Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভাগীরথী অমনিবাস – নীহাররঞ্জন গুপ্ত (অসম্পূর্ণ)

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প284 Mins Read0

    মধুমতী থেকে ভাগীরথী – ১৯

    ॥ উনিশ ।।

    স্ত্রী অন্নপূর্ণার কথাটা যে পুরোপুরি অভিমানেরই একটা উক্তি, সেটা বুঝতে রাধারমণের কষ্ট হবার কথা নয়।

    স্ত্রী অন্নপূর্ণার গলার স্বর, তার কথা বলবার ভঙ্গীটি—সব কিছুর ভিতরেই যেন একটা অভিমান ও সেই সঙ্গে একটা নিরুদ্ধ বেদনা জড়ানো রয়েছে সেটা বুঝতে পেরে ও কিন্তু রাধারমণ স্ত্রীর কথাটার কোন জবাব দিতে পারলেন না।

    কিছুতেই যেন স্ত্রীর কাছে সহজ হতে পারলেন না। অন্নপূর্ণাও আর কোন প্ৰশ্ন না করে ঘর হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেল।

    স্ত্রী অন্নপূর্ণাকে রাধারমণ ভাল ভাবেই চেনেন। এতটুকু একটি বালিকাকে অনেক বছর আগে এ সংসারে এনেছিলেন তিনি গাঁটছড়া বেঁধে। রাধারমণের নিজের বয়সও তখন ষোল কি সতেরো। নয় বৎসরের বলিকাটি তাঁরই চোখের সামনে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছে। কিশোর বয়স থেকে যৌবন—তারপরও আরো অনেকগুলো বছর কখন যেন কোথা দিয়ে পার হয়ে গিয়েছে আর অন্নপূর্ণা তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশিয়ে দিয়েছে নিজেকে। এবং সেই নিজেকে তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে ও নিজের একটি আসনও যে তাঁর সংসারের মধ্যে সবার অলক্ষ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে, সেটাই কোন দিন জানতে পারেননি রাধারমণ।

    রাধারমণের চোখে পড়েছে চিরদিনই কেবল মৌন, শান্তধীর, সেবাপরায়ণা এক নারী, কিন্তু চোখে পড়েনি সেই নারীর শান্তকঠিন আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব যা তাকে ওই সংসারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। সেটাই তার চোখে পড়েনি এতদিন। কিন্তু আজ তার নিঃশব্দ প্রস্থানের মধ্য দিয়ে সহসা যেন রাধারমণের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠলো, এত কাল যে অন্নপূর্ণাকে তিনি চিনে এসেছেন এ সে নারী নয়, সম্পূর্ণ অন্য এক নারী।

    রাধারমণ কেমন যেন অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন।

    এবং রাধারমণ বুঝতে পারলেন, তাঁর এই অস্বস্তির মূলে রয়েছে আর এক নারীর প্রতি তাঁর সদ্যজাগা অনুভূতি।

    মাত্র চার-পাঁচটি দিন জলদবালার ওখানে গিয়েছেন রাধারমণ, কয়েক ঘণ্টা সময় মাত্র, কিন্তু তারই মধ্যে ওই স্ত্রীলোকটির প্রতি একটা তীব্র আকর্ষণ যেন তাঁর সমস্ত মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। জলদবালা সুন্দরী নিঃসন্দেহে। তবে কি তার রূপ আর যৌবনই তাঁর মনকে এত তীব্রভাবে আকর্ষণ করেছে! এবং অহরহ তাঁকে সেই দিকে টানছে! কিছুতেই যেন রাধারমণ নিজের মনকে সংযত করতে পারছেন না।

    কিন্তু এ অন্যায়—তিনি সংসারী মানুষ—তাঁর স্ত্রী ও কন্যা আছে। বিরাট মল্লিক- পরিবারের প্রতি তাঁর একটা কর্তব্য আছে, একটা দায়িত্ব আছে—তাছাড়া তাঁর বয়েসও হয়েছে, ছেলেমানুষ নন, এই ধরনের চিত্তবৈকল্য তাঁর শোভা পায় না।

    রাধারমণ তাঁর মনকে দৃঢ় করবার চেষ্টা করতে লাগলেন।

    প্রত্যহ সকালে গদিতে যান, আজ আর গেলেন না। দ্বিপ্রহরে আহারাদির পর অন্নপূর্ণা যখন পানের ডিবাটা এনে সামনে ধরল—সেই ডিবা থেকে দুখিলি পান মুখে তুলে বললেন, তোমার সংসারের কাজ শেষ হল?

    আজ একাদশী, ঠাকরুন এখনো কিছু মুখে দেননি—অন্নপূর্ণা বললে।

    আজ একাদশী কথাটা কানে যেতেই আর একখানি কচি উপবাসক্লিষ্ট বিশীর্ণ মুখ যেন রাধারমণের চোখের পাতায় ভেসে উঠলো।

    তাঁর বিধবা কন্যা সুহাসিনী।

    ইদানীং কন্যা সুহাসিনীর কথাটা যেন একটু বেশী করেই ভাবছিলেন রাধারমণ।

    আজ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে—যার ফলে কয়েক বছর আগেও যা সমাজ ভাবতে পারত না—ভাবতে সাহস পেত না, আজ সমাজ তা ভাবতে শুরু করেছে। প্রথমটায় রাধারমণ মল্লিকেরও মনে হয়েছিল এ অন্যায়, এ গর্হিত, কিন্তু আজ রাধারমণ তা ভাবেন না।

    পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বালবিধবার বিবাহ দেওয়ার মধ্যে কোন পাপ নেই—বরং পুণ্যই আছে।

    বাংলাদেশে উনিশ শতকের প্রথম দিক থেকেই সমাজের সমষ্টিরূপের অনেক পরিবর্তন শুরু হয়েছিল, এবং যার মূলে ছিল রাজা রামমোহন রায়ের আত্মীয় সভা, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্ববোধিনী সভা, ব্রাহ্মসমাজের পত্তন এবং যার ফলে এক নূতন সামাজিক গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। ডিরোজিও ও তাঁর ছাত্রগোষ্ঠী ইয়ং বেঙ্গলের নতুন চিন্তাধারার অবদান—এক নতুন জীবনদর্শন ও সংস্কার-আকাঙ্ক্ষা সমাজের মধ্যে বিস্তারলাভ করেছিল। বিদ্যাসাগর পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ ভাবে ওই সব সমাজগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তিনি তাঁর জীবনের সর্বপ্রথম সৎকর্ম বিধবাবিবাহ প্রবর্তনের অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন।

    তিনি বুঝেছিলেন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও কৌলীন্য প্রথার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল সমাজে বহু নারীর ভাগ্যে অকালবৈধব্য।

    সমাজে যাঁরা প্রতিষ্ঠাবান, প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁদের সামনেও মধ্যে মধ্যে বাল্য- বৈধব্যের সমস্যা দেখা দিত—তখন তাঁরা প্রচলিত শাস্ত্রের সাহায্যে সংকট থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করতেন মাত্র, কিন্তু কোন সত্যিকারের পথই খুঁজে পেতেন না। রাজা রাজবল্লভের বিধবা-বিবাহ প্রচলনের চেষ্টাও বোধ হয় অনুরূপ কোন ঘটনা

    রাজবল্লভ বিদ্যাসাগরমশাই-এর বিধবা বিবাহ প্রচলনের চেষ্টার প্রায় একশত বৎসর আগে বালবিধবা কন্যার পুনর্বিবাহ প্রচলন করতে চেয়েছিলেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের চক্রান্তে তা ব্যর্থ হয়েছিল।

    পরবর্তীকালে রাজা রামমোহনের আত্মীয় সভার বৈঠকে যে সামাজিক প্রথার সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা হত তার মধ্যে বালরিবাহ ও বাল্যবৈধব্য ছিল অন্যতম।

    ১৮১৫ সালে আত্মীয় সভার এক বৈঠকের বিবরণে দেখা যায়—সেখানে লেখা আছে :

    The necessity of an infant widow passing his life in a state of celi- bacy, the practice of polygamy and of suffering widows to burn with the corpse of their husbands, was condemned.

    আরো একটা ব্যাপার বরাবরই ছিল—হিন্দু সমাজের নিম্নবর্ণের লোকদের মধ্যে বিধবাদের পুনর্বিবাহ, অথচ উচ্চবর্ণের হিন্দুরা শাস্ত্রের দোহাই পেড়ে পুনর্বিবাহকে একেবারে বর্জন করে রেখেছিল।

    শাসকগোষ্ঠী ইংরাজরাও তাদের নীতির দিক দিয়ে বিধবা-বিবাহ সমর্থন করেনি প্রথমটায়—কারণ তাদের শাসননীতির প্রধান লক্ষ্যই ছিল ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা। তা সত্ত্বেও কিন্তু শাসকগোষ্ঠী বরাবরই বিধবা-বিবাহ সমস্যার গুরুত্বকে স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয়নি।

    তারপর ক্রমশ যখন বাল্যবিধবাদের পুনর্বিবাহের দাবি সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর আলাপ-আলোচনায় মুখর হয়ে উঠতে লাগল, তখন ১৮৩৭-৩৮-এর ‘ল কমিশন’ ওই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে।

    ১৮৪২ -এর এপ্রিল মাসে ‘বেঙ্গল স্পেক্টেটর’ লিখল, ‘এক্ষণে হিন্দু জাতির বিধবার বিবাহ পুনঃস্থাপনে অন্য কোন শাস্ত্রীয় প্রতিবন্ধক দৃষ্ট হইতেছে না।

    পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিধবা-বিবাহের সমর্থনে বই লিখে ফেললেন।

    বলতে গেলে বিধবা-বিবাহ আন্দোলনে রাধারমণের সক্রিয় সহানুভূতি একদিন না থাকলেও এক সময় তাঁরও মনে হয়েছিল ব্যাপারটার মধ্যে অন্যায় গর্হিত বা অশাস্ত্রীয় বোধ হয় কিছু নেই। তবু দেশাচার লোকাচার এতকাল ধরে যা সমাজের মধ্যে একটা অলঙ্ঘ্য নির্দেশের মত চলে এসেছে, জোর গলায় তাকেও যেন অস্বীকার করতে পারছিলেন না। তখনকার দিনের ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর না হলেও, হিন্দু কলেজে কিছুকাল লেখাপড়া করায় তাঁর মনটা অনেকখানি সংস্কারমুক্ত হতে পেরেছিল, কাজেই যেদিন অকস্মাৎ নিজের একমাত্র কন্যা সুহাসিনী সর্বস্ব খুইয়ে সিঁথির সিন্দুর ও হাতের লোহা বিসর্জন দিয়ে রিক্ত বেশে তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল একটা প্রচণ্ড আঘাতে যেন তাঁর বুকটা ভেঙে গিয়েছিল।

    নিরুপায় বেদনায় যখন তিনি একপ্রকার দিশেহারা, হঠাৎ তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর এই বালবিধবা কন্যার যদি আবার বিবাহ দেন তাহলে তো অনায়সেই এই জীবনব্যাপী দুঃখের অবসান হতে পারে।

    আর তাতে অন্যায় বা পাপই বা কি!

    সমাজে বালবিধবার বিবাহ না হওয়া সত্যিই অন্যায় ও হৃদয়হীনতার পরিচয়। বিদ্যাসাগরমশাই ঠিক কথাই বলেন আর নানা শাস্ত্র ঘেঁটে এও তো তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন বালবিধবার পুনরায় বিবাহ দেওয়ার মধ্যে কোন অন্যায় বা অশাস্ত্রীয় ব্যাপার কিছু নেই। শুধু এই হতভাগ্য বাংলাদেশেই এই নিষ্ঠুর ব্যবস্থা, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে অন্য কোন জাতির মধ্যে এই প্রথা নেই।

    কিন্তু যতই মনকে বোঝান রাধারমণ, বিধবা কন্যা সুহাসিনীর বিবাহ দেবার কথা প্রকাশ্যে বলতে পারেন না।

    বিশেষ করে জননীর জন্য।

    জননী ভবতারিণী আজও বেঁচে আছেন, কখনোই তিনি এটা সমর্থন করবেন না।

    কিন্তু প্রকাশ্যে না বলতে পারলেও একদিন স্ত্রী অন্নপূর্ণার কাছে তিনি কথাটা তুলেছিলেন।—দেখো বড় বউ, আমি ক’দিন থেকেই একটা কথা ভাবছি-

    কি ভাবছো গো! অন্নপূর্ণা শুধান

    ভাবছি সুহাসের কথা—

    আর ভেবে কি করবে, ওই হতভাগীর যেমন দুর্ভাগ্য।

    সারাটা জীবন এখন সামনে পড়ে—

    তা আর কি করা যাবে!

    ও-কথা বলো না বড় বউ, অনেক কিছুই করা যায়-

    ওর আবার বিবাহ-

    কি—কি বললে?

    বলছিলাম ওর আবার বিবাহ দেবো।

    ছি ছি ছি, এ কথা ভাবতে পারলে তুমি? ও যে মহাপাপ!

    কোন পাপ নয়, বিদ্যাসাগরমশাই বলেছেন কোন পাপ নয়, বরং পুণ্যই—

    দেখো তোমার ওই বিদ্যাসাগরের মাথা খারাপ হয়েছে!

    জেনো অমন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি ইহসংসারে খুব কমই আছে—

    দেখো ওই সব কুচিন্তা মনেও স্থান দিও না।

    মেয়েটার কথা একবার ভাববে না?

    এদেশে অমন হাজার হাজার বালবিধবা মেয়ে আছে, শুধু তো তোমার আমার একার নয়!

    অন্নপূর্ণা একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তার স্বামীকে।

    স্বামীর হাতে পানের ডিবেটা দিয়ে অন্নপূর্ণা বললে, শরীর খারাপ নাকি, আজ গদিতে গেলে না?

    না, ভালই আছি।

    দেখো একটা কথা বলছিলাম

    কি কথা? প্রশ্নটা করে স্ত্রী অন্নপূর্ণার মুখের দিকে তাকালেন রাধারমণ।

    সুহাসকে নিয়ে বড় চিন্তায় পড়েছি!

    কেন? কি হল?

    যত বয়স বাড়ছে ওর যেন বুদ্ধিসুদ্ধিও লোপ পাচ্ছে। হুটহাট করে বাইরে যায়—বাইরের ছেলেদের সঙ্গে মেশে।

    বাইরের ছেলে আবার কে? আনন্দচন্দ্র?

    কেন, সে ছাড়া কি আর কেউ নেই? সে অত্যন্ত ভাল ছেলে-

    তা সে ছাড়া আর —

    আমি বলছি বামুন মেয়ের ওই বখাটে ছেলেটার কথা—ভোলানাথ।

    ভোলানাথ?

    হ্যাঁ, ওকে আমার এতটুকুও বিশ্বাস নেই—

    দেখো বড় বউ, এ যে হবে তা আমি জানতাম। বয়েসের ধর্ম—তাই সেদিন আমি বলেছিলাম।—

    কি বলেছিলে?

    ওর আবার বিবাহ দেবো। দেখো আবার বিবাহ দিলে কোন দুশ্চিন্তাই আর আমাদের থাকবে না।

    এক বাটি বিষ এনে দাও—বিষ খেয়ে আমি মরি, তখন তোমার যা খুশি তাই করো। অন্নপূর্ণা কথাগুলো বলে আর দাঁড়াল না, ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    কিন্তু রাধারমণ কথাটা যেন নতুন করে ভাবতে লাগলেন। সুহাসিনীর প্রতি কেবল সমাজ নয়, তাঁরা, সুহাসিনীর অত্যন্ত প্রিয়জনেরাও অন্যায় করছেন। মনের মধ্যে নানা যুক্তি-তর্ক এনে যেন নিজের সঙ্গেই একটা বোঝাপড়া চালাতে লাগলেন।

    কাল-পরশুই তিনি একবার বিদ্যাসাগরমশাই-এর সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর পরামর্শ চাইবেন।

    বাবা!

    দরজার ওপাশ থেকে কন্যা সুহাসিনীর গলা শুনে রাধারমণ হঠাৎ যেন একটু চমকেই ওঠেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে সস্নেহে আহ্বান জানান, কে। সুহাস মা! আয়, ঘরে আয়—

    সুহাসিনী বাপের ডাকে ঘরে এসে প্রবেশ করল।

    আয় মা, আমার কাছে আয়-

    সুহাসিনী যেন সলজ্জ কুণ্ঠার সঙ্গে পায়ে পায়ে বাপের সামনে এসে দাঁড়াল। অনেকদিন পরে যেন তাঁর কন্যার প্রতি নজর পড়ল। সেই অবোধ বালিকা আজ কিশোরী হয়ে উঠেছে—অঙ্গে অঙ্গে লাবণ্য।

    কিছু বলবি মা!

    না বাবা। আপনি আজ গদিতে গেলেন না?

    কটা দিন বড় খাটুনি গেছে মা, তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।

    আপনার পা টিপে দেবো বাবা?

    না রে না—আয় মা আমার পাশে এসে বোস।

    সুহাসিনী বাপের পা ঘেঁষে পালঙ্কের উপর বসল।

    মা সুহাস—

    আমাকে কিছু বলছেন বাবা?

    হ্যাঁ মা, দেখ তোর গর্ভধারিণী যা বলেন তোকে, তোর মঙ্গলের জন্যই বলেন, তাঁর কথাও শুনিস মা।

    কেন, আমি কি মার কথা শুনি না—মা তাই বলেছে বুঝি?

    না, না—তেমন কিছু বলেনি, তবে—

    তবে?

    এখন তো তুই বড় হয়েছিস মা, যখন তখন আগের মত বহির্মহলে যাস না।

    কেন, গেলে কি হয়?

    কিছুই হয় না, তবে সংসারে তো নানাজন আছে—হয়ত কেউ কেউ ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখবে না, নিন্দে করবে—

    করুক, আমার তাতে ভারী বয়েই গেল!

    রাধারমণ বুঝলেন মেয়ে চেহারায় বড় হলেও, তার বুদ্ধি-সুদ্ধি এখনো ছোট একটি বালিকার মতই আছে। রাধারমণ আর কিছু বললেন না-

    জান বাবা, আনন্দদাদা বোধ হয় এই হপ্তাতেই দেশে যাবে—

    দেশে যাবে? এই তো সেদিন এল ছুটি কাটিয়ে।

    বাঃ যাবে না, পুজো এসে গেল না!

    ও হ্যাঁ, পুজো তো এসে গেল।

    .

    আনন্দচন্দ্র দেশে চলেছেন।

    নৌকায়।

    এবারে আশ্বিনের গোড়াতেই পুজো। পরের দিন সন্ধ্যের কিছু আগে নৌকা এসে বিলে পড়ল। যে দিকে চক্ষু যায় শুধু জল আর জল—দিগন্তপ্রসারী বিল। তারই মধ্যে সবুজ ধানগাছের সবুজ সমারোহ—শিশ্ ধরেছে—মধ্যে মধ্যে এক ঝাঁক পাখি টি টি করে উড়ে যাচ্ছে। নৌকার গায়ে ধানের গাছগুলো সরসর শব্দ জাগায়

    আরো কয়েকজন নৌকাযাত্রীর সঙ্গে আনন্দর দেখা হয়, কেউ কেউ প্রশ্ন করে—

    কেডা যায় নাওয়ে!

    মাঝি জবাব দেয়, গুপ্তিবাড়ির ছাওয়াল।

    অঃ, তা কলকাতা থেকে আসতিছে বুঝি!

    হ।

    রাজেন্দ্র বাঁড়ুজ্যের বাপ হারান বাঁড়ুজ্যে তারপাশার হাট থেকে পুজোর বাজার করে ফিরছিলেন।

    আনন্দচন্দ্র তাঁকে দেখে চিৎকার করে ডাকে, ও হারান জ্যেঠা!

    কেডা?

    আমি—আনন্দ—

    এই আলে বুঝি?

    আজ্ঞে। আপনাদের সব খবর ভালো? সকলের মঙ্গল তো?

    তোমাগোর বাড়ির খবর কিছু জানোনি? হারান বাঁড়ুজ্যে শুধান।

    হ্যাঁ, মাসখানেক আগে বাবার এক পত্র পেয়েছিলাম—কেন, বাড়ির কোন খবর আছে নাকি হারান জ্যেঠা?

    বাড়ি যাও সবই জানতি পারবা—

    আনন্দচন্দ্রের বুকের ভিতরটা কেমন যেন ধক্ করে ওঠে। কিন্তু সে আর কোন প্রশ্ন করে না হারান বাঁড়ুজ্যেকে।

    বাবা ভাল আছেন তো? মা? পিসীরা? অন্নদাসুন্দরী?

    সন্ধ্যার ধূসর ছায়া দিগন্ত ব্যেপে নামছে তখন

    এখনো ঘাটে পৌঁছুতে ঘণ্টাটাক সময় লাগবে। আনন্দচন্দ্র আর ছইয়ের ভিতরে যায় না, বাইরের নাওয়ের অপরিসর পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে থাকে।

    ঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ঝাপসা ঝাপসা অন্ধকার চারিদিকে। খবর না দিয়ে এসেছে আনন্দচন্দ্র, তাই ঘাটে কেউ তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আসেনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি বীরাঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহিম
    Next Article অশান্ত ঘূর্ণি (অখণ্ড) – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.