Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আহুল – ৮

    ৮

    কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা। তানাকা এরপর প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, নাৎসিরা বন্দিদের ওপর কোন তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা করত তা জানা আছে আপনার? হার্জেল কিছু বলেছে এ ব্যাপারে?

    অলিভিয়েরা কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপভাবে তাকিয়ে রইলেন তানাকার দিকে। তারপর সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন—‘না’। হেরম্যান এবার প্রশ্ন করলেন, উড়ন্ত দানবটার সম্বন্ধে হার্জেল আপনাকে কী তথ্য জানিয়েছেন?

    অলিভিয়েরা বললেন, হার্জেল নিজে সম্ভবত প্রাণীটাকে মৃত্যুর আগে চাক্ষুষ করেননি। তবে তার ডাক বহু বছর ধরেই শুনেছেন। পুরনো কারারক্ষী ও তার মতো হতভাগ্য বন্দিদের মুখ থেকে কিছু কিছু কথা তিনি শুনেছিলেন। একবার একজন ইহুদি বাইরে বেরিয়ে জংলিদের খপ্পরে পড়ে। কিছুদিন সে জংলিদের হাতে বন্দি থাকার পর আবার এই বাঙ্কারে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। সে হার্জেলকে বলেছিল, প্রাণীটা কালো পাহাড়ের একটা গুহার মধ্যে থাকে। জংলিরা তাকে দেবতা জ্ঞানে অথবা ভয়ে পুজো করে। জংলিরা তার উদ্দেশ্যে মানুষ ভেট দেয়। জংলিদের ডাকে সাড়া দিয়ে গুহা থেকে হিংস্র প্রাণীটা বেরিয়ে আসে। তবে দিনের বেলা সে বেরোয় না। একবার বাইরে এলে খাবার তার চাই-ই। নইলে জংলিদের কারো প্রাণ যাবার সম্ভাবনা থাকে। যে কারণে জংলিরা রাতের বেলা ডোবা বা নদীর জলে গলা ডুবিয়ে বসে আত্মগোপন করে। তবে একবার আহার গ্রহণ করলে, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ একটা মানুষ খেলে দিন দশেক নাকি বাইরে বেরায় না প্রাণীটা। যদি না তাকে জংলিরা বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানায়। জংলিগুলো ও-ক’টা দিন রাতে নিশ্চিন্ত থাকে। আর দিনের বেলায় কখনো সে বাইরে আসে না। হার্জেল বলছিল, শীতকালে প্রাণীটার ডাক কখনো সে শোনেনি। হয়তো সে সেসময় অন্য কোথাও চলে যায় বা শীতঘুমে কাটায়। হেরম্যান মন্তব্য করলেন, প্রাণীটার মধ্যে সরীসৃপ শ্রেণির অনেক বৈশিষ্ট্য আছে দেখছি! দিনে বাইরে না আসা, অন্ধকার গুহায় থাকা, একবার খাদ্যগ্রহণ করে কিছুদিন চুপচাপ থাকা, শীতঘুম! আচ্ছা আপনার কী ধারণা প্রাণীটার সম্বন্ধে?

    অলিভিয়েরা বললেন, হার্জেল এ ব্যাপারে দুরকম কথা বলেছে আমাকে। এক, এখানে জার্মানদের ঘাঁটি তৈরির অনেক আগে থেকেই নাকি প্রাণীটা এখানে থাকে। দুই, বোর্নিওর জঙ্গল থেকে শুধু মানুষ নয়, বেশ কিছু পশুপাখিও আনা হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। হতে পারে এ প্রাণীটা তাদেরই কেউ। হার্জেল এসব গল্প অন্য বন্দিদের মুখ থেকে শুনেছিল। এক পুরনো কারারক্ষী নাকি আবার বন্দিদের এসব বলেছিল। তবে এখানে একটা সুড়ঙ্গে বেশ কিছু বড় বড় খাঁচা রাখা আছে। আমিও সেগুলো দেখেছি। অলিভিয়েরার কথা শুনতে শুনতে সুদীপ্তর চোখে ভেসে উঠল রাতের দৃশ্যটা! সুদীপ্তদের খুঁটিতে বেঁধে রেখে সেই নোংরা ডোবাতে ব্যাঙের মতো বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে জংলিগুলো ডেকে চলেছে! তার মানে তার কাছেই সুদীপ্তদের বলি চড়াচ্ছিল জংলিরা! শেষ পর্যন্ত ওদেরই কেউ গেছে হিংস্র প্রাণীটার পেটে! জঙ্গলে ঢোকার পূর্ব মুহূর্তে সুদীপ্ত তারই আর্তনাদ শুনেছিল।

    সুদীপ্ত এবার জিজ্ঞেস করল, এই অসভ্য জংলিগুলো আসলে কোথায় থাকে?

    তিনি উত্তর দিলেন, হার্জেল বলেছিল, এই অসভ্য উপজাতিরা নাকি মুক্ত হয়ে প্রথমে আশ্রয় নিয়েছিল এ উপত্যকার ঠিক বাইরে সলক আর হেলিমুনের মধ্যবর্তী এক উপত্যকায়। সেখানেই তাদের গ্রাম। নারী ও শিশুরা সেখানেই থাকে। সেই রুক্ষ জায়গাতে কোনো খাবার পাওয়া যায় না। তাই পুরুষরা এখান থেকে খাবার সংগ্রহ করে। এখানেও তেমন পশু-পাখি পাওয়া যায় না। জংলিদের প্রধান খাদ্য ব্যাঙ। আমি দিনেরবেলায় একদিন জঙ্গলের মধ্যে জংলিদের ফেলে রাখা স্তূপাকৃতি ব্যাঙ দেখেছি। হার্জেল বলেছিল ওই উড়ন্ত দানবটা নাকি ব্যাঙও খায়। যে লোক জংলিদের কবল থেকে পালিয়ে এসেছিল সে নাকি জংলিদের প্রাণীটার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ উৎসর্গ করতে দেখেছিল।

    হেরম্যান এরপর প্রশ্ন করলেন, জংলিরা ঠিক কী কৌশলে ওই প্রাণীটাকে গুহার বাইরে

    আনে? শুধুই জলার মধ্যে বসে উদ্ভট গান গেয়ে? সে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। অলিভিয়েরা এ প্রশ্নের উত্তরে কী একটা জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু মিস্টার তানাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বেশ রুক্ষভাবেই বললেন, এসব হাবিজাবি গালগল্প নিয়ে গবেষণা থামান। যে প্রাণীকে কেউ দেখেনি তার সম্বন্ধে আলোচনায় সময় নষ্ট করে লাভ নেই। ‘হয়তো’, আর ‘নাকি’, ‘বোধহয়’—এসব শব্দের ওপর ভিত্তি করে আলোচনা করে যাচ্ছে আপনারা! জংলিদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে কীভাবে এখান থেকে দ্রুত পালানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করুন। জংলিগুলো হয়তো আমাদের খুঁজতে খুঁজতে এখানেও ঢুকে পড়তে পারে! ,

    অলিভিয়েরা তানাকার দিকে তাকিয়ে বললেন আপনি একজন জীববিদ অথচ এই অদ্ভুত প্রাণীর ব্যাপারে আপনার কোনো আগ্রহ নেই?

    তানাকা বললেন, ওসব আষাঢ়ে প্রাণী নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমরা এতজন জোয়ান লোক আছি, অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী এলে তার মোকাবিলা করা যাবে। সঙ্গে তো আগ্নেয়াস্ত্রও আছে। — এই বলে তিনি জামার ভিতর থেকে একটা রিভলভার বার করে টেবিলের ওপর রাখলেন।

    অলিভিয়েরা বললেন, তাহলে আজ রাতেই এ জায়গা ছেড়ে যাওয়া যেতে পারে। সুড়ঙ্গ পথটা বেশ অনেক লম্বা। সেটা পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটলে বাইরে বেরোব। সেই ভয়টা দিনের বেলায় থাকবে না। আর সুড়ঙ্গ পথে জংলিদের থেকে বেশ কিছুটা তফাতেও চলে যাব। জংলিরা সাধারণত দিনেরবেলা কালো পাহাড়টার ওপাশের জলায় ব্যাঙ শিকার করে। মাটির নীচ দিয়ে কালো পাহাড়ের পাশটা অতিক্রম করে তাদের উল্টোদিকে আমরা যাব।

    কিছুক্ষণ আলোচনার পর অলিভিয়েরার প্রস্তাবেই সম্মত হল সবাই। ঠিক হল মধ্যরাতে সুড়ঙ্গ পথ ধরে বাইরে বেরোবার জন্য রওনা হবে তারা।

    অলিভিয়েরা বেশ কিছু মাছ ধরেছিলেন তাই দিয়েই দুপুরের ভোজনপর্ব সাঙ্গ হল। মাটির নীচে এ জায়গাতে একটাই সমস্যা। প্রচণ্ড গরম লাগছে। অলিভিয়েরা বললেন, মাটির নীচে এ জায়গাতে এত গরম কিন্তু ছিল না। ক’দিন ধরে এ ব্যাপারটা লক্ষ করছি। সে গরমে ঘুমানো সম্ভব নয়। খাওয়া সেরে ঘণ্টা পাঁচেক বিশ্রাম নিল সবাই। সুদীপ্তদের অনেক ধকল গেছে। কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠল তারা। বাইরের পৃথিবীর আলো ভূগর্ভের এই কক্ষে প্রবেশ না করলেও ঘড়ি দেখে সুদীপ্তরা বুঝতে পারল যে বাইরে বিকেল হয়ে গেছে। তানাকা একসময় বললেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের এই নাৎসি ক্যাম্পটা একটা ঐতিহাসিক স্মারক। আর কোনোদিন তো এখানে আসা হবে না। অলিভিয়েরা, আপনি কি এ জায়গাটার সুড়ঙ্গগুলো আমাদের একটু ঘুরিয়ে দেখাবেন?

    সুদীপ্তরও প্রস্তাবটা মনে ধরল। সে বলল, হ্যাঁ, আমিও একটু দেখে নিতে চাই জায়গাটা।

    অলিভিয়েরা বললেন, হ্যাঁ চলুন।

    আশপাশের সুড়ঙ্গ যেগুলো হার্জেল আমাকে চিনিয়েছিল সেগুলো আপনাদের আমি দেখাতে পারব।

    দুটো মশাল জ্বালানো হল। তার একটা হাতে নিলেন অলিভিয়েরা অন্যটা তানাকা। ঘরের চারপাশে বেশ ক’টা সুড়ঙ্গমুখ আছে। অলিভিয়েরা তারই একটাতে ঢুকলেন সবাইকে নিয়ে। লম্বা বারান্দার মতো সুড়ঙ্গ সোজা এগিয়েছে। কিছুটা এগিয়েই দুপাশে খুপরি খুপরি ঘর। লোহার গরাদ বসানো সামনে। চলতে চলতে অলিভিয়েরা বললেন, এই খোপের মতো ঘরগুলোতে বন্দিদের রাখা হত। কত করুণ ইতিহাস যে এসব ঘরে জমা হয়ে আছে এখানে তা কে জানে! মশালের আলো পিছলে যাচ্ছে মাকড়শার জাল আর ধুলো মাখা ঘরগুলোর ওপর দিয়ে। মাঝে মাঝে এই সুড়ঙ্গ থেকে অন্যদিকেও রাস্তা গেছে। তাদের সামনেও লোহার গরাদ বসানো। সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করল, এ সব রাস্তা কোথায় গেছে? আচ্ছা, এসব রাস্তা ধরে জংলিরাও তো ভিতরে আসতে পারে?

    অলিভিয়েরা জবাব দিলেন, সব রাস্তা কোথায় গেছে আমার জানা নেই। হার্জেল থাকলে হয়তো বা বলতে পারত। না, জংলিরা সুড়ঙ্গের ভিতরে ঢোকে না। হার্জেলের মুখে শুনেছি তাদের নাকি ধারণা যে একবার ভিতরে ঢুকলে আবার তারা বন্দি হয়ে যাবে। বেশ কয়েকটা ঘরে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর নানা যন্ত্রপাতিও চোখে পড়ল। ধুলো মেখে অতীতের সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে সব। আরও কিছুটা এগিয়ে সুড়ঙ্গর একটা বাঁকের মতো জায়গাতে থামল সবাই। সেখানে সুড়ঙ্গের গায়ে একটা বেশ বড় ঘর। অলিভিয়েরা গরাদের উপর বাইরে থেকে মশালটা তুলে ধরতেই সুদীপ্তরা দেখতে পেল ভিতরে দেওয়ালে র‍্যাকের গায়ে টাঙানো আছে বেশ কয়েকটা ধুলো মাখা রাইফেল। নাৎসিদের ফেলে যাওয়া জিনিস। সম্ভবত এ ঘরটা তাদের অস্ত্রাগার ছিল। তানাকা হঠাৎ বললেন, আচ্ছা, এ অস্ত্রগুলো তো এখনো কর্মক্ষম থাকতে পারে। তাহলে তো আমাদের কাজে লাগবে। আপনি জিনিসগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন? অলিভিয়েরা বললেন, না দেখিনি। আমি আর হার্জেল এই লোহার দরজাটা একবার খোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বহু

    বছর না খোলার ফলে এমনভাবে মাটির সঙ্গে এটা এঁটে বসেছে যে খুলতে পারিনি। সুদীপ্ত ভালো করে দেখল দরজাটা। ঝাঁপের মতো দরজা। ঠেলে ওপরে ওঠাতে হয়। লোহার দরজাটা মাথারা ওপর ধরে রাখার জন্য মোটা লোহার শিকল লাগানো আছে গায়ে। সেটা পাথুরে দেওয়ালের গায়ে লোহার আংটায় আটকে দিতে হয়। ওই শিকলটাই আবার গরাদ নীচে নামানো অবস্থায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধর কাজ করে। দরজার বাইরে কিছুটা তফাতে মেঝেতে বসানো লোহার খুঁটিতে সেটা পরিয়ে দিলে দরজা আর খোলা যাবে না। শিকলটা এখন সে অবস্থাতেই রাখা আছে।

    তানাকা এরপর বললেন, আর্মির অস্ত্র তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। আমাদের ভাগ্য ভালো হতেও পারে। এতজন লোক আছি, একবার চেষ্টা করে দেখা যাক ঝাঁপটা ওপরে তোলা যায় কিনা? এই বলে তিনি তার হাতের মশালটা দেওয়ালের খাঁজে রেখে নীচু হয়ে মেঝের খোঁটা থেকে শিকলটা খুললেন। তারপর ঝুঁকে পড়লেন দরজা ঠেলে ওপরে ওঠানোর জন্য। অলিভিয়েরা হেরম্যানের হাতে মশালটা দিলেন। তিনি আর সুদীপ্তও এবার ঝুঁকে পড়ে হাত লাগালেন তানাকার সঙ্গে। বহুদিন অব্যবহারের ফলে এমনভাবে এঁটে গেছে ঝাঁপ যে তিনজনে মিলে চেষ্টা করেও সেটা ওপরে তোলা যাচ্ছে না। পিনাক প্রাথমিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা দেখছিল। ঝাঁপ ওঠানো যাচ্ছে না দেখে সে সুদীপ্তকে বলল, আপনি উঠুন আমি দেখছি।

    সরে এল সুদীপ্ত। পিনাক ঝুঁকে পড়ার আগে জামার নীচে কোমরে গোজা সেই হাড়ের টুকরোটা বার করে সুদীপ্তর হাতে দিয়ে বলল, এটা আপনার কাছে রাখুন, নইলে ঝুঁকতে গেলে লাগবে।

    সেই হাড়ের টুকরোটা এখনো যত্ন করে রেখেছে পিনাক। বাক্যব্যয় না করে সুদীপ্ত যেটা নিজের জামার তলায় গুঁজে নিল। পিনাক ঝুঁকে পড়ল ঝাঁপের ওপর।

    সত্যি শক্তি আছে লোকটার! লোহার ঝাঁপটা ওপরে তোলার জন্য কয়েকবার ঝাঁকুনি দিতেই একটা ধাতব শব্দ করে বহু বছরের আড়মোড়া ভেঙে ঝাঁপটা ওপরে উঠে এল। এরপর অতি সহজেই ওপরে গেল ঝাঁপ। তার গায়ের লোহার শেকল দেওয়ালের গায়ে আটকে দেওয়া হল। শূন্যে ঝুলে রইল লোহার গরাদ-অলা ঝাঁপ। ঘরের ভিতর প্রবেশ করল সবাই।

    র‍্যাক থেকে রাইফেলগুলো নামিয়ে হেরম্যান, অলিভিয়েরা আর তানাকা পরীক্ষা করতে লাগলেন। হেরম্যান বললেন, জিনিসগুলো মোটামুটি ঠিক আছে। তেল দিয়ে ব্যারেলগুলো পরিষ্কার করলে হয়তো এগুলো ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে

    অলিভিয়েরা বললেন, একটা ঘরে আমি অনেক ক’টা মুখবন্ধ তেলের ড্রাম দেখেছি। একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। আর এরপরই মশালের আলোতে ঘরের কোণে একটা মেশিনগান চোখে পড়ল। তার গা থেকে ঝুলছে ধুলোমাখা কার্তুজের বেল্ট। মাকড়শার জাল সরিয়ে সবাই এগিয়ে গেল ঘরের কোণে। অলিভিয়েরা জিনিসটা দেখে বললেন, আমি এ জিনিস চালাতে পারি। ডিফেন্স ট্রেনিং নেবার সময় চালানো শিখেছিলাম।

    উৎসাহিত হয়ে সবাই ঝুঁকে পড়ল জিনিসটার ওপর। তানাকা বললেন, দাঁড়ান, আর একটা মশাল আনি। এই বলে তিনি পা বাড়ালেন ঘরের বাইরে।

    অলিভিয়েরা ধুলো ঝাড়তে শুরু করলেন জিনিসটা থেকে। সবাই মেশিনগানটার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে ঘটাং করে শব্দ হল পিছনে। চমকে উঠে তাকাতেই সুদীপ্তরা দেখতে পেল লোহার ঝাঁপটা পড়ে গেছে। তার ওপাশে রয়েছেন তানাকা। আংটা থেকে শিকলটা কি খসে গেল? ঝাঁপটা তুলবার জন্য এগিয়ে গেল সবাই। অলিভিয়েরা, হেরম্যান আর পিনাক ঝাঁপের নীচের অংশ ধরে ওঠাবার চেষ্টা করল। কিন্তু ঝাঁপটা উঠল না। আর এরপরই তারা দেখতে পেল সেই লোহার মোটা শিকলটা বাইরের কিছুটা দূরে মেঝের ওপর লোহার খুঁটিতে আটকানো আছে। বাইরে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তানাকা। তাঁর ঠোঁটের কোণে আবছা হাসি ফুটে উঠেছে। অলিভিয়েরা তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, শিকলটা খোঁটায় আপনি আটকালেন নাকি! ওটা খুলুন। ঝাঁপটা ওঠানো যাচ্ছে না।

    তানাকার হাসিটা এবার চওড়া হল। তিনি বললেন, হ্যাঁ আমিই আটকালাম ৷ আপনারা ভিতরে থাকুন, আমি এবার চলি।

    অলিভিয়েরা বিস্মিতভাবে বললেন, তার মানে?

    তানাকা অলিভিয়েরার উদ্দেশে বললেন, আমি সেখানে যাব। যার সন্ধানে আপনি আর আমি দুজনেই সম্ভবত এখানে এসেছিলাম।

    একথা বলার পর তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে সেটা মেলে ধরে অলিভিয়েরার উদ্দেশে বললেন, তবে এখানকার নকশাটা এত সহজে পেয়ে যাব ভাবিনি! আমি দুঃখিত, আপনারা অবর্তমানে আপনার জিনিসপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে এটা পেয়ে গেলাম। আচ্ছা, এই সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় এই ক্রুশ চিহ্ন দেওয়া জায়গাটাই তো সেই জায়গা তাই না? ম্যাপটাকে তানাকা দরজার বাইরে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আরো ভালোভাবে মেলে ধরলেন।

    তানাকা কী বলছেন তা কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না সুদীপ্তদের। তবে অলিভিয়েরার মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে বলে মনে হল। তিনি আমতা আমতা করে বললেন, তাহলে আপনি জীববিদ নন? আপনিও এরই সন্ধানে এসেছিলেন?

    তানাকা চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দিলেন, না আমি জীববিদ্ নই, আমি একজন ধাতুবিদ্। সামরিক বিভাগে চাকরি করতাম। একদিন পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে এ জায়গার সন্ধান পেয়ে গেলাম। সে সময় জার্মানি আর জাপান একপক্ষে ছিল। আর এ জায়গা ছিল জাপানের দখলে। কাজেই তাদের না জানিয়ে হিটলারের পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। তবে আপনাকে আমি ধন্যবাদ দিই। এই ম্যাপটা আমার কাজ আরও সহজ করে দিল।

    অলিভিয়েরা এবার বলে উঠলেন, ঠিক আছে, দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন। এ কৃতিত্ব আমরা দুজনেই নেব। তেমন হলে আপনিই নেবেন।

    তানাকা বললেন, আমি বিশ্বাস করি না কাউকে। কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখতে চাই না। এ খনির আবিষ্কর্তা হিসাবে আমিই ব্যাপারটা ইন্দোনেশিয়া সরকারকে জানাব। অর্থ, খ্যাতি, যশ সব হবে। তবে কথা দিলাম আপনাকেও বঞ্চিত করব না আমি। আপনার আত্মত্যাগ আমি স্মরণে রাখব। ওই পাহাড়টার নাম দেব ‘অলিভিয়েরা হিল’।

    অলিভিয়েরা গরাদ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, শিকলটা খুলুন, শিকলটা খুলুন, আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন?

    হেরম্যানও তানাকার উদ্দেশে বললেন, আপনি কী করছেন? আপনাদের দুজনের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া থাকলে দরজা খুলে শান্তভাবে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিন। আমরা আপনার মতো এখানে কোনো ধাতুর সন্ধানে আসিনি। সোনা, রুপোতে আমাদের আগ্রহ নেই। আমরা জীববিদ।

    তানাকা প্রথমে হেরম্যানের উদ্দেশে বললেন, জানি আপনারা জীববিদ। এখানে আপনারা কী খুঁজতে এসেছেন? আ-হুল? ও-প্রাণীর কোনো অস্তিত্ব নেই এখানে। এ জায়গার ধারে-কাছে যাতে কেউ না আসে তাই জার্মানরা ব্যাপারটা রটিয়েছিল। এ বনে বিরাট বড় এক ধরনের প্যাঁচা থাকে—‘উড আউল’। তাকেই লোক ‘আ-হুল’ বলে ভয় পায়। তবে সে বেচারা নেহাতই নিরীহ জীব। আমি দুঃখিত। ভাগ্য আপনাদের এখানে এনে ফেলেছে। এটাও আমি সামরিক নথি থেকেই জেনেছি। মৃত্যুর আগে সত্যিই আপনারা জেনে গেলেন। তারপর তিনি অলিভিয়েরার উদ্দেশে বললেন, চলি বন্ধু। কথা দিলাম ওই পাহাড়ের নাম হবে, ‘অলিভিয়েরা হিল’। অলিভিয়েরা চিৎকার করে উঠলেন, তুমি পাগল হয়ে গেছ! সেখানে যাওয়া মানে নিশ্চিত মৃত্যু! দরজা খোলো! তানাকা অট্টহাস্য করে উঠলেন। মশালের আলোয় তার মুখটা পাগলের মতো লাগছে। দু-চোখে ফুটে উঠেছে লোভ। সুদীপ্তদের ডাকাডাকি অগ্রাহ্য করে তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। তাঁর অট্টহাসি মিলিয়ে গেল সুড়ঙ্গপথে

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }