Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শ্রেষ্ঠ উর্দু গল্প – সম্পাদনা : শহিদুল আলম

    লেখক এক পাতা গল্প766 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩.০৫ সাইকেল – পিত্তরাম বোখারি

    সাইকেল – পিত্তরাম বোখারি

    সেই সাইকেল চেপে শেষ পর্যন্ত রওয়ানা হলাম। প্রথম দফা প্যাডেল ঘোরাতেই বোধ হল যেন একটা কঙ্কাল অসংখ্য কঙ্কালের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছে।

    কিছু দূর যেতে-না-যেতেই একটা ঢালু রাস্তা পড়ল। তখন আর প্যাডেল করার দরকার হল না– সাইকেল আপনাআপনিই চলতে লাগল। তবু তার গতি ঘন আলকাতরা মাটির উপর ঢেলে দিলে যত হয়, তার চাইতে বেশি নয়।

    সাইকেলের বিভিন্ন অংশ থেকে বিবিধ ধ্বনি নির্গত হতে লাগল। এইসব ধ্বনি বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। গদির নিচে থেকে আর পেছনের চাকা থেকে যে ধ্বনি বেরুচ্ছে তা এই রকম : ‘চিঁ চাঁ চুঁ।’ অন্য গোত্রের ধ্বনি ছিল : ‘খট্ খড়্গ খড়্গ খড়্গ ডু।’ এই গোত্রের নিবাস মাড-গার্ডে। আর এক গোত্র ডেরা গেড়েছে সাইকেলের চেইনে আর প্যাডেলে, যা এইরকম : ‘ছর্-ছরর্ ছর-ছরর্।’ কিন্তু এই শেষোক্ত গোত্রের ধ্বনি আবার বদলে যাচ্ছে যখন আমি জোরে প্যাডেল ঘোরানোর চেষ্টা করছি। তখন হচ্ছে : ‘ছরর্-ছরর্ ছরর্-ছরর্।

    পেছনের চাকা কেবল যে ঘুরছে, তাই নয়– সে চাকা দুলছেও। অর্থাৎ, সামনের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে, উপরন্তু একবার ডাইনে আর একবার বাঁয়ে হেলছে। এর ফলে রাস্তার ধুলোর উপর যে ছাপ পড়ছে, তা দেখে যে-কারও মনে হতে পারে, কোনো নেশাখোর সাপ সেদিক দিয়ে চলে গেছে।

    কাদা-পানির ছিটে না লাগে, সেই জন্য মাড-গার্ড। কিন্তু আমার সাইকেলের মাড-গার্ড ঠিক জায়গায় অবস্থিত নয়। ফলে, আমি যখন উত্তর দিক দিয়ে চলব আর সূর্য থাকবে পশ্চিমে, তখন সাইকেলের টায়ারে রোদ লাগতে পারবে না।

    পেছনের টায়ারে বিরাট একটা ব্যান্ডেজ। ফলে, এক পাক ঘুরে ওই জায়গায় এলেই গোটা সাইকেল পালোয়ানি কায়দায় লম্ফ দিয়ে উঠছে। আপনার চিবুকের নিচে জোরে একটা ঘুসি মারলে যেমন হতে পারে, আমার সাইকেলের অবস্থা ওই সময় ঠিক তেমনি হচ্ছে। প্রতি চক্রেই ওইরকম হচ্ছে। তার মানে, বুঝে নিন, চাকাটা যতবার ঘুরছে, ততবারই আপনার চিবুকের তলায় একটা করে ঘুসি পড়ছে।

    সামনের চাকারও নিজস্ব একটা গোত্রগত ধ্বনি রয়েছে; কিন্তু সেটাকে আলাদাভাবে বিশ্লিষ্ট করা কষ্টকর। কাজেই সামনের আর পেছনের মিলিয়ে যে সমষ্টিগত ধ্বনি হচ্ছে, তা এইরকম : ‘চুঁ-চুঁ-ফট্ চুঁ-চুঁ-ফট্।’ ঢালু রাস্তা দিয়ে নামবার সময় গতি যেহেতু আপনাআপনি বেড়ে যাচ্ছে, সেহেতু এই একই ধ্বনি বদলে দ্রুততা লাভ করেছে : চুঁ-চুঁ-ফট্ চুঁ চুঁ-ফট্ চুঁচুঁফট্-চুঁচুঁফট্।’ আফ্রিকার কোনো ভাষায় বাচ্চারা সমস্বরে নামতা পড়লে ধ্বনির সামগ্রিক রূপ এইরকম দাঁড়ায় কিনা কে জানে।

    এইসব চিত্র-বিচিত্র ধ্বনি শুনে পথচারীর মনের চিত্র-বিচিত্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষণীয়। বিশেষত আমার সাইকেল যখন ঢালু রাস্তা দিয়ে নামছে, তখন যে-সব পার্ট এতক্ষণ নীরব ছিল, তারা আড়িমুড়ি দিয়ে ঘুম ভেঙে জেগে একসঙ্গে সবাই সরব হয়ে উঠছে। পথচারীদের কেউ চমকে ফিরে তাকাচ্ছে আর কেউ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ছে। মায়ের কোলের শিশু ভয় পেয়ে বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।

    এতক্ষণ আমার সাইকেল অস্বাভাবিক গতিসম্পন্ন ছিল বলে তার দুর্বল স্বাস্থ্যের ওপর অচিরে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেল। আর, এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য একসঙ্গে দু-দুটো পরিবর্তন সাধিত হল। প্রথমত, সামনের চাকাসহ হ্যান্ডেলটা বেঁকে গেল। ফলে, যখন আমি সোজা যেতে চাইছি, সাইকেল তখন আমাকে বাঁ দিক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করছে। দ্বিতীয়ত, সাইকেলের আসন আনুমানিক ছয় ইঞ্চি পরিমাণ নিচে নেমে গেল। ফলে, যখন আমি প্যাডেল ঘোরাচ্ছি, তখন ওঠানামা করার সময় আমার দুই পায়ের হাঁটু একবার করে চিবুক স্পর্শ করে যাচ্ছে। অনুষঙ্গ স্বরূপ, মাজায় আর মাথায় অস্বস্তিকর অনুভূতি পীড়া দিতে লাগল।

    আসনের নিচু হয়ে যাওয়াটা সর্বতোভাবেই পীড়াদায়ক হয়ে উঠল। সুতরাং, ওটাকে ঠিক করে নেওয়াই ভালো মনে করলাম। সাইকেল থামিয়ে নিচে নামলাম। সাইকেল থামানোর সঙ্গে সঙ্গে মনে হল, গোটা দুনিয়া জুড়ে এতক্ষণ যে প্রলয়-কাণ্ড হচ্ছিল, তা এক নিমেষে থেমে গেছে। থলে থেকে যন্ত্রপাতি বের করে আসনটাকে উপরে তুললাম এবং হ্যান্ডেলটাকে অনেকখানি সোজা করে রওয়ানা হয়ে পড়লাম আবার।

    সাইকেলের চাকা দশ পাক ঘুরতে-না-ঘুরতেই হ্যান্ডেল নিচে নেমে গেল, ফলে আসনটা রয়ে গেল ইঞ্চি দুয়েক উপরে। এবারে আমার সমস্ত শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে থাকল। দেহের সমস্ত ভার হাতের উপর পড়েছে, আর হাতের ভার হ্যাঁন্ডেলের উপরে। আমার অবস্থাটা একবার কল্পনা করুন। পেছনের চাকার সেই ব্যান্ডেজের অন্য আমার শরীরের পেছন দিকটা একবার উঠছে, আর একবার নামছে। আমার এই অবস্থা দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কোনো স্ত্রীলোক আটা ছানছে। সত্যি সত্যি লোকে তা ভাবছে কিনা, অনুমান করার জন্য আড়চোখে তাকিয়ে নিলাম ডাইনে-বাঁয়ে। আর, সেই ভাবনা আমার চেহারাখানাকে করে তুলল ঘর্মাক্ত। এখানকার সব লোক আমোদপ্রিয়– বিপদে আমাকে সাহায্য করার কথা কোনো আদম-তনয়ের মনে যে মুহূর্তের জন্যও স্থান লাভ করবে না সে সম্বন্ধে আমি নিঃসন্দেহ।

    হ্যান্ডেলের পর এখন আসন আবার নিচের দিকে নামতে লাগল। শেষে অবরোহণের মাত্রা। এমন এক সীমায় গিয়ে পৌঁছাল যে, আমি প্রায় মাটির কাছাকাছি গিয়ে নীত হলাম। একটা বাঁচাল ছেলে বলে উঠল, ‘দেখ, দেখ্‌, লোকটা কেমন কসরত দেখাচ্ছে!’ আমাকে শেষ পর্যন্ত সার্কাসের ক্লাউন মনে করল ওরা।

    সাইকেল থেকে নেমে আমি আবার হ্যান্ডেল আর আসন ঠিক করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আবার যা-কে-তাই। কখন যে আসনটা নিচে নামবে, আর কখন হ্যান্ডেল, তা আগে থেকে অনুমান করা অসম্ভব হয়ে উঠল। হ্যান্ডেল নিচে নেমে যাওয়ার চাইতে আসন নিচে নেমে যাওয়াটা বেশি পীড়াদায়ক। কাজেই আসন যাতে নিচে না নামে, সেজন্য বসবার লোভ সংবরণ করে আসন থেকে দেহের একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে লাগলাম। কিন্তু তাতে করে সমস্ত ভার গিয়ে পড়ল হ্যাঁন্ডেলের উপর, আর হ্যান্ডেল তখন উত্তরোত্তর নামতে থাকল আরও নিচের দিকে।

    এইভাবে সাকুল্যে যখন দু মাইল মাত্র চলা হয়েছে, তখন ডন টেনে আর উঠ-বোস্ করে আমি একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এই রকম ব্যায়াম করতে করতে আরও চার মাইল অগ্রসর হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন সাব্যস্ত করলাম, সাইকেলটাকে একটা দোকানে দিয়ে মেরামত করিয়ে নেব।

    সাইকেল মেরামতের দোকানে যত লোক কাজ করছিল, তারা সবাই একসঙ্গে আমার দিকে তাকাল। কিন্তু আমি তাতে একটুও ভয় না পেয়ে বুক ফুলিয়ে বললাম, ‘সাইকেলটা মেরামত করতে হবে।’

    একজন এগিয়ে এল। হাতে তার একটা লোহার শিক। সেই শিক দিয়ে সে আমার অবোলা সাইকেলটার বিভিন্ন অঙ্গে নির্মম আঘাত হেনে অবস্থা পরীক্ষা করতে লাগল। এইভাবে অনেকক্ষণ ধরে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ চালিয়ে সে আমাকে প্রশ্ন করল, ‘কোন কোন জায়গা মেরামত করাবেন?’

    লোকটার কুমতলব টের পেয়ে আমি আগেই তার কুমতলবের গোড়া মেরে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। বললাম, ‘তুমি তো বাপু বড় বেয়াদব, দেখছি! তোমার কি চোখ নেই? দেখছ না, শুধু গদিটা আর হ্যান্ডেলটা একটু উঁচু করে টাইট করে দিতে হবে তাড়াতাড়ি ঠিক করে দাও, আর কত দিতে হবে, সে-কথা বল!’

    লোকটা বলল, ‘মাড-গার্ডটা তাহলে বাঁকাই থাকবে?’

    ‘ঠিক আছে, মাড-গার্ডটাও না হয় সোজা করে দাও।’

    ‘তাছাড়া অন্যান্য জায়গা খুলে ফিট্ করলে ভালো হত।’

    ‘আচ্ছা, তা-ও না হয় করে দাও– যদি ভালো চলে।’

    ‘এতে আপনার কিছু সময় লাগবে। তা দশ-পনরো দিন লাগতে পারে। সাইকেলটা দোকানে রেখে যান।’

    ‘আর খরচ পড়বে কত?’

    ‘তা ত্রিশ-চল্লিশ টাকা লাগতে পারে।’

    বললাম, ‘থাক, অত মেরামতে কাজ নেই। যা বলেছি, এখন তাই করে দাও। বাদ-বাকি পরে দেখা যাবে।’

    লোকটা হ্যান্ডেল আর আসন উঁচু করে কষে দিল। তারপর চলে যাচ্ছি, এমন সময় সে আবার একটা ফোড়ন কাটল, ‘কষে দিয়েছি বটে, কিন্তু আপনার স্ক্রু সব ক্ষয়ে গেছে। একটু পরে আবার ঢিলা হয়ে যেতে পারে।’

    বললাম, ‘বেয়াদব কোথাকার! তুমি দু আনা পয়সা তাহলে মাংনাই নিলে!’

    ‘সাইকেলটাও আপনি মাংনায় পাননি কি? এ সাইকেল আমরা চিনি। আপনার বন্ধু মির্জা সাহেব আপনাকে দিয়েছেন। কালু, এদিকে আয়! দেখ্‌ তো এটা সেই সাইকেল না! সেই যে মির্জা সাহেব গতবছর আমাদের এখানে বেচতে এনেছিলেন। চিনেছিস? তা কম করে একশ বছর বয়েস হবে এ সাইকেলের– কী বলিস?’

    এইসব টিটকারি শুনে রাগে সর্বশরীর আমার জ্বলে যাচ্ছিল, ‘মির্জা সাহেবের ছেলে এই সাইকেলে করে কলেজ যেত। তার কলেজ ছাড়ার তো এখন পর্যন্ত পুরো দু-বছরও হয়নি।’

    লোকটা বলল, ‘তা ঠিক। কিন্তু তার আগে মির্জা সাহেবও এই সাইকেলে চেপে কলেজ করতেন। তা কত বছর আগের কথা হবে রে, কালু?’ উত্তরটাও সে নিজেই দিয়ে দিল, ‘চল্লিশ বছরের কম হবে না, কী বলিস? তোর তো ব্যাটা তখন জন্মই হয়নি, বলবি কেমন করে!’

    চোখ-কান বুজে, সব টিটকারি হজম করে আবার রওয়ানা হলাম। মিস্ত্রি যেরকম ধারণা দিয়েছিল, তার চাইতে অনেক তাড়াতাড়ি হ্যান্ডেল আর আসনের দুর্যোগ আবার আরম্ভ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চলার পর নেমে পড়তে হল আমাকে। কিছুদূর পর্যন্ত ঠেলে ঠেলে নিয়ে গেলাম। কিন্তু তাতে শরীরের ওপর কষ্ট আরও বেড়ে গেল। তখন সাব্যস্ত করলাম, পানির দামে হলেও সাইকেলটাকে বেচে ফেলব। রাস্তায় আরও একটা দোকান পড়ল। সাইকেল নিয়ে উঠলাম সেখানে গিয়ে।

    দোকানদার এগিয়ে এল আমার দিকে। কিন্তু আমার মুখে যেন তালা-চাবি লেগে গেছে। চিরকাল কিনতেই অভ্যস্ত, বেচার কৌশল তো কোনোদিন আয়ত্ত করা হয়নি। কাজেই কোন কথা দিয়ে শুরু করব, তা কিছুতেই ঠাওর করতে পারছিলাম না। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর মুখ থেকে কেবল এইটুকু বেরুল, ‘সাইকেল।’ দোকানদার বলল, ‘তা তো দেখতেই পাচ্ছি।’

    আমার আবার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, ‘নেবে?’

    ‘মানে?’

    ‘মানে বেচতে চাই।’

    দোকানদার আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। ভাবলাম, আমাকে আবার চোর বলে সন্দেহ করছে না তো! সে সাইকেলটা একবার দেখল, তারপর আমাকে দেখল। আবার সে সাইকেলটাকে দেখল, দেখে আবার আমাকে দেখল। তার এই দর্শন দেখে মনে হল, কোনটা সাইকেল, আর কোনটা আমি, তা যেন সে ঠাওর করতে পারছে না। শেষে বলল, ‘ওটাকে বেচে কী করবেন?’

    এরকম বিদ্‌ঘুঁটে প্রশ্নের সঠিক উত্তর কী হওয়া উচিত, তা আল্লাই ভালো জানেন। আমার তা জানা নেই বলে পাল্টা প্রশ্ন করলাম আমি, ‘তুমি কি জানতে চাচ্ছ, সাইকেলটা বিক্রি করে আমি যে টাকা পাব, তা কোথায় খরচ করব?’

    ‘খরচ আপনি যেখানে খুশি করুন। কিন্তু তার আগে, এ সাইকেল যে কিনবে, সে এটা নিয়ে কী করবে?’

    ‘কেন, সাইকেলটার উপর চাপবে।’

    ‘আচ্ছা, না হয় চাপল। তারপর?’

    ‘তারপর? কেন, তারপর চালাবে।’

    ‘চালাবে! বেশ। খোদা বখ্শ, এদিকে আয় তো! এই যে এই সাইকেলটা বিক্রি হবে, বুঝেছিস?’

    যে ব্যক্তির নাম খোদা বখ্শ, সে একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সাইকেলটা দেখতে লাগল। যেন কাছে এলে আমার সাইকেলটা তাকে কামড়ে দেবে। তারপর, আর একটু এগিয়ে এসে নাসিকা-রন্ধ্রে ঘন ঘন বাতাস ঢুকিয়ে বের করে দিতে লাগল। যেন গন্ধ শুঁকে সে আমার সাইকেলের মর্যাদা আঁচ করতে চায়। তারপর, তারা দুজন নিজেদের মধ্যে ফিসফাস্ আলাপ করল। শেষে খোদা বখ্শ আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, ‘আপনি তাহলে সত্যি সত্যি বেচে ফেলবেন?

    আমি ঝাঁঝালো সুরে বললাম, ‘তবে কী? তোমার ধারণা, আমি তোমার সঙ্গে খোশ-গল্প করার জন্যে এখানে এসেছি?’

    ‘তাহলে কত দিতে হবে, বলুন।’

    ‘তুমিই বল।’

    ‘সত্যি করে বলব?’

    ‘হ্যাঁ, সত্যি করেই বল।’

    ‘সত্যি করে বলব?’

    ‘বললাম তো, সত্যি করেই বল। খামোখা কথা বাড়াচ্ছ কেন?’

    ‘তিন টাকা দিতে পারি।’

    আমার রক্ত গরম হয়ে একদম মাথায় চড়ে গেল। রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগল আমার সারা শরীর। বললাম, ‘নীচ, ছোটলোক কথার তুবড়ি ফুটিয়ে তুই আজ আমার যে অপমান করলি, সেজন্যে আমার দুঃখ নেই। কিন্তু এই নিরীহ, অবোলা সাইকেলটার মনে তুই যে কষ্ট দিয়েছিস, সেজন্যে আমি তোকে রোজ-হাশরের দিন পর্যন্ত ক্ষমা করব না।’ এই বলে আমি তাড়াতাড়ি সাইকেলে চেপে, বেপরোয়াভাবে প্যাডেল চালিয়ে ছুটতে লাগলাম।

    ততক্ষণে সাইকেল আমার কুড়ি-পঁচিশ পাক ঘুরেছে, কি ঘোরেনি– এমন সময় কেমন যেন একটা কাণ্ড হয়ে গেল। আমি মাটি থেকে পৃথক হয়ে শূন্যে উঠে গেলাম আর আকাশটা আমার দু-পায়ের ফাঁক দিয়ে নেমে গেল নিচে। আর দেখলাম, রাস্তার ধারের বাড়িগুলো পরস্পর জায়গা বলাবলি করছে। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম, আমি মাটির উপরে বসে রয়েছি। আমার এই বসে থাকা এতই স্বাভাবিক আর নিশ্চিন্ততা-মিশ্রিত যে, এ যেন রাস্তা নয়, বরং আমি বসে রয়েছি আমার বৈঠকখানার বারান্দায়। এমন একটা স্বাভাবিক ব্যাপারের আমি কেন্দ্রবিন্দু, অথচ বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে রয়েছে যারা, তারা হাসছে। হাসির কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে দেখলাম, সাইকেলের সামনের চাকাটা গড়াতে গড়াতে গিয়ে পড়েছে রাস্তার ওই মাথায়, আর বাদ-বাকি আমার কাছেই স্তূপাকারে পড়ে রয়েছে।

    আমি তাড়াতাড়ি মাটি থেকে উঠলাম। রাস্তার ওই মাথা থেকে চাকাটা নিয়ে এলাম। স্তূপের মধ্য থেকে বাদ-বাকি অংশ এ-হাতে, ও-হাতে, বগলের তলায়, গলায় ঝুলিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে দিলাম।

    সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দৃষ্টিবাণ আর বাক্যবাণের পরোয়া না করে চলতে লাগলাম মাথা উঁচু করে। যারা হাসছে, তারা হাসুক। এমন বেহুদা লোক শুধু এ দেশে কেন, সব দেশেই পাওয়া যায়।

    আমি হাঁটছি, আর তাদের মন্তব্য আমার কানে ভেসে আসছে : ‘রাগ করে আর কী করবেন– হজম করে ফেলুন।’

    ‘নির্লজ্জ সাইকেল, চল্ তো বাড়ি, তারপর মজাটা টের পাওয়াব!’ একজন পিতা তাঁর পুত্রকে বললেন, ‘দেখেছিস, বাবা– এ হল সার্কাসের সাইকেল। দুই চাকাই আলাদা করা যায়।’

    আমার চলতে থাকায় তবু বিরতি নেই। এইভাবে চলতে চলতে জনবসতি শেষ হয়ে পেছনে রয়ে গেল। নদীর উপরের পুলটায় পৌঁছে গেলাম। পরম নিশ্চিন্তে একটা একটা করে আমার সাইকেলের সব অংশ এমনভাবে নদীতে ফেলে দিলাম, যেমন করে কেউ চিঠি ফেলে লেটার-বক্সে।

    অনুবাদ : নেয়ামাল বাসির

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমার বোকা শৈশব – আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
    Next Article এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে – আবদুল্লাহ আল-মুতী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }