Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আহুল – ৪

    ৪

    পরদিন সূর্যোদয়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে রওনা হল দুটো দল। মিস্যার তানাকা রওনা হলেন সোজা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। সুদীপ্তরাও জঙ্গলের পথ ধরল ঠিকই কিন্তু তাদের প্রাথমিক গন্তব্য সেই নদীখাত। যে পথ ধরে এগিয়েছিলেন অলিভিয়েরা। ভোরের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়ছে জঙ্গলের ভিতর। আলোর স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেয়েছে জঙ্গল। সুদীপ্তদের মাথার ওপর এ-গাছ থেকে ও গাছে উড়ছে পাখির দল। প্যারোট গোত্রের পাখি সব। সাদা ঝুটি-অলা আমব্রেলা কাকাতুয়া। বিচিত্র মোলাক্কান কাকাতুয়া। লম্বা লেজ-অলা ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও, আরও নানা ধরনের পাখি! তাদের কলরবে মুখরিত জঙ্গল। এক জায়গাতে গাছের মাথায় বসেছিল একটা গিবন পরিবার। আট-দশ জনের একটা দল। বানর জাতীয় প্রাণীরা বেশ কৌতূহলী হয়। বেশ কিছুটা পথ তারা গাছের ডাল বেয়ে চলল তাদের সঙ্গে। এ অভিজ্ঞতা সুদীপ্তদের আগেও হয়েছে আফ্রিকা গিয়ে। সেখানেও জঙ্গলে তাদের অনুসরণ করত বানর আর শিম্পাঞ্জির দল।

    এক সময় বিরাট এক রবার বনের সামনে এসে তারা উপস্থিত হল। খুব ঘন বন। পিনাক তার বোলো হাতে নিল। গাছ কাটতে কাটতে তারা এগোল সামনের দিকে  সে পথে যেতে যেতে হেরম্যান বললেন, মালয় দেশের রবার বনেও ক্রিপটিড দেখা যায় তুমি জানো?

    সুদীপ্ত বলল, তাই নাকি?

    হেরম্যান বললেন, হ্যাঁ। তাদের বলে ‘রোমশ মানুষ’। মালয়ের রবার বনে যারা ট্যাপ করতে যায় তারা অনেকেই তাদের দেখেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী তাদের আকৃতি সম্পূর্ণ মানুষের মতো। তবে তাদের মুখ-মাথা বাদামি রঙের পুরু লম্বা লোমে ঢাকা। তারা নিজেদের মধ্যে বাঁদরের মতো কিচিরমিচির করে কথা বলে। এদের একটা বিশেষত্ব হল, এদের লজ্জাবোধ আছে। লজ্জা নিবারণের জন্য কোমরে একখণ্ড গাছের ছাল পরে। কারো কারো ধারণা হল, ওই লোমে ঢাকা আজব মানুষরা হল আদিম মানুষ পিথোক্যানথ্রোপাস আর আধুনিক মানুষের মধ্যে মিসিং লিঙ্ক। গত পঞ্চাশ বছরে বারবার তারা দেখা দিয়েছে মানুষকে। তারপরই আবার অদৃশ্য হয়ে গেছে।

    সুদীপ্ত মন্তব্য করল, যে সব ক্রিপটিডের কথা শোনা যায় তাদের একটা বড় অংশই কিন্তু মানুষ বা বাঁদর গোত্রের প্রাণী। এই যেমন হিমালয়ের ইয়েতি, আমেরিকার বিগফুট বা আপনার বলা মালয়ের রোমশ মানুষ।

    হেরম্যান শুনে বললেন, হ্যাঁ, এরা প্রত্যেকেই মানুষের সমগোত্রীয় প্রাণী বলেই মনে হয়। এ দেশের প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের ঘন জঙ্গলে ‘পিটং লুয়াং’ নামের এক ধরনের ক্ষুদ্রাকৃতি বানর আছে, যাদের মস্তিষ্ক, হাত-পায়ের গড়ন অবিকল মানুষের মতো। কথিত আছে সে দেশের রাজা চুলালঙ্কর্ন নাকি ওরকম একটা বানরকে তাঁর রাজদরবারে বালক ভৃত্যের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন।

    নানা কথা আলোচনা করতে করতে তারা রবার বনটা পেরিয়ে এল। তারপর আবার বড় বড় গাছের জঙ্গল। সে জঙ্গল অতিক্রম করে আরও ঘণ্টাখানেকের পর তারা অবশেষে এসে পৌঁছল অলিভিয়ের কথিত সেই শুকনো নদীখাতের সামনে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা আকারের অসংখ্য পাথরের টুকরো। সূর্য ঠিক মাথার ওপর। তার আলোতে ঝলমল করছে মাটিতে শুয়ে থাকা সাদা নুড়ি-পাথর। খাতের বাঁ দিকটা ঢালু হয়ে হারিয়ে গেছে জঙ্গলের বাঁকে। সম্ভবত সেটা গিয়ে মিশেছে টিজিডেংকল নদীর সঙ্গে। আর ডান দিকটা চড়াই বেয়ে সোজা উঠে গেছে সলক পর্বতমালার দিকে। এ জায়গা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সলক-হেলিমুন পর্বতশৃঙ্গ আর তার আশপাশের পাহাড়গুলো। সেদিকে তাকিয়ে হেরম্যান বললেন, ওই পাহাড়গুলোর পাদদেশের জঙ্গলে আমাদের পৌঁছতে হবে। খুঁজে বার করতে হবে সেই ঝরনা। যেখানে সেই উড়ন্ত দানবের ডেরা।

    নদীখাতের দুপাশে জঙ্গল। যে দিক থেকে নদী নেমেছে, চড়াই বেয়ে এগিয়ে চলল তারা। প্রকৃতি রাস্তা বিছিয়ে রেখেছে পাথরের। তার ওপর পা ফেলে ফেলে এগোতে হচ্ছে। প্রথমে হাঁটছিল পিনাক, তার কিছুটা তফাতে সুদীপ্তরা। হঠাৎ সে থমকে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে সুদীপ্তদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাল এক দিকে। নদীখাতে বিরাট বড় একটা পাথরের ফাঁকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে প্রকাণ্ড এক ময়াল সাপ। বনে পথ চলতে অভ্যস্ত পিনাকের সতর্ক চোখে সে ধরা পড়ে গেছে। হেরম্যান কোমর থেকে রিভলভারটা খুলে নিলেন। সাপটা অবশ্য সুদীপ্তদের কিছু করল না। একবার শুধু মাথা তুলে সুদীপ্তদের দেখে তার চেরা জিভটা বাতাসে ছুড়ল, তারপর আবার কুণ্ডলীর মধ্যে মাথা গুঁজল। সে জায়গাটা সাবধানে পেরোবার পর হেরম্যান সুদীপ্তকে বললেন, সকল পাহাড় হল সরীসৃপ গোত্রের প্রাণীদের আঁতুড়ঘর। এমন হতে পারে আহুল কোনো উড়ন্ত ডাইনোসর। সরীসৃপদের মধ্যে কুমির কয়েক কোটি বছরের প্রাচীন প্রাণী। হয়তো তার মতো এ প্রাণীরও কোনো বিবর্তন হয়নি। তবে এ অভিযানে আমাদের বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি। কারণ, এর আগে আমরা যেসব ক্রিপটিডের অনুসন্ধানে গিয়েছি, তাদের দেখা পাই বা না-পাই তারা কেউই হিংস্র ছিল না। আ-হুল সম্বন্ধে যা জনশ্রুতি তাতে শেষ পর্যন্ত তার খোঁজ পেলে কী হবে বলা যায় না।

    সুদীপ্ত বলল, আমরা যদি প্রাণীটার সন্ধান পাই, আর শেষ অবধি তাকে খাঁচায় পুরে সভ্য পৃথিবীতে হাজির করতে পারি তবে সেটা বিরাট ব্যাপার হবে। সময়ও এগিয়ে চলতে লাগল তাদের সঙ্গে। ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগল সলক, আর তার গায়ে লাগানো ছোট ছোট পাহাড়গুলো। চড়াই ভেঙে সেই উপত্যকায় উঠছে সুদীপ্তরা। ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে উপত্যকার জঙ্গলের কালো রেখা। সারাদিন ধরে চলার পর শেষ বিকেলে সলকের উপত্যকায় পৌঁছে গেল তারা। বেশ অনেকটা উপরে উঠে আসতে হয়েছে তাদের। জায়গাটার চারপাশে অনুচ্চ পাহাড়ের সারি। তার খাঁজে খাঁজে ঘন বাঁশ আর অন্যান্য গাছের জঙ্গল। নদীখাতটা সেই পাহাড়গুলোর ফাঁক গলে হারিয়ে গেছে সলকের দিকে। সুদীপ্তরা যেখানে এসে থামল সেখানে আরও দুটো শীর্ণ নদীখাত এসে মিশেছে মূল খাতের সঙ্গে। সে জায়গার একপাশে ঘন জঙ্গল, অন্যদিকে একটা পাথুরে জমি। স্থির হল সেই উঁচু জমিটার নীচে জঙ্গলের পাশে তাঁবু ফেলা হবে। হেরম্যান বললেন, অলিভিয়েরার ডায়েরিতে এ জায়গারও উল্লেখ আছে।

    পিনাক তাঁবু খাটাতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজ শেষ হল তার। হেরম্যান আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতঘড়ি দেখে বললেন, সূর্য ডুবতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে। ওই উঁচু জমিটার ওপরে উঠে জায়গাটা একটু দেখা যাক।

    তাঁবুর ভিতর মালপত্র সব নামিয়ে রেখে পাথরের খাঁজ বেয়ে বেয়ে এক সময় তারা পৌঁছে গেল সেই উঁচু জমিতে। সামনের অনেকটা অংশ সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে। সলকের কোণে পূর্ব থেকে পশ্চিমে অসংখ্য ছোটখাটো পাহাড়। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ঘন জঙ্গলপূর্ণ উপত্যকাগুলো। তার স্থানে স্থানে পাথরপূর্ণ মরা নদীখাত রুপালি রেখার মতো দেখা যাচ্ছে। নদীখাতগুলোর দু-পাশেই জঙ্গল।

    হেরম্যান বললেন, ওই দ্যাখো, দূরে ওই যে জায়গায় দুটো নদীখাত এসে মিশেছে, ও জায়গা পর্যন্ত ডায়েরিতে উল্লেখ আছে। পশ্চিম দিকের নদীখাত ধরে অলিভিয়েরা এগিয়েছিলেন, তারপর পথ হারিয়েছিলেন। আশা করছি কাল দুপুরের মধ্যে সে জায়গাতে পৌঁছে যাব। যে ছোট ছোট উপত্যকাগুলো সামনের পাহাড়গুলোর আড়ালে আছে, তার কোনোটাতেই উপস্থিত হয়েছিলেন অলিভিয়েরা।

    সে জায়গাতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের পরদিনের যাত্রাপথ নিয়ে আলোচনা করল তারা তিনজন। সূর্য ঢলতে শুরু করেছে সলকের আড়ালে। সুদীপ্তকে হেরম্যান বললেন, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? গতকাল সূর্যাস্তের সময় কত পাখি ডাকছিল, কিন্তু এখানে একটাও পাখি ডাকছে না, চারপাশ কেমন যেন নিঝুম! থমথমে! এটা হতেই পারে এ জায়গা আহুলের ডেরা কাছাকাছি বলে এখানে কোনো পাখি নেই!

    সুদীপ্ত বলল, হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমিও খেয়াল করেছি।

    সন্ধ্যা নামবে। সেই উঁচু জায়গা থেকে নামার পথ ধরল। কিন্তু তাঁবুর সামনে পৌঁছেই অবাক হয়ে গেল সকলে। তাদের জিনিসপত্র তারা তাঁবুর ভিতর ঢুকিয়ে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু সেসব জিনিসপত্র বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে! আর এরপরই তাদের কানে এল কিছু তীক্ষ্ণ শব্দ ‘উ-উ-প! হু-উ-প, উ-উ-প-হু-উ-উ-প!

    ওরাং ওটাং! আফ্রিকা ছাড়া বাইরের পৃথিবীতে একমাত্র ইন্দোনেশিয়ার জাভা বোর্নিওতেই দেখা মেলে এদের। তাঁবুটা কেন লণ্ডভণ্ড বুঝতে অসুবিধে হল না সুদীপ্তদের। তাদের কারো হাতে খাবারের ক্যান, অন্যান্য জিনিসপত্র। গোটা দশেক প্রাণীর একটা দল। কাছেই একটা বড় গাছের ডালে বসে উৎসুকভাবে দেখছে তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনকে। আর এরপরই একটা জিনিস দেখে সুদীপ্তরা চমকে গেল। পিনাক তার রাইফেলটা তাঁবুর ভিতর রেখে গিয়েছিল। সেটা টেনে নিয়ে গেছে একটা ওরাং-ওটাং। গাছের ডালে বসে দু-পায়ে বাঁটটাকে আঁকড়ে ধরে ব্যারেলটাকে কামড়াচ্ছে সে! অন্ধকার নেমে আসছে। প্রাণীগুলো নিশ্চয়ই এখনই অরণ্যের গভীরে উধাও হয়ে যাবে। রাইফেলটা যদি সঙ্গে নিয়ে যায় তাহলে বিপত্তি। প্রাণীটা সম্ভবত ওই জিনিসটাকে গাছের ডাল জাতীয় কিছু ভেবেছে।

    সুদীপ্তরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। ওরাং-ওটাংটা নিবিষ্ট মনে রাইফেলটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছে। তার বাঁটে, নলে, চামড়ার ফিতেতে কামড় বসাচ্ছে।

    হেরম্যান চাপা স্বরে বললেন, প্রাণীটাকে গুলি করে নীচে নামানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। খারাপ লাগলেও কাজটা করতে হবে। কোমর থেকে রিভলভার বার করলেন হেরম্যান।

    কিন্তু ওরাং-ওটাংটার ভাগ্য মনে হয় আগে থেকেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। অপ্রিয় কাজটা আর করতে হল না তাঁকে। লোডেড রাইফেলের সেফটি ক্যাচ খুলে গিয়েছিল কোনোভাবে। প্রাণীটার পায়ের আঙুলের চাপ লাগল ট্রিগারে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড শব্দে গর্জন করে উঠল রাইফেল। ওরাং-ওটাং-এর দল সেই শব্দে ভয় পেয়ে দুড়দাড় করে ছুটে পালাল। আর সেই হতভাগ্য প্রাণীটা রাইফেল সমেত গাছ থেকে খসে পড়ে কিছুক্ষণ নড়াচড়া করে স্থির হয়ে গেল।

    সুদীপ্তরা সেই গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়াল। রাইফেলের স্ট্র্যাপটা মৃত প্রাণীটার দেহের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। পিনাক সেটা ছাড়িয়ে রাইফেলটা তুলে নিল। গাছের তলায় জানোয়াররা আরও যে দু-একটা খাবারের ক্যান ফেলে গিয়েছিল সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে তাঁবুর কাছে ফিরতে যাচ্ছিল সবাই, হঠাৎ দূর থেকে ভেসে এল রাইফেলের শব্দ। হেরম্যান বললেন, ফায়ার টু! মিস্টার তানাকা সম্ভবত জানতে চাইলেন, আমরা বিপদগ্রস্ত কিনা? জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সোজা পথ ধরেছিল ওরা। আমার অনুমান ওদের দলটা আমাদের থেকে মাইল পাঁচেক এগিয়ে আছে। আমরা একবার ফায়ার করলেই ওরা আমাদের অনুসন্ধান করবে। এরপর হেরম্যান বললেন, ওরাং-ওটাংটা যখন মারাই পড়ল, তখন এটাকে নিয়ে একটা কাজ করলে হয় না।

    কী কাজ? জানতে চাইল সুদীপ্ত।

    তিনি বললেন, জঙ্গলের বাতাসে রক্তের গন্ধ অনেকদূর পর্যন্ত ছড়ায়। আমরা যে জায়গায় এসে উপস্থিত হয়েছি এটা আহুলের ডেরা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বিশেষত উড়ন্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে তো নয়ই। এ প্রাণীটাকে তো টোপ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। হয়তো ভাগ্যদেবী আমাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন!

    সুদীপ্ত বলল, তা হতে পারে। তবে অন্ধকার নামছে, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

    সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল। সুদীপ্তরা তাদের সঙ্গে বেশ প্রমাণ মাপের একটা ফোল্ডিং খাঁচা এনেছে। সেটা হালকা কিন্তু বেশ মজবুত। তার গায়ে সেন্সার বসানো আছে। কোনো প্রাণী আটকে পড়লে দূরে থাকা খাঁচার মালিকের কাছে থাকা একটা ছোট্ট যন্ত্র ব্যাপারটা তাকে জানিয়ে দেবে।

    খাঁচাটা বার করা হল। তাঁবুর থেকে বেশ কিছুটা দূরে সেই উঁচু জায়গার ঢালে উন্মুক্ত আকাশের নীচে খাঁচাটা ঠিকমতো বসানো হল। ওরাং-ওটাং-এর দেহটাকে তুলে এনে তার ভিতর রাখল পিনাক। দশ ফুট লম্বা, পাঁচ ফুট চওড়া খাঁচাটা। এ খাঁচার আর একটা বিশেষত্ব হচ্ছে এর মাথার দিকটা খোলা। ভিতরে কেউ নামলে মাথার ওপর ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। ঝাঁপটা ঠিকমতো বন্ধ হচ্ছে কিনা, হেরম্যান তা বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করলেন। কাজ শেষ করে সুদীপ্তরা যখন তাঁবুর সামনে ফিরল, ঠিক তখনই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল উপত্যকাতে। তাঁবুতে শুকনো খাবার দিয়ে রাতের খাওয়া সারল তারা। হেরম্যান বললেন, আজ থেকেই পালা করে ঘুমাবার ব্যবস্থা করতে হবে। বলা যায় না, প্রাণীটা হয়তো এসে হানা দিল তাঁবুতে। সেই মতো ঠিক হল, রাতের প্রথম অংশ জাগবেন হেরম্যান, শেষ অংশে পিনাক। খাওয়া সেরে বেশ কিছুক্ষণ গল্পগুজব করল সবাই। বাইরেটা কী নিঝুম! ঝিঁঝি পোকার ডাকও শোনা যাচ্ছে না। হেরম্যানকে পাহারায় রেখে একসময় শুয়ে পড়ল সুদীপ্ত।

    তখন সম্ভবত মাঝরাত। হেরম্যানের ধাক্কায় ঘুম ভেঙে উঠে বসল সুদীপ্ত। সে দেখল হেরম্যান আর পিনাকের চোখে-মুখে উত্তেজনার স্পষ্ট ছাপ। হেরম্যানের হাতে ধরা ছোট্ট একটা যন্ত্র থেকে বিপবিপ শব্দ আসছে। ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হল না তার। আর তারপর তারা তিনজনে সন্তর্পণে তাঁবুর বাইরে এসে দাঁড়াল। মেঘ ঢেকে রেখেছে চাঁদটাকে। প্রথমে প্রায় কিছুই চোখে পড়ল না তাদের। তারপর হঠাৎই কয়েক মুহূর্তের জন্য মেঘ কিছুটা সরে গেল। অস্পষ্ট আলোতে তারা দূর থেকে দেখতে পেল, খাঁচার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু ছায়ামূর্তি! কারা ওরা!

    সুদীপ্তরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগল সেই জীবগুলোকে। কিছুটা যেন ঝুঁকে হাঁটছে তারা। বেশ কিছুক্ষণ তাদের দেখার পর পিনাক-মন্তব্য করল, আমার ধারণা সেই ওরাং-ওটাংগুলো আবার ফিরে এসেছে। খুব সামাজিক প্রাণী এরা। জঙ্গলের মধ্যে মৃত সঙ্গীর দেহ আগলে বড় বাঁদর জাতীয় প্রাণীরা দিনের পর দিন বসে থাকে এ ঘটনা আমি শুনেছি। হয়তো মৃত প্রাণীটাকে দেখতে গিয়ে আর একটা কোনো প্রাণী ফাঁদে পড়েছে।

    অস্পষ্ট আলোতে সেই দো-পেয়ে ছায়ামূর্তিগুলোকে দেখে সুদীপ্তদেরও একই ধারণা হল। হেরম্যান বললেন, তাহলে এখন আর ওখানে গিয়ে কাজ নেই। কাল সকালে যা করার তা করা যাবে।

    তাঁবুর ভিতরে ফিরে এল সবাই। বাকি রাতটা নিরুপদ্রবেই কেটে গেল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }