Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আহুল – ২

    ২

    বান্দুং জাভা তথা ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম প্রধান শহর। পশ্চিম জাভার প্রশাসনিক সদর দপ্তরও বটে। প্রচুর লোকজন, দোকানপাট, হাইরাইজ। তার মধ্যে আবার কোথাও কোথাও মাথা তুলে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ডাচ গির্জা, ব্রিটিশ স্থাপত্য। এ শহরের মাঝখানে দাঁড়ালে বোঝাই যাবে না এ দ্বীপে কোথাও কোনো জঙ্গলের অস্তিত্ব আছে! পিনাক বলে লোকটা আসার পর জাভা ক্রনিকল-এর অফিসে বসেই অভিযানের প্রস্তুতির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা সেরে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ল তারা তিনজন। দুটো সরকারি অফিসে যেতে হল পারমিটের ব্যাপারে। রসদপত্রও বেশ কিছু কেনার ছিল। একটা হালকা অথচ বেশ মজবুত তাঁবুও কেনা হল। পিনাক লোকটা বেশ পরিশ্রমী ও চটপটে। সে সঙ্গে থাকায় কাজগুলো অনেক দ্রুত হল। তবে এসব করতে করতে বিকেল হয়ে গেল। লে হাতে কিছুটা সময় থাকায় তারা ঢু মারল বান্দুং মিউজিয়ামে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় মানুষের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব জাভায় ত্রিনিল গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫ লক্ষ বছরের প্রাচীন জাভা মানুষের ফসিল। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ভারতীয়রা জাভা ও সুমাত্রায় প্রতিষ্ঠা করেছিল শ্রীবিজয় রাজ্যের। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আরবরা দখল নিতে শুরু করে এ জায়গার। তারপর একে একে আসে ওলন্দাজ ও ইংরেজরা। নানা জনগোষ্ঠীর বহু নিদর্শন রাখা আছে মিউজিয়ামে। সেখান থেকে সন্ধ্যাবেলা হোটেলে ফিরল সুদীপ্তরা। হেরম্যান বললেন, আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নিতে হবে। পিনাক বলল, আগামীকাল হয়তো একটা লগ হাউস পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার পরদিন থেকে কার্যত খোলা আকাশের নীচেই কাটাতে হবে আমাদের।

    লম্বা অভিযানের আগে ঘুমটা খুবই জরুরি ব্যাপার। এটা নিজের অভিজ্ঞতাতেও প্রত্যক্ষ করেছে সুদীপ্ত। খাওয়া সেরে বেশ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল দুজন।

    পরদিন ভোরে তারা দুজন যখন হোটেলের পোর্টিকোয় এসে দাঁড়াল তখন সূর্যদেব সবে উদয় হচ্ছেন। পিনাক গাড়ি নিয়ে ইতিমধ্যেই হাজির হয়ে গেছে। সুদীপ্তদের দেখে সে এসে সেলাম ঠুকে দাঁড়াল। আগের দিন তার পরনে ছিল লুঙ্গি আর জামা। আজ সে একেবারে অন্য পোশাকে সজ্জিত। হাই হিল বুট, সামরিক লোকদের মতো জংলা ছাপ জামা প্যান্ট। কোমরে চওড়া বেল্ট থেকে একটা বোলো ঝুলছে। কাঁধে একটা দোনলা বন্দুক। সুদীপ্ত বন্দুকটার দিকে তাকাতেই পিনাক হেসে বলল, লাইসেন্সড আর্মস স্যার। মালয় জলদস্যুরা মাঝে মাঝে সমুদ্র থেকে উঠে এসে জঙ্গলে হানা দেয়। কাঠ ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। আমি তো ওদের সঙ্গে জঙ্গলে যাই। তাই এক ব্যবসায়ী লাইসেন্সটা করিয়ে দিয়েছে। বন্দুকটাও তারই দেওয়া।

    বন্দুকটা দেখে পিনাকের ওপর সুদীপ্তদের ভরসা আর একটু বাড়ল। যদিও হেরম্যানের কাছেও রিভলভার আছে এবং তা নিয়ে জঙ্গলে ঢোকার পারমিট গতকালই সংগ্রহ করেছে তারা।

    একটা ল্যান্ডরোভার। মালপত্র নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই রওনা হয়ে গেল তারা। শহর ছাড়িয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরল গাড়ি। গাড়িটা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। চালকের আসনে পিনাক। তাদের গন্তব্য হেলিমুন-সলক ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশপথ। এর মধ্যেই অবস্থিত সলক ও হেলিমুন-এ দুটি আগ্নেয় পর্বত। তার পাদদেশে গভীর জঙ্গল। সুদীপ্ত গতকাল ম্যাপে দেখছিল ও-অঞ্চলে ৩৮টি আগ্নেয় পর্বত আছে। তার মধ্যে কয়েকটি পঞ্চাশ-ষাট বছর পর পর অগ্নিবমন করে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত এই পর্বতগুলো সাড়ে দশ মাইল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। সকল ন্যাশনাল পার্কের গায়েই মাউন্ট গেডে প্যাংগ্রাংগো ন্যাশনাল পার্ক। সলক ও প্যাংগ্রাংগো ন্যাশনাল পার্কের একটা বড় অংশ ভার্জিন ফরেস্ট। অর্থাৎ এখনো সেখানে মানুষের পা পড়েনি। কে বলতে পারে হয়তো সেখানে সত্যিই আছে সেই উড়ুক্কু দানব ‘আহুল’। হয়তো সে অনাবিষ্কৃত কোনো পক্ষী প্রজাতি! হয়তো বা টেরোডাকটাইলেরই কোনো বংশধর। হয়তো কোনো অপার বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে সেই পর্বতকন্দরে গহীন জঙ্গলে! এসব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলল সুদীপ্ত। যেতে যেতে হেরম্যান এক সময় বললেন, আমরা ঠিক যে জায়গাতে যেতে চাইছি সেখানে পৌঁছতে আনুমানিক চারদিন সময় লাগবে। আমরা যদি উল্টোদিক দিয়ে জলপথে সে জায়গায় পৌঁছবার চেষ্টা করতাম তাহলে হয়তো একটা দিন কম লাগত আমাদের। কিন্তু অলিভিয়েরার পথটাই অনুসরণ করতে চাই। ডায়েরিতে তার নিখুঁত বিবরণ আছে। তিনদিন চলার পর তিনি যে পথ হারিয়ে পৌঁছেছিলেন পর্বতগাত্রে সেই ঝরনার কাছে। যেখানে তিনি তাঁবু ফেলেছিলেন। সে জায়গাটা অবশ্য আমাদের খুঁজে বার করতে হবে।

    এ কথা বলার পর তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে স্বগতোক্তি করলেন, বহু বছরের ব্যবধানে হলেও কী আশ্চর্য মিল!

    সুদীপ্ত জানতে চাইল, আপনি কিসের মিলের কথা বলছেন?

    হেরম্যান বললেন, আহুলের ব্যাপারটা প্রথমে বাইরের পৃথিবীর কাছে পৌঁছয় প্রকৃতিবিদ ড. এমারেস্ট বার্টেলের মাধ্যমে। এমারেস্ট ছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত অরিস্থলজিস্ট জি. বার্টলের ছেলে। এমারেস্ট ১৯২৫ সালে সলক মাউন্টেন এক্সপিডিশনে আসেন। তিনিও সলকের পাদদেশে চিজিংকল নদীর কাছাকাছি এক ঝরনার সামনে দেখতে পেয়েছিলেন ধূসর লোমে ঢাকা, তীক্ষ্ণ নখযুক্ত থাবাওয়ালা, উড়ন্ত প্রাণীর অবয়ব। আর ১৯২৭ সালের এক রাতে তাঁর কাঠের বাড়ির মাথায় ওপর থেকে ভেসে এসেছিল এক রক্ত জল-করা চিৎকার—আ-আ-হু-উ-উ-ল! এমারেস্ট তাঁর লেখায় বলেছেন, সেই ঝরনার আড়ালে একটা গুহা ছিল। আমার ধারণা যে প্রায় নব্বই বছর আগে এমারেস্টের দেখা করনাটা আর অলিভিয়েরার দেখা ঝরনাটা এক। একই জায়গাতে অদ্ভুত ঘটনার ক্ষী হন তাঁরা দুজন। আমি এই মিলের কথাই বলতে চাইছি। সত্যি কথা বলতে কী, হস তিনেক আগে অলিভিয়েরা সংক্রান্ত ব্যাপারটা যখন আমি সংবাদপত্রে পড়ি, তখন এই মিলের ব্যাপারটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। এখনো করছে। তাহলে কি সত্যিই কিছু আছে সেখানে?

    সুদীপ্ত এরপর বলল, যেদিন আপনি এখানে অভিযান করার ইচ্ছা আমাকে জানালেন সেদিন থেকেই আ-হুল সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। ইন্টারনেটে দেখলাম, কয়েকজন জীববিজ্ঞানীর অনুমান, ওই প্রাণী যদি সত্যি থেকে থাকে এবং তার বর্ণনা যেটুকু পাওয়া গেছে তাতে সে সাড়ে ছ-কোটি বছর আগে এক বিরাট উড়ুক্কু সরীসৃপের বংশধর হতে পারে। কালিমাস্তানের বোর্নিও ও অস্ট্রেলিয়াতে নাকি ও ধরনের উড়ন্ত সরীসৃপের বা ডাইনোসরের ফসিল মিলেছে। তাদেরও পাখা ও নখযুক্ত থাবা ছিল।

    হেরম্যান শুনে বললেন, হতে পারে। বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করে লক্ষ-কোটি বছরের আগের চেহারা নিয়ে পৃথিবীতে এখনো বেশ কিছু প্রাণী টিকে আছে।

    টুকটাক নানা কথা আলোচনা করতে করতে চলল তারা। পিছনে পড়ে রইল জনাকীর্ণ ব্যস্ত বান্দুং। সোজা এগিয়ে চলেছে রাস্তা। তার দু-পাশে কখনো চা বা কফির বাগিচা, কখনো মাইলের পর মাইল জুড়ে রবারের বাগান। দু-একটা লোক মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে সেসব বাগানে। তারা রবার গাছের গায়ে ‘ট্যাপ’ অর্থাৎ রস বার করছে। এক সময় রবার বাগান শেষ হয়ে রাস্তার দু-পাশে শুরু হল উন্মুক্ত প্রান্তর। মাথার ওপর সূর্যদেবও সুদীপ্তদের সঙ্গে এগিয়ে চলতে লাগলেন।

    ঘণ্টা চারেক এগোবার পর পিনাক হঠাৎ তাদের উদ্দেশ্যে বলল, ওই যে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তাকাল সুদীপ্তরা। নীল আকাশের গায়ে ছাই ছাই রঙের মেঘ ভাসছে, আর তার আড়াল থেকে উঁকি মারছে পর্বতমালা। মাউন্ট সলক!

    একঘেয়ে যাত্রাপথে সুদীপ্তদের একটু ঝিমুনি এসেছিল। এবার নড়েচড়ে বসল তারা। ক্রমশ স্পষ্ট হতে লাগল সেই পর্বতমালা। পূর্ব-পশ্চিমে দেখা যেতে লাগল আরও নানা পাহাড়। আর তাদের পাদদেশে একটা কালো রেখা ক্রমশ চওড়া হতে শুরু করল। অরণ্য ! এ দ্বীপের সবচেয়ে গভীরতম অরণ্য। যার পোশাকি নাম সলক-প্যাংগ্রাংগো ন্যাশনাল পার্ক। সুদীপ্তদের গন্তব্য।

    হেরম্যান পিনাকের কাছে জানতে চাইলেন, এখন জঙ্গলের অবস্থা কেমন? পিনাক জবাব দিল, আজ অবধি তো ভালোই, কিন্তু কাল কী হবে কে জানে! মানে?

    সুদীপ্তর প্রশ্নের জবাবে পিনাক বলল, ওই যে আকাশের গায়ে ছাই ছাই মেঘ দেখছেন ওটা বর্ষার মেঘ। বর্ষাকাল মনে হয় এবার একটু তাড়াতাড়ি আসবে। এমনিতেই এটা বর্ষাবন বা রেন ফরেস্ট। মাউন্ট সলকের পাদদেশে এ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে চিজিংকল ও তার নানা শাখানদী। বর্ষা নামলেই তারা ফুঁসে ওঠে। তখন নদী পার হওয়া দুষ্কর হয়। নদীগুলো চওড়ায় খুব ছোট, কিন্তু এত স্রোত যে বর্ষায় তারা বড় বড় পাথর ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

    কাছে এগিয়ে আসতে লাগল মাউন্ট সলক ও তার পাদদেশের বনভূমি। সূর্যকিরণে রুপোর মতো দেখতে লাগছে মাউন্ট সলকের শিখরগুলো। কেউ যেন আকাশের গায়ে রুপালি বিদ্যুৎশিখা এঁকে রেখেছে। এ জন্যই মাউন্ট সলককে ‘সিলভার মাউন্টেন’ নামেও ডাকা হয়। আরও ঘণ্টাখানেক চলার পর গাড়ি এসে থামল সলক প্যাংগ্র্যাংগো ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশ-তোরণে। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়াতে হল সুদীপ্তদের। তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা হল। ফরেস্ট গার্ডরা স্থানীয় বাহামা ভাষায় বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা চালাল পিনাকের সঙ্গে। কাগজ-কলমে লেখা আছে যে সুদীপ্তরা জাভা ক্রনিকাল দৈনিক সংবাদপত্রের হয়ে কাগজে লেখার জন্য জঙ্গলের জীববৈচিত্র্য দেখতে যাচ্ছে। অবশেষে এক সময় খুলে গেল জঙ্গলের প্রবেশ তোরণ। ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করল সুদীপ্তদের গাড়ি।

    পিনাক গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, কাগজের লোক বলে ফরেস্ট গার্ডরা আমাদের বেশি বিরক্ত করল না। অনেক সময় ওরা চার-পাঁচ ঘণ্টাও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখানে আটকে রাখে। ওদের কথাবার্তায় বুঝলাম যে গতকাল আর একটা দলও জঙ্গলে ঢুকেছে। হেরম্যান জিজ্ঞেস করলেন, তারা কি কাঠের কারবারী? পিনাক উত্তর দিল, কাঠের কারবারীদের পারমিট দেওয়া হয় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস। এটা জুন মাস। তারা জঙ্গলে ঢুকবে না। শুনলাম পাঁচজনের একটা ছোট দল ঢুকেছে জঙ্গলে। একজন সাহেব, আর বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আছে তাদের সঙ্গে। হয়তো তাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়ে যেতে পারে।

    জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলতে শুরু করল গাড়ি। প্রথমে পিচরাস্তা তারপর এবড়ো-খেবড়ো মেঠো পথ। মাঝে মাঝে দু-একটা ক্ষুদ্রকায় নদী, তার ওপর কাঠের সাঁকো। সেসব পেরোতে পেরোতে দু-পাশের জঙ্গল ক্রমশ ঘন হয়ে উঠতে লাগল। গভীর থেকে গভীরতর জঙ্গলে প্রবেশ করতে লাগল সুদীপ্তরা। মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে বিরাট বিরাট গাছের গুঁড়ি। তাদের গায়ে পুরু শ্যাওলার আস্তরণ। কাঠ ব্যবসায়ীরা নাকি এভাবে গুঁড়িগুলোকে ফেলে রেখে তাদের ‘সিজিনড’ করে। বেলা দুটো নাগাদ তারা এসে উপস্থিত হল বেশ চওড়া এক নদীর সামনে। পিনাক বলল, গাড়ি আর যাবে না। ইতিমধ্যে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কুড়ি কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছি। নদী পার হয়ে কোর এলাকায় পৌঁছব আমরা। তারপর পায়ে চলা পথ। নদীতে কোনো সাঁকো নেই। জল খুব সামান্য নদীতে। অসংখ্য বিরাট বড় গাছের গুঁড়ি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে নদীতে। নদীর দু-পাশে দুটো বড় গাছ থেকে নদীর ওপর একটা মোটা কাছি টাঙানো আছে। সেটা ধরে নদী পেরোতে হবে। গাড়ি থেকে মালপত্র নামিয়ে তা ভাগ করে পিঠে নিয়ে পার হয়ে প্রবেশ করল ওপাশের অরণ্যে। হেরম্যান বললেন, অলিভিয়েরার ডায়েরিতে লেখা আছে তিনিও এ পথে জঙ্গলে ঢুকেছিলেন।

    পিনাক বলল, যে নদীটা আমরা পেরিয়ে এলাম তা সামান্য বর্ষা হলেই এত ফুঁসে ওঠে যে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

    হাঁটতে লাগল সুদীপ্তরা। তাদের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ওপর সূর্যদেবও পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করেছেন। বন ক্রমশ নিবিড় হয়ে আসছে। বিরাট বিরাট গাছ আকাশের দিকে উঠে গিয়ে যাত্রাপথের মাথায় তাদের ডালপালা দিয়ে চাঁদোয়া রচনা করেছে। গাছের গুঁড়িগুলোর ভেজা গায়ে নানা ধরনের ছত্রাক জন্মেছে। তাদের মধ্যে কিছুর আকার বিরাট বড় থালার মতো। মাঝে মাঝে ডালপালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে মাউন্ট সলকের রুপোলি চুড়ো। আলো-আঁধারি পায়ে চলা পথ দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ কাছেই একটা শব্দ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল পিনাক। মুহূর্তের মধ্যে তার হাত চলে গেল কোমরে ঝোলানো বোলোর দিকে। কাছেই ডানদিকে একটা বিরাট ঝোপ প্রচণ্ড দুলে উঠল। আর তারপরই সেই ঝোপের আড়াল থেকে আত্মপ্রকাশ করল একটা কুৎসিত মুখ। লাল চোখ দিয়ে সে দেখছে অনুপ্রবেশকারীদের। কয়েক মুহূর্ত সেই প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে পিনাক স্বস্তির হাসি হেসে বলল, ‘গিবন’। এ জঙ্গলে প্রচুর দেখতে পাওয়া যায় এ প্রাণী। বানর জাতীয় প্রাণীটা সুদীপ্তদের দেখার পর ঝোপ ছেড়ে বেরিয়ে একটা লতা ধরে দোল খেয়ে কাছেই একটা গাছের মাথায় উঠে গেল।

    হেরম্যান জানতে চাইলেন, এ বনে হিংস্র প্রাণী কী কী আছে?

    এ বনে বাঘ নেই। আমাকে বাঘে ধরেছিল সুমাত্রার জঙ্গলে। তবে পাইথন আছে। বিভিন্ন ধরনের লিজার্ড আছে। সে অর্থে তেমন অন্য কোনো বড় হিংস্র প্রাণী এ বনে নেই। কারণ…। কথাটা আর শেষ করল না পিনাক। সুদীপ্ত বলল, কী কারণ?

    পিনাক জবাব দিল, জানেন তো শক্তিধর হিংস্র প্রাণীরা কখনো এক জঙ্গলে থাকে না। যেমন একসঙ্গে বাঘ-সিংহ কখনো থাকে না। লোকে বলে এ জঙ্গলে আহুল আছে, তাই অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী এই বনে থাকে না। সে-ই এ বনের ভয়ংকরতম প্রাণী। হেরম্যান প্রশ্ন করলেন, তুমি ওই প্রাণীর অস্তিত্ব বিশ্বাস করো?

    চোখে না দেখলেও ছোটবেলা থেকে গল্প শুনেছি প্রাণীটার। তাই অবিশ্বাসও করি না। আমি যমের সঙ্গে পাঞ্জা কষে এসেছি। আপনারা যে উদ্দেশ্যে এ বনে এসেছেন, তা জানলে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ রাজি হত না আপনাদের সঙ্গে আসার। এ দেশের লোকেরা খুব ভয় করে ‘আ-হুল’ শব্দটাকে। আমি একবার বেশ কয়েক বছর আগে জঙ্গলের মধ্যে এক কাঠুরের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। কী বীভৎস সেই দেহ! যেন কেউ ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করেছে তাকে। কে করল তার অমন অবস্থা? এ জঙ্গলে তো অন্য হিংস্র প্রাণী নেই! জবাব দিল পিনাক।

    এগিয়ে চলল তারা তিনজন। পশ্চিম আকাশের ঢলতে শুরু করেছেন সূর্যদেব। সন্ধ্যা নামার কিছু আগে জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গাতে একটা কাঠের বাড়ি দেখতে পেল। পিনাক বলল, ওটাই আমাদের রাত্রিবাসের জায়গা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }