Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    অক্টোপাসের লাল মুক্তো – ১

    মারমেড সৈকতে একটা কফিশপে বসে কথাবার্তা চলছিল। খোলা জানলা দিয়ে বাইরের সমুদ্রতট অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। নীল আকাশের নীচে অপার অসীম জলরাশি। ছোট ছোট ঢেউ এসে ভাঙছে বেলাভূমিতে। পর্যটকর৷ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সমুদ্রস্নান বা সূর্যস্নান করছে। সৈকতের যে-পাশে পাহাড় এসে সমুদ্রের সঙ্গে মিশেছে তার মাথার ওপরের আকাশে একঝাঁক গাঙচিল উড়ে বেড়াচ্ছে।

    খোলা জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে চোখ রেখে মিস্টার আকিরা বললেন, ‘ওই অতল জলরাশির নীচ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তো সংগ্রহ করে আনি আমরা। জানবেন, আমরা জাপানিরা এ কাজে সবচেয়ে দক্ষ। বিভিন্ন রত্নর মধ্যে মুক্তো সংগ্রহই সব থেকে কঠিন কাজ। প্রচণ্ড চাপ থাকে জলের নীচে। বাইরে থেকে দেহের ওপর জলের প্রচণ্ড চাপ আর অক্সিজেনের অভাবে দেহের ভিতর ফুসফুসের ওপর চাপ দেহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে কারণে মুক্তোসংগ্রহকারী ডুবুরিরা বেশিদিন বাঁচে না। প্রচণ্ড জলের চাপের জন্য ডুবুরিরা দু-মিনিটের বেশি জলের নীচে থাকতে পারে না। ওই সময়ের মধ্যে সঙ্গের ঝুড়িতে যতগুলো সম্ভব ‘মাদার অব পার্ল’ বা ঝিনুক সংগ্রহ করে ভেসে উঠতে হয়। তারপর তিন মিনিটের বিশ্রাম নিয়ে আবার ডুব। এভাবে প্রতিদিন দুঘণ্টা কাজ করতে হয়। অন্য জাতের ডুবুরিরা এ কাজ একটানা সাতদিনের বেশি করতে পারে না। কিন্তু আমরা জাপানিরা মাসের পর মাস এ কাজ করি। জাপান, সিংহল, পারস্য অর্থাৎ ইরাকের বসরা আর এই অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র থেকেই সবচেয়ে বেশি মুক্তো সংগ্রহ করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার মুক্তো সংগ্রহকারী ডুবুরিদের সত্তর শতাংশই কিন্তু জাপানি।’

    সুদীপ্ত বলল, ‘সব শুক্তিতেই তো মুক্তো পাওয়া যায় না। তাই না?’

    আকিরা বললেন, ‘ঠিক তাই। ঝিনুক নিয়ে ফিরে আসার পর তার অর্ধেক অংশ সরকারকে দিতে হয়। তারপর যে যার অংশ ভেঙে দেখে তার মধ্যে মুক্তো আছে কিনা। কোনো সময় হয়তো একশো ঝিনুক ভেঙে কিছুই মিলল না, আবার কেউ হয়তো পেয়ে গেল কোনো দুষ্প্রাপ্য মুক্তো। একটা মুক্তো বেচেই ভাগ্য ফিরে গেল তার। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের কাছে পায়রার ডিমের মতো একটা মুক্তো ছিল। পোর্তুগালের রাজকোষে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুক্তো রাখা আছে। আকারে সেটা পেয়ারার মতো। মিশর সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা নীল মুক্তোর মালা পরতেন। ওসব মুক্তোর দাম কোটি কোটি টাকা। তবে সাধারণ মানুষেরও তো মুক্তোর প্রতি আকাঙ্ক্ষা আছে। তার দামও কম নয়। নিজেদের পেট চালাতে মূলত তাদের জন্যই মুক্তো সংগ্রহ করি আমরা।’

    এরপর একটু থেমে আকিরা বললেন, ‘এবার আপনাদের বলি সে ঘটনার কথা। যে ঘটনা আপনারা সংবাদমাধ্যমে জেনে এত দূর ছুটে এসেছেন, আমার সঙ্গে সে জায়গাতে যেতে চাচ্ছেন।’

    এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন হেরম্যান। আকিরা বলতে শুরু করলেন, ‘ঘটনাটা যে জায়গার সেটা এই সমুদ্রতট থেকে প্রায় দশ নটিকাল মাইল দূরে এক জায়গা। জলের নীচে বেশ কিছু ডুবো পাহাড় আছে সেখানে। সমুদ্রের নীচে বেশ কিছু গুহাও আছে যেখানে বিচিত্র সব সামুদ্রিক প্রাণীদের বাস। সাধারণত অত দূরে মুক্তো আহরণে যাই না আমরা। একটা সময় ছিল যখন যে যেখান থেকে খুশি মুক্তো সংগ্রহ করতে পারত। এমনকী জাপানি ধীবররাও জাপান থেকে জলপথে অস্ট্রেলীয় জলসীমায় মুক্তো সংগ্রহ করত। কিন্তু এখন সময় বদলেছে, আইন বদলেছে। সরকার ঠিক করে দেয় কে কোথায় মুক্তো সংগ্রহ করবে। এবং তার জন্য আবেদন করতে হয়। এ মরশুমে আমি যখন ঝিনুক সংগ্রহের জন্য প্রথমবার আবেদন করলাম তখন ভুলবশত ফর্মের একটা নির্দিষ্ট জায়গা পূরণ না করার জন্য সেটা বাতিল হয়ে গেল। দ্বিতীয়বার যখন নতুনভাবে আবেদন করলাম তখন ওই নির্দিষ্ট দূরবর্তী জায়গাটা ছাড়া কাছাকাছি সব জায়গা সরকার অন্য লোকদের ইজারা দিয়ে দিয়েছেন। ও জায়গাটা পড়েছিল দুটো কারণে। প্রথমত, জায়গাটা গভীর সমুদ্রে। জলের চাপ প্রচণ্ড দক্ষ ডুবুরি ছাড়া কাজ করা মুশকিল। আর দ্বিতীয়ত, ওই জায়গাটা নিয়ে অপবাদ আছে। বেশ কয়েকবার ওখানে মুক্তো সংগ্রহকারীরা গিয়ে আর সেখান থেকে ফিরে আসেনি। এ ব্যাপারে যদিও সরকারপক্ষ দাবি করেন যে ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সেসব ক্ষেত্রে ধীবর ডুবুরিদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি অন্য একটা ব্যাপারও লোকমুখে প্রচলিত। প্রাচীন ধীবররা বলে ওখানে নাকি জলদানব আছে। যে শুঁড় দিয়ে নৌকাকে জলের তলায় টেনে নিয়ে যায়। জেলেদের জলে ডুবিয়ে মারে। শিক্ষিত লোকেরা অবশ্য এ সব বিশ্বাস করেন না…’

    হেরম্যান তাঁর কথার মাঝেই বললেন, ‘হ্যাঁ, তারা বিশ্বাস না করলেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নাবিকরা কিন্তু ওই দানবীয় অক্টোপাস বা জলদানবের কাহিনি বলে আসছেন অন্তত পাঁচশো বছর ধরে। বহু সমুদ্র অভিযাত্রীও তার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। জলদস্যু ফ্রান্সিস ড্রেক নাকি ওই প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। কলম্বাস নাকি তাঁর সমুদ্র অভিযানে দূর থেকে জলের ওপর ভেসে উঠতে দেখেছিলেন ওই প্রাণীকে! লন্ডনের জাদুঘরে কোনো অজানা নাবিকের আঁকা সাতশো বছরের প্রাচীন পার্চমেন্ট আছে। যাতে আঁকা আছে বিশাল আকৃতির এক অক্টোপাস জল থেকে উঠে মাঝি-মাল্লা সমেত গোটা জাহাজকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে জলে ডুবিয়ে দিতে চাচ্ছে। ভয়ংকর কুৎসিত সেই প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করছে আতঙ্কিত নাবিকরা। ফরাসি মিউজিয়ামে রক্ষিত পাঁচশো বছরের প্রাচীন একটা লিথোগ্রাফেও একই ধরনের ছবি আছে। এ সবই কি নিছক কল্পনা?’

    সুদীপ্ত বলল, ‘অক্টোপাসের জাতভাই দানব স্কুইডের অস্তিত্বও এই সেদিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন না অনেক জীববিজ্ঞানী। অশিক্ষিত মাল্লাদের গল্পকথা ভেবে ব্যাপারটা তাঁরা উড়িয়ে দিতেন। আমরা ক্রিপ্টোজ্যুলজিস্ট, অর্থাৎ যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রূপকথা, উপকথা বা যেসব প্রাণী বহুযুগ আগে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলা হয় তাদের খোঁজ করি, আমরা কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে ওই প্রাণীর খোঁজ চালাচ্ছিলাম। অবশেষে সন্ধান মিলল। মাত্র বছরখানেক আগে আপনাদের জাপানি জীববিজ্ঞানীদের দল প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে গিয়ে জায়েন্ট স্কুইডের মুভি ফোটোগ্রাফ তুলে এনেছেন। জাহাজ ডোবাতে না পারলেও সেই বিশাল প্রাণী তার শুঁড় দিয়ে ছোটখাট নৌকা ডুবিয়ে দিতে পারে।’

    হেরম্যান আর সুদীপ্তর কথা শুনে আকিরা প্রশংসার দৃষ্টিতে প্রথমে বললেন, ‘এত কথা আমার জানা ছিল না।’ তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, ‘যাই হোক, ওই দানোর ব্যাপারে আমার তেমন বিশ্বাস ছিল না। দূরবর্তী সমুদ্রে কাজ করতে যাওয়া যেমন অসুবিধার তেমন আবার সুবিধাও আছে। অন্য নৌকা যায় না বলে সেখানে নির্বিঘ্নে কাজ করা যায়। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওখানেই ঝিনুক আনতে যাব। সেই মতো তিনমাস আগে আমি প্রথমবারের জন্য আমার যন্ত্রচালিত ছোট বোটটা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলাম। ছজনের দল। আমি, তিনজন ডুবুরি, বোটের চালক আর তার সহকারী। আমরা চারজন জাপানি। বোটের চালক ও তার সহকারী অস্ট্রেলিয়ান। জায়গাটা ভারী পছন্দ হল আমার। শান্ত নির্মল সমুদ্র। মাঝে মাঝে এখানে-ওখানে নাক উঁচু করে ভেসে আছে ডুবোপাহাড়। দেখেই বুঝলাম সমুদ্রর নীচে সে জায়গাটা শামুক-ঝিনুক-কোরালদের থাকার পক্ষে আদর্শ। বয়স হবার কারণে আমি খুব প্রয়োজন না হলে আর জলে নামি না। আমার লোকরাই নামে। প্রথম যে ডুব দিল সেখানে সে ওপরে উঠেই জানাল যে আমার অনুমানই ঠিক। সমুদ্রর তলে গুহামুখগুলোর সামনে কেউ যেন ঝিনুকের বিছানা পেতে রেখেছে। তার ওপর খেলে বেড়ায় নানা রঙের নানা ধরনের মাছের ঝাঁক। কাজ শুরু হল। দুদিন ধরে ডুবুরিরা তুলে আনতে লাগল ঝুড়িভর্তি ঝিনুক। দু-রাত সেখানে কাটিয়ে সেবার বন্দরে ফিরে দেখলাম প্রায় প্রতি তিনটে ঝিনুকের মধ্যে একটাতে মুক্তো আছে? অর্থাৎ ও জায়গাটা মুক্তোর খনি…’

    হেরম্যান এবার তাঁর কথার মাঝেই জানতে চাইলেন, ‘তবে প্রথম যাত্রায় সেখানে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি?’ আকিরা বললেন, ‘হয়তো ঘটেছিল কিন্তু তখন আমরা ব্যাপারটাকে আমল দিইনি। প্রথম দিন মাঝরাতে একবার বোটটা প্রচণ্ড জোরে দুলে উঠেছিল মুহূর্তখানেকের জন্য। আমাদের ধারণা হয়েছিল যে জলস্রোত ডুবোপাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ঢেউ তোলার কারণে অমন হচ্ছে। আর দ্বিতীয় রাতের পর ভোরবেলা চালকের সহকারী বলেছিল সে নাকি ঘুমের ঘোরে দেখেছে যে হাতির শুঁড়ের মতো বিরাট একটা শুঁড় জানলা দিয়ে তার কেবিনে ঢুকেছে। মাঝ সমুদ্রে হাতি আসবে কীভাবে? ব্যাপারটা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসিও করি।’

    এরপর আকিরা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর বললেন, ‘এবার বলি সেই ভয়ংকর ঘটনার কথা। প্রথমবার অত মুক্তো সংগ্রহের ব্যাপারটা আমাদের উৎসাহিত করেছিল। বেশ পয়সা এসেছিল হাতে। কাজেই দিন পনেরো আমোদ-আহ্লাদ করে আমরা আবার দ্বিতীয় দফার মুক্তো সংগ্রহ করার জন্য সে জায়গার উদ্দেশে একই দল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দুপুর নাগাদ সেদিন আমরা সেখানে পৌঁছেছিলাম। একজন ডুবুরি হালচাল পরীক্ষার জন্য জলে নেমেছিল। সে ওপরে উঠে বলল, নীচে সব ঠিকঠাকই আছে। শুধু মাঝের ঝাঁকগুলো আর নেই। ঠিক হল পরদিন সকাল থেকে ঝিনুক সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। সারাদিন খোশমেজাজেই কাটল আমাদের। সমুদ্রর বুকে সন্ধ্যা নামল এক সময়। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। কেউ যেন প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকুনি দিচ্ছে বোটটাকে। ধড়মড় করে উঠে বসলাম সবাই। ঝাঁকুনিটা স্থায়ী হয়েছিল আধ মিনিটেরও কম সময়। তা থামবার পর আমরা লঞ্চের ছোট্ট ডেকে বেরিয়ে সার্চলাইটের আলো ফেললাম চারপাশের সমুদ্রে। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হল না আমাদের। আমরা আবার শুয়ে পড়লাম। সমুদ্রের বুকে সূর্যস্নাত সকালে ঘুম ভাঙল আমাদের। চারপাশের পরিবেশ অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবু কেন জানি না একটা অস্বস্তি হচ্ছিল আমার মনের ভিতর। কাজ শুরু হল এক সময়। তিনজন ডুবুরিই জলে নামল। প্রতিক্ষেপে তারা তুলে আনতে লাগল ঝুড়িভর্তি ঝিনুক। ঘণ্টাখানেক পর একজন ডুবুরি জানাল যে সে আর দম রাখতে পারছে না। ফলে সে ওপরে উঠে এল। অন্য দুজন কাজ করে যেতে লাগল। তখন সম্ভবত বেলা বারোটা মতো হবে। কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। দুজন ডুবুরি সেই মুহূর্তে জলের তলায়। হঠাৎই আমাদের বোটটা প্রচণ্ড জোরে কেঁপে উঠল। যেন জলের তলায় নোঙরটা ধরে প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকুনি দিল বোটটাকে। কী ঘটল জলের নীচে? ডুবুরিদের কোমরে ঘটল জলের নীচে? ডুবুরিদের কোমরে দড়ি বাঁধা থাকে নৌকার সঙ্গে। আমি দুটো দড়ির একটা ধরে টান দিতেই অনুভব করলাম তার নীচে কোনো ভার অনুভব হচ্ছে না। অর্থাৎ একটা দড়ি খসে গেছে একজন ডুবুরির কোমর থেকে। ঠিক এই মুহূর্তে বোটের চালকের সহকারী চিৎকার করে একটা জিনিসের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাল। বোট থেকে কয়েক হাত তফাতে জলের একটা অংশ লাল হয়ে উঠেছে। আর সেখানে ভেসে উঠেছে ডুবুরির ফ্লিপারসহ হাঁটু থেকে ছিন্ন একটা পা! দেখেই বুঝতে পারলাম যে দড়িতে টান অনুভব হচ্ছে না ওটা সেই ডুবুরির পা। আমি আর বোটের ওপরে থাকা ডুবুরি এরপর দুজন মিলে অন্য দড়িটা ধরে জলের নীচে থাকা অপর ডুবুরিকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে লাগলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে আবার প্রচণ্ড ঝাঁকুনি শুরু হল বোটে। চিৎকার করে উঠল সবাই। অসীম শক্তিধর কেউ যেন নোঙরের শিকল টেনে জলের নীচে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বোটসুদ্ধু সবাইকে। একদিকে কাত হতে শুরু করেছে বোট। কোনোরকমে সেই অবস্থার মধ্যে আমরা বোটের ওপর টেনে তুললাম প্রায় অচৈতন্য দ্বিতীয় ডুবুরিকে। জ্ঞান হারাবার আগে সে শুধু বলল, ‘পালাও, পালাও, দানো!’ বোট ঘিরে জলরাশি তখন চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কেউ যেন তোলপাড় করে ফেলছে জলতল! বোট প্রায় ডুবতে বসেছে!

    কালক্ষেপ না করে চালক বোট থেকে ছিন্ন করে দিল নোঙরের শিকল। তারপর কোনোরকমে ইঞ্জিন স্টার্ট করে আমরা সে জায়গা ছেড়ে রওনা দিলাম পাড়ের দিকে…’ একটানা কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ করে সেই ভয়ংকর স্মৃতিতে যেন মৃদু কেঁপে উঠলেন আকিরা। তারপর এক চুমুকে কফির পাত্রটা নিঃশেষ করে বললেন, ‘শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সেই ডুবুরিকেও বাঁচাতে পারিনি। কোনো প্রাণীর কঠিন নিষ্পেষণে তার দেহের হাড়গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিল। তবে মৃত্যুর আগে কিছু সময়ের জন্য তার একবার জ্ঞান ফিরেছিল। তখন সে সেই দুর্ঘটনা সম্বন্ধে যা বলে তা মোটামুটি এইরকম। আপনাদের আগেই বলেছি যে যেখানে তারা মুক্তো সংগ্রহ করছিল সেখানে ডুবো পাহাড়ের নীচে বেশ কয়েকটা গুহামুখ আছে। একটা বিরাট গুহামুখের সামনে দূর থেকে অনেক ঝিনুক পড়ে আছে দেখে তারা দুজন এগোয় সেদিকে। গুহার পনেরো-কুড়ি ফুট সামনে গিয়ে প্রথমে থামে তারা। সূর্যের আলো জলতল ভেদ করে সেই গুহার মুখে গিয়ে পড়েছিল। ঠিক তখনই তারা লক্ষ করে একটা বিশাল মাথা নড়ছে গুহার ভিতর। আকারে সেটা একটা ছোটখাট হাতির মতো। হিংস্র চোখে সে তাকিয়ে আছে ডুবুরিদের দিকে। বীভৎস প্রাণীটাকে দেখামাত্রই পিছু হটতে যাচ্ছিল তারা দুজন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই হাতির শুঁড়ের মতো মোটা, কিন্তু তার থেকে অনেক লম্বা কটা শুঁড় মাটি থেকে উঠে আক্রমণ করে ডুবুরি দুজনকে। প্রাণীর মাথাটা গুহার মধ্যে থাকলেও তার বাহু বা শুঁড়গুলো গুহার বাইরে সমুদ্রতলের বালির আড়ালে বিছানো ছিল। ডুবুরিরা তা বুঝতে পারেনি। সেই বীভৎস জলদানবের দুটো বাহু জাপটে ধরে বক্তা ডুবুরিকে। ছোটখাটো প্রাণীদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ডুবুরিদের কোমরে লম্বা ছুরি থাকে। সঙ্গীকে শুঁড়ের নাগপাশ থেকে বাঁচাবার জন্য অপর ডুবুরি তখন তার ছুরি দিয়ে আঘাত করতে শুরু করে ডুবুরিকে পেঁচিয়ে ধরা সমুদ্রদানবের বাহুতে। তাতে প্রথম ডুবুরি বন্ধনমুক্ত হয় ঠিকই কিন্তু সেই দানবীয় প্রাণীর অন্য বাহুগুলো জাপটে ধরে ছুরি হাতে থাকা ডুবুরিকে। একটা বাহু তার পা ছিঁড়ে নেয় একটানে। সংজ্ঞা হারাবার আগে প্রথম ডুবুরি দেখতে পায় ছিন্ন পা-অলা তার সঙ্গীকে সমুদ্রদানব টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার গুহার দিকে। মরার আগে এ কথাগুলো বলে গেছিল লোকটা।’— তাঁর কথা শেষ করলেন আকিরা।

    আকিরার কাহিনি শেষ হবার পর হেরম্যান বললেন, ‘আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওই ভয়ংকর প্রাণীটা কোনো দানবীয় অক্টোপাসই হবে। প্রাচীন নাবিকদের গল্পে, ছবিতে যার বিবরণ আছে। তা আমরা সেখানে যাচ্ছি কবে?

    আকিরা জবাব দিলেন, ‘কালকের দিনটা প্রস্তুতির জন্য সময় নেব। পরশু ভোরে রওনা দেব। একটা বড় বোটের ব্যবস্থা করতে হবে। সত্যি কথা বলতে কি আপনারা আর মিস্টার রাইখ না বললে আমি হয়তো আর সেই অভিশপ্ত জায়গাতে যেতাম না।’ ‘মিস্টার রাইখ কে?’ জানতে চাইল সুদীপ্ত।

    আকিরা জবাব দিলেন, ‘তিনি জন্মসূত্রে জার্মান হলেও কর্মসূত্রে জাপানে থাকেন।

    ঝিনুক বিশেষজ্ঞ। তিনি ক’দিন হল এখানে এসেছেন। মুক্তো নিয়ে একটা বইও লিখেছেন।’

    স্বজাতির লোকের কথা শুনে হেরম্যান হেসে বললেন, ‘আমিও জার্মানির লোক। জার্মানির লোকরা মুক্তো নিয়েও গবেষণা করেন জেনে ভালো লাগল।’

    আকিরা প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জাপান-জার্মানির হাত মেলাবার পিছনে নাকি হিটলারের মুক্তো-লোভও ছিল। তিনি নাকি ভেবেছিলেন যুদ্ধে জয়ী হবার পর বন্ধু জাপানের সমুদ্র উপকূল ইজারা নেবেন মুক্তো আহরণের জন্য। আর পরাজিত দেশগুলোর উপকূল থেকেও মুক্তো তুলবেন। সে জন্য তিনি একদল লোককে শিক্ষানবিশ ডুবুরি হিসাবে জাপানে পাঠিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, তাঁর সে সাধ পূর্ণ হয়নি।’ এ কথাগুলো বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আকিরা বললেন, ‘আমাকে এবার যেতে হবে। অনেক কাজ বাকি। আজ আর কাল আশেপাশের জায়গাটা ঘুরে দেখে নিন। এখানে কয়েকটা ‘সি-পার্ক’ আছে। ডুবুরির পোশাক পরিয়ে জলের নীচে দেখানোর ব্যবস্থাও আছে। পারলে সে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন। সবকিছুর প্রাথমিক পাঠ নেওয়া ভালো। .কাল আবার দেখা হবে।’ এই বলে কফি পাব ছেড়ে বেরিয়ে এলেন আকিরা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }