Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভাগীরথী অমনিবাস – নীহাররঞ্জন গুপ্ত (অসম্পূর্ণ)

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প284 Mins Read0

    মধুমতী থেকে ভাগীরথী – ২৫

    ।। পঁচিশ ।।

    হঠাৎ যে কি হয়ে গেল, আনন্দচন্দ্র ভোলানাথের গালে সশব্দে একটা চড় বসিয়ে দিল। চিরদিনই একটু রাগী প্রকৃতির মানুষ আনন্দ—–চট্ করে তার কেমন যেন রাগ হয়ে যায় এবং রাগ হলে তখন যেন আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। অবশ্য তার সে রাগ নিভে যেতেও দেরি হয় না। কাজেই হঠাৎ ওইভাবে রাগের মাথায় ভোলনাথের গালে একটা চড় বসিয়ে দেবার পরই নিজেই যেন কেমন থমকে গেল আনন্দচন্দ্ৰ।

    ভোলানাথও অতর্কিতে ওই চপেটাঘাত খেয়ে কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কয়েকটা মুহূর্তের জন্য। আনন্দ যে তাকে ওইভাবে হঠাৎ একটা চড় বসিয়ে দিতে পারে তার গালে সে যেন ভাবতেও পারেনি।

    কিন্তু বিমূঢ় ভাবটা কেটে যেতেও ভোলনাথের দেরি হয় না। রাগত ও ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললে ভোলানাথ, তুমি আমাকে মারলে কেন?

    ভোলানাথের ওই কথায় আনন্দর রাগটা যেন আবার দপ্ করে জ্বলে ওঠে। সে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলে, বেশ করেছি।

    বেশ করেছো?

    হ্যাঁ।

    আসলে ভোলানাথ একটু ভীরু প্রকৃতির। ভোলানাথের মত মানুষদের সাহস কমই থাকে, তাই সে আনন্দর ওই স্বীকৃতির কোন প্রতিবাদ জানাতে পারে না।

    তুমি এত বড় নির্লজ্জ ভোলাদা যে, মল্লিক কাকার সম্পর্কে অমন একটা কুৎসিত কথা বলতে তোমার এতটুকুও বাধলো না!

    না, বাধলো না—যা সত্যি সে কথা বলতে আমি ডরাই না।

    আনন্দ এবারে সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বললে, সুহাস, এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না—যাও অন্দরে যাও।

    সুহাসিনী মাথা নীচু করে কোনরকম বাক্যব্যয় না করে অন্ধকারে হেঁটে মিলিয়ে গেল।

    দেখ আনন্দ, সত্য কখনো ঢাকা থাকে না। তুমি যতই তোমার মল্লিক কাকাকে একজন মহাপুরুষ ভাবো না কেন—

    ভোলানাথ!

    হ্যাঁ, আবারও বলবো—তাঁর কীর্তিকাহিনী আজ আর কারো জানতে বাকী নেই। এ তল্লাটে সবাই জেনে গিয়েছে—আজকাল প্রতিরাত্রে মল্লিকমশাই কোথায় যান এবং কোথায় মধ্যরাত্রি পর্যন্ত কাটিয়ে তারপর গৃহে ফেরেন—

    এত জোর দিয়ে কথাগুলো বললে ভোলানাথ যে আনন্দচন্দ্র তার আর কোন প্রতিবাদই করতে পারলো না।

    ভোলানাথ বলে চলেছে তখনো, বলবো না কেন, একশবার বলবো—নিজের স্বামী চরিত্রহীন, বেহায়া—আমাকে কোন্ সাহসে উনি ওই সব কথা বলতে আসেন? কথাগুলো বলে ভোলানাথ আর দাঁড়ালো না, হনহন করে হেঁটে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

    কিন্তু আনন্দচন্দ্র যেন একটা পাথরের মূর্তির মতই সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।

    ভোলানাথ যেভাবে উঁচুগলায় মল্লিক কাকা সম্পর্কে বলে গেল তাতে করে আর যাই হোক আনন্দচন্দ্ৰ বুঝতে পারে একটা কিছু ঘটেছে।

    আর ভোলানাথ যে প্রকৃতির মানুষ—সে বিষ ছড়াতে কসুর করবে না। সুহাসিনীর সামনে আজ যে কথা বললো, হয়ত আরো অনেককেই ইতিপূর্বে এই কথাগুলো বলেছে। হয়ত অনেকের কানেই কথাটা গিয়েছে।

    কে এই জানকী দত্ত আনন্দচন্দ্র তা জানে না। ইতিপূর্বে কখনো সে এই নামটাও শোনেনি।

    কিন্তু এটা ঠিক গিন্নীমা ভোলানাথকে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে ঠিকই করেছেন। সুহাসিনী অত্যন্ত সরলা, সাংসারিক বুদ্ধিসুদ্ধি তার এতটুকুও নেই। কিসে তার ভাল কিসে তার মন্দ তাও বোঝে না সে।

    অথচ ভোলানাথের মোহে সে পড়েছে এটা স্পষ্ট। ভোলানাথ এখানে থাকলে হয়ত একটা সর্বনাশই ঘটবে।

    নানা এলোমেলো চিন্তায় আচ্ছন্ন আনন্দচন্দ্র এক সময় অন্দরের দিকে পা বাড়ালো।

    .

    অন্নপূর্ণা দেবীকে বাইরে থেকে খুব শান্তশিষ্ট মনে হলেও তার ভিতরটা ছিল বেশ শক্ত। নচেৎ অত বড় সংসারটার হাল সে ধরতে পারতো না।

    সুহাসিনীকে কেন্দ্র করে যেসব কথা ওই সংসারে মধ্যে মধ্যে সোচ্চার হয়ে উঠছিল, সেটার মূলটা যে কোথায় অন্নপূর্ণার বুঝতে সেটা দেরি হয়নি। অন্নপূর্ণা বুঝতে পেরেছিল বাড়ির মধ্যে আশ্রিত ওই বয়াটে ছেলেটাই যত অনর্থের মূল।

    তাই সে মনে মনে স্থির করে, ওই বিষবৃক্ষ আর সে বাড়তে দেবে না। তাই একদিন মঙ্গলাকে নিজের ঘরে ডেকে এনে স্পষ্টই বলে দিয়েছিল, মঙ্গলা, আমি তো আর তোমার ওই ছেলেটিকে এ বাড়িতে স্থান দিতে পারি না।

    কার কথা বলছো গিন্নীমা?

    বলছি তোমার ছেলে ভোলানাথের কথা—

    ভোলা—আমার ভোলানাথ!

    হ্যাঁ।

    তা সে কি করলো?

    অন্নপূর্ণা স্পষ্ট করে মুখের উপরে মঙ্গলাকে কথাটা জানাতে পারল না, কেবল বললে, সব কথা তোমাকে বলতে পারবো না মঙ্গলা, তবে এ বাড়িতে আর তোমার ছেলেকে থাকতে দিতে পারবো না।

    তবে আমরা কোথায় যাবো গিন্নীমা?

    আমি তো তোমাকে যেতে বলছি না, তুমি যেমন আছো তেমনি থাকো—

    ওর তো সংসারে আর কেউ নেই গিন্নীমা। যদি কেউ থাকতো তবে কি আমি এখানে তোমার চরণাশ্রয়ে পড়ে থাকি! আমাকে যদি স্থান দাও চরণে তাহলে আমার ছেলেকেও—

    না, তোমার ছেলের এ বাড়িতে আর থাকা চলবে না।

    সে কি কোন অপরাধ করেছে গিন্নীমা?

    অপরাধের কথায় অন্নপূর্ণা বলতে পারত সে সুহাসিনীর মাথাটা চিবিয়ে খাচ্ছে—কিন্তু অন্নপূর্ণা কেবল বললে, আমার যা বলবার বলে দিলাম মঙ্গলা, তোমার ছেলেকে তার নিজের একটা ব্যবস্থা করে নিতে বলো।

    কি ব্যবস্থা সে করবে গিন্নীমা!

    তা জানি না।

    এমন করে ছেলেটাকে আমার তাড়িয়ে দেবেন না গিন্নীমা—শেষ আকুতিতে যেন মঙ্গলা ভেঙে পড়ে।

    অন্নপূর্ণা দৃঢ় কঠিন গলায় বললে, আমার যা বলবার বলে দিলাম—

    তাহলে আমাকেও চলে যেতে হবে।

    ছেলেকে না ছেড়ে থাকতে পারলে যাবে। আমার যা বলবার আমি বলেছি, এখন তুমি কি করবে ভেবে দেখো গে।

    .

    মঙ্গলা বুঝতে পারে অন্নপূর্ণার মত বদলাবার নয়।

    ভোলানাথ সম্পর্কে যে ব্যবস্থা সে নিয়েছে তা আর এদিক-ওদিক হবার নয়। অন্নপূর্ণাকে মঙ্গলা ভাল করেই চেনে। শত অনুরোধ-উপরোধও অন্নপূর্ণা টলবার পাত্রী নয়।

    সেই রাত্রেই এক সময় বাড়ির এক দাসীকে দিয়ে রন্ধনশালায় মঙ্গলা ভোলানাথকে ডেকে পাঠাল।

    ভোলানাথ তখন বেরুবে বলে প্রস্তুত হচ্ছে।

    ভোলাবাবু!

    কি রে?

    তোমার মা মঙ্গলা দিদি তোমারে ডাকতিছেন—

    যা বলগে এখন আমি বেরুচ্ছি, আমার সময় নেই—

    তা যাও না বাবু, মা তোমার কি কথি চান সেটা শুনেই বারাও না।

    ভোলানাথ বললে, এখন আমার সময় নেই।

    দাসী ফিরে গেল।

    একটা ছোট আরশি হাতে কাঠের একটা চিরুনি দিয়ে ভোলানাথ তার চুলের টেরিটা যত্ন করে ঠিক করতে থাকে আর একটা কবিগানের পংক্তি গুনগুন করে গাইতে থাকে।

    ভোলা!

    মা’র ডাক শুনে ভোলানাথ চমকে ওঠে।

    মা তো তার কখনো বহির্মহলে আসে না। ভোলানাথের হাতের চিরুনি হাতেই থেমে গেল, সে কিছুটা থতমত খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল।

    মা!

    হ্যাঁ মুখপোড়া, আমি।

    মা তার ওইভাবে আজ পর্যন্ত কখনো তাকে সম্ভাষণও করেনি!

    কতকটা তাই বিস্মিত হয়েই ভোলানাথ মায়ের দিকে তাকাল।

    হতভাগা! কি করেছিস তুই?

    কেন, কি আবার করলাম!

    গিন্নীমা আজ আমাকে ডেকে স্পষ্টই বলে দিলেন, তোর আর এ বাড়িতে স্থান হবে না।

    স্থান হবে না!

    না।

    কেন, আমার অপরাধ?

    শুধু গিন্নীমা কেন—সবাই তো বলে, তুই একটা বয়াটে, বেহায়া—যত সব অসৎ সঙ্গে ঘোরাফেরা করিস দিনরাত্তির—

    বেশ করেছি—কারো পাকা ধানে তো ম‍ই দিইনি।

    আবার মুখে মুখে চোপা করছিস বেহায়া, লজ্জা করছে না তোর! চরিত্রহীন-

    কি বললে, আমি চরিত্রহীন—বেহায়া—আমার লজ্জা নেই? আর ওদিকে এ বাড়ির কর্তাটি যে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছেন তার বেলায় বুঝি কিছু না! ঠিক আছে, কে থাকতে চায় এখানে! আমার থাকার জায়গার অভাব আছে নাকি! হুঁ, বলে দিও তোমার গিন্নীমাকে, আমি চলে যাবো-

    চলে যে যাবি থাকবি কোথায়, খাবি কোথায়?

    সে তোমাকে ভাবতে হবে না।

    ভাবি কি আর সাধে, কাজকর্ম তো কিছুই শিখলি না—কেবল আড্ডা আর আড্ডা!

    থামো তো তুমি, আমাকে আর তোমায় কাজ শেখাতে হবে না। বলতে বলতে জামাটা গায়ে দিয়ে হনহন করে ভোলানাথ ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    কয়েকখানা বাড়ির পরেই ওই পাড়াতে জীবনকৃষ্ণ দত্ত মশাইয়ের বাড়ি—তার এক ছেলে প্রাণকৃষ্ণ দত্ত ভোলারই সমবয়েসী।

    ভোলার মতই বয়াটে। বাবুয়ানী করে—পায়রা ওড়ায়—নৌকায় বাঈ নাচ দেখে বেড়ায়। দিবারাত্র পচরপচর করে পান চিবোয়। মদ্যপানের অভ্যাসও আছে।

    প্রাণকৃষ্ণরই ইদানীং ইচ্ছা হয়েছে একটা কবির দল খুলবে। ভোলানাথ গাইতেও পারে, মুখে মুখে বেশ ছড়াও বাঁধতে পারে—সেই হবে দলের কবিয়াল। মনে মনে কথাটা কেবল ভাবাই নয়, দুচারবার ওই ব্যাপার নিয়ে ভোলানাথের সঙ্গে সে আলোচনাও করেছে।

    ভোলানাথ বলাই বাহুল্য বন্ধুকে উৎসাহ দিয়েছে।

    কিন্তু প্রাণকৃষ্ণর মনে ভোলানাথ সম্বন্ধে একটা সংশয় ছিল। ভোলানাথ কিছু কিছু ছড়া বাঁধতে পারে মুখে মুখে এবং গানও গাইতে পারে—কিন্তু ওর একটা বিশ্রী দোষ আছে—গাঁজা খায়।

    প্রাণকৃষ্ণ কতদিন বলেছে, ওসব ছাইভস্মগুলো খাস কেন?

    ও কি আর সাধে খাই হে প্রাণকৃষ্ণ, ওতে তুরীয়ানন্দ লাভ করা যায়!

    তোর মাথা! বরং এক পাত্তর আমার সঙ্গে খেয়ে দেখ—দেখবি এ সুধা—স্কচ্ হুইসকি সত্যিই সুধা

    না বাবা, তোমার সুধা তুমিই মনের আনন্দে সেবন করো,—এই ধোঁয়াই আমার ভাল—জয় বাবা শঙ্কর—শিব মহেশ!

    ভোলানাথ যে গাঁজা খায় সেটা একমাত্র প্রাণকৃষ্ণ ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানত না।

    .

    ভোলনাথ মল্লিকবাড়ি থেকে বার হয়ে সোজা হাঁটতে হাঁটতে এসে হাজির হল প্রাণকৃষ্ণর ওখানে।

    মেজাজটা তার আজ যেন অত্যন্ত খিঁচড়ে গিয়েছে।

    ঠিক সন্ধ্যাবেলা নেশার সময় মা তার মনটাকে একেবারে খিঁচড়ে দিয়েছে।

    দত্তবাড়ির খোলা ছাতের উপরে বসে প্রাণকৃষ্ণ তখন সবে এক পাত্র সুধা শেষ করে দ্বিতীয় পাত্র গ্লাসে ঢেলেছে।

    পরনে কোচানো ধুতি—গায়ে মসলিনের বেনিয়ান, মাথায় টেরি, গলায় বেলফুলের মালা। সামনে বোতল।

    ভোলানাথের প্রাণকৃষ্ণর বাড়িতে ছিল অবারিত দ্বার। সে সোজা উপরে চলে গেল—কারণ সে জানত ওই সময়ে বন্ধু প্রাণকৃষ্ণকে কোথায় পাওয়া যাবে।

    বন্ধুকে দেখে প্রাণকৃষ্ণ বলল, কিরে ভোলা, আজ এত তাড়াতাড়ি! তোর গাঁজার আড্ডায় যাসনি?

    না—পাটির উপর বসতে বসতে ভোলনাথ বললে।

    তা হঠাৎ তোর অমৃতে অরুচি কেন হল রে? খাবি এক পাত্তর?

    না।

    হ্যাঁ রে তোর সেই নায়িকার খবর কি?

    নায়িকা!

    আরে তোর সুহাসিনী না কি নাম, তার কথা বলছি— ভোলানাথ প্রাণকৃষ্ণকে সুহাসিনীর কথা বলেছিল।

    প্ৰাণকেষ্ট!

    কি রে?

    আমি ভাবছি ওখান থেকে চলে আসবো-

    কোথা থেকে চলে আসবি রে?

    মল্লিকবাড়ি থেকে।

    তা হঠাৎ—

    হঠাৎ নয়, ওখানে আর আমার থাকা চলবে না—তোর এখানে যদি থাকি তোর কোন আপত্তি আছে?

    আমাদের এখানে?

    হ্যাঁ।

    কিন্তু পিতৃদেবকে তো জানাতে হবে কথাটা —

    কেন, পিতৃদেবকে জানাতে হবে কেন?

    আমার পিতাঠাকুরটিকে তুই চিনিস না। বড় কড়া প্রকৃতির মানুষ।

    তাহলে-

    কি তাহলে?

    আমার ওখানে নাকি আর থাকা চলবে না—

    চলবে না? কেন?

    মল্লিক-গিন্নীর হুকুম।

    তা হঠাৎ এমন হুকুমটাই বা তিনি দিলেন কেন?

    আমি নাকি বয়াটে—বাউণ্ডুলে—চরিত্রহীন—

    হাঃ হাঃ করে দরাজ গলায় হেসে ওঠে প্রাণকৃষ্ণ।

    হাসছিস কেন প্রাণকেষ্ট? ভোলানাথ শুধায়।

    হাসবো না তো কি! তুই যদি বয়াটে চরিত্রহীন হোস তো তার স্বামী দেবতাটি কি?

    কি বলছিস যা-তা!

    ঠিক বলছি, এ তল্লাটে জানতে কার আর বাকী আছে—মল্লিকমশাইয়ের রাত আজকাল কোথায় কাটে।

    ছিঃ, লোকটা দেবতুল্য চরিত্রের।

    দেবতারও পতন হয় বন্ধু! শুনিসনি, অমন যে ঋষি বিশ্বামিত্র তারও মেনকাকে দেখে মতিভ্রম হয়েছিল—তা হ্যাঁ রে, সত্যিই তুই কিছু জানিস না ভোলা?

    না।

    জানকী দত্তর নাম শুনেছিস?

    তিনি তো কর্তাবাবুর অনেকদিনের বন্ধু—শুনবো না কেন নামটা তাঁর!

    তাঁর একটি রক্ষিতা ছিল।

    রক্ষিতা!

    হ্যাঁ, যার জন্য তিনি ঘরবাড়ি সব ছেড়েছিলেন। তা দোষ দেওয়া যায় না, শুনেছি মাগী নাকি দেখতে সত্যই অপ্সরী—তা জানকী দত্তমশাই কিছুদিন আগে গত হয়েছেন জানিস তো?

    না।

    তাঁর রক্ষিতাকে একটি বাড়ি দিয়ে গিয়েছেন দত্তমশাই এবং সেখানে গিয়ে ভিড়েছেন আমাদের দেবচরিত্রতুল্য মল্লিকমশাই।

    কি সব আবোলতাবোল বকছিস?

    হ্যাঁ রে হ্যাঁ, খোঁজ নিয়ে দেখ্‌ গে—প্রতিটি রাত এখন সেখানেই কাটে মল্লিক মশাইয়ের।

    প্রাণকৃষ্ণের কথাগুলো পুরোপুরি বিশ্বাস না করতে পারলেও তার মনের মধ্যে যেন কোথায় একটা ধোঁকা লাগে ভোলানাথের।

    কথাটা আজ এ তল্লাটে সবাই জানে রে সবাই জানে। আশ্চর্য, আমরা তো অনেকদিন থেকেই জানি অথচ তুই কিছুই জানিস না!

    ভোলানাথের বস্তুত কিছুই যেন আর ভাল লাগছিল না। তার এতদিনের প্রাণের বন্ধু প্রাণকৃষ্ণ—কিন্তু ভোলানাথ তার কথাতেই বুঝতে পেরেছিল এখানে তার সুবিধে হবে না। বাপের অমতে কিছু করার সাহস তার বন্ধুর হবে না।

    অথচ এও আজ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল ভোলানাথ, মল্লিকবাড়িতে তার আর ঠাঁই হবে না। গিন্নীমা শক্ত ধাতুতে গড়া। বাইরে শান্তশিষ্টটি হলেও ভিতরে অত্যন্ত কঠিন।

    এখানে যদি ঠাঁই না হয় তার তো সে যাবে কোথায়!

    লেখাপড়া করেনি—কোন কাজকর্মও শেখেনি—কেবল গায়ে হাওয়া দিয়েই বেড়িয়েছে। মাথাটা যেন হঠাৎ গরম হয়ে ওঠে ভোলানাথের।

    সে উঠে দাঁড়াল।

    কে হল রে? উঠছিস কেন?

    ভোলানাথ কোন জবাব দিল না, সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।

    এই ভোলা শোন্!

    প্রাণকৃষ্ণর ডাকে ভোলানাথ কোন সাড়া দিল না।

    একবার আব্বাস মিঞার কাছে যেতে হবে—কোন এক সাহেবের খানসামা সে। সাহেব একজন বড় সরকারী চাকুরে, থাকে পার্ক স্ট্রীট অঞ্চলে—সে হয়ত একটা পথ বাতলে দিতে পারবে।

    ভোলানাথ রাস্তায় পড়ে হনহন করে হাঁটতে থাকে।

    গাঁজার আড্ডাও বসে ওই পাড়াতেই। আব্বাস মিঞা সেখানে প্রায় প্রতি সন্ধ্যাতেই একবার এসে ঘুরে যায়। তার মনিবসাহেবের বিরাট একটা বাগানবাড়ি বাগানের মধ্যে মালী, সহিস ও কোচোয়ানদের থাকার জন্য কয়েকটা ঘরও আছে। সেখানে কি একটু জায়গা পাওয়া যাবে না! পথ চলতে চলতে সেই কথাটাই ভাবতে থাকে ভোলানাথ।

    কিন্তু আজ মল্লিকমশাই সম্পর্কে একটু আগে প্রাণকৃষ্ণর মুখ থেকে যে কথাটা সে শুনে এল সেটাও তার মাথার মধ্যে একটা পোকার মত তাকে কুরে কুরে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে।

    বস্তুতঃ মল্লিকবাড়ি তাকে ছাড়তে হবে এ কথাটা যেন কিছুতেই সে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারছিল না। মল্লিকবাড়ি ছাড়া মানে সুহাসিনীকে ছাড়া।

    সুহাসিনীকে আর সে দেখতে পাবে না।

    সুহাসিনীকে না দেখতে পেলে সে কেমন করে বাঁচবে।

    আড্ডায় এসে দেখলো ভোলানাথ, আড্ডা সেদিন তেমন জমেনি।

    আব্বাস মিঞাও আসেনি।

    কালু শেখ ও জগন্নাথ বললে, তারা দুজনে বসে গাঁজা টানছিল, মিঞা আজ আসবে না।

    কেন?

    তার সাহেবের বাড়িতে আজ খেমটা নাচ আছে, খানাপিনা আছে—বলতে বলতে কালু শেখ তার হাতের ছোট কলকেটায় একটা দীর্ঘ টান দিয়ে কলকেটা এগিয়ে ধরলো ভোলানাথের দিকে।

    ভোলানাথ মাথা নাড়ল।

    সে কি হে, চলবে না!

    না, আমার কিছু ভাল লাগছে না।

    কেন দোস্ত?

    ওই সময় আব্বাস মিঞা ফিরে এল। ভোলানাথকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললে, কি হয়েছে রে ভোলা, চুপচাপ বসে আছিস?

    মিঞা!

    কি?

    আমাকে তোমার এখানে থাকতে দেবে?

    হঠাৎ! এখানে কেন?

    ভোলা সব বললে। মল্লিকবাড়িতে তার আর থাকা হবে না।

    সব শুনে আব্বাস বললে, ঠিক আছে, তুই এখানেই থাক আমার কাছে।

    সত্যি বলছো?

    হ্যাঁ রে, থাক।

    ভোলানাথের একটা ব্যবস্থা হয়ে গেল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি বীরাঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহিম
    Next Article অশান্ত ঘূর্ণি (অখণ্ড) – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.