Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শ্রেষ্ঠ উর্দু গল্প – সম্পাদনা : শহিদুল আলম

    লেখক এক পাতা গল্প766 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪.০৮ রাজকুমার – কৃষণ চন্দর

    রাজকুমার – কৃষণ চন্দর

    সুধাকে সুন্দরী যেমন বলা যায় না, তেমনি কুরূপাও বলা যায় না। এমনি একটা সাধারণ মেয়ে ছিল সে। শ্যামলা রঙের পরিচ্ছন্ন মেয়েটির শান্ত মেজাজ, তবে গৃহকর্মে নিপুণা। রান্নাবান্না, সেলাই-বুননি, লেখাপড়ায় দারুণ ভালো। কিন্তু সুন্দরী ছিল না– চাঞ্চল্যও ছিল না তার। এমনকি পুরুষের মনকে আকর্ষণ করতে পারে এমন কোনও বস্তুই তার অবয়বে ছিল না। সে ছিল একটি লাজুক শান্ত মেয়ে। ছেলেবেলায় একাই খেলা করত, মাটির পুতুল বানাত আর সেই পুতুলের সঙ্গেই কথা বলত। পুতুলটাকে একপাশে বসিয়ে খেলা করত। অন্য কোনও মেয়ে তার কাছে এলেই সে পুতুলের সঙ্গে কথাবলা বন্ধ করত। কোনও দুষ্টু ছেলে তার খেলাঘর ভেঙে দিলে সে নীরবে কাঁদত। একটুপর আপনা-আপনি চুপ করত। আবার নতুন খেলাঘর তৈরি করত।

    কলেজেও তার বন্ধুবান্ধব বলতে কেউ ছিল না। তার লাজুক স্বভাব সে এখনও সঙ্গে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তার মাতাপিতার দারিদ্র্য যেন তার লজ্জাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তার পিতা চাঁদনিচকের জীবনরাম নাথুমলের ঘড়ির দোকানে ত্রিশ বছর যাবৎ সেলসম্যানের চাকরি করে আসছে। তার এমন সামর্থ্য ছিল না যে মেয়েকে কলেজে পড়াতে পারে। তা সত্ত্বেও মেয়ের যাতে যোগ্য বর জোটে সেই আশায় সুধাকে সে কলেজে দিয়েছে। তার মনে অনেক সময় আশারও উদয় হত যে কলেজের কোনও ছেলেই হয়তো তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে। কিন্তু যখনই সে সুধার দিকে তাকিয়ে দেখত তখন সুধার ঘাড়-ঝোঁকানো চাল, শুকনো বুক, আর স্থির চোখ ও মৌনভাব দেখে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করত। তার পর আবার সে চুপচাপ হুঁক্কা টানতে শুরু করত।

    ‘সুধার জন্যে বর ধরে আনতে হবে’, কিন্তু এতে বিপত্তি হল এই যে এ-ধরনের বরেরা অনেক যৌতুক দাবি করে। কিন্তু তার অবস্থা এমন যে, অনেক তো দূরের কথা, কম যৌতুকও দেওয়ার সামর্থ্য নেই। চিন্তায় দোল খেতে-খেতে সে এ-চিন্তাও করেছে– আজকাল ভালোবাসাবাসিতেও তো অনেক বিয়ে হয় আর খুব সস্তায়ই হয়। এই তো মালিকরামের মেয়ে গোপীকেই দ্যাখো না– বাপ তো হেল্‌থ্ মিনিস্ট্রির তৃতীয় শ্রেণির কেরানি, কিন্তু মেয়ের বিয়ে হল লাখপতি ঠিকাদারের সঙ্গে। ছেলেটা গোপীর সঙ্গে কলেজেই পড়ত। বাপ থাকে সরকারি কোয়ার্টারে আর মেয়ে এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়িতে চেপে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসে। তবে গোপী তো খুব সুন্দরী মেয়ে। আর আমাদের সুধা! সে তো তার মায়ের মতোই অতিসাধারণ।

    ওর জন্যে তো কোনও বর ধরে আনতেই হবে। যেমন সুধার মায়ের জন্যে তার মা আর আত্মীয়স্বজনরা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

    সুধার মা দু-এক জায়গায় কথা চালিয়েছিল– কিন্তু তারা আর এগোয়নি। তবে একবার একটু জোরেশোরে ধরা হতেই একটা ছেলে সুধাকে দেখতে এসেছিল। কিন্তু সে সুধাকে পছন্দ করল না। ছেলেই-বা কী সুন্দর ছিল! মুখে বসন্তের দাগ, রোগা টিনটিনে চেহারা। কথা বলতে তোতলায়, রঙ কালোজামের মতো। কিন্তু বউটি চাই সুন্দরী। আর যৌতুক চাই স্কুটার একটা। কিন্তু সুধার বাপ তো একটা সাইকেল দিতেও অপারগ। তাই আর কথা এগোয়নি।

    কিন্তু সুধার বাপের তো এটা জানা ছিল না যে, এই রোগাপটকা কুৎসিত লোকটার অপছন্দ হওয়ায় সুধা নিজে কত সুখী হয়েছিল। তার পর দুবছরে আরও দুটো ছেলে সুধাকে দেখে ফিরে গেছে এবং বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এতে সুধা খুবই স্বস্তি পেয়েছিল। সুধা ওপরে যতটা শান্ত ছিল, ভেতরে ছিল ততটা উত্তপ্ত। কেউ জানত না সুধার কল্পনার দৌড়। বাইরে থেকে একটা সাদামাটা মেয়ে মনে হলেও সে ভেতরে ভেতরে এক রঙিন স্বপ্নের জীবনে বাস করত। সে জীবন এই সংকীর্ণতা ও অন্ধকারময় বন্ধ জীবন থেকে চাকচিক্যময় ও উজ্জ্বল। এ খবর তার বাপ জীবনরামও জানত না আর তার মা মঘিও খবর রাখত না। কিন্তু সে তার মনের গহনে এক উজ্জ্বল জীবন লুকিয়ে রেখেছিল– যেমন ছিন্নবস্ত্রের অঞ্চলে রত্ন বাঁধা থাকে। আর এটা তো আমাদের ট্রাডিশন যে, একজন নোংরা কাপড় পরা বেনিয়াকে দেখে কেউ কি ধরতে পারে যে তার থলের মধ্যে কতটা সোনা আছে? সুধাও খুব লাজুক মেয়ে ছিল, তাই কাউকে মনের কথা বলত না। লোকে শুনে হাসবে যে! আরও কত কথা সে ভাবত, কলেজের সুন্দরী মেয়েরা যদি তার এই মানসিক ঐশ্বর্যের কথা জানতে পারে, তা হলে তারাও বিস্মিত হবে। আর যেসব যুবক বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে চলে তারা যদি মনের খোঁজ পায়, তা হলে! তারা তো সুধার দিকে ফিরেও চায় না। আর একথাও সত্যি, হাতে ধোওয়া সালওয়ার, কুঁচকানো কামিজ- এমন মেয়ের দিকে কেউ তাকাবে কেন? আর সুধাই-বা কেন তার মনের অতল সম্পদের কথা তাদের জানাবে?

    .

    জীবনরাম কখনও কখনও তার স্ত্রীকে বলে, ‘কী মেয়েই-না জন্ম দিয়েছ? সারাদিন চুপ করে থাকে, কোনওদিকে তাকায় না, খালি কাজ আর কাজ। মুখে হাসির লেশও নেই। দ্যাখো না কপুর সাহেবের মেয়েদের? কেমন ফুলের মতো ভুরভুর করে। সারা বাড়ি গুলজার করে রাখে আর তোমার সুধা’… জীবনরাম খবরের কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দাঁড়িয়ে থাকে।

    তার স্ত্রী বারো আনা সের দরের চালের ভাত আর পানির মতো পাতলা ডাল স্বামীর খাবার টেবিলে রেখে বলে, ‘ওদের কথা বল না। ওদের বাপ সুপারিন্টেন্ডেন্ট। মাসে চারশো টাকা ঘরে আনে। আমার সুধার মাত্র দুটো কামিজ। কপুর সাহেবের মেয়েরা দিনে দুবার কাপড় বদলায়। এটা কখনও ভেবেছ?’

    জীবনরাম দাঁত পিষে চুপ করে থাকে। তার মনে নানা প্রশ্ন জাগে… এই চাল এত মোটা কেন? আর ডাল এত পাতলা কেন? তার স্ত্রী সবসময় খিটমিট করে কেন? তার মেয়েটা কেন চুপ করে থাকে? লোকে যৌতুকে স্কুটার কেন চায়?

    এমনি অনেক প্রশ্ন তার পাতলা ডালের দানাগুলোর মতো মগজের মধ্যে কিলবিল করতে লাগল। কিন্তু যখন কোনও প্রশ্নেরই জওয়াব পাওয়া গেল না তখন সে প্রশ্নগুলোকে পাতলা ডালের মতো এক চুমুকে গিলে ফেলাই যুক্তিযুক্ত মনে করল।

    .

    আই.এ. পাস করিয়ে জীবনরাম সুধাকে কলেজ থেকে ছাড়িয়ে আনল। ‘আমি এফোর্ড করি না’, জীবনরাম তার সঙ্গী তোতারামকে বলল –সে সেবামল দুমল ক্লথ মার্চেন্টের ওখানে চাকরি করত। সে অতিসহজেই বলতে পারত যে কলেজে পড়াবার ক্ষমতা নেই। কিন্তু ক্ষমতা শব্দটা কত স্পষ্ট আর পরিষ্কার। যেন কেউ তার মাথায় গুনে গুনে সাতটা জুতোর বাড়ি মারল–আর ‘এফোর্ড’ শব্দটা কত ব্যাপক। এমনি করে দেশি ভাষার সঙ্গে বিদেশি ভাষার সংমিশ্রণে অনেকটা আবরু থাকে। যেমন বাড়িতে যখন ঝগড়া হচ্ছে, তখন আগন্তুকের আগমনে তার ওপরও পর্দা পড়ে।

    ‘তোমার বেলা তো এখনও কলেজে পড়ছে, তাই-না?’ সে তোতারামকে জিগ্যেস করল।

    ‘হ্যাঁ’, তোতারাম ঠিক তোতাপাখির মতোই ককিয়ে উঠল, ‘আগামী শীতে তার বিয়েও হয়ে যাচ্ছে।

    ‘ছেলের খোঁজ করেছ?’ জীবনরাম শুষ্ককণ্ঠে বলল।

    ‘হ্যাঁ’। তোতারাম এবার কোকিলের মতো বলে উঠল, ‘সে নিজেই খোঁজ করে নিয়েছে। একসঙ্গেই পড়ে। ছেলেটা অবস্থাপন্ন।’

    তোতারাম যাওয়ার পর সে তোতারামের কণ্ঠস্বরকে ভেংচি কেটে বলল, ‘নিজেই বর খুঁজে নিয়েছে!’ তার পর মাটিতে থুতু ফেলে বলল, ‘হারামজাদা!’

    দু বছর অতীত হল। আসিফ আলি রোডের একটা ফার্মে সুধা টাইপিস্ট। সে আগের চেয়ে আরও মৌন, ব্যক্তিত্বশালিনী ও পরিশ্রমী হয়েছে। সংসারের অবস্থাও ভালো হয়েছে আগের চেয়ে। কারণ সুধা মাসে একশো টাকার ওপর রোজগার করছে। অফিসের কাজের শেষে সে স্টেনোর কাজও শিখছে। বি.এ. পরীক্ষা দিতেও ইচ্ছুক সেইসঙ্গে। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য হওয়ায় জীবনরাম ও মঘি ।এবার জোরেশোরে সুধার জন্যে বর খুঁজতে শুরু করল। তারা সুধার রোজগার থেকে স্কুটারের জন্যে পয়সা জমাচ্ছে।

    .

    অনেক চেষ্টার পর জীবনরাম এক ছেলের বাপকে স্কুটারের লোভ দেখিয়ে আটকাতে সক্ষম হল। আনুষ্ঠানিক খরচ, বিয়ের মূল খরচ, যৌতুক, নগদ টাকা, গয়নাগাঁটি সবকিছু স্থির হওয়ার পর ছেলে তার ভাবী বধূকে দেখতে চাইল। ছেলেটির নাম মোতি। আর দেখতে-শুনতে মোতির (মুক্তো) মতোই সুন্দর ছিল।

    যখন দেখতে এল তখন তার পরনে ছিল গাঢ় ব্রাউন রঙের স্যুট। সোনালি গায়ের রঙের ঘন কালো কোঁকড়ানো চুল খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিল। শার্টের আস্তিনের বাইরে তার সবল হাতদুটো দেখা যাচ্ছিল। সে যখন একটু হাসিমুখে সুধার দিকে তাকাল তখন সুধার মনে এতদিনকার জমাট বরফ যেন হঠাৎ গলে গেল। তার হাতের চায়ের কাপটা কেঁপে উঠল। অতিকষ্টে সে মোতিকে চা দিল।

    মোতি চা খেয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে অতিশয় বিনয়ের সঙ্গে প্রস্থান করল। সঙ্গে তার বোনেরা ছিল। পরদিন সেই বোনেরাই খবর দিল– মেয়ে পছন্দ হয়নি। সে রাতে সুধার ঘুম হল না। সারারাত মোতির সুন্দর চেহারা, সেই হাসিমুখ, তার হাতের সামান্য ছোঁয়া তাকে যেন সুড়সুড়ি দিয়ে জাগিয়ে রাখল।

    ‘মেয়ে পছন্দ হয়নি! হুঁ!’ মগ্‌ঘি কড়াইতে তরকারি চাপিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল, ‘নিজে যেন একেবারে কন্দর্প! গায়ের রঙের দেমাক কত! তবে নিজের নাকটা দেখে না! আর নিগ্রোদের মতো কোঁকড়ানো চুল। আর বোনগুলো কী! একেবারে মেথরানির মতো দেখতে– তার ওপর রঙের পোঁচ। মাথায় চুলগুলো দেখলে মনে হয় মাথায় একটা বস্তা চাপিয়েছে। মেয়ে পছন্দ হয়নি! হুঁ!’ বলেই সে জোরে তরকারি নাড়া দিল। মনে হল যেন তরকারি নয়–ছেলেটাকেই রাঁধছে কড়াইয়ে চাপিয়ে।

    বাড়ির লোকেরা বা পাড়া-প্রতিবেশী এবং অফিসের সহকর্মীদের এই ধারণা ছিল যে, সুধার কোনও অনুভূতিই নেই। তাছাড়া অফিসের কাজে সে বেশ দক্ষ। কারও সঙ্গে প্রেমপ্রীতির ভাব ছিল না। ধীর ধীরে তার চোখদুটো মলিন হতে লাগল, ঠোঁট নীরব হয়ে চেহারা ধোঁয়াটে হয়ে চলল। তার চেহারা এমন হয়ে গেল যা দেখলে বরফখণ্ড বলে মনে হত। কেরানিরা পরস্পর বলাবলি করত, সুধাকে যে বিয়ে করবে তাকে আর পাহাড়ে যেতে হবে না।

    তাই মোতি যখন তাকে পছন্দ করল না তখন সুধার প্রতিক্রিয়া কী হল, তা কেউ জানতে পারল না। এই প্রথম সে একজনকে মন দিয়েছিল, আর তা কেউ জানত না। জানবেই-বা কী করে? সে কি কাউকে কিছু বলত?–আমাকে যে দেখতে এসেছিল তাকে আমি মন দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাকে পছন্দ করেনি।– আর সবাই তো প্রেমে পড়লে কাঁদে কিন্তু সে বেচারি তো কাউকে কিছু বলে না।

    সেদিন অফিসে সুধা ওভারটাইম কাজ করল। সন্ধ্যা হতেই সে অফিস থেকে বের হল এবং তার কালচে রঙের পার্সটা হাতে ঝুলিয়ে কাছেই আসফ আলি পার্কে গিয়ে একটা বেঞ্চে একা একা বসে রইল। পার্কটা দিল্লি-গেটের পাশেই এককোণে অবস্থিত। কয়েকটা গাছ আর কয়েকটা বেঞ্চ ছিল এই পার্কে। কয়েক টুকরো ঘাসের চাতাল– পাশেই ট্রাফিকের হই-হল্লা। আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি নীরব ছিল জায়গাটা। সুধা রোজই এখানে আসত, কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিয়ে তবে বাড়ি যেত। কিছুক্ষণের জন্য সে তার কল্পনার দুনিয়ায় ডুবে যেত। একাকিত্বকে সে ভয় পেত না। এই একাকিত্বই তার একমাত্র আশ্রয় ছিল। অন্ধকারেও সে ভয় পেত না। বরং অন্ধকারই তার প্রিয় বন্ধু ছিল। গুণ্ডাদের ভয়ও সে করত না। তার স্বভাবে কী এমন বৈশিষ্ট্য ছিল যে গুণ্ডারাও দূর থেকে দেখেই সটকে পড়ত। পাশ কাটিয়ে চলে যেত।

    আজ অন্ধকার খুব গাঢ় ছিল। গাছের নিচে নীরবতাও বেশি অনুভূত হচ্ছিল। পাথরের বেঞ্চটাও অধিকতর ঠাণ্ডা লাগছিল। সুধা কয়েক মিনিট বেঞ্চের উপর বসে রইল। কিন্তু তার শ্রান্তি দূর না-হওয়ায় একটা গাছের নিচে গিয়ে গুঁড়ির সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসে পড়ল। তার চোখ বুজে এল।

    .

    হঠাৎ কে যেন বলে উঠল, ‘তুমি এখানে একা বসে কী করছ?’

    সুধা চোখ মেলে তাকাল। মোতি পাশে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। সেই সুন্দর ব্রাউন স্যুট পরা। তেমনি ধবধবে সাদা দাঁতগুলো চকচক করছে।… তার হাতগুলো কী সুন্দর! সুধার গলায় যেন কী আটকে গেল– সে কথা বলতে পারল না।

    মোতি তার পাশে এসে বসল। এত কাছে যে তার প্যান্ট সুধার শাড়ি স্পর্শ করল। সে ধীরে ধীরে জিগ্যেস করল, ‘আমি অপছন্দ করায় তুমি রাগ করেছ?’

    সুধা আস্তে মাথা নাড়ল। তার চোখে পানি।

    ‘খুব খারাপ লাগছিল, তাই-না?’

    সুধা আবারও মাথা নেড়ে সায় দিল। এবার তার চোখের পানি গাল বেয়ে পড়তে লাগল। সে কাঁদল…।

    মোতি তার কোটের পকেট থেকে রুমাল বের করে সুধার চোখ মুছে বলল, ‘এতে কান্নার কী আছে! প্রত্যেক লোকেরই পছন্দ-অপছন্দের অধিকার আছে। তাই না?’

    ‘কিন্তু তুমি তো আমার কিছু দ্যাখোনি। আমার হাতের ফুলকো লুচি বা মটর-পোলাও তো খাওনি। তুমি কি আমার মনের ব্যথা বুঝবার চেষ্টা করেছিলে? আর সেই অনাগত শিশু– তোমাকে দেখামাত্রই যে আমার গর্ভাশয়ে স্পন্দিত হয়ে উঠেছিল? তুমি সেই হাতটাও দ্যাখোনি যে তোমার পা ধুইয়ে দিত– যে তোমার জামার বোতাম সেলাই করে দিত। তুমি আমার গায়ের রঙ দেখেই ভড়কে গেলে? সেই সুন্দর সোয়েটার –যেটা তোমার জন্যে বুনতাম তার রঙটার কথা চিন্তা করলে না? মোতি! তুমি আমার হাসি দ্যাখোনি, কান্নাও দ্যাখোনি, তোমার মাথার চুলে আমার আঙুলের স্পর্শও পাওনি। আমার কুমারী দেহকে তোমার সুডোল বাহুবন্ধনে কম্পিত হতেও দ্যাখোনি। তবে কী করে তুমি আমাকে অপছন্দ করলে?’

    আরে বাপ… এত লম্বা বক্তৃতা সে অনায়াসে কীভাবে দিল! তার শুধু এটুকুই জানা ছিল যে সে কাঁদছে, আর তার মাথাটা মোতির কাঁধে ভর দেওয়া আছে। আর মোতি লজ্জায় মুখ নামিয়ে আস্তে আস্তে তার কাঁধে হাত বোলাচ্ছে।

    .

    সেদিন খুব দেরিতে সে বাড়ি ফিরল। মা জিগ্যেস করায় সে লাপরোয়াভাবে বলে দিল, ‘অফিসে দেরি হয়েছে।’ তার পর হাতের ব্যাগটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে বেশ ভারিক্কি গলায় খাবার চাইল। ফলে তার মা চমকে উঠল, এমনকি বাপও। আজ সুধার কান্নাভেজা চোখের অতলে যেন এক আনন্দের প্রবাহ চলছে– যেন নিবিড় মেঘমালায় অশনি সংকেত।

    সুধার মা ঠোঁট কামড়ে তার স্বামীর দিকে বাঁকাচোখে তাকিয়ে রইল যেন সে অনেককিছু বুঝে ফেলেছে। জীবনরামও এক মুহূর্ত মেয়ের দিকে স্নেহাপ্লুত চোখে তাকিয়ে রইল। তার পর খাবারে মন দিল।

    নিশ্চয়ই কোনও ব্যাপার আছে। আর যেহেতু সুধা নারী, তাই এই রহস্যের অন্তরালে কোনও পুরুষের অবস্থান অবশ্যম্ভাবী বলেই স্বামী-স্ত্রী আন্দাজ করে নিল।

    কিছুদিন পরে সেই সন্দেহ আরও দৃঢ়তর হল। মঘি তার এক বান্ধবীকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়িতে এনেছিল মেয়ে দেখাতে। কিন্তু এবার ছেলেকে ‘না’ বলতে হল না– সুধাই বিয়ে করতে অস্বীকার করে বসল। তখন সুধার মা আরও চমকে উঠল– নিশ্চয়ই সুধার সঙ্গে কারও ব্যাপার-স্যাপার চলছে।

    এবার সে মেয়ের জন্যে যৌতুক গোছাতে লাগল আর জীবনরাম হুঁক্কা টানতে টানতে চিন্তা করতে লাগল, কবে সেদিন আসবে যেদিন সুধা এসে তার মাকে খবরটা শোনাবে আর জীবনরাম ক্রোধান্ধ হয়ে সুধাকে ধমক দেবে, গালি দেবে– তোর এত সাহস! আমাদের লুকিয়ে নিজেই বর পছন্দ করেছিস! বাড়ি থেকে বের করে দেব– পিঠের চামড়া তুলে ফেলব। বংশের সুনাম নষ্ট করলি…! তার পর সে স্ত্রীর অনুরোধে শান্ত হয়ে হুঁক্কা টানতে টানতে জিগ্যেস করবে– কে সে? যেই হোক-না সে, সুধা বলা মাত্রই সে তার হাত বাড়িয়ে দেবে। পঁচিশ বছর হয়ে এল, আর কতদিন ঘরে রাখা যায়!

    কিন্তু দিন যায়, মাস-বছর পেরিয়ে যায়, সুধা কিছুই বলে না। তারা অপেক্ষা করছে, কিন্তু পোড়ারমুখী কিছুই বলে না। অবশেষে শ্রান্ত হয়ে তারা আবার মেয়ের জন্যে বর খুঁজল, কিন্তু সুধার সেই একই কথা– বিয়ে করব না।

    শেষ বরটা তার বাপ খুঁজে এনেছিল –সে হল একজন মিষ্টান্নবিক্রেতা। বয়েস চল্লিশ পেরিয়েছে।

    সেদিন গোধূলির পরে আবছা অন্ধকারে গোলাপগন্ধী সন্ধ্যায় সুধা মোতিকে বলল, ‘ওরা আজ একজন বড়ো মিঠাইঅলাকে ধরে এনেছিল আমার জন্যে।’

    ‘তার পর?’ মোতি জিগ্যেস করল।

    ‘আমি সোজাসুজি বললাম বিয়ে করব না।’

    ‘আরে পাগলি, তা বললে কেন? বিয়ে করতে, আর সারাজীবন মিষ্টি-হালুয়া খেতে।’

    ‘আর তোমাকে ছেড়ে দিতাম?’ সুধা অভিমানভরা চোখে তাকাল মোতির দিকে। মোতি তার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আমি তো এখনও তোমাকে বিয়ে করিনি। ‘তাতে কী?’ সুধা মোতির মুখে মুখ লাগিয়ে বলল, ‘তুমি তো আমারই। বিয়ের চেয়েও বড়। সবসময় তুমি আমার আয়ত্তে আছ। যেন…’

    মোতি হেসে বলল, ‘তা ঠিক। আমি সম্পূর্ণরূপে তোমার মুঠোয়। যখন ইচ্ছে, ডাকলেই চলে আসব।’

    ‘প্রথমদিকে তো এমন ছিলে না।’ সুধা মোতির চঞ্চল চোখে তাকিয়ে বলল, ‘তখন তো অনেক দেরি করে আসতে।’

    ‘প্রথমে তো এত গভীর ভালোবাসাও ছিল না। আর কারওর অন্তরকে বুঝতে তো সময়েরও প্রয়োজন আছে।’ মোতি সুধার কানে কানে বলল, আর সুধা আবেশে চোখ বন্ধ করল। পরে যেন তার মুখে মোতির তপ্ত শ্বাস ও চুম্বনের স্পর্শ অনুভূত হল।

    ‘কাল কোথায় দেখা করবে?’

    ‘তুমি যেখানে বলো, লাভার্স লেনে।’

    ‘উঁ হুঁ।

    ‘কোটলায় ঘোড়দৌড় হচ্ছে এখন।’

    ‘আমি কি ঘোড়া কিনব নাকি?’ সুধা হাসল।

    ‘ওল্ড হলে সাহিত্য সম্মেলন হবে।’

    ‘না, না!’ সুধা কানে হাত দিল।

    মোতি চুপ করল এবার।

    তার পর সুধা বলল, ‘কাল ছবি দেখব। ‘বসন্ত’ সিনেমায় খুব ভালো ছবি আছে। আমি দুটো টিকেট কিনব। ঠিক পোনে ছ’টায় তুমি এসো।’

    ‘টিকেট আমিই কিনব।

    ‘না, এ ছবি তো আমি দেখাচ্ছি। তুমি নাহয় আরেকটা দেখিও। আমি কি মানা করেছি?… কিন্তু ভুলো না। কাল সন্ধ্যা পৌনে ছ’টায় ‘বসন্ত’ সিনেমার সামনে।’

    ‘বসন্ত’ সিনেমার বাইরে প্রচণ্ড ভিড়। সুধা দুটো টিকেট কিনল। এক প্যাকেট কিশমিশ আর বাদামও কিনল। ছবি দেখার সময় তার কিছু খাওয়ার অভ্যাস আছে। পৌনে ছ’টা বাজল। ক্রমে ছ’টা বাজল। প্রথম শো’র দর্শকরা বেরিয়ে গেল। দ্বিতীয় শো’র দর্শকরা হলে ঢুকল। চারদিকে আলো জ্বলছে। আর দারুণ ভিড়। ফেরিঅলা, রিকশা-টাঙ্গাঅলাদের হাঙ্গামা। মোতি আবার ভিড় ভালোবাসে না। হইচই পছন্দ করে না। সুধা তার মেজাজ চিনে নিয়েছে। সে চায় নীরবতা, অন্ধকার আর একাকিত্ব। মোতি খুবই ভাবপ্রবণ আর রুচিবান।

    সোয়া ছ’টায় সে সিনেমাহলে গিয়ে বসল। পাশের সিটের উপর রুমাল রাখল। কিশমিশ ও বাদামের প্যাকেটও শেষ হয়ে চলল। কিন্তু মোতি এল না। তার পর হলের আলো নিভে যেই ছবি শুরু হল, তখনই সুধা অনুভব করল, মোতি তার হাত দিয়ে সুধার হাত ধরেছে। অন্ধকারে নিঃশব্দে সে সুধার পাশে এসে বসেছে। সুধা তার হাতে চাপ দিয়ে বলল, ‘অনেক দেরি করেছ।’

    ‘সরি!’ মোতির কণ্ঠ বেদনার্ত।

    ‘তোমার জন্যে বাদাম আর কিশমিশ এনেছি। খাও।’

    মোতি কয়েকটা বাদাম ও কিশমিশ হাতে নিয়ে মুখে পুরল। সুধা এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ছবি দেখতে লাগল। এখন আর কথা বলার সুযোগ ছিল না। তবে অনুভব করছিল, মোতি তার হাত ধরে আছে। আর কখনও কখনও সে মোতির কাঁধে মাথা রেখে মনকে শান্ত করছে।

    মোতি তার কানে কানে বলে, ‘আমার কাঁধে মাথা রেখে তুমি কী দেখছ? ছবি তো দেখা যায় না!’

    ‘যে-ছবি আমি দেখতে পাই, তা আর কারওর নজরে আসে না।’ সুধা আন্তরিকতার সঙ্গে বলল।

    .

    ধীরে ধীরে সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করল যে সুধার মলিন চোখদুটো ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ভুরুতে কাজল পরলে সে চোখ আরও ধারালো হয়ে যায় তলোয়ারের মতো। বুকের মাংসও ফুলে উঠল, কোমর সরু হতে লাগল আর গতিতে এল অনিন্দ্য ছন্দ। দিনে দিনে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে লাগল। কাপড় যদিও কম দামের ছিল, কিন্তু তা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং দক্ষ দরজির মতো সেলাই-করা। ভালো দরজি দিয়ে কাপড় তৈরি তো তার সাধ্যের বাইরে ছিল– কিন্তু সে নিজেই এ বিদ্যায় নৈপুণ্য অর্জন করল। তাই দেখা যেত, নতুন ডিজাইনের জামা সে প্রতিদিন পরত –যা অন্য কোনও মেয়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু এগুলো সে নিজেই তৈরি করেছে এমন কথা সে কোনও মেয়েকে বলত না। তার অফিসের কোনও মেয়ে জিগ্যেস করলে সে এমন এক দরজির নাম বলত, যেখানে বড়লোক ছাড়া আর কারও পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। অফিসের মেয়েরা একথা শুনে মনে-মনে জ্বালা অনুভব করত। তারা কখনও সুধাকে জিগ্যেস করে, ‘তোর স্বামী কেমন রে?’

    ‘খুব গোরা রঙ, কোঁকড়া চুল, হাসলে যেন মুক্তো ঝরে।’ সুধা জওয়াব দেয়।

    ‘কত মাইনে পায় সে?’

    ‘বারোশো।’

    ‘বারোশো!’ মেয়েরা বিস্মিত হয়। ‘বারোশো তো আমাদের ফার্মের ম্যানেজার পেয়ে থাকে।

    ‘সে-ও একটা ফার্মের ম্যানেজার।’ সুধা জওয়াব দেয়।

    ‘একদিন দেখাবি? আমরা দেখব, কেমন তোর…’

    ‘তা দেখাব-না কেন? বলিস তো অফিসেই একদিন ডেকে দেখিয়ে দিই।’

    এটা তার কথার কথা। সুধা মোতিকে দেখাবার পাত্রীই নয়। মরে গেলেও সে তার মোতিকে দেখাবে না। এসব মেয়েদের বিশ্বাস কী… কিন্তু তা সত্ত্বেও সুধা এমন আত্মনির্ভরতার সঙ্গে অফিসে ডেকে আনার কথা বলে যাতে মেয়েরা আর সাহসই করে না উচ্চবাচ্য করতে। তারা মনে-মনেই বলতে থাকে।

    .

    সুধার বাপ মনের জ্বালায় ভুগে মরে। কারণ সুধা বিয়ে করল না। পাড়ার লোকে নানা কথা বলে। সে মেয়েকে কিছু বলতেও পারে না। সুধা বড় হয়ে গেছে। তার ব্যক্তিত্ব আছে, তাছাড়া মাসে মাসে দুশো টাকা ঘরে আনে। অবশেষে সুধার বাপ মারা গেল। বাপ মারা যাওয়ার পর তার ভাইয়েরা বিয়ে করে নিজেদের পছন্দমতো ঘর বাঁধতে দূরে দূরে চলে গেল। তার পর তার ছোটবোনেরও বিয়ে হল। সুধার মা তার বড়মেয়ের অবস্থা দেখে আস্তে আস্তে রুগ্‌ণ হয়ে পড়ল এবং অল্পদিনের মধ্যে সে-ও মারা গেল। আর দুনিয়ার তাবৎ দুঃখ নিয়ে সুধা একাই রয়ে গেল।

    শেষে একদিন সে পুরনো বাড়ি ছেড়ে সিভিল লাইনে দোতলা বাড়ির দু-কামরাঅলা একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে লাগল। বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথটাও আলাদা ছিল। অতএব এ ব্যাপার সে স্বাধীন ছিল।

    এখন তার বয়েস পঁয়ত্রিশ হয়ে গেছে। কিন্তু তাকে অত বয়েসি বলে মনে হয় না। তার ঠোঁটে সদা হাসি লেগেই আছে। চোখে আনন্দের ঝিলিক। তা সত্ত্বেও তাকে দেখা যেত অত্যন্ত ভারিক্কি মেজাজের ব্যক্তিত্বশালিনী মহিলার মতো। এ সময়ের মধ্যে সে বি.এ. পাস করেছে। আর আছে তার বইপড়ার শখ। এখন সে সচ্ছল, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করে।

    কয়েক বছর আগে থেকেই সে সিঁথিতে সিঁদুর পরত আর কপালে দিত সোহাগিনীর টিপ। কিন্তু কেউ জানত না কোথায় এবং কার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তবে লোকে জানত একটা-কিছু হয়তো আছে। যার সঙ্গে সে সন্ধ্যা অতিবাহিত করে– এটাও জানত, হয়তো এমন কোনও কারণ আছে, যাতে তাদের বিয়ে হয়নি। তবে প্রতি সন্ধ্যায় তারা মিলিত হয়। আর যখন সবাই ঘুমিয়ে যায় কেউ কাউকে দেখতে পায় না– যখন সকলের চোখে ঘুম নেমে আসে সেই তন্দ্রাভরা মুহূর্তে কে যেন নিঃশব্দে এসে সুধার দরজার কড়া ধীরে ধীরে নাড়ে– এবং চুপিসারে ঘরে ঢুকে পড়ে। কেউ তাকে দেখেনি, তবু তারা সুধাকে কিছু বলত না, কারণ সুধা গম্ভীর প্রকৃতির ভদ্রমহিলা। তার মাথায় সিঁদুরের টিপ জ্বলজ্বল করছে। তাকে কোনও কথা বলবেই-বা কী করে!

    সুধার বয়স চল্লিশ হল। সেই সন্ধ্যার কথা সুধা ভুলতে পারছে না। সুধা মোতিকে নিয়ে মথুরা রোডে জাপানি গার্ডেনে গেছে। এটা বাগানের চেয়ে নৈসর্গিক উদ্যান বলে ভ্রম হয়। গোধূলি লজ্জাবতী কুমারীর মতো মুখ লুকিয়েছে। রাত তার শ্যামল আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে। আকাশে তারার মেলা। সুধা আজ একেবারে মৌন হয়ে আছে। মোতিও নীরব।

    মোতি এখনও তেমনি সুন্দর– যেমন যৌবনে ছিল সে। আজও সে নিত্যকার মতো সেই ব্রাউন স্যুট পরে আসে। তাকে দেখে মনে হয় মোতির জীবনে আসেনি কোনও পরিবর্তন– একমাত্র তার কানের পাশের চুলগুলোতে একটু সাদা ছোপ লাগা ছাড়া। আগের মতোই সে সুন্দর, আকর্ষণীয় আর সহৃদয় ছিল– যাকে দেখামাত্রই সুধার বুকে স্পন্দন শুরু হত। যেমন সেই প্রথমদিনে হয়েছিল।

    .

    মোতি তাকে বলল, ‘তুমি আমাকে বিয়ে করলে না কেন?’

    ‘একবার অস্বীকার করবার পর’, সুধা আস্তে আস্তে বলল, ‘তোমাকে বিয়ে করা যেত না– শুধু প্রেম করা যেত। তুমি জানবে কী করে যে যখনই তুমি অমত করলে তখন থেকেই তুমি আমার হয়ে গেলে আর এটা জানতে হলে নারীর মন দরকার।’

    ‘তুমি চল্লিশ বছরের হয়ে গেলে –এজন্যে দুঃখ হয় না যে তুমি আমাকে বিয়ে করলে না…?’

    একথা শুনে সুধাও নীরব হল। দীর্ঘ নীরবতার পর মোতির হয়তো মনে হল, সুধা মনে-মনে কাঁদছে।

    সে আস্তে করে ঘাড় দুলিয়ে ডাকল, ‘সুধা!’

    সুধাও তেমনি আস্তে বলল, ‘আমি ভাবছিলাম যে তোমাকে বিয়ে না করে আমি কী হারালাম। এমন কোনও সন্ধ্যা তোমায় বিনা কাটিয়েছি কি? মনে করো তো, কোথায় কোথায় না-ঘুরেছি তোমার সঙ্গে? যেখানেই তোমাকে ডেকেছি, সেখানেই তো তুমি হাজির হয়েছ আর যখনই ডেকেছি তখনই কাজকাম ছেড়ে তুমি কি আসতে বাধ্য হওনি? বিয়ের মানে যদি সঙ্গলাভ হয়, তা তো আমি পেয়েছি।’

    আবার একটু চিন্তা করে বলল, ‘এই দীর্ঘ সঙ্গলাভে কোনওদিনই তোমার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়নি। বরাবর তোমাকে সেই হাসিমুখেই আমি দেখেছি। বছরের-পর-বছর ধরে তোমার হাতকে আবশ্যক হলেই আমার হাতের মুঠোয় পেয়েছি, তার স্পর্শের উষ্ণতা আমার দেহের প্রতি রোমকূপে অনুভূত হয়েছে। তোমার দেওয়া ফুল আমার খোঁপায় শোভা পেয়েছে। তোমার চুম্বন আমার ওষ্ঠে লেগেছে। তোমার একনিষ্ঠতা আমার অন্তর ভরে দিয়েছে। কোনও মেয়ে প্রেমের বদলে এর চেয়ে বেশি কী পেতে পারে, তুমিই বলো?’

    সুধা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সারাদেহ এলিয়ে দিল মোতির বাহুতে। মনে হল, মোতির দু বাহু নয়– চারটি অথবা আটটি– আর সে তার দেহ ও মন দিয়ে অনুভব করল তার উষ্ণতা, সে বাহুলতাকে আকর্ষণ করে তাকে বক্ষলগ্ন করল। সুধা তার সমস্ত সত্তা সেই বাহুবন্ধনে সমর্পণ করে দিল। যেমন চাঁদের আলোয় ফুলের কলি ফোঁটার জন্যে উন্মুখ হয়ে ওঠে– তার দেহও যেন মোতিকে গ্রহণ করার জন্যে তেমনি উন্মুখ হয়ে উঠল। মিটমিটে তারার আলোয় গাছের সবুজ পাতার ঝালরের মাঝখান দিয়ে চাঁদ উঁকি দিল।

    চাঁদের আলো তার চুলে, চোখে, ঠোঁটে ও মুখে এসে পড়ল– আর জোছনার লহর যেন তার রক্তে তরঙ্গ তুলল। হায় আমার মোতি– মোতিহার-মোতিচুর- আমার মিষ্টান্ন– আমি তো তোমারই–

    একটু পরে যখন সুধা চোখ মেলে তাকাল তখন তার চোখের ঔজ্জ্বল্য ও মদির ভাব দেখে মনে হল মোতি এখনই তাকে ভালোবাসা জানিয়ে গেল।

    সেই সন্ধ্যা– সেই রাত –সুধার কাছে ভুলবার নয়। কারণ সে রাতেই সে-পূর্ণতা লাভ করে। এবং তাদের ভয়ের জীবনও পরিপূর্ণ হয়। যেমন সময়, বয়স, চাঁদের আলো ও আবেগ এক বৃন্তে এসে উপনীত হয় এবং আবেগের একটা কণাও যেন ছিটকে বাইরে না-যেতে পারে। এমন মুহূর্ত মানুষের জীবনে কখন কীভাবে আসে, কারই-বা আসে– আর এলেও সে তার প্রভাব রেখে যায়– যা শুধু অনুভবই করা যায়। মনে হয়– এই মুহূর্তটুকুর জন্যেই আমি বেঁচে ছিলাম এতকাল। সম্ভবত সুধাও এ মুহূর্তে তাই অনুভব করল– আর কখনও এমনভাবে অনুভব করেনি সে।

    .

    এর কয়েকদিন পরই সুধার অফিসের ম্যানেজার বদলি হয়ে গেল– আর তার জায়গায় যে এল তাকে সুধা মোটেও সহ্য করতে পারছিল না। একে তো লোকটা কুৎসিত দর্শন– এককালে হয়তো তার রঙটা ফর্সাই ছিল কিন্তু এখন তো পোড়া তামার মতো হয়েছে। আর নাকটা কী মোটা! তার ওপর অতিরিক্ত মদ খাওয়ার দরুন সেই নাকের ওপর রগগুলো নীল সুতোর জাল বুনেছে। তার নাক দেখেই সুধার মনে হয়, এটা নাক নয়– এটা বড় ডুমুর– হয়তো কথা বলতে বলতে এখনই ফেটে যাবে। থুতনি আর চিবুকের চামড়া ঝুলে পড়েছে। চোখের চারপাশে কালি-লেপা। মাথার চুল ঝরে গেছে। আর কথা বলতে গেলে মনে হয়, যেমন কোনও বুড়ো ব্যাঙ শ্যাওলা-ধরা পুকুরের মাঝে নড়াচড়া করছে। দারুণ ঘৃণা হয় তাকে দেখলে। আরও মুশকিল হল সুধার, এতদিন কাজ করতে করতে সে এখন হেড-স্টেনো হয়ে গেছে। তাকে সবসময়ই থাকতে হয় ম্যানেজারের ঘরে। তার চেয়েও বিপদ হল, এই কুৎসিত চেহারার লোকটাকে সে আরও যেন কোথায় দেখেছে– চেহারাটা চেনা-চেনা। কিন্তু কোথায়? স্মৃতির ওপর জোর দিয়েও সে মনে করতে পারে না।

    নিজের মনেও সে ভাবে, এই মড়াটাকে সে হয়তো কনাট প্লেসে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে। কিন্তু যখনই সেই ম্যানেজার ফাইলটা তুলে নিয়ে সুধার টেবিলে রেখে হাত দোলায় তখন সুধার মন চঞ্চল হয়ে পড়ে। সে চিন্তা করে, লোকটা কে? কে এমন করে চলাফেরা করত? আমার মৃত পিতা? অথবা কোনও ভাই? যার কথা আমার মনে পড়ে! চিন্তা করে সে কূল পায় না। পরক্ষণেই নিজের কাজে মন দেয়। কিন্তু সারাদিন মন জ্বলতে থাকে।

    .

    মাস পয়লায় সবাই মাইনে নিয়ে চলে গেল –ম্যানেজার সুধাকে থাকতে বলল। সুধা ম্যানেজারের ঘরে গেলে ম্যানেজার তাকে একটা চেয়ার দেখিয়ে বসতে বলল। তার পর ড্রয়ার খুলে হুইস্কির বোতল খুলে বড় একটা পেগ এক নিঃশ্বাসে সাবাড় করল। সুধা তখন রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবার জন্যে উঠল ম্যানেজার তার হাত ধরে বিনয়ের সঙ্গে বলল, ‘রাগ কোরো না। তোমার প্রমোশনের ফাইল আমার টেবিলে আছে। আর আমি জানতে পারলাম যে তুমি এখানকার পুরনো লোক। তোমার নাম তো সুধা, তাই না?’ ম্যানেজার এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল।

    সুধা বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে তার দিকে তাকাল। এতদিন কাজ করছে, তবু আমার নাম জানে না! ম্যানেজার আরেকটা পেগ চড়িয়ে বলল, ‘মানে আমি বলছি যে তোমার বাপের নাম জীবনরাম নয়?’

    ‘হ্যাঁ, তাই। সে তো অফিস-ফাইলেই লেখা আছে। তা আবার জিগ্যেস করে কী লাভ?’ সে আবার উঠতে গেল।

    ‘বসো বসো।’ ম্যানেজার মিনতির সুরে বলল, ‘তুমি আমাকে চিনতে পারলে না?’ ম্যানেজার সোজাসুজি তার দিকে তাকিয়ে বলল।

    ‘না!’ সে রাগের সঙ্গে বলল।

    ‘তোমরা জিন্দান মহল্লায় থাকতে?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘একদিন আমি তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। তোমার সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। সেদিন তুমি একটা সাধারণ মেয়ে ছিলে। আজ তুমি একজন মহীয়সী নারী হয়েছ। আমি তোমায় দেখতে গিয়েছিলাম। তখনই তোমার সঙ্গে কথা বলেছিলাম।’ ম্যানেজার বলল।

    ‘কবে? সে কবে?’ সুধা অস্থিরভাবে প্রশ্ন করল।

    বুড়ো ম্যানেজার সুধার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার নাম মোতি।’

    সুধার দেহ অবশ হয়ে গেল।

    ‘আমি খুবই হতভাগা। তাই তোমাকে বিয়ে করিনি। আমি তোমাকে ভালো করে দেখিনি। বুঝিওনি। আর সামান্য সময়ে লোকে কীই-বা জানতে পারে? সৌন্দর্য তো চামড়ার নিচে লুকিয়ে থাকে। আমি যুবক ছিলাম। তাই ফর্সা রঙ আর সম্পদের সন্ধান করতাম। আমি যে স্ত্রী পেলাম– সে ফর্সাও ছিল, সম্পদও এনেছিল আর সেইসঙ্গে এনেছিল অহংকার, নিষ্ঠুরতা, অবাধ্যতা। কয়েক বছরেই আমার পাঁচটি সন্তান জন্মাল। তার কটি যে আমার তা জানিনে। কিন্তু লোকে নানা কথা বলত! আমি শুনতাম আর বারনারী সন্ধানে যেতাম। তার পর আমার সারাদেহে নিষ্ঠুরতা, মদ্যপান, কুৎসিত রোগ ও ব্যর্থতার গ্লানি ফুটে উঠল। তাই বয়স না-হতেই আমি বৃদ্ধ হলাম– নিভে গেলাম। সে এখন মরে গেছে। তাই তার কথা বলে লাভ নেই। আর বলবই-বা কী! দোষ তো আমার। এই চোখ তোমাকে চিনতে পারেনি আমার এই চোখ হীরেকে পাথর মনে করে ফেলে দিয়েছিল। তুমি কি আমাকে কোনও প্রকারেই ক্ষমা করতে পারো না? তুমি কি… তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে পারো না? আমার বয়েস তো তত বেশি নয়। সারাজীবন আমি ভালোবাসা পাইনি। তাই জীবনভর ছটফট করে বেড়িয়েছি।’

    .

    ম্যানেজার বলছিল আর সুধা বিস্ফারিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। একবার তার মনে হল, সে মোতিকে বলবে– এতদিনে তোমার সময় হল আসবার– কুৎসিত, টেকোমাথা বৃদ্ধের রূপ নিয়ে। আর বিপজ্জনক রোগ নিয়ে। এখন তুমি আমাকে বিয়ের কথা বলছ? কিন্তু আমি তো সমস্ত জীবনটাই তোমাকে উৎসর্গ করেছিলাম। তুমি জানো না যে সারাটা যৌবন শুধু তোমার ধ্যানেই অতীত হয়েছে। তোমার চিন্তায়ই জীবনের সবগুলো বসন্ত কাটিয়েছি। যৌবনেরও প্রতিটি আবেগ তোমার একবার প্রেমপূর্ণ চাহনির বদলে বিকিয়ে দিয়েছি। তোমার ছায়াকে অবলম্বন করে সারাটা জীবন একা একা পথ চলেছি। অন্ধকার পার্কে তোমার ধ্যান করেছি একা একা বসে। নিজের পয়সা খরচ করে আমি তোমার কাছ থেকে শাড়ি উপহার নিয়েছি। তোমার দেওয়া গয়না পরেছি– সিনেমা দেখেছি পাশের সিট খালি রেখে। আমার বাপ মারা গেছে, মা মারা গেছে, আমার গর্ভাশয়ের সন্তান দূর থেকেই আমাকে ডাকত কিন্তু আমি কারওর কাছে যাইনি! তোমার ধ্যান করেছি– চল্লিশ বছরের কৌমার্য পালন করে– চোখ, কান ও মুখ বন্ধ করে। আমি কত সুখী ছিলাম– কত মগ্ন ছিলাম ধ্যানে। আমি তোমার কাছ থেকে কিছু চাইনি। বিয়ের চাপও দিইনি। সোহাগরাত পালনের প্রত্যাশাও করিনি। চাইনি একটি নিষ্পাপ শিশুর নির্মল হাসি। শুধু একটা কল্পনা, একটা জ্যোতি, একটা প্রতিবিম্ব– এটাই তোমার কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম। আজ সেটাও তুমি নরকের আগুনে পোড়াতে এখানে এসে পড়েছ!

    কিন্তু সুধা এসবের কিছুই বলতে পারল না। টেবিলে মাথা রেখে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল। মোতি তার হাত ধরতে গেলে সে রাগে তার হাত সরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। মোতি যতই তাকে নিষেধ করল, সে কিছুই শুনতে চাইল না। রাস্তায় অন্ধকার নেমেছে। তবু বিদ্যুতের আলোয় তার চোখের পানি চিকচিক করতে লাগল। কিন্তু সে এসব গ্রাহ্যেই আনল না। কাঁদতে কাঁদতেই সে পথ বেয়ে চলল। আসিফ আলি পার্কের কাছে এসে সে থমকে দাঁড়াল। হঠাৎ তার মনে হল পার্কের ভেতরে গিয়ে সে একটা গাছে ঠেস দিয়ে বসবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে করল, এসব নিরর্থক– আমার কল্পনার রাজকুমার আর আসবে না সেখানে! সে আর কোনওদিনই আসবে না!

    একথা মনে করেই সে তার সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলল। মাথার টিপও মুছে ফেলল এবং পার্কের রেলিঙে ঘা দিয়ে হাতের চুড়িগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে জোরে জোরে ভেঙে ফেলল। কারণ তার বদ্ধমূল ধারণা যে সে এবার বিধবা হয়ে গেছে।

    অনুবাদ : কাজী মাসুম

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমার বোকা শৈশব – আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
    Next Article এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে – আবদুল্লাহ আল-মুতী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }