশ্চয়ই এত সহজে আমাদের ছেড়ে দেবে না।’

    ম্যাকুইনা বললেন, ‘ওরা আমার কিছু করতে পারবে না। শুধু রাইফেলের ওপর নির্ভর করে আমি বসে নেই। আপনারা যে প্যাকিং বাক্সের ওপর বসে আছেন ওর ভেতরে কী আছে জানেন? মেশিনগান। পুবের পাহাড় আর এ পাহাড়ের মাথায় দুটো মেশিনগান বসিয়েছি আমি। বামনগুলো ও পাহাড়ে উঠে আসার আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমি তৈরি হয়েই এখানে এসেছি।’

    সুদীপ্তরা এবার বুঝতে পারল, ম্যাকুইনার লোকসংখ্যা হঠাৎ কমে গেল কেন? সে লোকগুলো নিশ্চয়ই মেশিনগার নিয়ে লুকিয়ে রয়েছে।

    সুদীপ্ত ম্যাকুইনার কথা শুনে বলল, ‘এ ব্যাপারটা নয় বুঝলাম, কিন্তু যদি ওটুম্বা কোনো কথা বলতে না চায় তখন?’

    এবার একটা হিংস্র হাসি ফুটে উঠল ম্যাকুইনার মুখে। উঠে দাঁড়ালেন ম্যাকুইনা। তারপর বললেন, ‘বলতে ওকে হবেই। আজ নয়তো কাল। সে পথ আমার জানা আছে। দরকার হলে আমি ওকে…’

    ‘কী? খুন করবেন?’ ম্যাকুইনার কথা শেষ হবার আগেই প্রশ্ন করলেন হেরম্যান। নিঃশব্দে আবার হিংস্রভাবে হেসে তিনি বললেন, ‘খুন করব না। কথা বার করার জন্য আমার অন্য রাস্তা জানা আছে। আপনারা জাঞ্জিবার নাইফ কাকে বলে জানেন?’ ঘাড় নাড়ল সুদীপ্তরা।

    ম্যাকুইনা এবার তার পোশাকের পকেট থেকে অনেকটা সুপুরি-কাটা জাঁতির মতো ছোট্ট যন্ত্র বার করলেন। তার সামনে ছোট্ট একটা ছিদ্র আছে। ম্যাকুইনা মাটি থেকে একটা মোটা কাঠি কুড়িয়ে নিয়ে সেই ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে কাঠিটা দু-টুকরো করে যন্ত্রটা সুদীপ্তর সামনে নাচিয়ে বললেন, ‘এ হল এক প্রাচীন যন্ত্র। একসময় জাঞ্জিবারের হীরের খনিতে বুনো আফ্রিকান শ্রমিকদের বশ মানানোর জন্য শ্বেতকায় মালিকরা এ যন্ত্র ব্যবহার করত। এ যন্ত্র দিয়ে কী করা হত জানেন? কাঠিটা যেভাবে আমি কাটলাম, সেভাবে শ্রমিকদের হাত-পায়ের আঙুল কেটে নেওয়া হত। অসহ্য যন্ত্রণা! সিংহের মতো সাহসী আফ্রিকানরাও বশ মানত তাতে। আমি ওটুম্বার ওপর এ যন্ত্র ব্যবহার করব। একটা-দুটো আঙুল যাবার পর আশা করি ওটুম্বা মুখ খুলবে।’

    ম্যাকুইনার কথা শুনে শিউরে উঠল সবাই। নিঃশব্দে শয়তানের হাসি হাসতে লাগলেন ম্যাকুইনা। তাঁবুর ফাঁক দিয়ে আসা আগুনের লাল আভাতে ম্যাকুইনার মুখটা যেন শয়তানের প্রতিচ্ছবি। সুদীপ্তর ইচ্ছা হচ্ছিল এই মুহূর্তে রিভলভার দিয়ে লোকটার খুলি উড়িয়ে দিতে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল নয়, নিজেকে সংযত রাখল সুদীপ্ত।

    বেশ কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ হয়ে রইল সকলে। সুদীপ্তরা ভেবে পাচ্ছিল না ম্যাকুইনাকে তারা কী বলবে! সুদীপ্তদের কথার প্রত্যাশায় থাকার পর ম্যাকুইনা মুখ খুললেন, ‘অবশ্য এ-সবের কিছুই প্রয়োজন হবে না যদি ওটুম্বা মুখ খোলে। এ ব্যাপারে টোগো যদি ওকে বুঝিয়ে বলে তাহলে কাজ হতে পারে। টোগো কি এখন ওর সঙ্গে কথা বলবে?’ এই বলে তিনি তাকালেন টোগোর দিকে।

    ওটুম্বার সাথে টোগোর কথা বলার সুযোগটা ছাড়া উচিত হবে না বুঝতে পেরে সুদীপ্ত তার পাশে বসা টোগোর হাতে আলতো করে চাপ দিল। টোগো ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাকুইনাকে বলল, “ঠিক আছে চলুন, আমি কথা বলতে রাজি।’ ম্যাকুইনা বলল, ‘বাঃ, এই তো সুবুদ্ধি হয়েছে। তবে ওর সঙ্গে কথা বলার সময় জাঞ্জিবার নাইফের ব্যাপারটা কিন্তু বোলো।

    ম্যাকুইনার তাঁবু থেকে বেরিয়ে তাঁবুর পিছন দিকে এগোল সুদীপ্তরা। সঙ্গে ম্যাকুইনা। কিছু দূরে একটা রোজউ গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা ঠে ওটুম্বা।

    সুদীপ্তরা গাছটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ওটুম্বা তাদের দিকে দুর্বোধ্য ভাষায় চিৎকার করে উঠে দড়ি ছেঁড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। ঠিক যেন সে একটা দড়ি বাঁধা সিংহ।

    ম্যাকুইনা তাকে দেখে বললেন, ‘কী তেজ দেখছেন বামনটার ??

    তার কথা শুনে হেরম্যান বা সুদীপ্ত কোনো মন্তব্য করল না।

    টোগো এবার কী যেন বলল ওটুম্বার উদ্দেশে। ওটুম্বা শুনে আরও চিৎকার করে উঠল।

    টোগো আবারও কী একটা বলল। ওটুম্বা এবার চুপ করে তাকাল টোগোর দিকে। তার উদ্দেশে এরপর একটানা কথা বলতে শুরু করল টোগো। কিছুক্ষণ টোগোর কথা শোনার পর আস্তে আস্তে মুখ খুলল ওটুম্বা। শুরু হল টোগো আর ওটুম্বার কথোপকথন। দুর্বোধ্য সেই কথাবার্তা সুদীপ্তদের কারোরই বোধগম্য হল না।

    তাদের কথাবার্তা বেশ কিছুক্ষণ চলার পর ম্যাকুইনা এক-সময় অধৈর্য হয়ে টোগোকে বললেন, ‘এবার আমাকে বলো ও কী বলছে।’

    টোগো অবশ্য আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর থামল। ওটুম্বা যেন বেশ কিছুটা শান্ত হয়েছে বলে মনে হল সুদীপ্তর। ওটুম্বার সাথে কথা শেষ হলে টোগো ম্যাকুইনাকে বলল, ‘আমাদের কথা ওকে বললাম। বললাম ও সবুজ মানুষের কথা বললেই ওকে আপনি ছেড়ে দেবেন। আপনার যন্ত্রের কথাটাও ওকে বলেছি, তাতে মনে হয় কিছুটা ভয় পেয়েছে। ও বলছে ওকে ভাববার জন্য একদিন সময় দিতে হবে।’

    শুনে ম্যাকুইনা একটু খুশির স্বরে বললেন, ‘ও ভয় পেয়েছে বলছ? ভালো, আমার তাড়া নেই, তবে এক দিনের বেশি ভাবতে চাইলে প্রত্যেক দিনের জন্য একটা করে আঙুল গুনাগার দিতে হবে। এ-কথাটা বলে দাও ওকে।’

    টোগো কী যেন বলল ওটুম্বাকে। শুনে সে ঘাড় নাড়ল। সুদীপ্তরা এবার পা বাড়াল সে জায়গা ছেড়ে ফেরার জন্য।

    ম্যাকুইনা ঢুকে গেলেন নিজের তাঁবুতে। সুদীপ্তদের দুটো তাঁবু ম্যাকুইনাদের তাঁবু থেকে কিছুটা দূরে খাদের কিনারায় পাতা হয়েছে। তাঁবুর সামনে বসে জটলা করছিল হুটু আস্কারি আর তুতসি কুলিরা। তাদের চোখমুখ দেখে সুদীপ্ত বুঝতে পারল সাম্প্রতিক ঘটনায় তাদের মধ্যেও চাপা উত্তেজনার ভাব। তাঁবুতে ঢোকার মুখে হেরম্যান তাদের উদ্দেশে বললেন, ‘সবসময় সতর্ক থাকবে। যে-কোনো মুহূর্তেই কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।’

    তাঁবুতে ঢুকে বসার পর হেরম্যান টোগোকে বলল, ‘ওটুম্বার সাথে তোমার কী কথা হল?’

    টোগো বলল, ‘আমি ওকে সংক্ষেপে সব কথা খুলে বলেছি। বলেছি আমরা ক’জন ম্যাকুইনার দলের লোক নই। ওর সঙ্গে আমাদের রাস্তায় দেখা হয়েছে। আপনি ও আপনার বন্ধু আফ্রিকার লোক নন। অনেক দূরদেশে থাকেন আপনারা। সবুজ বানরের খোঁজে আপনারা এখানে এলেও ওটুম্বার কোনো ক্ষতি করবেন না। এ-ও বলেছি আমরাও এখন প্রায় ম্যাকুইনার হাতে বন্দি। তার কথা শুনে আমাদের চলতে হচ্ছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ওকে মুক্ত করার। এ জন্য আমি কৌশলে ওটুম্বার নাম করে আফ্রিকাভারের কাছ থেকে এক দিনের সময় চেয়ে নিলাম।’

    হেরম্যান টোগোর বুদ্ধির তারিফ করে বললেন, ‘বাঃ। একটা দিন বাড়তি সময় পাওয়া গেল। আমাদের চলে যাবার কথাটা তাই ওকে বললাম না।’ ‘আচ্ছা, তোমার কথা শুনে ওটুম্বা কী বলল?’

    টোগো জবাব দিল, ‘আমার কথা সম্ভবত কিছুটা বিশ্বাস করেছে। কারণ ওর সামনেই আমরা দু-দল বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি ওকে আরও বলেছি আফ্রিকাভার ওকে বেঁধে রাখবে জানলে ওকে ডেকে আনতাম না। আফ্রিকাভাররা আমাদেরও ঠকিয়েছে, তাই যুদ্ধ হতে যাচ্ছিল। আমরা দলে কম বলে পিছিয়ে এসেছি। সুযোগের অপেক্ষায় আছি।’

    এরপর থেকে টোগো বলল, ‘তবে সবুজ বানর যে এ-তল্লাটে আছে, ওর কথা শুনে নিশ্চিত হয়েছি।’

    ‘তাই নাকি!’ বিস্মিত কণ্ঠে একসাথে বলে উঠল সুদীপ্ত আর হেরম্যান। টোগো বলল, ‘হ্যাঁ, ওটুম্বা বলল—সে যদি মুক্তি না পায় তাহলে দেবতা টাইবুরু আফ্রিকান্ডার সমেত সকলকে হত্যা করবে। আফ্রিকাভার যতই তার ওপর অত্যাচার করুক না কেন সে বা পিগমিরা প্রাণ থাকতে কিছুতেই তাদের সবুজ দেবতা টাইবুরুকে তাদের হাতে তুলে দেবে না।’

    বিস্মিত সুদীপ্ত বলল, ‘তার মানে ওরা ওই দানববানরকেই দেবতা বলে পুজো করে।’ হেরম্যান বললেন, ‘ওটুম্বা যা বলছে তাতে তো তাই মনে হচ্ছে। তাই তাঁকে আগলে রাখার এত প্রচেষ্টা ওটুম্বাদের।’

    টোগো বলল, ‘তবে পশ্চিম পাহাড়ে আমাদের যাবার ব্যাপারটা কিন্তু ও জেনে গেছে। ঢাকের বাদ্যির মাধ্যমে নীচ থেকে এ খবরই তাকে পৌঁছে দিয়েছিল পিগমিরা। যে কারণে ওটুম্বা গ্রামে ফেরার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছিল। সম্ভবত গ্রাম থেকে ওটুম্বাকে নিয়ে এখানে আসার পথেই পশ্চিমের পাহাড়ে আমাদের যাবার খবরটা গ্রামে এসে পৌঁছয়। সামান্য সময়ের পার্থক্যের জন্য ওটুম্বা ধরা পড়ে গেল।’

    হেরম্যান বললেন, ‘এখন আমাদের কর্মপন্থা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে। কিন্তু তার আগে খাবার আর বিশ্রামের প্রয়োজন। কালকের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।’

    সুদীপ্ত সম্মতি জানাল তার কথায়।

    সারাদিন অনেক পরিশ্রম আর উত্তেজনা গেছে। রাত আটটা নাগাদ খাওয়া সেরে আস্কারিদের পাহারায় রেখে তাঁবুর ভিতর শুয়ে পড়ল সুদীপ্তরা। ক্লান্তিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম এল তার চোখে।

    মাঝরাতে চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল সুদীপ্তদের। বাইরে বেরিয়ে এসে তারা দেখতে পেল মাসাইরা ব্যস্তসমস্ত হয়ে ছুটছে খাদের ধারে গ্রামে নামার পথের দিকে। সেখানে নীচের দিকে তাকিয়ে তারা কী যেন দেখছে। সেই দঙ্গলে ম্যাকুইনাও আছেন। সেদিকে যাবার আগে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে কান খাড়া করে বলল, ‘শুনতে পাচ্ছেন?’

    মাসাইদের চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে এবার শব্দটা কানে এসে লাগল সুদীপ্তর। ঢাকের শব্দ! সে শব্দ নীচ থেকে ওপরে উঠে আসছে।

    হেরম্যান বললেন, ‘সম্ভবত পিগমিরা তাদের রাজাকে মুক্ত করে নিতে আসছে। আমাদেরও বিপদের আশঙ্কা আছে। ওরা তো আমাদের আর ম্যাকুইনার তফাত করতে পারবে না। তারপর আবার টোগোই ওটুম্বাকে ডেকে এনেছিল। কিন্তু যতক্ষণ না আমরা বিপদের সম্ভাবনা দেখব ততক্ষণ আমরা লড়াই করব না।’

    টোগো বলল, ‘হ্যাঁ, আমিও আপনার সাথে একমত।’

    হেরম্যান তুতসি কুলিদের তাঁবুর কাছেই থাকতে বলে তাদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে একজন আস্কারি নিযুক্ত করলেন। তারপর বাকি তিনজন আস্কারিকে নিয়ে সুদীপ্তরা এগোল যেখানে ম্যাকুইনা দাঁড়িয়ে আছেন সেদিকে।

    তাদের কাছে পৌঁছে পাহাড়ের নীচের দিকে তাকাতেই সুদীপ্তরা দেখতে পেল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অনেক মশালের আলো সার বেঁধে ওপরের দিকে উঠে আসছে।

    তারা সংখ্যায় অন্তত জনা পঞ্চাশেক হবে। ঢাক বাজছে। মশালের আলোতে চিকচিক করছে বর্শার ফলা, কাঁধে তির তূণীর। হাতে ধরা ঢাল। তার আড়ালে প্রায় অদৃশ্য পিগমিদের ক্ষুদ্র অবয়বগুলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওটুম্বাকে ছেড়ে দেবার জন্য অনুরোধ উপরোধ জানাতে আসছে না। পুরোদস্তর যুদ্ধের মেজাজে তারা পাহাড়ের উপরে উঠছে ওটুম্বাকে ছিনিয়ে নেবার জন্য। পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকে যেন বুকের মধ্যে অনুভব করতে পারছে তাদের ঢিপ ঢিপ পদশব্দ। পিগমিরা যত ওপরে উঠে আসছে ততই যেন ম্যাকুইনার দুর্ধর্ষ মাসাইদের চোখেমুখে ফুটে উঠছে আতঙ্কের চিহ্ন। তিরের খোঁচায় তাদের সঙ্গীর মৃত্যুর টাটকা স্মৃতি কাঁপন ধরাচ্ছে বুকে। তারা মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে ম্যাকুইনার দিকে, কখন তিনি রাইফেল ছোড়ার নির্দেশ দেন তার অপেক্ষায়। ম্যাকুইনার মুখ কিন্তু ভাবলেশহীন। স্থির দৃষ্টিতে তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে আছেন। মুহূর্তের পর মুহূর্ত কেটে যেতে লাগল। ক্রমশই উপরের দিকে উঠে আসছে মশালের সারি। সুদীপ্ত চাপা স্বরে হেরম্যানকে বলল, ‘ম্যাকুইনা ওদের ওপরে ওঠার সুযোগ দিচ্ছেন কেন?’

    হেরম্যান জবাব দিলেন, ‘সম্ভবত ও ওদের বুলেটের পাল্লার মধ্যে আনতে চাচ্ছে।’ হেরম্যানের অনুমান যে সত্যি তা কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রমাণিত হল। মিনিট তিনেক পর অন্যান্যদের মতো সুদীপ্তরাও সঙ্গে সঙ্গে খাদের কিনারে ম্যাকুইনাদের একটু তফাতে বসে পড়ল। পিগমিরা তখন বেশ কিছুটা ওপরে উঠে এসেছে। ম্যাকুইনা কিন্তু খাদের ধারে বসে থাকা সারবন্ধ মাসাইদের রাইফেল চালাবার নির্দেশ দিল না। সকলে বসার পর তিনি হঠাৎ বসে পড়ে রিভলভার বার করে তিনবার শূনে গুলি ছুড়লেন। আর তার পরক্ষণেই সুদীপ্তদের পিছন দিকের পাহাড়ের একটা খাঁজ থেকে শুরু হল মেশিনগানের র‍্যাট-র‍্যাট আওয়াজ। সুদীপ্তদের মাথার ওপর দিয়ে শোঁ-শোঁ বাতাস কেটে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি নামতে শুরু করল নীচের দিকে। পুবের পাহাড় থেকেও ভেসে আসতে লাগল একই আওয়াজ।

    সুদীপ্তরা দেখতে পেল ওপরে উঠে আসা পিগমি দলটা যেন ভেঙে যেতে শুরু করেছে। কয়েকটা মশালের আলো গড়িয়ে নীচে পড়ে যাচ্ছে অর্থাৎ বুলেট গিয়ে লাগছে তাদের গায়ে। ওপরে না-উঠে সম্ভবত তারা পালাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু এরপরই তারা মশালের আলোগুলোকে সবাই এক সাথে নিভিয়ে ফেলল। পুরো দলটা হারিয়ে গেল অন্ধকারের মধ্যে। সেই অন্ধকার লক্ষ্য করেই ছুটতে লাগল মেশিনগানের গুলি। ম্যাকুইনা উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে বললেন, ‘ওরা মশাল নিভিয়ে গ্রামে পালাচ্ছে। কিন্তু কাল সকালেই সারা গ্রাম শেষ করে দেব আমি।’

    ম্যাকুইনার কথা শুনে মাসাইদের মধ্যেও যেন একটা উল্লাসের ভাব ফুটে উঠতে যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎই একজন মাসাই ঢাল বেয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ল। আর তারপরই একজন মাসাই হাঁউমাউ করে চিৎকার করে উঠল। সকলে তার দিকে তাকিয়ে দেখল তার হাতে ধরা আছে ক্ষুদ্রাকৃতি একটা তির। মাসাইটা তার বাহু থেকে সেই মুহূর্তে টেনে বার করেছে সেটা। দু-একবার চিৎকার করে সে-ও নীচের দিকে গড়িয়ে গেল। তার হাতে ধরা তির দেখে সকলে তখনই বুঝে গেল ব্যাপারটা। পিগমিদের একটা দল তার কাছে উঠে এসেছে। অগ্রবর্তী সেই দল মশাল জ্বালায়নি, পিছনের দলটা মশাল জ্বালিয়ে ছিল তাদের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য, যাতে প্রথম দলটা অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বিনা বাধায় ওপরে উঠে আসতে পারে।

    আরও একটা তির এসে বিঁধল। আতঙ্কে এবার চিৎকার করে উঠল অন্য মাসাইরা। তারপর আর ম্যাকুইনার নির্দেশের অপেক্ষা না করে অদৃশ্য শত্রুকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করল। ম্যাকুইনাও রিভলভার চালাতে লাগলেন। নীচের অন্ধকারে আবার ঢাক বাজতে শুরু করল। মেশিনগানের আওয়াজ, রাইফেলের শব্দ, মাসাইদের আর্তনাদ, ঢাকের বাজনা, এসব মিলিয়ে নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হল। সুদীপ্তরা ম্যাকুইনাদের বেশ কিছুটা তফাতে রয়েছে। সামনে বেশ বড় একটা ঘাসের ঝোপ থাকায় সম্ভবত অন্ধকারে মিশে থাকা পিগমিদের চোখের আড়ালে রয়েছে সুদীপ্তরা। কারণ তাদের দিকে তির আসছে না। কিন্তু যে-কোনো সময় তারাও বিপদে পড়ে যেতে পারে।

    হেরম্যান হঠাৎ চাপা স্বরে বললেন, ‘এই সুযোগ! ম্যাকুইনা আর মাসাইরা পিগমিদের নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের এবার পালাতে হবে। পিগমি আর ম্যাকুইনা উভয়ের হাত থেকেই বাঁচতে হবে আমাদের।’

    টোগো বলল, ‘হ্যাঁ, এ সুযোগ আর আসবে না। তবে তাঁবু এখানে ফেলে যেতে হবে। যে ঢাল বেয়ে আমরা উঠে এসেছি সে পথেই পালাব আমরা। আফ্রিকাভার এই মুহূর্তে আমাদের পিছু ধাওয়া করতে পারবে না। তবে তার আগে ওটুম্বাকে মুক্ত করতে হবে।’

    হেরম্যান বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তারপর পিছনের দিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিয়ে বললেন, ‘পিছনে কেউ নেই ঠিকই, কিন্তু যে মেশিনগান চালাচ্ছে সে ওপর থেকে দেখে নিতে পারে আমাদের। একবার সে নলের মুখ আমাদের দিকে ঘোরালেই তো আমরা মুহূর্তের মধ্যে সাবাড় হয়ে যাব।’

    টোগো একটু ভেবে নিয়ে বলল, ‘তাহলে একটা কাজ করা যাক। মেশিনগানের গুলি থেকে মাথা বাঁচিয়ে আমরা আগে তাঁবুর কাছে যাই। তারপর আপনি সেখানে পৌঁছে আস্কারি আর কুলিদের নিয়ে এগোবেন উলটো দিকের ঢাল বেয়ে নীচে নামার জন্য। আমি দাঁড়িয়ে পাহারা দেব। যে মেশিনগান চালাচ্ছে বা অন্য কেউ আপনাদের দিকে গুলি চালালে তাকে রোখার জন্য। আর এই সাহেব যাবেন আফ্রিকাভারের তাঁবুর পিছনে ওটুম্বার দড়ি কাটার জন্য। ওদিকের কথা এখন আর খেয়াল নেই। সাহেব দড়ি কেটে ফিরে এলে আমরা দুজনও নীচে নামার পথ ধরব। কি, আপনি পারবেন তো?’ এই বলে তাকাল সুদীপ্তর দিকে।

    সুদীপ্ত বলল, ‘হ্যাঁ, পারব।’

    এরপর আর সময় নষ্ট করল না কেউ। মেশিনগানের গুলি থেকে মাথা বাঁচিয়ে হামা দিয়ে আস্কারিদের সঙ্গে নিয়ে তারা এগোতে লাগলেন তাঁবুর দিকে। কেউ তাদের খেয়াল করল না। পিছনে চলতে লাগল লড়াই আর বীভৎস চিৎকার চেঁচামেচি।

    সবার অলক্ষ্যে সুদীপ্তরা পৌঁছে গেল তাঁবুর কাছে। তাঁবু থেকে গুলি-বারুদ-অস্ত্র আর সামান্য কিছু খাবার তুলে নিয়ে কুলি আর আস্কারিদের সঙ্গে হেরম্যান দ্রুত এগোলেন পাহাড়ের উলটোদিকের ঢালের উদ্দেশে। যাবার আগে সুদীপ্তকে তিনি বললেন, ‘তুমি পারবে তো? নইলে আমি ওটুম্বার কাছে যাচ্ছি, তুমি ওদের নিয়ে যাও।’

    সুদীপ্ত বলল, ‘না, আপনি এগোন। আমি এখনই কাজ সেরে টোগোকে নিয়ে আপনার পিছনে যাচ্ছি।’

    টোগো সুদীপ্তর হাতে একটা লম্বা ছুরি তুলে দিল। হেরম্যান এগোবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সুদীপ্তও পা বাড়াল ম্যাকুইনার তাঁবুর দিকে। রাইফেল হাতে চারপাশে নজর রাখতে লাগল টোগো।

    ইতিমধ্যে আর ক’জন মাসাই পড়ে গেছে পিগমিদের বিষাক্ত তিরে। বাদবাকিদের নিয়ে ম্যাকুইনা লড়ছেন অদৃশ্য শত্রুর সাথে। কোনোদিকে তাঁর খেয়াল নেই। সুদীপ্ত দ্রুত পৌঁছে গেল ম্যাকুইনার তাঁবুর কাছে। তারপর তাঁবুটাকে বেড় দিয়ে পৌঁছে গেল সেই গাছটার কাছে। ওটুম্বা তাকাল সুদীপ্তর দিকে। এরপর সুদীপ্তর হাতে ছুরি দেখে আতঙ্কে সে চিৎকার করে উঠল। সুদীপ্ত তার ভাষা জানে না। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাকে চুপ করতে ইশারা করল। ওটুম্বা থামল ঠিকই, কিন্তু সুদীপ্ত তার দিকে পা বাড়াতেই সে আবার চিৎকার করে উঠল। ছিঁড়ে ফেলতে চেষ্টা করতে লাগল তার দড়ির বাঁধন। সুদীপ্তকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। না করাটাই স্বাভাবিক। সুদীপ্ত আরও একবার থমকে দাঁড়াল। কিন্তু আর অপেক্ষা করা যাবে না। ওটুম্বার চিৎকার কানে যেতে পারে ম্যাকুইনাদের। কাজেই সুদীপ্ত আর দেরি না করে ওটুম্বার একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। একটা আর্ত চিৎকার করে প্রচণ্ড আতঙ্কে চোখ বন্ধ করল ওটুম্বা। রজ্জুবন্ধ শরীরটা কাঁপতে লাগল। সুদীপ্ত কাটতে লাগল দড়ি। খুব বেশি হলে আধ মিনিট সময় লাগল সুদীপ্তর কাজ সারতে। দড়ির বাঁধন খসে পড়তেই আবার চোখ খুলল ওটুম্বা। বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে তাকে সে কী যেন বলতে শুরু করল। সে কণ্ঠস্বরে উত্তেজনার ভাব স্পষ্ট। সুদীপ্ত কিছুই বুঝতে পারছে না তার কথা। কিন্তু কথা বলতে বলতেই হঠাৎ তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। চিৎকার করে সুদীপ্তর উদ্দেশে কী একটা বলে একটা লাফ দিয়ে তিরের বেগে সে ছুটল পিছনের জঙ্গলের দিকে। আর ঠিক সেইসময় পিছনে মৃদু শব্দ। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকালা। চোখে তার হিংস্র দৃষ্টি। আগুনের লাল আভা তার কাটা দাগওয়ালা মুখটাকে আরও বীভৎস করে তুলেছে। যেন মূর্তিমান এক শয়তান দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।

    তাকে দেখেই সুদীপ্ত কোমরের রিভলভারের দিকে হাত বাড়াতে গেল। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। আকালা তার রাইফেলের কুঁদো দিয়ে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করল সুদীপ্তর মাথায়। সুদীপ্তর চোখের সামনে পৃথিবীটা যেন মুহূর্তের মধ্যে পাক খেয়ে উঠল।

    কেউ যেন একটা কালো পর্দা ঢেকে দিল তার চোখে। যেন মূর্তিমান কলাগাছের মতো মাটিতে পড়ে গেল সুদীপ্ত।

    সুদীপ্তর যখন প্রথমবার জ্ঞান ফিরল তখন সে বুঝতে পারল না সে কোথায় আছে। চোখের সামনে যেন আবছা পর্দা একটা তখনও আছে। পাশ ফিরতে গিয়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল সে। অসহ্য যন্ত্রণা তার মাথায়। আস্তে আস্তে একটা হাত সে মাথায় দিল। সারা মাথা চটচট করছে।

    কিছুক্ষণ চুপচাপ পড়ে থাকার পর তার দৃষ্টি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হল। সুদীপ্ত দেখল সে একটা তাঁবুর মধ্যে পড়ে আছে। বাইরে মনে হয় দিন। তাঁবুর ক্যাম্বিসের ফাঁক দিয়ে মৃদু আলো ভেসে আসছে। মাঝে মাঝে কীসের যেন শব্দ হচ্ছে বাইরে। সুদীপ্ত মাথা থেকে হাতটা চোখের সামনে আনল চটচটে জিনিসটা কী তা দেখবার জন্য। হাতটা দেখার পরই চমকে উঠল সে-রক্ত!

    কিন্তু রক্ত কেন? আর এর পরমুহূর্তে সব কথা মনে পড়ে গেল। অতি কষ্টে পাশ ফিরতেই চোখে পড়ল তাঁবুর মধ্যে রাখা কাঠের প্যাকিং বাক্সগুলো। তাঁবুটা চিনতে পারল সুদীপ্ত—এ তাঁবু ম্যাকুইনার! কিন্তু টোগো, হেরম্যান—এরা সব কোথায় গেলেন? তারা কি তাকে ফেলে পালাল? সে কি ম্যাকুইনার হাতে বন্দি? না-কি পিগমিরা দখল করেছে ম্যাকুইনার তাঁবু? কিন্তু লড়াই তো এখনও চলছে। বাইরে মাঝে মাঝে যে শব্দটা হচ্ছে ওটা তো মেশিনগানের শব্দ! এসব চিন্তা করে সুদীপ্ত বসতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় তাঁবুর পর্দা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল ম্যাকুইনা, আর তার পিছনে একটা মোটা দড়ি হাতে আকালা।

    শুয়েই রইল সুদীপ্ত। ম্যাকুইনা একদম তার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর পোশাক ঘামে ভিজে আছে। চেহারায় পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট। মুখ গম্ভীর। সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘জ্ঞান ফিরেছে দেখছি। এবার কী করবেন আপনি? আপনার সঙ্গীরা তো সব আপনাকে ফেলে পালাল!’

    সুদীপ্ত তাঁর কথায় কোনো জবাব দিল না।

    ম্যাকুইনা আকালাকে বললেন, ‘বেঁধে ফেল ওকে আকালা এগিয়ে এল। সুদীপ্ত বুঝল তাকে বাধা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। সে এখন সম্পূর্ণ ম্যাকুইনার কবজায়। ম্যাকুইনার ইচ্ছার ওপর তার জীবন নির্ভর করছে। সুদীপ্তর পাশে বসে মোটা দড়ি দিয়ে ঝটপট তার হাত-পা বেঁধে আকালা উঠে দাঁড়াল। ম্যাকুইনা এবার সুদীপ্তর উদ্দেশে বললেন, ‘আপনি ওটুম্বাকে ছেড়ে দিয়ে আমার যে ক্ষতি করেছেন তার খেসারত আপনাকে দিতে হবে। ওটুম্বার লোকজন আমার বারো জন লোককে শেষ করেছে। পিগমিরা সব পালিয়েছে। কিন্তু ওরা কেউ বাঁচবে না। সবাইকে শেষ করব আমি।’

    সুদীপ্ত এবার মুখ খুলল, ‘সবাইকে শেষ করে আপনারাও কি বাঁচবেন?’

    ম্যাকুইনা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে নিঃশব্দে হাসলেন। এরপর ট্রাউজারের ডানপাশের পায়ের কাপড়টা একটু টেনে তুলতেই সুদীপ্তর চোখে পড়ল তাঁর হাঁটুর নীচে ইঞ্চিখানেক একটা ক্ষতচিহ্ন! সেটা দেখিয়ে ম্যাকুইনা বললেন, ‘পিগমিদের তিরের চিহ্ন! ওদের তির আমার কিছু করতে পারবে না।’

    এরপর তিনি পকেট থেকে একটা তরলপূর্ণ ছোট্ট শিশি আর সিরিঞ্জ বার করে সুদীপ্তকে দেখিয়ে বললেন, ‘এই অ্যান্টিভোেট আমার নেওয়া আছে। পিগমিদের বিষ কাজ করবে না আমার শরীরে। তবে মেশিনগান-রাইফেলের কোনো অ্যান্টিডোট নেই পিগমিদের কাছে।’

    এই বলে জিনিস দুটো পকেটে ভরে রেখে বাঁকা হাসি হেসে বললেন, ‘তবে আপনারও চিন্তা নেই। আপনি বাঁচবেন, আপনাকে আমি প্রাণে মারব না। ওটুম্বার ওপর ব্যবহার করা না গেলেও জাঞ্জিবার নাইফটা আপনার ওপর ব্যবহার করব আমি। শুধু আপনার আঙুলগুলো কেটে দেব আমি। আজ সন্ধ্যায় কাজটা সেরে ফেলব, তারপর আপনাকে বনে ছেড়ে দেব। এখানে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবেন।’

    সুদীপ্ত এবার চিৎকার করে উঠল, ‘শয়তান।’ তার চিৎকার ঢাকা পড়ে গেল ম্যাকুইনার অট্টহাস্যে। হাসতে হাসতে ম্যাকুইনা আকালাকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। তারা চলে যাবার পর একইভাবে শুয়ে রইল সুদীপ্ত। হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা, উঠে বসার ক্ষমতা নেই। কান খাড়া করে সে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল বাইরে কী ঘটছে। মধ্যে মধ্যে অস্পষ্ট কথাবার্তা ভেসে আসছে বাইরে থেকে। কোনো কোনো সময় আবার কেউ হেঁটে চলে যাচ্ছে তাঁবুর পাশ দিয়ে। ছায়া পড়ছে তাঁবুতে। অর্থাৎ তাঁবুর কাছাকাছি বা পাহাড়ের ওপর কোনো লড়াই নেই, কিন্তু মাঝে মাঝে মেশিনগানের র‍্যাট্-র‍্যাট্ শব্দ শোনা যাচ্ছে কেন? ঠিক বুঝতে পারল না সুদীপ্ত। সময় এগিয়ে চলল। তাঁবুর মধ্যে অসহায়ভাবে পড়ে রইল সে। একসময় অবসাদ আর ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল। তাঁবুর বাইরে আফ্রিকার সূর্য তখন মধ্যগগনে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }