Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বুরুন্ডির সবুজমানুষ – ৬

    ৬

    পরদিন সকালে উঠেই নীচে নামার প্রস্তুতি শুরু হল।

    হেরম্যান, সুদীপ্ত, টোগো দাঁড়িয়ে ছিল এক জায়গাতে। ম্যাকুইনা এসে দাঁড়ালেন তাদের কাছে।

    টোগো বাইনোকুলার দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সকাল থেকেই ওদের মধ্যে একটা চঞ্চলতা লক্ষ করছি। সম্ভবত আমাদের উপস্থিতি তারা টের পেয়ে গেছে। আকালাও এ কথাই বলছিল।’

    হেরম্যান বললেন, ‘প্রথম সাক্ষাতে ওরা আমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবে মনে হয়?’

    টোগো জবাব দিল, ‘ওদের কাছে আমরা বিদেশি। এটা ওদের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। তবে, আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে ওরা ক্রুদ্ধ হয়। তেমন হলে ওরা আমাদের আক্রমণ করতে পারে।’

    ম্যাকুইনা বললেন, ‘ওরা আমাদের আক্রমণ করলে আমাদের ভয়ের কিছু নেই, চল্লিশটার মতো রাইফেল আছে সঙ্গে। তাছাড়া দুটো…।’ কী যেন একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন তিনি।

    হেরম্যান বললেন, ‘তা আমাদের থাকতে পারে, কিন্তু ওদের সাথে মিথ্যা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে আমাদের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। তাছাড়া এ জায়গা আমাদের অপরিচিত। অসুবিধায় পড়তে হতে পারে।’

    তার কথা শুনে ম্যাকুইনা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘না, আমি ওদের সাথে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে যাওয়ার কথা বলছি না। তবে যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় যে আমি তৈরি আছি, সেটা আমি আপনাদের জানিয়ে দিলাম।’

    সুদীপ্ত এবার হঠাৎ এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করল, ‘আমরা ওদের কাছে গিয়ে নিজেদের কী পরিচয় দেব?

    হেরম্যান সম্ভবত সুদীপ্তর প্রশ্নর জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই ম্যাকুইনা বললেন, ‘আমাদের আসল উদ্দেশ্য যে ওদের প্রথমে বলা ঠিক হবে না,—এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চয়ই আমার সাথে, একমত হবেন। আমরা ধর্মপ্রচারক, বা এ জাতীয় কিছু বলতে হবে ওদের।

    হেরম্যান বললেন, ‘সেটা মনে হয় ঠিক খাপ খাবে না। আমাদের কারও চেহারা বা পোশাক ধর্ম প্রচারকদের মতো নয়। বা তাঁরা কেউ আমাদের মতো আস্কারি পরিবৃত হয়েও ঘোরেন না। তার চেয়ে বরং শিকারি বলাই ভালো। বলব, শিকারের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে এ দিকে চলে এসেছি। ম্যাকুইনা বললেন, ‘ঠিক আছে তাই বলা যাক। সবুজ দানব বানরের কথা কৌশলে জানার চেষ্টা করা হবে।’

    সকাল আটটা নাগাদ জঙ্গলের আড়াল থেকে বেরিয়ে নীচে নামতে শুরু করল সুদীপ্তরা। কিছু লোক শুধু রয়ে গেল তাঁবু আগলাবার জন্য। ক্রমশই সুদীপ্তদের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল নীচের গ্রামটা। বড় বড় বেশ কয়েকটা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে সার সার গোলাকৃতি পাতায় ছাওয়া কুঁড়েঘর। সংখ্যায় গোটা পঞ্চাশেক হবে। গ্রামের ঠিক মাঝখানে একটা বৃত্তাকার ফাঁকা জায়গা। যেখানে সমবেত হয়েছে বেশ কিছু লোক। তবে তাদের সংখ্যাটা ওপর থেকে সঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সম্ভবত পিগমিরা একত্রিত হয়ে ওপর দিকে তাকিয়ে পাহাড়ের ঢাল বয়ে নেমে আসা লোকদের দেখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীচে নেমে কিছুটা পথ এগিয়ে গ্রামের সামনে পৌঁছে গেল তারা।

    গাছের গুঁড়ির উঁচু প্রাকার দিয়ে ঘেরা গ্রাম। সুদীপ্তরা তার প্রবেশ মুখে গিয়ে দাঁড়াতেই, আগল ঠেলে ভিতর থেকে একদল মানুষ বেরিয়ে এসে চারপাশে ঘিরে দাঁড়াল। অদ্ভুত আকৃতির মানুষ সব। উচ্চতা চার-সাড়ে চার ফুট হবে। তিনফুট উচ্চতারও কয়েকজন আছে দলের মধ্যে। তবে হুটু গ্রামের লোকদের মতো এদের চেহারা অনাহার ক্লিষ্ট নয়, বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা, উচ্চতাটাই যা চোখে পড়ার মতো কম। তবে এদেরও ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, দেহের নীচের দিকের অংশ একখণ্ড পশুচর্মে ঢাকা। তবে সাজগোজের কিছু বাহার আছে, অনেকেই রঙিন পুঁতির মালা, আর কর্ণকুণ্ডলে সজ্জিত। লোকগুলোর কারো হাতে বর্শা, কারো হাতে তির ধনুক। অস্ত্রগুলোও তাদের মতো ক্ষুদ্র, যেন খেলনার জিনিস। জনা তিরিশ লোকের একটা দল। সুদীপ্তদের ঘিরে ধরে মনোযোগ দিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে লাগল তারা। তাদের আকৃতি আর বিশেষত তাদের অস্ত্রগুলোকে দেখে ম্যাকুইনা চাপা স্বরে হেরম্যানকে বললেন, ‘এই লোকগুলোকে নিয়ে আপনারা এত চিন্তা করছিলেন! আমাদের কাছে এরা তো কিছুই না।’

    হেরম্যান কিছু না বললেও টোগো চাপা স্বরে বলল, ‘ওদের অস্ত্রগুলো নিরীহ বলে মনে হলেও আসলে তা নয়। আপনার রাইফেলের গুলি খেয়ে কেউ বাঁচলেও বাঁচতে পারে, কিন্তু ওদের অস্ত্রর সামান্য খোঁচা খেলেও কারো বাঁচা সম্ভব নয়। এই তির খেলে মুহূর্তের মধ্যে সিংহ গোরিলারাও লুটিয়ে পড়ে। এমনই বিষমাখানো এই অস্ত্রগুলো।’ কিছুক্ষণ সুদীপ্তদের দেখার পর পিগমিদের দঙ্গল থেকে কে একজন যেন কর্কশ ভাষাতে কী একটা বলল। সুদীপ্ত পাশ ফিরে দেখতে গেল লোকটাকে, তার উচ্চতা বড়জোর চার ফুট, বিরাট বড় ভুঁড়ি, নানা রঙের পাথরের মালা তার গলায়। লোকটার মাথায় একটা অদ্ভুত সাজও আছে। কেউ যেন একটা কাঠের তৈরি ছোট টব উল্টো করে বসিয়ে দিয়েছে তার মাথায়। এরকম অদ্ভুত শিরোভূষণ সুদীপ্ত আগে কোনোদিন দেখেনি। সম্ভবত লোকটা মাঝবয়সি হবে। সুদীপ্তদের উদ্দেশ্যে সে প্রশ্ন করল, ‘তোমরা কারা? এ মুলুকে কেন?’

    ভাষাটা ধরতে পারল টোগো। বান্টুরই কোনো স্থানীয় সংস্করণ হবে।

    সে জবাব দিল, ‘আমরা শিকারি। এ তল্লাটে শিকারের টোগোর জবাব শুনে লোকটা সন্দিহান হয়ে তাকে বলল, ‘কেন, অন্য মুলুকে বন নেই নাকি? সাদা চামড়া দুটো কোন দেশের লোক? ওরাই কী দলটাকে এনেছে? আর ‘না-সাদা না-কালো’ এ লোকটাই বা কোন জাতের?’—এক সঙ্গে এক ঝাঁক প্রশ্ন টোগোর উদ্দেশে ছুড়ে দিল। টোগো জবাবে যা বলল, তা হল, ‘শিকারের জন্য ঘুরতে ঘুরতেই তারা এ তল্লাটে চলে এসেছে। এখানে আসার পিছনে তাদের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই। পিগমিদের সাথে তারা কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। টোগো হল দাড়িঅলা সাদা চামড়ার গাইড। এ সাদা চামড়া আফ্রিকার বাসিন্দা নয়, আর, না-সাদা না-কালো লোকটা হল দাড়িঅলা সাদা চামড়ার সঙ্গী, ইন্ডিয়া বলে একটা দূর দেশে সে থাকে। আর লম্বা সাদা চামড়া হল একজন আফ্রিকান্ডার। এ দিকে আমার পথে তাদের সাথে দেখা হয়েছে। তারপর সকলে এক সাথে এদিকে এসেছে।’

    খোঁজে এসেছি।

    টোগো আর সেই ভুঁড়িঅলা পিগমি বান্টু ভাষায় এরপর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর, টোগো হেরম্যানকে বলল, ‘এই ভুঁড়িঅলা লোকটার নাম ওটুম্বা। ও এখানকার রাজা, মানে সর্দার। এই গ্রাম আর চারপাশের পাহাড় হল ওর সাম্রাজ্য। এমনিতে ওরা বিদেশিদের পছন্দ করে না। তবে আমরা যেহেতু এখানে পৌঁছেই গেছি, তাই ও আমাদের এখানে তিন দিনের জন্য শিকারের অনুমতি দিতে রাজি। তবে ওদের তিনটে শর্ত মানতে হবে, আর দুটো আগুন ছোড়া লাঠি অর্থাৎ রাইফেল ও কিছু কার্তুজ উপহার দিতে হবে। নইলে পত্রপাঠ বিদায় নিতে হবে আমাদের।’ টোগোর কথা শুনে ম্যাকুইনা বললেন, ‘এতগুলো রাইফেলধারী লোককে শর্ত না মানলে ও বিদায় নিতে বলছে! বামনটার তেজ তো কম নয়! তাছাড়া রাইফেল নিয়ে ও কী করবে? এরা রাইফেল চালাতে জানে নাকি??

    হেরম্যান ম্যাকুইনাকে বললেন, ‘ওদের সাথে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। মাথা ঠান্ডা রেখে চলতে হবে। বরং ওদের অন্য শর্তগুলো শোনা যাক।’ টোগো এরপর ওটুম্বার কাছে শর্ত জানতে চাইলে সে বলল, ‘প্রথম শর্ত, উত্তর দিকের পাহাড়ে একদল গোরিলা আছে, মাঝে মাঝেই তারা আক্রমণ করে আমাদের। তোমাদের বন্দুক দিয়ে মেরে তাড়াতে হবে ওদের। দ্বিতীয়ত, গ্রামের কাছে মাসাইদের থাকা চলবে না, কারণ এত লোক এখানে থাকলে তোমরা হঠাৎ আমাদের আক্রমণ করতে পারো। আর তৃতীয়ত, গ্রামের ঠিক পিছনেই, পশ্চিমের যে পাহাড়, সেখানে কারো যাওয়া চলবে না। ওখানে আমাদের দেবতা টাইবুরুর থান আছে। বিদেশিরা পা রাখলে ও পাহাড় অপবিত্র হবে। এ সব মানলে মানো, নইলে বিদায় হও।’

    ওটুম্বার শর্ত নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হল, তার শর্ত মানা হবে। তবে দুটো রাইফেলের একটা তাকে এখন দেওয়া হবে, অন্যটা দেওয়া হবে এ জায়গা ছেড়ে চলে যাবার সময়। আর ওটুম্বাকে অনুরোধ করা হোক, যাতে সে একবার সুদীপ্তদের গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখায়।

    ওটুম্বা সুদীপ্তদের বক্তব্য জেনে গ্রাম দেখানোর ব্যাপারে একটু দোনামোনা করেও শেষ পর্যন্ত তাতে রাজি হয়ে গেল। তবে এ ক্ষেত্রেও সে শর্ত দিল যে, মাত্র পাঁচজন গ্রামে ঢুকতে পারবে। এবং তাদের সাথে কোনো রাইফেল থাকবে না।

    আত্মরক্ষার জন্য হেরম্যান, সুদীপ্ত, টোগো–তিন জনের পোশাকের নীচেই রিভলভার আছে। সম্ভবত ম্যাকুইনার কাছেও আছে। তাই হেরম্যান, ম্যাকুইনা, দুজনেই সম্মত হলেন ওটুম্বার প্রস্তাবে। ম্যাকুইনা এরপর একজন মাসাই রক্ষীকে তার রাইফেল ওটুম্বাকে দেবার নির্দেশ দিলেন। ওটুম্বা রাইফেলটা মাসাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে প্রথমে রাইফেলটা রক্ষীদের মতো কাঁধে ঝোলাবার চেষ্টা করল, কিন্তু রাইফেলটা প্রায় তার দেহের সমান আকৃতির। কাজেই সে কিছুক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও ব্যাপারটা ঠিক জুত করতে পারল না। সুদীপ্ত প্রায় হেসেই ফেলছিল ওটুম্বার কাণ্ড দেখে! টোগো ইশারায় তাকে হাসতে বারণ করল। নিষ্ফল চেষ্টার পর ওটুম্বা তার রাইফেল একজন অনুচরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করার জন্য সুদীপ্তদের ওটুম্বার সঙ্গে আসতে বলল। হেরম্যান, সুদীপ্ত, টোগো, ম্যাকুইনা ও একজন হুটু আস্কারি, এই পাঁচজন ওটুম্বার পিছন পিছন গাছের গুঁড়ির প্রাচীর গলে প্রবেশ করল গ্রামের ভিতর। তির-ধনুকধারী পিগমি রক্ষীরাও চলল তাদের সাথে।

    গ্রামের ভিতর ঢুকতেই তাদের দেখতে ঘরের ভিতর যারা ছিল তারাও বেরিয়ে এল। খুদে খুদে লোকজন সব। গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের কুঁড়েগুলোর উচ্চতাও বেশি নয়, ফুট ছয়েক হবে। দেখতে অনেকটা ক্ষুদ্রাকৃতি ধানের গোলার মতো। তাতে কোনো জানলা নেই, ভিতরটা অন্ধকার। শুধু একটা ফোকর আছে তার ভিতরে যাবার জন্য। তবে কুঁড়েগুলোর প্রত্যেকটার গায়ে গোঁজা আছে অসংখ্য তীর। ওটুম্বার পিছন পিছন গ্রাম ঘুরে দেখতে লাগল সুদীপ্তরা। এক জাতীয় খর্বাকৃতি গোরুও চোখে পড়ল তাদের। তবে তাদের খাড়া সিং দুটো বেশ লম্বা। এছাড়া রয়েছে একপাল গিনিয়া ফাউল ও তিতির জাতীয় পাখি। গাছের নীচে পাতার রাশি সরিয়ে পোকা খুটে খাচ্ছে তারা। এক জায়গাতে রোদে শুকানো হচ্ছে নানা ধরনের প্রাণীর চামড়া, তার মধ্যে আছে সিংহ, চিতা, আর বানর জাতীয় নানা জীব। ওটুম্বা বলল, ‘ও দিয়ে পোশাক তৈরি হবে। উৎসবের সময় যে পোশাক পরে নাচা হবে। শুধু পশ্চিমের নিষিদ্ধ পাহাড়ে নয়, পিগমিদের গ্রামের ভিতরেও এক লৌকিক দেবতার থান রয়েছে ঝাঁকড়া এক গাছের নীচে। বটের মতো গাছটার থেকে অসংখ্য ঝুড়ি নেমেছে মাটিতে। আর তার নীচে আধো অন্ধকার পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে এক বীভৎস মূর্তি! একটা ফুটা চারের লম্বা কাঠের গুঁড়ি কুঁদে তৈরি করা হয়েছে তাকে। মূর্তির হাত-পা নেই। মুখসর্বস্ব দেহ। কিন্তু তার ভয়াল রূপ দেখে চমকে উঠল সবাই। তীক্ষ্ণ দত্তশোভিত তাঁর করাল মুখগহ্বর যেন সবাইকে এখনই গ্রাস করতে চাইছে! ওটুম্বা, টোগোর প্রশ্নের উত্তরে জানাল, “ইনি, ‘ওঙ্গো’, আমাদের রক্ষাকর্তা।”

    মূর্তিটার সামনে একটা বেশ বড় কালচে রঙের পাথরের চাঁই রাখা। সেই পাথরের চারপাশে অসংখ্য হাড়গোড় আর খুলি ছড়িয়ে আছে।

    খুলিগুলো দেখতে অনেকটা মানুষের খুলির মতো। কিন্তু আকৃতিতে অনেক ছোট।

    হেরম্যান বললেন, ‘ওই পাথরের ওপর দেবতার সামনে বলি চড়ানো হয়। এরপর তিনি জানতে চাইলেন, খুলিগুলো কীসের?

    ওটুম্বা জবাব দিল, ‘এখানে এক ধরনের বাঁদর আছে। ও সব তাদেরই খুলি। আমরা দেবতাকে নিবেদন করি।’

    তার কথা শেষ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাকুইনা হঠাৎ আঙুল নির্দেশ করে হাড়গোড়ের স্তূপের মধ্যে একটা জিনিসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, ‘আর ওটাও কী বানরের?’

    সুদীপ্তরও এবার চোখে পড়ল সেটা। বানরের খুলিগুলোর মধ্যে পড়ে থাকা বেশ বড় আকারের একটা খুলি!

    ম্যাকুইনার ভাষা বুঝতে না পারলেও, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন তা বুঝতে পারল ওটুম্বা। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ম্যাকুইনার উদ্দেশ্যে সে বলল, ‘হ্যাঁ, আমরা কখনো সখনো মানুষও বলি দিই।’

    তার কথা শুনে সুদীপ্তরা চমকে উঠল। ওটুম্বা আর সেখানে দাঁড়াল না। সুদীপ্তদের নিয়ে এগোল অন্য দিকে।

    প্রায় আধ ঘণ্টা গ্রামের ভিতর ঘুরে বেড়াবার পর আবার গ্রামের বাইরে বেরিয়ে এল সুদীপ্তরা। ওটুম্বাও তাদের সাথে বাইরে বেড়িয়ে এল। বেলা প্রায় দশটা বাজে। ম্যাকুইনা, হেরম্যানকে বললেন, এবার চারপাশের পাহাড়গুলোতে খোঁজ শুরু করা যাক। এদের শর্ত মতো আবার উত্তরের পাহাড়ে গোরিলা নিকেশ করার জন্য লোক পাঠাতে হবে। আমরা বরং মাসাইদের একটা অংশকে উত্তরের পাহাড়ে পাঠাই গোরিলা নিধনের জন্য। আর বাদবাকিদের নিয়ে নিজেরা যাই দক্ষিণে। তবে যারা গোরিলা মারতে যাবে, তাদের পথপ্রদর্শক হিসাবে স্থানীয় কোনো লোক দিতে বলা হোক ওটুম্বাকে।’ এরপর একটু থেমে তিনি বললেন, ‘আমরা যার খোঁজে এসেছি তার সম্বন্ধে ওটুম্বাকে একবার কৌশলে জিজ্ঞেস করবেন নাকি?’

    হেরম্যান, ম্যাকুইনার কথা শুনে টোগো ওটুম্বার সাথে কথা বলতে ইশারা করলেন। টোগো ওটুম্বাকে বলল, ‘শিকারিরা এখন যাবে দক্ষিণের পাহাড়ে শিকারের খোঁজে। তবে আমাদের সঙ্গের মাসাই রক্ষীদের পাঠানো হবে গোরিলা মারার জন্য। কিন্তু উত্তরের পাহাড়ে যেখানে ওই গোরিলার দলের দেখা মিলবে, সে জায়গা চিনিয়ে দেবার জন্য স্থানীয় কাউকে ওদের সাথে দিতে হবে।’ ওটুম্বা বলল, পাওয়া যাবে। আমি নিজে কয়েকজন নিয়ে সঙ্গে যাব।’

    টোগো এরপর তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা গোরিলা বা বানর জাতীয় আর কী কী প্রাণী আছে এ অঞ্চলে?’

    সে জবাব দিল, ‘শিম্পাঞ্জি আছে, লালরঙের বড় বানর আছে, কুকুরমুখো বানর আছে আর আছে ছোট হুপো বানর, যে বানর বলি দিই আমরা।

    টোগো তার উত্তর শুনে একটু কায়দা করে বলল, ‘লাল রঙের বানর আছে, নীল বা সবুজ রঙের কোনো বানর এখানে নেই? অথবা গোরিলার চেয়ে বড় কোনো প্রাণী?’

    প্রশ্ন শুনে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ওটুম্বা উত্তর দিল, ‘না, ওসব রঙের কোনো বানর বা গোরিলার চেয়ে বড় কোনো প্রাণী এখানে নেই। তবে জঙ্গলে কালো কেশরঅলা পাহাড়ি সিংহ আছে। চিতা আছে, তারাও কম ভয়ংকর নয়। এরপর সে সেই প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে সে বলল, উত্তরের পাহাড়ে যেতে হলে তাড়াতাড়ি রওনা হওয়া দরকার, গোরিলাঁদের আড্ডাটা বেশ কিছুটা দূরের পথ। এখন সেখানে রওনা না হলে, সন্ধ্যার আগে ফিরে আসা যাবে না।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিকল্পনা মতো দুটো দল রওনা হয়ে গেল দু-দিকে। আকালার নেতৃত্বে ম্যাকুইনার মাসাই রক্ষীদের সিংহভাগই গেল ওটুম্বার সাথে, আর অবশিষ্টরা চলল দক্ষিণ দিকের পাহাড়ে সুদীপ্তদের সাথে।

    ম্যাকুইনা চলতে চলতে বললেন, দুটো দলে বিভক্ত হয়ে ভালোই হল। আমাদের যেসব লোক উত্তরের পাহাড়ে ওটুম্বার সাথে গেল, তাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে বলেছি। গোরিলা নিধনের কাজ, আজ তারা সম্পূর্ণ করবে না। কালও তারা যাবে ওদিকে। গোরিলা নিধনের কাজে ওদের উত্তরে যাবার পিছনে আসল উদ্দেশ্য হবে ওই সবুজ দানব বানরের অনুসন্ধান করা। গ্রামের পুব দিকের পাহাড় থেকে আমরা নেমেছি। আসার পথে মোটামুটি তিন জায়গা দেখা হয়েছে। আমরা এখন যাচ্ছি দক্ষিণে। অর্থাৎ তিনটে দিক মোটামুটিভাবে খোঁজা হয়ে যাবে আমাদের। যতটা সম্ভব জঙ্গল তন্ন তন্ন করে ওই সবুজ বানরের সন্ধান করার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।’

    হেরম্যান বললেন, ‘হ্যাঁ, ওটুম্বাতো প্রাথমিক ভাবে ও জাতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব অস্বীকার করল। এ অঞ্চলের চারপাশ ভালো করে দেখতে হবে আমাদের।’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }