Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মেয়েদের ভয়

    উপন্যাস ছোটগল্প সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প16 Mins Read0

    মেয়েদের ভয়

    এই নিয়ে চার বার দেখা হল স্নিগ্ধার সঙ্গে ওর বিয়ের পর। প্রথম বার লছমনঝোলায়। দিল্লি থেকে দু-দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলুম হরিদ্বারে। লছমনঝোলায় ব্রিজ পেরিয়ে এসে এপারের সিঁড়ি দিয়ে নামছি, নীচে অনেক নারী-পুরুষ মাছগুলোকে ময়দা খাওয়াচ্ছে, সেখানে একটি মহিলার পিঠ দেখেই মনে হয়েছিল চেনা-চেনা। ব্রিজ দিয়ে হেঁটে আসার সময়ই, যখন নীচের মানুষগুলিকে বেশ ছোট-ছোট দেখায় তখনও ওদের মধ্যে একজনকে আমার চেনা মনে হয়েছিল। এখন পিঠ দেখে আর সন্দেহ রইল না।

    আট বছর ধরে স্নিগ্ধাকে আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছি, তার কোনও ভঙ্গিই আমার অপরিচিত নয় —সুতরাং পিঠ দেখেই বা চিনব না কেন। বিরাট-বিরাট মাছগুলো একেবারে হাতের কাছে এসে। লুটোপুটি করছে খাবার নেওয়ার জন্য। স্নিগ্ধা ময়দার গুলি ছুড়ে দিয়ে খিলখিল করে হাসছে। তার আশেপাশে আরও চার-পাঁচজন নারী-পুরুষ তাদেরই দলের।

    তখন আমারও প্রবল অভিমান। আমিই বা কেন স্নিগ্ধার সঙ্গে সেধে কথা বলতে যাব। আমি দাঁড়ালাম বেশ খানিকটা দূরে। আমিও ময়দার গুলি ছুড়ে মাছগুলোকে আমার দিকে টেনে আনবার চেষ্টা করলাম। আমি একবার আড়ি চোখে তাকিয়েছি, স্নিগ্ধাও তাকিয়েছে, চোখাচোখি হয়ে গেল, কিন্তু স্নিগ্ধা চিনতে পারার কোনও লক্ষণই দেখাল না। আমি যেন সম্পূর্ণ অপরিচিত। এলেবেলে লোক, আমাকে গ্রাহ্য করার কোনও দরকারই নেই। স্নিগ্ধার সঙ্গে চোখাচোখি হওয়া মুহূর্তে আমার বুক কেঁপে উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু প্রবল অভিমানভরে আমি মনে-মনে বলেছিলাম, পৃথিবীতে কত মেয়ে আছে স্নিগ্ধার মতন! ওরকম একটা মেয়ের জন্য বয়ে গেছে আমার ভাবতে!

    সেবার লছমনঝোলায় একদিন থাকব ঠিক করেছিলাম, কিন্তু পাছে স্নিগ্ধার সঙ্গে আবার দেখা হয়, তা ফিরতি বাসে চলে এলাম সেদিনই। এমনকী হরিদ্বারেও আর থাকলাম না।

    দ্বিতীয়বার দেখা একটা নেমন্তন্ন বাড়িতে, অফিসের বন্ধু রমেনের বিয়ের বউ ভাতে নেমন্তন্ন খেতে গেছি, সেখানে স্নিগ্ধার সঙ্গে দেখা হবে কল্পনাই করিনি। পরে শুনলাম, রমেনের বউ স্নিগ্ধার দূর সম্পর্কে ননদ হয়। তিনতলার ছাদে খাবার ব্যবস্থা সিঁড়ি দিয়ে উঠছি, ওপর থেকে সিল্কের শাড়ি সপসপ করে নামছে কয়েকজন মহিলা। আমরা রমেনের অফিসের বন্ধু, স্বভাবতই আজ একটু। ঠাট্টা ইয়ারকি করব, সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাকাব ছুড়ে দেব উড়ো মন্তব্য—এ অধিকার আমাদের আছেই। কে যেন একজন মন্তব্য করল, একি মেয়েরা সব চলে যাচ্ছে নাকি? খাওয়াদাওয়া সব শেষ? একজন মহিলা স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে বললেন, কেন, মেয়েদের চলে যাওয়ার সঙ্গে খাওয়াদাওয়া শেষ হওয়ার কী সম্পর্ক? আমরা চলে যাচ্ছি না, নীচ থেকে আসছি!

    একটি মেয়ের মুখ দেখতে পাইনি, দেখছিলাম ঘাড় ও পিঠের এক পাশ, উঁচু করে নতুন ডিজাইনের চুল বাঁধা, তবু চিনতে আমার অসুবিধে হয়নি স্নিগ্ধাকে। স্নিগ্ধা কি ইচ্ছে করে মুখ ফিরিয়ে আছে! আগেই দেখতে পেয়েছে আমাকে, চোখাচোখি হল না স্নিগ্ধা অন্য মহিলাদের সঙ্গে নীচে নেমে গেল।

    তখন স্নিগ্ধার বিয়ের পর সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। সেবার স্নিগ্ধাকে দেখে আগের মতো আর বুক কাঁপল না। তবে চমকে উঠেছিলাম, সেকথা স্বীকার করতেই হবে।

    মাংসের পর চাটনি পড়ছে যখন, তখন স্নিগ্ধাকে ছাদে দেখতে পেলাম আবার ব্যস্তভাবে কাকে যেন খুঁজছে। আমাকে! নাঃ! সামান্য অভিমানের সঙ্গে আমার মনে হল এ ওভাবে স্নিগ্ধা আর কখনও আমাকে খুঁজবে না। অথচ একদিন ছিল, এরকম কোনও বিয়ে বাড়িতে হঠাৎ দেখা হলে আমাকে ছাড়া আর কারুকেই খুঁজত না স্নিগ্ধা। রেবার বিয়ের সময় স্নিগ্ধা আর আমি শেষ রাত্রে। ছাদে বসে-বসে কত গল্প করেছি। অন্য মেয়েরা তখন বাসর ঘরের হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত, স্নিগ্ধা উঠে এসেছিল শুধু আমার জন্য।

    আমি চোখ দিয়ে স্নিগ্ধাকে অনুসরণ করতে লাগলাম। যদিও তৈরি হয়েই আছি। চোখে চোখ পড়লেই মুখ ফিরিয়ে যেত। স্নিগ্ধা ভেবেছে কী। ও অপমান করতে পারে, আমি পারি না?

    স্নিগ্ধা একজন পরিবেশনকারীকে জিগ্যেস করল, আচ্ছা, নতুন বউয়ের ছোট বোন ইরা কোথায় বসেছে জানেন!

    —হ্যাঁ, হ্যাঁ, দেখুন না ওই থার্ড সারিতে।

    আমাদের সামনের সারিতেই বসেছিল অনেকগুলো মেয়ে। স্নিগ্ধা চলে এল সেদিকে। হঠাৎ একবার চোখাচোখি হয়ে গেল, আমি কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিতে ভুলে গেলাম। স্নিগ্ধাও কিন্তু চোখ সরিয়ে নিল না। প্রায় আধমিনিট আমার দিকে চেয়ে রইল। ঠোঁটের কোণে কি সামান্য একটা হাসির রেখা দেখা দিয়েছিল, ঠিক বুঝতে পারলুম না অবশ্য। ঝুঁকে ইরা নামী মেয়েটির কানে-কানে কথা বলে যেই মুখ তুললে, আবার চোখ পড়ল আমার চোখে। এবার আমিই আস্তে-আস্তে চোখ নামিয়ে নিলাম। স্নিগ্ধা ভাবছে আমি ওর দিকে সর্বক্ষণ প্যাট-প্যাট করে তাকিয়ে আছি। ও ভাববে, হ্যাঁংলা পানা করছি আমি। কী দরকার আমার, স্নিগ্ধা কিন্তু ছাদ থেকে চলে যাওয়ার সময় আর-একবার তাকাল আমার দিকে এবারও বোধহয় আধ মিনিটখানেক চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রইল—হয় তো সে দৃষ্টির কোনও ভাষা ছিল, আমি বুঝতে পারিনি।

    বিয়ের আগে ছিপছিপে চেহারা ছিল স্নিগ্ধার। এখন একটু ভারীর দিকে স্বাস্থ্য হয়েছে। মোটা বলা যায় না কিছুতেই, বরং প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গড়ন নিটোল, সুন্দর মসৃণ মুখের চামড়া, বুক ও উরুর কাছে সুন্দর ভাঁজ পড়েছে। বিয়ে বাড়ির অত রূপসি মহিলার মধ্যেও স্নিগ্ধার দিকে চোখ। পড়ে। আমার একবার মনে হল, এই রূপসি স্নিগ্ধা অনায়াসেই আমার স্ত্রী হতে পারত, আমি যদি আর-একটু বেশি কঠিন হতে পারতাম সেই সময়ে।

    রমেন এল আমাদের খাওয়া-দাওয়ার তদারক করতে। আমার পাশে বসা অফিসের কলিগটি স্নিগ্ধার দিকে ইঙ্গিত করে রমেনকে জিগ্যেস করল, ওই মহিলাটি কে রে? তোর শালি নাকি!

    রমেন এক পলক ফিরে দেখে নিয়ে বলল, না শালি নয় তবে আমার বউয়ের কীরকম যেন আত্মীয় হয়, এখনও সবাইকে চিনে উঠতে পারিনি।

    কলিগটি বললে, দারুণ চেহারা মাইরি। আলাপ করিয়ে দেনা! রমেন মুচকি হেসে বললেন, হবে হবে, পরে হবে!

    —দেখিস, মাখা ঘুরে না যায়! শেষকালে নিজের বউকে ছেড়ে ওর দিকেই–

    —যা!

    আমার রাগ হল না। বরং একটু খুশিই হলাম। স্নিগ্ধাকে অন্যরাও সুন্দরী বলছে, এটাই আমার ভালো লাগল যদিও স্নিগ্ধা এখন আমার কেউ নয়!

    খাওয়ার পর অবশ্য স্নিগ্ধাকে আর দেখতে পেলাম না। আমি চোখ দিয়ে অনেক খুঁজলাম ও বাড়িতে আরও অনেক মেয়ে ছিল তাকিয়ে দেখার মতন, রমেনের ছোটবোনের কজন বান্ধবীই তো দারুণ সুন্দর, কিন্তু আর কারুর দিকে আমার চোখ বসল না। স্নিগ্ধাকে খুঁজে পেলাম না আর।

    এরপর তিন-চারদিন স্নিগ্ধার কথা খুব মনে পড়েছিল। অনেক দিন বাদে পুরোনোদুঃখটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু নিজে থেকে স্নিগ্ধার খোঁজ করব কিংবা দেখা করার চেষ্টা করব— অতটা দুর্বল হয়ে পড়িনি।

    তারপর আস্তে-আস্তে আবার স্নিগ্ধার কথা ভুলতে শুরু করলাম। স্মৃতি আঁকড়ে কেউ বসে থাকে না। বিশেষত কলকাতা শহরে মন খারাপ করে বেশিদিন থাকার উপায় নেই। অফিসের টেলিফোন অপারেটরের সঙ্গে এক রবিবার বিকেলে পার্ক স্ট্রিটে দেখা। মেয়েটি মোটেই গল্প উপন্যাসের টেবিলে টেলিফোন অপারেটরদের মতন চালু ধরনের মেয়ে নয়, বেশ শান্ত লাজুক মেয়েটি। আমি তাকে চা খাওয়াতে নিয়ে যেতে চাইলাম। সে রাজি হল। তারপর অনেকদিন তাকে নিয়েই মেতে থেকে স্নিগ্ধাকে ভুলে গেলাম।

    স্নিগ্ধার সঙ্গে তৃতীয়বার দেখা হল শীতকালে। মহাজাতি সদনে একটা মিউজিক কনফারেন্সে গিয়েছিলাম, সারা রাতের অনুষ্ঠান। স্নিগ্ধা অবশ্য আমার কাছাকাছি বসেছিল, আমরা তিন বন্ধুতে মিলে গিয়েছিলাম, পাঁচ টাকার টিকিটে। স্নিগ্ধা বসেছে একেবারে সামনের দিকে, হয় গেস্ট টিকিট, নয়তোদামি টিকিট। সুতরাং স্নিগ্ধাকে আমার দেখতে পাওয়ার কথা ছিল না।

    ভীমসেন যোশীর গানের পর আমার বন্ধু দুজন উঠে গেল বাইরে চা খেতে। আমি গেলাম না, ওদের বলে দিলাম আমার জন্য এককাপ চা নিয়ে আসতে। রাত প্রায় আড়াইটে বাজে, ভেবেছিলাম এই ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নেব। কিন্তু আমার ঘুমটুম সব ছুটে গেল, যখন দেখতে পেলাম মঞ্চের প্রায় সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক নারী। অস্পষ্ট আলোয় মুখ দেখা না গেলেও চিনতে এক মুহূর্ত দেরি হল না। স্নিগ্ধা একাই যাচ্ছে, সঙ্গে কেউ নেই, আমার দুর্দমনীয় ইচ্ছে হল উঠে গিয়ে স্নিগ্ধার মুখোমুখি দাঁড়াই। জিগ্যেস করি। স্নিগ্ধা, তুমি কেমন আছ।

    স্নিগ্ধা যখন আমার কাছে কথা না রেখে বিভাসকে বিয়ে করেছিল তখন যে সাংঘাতিক রাগ এবং অভিমান জমেছিল আমার বুকে তার অনেক খানিই মিলিয়ে গেছে। এখন মনে হয়, আহা, স্নিগ্ধা সুখী হোক! আমি স্নিগ্ধার যেন লক্ষ্য নই। আমাকে বিয়ে না করে স্নিগ্ধা ভালোই করেছে, আমি বাউণ্ডুলে লক্ষ্মীছাড়াই হয়ে গেলাম, আমার সঙ্গে বিয়ে হলে স্নিগ্ধা হয়তো জীবনে শান্তি পেত না। কিন্তু স্নিগ্ধার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা যায় না! এমনি একটু কথা বলব, হাসব একসঙ্গে, ওর স্বামীর সঙ্গে রসিকতা করব! আগে তো শুধু ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা স্নিগ্ধার সঙ্গে কথা বলেই দারুণ আনন্দ পেতাম।

    চেয়ার থেকে উঠেও পড়েছিলাম কিন্তু আবার বসে পড়লাম। স্নিগ্ধার যদি এখনও রাগ থেকে থাকে? যদি আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়? এক গাদা লোকের মধ্যে অপমান করে? বিয়ের ঠিক ঠাক হয়ে যাওয়ার পর স্নিগ্ধা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিল, সেদিন দারুণ অপমান। করেছিলাম ওকে। তখন আমার বুকে প্রচণ্ড অভিমান, কটু ভাষায় ওকে বলেছিলাম, এখন নাকে কান্না কাঁদতে এসেছ, লজ্জা করে না? সরে যাও আমার সামনে থেকে। তোমার আমি মুখ দেখতে চাইনা! তোমরা মেয়েরা সবাই এক, সবাই সমান স্বার্থপর! স্নিগ্ধা তখনও বলতে চেয়েছিল, না বরুণদা, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম! আমি এক ধমক দিয়ে বলেছিলাম চুপ করো!

    মেয়েদের ভালোবাসা কী জিনিস, তা আমার বোঝা হয়ে গেছে! শুধু স্বার্থ! যাও, ওই মুখ আর আমাকে দেখিও না!

    সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে সব কিছুই নরম হয়ে এসেছে। এখন এক ধরনের চাপা উদাসীনতা নিয়ে আমি দেখছি স্নিগ্ধাকে। কিন্তু স্নিগ্ধাও কি রাগ ভুলতে পেরেছে?

    আবার আলো নিবল, আবার অনুষ্ঠান শুরু হল। স্নিগ্ধাকে ভুলতে চেয়ে আমি মনোযোগ দিয়ে মুস্তাক আলির সেতার শুনতে লাগলাম। ঘুম আর এল না। আমার বন্ধু দুজন অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল হাত-পা ছড়িয়ে।

    সেতারের পর খেয়াল আর তারানা ধরল একজন নতুন গায়ক। কর্কশ গলা, শুনতে একটুও ভালো লাগে না অথচ ঘুম আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। চোখদুটো একেবারে খড়খড়ে। সিগারেট খাওয়ার জন্য আমি উঠে বাইরে এলাম। রাত প্রায় চারটে বাজে, হলের মধ্যে অনেকেই তখন ঘুমন্ত, বাইরেও বিশেষ লোকজন নেই। বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে, সিগারেট টানতে এখন বেশ ভালো লাগছে।

    —বরুণদা, কেমন আছ?

    আমি দারুণ চমকে উঠেছিলাম। একাগ্র হয়ে আমি ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকাতে-পাকাতে স্নিগ্ধার কথাই ভাবছিলাম, স্নিগ্ধা এখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, টেরই পাইনি। এতদিন বাদে বুকের মধ্যে আবার দুপদুপ করতে শুরু করল।

    আমি শুকনোভাবে মুখ ফিরিয়ে বললাম, ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?

    সারা মুখ উজ্জ্বল করে হেসে ফেলল স্নিগ্ধা। বলল, খুব ভয় করছিল, আপনি আমাকে চিনতে পারবেন কি না? কিংবা হয়তো অপমান করবেন।

    আমিও হাসলাম। হেসে বললাম, চার বছর কেটে গেছে। চার বছরে অনেক কিছু বদলে যায়।

    বিয়েবাড়িতে যেমন দেখেছিলাম স্নিগ্ধার চেহারা তেমন সুন্দর নেই আর। আবার একটু রোগা হয়েছে। মুখে সামান্য ম্লান ছায়া। সেটা গোপন করার জন্যই স্নিগ্ধা আবার হাসল। বলল, চার বছরেও তুমি কিন্তু সেইরকম একই আছ সেইরকম ছেলেমানুষ!

    আমি বললাম, ছেলেমানুষ? আমার স্কুলপির কাছে দুটো চুল পেকে গেছে।

    —ওতে কিছু হয় না। তুমি এখনও বিয়ে করোনি কেন?

    —কী করে জানলে বিয়ে করিনি।

    —আমি সব জানি। লছমনঝোলায় আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলে কেন?

    —তুমিই তো আমাকে দেখে চিনতেই পারলে না!

    —মোটেই না! আমি বরং তোমার কাণ্ড দেখে হাসছিলাম।

    —স্নিগ্ধা, চলো একটু রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসি!

    –ইস! এখন বেড়াতে যাব কী করে? আমার বাড়ির লোকজনরা কী ভাববে?

    —তোমার স্বামী এসেছেন?

    —না, ও আসেনি।

    এরপর আমি যে কথাটি বললুম, সেরকম কথা যে আমি বলতে পারি, তা এক মুহূর্ত আগেও ভাবিনি। আমি কিছুটা আবেগপ্লুত গলায় বললাম, স্নিগ্ধা, আমি তোমাকে ছাড়া আর কারুকে ভালোবাসতে পারব না! তোমার জন্যই আমার বুকটা শূন্য হয়ে আছে!

    স্নিগ্ধা দু-তিন মুহূর্ত স্থিরভাবে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। তারপর একটা অন্যমনস্ক ধরনের বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, ছিঃ বরুণদা, ওরকম করে না! এখন এসব কথা বলে লাভ কী? শোনো, আমি চাই, তুমি সুন্দর দেখতে একটি মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হও! দেখো, বিয়ে হলেই তুমি আমার কথা ভুলে যাবে!

    —তুমি বুঝি বিয়ে করে আমাকে ভুলে গেছ?

    —হ্যাঁ গেছিই তো! আমি এখন লক্ষী বউ, আমার শাশুড়ি আমায় কত প্রশংসা করেন!

    —স্নিগ্ধা, তোমার ছেলেমেয়ে হয়নি।

    —না, ওসব ঝঞ্চাট এখনই পোহাতে চাই না!

    স্নিগ্ধা আমার কত কাছে দাঁড়িয়ে আছে, ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করি। কতদিন স্নিগ্ধার দুই স্তনের সামনে মুখ রাখিনি। সত্যিই তো, এতদিন রাগ আর অভিমানের বশে খেয়াল করিনি, স্নিগ্ধা ছাড়া অন্য কোনও মেয়েকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

    আমি বললাম, স্নিগ্ধা আজ না হোক, অন্য কোনওদিন আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে? আমি তোমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করতে চাই। আসবে?

    —না।

    কেন?

    –বরুণদা, পাগলামি করো না! ওসব হয় না। আমাদের দুজনের জীবন আলাদা হয়ে গেছে, এখন দেখা করলেই শুধু দুঃখই বাড়বে।

    —শুধু দেখা করাতেও দোষ? তোমার স্বামী খুব গোঁড়া বুঝি!

    —না, উনি কিছু বলবেন না। কিন্তু আমি নিজেই আর চাই না। তোমার আগে বিয়ে হোক, তারপর তুমি তোমার বউকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এস। হলের মধ্যে কিছু লোক হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে চড়চড় করে হাততালি দিতে লাগল। বুঝলাম, সেই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে এবং আবার কিছু লোক বাইরে আসবে। স্নিগ্ধা বলল, আমি এবার যাই!

    —স্নিগ্ধা, সত্যিই আর দেখা হবে না?

    –না!

    কিন্তু আমি তখনই জানতাম, আবার দেখা হবে। স্নিগ্ধাকে আমার বিষম দরকার। স্নিগ্ধার জন্য দুঃখ পেয়ে আমি সাধু-সন্ন্যাসী হয়ে যাইনি, অন্য আর পাঁচজন মানুষের মতন আমারও ইচ্ছে করে মেয়েদের সঙ্গে মিশতে, নিরালায় কোনও মেয়ের মুখোমুখি বসতে। শরীরের মধ্যেও তুফান। ওঠে। ইচ্ছে করে কোনও মেয়ের শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে। কিন্তু যে-কোনও মেয়ের সঙ্গে মিশতে গেলেই কিছুদিন বাদে স্নিগ্ধার কথা মনে পড়ে। অন্য কোনও মেয়ের হাত ছুঁয়েও মনে হয়, স্নিগ্ধাকে ছুঁয়ে আমি এর চেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম।

    এইজন্য কারুকে বিয়ে করতে ভরসা পাইনি। বিয়ে করে মানুষ এক ধরনের শান্তি পাবার জন্য কিন্তু যাকে বিয়ে করব, তাকে ছুঁয়েও যদি স্নিগ্ধার কথা মনে পড়ে, তবে তার চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই। সেইসব দম্পতিরাই অভিশপ্ত। যারা পাশাপাশি শুয়ে অন্য কারুর কথা ভাবে।

    স্নিগ্ধার সঙ্গে চতুর্থবার আমার দেখা হল দিল্লিতে। দু-বছর বাদে। আমাকে দিল্লি আসতে হয়েছে অফিসের কাজে। দিনসাতেক থাকতে হবে। মধ্যে একদিন সরস্বতী পূজা। সরস্বতী পুজোর দিন অঞ্জলি দেওয়ার অভ্যেস আমার ছেলেবেলা থেকে। বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচে গেছে বহুদিন।

    অফিসের ফাইল আর লয়ের কাগজ ছাড়া আর কিছুই পড়ি না। তবু ছেলেবেলার ওই অভ্যেসটা রয়ে গেছে। এখনও অঞ্জলি দেওয়ার আগে চা-ও খাই না।

    আজমীর গেটের কাছে বাঙালিদের একটা পূজা মন্ডপে হাজির হলাম সকাল-সকাল। তখনও পুজো আরম্ভ হয়নি। রীতিমতো ভিড় সেখানে।

    এবার আমি স্নিগ্ধাকে প্রথম দেখতে পাইনি, স্নিগ্ধাই আমাকে খুঁজে বার করল। রীতিমতন খুশি মুখে বলল, তুমি তুমি এখানে। আমিও অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম, সে প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি! তোমরা এখানে বেড়াতে এসেছ বুঝি।

    —না, আমরা তো এখন দিল্লিতেই থাকি।

    —বিভাস বুঝি এখানে পোস্টেড?

    দেখা গেল, স্নিগ্ধা এখানে খুব জনপ্রিয়। অনেক ছেলেমেয়ে এসেছে কেউ স্নিগ্ধাদি, কেউ বউদি বলে ডেকে কথা বলছে ওর সঙ্গে। স্নিগ্ধা আমাকে বলল, আমাকে না বলে চলে যেও না! তারপর ওদের সঙ্গে কথা বলতে লাগল।

    আট বছর আগে স্নিগ্ধা আর আমি আমাদের ভবানীপুর পাড়ার পুজোতে পাশাপাশিদাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিয়েছিলাম। আজ আবার তার পুনরাবৃত্তি হল। স্নিগ্ধা আমার পাশে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল, মনে আছে?

    সেই যেবার তুমি এম এ পরীক্ষা দিলে?

    আমি বললাম, আমার সব মনে আছে! কিছু ভুলিনি!

    সত্যি সব মনে আছে। শুধু রাগ আর অভিমান নিঃশেষ হয়ে গেছে! এখন স্নিগ্ধা আর আমি কথা বলছি আগেকার আন্তরিকতায়।

    অঞ্জলি দেওয়া হয়ে যাওয়ার পর স্নিগ্ধা আমাকে জিগ্যেস করল, তুমি নিশ্চয়ই এখনও চা-ও খাওনি?

    –কী করে জানলে।

    বাঃ, আমার বুঝি সব মনে থাকে না! তুমি তো কোনওদিনই অঞ্জলি দেওয়ার আগে কিছু খেতে না। এসো, আমার বাড়ি কাছেই, চা খাবে চলো!

    বড় রাস্তার ওপারেই দোতলায় ফ্ল্যাট স্নিগ্ধাদের। বেশ সুন্দর। রাজস্থানী ঝি-কে চা বানাতে বলে স্নিগ্ধা খাবারের প্লেট নিয়ে বসল আমার সামনে। আমি জিগ্যেস করলাম, বিভাস কোথায়?

    মুচকি হেসে স্নিগ্ধা বলল, ও তো ট্যুরে গেছে আগ্রায়! তা না হলে কি তোমাকে এত সহজে ডেকে আনতে পারি?

    —কেন, বিভাস বুঝি খুব হিংসুটে?

    —তা নয়। কিন্তু তাহলে তোমরা দুজনেই গল্প করতে! আমার আর কথা বলা হত না!

    এইদু-বছরে খানিকটা আবার বদলেছে স্নিগ্ধা। এবার তার স্বাস্থ্য বড় বেশি ভালো, এখন সাবধান

    হলে, এরপরে মোটা হয়ে পড়বে। খুশিতে ঝলমল করছে। আমাকে দেখে যেন সত্যিই খুব আনন্দিত হয়েছে স্নিগ্ধা। বিয়ের পর দু-বছর কেটে গেছে, সেই কঠিন দাম্পত্য নিষ্ঠা ওর আজ নেই মনে হল। স্নিগ্ধার তো উচিত আমাকে ভয় পাওয়া।

    আমি শান্ত হয়ে বসে আছি, কিন্তু উত্তেজনায় আমার বুক কাঁপছে। আমি বোধহয় নিজেকে সামলাতে পারব না। এত কাছাকাছি, নির্জন ঘরে বসে আছে স্নিগ্ধা, যার জন্য আমি

    স্নিগ্ধা জিগ্যেস করল, কোথায় উঠেছ!

    —ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে।

    -ওরে বাবা, খুব বড়লোক হয়েছ তো!

    —মোটেই না। অফিস থেকে বিল দিচ্ছে।

    —আমার এখানে একটা ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। ও যদি থাকত, তুমি তাহলে আমার এখানে এসেও থাকতে পারতে।

    —বিভাস না থাকলে বুঝি থাকতে পারি না?

    স্নিগ্ধা রেগে গেল না। রহস্যময়ভাবে আমার দিকে চেয়ে দেখল। বলল, তুমি এখনও বিয়ে করোনি?

    —না।

    -কেন?

    —কী জানি, জানি না। হয়ে ওঠেনি!

    —আহা-হা! বলল, তোমার জন্য মেয়ে দেখব? দিল্লিতে অনেক ভালো-ভালো মেয়ে আছে।

    —ঠিক তোমার মতন একজন মেয়ের খোঁজ দিতে পারবে?

    —আমার মতন? আমি তো বুড়ি হয়ে গেছি। একত্রিশ বছর বয়েস হয়ে গেল!

    —আমিও তো বুড়ো তাহলে, আমার চৌত্রিশ বছর।

    —মোটেই তোমার চৌত্রিশ না, তেত্রিশ। তুমি আমার থেকে দু-বছরের বড় ছিলে—

    —বিভাস বুঝি মাঝে-মাঝেই এরকম ট্যুরে যায়।

    –হ্যাঁ।

    —তখন তুমি একা থাকো? তোমার ভয় করে না!

    –ভয় আবার কী? দিল্লিতে থেকে ভয় নেই, তা ছাড়া ঝি থাকে।

    চায়ের কাপটা রাখতে গেছি; স্নিগ্ধা নিজেই সেটা নিতে এল। আঙুলে-আঙুলে ছোঁয়া লাগল। ঠিক দু-বছর সাড়ে চার মাস বাদে স্নিগ্ধার শরীর স্পর্শ করলাম আমি। এখন আর আগেকার মতন অনুভূতি অত তীব্র থাকার কথা নয়। তবু শরীরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল।

    কিন্তু নিজেকে সামলে রইলাম। চৌত্রিশ বছর বয়েস হয়ে গেছে, দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করি। এখন অসমীচীন কিছু করা উচিত নয় আমার পক্ষে। আমরা সভ্য মানুষ। যখন-তখন দাঁত-চোখ। বার করে হিংস্র হয়ে ওঠা উচিত নয় আমাদের পক্ষে। স্বামীর অসাক্ষাতে স্ত্রীর সঙ্গে বসে চা খাওয়া যায়—কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে–

    আমি হঠাৎ দাঁড়িয়ে বললাম, চলি!

    স্নিগ্ধা বেশ অবাক হয়ে জিগ্যেস করল, এক্ষুণি যাবে? কেন?

    হ্যাঁ, যাই স্নিগ্ধা!

    —না বসো! কতদিন বাদে দেখা। অনেক গল্প করব তোমার সঙ্গে। দুপুরে এখানেই খেয়ে যাবে তুমি?

    —না, স্নিগ্ধা উপায় নেই। অফিসের জরুরি কাজ আছে!

    প্রায় জোর করেই বেরিয়ে পড়লাম স্নিগ্ধার বাড়ি থেকে। আর বেশিক্ষণ থাকলে আমি নিজেকে সামলাতে পারতুম না! নিজের হাত থেকেই আমাকে বাঁচাতে হবে।

    হোটেলে ফিরে গেলাম না। অফিসের কাজ এমন কিছু জরুরি ছিল না, তবুও সেই কাজ সারতেই গেলাম। ইচ্ছে করে বেশিক্ষণ কথা বলতে লাগলাম—আমার এখন একা থাকা উচিত নয়।

    সারা দিল্লি শহর চষে ফেলেও তিনটের বেশি সময় কাটাতে পারলাম না। আমার আর কোনও উপায় নেই। আমি আবার গেলাম স্নিগ্ধার ফ্ল্যাটে।

    দরজা খুলল স্নিগ্ধাই। একটা চওড়া লাল পাড়ের শাড়ি পরে আছে। খোলা চুল পিঠের ওপর ছড়ানো। নিঃশব্দে হেসে স্নিগ্ধা বলল, আমি জানতাম, তুমি আবার ফিরে আসবে!

    আমি কোনও কথা না বলে ঘরে ঢুকেই স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর ফিসফিস করে আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, আমি আর পারছি না। আমি আর পারছি না! আমি কবছর কোনওক্রমে নিজেকে সামলে ছিলাম, কিন্তু

    স্নিগ্ধা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল না। নিশ্চিন্তভাবে আমার বুকে মাথা রেখে বলল, বরুণদা, তুমি আমার কী ক্ষতি করেছ জানো না!

    —তোমার ক্ষতি করেছি?

    —নিশ্চয়ই। আমি দু-বছর ধরে তোমাকে ভুলতে চেয়েছি। চেয়েছি স্বামীর সংসারকে সুখী করতে। কিন্তু যখনই একা থাকি শুধু তোমার কথা মনে পড়ে! কেন? কেন? তুমি কি আমাকে অভিশাপ দিয়েছ?

    —স্নিগ্ধা, জীবনের প্রথম ভালোবাসাটাই বোধহয় এরকম অভিশাপ!

    —বিয়ে করার পর সত্যিকারের আনন্দ আমি একদিনও পাইনি। মনে হয়, আমার চরম আনন্দ তোমার কাছে জমা আছে। তুমি চুম্বকের মতন আমাকে টেনে রেখেছ–

    চুমুতে চুমুতে আচ্ছন্ন করে দিতে লাগলাম স্নিগ্ধাকে। এতদিন বাদে শরীরের সমস্ত অবসাদ কেটে গেছে!

    স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে আমি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এলাম। ফেলে দিলাম জানলার পরদা। আবার ফিরে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ব্লাউজের বোতামে হাত দিলাম।

    স্নিগ্ধা বলল, বরুণদা আমার ভয় করছে!

    আমি বললাম, স্নিগ্ধা, আমরা দুজনেই দুজনকে চাই। তুমি একটু আগে যা বললে, আমারও অবস্থা তাই। আমি অন্য কোনও মেয়েকে স্পর্শ করে আনন্দ পাইনা মনে হয় আমার সব আনন্দ। তোমার কাছে জমা আছে। আমরা দুজনে যদি পরস্পরকে আজ গ্রহণ করি সেটা কি খুব অন্যায় হবে?

    —আমি ন্যায়-অন্যায় বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমার ভয় করছে!

    —কেন?

    -জানি না।

    ব্লাউজ ও ব্রা খুলে ফেলে দেখতে পেলাম স্নিগ্ধার পদ্মফুলের মতন দুটি স্তন। তারপর স্নিগ্ধার চোখে চোখ রেখে আমি ওর শায়ার দড়িতে হাত দিলাম। আমার হাত কাঁপছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। স্নিগ্ধা বাধা দিল না। ফিসফিস করে বলল। আমার ভয় করছে!

    —কেউ এসে পড়বে?

    —বিভাস কবে আসবে!

    —ওসব ভয় নয়। অন্য ভয়!

    —আমার কাছে তোমার কোনও ভয় নেই!

    হঠাৎ ঝট করে স্নিগ্ধা আমার হাত সরিয়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল। তীব্র গলায় বলল, না-না, আমি কি সাংঘাতিক ভুল করতে যাচ্ছিলাম!

    —স্নিগ্ধা এটা কি অন্যায়? এটা ভুল?

    —আমি ন্যায়-অন্যায়ের কথা নিয়ে একটুও মাথা ঘামাচ্ছি না! আমি আমার জীবনের শেষ সম্বল হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছিলাম।

    আমি বুঝতে না পেরে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রইলাম। স্নিগ্ধা আঁচল দিয়ে শরীর ঢাকতে-ঢাকতে বলল, তুমি বুঝতে পারলে না! আমার যখন মন খারাপ হত, যখনই অতৃপ্ত থেকেছি, তখনই। আমার মনে হয়েছে, বরুণদার কাছে জমা আছে আমার সব আনন্দ! বরুণদা কাছে এলে বরুণদা যদি আমায় আদর করে তা হলেই আমি স্বর্গসুখ পাব। কিন্তু যদি সত্যি তা না হয়? যদি সত্যি সেরকম আনন্দ না পাই? তাহলে আমার কল্পনা করে আনন্দ পাওয়ারও কিছু থাকবে না!

    আমি হাত বাড়িয়ে বললাম স্নিগ্ধা অত ভেবে কিছু করা যায় না! আমার বুক জ্বলছে এসো—

    —না আমি আমার কল্পনার আনন্দটুকুও হারাতে পারব না। বরুণদা তোমার পায়ে পড়ি, তুমি যাও!

    স্নিগ্ধা আমার কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে দাঁড়াল।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমৃত্যুদণ্ড
    Next Article মোমচোর

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী ছোটগল্প

    আসল বেনারসী ল্যাংড়া

    April 5, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }