Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    শেরা মন্দিরের সিংহ মানুষ – ১১

    সুদীপ্তরা বিস্মিতভাবে আড়াল থেকে সব দেখে যাচ্ছে। হুইল চেয়ারে পাথরের মূর্তির মতো বসে আছেন ডক্টর টিউনিস। তবে তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্মিথের দিকে নিবদ্ধ। স্মিথ ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের আনাচে-কানাচে। কিছুক্ষণের জন্য একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা স্মিথ এরপর বলল, ‘আমার একটা অনুমান হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। আপনি বলুন কিসের সন্ধান পেয়েছিলেন আপনারা?’

    ডক্টর টিউনিস এবার বেশ রুক্ষস্বরে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই। তুমি এখান থেকে যাও।’

    স্মিথও বেশ উত্তেজিতভাবে বলল, ‘ব্যাপারটা যতক্ষণ না জানব ততক্ষণ যাব না।’ টিউনিস এবার বললেন, ‘যদি না বলি তবে কী করবে?’

    স্মিথ বলে উঠল, ‘আমার ধারণা, আমার বাবাকে সিংহ মারেনি। কারণ, তাহলে সে তাঁকে খেয়ে নিত। অচৈতন্য অবস্থায় মৃত্যুর প্রতীক্ষায় তাঁকে ফেলে রেখে যেত না। ঘটনাচক্রে ব্রিটিশরা তাঁকে দেখে। সিংহর আক্রমণ আসলে সাজানো ঘটনা। আমার বাবার হত্যারহস্য আপনি জানেন। হয়তো বা আপনিই…।’

    তার কথার জবাব না দিয়ে ডক্টর টিউনিস জানলার বাইরে তাকালেন।

    উত্তর না পেয়ে স্মিথ বলল, ‘বাইরে তাকিয়ে লাভ নেই। মোগাবো এখন আসবে না। সে এখন পাতালঘরে ক্লোরোফর্মের প্রভাবে ঘুমুচ্ছে। বলুন বলুন, কী খুঁজে পেয়েছিলেন আপনারা? উত্তর না দিয়ে রাইফেলের নলে কথা বলাব।’

    তার কথা শুনে দপ করে জ্বলে উঠল ডক্টর টিউনিসের চোখ। তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে, জানতে যখন চাইছ শোনো। এই মন্দিরে আমরা দেওয়ালগাত্রে কিছু ছবিতে খুঁজে পেয়েছিলাম মানুষকে সিংহ বানাবার কৌশল। হাজার হাজার বছর ধরে যে গুপ্তবিদ্যা মিশরীয় পুরোহিতরা গোপন রেখেছিলেন বাইরের পৃথিবীর কাছে। কোনো কল্পনা নয়, তারা একসময় সত্যি ছিল। এই নগরীর অতন্দ্র প্রহরী ছিল তারা। স্মিথ বলল, ‘আমি এমনই কিছু আন্দাজ করেছিলাম। সিংহীর দেহটা এখানে এনেছেন কেন? ওই ভদ্রলোক দুজনকেই বা আটকে রেখেছেন কেন?’

    একটা অস্পষ্ট হাসি ফুটে উঠল ডক্টর টিউনিসের মুখে। সুদীপ্ত স্পষ্ট শুনল তিনি স্মিথকে বললেন, ‘সিংহমানুষ বানাব বলে।’ স্মিথ বিস্মিত ভাবে বলে উঠল, ‘সিংহ-মানুষ বানাবেন বলে! পাগলের কল্পনা এটা। এবার বলুন, আমার বাবাকে মরতে হল কেন?’ ডক্টর টিউনিস হিসহিস করে বললেন, ‘এটাও তবে তোমাকে জানাই। জানাচ্ছি তোমার বন্দুকের ভয়ে নয়। সিংহ মারার চেয়ে মানুষ খুন করা অনেক কঠিন কাজ। তুমি মানুষ খুন করতে পারবে না। জানাচ্ছি তোমারও আয়ু শেষ হয়ে আসছে বলে। তোমার বাবাকে মরতে হয়েছিল কারণ তিনি কাজ অসম্পূর্ণ করে চলে যাচ্ছিলেন বলে। আর হ্যাঁ, তোমার বাবাকে আমিই মেরেছি। তবে তাতে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। বিজ্ঞানের স্বার্থে ব্যাপারটার গোপনীয়তা রাখতে কাজটা করেছি।

    কথাটা শুনেই উত্তেজনায় রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগল স্মিথ। বাবার হত্যাকারীর সামনে সে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো অন্য কেউ হলে এ কথা কানে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই গুলি চালিয়ে দিত। কিন্তু সত্যিই সিংহর চেয়ে মানুষ মারা অনেক শক্ত কাজ। স্মিথ গুলি চালাতে না পেরে রাইফেলের নল ধরে তার কুঁদোটাকে লাঠির মতো বাগিয়ে ধরে ঘরের প্রান্ত থেকে ডক্টর টিউনিসের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে চিৎকার করে বলল, ‘শয়তান, তোমাকে আমি ছাড়ব না, কী এমন কাজ তিনি অর্ধসমাপ্ত রেখে যাচ্ছিলেন? কী এমন গোপন ব্যাপার যার জন্য তাঁকে খুন করা হল?’ দুর্বোধ্য হাসি ডক্টর টিউনিসের ঠোঁটের কোণে। শীতল কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ,

    মৃত্যুর আগে সে সত্যটা অবশ্যই জেনে যাবে তুমি।’

    এই বলে তিনি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে হুইল চেয়ারটাকে ধাক্কা দিয়ে পিছনে সরিয়ে দিলেন। তারপর এক ঝটকায় তাঁর সাদা আলখাল্লাটা মাথার ওপর দিয়ে খুলে দূরে ছুড়ে ফেললেন। সম্পূর্ণ নিরাবরণ তাঁর দেহ। কোনো অন্তর্বাস নেই। বৃষস্কন্ধ, আজানুলম্বিত পেশিবহুল হাত, কপাটের মতো চওড়া বুক। কিন্তু তাঁর কোমরের নীচ থেকে সম্পূর্ণ অংশটা রোমশ বাদামি বর্ণের সিংহর দেহ। মশালের আলোতে তাঁর পায়ের থাবাতে উঁকি দিচ্ছে বাঁকানো ছুরির মতো তীক্ষ্ণ নখর! পিছন থেকে বেরিয়ে আসা লম্বা লেজের শেষ প্রান্তের কালো চুলের গুছিটা চাবুকের মতো মৃদু মৃদু আছড়াচ্ছে মেঝের ওপর! সিংহ-ম -মানুষ!!!

    স্মিথ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সুদীপ্তরাও নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্যি সিংহ-মানুষ! এ-ও কী সম্ভব!

    আগুনের আভা এসে পড়েছে ডক্টর টিউনিসের মুখে। জিঘাংসা ফুটে উঠেছে সে মুখে। রক্তলোলুপ কোনো হিংস্র প্রাণীর মুখ যেন! শ্বাপদের চোখ যেন তাকিয়ে আছে স্মিথের দিকে। চোখ নয়, যেন জ্বলন্ত অঙ্গার।

    টিউনিস স্মিথের উদ্দেশে বললেন, ‘আমাকে নিয়ে আর কাজ করতে রাজি ছিল না স্মল। যদিও সে এটুকু কাজও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই করেছিল। বাজারে অনেক ধার ছিল তার, আমি সেটা শোধ দেব বলে। আরও দুটো থাবা থাকলে সুবিধা হত আমার। পৃথিবীকে আমি বুঝিয়ে দিতাম সিংহ-মানুষ কল্পনা ছিল না। ফিংস বাস্তব। অনেকে আমাকে ইজিপ্টোম্যানিয়াক বলে। সম্পূর্ণ সিংহ-মানুষ বানিয়ে আমি তাদের বুঝিয়ে দেব আমি পাগল নই, তারা মূর্খ। নিজে নিজের গায়ে তো আর ছুরি-কাঁচি চালানো যায় না। যে দুজনকে আটকে রেখেছি তাদের একজনকে সিংহ-মানুষ বানাব। সব জানা হল তোমার, এবার মরবার জন্য প্রস্তুত হও।’ এই বলে প্রথমে তিনি ছাদের দিকে মুখ তুললেন। তাঁর কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল এক রক্ত জল করা শব্দ—‘আ-উ-উ-ং-হ-ন্-ন্!’ সিংহর ডাক!

    সিংহ-মানুষ এগোতে লাগল স্মিথের দিকে। তার লেজটা আছড়াতে লাগল মেঝের ওপর। সপাৎ সপ্! এতটাই হতভম্ব যে সে রাইফেলের ব্যবহারও ভুলে গেছে। স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে সে। এক পা-এক পা করে এগোচ্ছে সিংহ-মানুষ। তার থাবার নখগুলো রক্তের স্বাদ পাবার জন্য থাবা থেকে ঢুকছে-বেরোচ্ছে। লেজ আছড়ানোর শব্দ উঠছে—সপাৎ-সপ্, সপাৎ-সপ্!

    আর দেরি করা উচিত হবে না। থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে হেরম্যান আর সুদীপ্ত সোজা ছুটল ঘরের ভিতর। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সিংহ-মানুষ ঝাঁপ দিল স্মিথের ওপর। জড়াজড়ি করে মাটিতে ছিটকে পড়ল দুজনেই।

    হেরম্যানের হাতে রাইফেল থাকলেও গুলি চালানো যাচ্ছে না। সে গুলি স্মিথের গায়ে লাগতে পারে। দুজনেই দুজনের গলা চেপে ধরেছে। স্মিথের রাইফেল ছিটকে সেই অবস্থাতেই দুটো গুলি বেরিয়ে দেওয়ালে গিয়ে লাগল। সারা ঘর কেঁপে উঠল সেই শব্দে। তার আঘাতে খসে পড়ল দেওয়ালে আঁকা দেবী থথের হাতের ছড়ির সোনার পাত। স্মিথ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে সিংহ-মানুষের পায়ের থাবার আঘাত এড়াবার জন্য। সে সেটা বসিয়ে দেবার চেষ্টা করছে স্মিথের পেটে। ইতিমধ্যেই তার আঘাতে স্মিথের উরু লাল হয়ে উঠেছে। মরণপণ লড়াই চালাচ্ছে তারা। মাঝে মাঝে সিংহ-মানুষের কণ্ঠ থেকে বেরোচ্ছে রক্ত জল করা গর্জন—‘হ-ন্-ন্-ন্!’ কেঁপে উঠছে সারা ঘর। লড়তে লড়তে ঘরের এদিক থেকে ওদিক গড়িয়ে যাচ্ছে দুজন। তছনছ হয়ে যাচ্ছে ঘরের সবকিছু। দুটো আগুনের কড়াই মেঝেতে ছিটকে পড়ল, টিউনিসের হুইল চেয়ারটা রোলার স্কেটের মতো গড়িয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খেল। উল্টে গেল সেই তরলপূর্ণ ফুটন্ত পাত্রটা! সিংহ-মানুষকে লক্ষ করে গুলি চালানো যাচ্ছে না দেখে হেরম্যান তাকে ভয় দেখাবার জন্য মাথার ওপর দুটো গুলি চালালেন। আবারও প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল ঘর।

    এবার সুদীপ্ত আর হেরম্যানের উপস্থিতি টের পেল সিংহ-মানুষ। স্মিথকে ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ সে স্প্রিং-এর মতো উঠে দাঁড়াল। তারপর জান্তব লাফে অন্তত পনেরো ‘ফুট জায়গা অতিক্রম করে থাবা উঁচিয়ে লাফ দিল হেরম্যানের দিকে। হেরম্যানের রাইফেলের দুটো ব্যারেলই ফাঁকা। সেই নখরের আঘাত তিনি বাঁচালেন ঠিকই কিন্তু টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়লেন একটা স্তম্ভের গায়ে। সজোরে পাথরে ঠুকে গেল তাঁর মাথা। চেতনা হারালেন তিনি। কিন্তু সিংহ-মানুষ নিজেও টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে ছিটকে পড়েছিল। সে একবার দেখে নিল মাটিতে পড়ে থাকা হেরম্যান আর স্মিথকে। হেরম্যান অচৈতন্য, আর স্মিথ ওঠার চেষ্টা করেও পারছে না। তার দেহের নীচের অংশ রক্তাক্ত। সিংহর থাবা বসে গেছে তার উরুতে। তাদের দুজনকে দেখে আবার একটা উল্লাসধ্বনি করল সিংহ-মানুষ—’আ-হ-ন্-ন্-ন্!’ যেন যুদ্ধ জয়ের উল্লাস। সিংহ-মানুষ এরপর উঠে দাঁড়াল। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হল সুদীপ্তর ওপর। শেষ শত্রু নিপাত করলেই কেল্লাফতে। সুদীপ্তকে মারতে পারলে আহত অন্য দুজনকে এরপর খুন করতে সিংহ-মানুষের বেশি সময় লাগবে না। সুদীপ্তও ছুরি হাতে প্রস্তুত হল শেষ লড়াইয়ের জন্য।

    সুদীপ্তর হাতে ছুরিটা দেখেই হয়তো অন্যবারের মতো সিংহ-মানুষ ঝাঁপাল না তার ওপর। দুজনে দুজনের কাছে এগিয়ে এসে বক্সিং রিং-এ যেমন প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পরকে আঘাত করার জন্য পাক খায় তেমন পাক খেতে লাগল। কখনো কেউ এক-পা এগোচ্ছে, অন্যজন এক-পা পিছোচ্ছে, এমনভাবে তারা ঘুরতে লাগল ঘরের মধ্যে। কোনো সময় সিংহ-মানুষ তার নখরযুক্ত থাবা চালাচ্ছে সুদীপ্তকে লক্ষ করে, কখনো বা সুদীপ্ত ছুরি চালাচ্ছে সিংহ-মানুষের উদ্দেশ্যে। কিন্তু নখের আঘাত বা ছুরির ফলা হাওয়া কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে, কারো দেহ স্পর্শ করছে না। হঠাৎ কৌশল বদলে সিংহ-মানুষ বেশ কাছে এগিয়ে এল। সুদীপ্ত ভেবেছিল সে পা চালাবে, তার বদলে সে তার লেজটা চাবুকের মতো চালাল সুদীপ্তর ছুরি ধরা হাত লক্ষ করে। সুদীপ্তও ছুরি চালাল। সিংহ-মানুষের লেজের ডগার চুলটা শূন্যে উড়ে গিয়ে ছিটকে পড়ল মেঝেতে। সেটা দেখে মুহূর্তের জন্য যেন হতভম্ব হয়ে গেল সিংহ-মানুষ। প্রচণ্ড আক্রোশে সে চিৎকার করে উঠল—‘উং-হ-ন্-ন্-ন্!’ তাদের সামনেই একটা স্তম্ভের ওপর একটা ছোট আনুবিসের মাথা বসানো ছিল। আসুরিক শক্তির অধিকারী সিংহ-মানুষ সেটা তুলে নিয়ে ছুড়ে মারল সুদীপ্তকে। সে আঘাতটা সুদীপ্ত পুরোপুরি এড়াতে পারল না। ছুরিটা পড়ে গেল হাত থেকে, আর সে নিজে ছিটকে পড়ল জানলার কাছে মেঝেতে। তার দিকে তীক্ষ্ণ নখর উঁচিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল সিংহ-মানুষ। আগুনের আভায় সিংহ-মানুষের মুখটা বীভৎস লাগছে। নিরস্ত্র সুদীপ্তর দিকে এগিয়ে আসছে সে! স্মিথ একবার চিৎকার করল, কিন্তু তাতে ভ্রূক্ষেপ করল না সিংহ-মানুষ। সুদীপ্ত চেষ্টা করেও উঠে দাঁড়াতে পারল না।

    আর মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত। তারপরই সিংহ-মানুষের নখরে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে সুদীপ্তর শরীর। শেষ আঘাত হানার আগে মুহূর্তের জন্য একবার থমকে দাঁড়াল সিংহ-মানুষ। হাত দুটোকে মাথার ওপর দু’পাশে তুলে ধরে বিজয়ীর ভঙ্গিতে চিৎকার করে উঠল, ‘আ-উ-উ-ং, হ-ন্-ন্

    ঠিক সেই সময় আর একটা শব্দ হল—’ই-ন্-ন্-ন্।’ সিংহ-মানুষের ডাকটাই প্রতিধ্বনিত হল কিনা বুঝতে পারল না সুদীপ্ত, কিন্তু তার পরমুহূর্তেই একটা সোনালি বিদ্যুৎ যেন পিছন থেকে সুদীপ্তর মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ডক্টর টিউনিসের ওপর পড়ল। বিশালবপু কালো কেশরঅলা এক সাহারার সিংহ কামড়ে ধরেছে তার ঘাড় ! সিংহ যেমন শিকার ধরে ঠিক তেমনভাবে। সিংহ-মানুষ নিজেকে মুক্ত করতে পারল না সেই মরণ কামড় থেকে। মট্ করে একটা শব্দ হল। মনে হয় সেটা ঘাড় ভাঙার শব্দ। কয়েক মুহূর্ত সময় মাত্র। তারপর সিংহ তার শিকারকে তুলে নিয়ে যে পথে সে ভিতরে ঢুকেছিল সেই খোলা জানলা দিয়ে বাইরের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল।

    পুরো ঘটনাটাতে ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগল সুদীপ্তর। ততক্ষণে হেরম্যানের সংজ্ঞা ফিরেছে। তিনিও শেষ ঘটনাটা দেখেছেন। সুদীপ্ত উঠে দাঁড়াল এরপর। সে আর হেরম্যান স্মিথের কাছে গিয়ে তার পরিচর্যা শুরু করল। জামা ছিঁড়ে বেঁধে দিল তার ক্ষতস্থানে। স্মিথও একসময় উঠে দাঁড়াল। তারপর সুদীপ্তদের বলল, সবই তো শুনলেন, জানলেন, দেখলেন। নতুন করে তেমন কিছু বলার নেই। আমার অনুমান সিংহর থাবাসুদ্ধু চামড়া মানুষের দেহে শল্য-চিকিৎসার মাধ্যমে বসানো হত। তবে যা আমরা দেখলাম পৃথিবীর কেউ তা বিশ্বাস করবে না। তবে হুই বলে ওই ছেলেটাকে মরতে হল। কারণ ডক্টর টিউনিস হয়তো ধারণা করেছিলেন যে ছেলেটা তাঁকে চিনে থাকতে পারে। তাই শেয়ালের ডাক ডেকে বাইরে এনে তিনি তাকে মারলেন। আর যারা মারা গেছে তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল সম্ভবত।’

    হেরম্যান বললেন, লোকটাকে কী বলা যায় বলো তো? খুনি? না বিজ্ঞানসাধক? না পাগল?’

    সুদীপ্ত একটু ভেবে নিয়ে জবাব দিল- ‘সিংহ-মানুষ!

    ঠিক সেই সময় বাইরে দূর থেকে ভেসে এল সিংহর ডাক—‘আ-উ-ং-হ-ন্-ন্!’ বেদির ওপর রাখা সিংহীর মৃতদেহটার দিকে তাকিয়ে স্মিথ বলল, ‘সাথীহারা সিংহটা শেষ পর্যন্ত প্রতিশোধ নিল। আমাদের অনুসরণ করে সম্ভবত সে এ পর্যন্ত এসেছিল। তারপর…।’

    আবার বাইরে থেকে সিংহর ডাক ভেসে এল। এবার কিছুটা অস্পষ্ট। স্মিথ বলল, ‘সিংহ তার শিকার নিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। কাল সকালে ডক্টর টিউনিসের খোঁজে একবার সন্ধান চালাব, তবে তাঁর জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আপাতত রাত্রিটা এখানেই কাটাতে হবে।’

    অন্ধকার কেটে গেল একসময়। সুদীপ্তরা যখন থথ মন্দিরের বাইরে পা রাখল তখন দিনের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়ছে হাজার বছরের এই প্রাচীন নগরীর মন্দির, স্তম্ভ, মূর্তিগুলোর গায়ে। ভোরের বাতাস দোলা দিচ্ছে ঘাসবনে। জেগে উঠছে পৃথিবী। সুদীপ্তর মনে হল গতকাল রাতের ঘটনা নেহাতই যেন দুঃস্বপ্ন! অমন ঘটনা হতে পারে না। ওই যে দণ্ডায়মান ফিংসের মূর্তিগুলো দেখা যাচ্ছে, সেগুলো সবই প্রাচীন মিশরীয়দের কল্পনা মাত্র।

    থথের মায়ামন্দির থেকে তারা রওনা হল শেবা মন্দিরের দিকে। সেখানে পৌঁছে তারা দেখতে পেল উল্টোদিক থেকে গ্রামবাসীদের একটা বড় দল তির-ধ -ধনুক, বর্শা এসব নিয়ে আসছে। গতরাতে অনেকবার গুলির শব্দ শুনেছে তারা। হেরম্যান-সুদীপ্তটিউনিস-মোগাবো কারো খোঁজ না পেয়ে তারা নগরীর ভিতরে ঢুকেছে ব্যাপারটা অনুসন্ধানের জন্য। তাদের নিয়ে সুদীপ্তরা প্রথমে গেল সেই জায়গাতে, যেখানে মোগাবো ছিল। তাকে তোলা হল ঠিকই, কিন্তু তার জ্ঞান তখনও ফেরেনি। তাকে কিছু লোকের জিম্মায় রেখে বাকিদের নিয়ে সুদীপ্তরা ডক্টর টিউনিসের খোঁজ শুরু করল।

    ঘাসবনের এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে দেবী থথের একটা মূর্তি। জাদুর দেবী থথ, বিজ্ঞানের দেবী থথ, রহস্যের দেবী থথ! সুদীপ্তর মনে হল ভোরের আলোতে সারা পৃথিবী প্রাণ পেলেও কেমন যেন বিষণ্ণ লাগছে এই প্রাচীন মূর্তিটাকে। ঠোঁট নীচু করে ম্রিয়মাণভাবে মাটির দিকে চেয়ে আছেন জ্ঞানের দেবী থথ।

    সেই মূর্তির পায়ের নীচে কী যেন একটা রয়েছে দেখতে পেয়ে সেখানে এগিয়ে গেল সবাই। না, সেখানে ডক্টর টিউনিসকে দেখতে পেল না গ্রামবাসীরা। সেখানে পড়ে আছে কোমর থেকে নীচ পর্যন্ত সিংহর অর্ধেক দেহ। ওপরের অংশটা কোনো প্রাণী খেয়ে গেছে। সিংহই হবে হয়তো। বেশ অবাক হল গ্রামবাসীরা। সিংহ কি সিংহর মাংস খায়?

    সুদীপ্তদের এবার চোখ পড়ল সিংহর লেজের দিকে। তার লেজের শেষ প্রান্তটা কাটা!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }