Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শ্রেষ্ঠ উর্দু গল্প – সম্পাদনা : শহিদুল আলম

    লেখক এক পাতা গল্প766 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩.০১ গোঁফ – হামিদ কাশ্মিরি

    গোঁফ – হামিদ কাশ্মিরি

    স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে, ফটক পর্যন্ত এসে দিলাওয়ার খান কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকল। রাস্তায় এত লোক। সবাই তো পায়ে হেঁটে চলেছে। প্রত্যেকটি চলমান লোকের মুখের ওপর সে একবার করে গভীর দৃষ্টি ফেলল। শহরে তার এই প্রথম আসা। তা-ও এত বড় শহর। কাজেই শহর দেখতে যে অদ্ভুত লাগবে, সেরকম একটা ধারণা মনে মনে পোষণ করে রেখেছিল আগেই থেকেই। কিন্তু এ শহর যে এত অদ্ভুত, তা সে আগে কখনো ভাবেনি।

    শুধু শহর নয়– শহরের মানুষগুলোও অদ্ভুত। এমন একটা মানুষও তো দিলাওয়ার খান গ্রামে কখনো দেখেনি। এদের পোশাক কেমন বিচিত্র। মাথায় তার মতো কেউই পাগড়ি জড়ায়নি। গ্রামের যারা গরীব লোক, যারা চল্লিশ গজি পাগড়ির পয়সা যোগাতে পারে না, তারাও কখনো মাথা খালি রাখে না। আর কিছু না-হোক একটা লুঙ্গি হলেও তাই মাথায় জড়িয়ে নিয়ে তবে বাড়ির বাইরে বেরোয়। আর, এ শহরের মানুষ টুপিটা পর্যন্ত মাথায় চাপায়নি। সবারই মাথা উলঙ্গ। তার ওপর আবার মর্দানা আর জানানা চেনা দায়। কোনো কোনো মেয়েলোকের চুল পুরুষ মানুষের মতো করে ছাঁটা, আর শরীরের অর্ধেকের বেশি বেআবরু। আবার অনেক পুরুষ জানানা পোশাক পরেছে।

    সবচাইতে তাজ্জবের ব্যাপার, কোনো পুরুষেরই মুখে গোঁফ নেই। তার মতো অমন লম্বা-চওড়া গোঁফ দূরের কথা– কারও নাকের নিচে সামান্য গোঁফের রেখাটুকু পর্যন্ত লক্ষ করা যায় না। দুই পাশে তা দিয়ে দিয়ে পাকিয়ে রাখা তার মতো অমন জমকালো গোঁফ তাদের গ্রামের সবারই যে রয়েছে, এমন কথা সে বলতে চায় না। কিন্তু একেবারেই গোঁফ নেই, এমন তো কখনো হতে দেখেনি সে।

    দাড়ি কেউ রাখে, কেউ রাখে না; কিন্তু গোঁফ প্রত্যেকেই রাখে যার যার সাধ্য আর সামর্থ্য মতো। যার ছাতিতে যত তাকত, তার গোঁফ তত জমকালো। নিজের গ্রামে দিলাওয়ার খানের গোঁফ সবচাইতে বড় বলেই-না তার এত খাতির। তার গোঁফের খ্যাতি আশপাশের চৌদ্দটা গ্রামের মধ্যেও বিস্তার লাভ করেছে। গোঁফের এই মর্যাদা কোনোদিনও ক্ষুণ্ন হতে দেয়নি সে, তার সাহস আর বীরত্বকে যেমন দেয়নি কখনো ম্লান হতে। গ্রামের সবাই আগে তাকেই সালাম দেয়। তাই বলে সে দাম্ভিক নয়। আগে সে সালাম করতে চাইলেও গ্রামের লোকরাই সে সুযোগ দেয় না কখনো। যাই হোক, এ তার প্রাপ্য সম্মান। এমন সম্মান জুটতে পারে খুব কম লোকের ভাগ্যেই।

    শহরের এইসব অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করে দিলাওয়ার খান অবাক হল। তারপর সে লক্ষ করল, তার গোঁফের দিকে যার চোখ পড়ছে, সেই যেন ভয় পেয়ে যাচ্ছে। সেই জন্যই এই গোঁফ দেখছে তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে।

    তার মধ্যে একটা ছেলে– যার জামাটা মেয়েদের মতো গায়ের সঙ্গে সেঁটে রয়েছে আর সে জামায় ফুল-পাতায় নকশা কাটা– যেন খানিক মশকরার ভঙ্গিতে বেশকিছুটা কাছে থেকে দিলাওয়ার খানের গোঁফ দেখছিল। চাল-চলন, হাব-ভাব দেখে ছেলেটাকে দিব্যি জানানা বলেই বোধ হচ্ছে। এই কারণে তার এইভাবে তাকিয়ে থাকাকে সে গুরুত্ব দিল না। ভাবল, গোঁফ দেখার শখ মিটলেই চলে যাবে সে। কিন্তু ছেলেটা চলে যাওয়া দূরে থাক– এখন তার এক সঙ্গীর কাঁধের উপর কনুই রেখে হেলান দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আরও মজা করে দেখতে লাগল, আর দেখার মধ্যে আগের মতো তেমনি মশকরার ভাব। দিলাওয়ার খান আর সহ্য করতে পারল না। তখন সে ঘাড় টান করে দাঁড়াল। এক মুহূর্ত চোখ ফেলল। গোঁফে সামান্য একটু কাঁপুনি দিল। এই গোঁফ নড়ানো দেখেই ছেলেটা তার সঙ্গীকে নিয়ে এমন এক দৌড় মারল যে, আর ফিরেও তাকাল না। মনে মনে মুচকি হেসে আস্তে আস্তে রাস্তায় নেমে পড়ল দিলাওয়ার খান।

    রাস্তায় নেমেও সেই এক কাণ্ড! লুকিয়ে লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে, আড়চোখে কিংবা পেছন ফিরে, দূরে থেকে কিংবা কাছ থেকে একবার, দুবার, তিনবার করে প্রত্যেকে তার গোঁফ দেখছে। লোকগুলো যেন ভাবছে, রাজ্যের যত গোঁফ সবই দিলাওয়ার খানের নাকের নিচে এসে জড় হয়েছে। দিলাওয়ার খান ভাবল, তার কাছে যেমন শহরটা অদ্ভুত সেও তেমনি অদ্ভুত এই শহুরে লোকগুলোর কাছে।

    যাই হোক, সে আনন্দিত যে, সবাই তার আগমন উপলব্ধি করছে। কত লোকই তো এই শহরে প্রতিদিন আসে, কিন্তু কেউ কি তাদের এইরকম ভয়ের চোখে দেখে! গ্রামের লোকরাও তাকে ভয় করে চলে। অবশ্য সেজন্য তাকে যথেষ্ট খাটতে হয়েছে। যথেষ্ট শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কত ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু শহরে এসে সেরকম কিছুই করতে হল না। বিনা খাটুনিতেই লাভ করল এমন মর্যাদার আসন। সুতরাং, দাঁড়িয়ে পড়ে একবার সে ভালো করে গোঁফে একটা তা দিয়ে নিল। ছাতিটা টান করল। গর্দান উঁচু করল। মনেই থাকল না কোথায় তাকে যেতে হবে। ভুলেই গেল, কেউ তাকে স্টেশনে নিতে আসেনি কেন।

    যখন মনে পড়ল, তখন ভারি দুঃখ হল। ভাবল, হয়তো তার চিঠি এখনো পৌঁছায়নি। তারপর নোটবুকে লেখা ঠিকানা দেখে নিল। কিন্তু কেমন করে সেখানে যেতে হবে, তা সে জানে না। সামনের ফুটপাতে মিনমিনে ধরনের একটা লোককে দেখতে পেয়ে তার দিকে এগুলো জিগ্যেস করার জন্য। লোকটা আগে থেকেই তার গোঁফের দিকে তাকিয়ে ছিল। সে দিলাওয়ার খানকে তার দিকে এগুতে দেখে ভয় পেয়ে এলোপাথাড়ি দৌড় মারতে শুরু করে দিল।

    ‘আখো, বুদিল।’ লোকটাকে গালি দিল সে কাপুরুষ বলে। তারপর, অন্য একজনের কাছে ঠিকানা জানতে চাইল সে। এবারের লোকটা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল না। দিলাওয়ার খানকে সে বুঝিয়ে দিল যে ওই বাস-স্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে চাপলে চৌরঙ্গি পৌঁছানো যাবে, সেখানে থেকে অন্য বাস ধরলে চলে যেতে পারবে গন্তব্যস্থলে।

    বাস-স্ট্যান্ডে বিরাট একটা লাইন লেগেছিল। এই লাইনের মর্ম দিলাওয়ার খানের জানা নেই। জানবার চেষ্টাও সে করল না। লাইনের বাইরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চালগোজা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে খেতে লাগল আর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে, আড়চোখে তাকে দেখছে। সামনে এসে দাঁড়ানোর সাহস নেই কারও মনে এইভাবে সর্ববিধ দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হতে পারায় তার মনে যদিও গর্বের অন্ত ছিল না, কিন্তু বাস-স্ট্যান্ডে আসার পর এই দেখার মাত্রা এত বেড়েছে যে, এখন সে বিরক্তি অনুভব করতে আরম্ভ করল। কাজেই ব্যাপারটাকে আর আদৌ আমল না দিয়ে আপন মনে চালগোজা চিবোতে থাকল সে। এমন সময় একটা বাস এল, আর সঙ্গে সঙ্গে সে বাসের দিকে ধাবিত হল। কিন্তু তার পৌঁছানোর আগেই বিরাট লাইনের একটা দিক বাসের ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে দিয়েছে। এই অবস্থা’ দেখে সে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকল। তারপর যখন বুঝল, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে– বাস প্রায় ভরে গেছে। কাজেই আর সময় নষ্ট না করে সামনের দিকে লাইনের এক জায়গায় সে ঢুকে পড়ল। পেছনের লোকরা অস্বস্তি অনুভব করল, কিন্তু কারও সাহস হল না প্রতিবাদ করার।

    বাস একদম ভরে গেছে। দিলাওয়ার খান অনেক পরে ঢুকেছে বলে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হল। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থেকে কারও কেবল গা দেখা যাচ্ছে, কারো কেবল পা।

    গেটের কাছে দাঁড়িয়ে কন্ডাক্টর টিকিট কাটতে লাগল। নিয়মমতো, একজনের কাছে একবারের জায়গায় পাঁচবার চাইলে তবে টিকিটের পয়সা পাওয়া যায়। কন্ডাক্টর প্রথমে বসে-থাকা লোকদের টিকিট কেটে গেল। তারপর দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সম্বোধন করতে লাগল তার চিরাচরিত ভাষায় ‘টিকিট।’

    ‘ও ভাই, টিকিট।’

    ‘টুপিঅলা ভাই, টিকিট।’

    ‘গামছাঅলা ভাই, টিকিট!’

    ‘শেরওয়ানিঅলা ভাই, টিকিট।’

    ‘ও ভাই, গোঁ-ও-ও-ফ…’

    দিলাওয়ার খানের গোঁফ পাশ থেকে সামান্য এক শতাংশ দেখেই সে এই সম্বোধন করতে যাচ্ছিল। কিন্তু যেই পুরো দেখেছে, অমনি তার মুখের মধ্যেই কথাটা আটকে থেকে গেল, বেরুতে পারল না। দিলাওয়ার খানের আগুন ঠিকরানো চোখ দেখে সে রীতিমতো ভড়কে গেল ভয় পেয়ে। ভয়ে তার সর্বশরীর কাঁপতে লাগল থরথর করে। ওদিকে দিলাওয়ার খানও তার সেই ভয়ঙ্কর দৃষ্টি কিছুতেই সরিয়ে নিচ্ছে না কন্ডাক্টরের ওপর থেকে। যারা দেখেছে, তারাও প্রত্যেকে চুপ মেরে গেছে। গোটা বাসে একটা থমথমে নীরবতা। মনে হচ্ছিল, কন্ডাক্টারকে এখনই খুন করে ফেলবে দিলাওয়ার খান। তারই মধ্যে একজন সদাশয় ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘খান সাহেব, যাত্রা মাফ করে দাও ওকে। দেখছ না, ও একটা পাগল, বদ্ধ পাগল। ওকে ছেড়ে দিয়ে আমাকেই না হয় দুটো গাল দিয়ে দাও, খান সাহেব।’

    ‘আখো, জানানা, মরদের বাচ্চা গাল দেয় না।’ এই বলে সে সত্যি সত্যি মাফ করে দিয়ে অন্য দিকে মুখ ফেরাল।

    চৌরঙ্গি পৌঁছে বাস থেকে নেমেই প্রথমে তার চোখ পড়ল একটা চুল-কাটা সেলুনের ওপর। তার মনে পড়ল, তিন দিনের সফরে তার গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে। গালে হাত বুলিয়ে সে তা অনুভব করল। সেলুনে ঢুকে দাড়ি চেঁছে নেবে কিনা, তাই সে ভাবতে লাগল। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, তাছাড়া বাস এসে চলে যেতে পারে মনে করে তাকে ইচ্ছা পালটাতে হল। তাছাড়া, এখানকার নাপিত আনাড়ি হলে গোঁফের গড়ন নষ্ট করে ফেলতে পারে। গ্রামের কালু নাপিত তার দাড়ি কাটতে কাটতে কেমন হাত পাকিয়ে ফেলেছে। এই কারণে প্রতি দফা দাড়ি কাটার পর দিলাওয়ার খান তাকে এক সের আনাজ দিয়ে দেয়। কালু নাপিত এইরকম দাক্ষিণ্য অন্য কারও দাড়ি কেটে কখনো আশাই করতে পারে না।

    দাড়ি কাটার ইচ্ছাটা সকাল পর্যন্ত স্থগিত রেখে দিলাওয়ার খান বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। এখানে আগের মতো লাইন করে লোক দাঁড়ায়নি। কিন্তু একটা জিনিস বোঝা গেল যে, বাস বেশ দেরিতে আসে। সুতরাং, সে পায়চারি করে বেড়াতে লাগল ফুটপাতের উপর। এখানেও আগের মতোই পথচারীদের কাছে সে দর্শনীয় বস্তু। কিন্তু গোঁফহীন চেহারা দেখে দেখে সে এই শহরের লোকদের ওপর এত বেশি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে যে, তাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোরও প্রয়োজন বোধ করছে না আর। পুরুষ হয়েও গোঁফ নেই। এ শহরের লোকগুলো যেন পুরুষ নয়, হিজড়ে। যে শহরে একসঙ্গে এত হিজড়ে বাস করে, শহরের প্রতি কোনোরকমের আকর্ষণ অনুভব করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যি, তার খুব দুঃখ হতে লাগল এইসব হিজড়ে-মার্কা পুরুষের জন্য।

    এইভাবে আরও কত কী সে চিন্তা করছিল, এমন সময় হঠাৎ এই হিজড়ের শহরে সে একটা পুরুষমানুষ দেখে ফেলল। দিলাওয়ার খানের কাছ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে বিরাট স্বাস্থ্যবান এক জোয়ান মর্দ এসে দাঁড়াল। শুধু চেহারা নয়– সেই চেহারায় চটকদার গোঁফও রয়েছে। দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে দিলাওয়ার খানের গোঁফের চাইতে কিছু কম হলেও সে গোঁফের বাহার রয়েছে। চোখে চোখ পড়তেই দুজনেই দুজনকে বিস্মিত হয়ে দেখতে লাগল। লোকটা এমনভাবে দিলাওয়ার খানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যেন এই শহরে এই প্রথম একটা মর্দের মতো মর্দের সন্ধান পেয়েছে। হিজড়ের শহরে এমন একটা মর্দকে পেয়ে দিলাওয়ার খান মনে মনে খুশিই হচ্ছিল; কিন্তু পরক্ষণেই একটা জিনিস লক্ষ করে সে হুঁশিয়ার হয়ে উঠল। মনে হতে লাগল, লোকটা কেবল তাকিয়ে নেই– থাকবে কেন। লোকটা মাঝে মাঝে ডান চোখ বন্ধ করে বাঁ চোখ দিয়ে গুলি ছুড়ছে আর গোঁফের ডগায় থেকে তা দিচ্ছে। দিলাওয়ার খান স্পষ্ট বুঝে ফেলল, লোকটার গোলমাল করার ইচ্ছা রয়েছে।

    নতুন শহরে এসে সে একটা অপ্রীতিকর ঘটনার কারণ হতে চায়নি। কিন্তু কেউ তার বাহাদুরিকে টিটকারি দেবে, তাই-বা সে সহ্য করে কেমন করে। সুতরাং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সে নিজেকে যে-কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য প্রস্তুত করে নিল। চ্যালেঞ্জের জবাব চ্যালেঞ্জ। সে-ও আগুন ছুঁড়ে মারতে লাগল, তার চোখ দিয়ে।

    চোখের ওপর থেকে চোখ না সরিয়েই লোকটা দিলাওয়ার খানের দিকে আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে লাগল। দিলাওয়ার খান পরিষ্কার দেখল, পালনের পকেটে হাত দিয়ে লোকটা কী একটা খুঁজছে।

    ধারালো জিনিস দিলাওয়ার খানের কাছেও রয়েছে। চট করে সে-ও গোপন জায়গায় রক্ষিত ছুরিতে স্পর্শ গ্রহণ করে নিশ্চিন্ত হল। কিন্তু সাব্যস্ত করল, কিছুতেই সে আগে আক্রমণ করবে না।

    ওদিকে লোকটা আরও কয়েক পা দিলাওয়ার খানের দিকে এগিয়ে এসেছে। সুতরাং, দিলাওয়ার খান আরও খানিকটা সতর্ক হয়ে শক্তভাবে দাঁড়াল। দেখে মনে হতে লাগল যেন দুই ষাঁড় পরস্পর মুখোমুখি হয়েছে লড়াইয়ের জন্য। দূরত্ব ক্রমেই কমতে লাগল। তারপর, অল্পক্ষণের মধ্যেই লোকটা দিলাওয়ার খানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। হাতটা তখনো পকেটেই। সেই হাত ছুরিসহ কখন পকেট থেকে বের হয়, তার জন্য দিলাওয়ার খান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিছুতেই সে আগে আক্রমণ করবে না। এটা তার নিজের শহর নয়। ভিন জায়গায় এসে কিছুতেই সে কলঙ্কিত হতে চায় না।

    কিন্তু কী আশ্চর্য, লোকটার হাত তো কই নড়ল না। তার বদলে নড়ল কেবল ঠোঁট দুটো। সেই ঠোঁট দিলাওয়ার খানের একেবারে কানের কাছে নিয়ে এসে লোকটা জিগ্যেস করল মোলায়েম করে, ‘খান সাহেব, মাল-টাল লাগবে?’

    ‘আখো! কিসের মাল! কেমন মাল।’ কিছুতেই বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করল দিলাওয়ার। ‘খান সাহেব, যেমন বলবেন, তেমনি মাল। একেবারে টাটকা মাল। কাশ্মিরি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, হিন্দুস্তানি, বাঙালি, পাঠান মাল, পাহাড়ি মাল। একেবারে বেড়ে খাসা মাল।’

    দিলওয়ার খানের মনে হল, গোটা একটা বিরাট পাহাড় যেন দেখতে দেখতে ব্যাঙে পরিণত হয়ে গেল। রাগে তার সর্বশরীর কাঁপতে লাগল থরথর করে। সারা শরীরের শিরা-উপশিরা টানটান হল। একটা কথা না বলে সে রাস্তায় এপাশে-ওপাশে তাকাতে লাগল। অমনি চোখে পড়ল চুল-কাটা সেলুনটা। পাগলের মতো হয়ে লাফাতে লাফাতে সেখানে গিয়ে ঢুকে পড়ল। হাঁপাতে হাঁপাতে চেয়ারের উপর গিয়ে বসল। ভয়ে ভয়ে গোঁফের দিকে তাকাতে তাকাতে ক্ষৌরিক দাঁড়াল কাছে এসে। তারপর, সম্ভ্রমে প্রশ্ন করল, ‘বলুন, খানসাহেব, দাড়ি কাটবেন?’

    ‘আখো! দাড়ি চলে গেছে জাহান্নাম। তুমি আগে আমার গোঁফ মুড়িয়ে দাও। এদিকে শালার কেবল খেমটাউলির ভেড়ুয়ারাই গোঁফ রাখে।’

    ক্ষৌরিক ক্ষুর চালাবার আগেই দিলাওয়ার খানের দুচোখ বেয়ে দরদর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। কিন্তু বহু কষ্টে সে সংবরণ করে নিল তার বুক-ভাঙা কান্নার জোয়ার।

    অনুবাদ : নেয়ামাল বাসির

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমার বোকা শৈশব – আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
    Next Article এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে – আবদুল্লাহ আল-মুতী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }