Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত

    ইমদাদুল হক মিলন এক পাতা গল্প1423 Mins Read0

    রোদ বৃষ্টি কুয়াশা – বামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

    রোদ বৃষ্টি কুয়াশা – বামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

    একটা চকচকে নতুন বাড়ি দেখলেই মানুষের মন ভাল হয়ে যায়। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দীপার বেলায় ঘটল ঠিক উল্টোটা। ওদের সবাইকে নতুন রান্নাঘরটা যখন খুব উৎসাহ নিয়ে দেখাচ্ছে অনিন্দিতা, সকলের অলক্ষ্যে সেখান থেকে গুটিগুটি বেরিয়ে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়াল দীপা। তার থেকে থেকে কী যে হয়। বেশ চলছিল। স্বকিছু। কিন্তু নতুন বাড়ি দেখানো শুরু হতেই, ধ্বকিছু অসহ্য লাগতে শুরু করল। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতেই ধানের গন্ধ মাখা বাতাস দৌড়ে এসে দীপাকে এলোমেলো করে দিল। ঝড়ের মতো হাওয়া বইছে সময় এ জায়গাটাতে। ওদের বলরাম বোস লেনের এঁদো বাড়িতে প্রবল ঝড়ের সময়েও এরকম হাওয়া কখনও ঢোকে না। সূর্য এখন বেশ খানিকটা উপরে উঠে এসেছে। শীতের রোদ বলতে যা বোঝায় তা বোধহয় এই, অনিন্দিতা আর সৌরভদের নতুন বাড়িতে। এমন বাড়িতে থাকলে মানুষের মনখারাপ হয় না। আলো, হাওয়া আর চারপাশের নিবিড় গাছগাছালিই তা হতে দেয় না। দীপা রেলিং-এ ভর দিয়ে দৃষ্টি মেলে দিল অনেকদূরে।

    আজ সৌরভদের গৃহপ্রবেশ। দীপার স্বামী শ্যাম সৌরভের শৈশবের বন্ধু। সেই কোন আদ্যিকালে স্কুলের প্রথম বছরটি থেকে ওরা একসঙ্গে পড়েছে। শ্যাম বাদে আরও তিনজন শৈশব্রে সহপাঠীকে সৌরভ সস্ত্রীক নেমন্তন্ন করেছে। এছাড়া রয়েছে ওদের কিছু আত্মীয়স্বজন এবং অফিস কলিগ। সৌরভ এক মালটিন্যাশনাল কোম্পানির ডিরেক্টর, ওর স্ত্রী অনিন্দিতা কলকাতার এক নামী মেয়েদের কলেজের প্রফেসর, ওদের একটি মাত্র ছেলেকে ওরা ডুন স্কুলে পড়াচ্ছে। তবে সুখ আর বৈভবের মহাসমুদ্রে ভেসে বেড়ালেও ওরা ওদের বন্ধুবান্ধবদের প্রতি অকৃত্রিম এবং নির্ভেজাল। আর সেফ সেই খাতিরেই শ্যামের আজ এখানে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ। সে কথা দীপা বোঝে ভাল করেই। সৌরভ আর শ্যামের মতো আরও যে তিনজনের এখানে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ, তারা হল শিবাজী, অমিতাভ এবং সমরেশ। এই তিনজন এবং আজকের গৃহকর্তা সৌরভ এরা চারজনেই শ্যামের প্রাণের বন্ধু। একেবারে সেই স্কুলের প্রথম দিনটি থেকে। ওদের সঙ্গে মেলামেশা করে দীপা এটুকু বুঝেছে যে শ্যামের বাঁচা আর ওদের বেঁচে থাকার ফারাক কয়েক যোজনের। ওদের বাড়িঘর, ওদের ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে বাড়ির কাজের লোক প্রতিটি ব্যাপারেই একটা তুল্যমূল্য মিল খুঁজতে গিয়ে বারে বারে এই সত্যিটা মস্ত বড় হয়ে উঠেছে দীপার কাছে। বৈভব কিংবা বিত্তের অহঙ্কার চাপা থাকার নয়। কটুগন্ধি রসুনের মতোই তা শরীর ভেদ করে বেরোয়। মাঝেমাঝেই কথাবার্তার ফাঁকে ঢুকে পড়া কয়েকটি শব্দ দীপাকে বুঝিতে দেয় যে এ আসরে তারা কিছু কমজোরি।

    দীপা অবশ্য এটা মানে যে শ্যামের বন্ধুরা শ্যামকে ভালবাসে তাদের অজ্ঞ। দিয়েই। সেভাবে চিন্তা করলে, জীবনের দৌড়-প্রতিযোগিতায় সবার পিছনে থাকা শ্যামকে যে তারা বন্ধু হিসেবে মানে এটা তার ভাগ্যই বলতে হবে। শ্যামও ভালবাসে তার বন্ধুদের। অবশ্য তার ভালবাসার লোকের সংখ্যা এ সংসারে কিছু কম নয়। নইলে বাজারে যে বুড়ির কাছ থেকে শ্যাম রোজ শাকপাতা কিংবা লেবু লঙ্কা কেনে, সে-ও কিনা তাদের বাড়িতে আসে শ্যামের খোঁজে। শ্যামের সেবার ক্যালকাটা ফিবার হয়েছিল। কদিন বাজারে যেতে পারেনি। আর তাতেই সে বুড়ি আকুল হয়ে ছুটে এসেছিল বাবুর খোঁজে। তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে শ্যামের সে কী উচ্ছ্বাস। বুড়ির সঙ্গে তার মারি সম্পর্ক পাননা। পুজোর সময় বুড়ি নাকি নতুন কাপড় পায়। দায়ে অদায়ে শ্যাম যে তাকে দু’পাঁচ টাকা দিয়ে থাকে তা জানাতেও কসুর করেনি বুড়ি।

    বুড়ি যাওয়ার পর শ্যামের চোখে তো জলই এসে গেল। মানুষ কেন যে আমাকে এত ভালবাসে? খুবই আবেগের সঙ্গে জানতে চেয়েছিল সে। দীপার উত্তরটাও হয়েছিল জুতসই। ও বলেছিল, সত্যি আমিও ভাবি লোকেরা কি দেখে তোমায় এত ভালবাসে? এক এই আমিই রয়ে গেলাম পৃথিবীতে। চেষ্টা করেও ভালবাসতে পারিনি। খোঁচাটা অবহেলায় হজম করে শ্যাম। আমতা আমতা করে বলে,

    না এসব কী বলছ? তুমি তো সবারই আগে। বলতে কি তোমার জন্যই তো বু বেঁচে থাকাটা যাচ্ছে। নইলে কী যে হত? শ্যাম অসহায় ভাবে গালে হাত ঘষছিল তখন। দীপার একতরফা আক্রমণে রাব্বই বিপর্যস্ত বোধ করে শ্যাম। গলা তুলে ঝগড়া করতেও শেখেনি নোকটা। যা ইচ্ছে বলো, শুনে যাবে, তারপর ভুলে যাবে। সবকিছু। ওর এই আলুথালু অবস্থা দেখে আগে দীপার মায়া হত, এখন হয় না। সয়ে গেছে। খুব বাড়াবাড়ি রকমের চ্যাঁচামেচি হলে, শ্যাম তার স্বভাবমতো গালে হাত ঘষতে ঘষতে পাশের ঘরে যায়। তার ছোট্ট এক চিলতে লেখার টেবিলে সে খাতা খুলে বসে। দীপার ঝাঝালো কথাবার্তা কখনও বা শ্যাম তার গল্পের নায়িকার মুখে বসায়, খুবই নাকি বাস্তব হয় সে সব সংলাপ। তার লেখা গল্প কিংবা কবিতা এদিক ওদিক ছাপা হয় আজকাল। আর তাতেই সে গর্বে এবং আল্লাদে আটখানা। লেখার টেবিলে বসলে যাই বল আর যাই কর, শ্যাম তখন সমাধিস্থ প্রায়। এ মানুষকে নিয়ে কী যে হবে?

    তুমি এখানে কী করছ? তোমাকে খুঁজছি যে আমরা আনন্দে আইসক্রিমের মতো গলতে গলতে বলল অনিন্দিতা। বিষম ভাল লাগছে চারপাশের ধ্বকিছু। এখানটায় এসে তাই আটকে গেছি, আধ-সত্যি কথাটা বলে দীপা অনিন্দিতার দিকে চেয়ে রইল। মেয়েটা বেশ আলাভোলা টাইপের। কখনও সিরিয়াস হয় না। দিব্যি বিশ্বাস করল কথাটা। বৈ আবার কিছু সারল্যও দেয় তাহলে? দীপা ভাবল। অনিন্দিতা বলল, ‘হ্যাঁ গো। জায়গাটা দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম। সুন্দর বলেই তো বাড়িটা বানালাম এত খরচাপাতি করে। কলকাতার কাছেই অথচ দেখ কেমন দিব্যি গ্রাম।‘ ‘এখানে বরাবর তোমরা থাকবে?’ দীপার প্রশ্নে ভুরু কোচকাল অনিন্দিতা। ভারী সুন্দর লাগল ওকে এই ভঙ্গিটিতে। ‘খেপেছ? দশ মাইলের মধ্যে কোনও আত্মীয়স্বজন নেই। ক্লাব নেই, ডাক্তার নেই, পার্লার নেই—আরও কত কিছু যে নেই। তা ছাড়া জানই তো আমার ছেলে দেরাদুনে সায়েব তৈরি হচ্ছে। বড় হয়ে এ বাড়িতে উইকএন্ড কাটাতে আসবে। মাঝে মাঝে আসব আমরা হাওয়া বদলাতে।‘

    ব্যালকনির তলায় বেশ সুন্দর মরসুমি ফুলের গাছ বসানো হয়েছে। কয়েকটা গাছে ফুল ধরতেও শুরু করেছে। দীপা নিশ্চিত এ বাগান একদিন ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে। একবার রাসবিহারীর রথের মেলা থেকে একটা বিশুদ্ধ বেলফুলের গাছ। কিনেছিও। তাদের বলরাম বসু লেনের বাড়ির এক চিলতে বারান্দায় রাখা হয়েছিল সে গাছ ক’বছর আগে। গাছটা অবশ্য বেঁচে আছে আজও। তবে ফুল ধরেনি। আর এদের এই নতুন বাগানে গাছ লাগাতে না লাগাতেই কেমন ফুল ধরতে শুরু করে দিয়েছে। ফুলোও বুঝি বড়লোকদের বাগানে ফুটতেই বেশি ভালবাসে। এই সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই দীপার নজরে এল, ওদের পাঁচিলের ধারে বেশ কয়েকটা মারুতি আর দু একটা অ্যামবাসার জমা হয়েছে। গাড়িতে আগত সকলেই সৌরভদের সহকর্মী এবংশৈশবের ক’জন বন্ধু।

    গাড়িতে চড়ে অবশ্য দীপাও এসেছে। শ্যামের বন্ধু অমিতাভ থাকে এলগিন রোডে। দীপা আর শ্যামকে ওই-ই তুলে এনেছে। নইলে ট্রেনে আর বাসে আসতে হত। ওদের পক্ষে সেটাই অবশ্য দেখাত স্বাভাবিক। নিজে কস্মিনকালেও একটা গাড়ি কেন গাড়ির একটা চাকাও কিনতে পারবে কিনা সন্দেহ। অথচ বন্ধুবান্ধবদের গাড়ি চড়ার সময় শ্যামের সে কী ফুতি। যেন নিজেরই গাড়ি। অমিতাভর পাশে বসে হেঁড়ে গলায় গান গাইতে গাইতে এল অর্ধেকটা পথ। বেহায়া আর কাকে বলে।

    —আরে এই চলল, ভিতরে চলো।

    অনিন্দিতা সুরে বাজল।

    -হ্যাঁ চলে যাচ্ছি। কর্তারা স্ব গেলেন কোথায়?

    –কোথায় আর যাবেন? একজনের হাতেই তো সবার ঝুঁটি বাঁধা। তিনি যেখানে তাঁরাও সেখানে।

    দীপা বুঝল, শ্যাম তার অভ্যেসমতো ইস্কুল খুলে বসেছে। কাজের মধ্যে তো তার এই বই আছে। হয় চেয়ারে কুঁজো হয়ে বসে গল্প কিংবা কবিতা ফাঁদছে। নয় নানারকম বই পড়ে তা থেকে জ্ঞান ফেরি করে বেড়াচ্ছে। ওর বন্ধুরা ব্যস্ত মানুষ। পড়াশোনার সময় কম। কাজেই অবরে ঘরে শ্যামের এসব কথা শুনতে তাদের ভালই লাগে। তারা তাই ছাত্রের মতো মনোযোগী হয়ে শোনে শ্যামের মুখামৃত। বন্ধুরা তাই এরকম জমায়েত হলেই বসে শ্যামের ইস্কুল। আর বোকারাম তাতেই কৃত কৃতার্থ।

    একতলাতে নেমে এল ওরা। বদ্বার ঘরটা একটা ছোটখাটো হলঘরের মতো। সেখানে জোর আড্ডা বসেছে। হাল্কা বুজ প্লাস্টিক পেন্টে রাঙানো ঘরে, খরগোশের ললামের মতো তুলতুলে কার্পেট। ইতস্তত পাতা হয়েছে উজ্জ্বল কমলা রঙ-এর গদি আঁটা হাল ফ্যাশনের সোফাসেট এবং বেত অথবা বাঁশের তৈরি দেখনদার চেয়ার। মাঝে মাঝে সেন্টার টেবিল পাতা রয়েছে। ঘরের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বিদেশি ফ্রেশনারের গন্ধ। পুরুষেরা বসে আছে কাছাকাছি। শ্যামের বন্ধুরা ছাড়াও সৌরভের কিছু অফিস কলিগ এবং দু’একজন আত্মীয়ও রয়েছে সেই দলে। বেশির ভাগ মানুষের হাতেই পানীয়ের গ্লাস। হুইস্কির গন্ধটা দীপার চেনা। এরকম জমায়েত হলেই গন্ধটা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম শ্যাম। ওর হাতে ধরা একটি স্কোয়াশের গ্লাস। সবাই শ্রোতা এ ঘরে। বক্তা একজনই। ঘর জ্বালানে-পরভোলানে শ্যাম। দীপা শুনল স্টিফেন হকিং-এর ব্রিফ হিষ্ট্রি অফ টাইম বইটি নিয়ে শ্যাম তার বক্তব্য রাখছে, বইটা কিছুদিন আগে লাইব্রেরি থেকে এনে রাত জেগে শেষ করেছিল। উৎসাহ নিয়ে দীপাকেও জানিয়েছিল সে বই সম্বন্ধে। দীপা দেখল শ্যামকে। যেন এক অচেনা মানুষ। চারপাশের মানুষজন এখন তার কাছে অদৃশ্য। মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, কৃষ্ণগহ্বর এবং সময়ের মতো জটিল ব্যাপার নিয়ে শ্যামের এখন তুরীয় অবস্থা। সহসা দীপাকে দেখে সে মুহূর্তের জন্য আড়ষ্ট হয়। একটু অপ্রতিভ হাসি হেসে বোকার মতো ডান হাতটা একটু তুলল। তারপরেই ডুবে গেল ফের মহাবিশ্বের অলৌকিক গহ্বরে। এমনভাবে বইটা সম্বন্ধে অনর্গল বলে যাচ্ছে যেন এ তারই লেখা। মন খারাপ হওয়া সময়ের মাঝেও সামান্য গর্ব হল দীপার।

    বড় বসার হলঘরটির পাশের ঘরে মেয়েরা জমায়েত হয়েছে। এ ঘরটি অনিন্দিতা প্রথমেই তাদের দেখিয়েছিল। এটি তাদের গেস্টরুম। চকিতে মনে পড়ল ওদের বাড়িটার কথা। তাদের বাড়িতে দুজন অতিথি এলেই, শ্যাম তার ছেলেকে নিয়ে ওই এক চিলতে বারান্দায় গিয়ে শোয়। বাচ্চাটাকে একবার ইঁদুরে কামড়েছিল। সে কী কাণ্ড মাঝরাতে। রক্তারক্তি ছেলের কান্না, পাড়ার ডাক্তারকে ঘুম থেকে তুলে এনে ওষুধ আর ইনজেকশন এবং সবকিছু মিটে যাওয়ার পর শুরু হয়েছিল দীপার উগ্রপন্থী হানা শ্যামের উপর। সেবার ওদের বাড়িতে দীপারই মা আর দাদা বেড়াতে এসেছিল। ওদের দুজনকে সাক্ষী মেনে শ্যামকে তুলোধোনা করেছিল সে। মা আরা দাদা অবশ্য ওকে ঠাণ্ডা করতে চেয়েছিল। দীপা আঙুল তুলে শাসিয়েছিল ভাল বাড়ি কিংবা জমির ব্যবস্থা করতে না পারলে সে তার ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে। অন্য পুরুষ মানুষ হলে সেও রোখ দেখাত। বলত, দেখেশুনেই তো বিয়ে দিয়েছিল তোমার। বাড়ির লোক। না পোষায় পথ দেখ। কিন্তু শ্যামের পথটা সেরকম না। কথার পিঠে কথা তার আপনিই আসে কাগজে আর কলমে। কিন্তু দীপার তিরস্কারের সময় সে। দাঁড়িয়েছিল দরজার পাশে অপরাধীর মতো। দীপার অগ্নিবাণ হানা শেষ হলে শ্যাম বলেছিল, হ্যাঁ এবার একটু জমি কিংবা বাড়ি ব্যস এইটুকুই।

    অতিথিদের ঘরটাও দেখবার মতো। ঘরটা দেখলেই মনে হয়, থেকে যাই ক’টা দিন। মস্ত মস্ত জানলায় আলপনা দেওয়া গ্রিল। রোদ আর বাতাস ঘরে ঢুকছে ডাকাতের মতো। লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে স্বকিছু। একটা সিঙ্গল খাট, এক কোণে আলমারি, একটি লেখার টেবিল আর চেয়ার ধ্বই দামি কাঠের। পালিশের গন্ধে নাক জ্বালা করে সামান্য, আবার ভালও লাগে। এঘরের রঙ হয়েছে ডিমের খোলার রঙ-এ। চার দেওয়ালে চারটি বাহারি আলোর শে। কত দাম কে জানে? কথায় কথায় অনিন্দিতা জানিয়েছিল এ ঘরের অনেক আসবাবই এখনও নাকি বাকি। দীপা ভাবল, সব কটা আলো জ্বালিয়ে দিলে ঘরটাকে কেমন দেখাবে।

    এ ঘরটিতে দীপার পরিচিত্র চেয়ে অপরিচিত মহিলাদের সংখ্যা অনেক বেশি, শ্যামের বন্ধুদের স্ত্রী যারা তাদের সামনে দীপা তবু সহজ হতে পারে। কিন্তু এরা যে দীপার কাছে একেবারেই ভিনদেশি। মহার্ঘ শাড়ি গয়না আর বিদেশি রূপটানের চোখ ধাঁধানো জৌলুসে দীপার কোণঠাসা অবস্থা। আবার তার অস্বস্তি শুরু হয়। অনেকেই দেখছে তাকে। বহুচোখের দৃষ্টির আড়াল খুঁজতে সে জায়গা করে নিল শিবাজীর স্ত্রীর। পাশে। এক অতি ভয়ঙ্কর দর্শনা সুন্দরীর সঙ্গে শিবাজীর স্ত্রী মীরা অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলছিল। দীপা পাশে বসতেই মীরা হাসল। বলল, ‘বস। আলাপ হয়েছে তো? মিসেস চাকলাদার। সৌরভদার অফিস কলিগ।’ ভীষণ দর্শনার চোখ দুটি মস্ত বড়। অনেকটা আতসকাঁচের পিছনে থাকা চোখকে যেমন দেখায়। সে চোখে নানা অভিব্যক্তি ভেসে বেড়াচ্ছে। মহিলার ডান হাতে জলের গ্লাস খুব কায়দা করে ধরা। আলাপ হতেই বাঁ হাতের দুটো আঙুল আরশোলার গুঁড়ের কায়দায় নাড়িয়ে বলল, হ-ই-ই, বলেই সামান্য চুমুক দিল জলের গ্লাসে। দীপা গালের পেশিগুলোকে খুব কষ্ট দিয়ে সামান্য হাসি ফোঁটাল।

    করালবদনা ফের ফিরে গেল তাদের আলোচনায়। টাটা-সিয়েরা আর মারুতি ওয়ান থাউজেন্ড এর মাঝে তুল্যমূল্য একটা আলোচনা হচ্ছে। মীরা যখন দীপার সঙ্গে মেশে তাকে তখন দিব্যি আটপৌরে আর ঘরোয়া মনে হয় কিন্তু এখন সে পাল্লা দিয়ে ভীষণ দর্শনার সঙ্গে বাড়ির আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির ব্যাপারে অবশ্য মীরা অনেক ঋই রাখে। ওর স্বামী শিবাজী নামকরা সার্জন। ছুরি ধরলেই নাকি দশ হাজার তার দক্ষিণা। বছরে একবার গাড়ি পাল্টায় সে। এ ঘ খবর গর্বভরে শ্যামই শুনিয়েছে তাকে। গাড়ির আলোচনা শুনতে শুনতে দীপার মনে হল, আজ সে একটা ভুল জায়গায় এসে পড়েছে। অনিন্দিতা অনেকগুলো জলের গ্লাস নিয়ে ঢুকছে। গ্লাসগুলোর খুব কায়দা, যেন স্ফটিকের তৈরি, এটা কী কাটগ্লাস? কে জানে? তবে জলের গ্লাস দেখে দীপার তেষ্টাটা হঠাৎ চাগাড় দিয়ে উঠল। গলা তো এসে ইস্তক শুকিয়ে আছে। প্রখর গ্রীষ্মে মরে যাওয়া কোনও নদীর মতো। আসন ছেড়ে উঠে একটা গ্লাস তুলতে যেতেই অনিন্দিতা মাথা নাড়ল। মৃদু স্বরে বলল, তোমারটা আনছি ভাই। দীপা ভাবল, ওকে আলাদা করে আপ্যায়ন করার জন্য অনিন্দিতা বোধ হয় রবত দেবে ওকে। ও তাই ব্যস্ত হয়ে বলল, না না, আমাকে শুধু জলই দাও। ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে। অনিন্দিতা সু ট্রেটা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল অন্য দিকে। অনেকেই দেখল ব্যাপারটা আর তাতেই অপমানে শরীর গরগর করে উঠল। সামান্য এক গ্লাস জল চাওয়াতে অনিন্দিতা এরকমটা করল? ব্যাপারটা মীরারও নজর এড়ায়নি। দীপার কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলল, ওটা জল নয় ভাই। জিন উইথ লাইম। জলের মতো দেখায়। দীপা বুঝে নিল, ওর অজ্ঞতাকে সামান্য মেরামত করে দিল ও। ইতিমধ্যে অনিন্দিতা তড়িঘড়ি এক গ্লাস জল পাঠিয়েও দিয়েছে। তু ওই কয়েক মুহূর্তের জন্য অপদস্থ হওয়ার গ্লানি ওকে খোঁচাতে থাকল অনবরত।

    এখন সবে বেলা এগারোটা। কজি উলটে ঘড়ি দেখল দীপা। সারাটা দিন পড়ে আছে। অপ্রস্তুত হওয়ার মতো আরও কত কী বাকি কে জানে। এই ব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ও প্রতিজ্ঞা করল, এই শেষ। আর কখনও এদের সঙ্গে মিশবে না। ছেলেটাকেও যদি আজ সঙ্গে আনত, ওর সময় কাটত। কিন্তু মদ্যপানের ব্যবস্থা থাকলে সেখানে বাচ্চাদের আনা যাবে না—এমন একটা চুক্তি আছে শ্যামের বন্ধুদের। দীপা একবার ভাবল, শ্যামের কাছেই গিয়ে বসে। কিন্তু মানুষটার উপর এত রাগ জমা হচ্ছে যে চিন্তাটাকে ও নির্দয়ভাবে সরিয়ে দিল মন থেকে, একটু পরই সৌরভ এল ঘরে। চেঁচিয়ে বলল, শ্যামের গল্প পাঠ শুরু হচ্ছে। যারা শুনতে চান, চলে আসুন এ ঘরে। অনেকেই গেল। অমিতার স্ত্রী কল্পনা বলল, চল, তোমার কর্তার গল্প শুনবে না? দীপার খেয়াল হল, বাড়ি থেকে বেরুবার সময় একটা ঝোলাতে লাল খেরোর খাতা একটা পুরেছিল বটে শ্যাম। বাহাদুরি নেওয়া হবে এখন, দীপা বলল, আমার শোনা তো ধ্বই। তোমরা যাও। আমি একটু ঘুরে ফিরে দেখি। র ফাঁকা হতে ও আবার ব্যালকনিতে গিয়ে চোখ মেলে দিল সুদূরে। দুপুরে খেতে বসে ছেলেটার কথা খুব মনে হচ্ছিল। ভাল মন্দ খেতে ভালবাসে পাপুন। কলকাতার সেরা কেটারারকে দিয়ে রান্না করানো হয়েছে। ছাদে ম্যারাপ বেঁধে সেখানেই হয়েছে রান্না আর খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। এক এক রকমের খাবার পাতে পড়ছে তো পড়ছেই। মস্ত বড় সোনালি গলদা চিংড়িটা যখন পাতে পড়ল, দীপা চমকে উঠল মাছের সাইজ দেখে, এত বড় চিংড়িও হয় তাহলে। ওর খুব লজ্জা করছিল মাছটা খেতে। ছোটখাটো জাহাজের চিমনির মতো মস্ত চেহারা নিয়ে মাছটা পড়েছিল ডিশের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে। ও দেখে নিল চারপাশের কে কীভাবে মাছটাকে বাগে আনছে। একটু দূরেই শ্যাম বসেছে খেতে বন্ধুদের মধ্যমণি হয়ে। দীপা দেখল সে খাচ্ছে যা তার চেয়ে গল্পই করছে বেশি।

    ‘একি খাচ্ছ না কেন?’ সৌরভ নিজে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করল দীপাকে। দীপা হাসল বলল, ‘খাচ্ছি তো মশায় চেয়ার ছেড়ে উঠিনি তো এখনও। তবে আয়োজন যা করেছেন, তাতে শেষ পর্যন্ত কী হবে কে জানে?’

    —মাছটা বেশি করে খাও, এক্সপোর্ট কোয়ালিটি। সায়েবদের পেটেই যেত। আমার খুব পরিচিত বলে জোগাড় করেছি। সৌরভের কথা শুনে হাসল দীপা। মাছটা ভাঙল একটু। সামান্য মাছ মুখে তুলতে গিয়ে ওর চোখ পড়ল ভীষণ দর্শনার দিকে। দুটো চিংড়ি নিয়েছে পাতে। এর মধ্যেই প্লেটে মুর্গির হাড় আর চিংড়ির ছিঁড়ে এত জমা হয়েছে পাতে, দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা প্লেন ক্রাশ হয়েছে বুঝি। আবার শ্যামকে দেখে সে। এমন মাছ কি জীবনেও খেয়েছে লোকটা? গোটা মাছ প্রায় আতই পড়ে আছে বকবকানি চলছে অনর্গল। দীপার পাশে বসলে ও ঠিক মাছটা ওকে খেয়ে নিতে বলত।

    খাওয়ার পর পান বুিচ্ছিল অনিন্দিতা। চাপা ঠোঁট খুব লাল হয়েছে। মেয়েটা বড়ো সুন্দর। টুকটুকে ঠোঁট ফাঁক করে কথা বলতে গিয়েই সামলে নিল। অভ্যেস নেই। পানের পিক পড়ছিল আর একটু হলেই। কোমরের চাবি আর হারে চুরি শব্দ তুলে দৌড়ে গেল ও বেসিনের দিকে। ছেলেবেলার কথা হঠাৎ মনে পড়ল দীপার, ঠাকুমা বলত, ‘পান খেয়ে যে মেয়ের ঠোঁট যত বেশি লাল সে তত বেশি সুখি হবে।‘ ছেলেবেলায় পান মুখে নিলেই তাই ও দাঁড়িয়ে দেখত নিজেকে আয়নায়। এই মুহূর্তে দীপা নিজের ঠোঁটের রঙ দেখতে পাচ্ছে না। তাই সে অন্যদের পান খাওয়া ঠোঁট দেখতে কৌতূহলী হল। না, অনিন্দিতার মতো আর কাইকেই লাগছে না।

    পানের পিক সামলে অনিন্দিতা এল। বেশ সুখের মেদ জমেছে ওর। দিনে দিনে যেন আরও ফর্সা হচ্ছে ও। অনিন্দিতা জনে জনে জিজ্ঞেস করতে লাগল, সকলে ভাল করে খেয়েছে কি না। প্রত্যেকেই খাবারের প্রশংসা করল। ওদের এলাহি আয়োজনের সুখ্যাতিও হল এর সঙ্গে। অনিন্দিতার মুখে একটা তৃপ্তির ছবি ফুটল। বলল, যাক শেষ অবধি সব ভালয় ভালয় মিটল।

    দীপা জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা তো নিটে রাত এ বাড়িতে কাটাবে? একটা নিয়ম আছে না সেরকম?’

    হ্যাঁ শাশুড়ি বলছিলেন। দেখি কি হয়। সমরেশের স্ত্রী ভাল গান গায়। টিভি প্রোগ্রাম হয়ে গেছে কয়েকবার। নিজেকে খুব গুটিয়ে রাখে মেয়েটা। ওর স্বামী আই আর এস. কাস্টমসের ডেপুটি কালেক্টর। স্বামীর চাকরি নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন গর্ব আছে ওর। ওর গান শোনানোর কথা ছিল আজ। হয়নি। অনিন্দিতা দুঃখ প্রকাশ করল তাই। বলল, শীত থাকতে থাকতে এ বাড়িতেই একটা গানের আসর বসাব। তোমার একক সঙ্গীত অনুষ্ঠান হবে সেদিন। সমরেশের স্ত্রী জয়তী বলল, বাঃ ভুলে গেলে? ও অফিসের থেকে একটা ট্রেনিং-এ স্টেটসএ যাচ্ছে না। তিনমাসের জন্যে? কেউ পায় না এই চান্স। বড় কর্তা খুব ভালবাসেন বলেই ওর যাওয়াটা হচ্ছে। আর সঙ্গে আমিও।

    তোমার বুঝি এই প্রথম বিদেশ যাওয়া?

    অমিতাভের স্ত্রী কল্পনার প্রশ্ন।

    সবাই জানে ব্যবসা বাড়াতে অমিতাভ প্রায়ই ফরেন টুর করে। কল্পনাও গেছে বেশ কয়েকবার ওর সঙ্গে। স্টেটস-এর প্রসঙ্গ ও-ই নিয়ে এল আরও জোরদার ভাবে। ওরা চারজনেই এক সঙ্গে এরপর স্টেটস-এর আলোচনায় যোগ দিল প্রাণ মন ঢেলে। দীপারই শুধু কিছু বলার নেই। সে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে ফের দাঁড়াল ব্যালকনিতে। ব্যালকনিতে এখন পড়ন্ত রোদের আলো। শীতের শেষ বেলার সূর্য কী নরম, কত মায়াময়। অথচ এই সূর্যই কয়েক মাস পর এসে ছারখার করতে থাকবে সব কিছু। অসহ্য গরম আর প্যাঁচপেচে ঘাম। দীপাদের বাড়ির তিনটি প্রাণীই তখন ভুগবে ঘামাচিতে। তারপর আসবে বর্ষা। শরৎ এবং শীতও আসবে পালা করে পরপর। যেন মানুষের জীবন। সুখ, দুঃখ প্রেম, ঈশ্বৰ্য্য, অহঙ্কার এসবই মানুষের জীবনে আসে আর যায়, ঠিক ঋতুর মতোই। দীপা খুব দ্রুত ভেবে যাচ্ছিল এই সব নিয়ে। আর শেষমেষ সে সিদ্ধান্তে এল, তার জীবনটা কাটল শুধুই খরতাপের ভির।

    ঘনালে মেঘ, না হল বর্ষা, না এল শীরে কুয়াশা। চারপাশের এই আনন্দ আর সুখের মাঝে নিজেকে বিষম রকম বেমানান লাগল তার। বুকে একটা চাপ বাধা কষ্ট। কোথাও গিয়ে একটু গড়িয়ে নিলে হত। কিন্তু কোনও ঘরে ঢুকতে তার একেবারেই ইচ্ছে করছে না। শ্যামকে বহুক্ষণ দেখছে না দীপা। একবার দেখতেও এল না, দীপা কী করছে। বকে চলেছে নিশ্চয়ই। পারেও বটে। বকে বকেই জীনটা উচ্ছন্নে গেল নিজের। ভবিষ্যতের কথা ভাবতে বয়ে গেছে তার। বন্ধুদের দেখেও কি তার একটু ভালভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে না? চাকরি কমজোরি, টিউশনি করেও তো বহুলোক অবস্থা ফেরায়। লাজলজ্জাহীন মানুষটার সে ইচ্ছেই নেই। হয় বই নয় খাতা কলম-এর বাইরে ওর আর কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। শ্যামের প্রতি অন্ধ আক্রোশে দীপার সারা শরীর জ্বালা করে ওঠে। বাইরে আরও অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। শ্যামের হঠাৎ ঘড়ি দেখার সময় হল। আন্তরিকভাবে সে সকলকে বলল, ‘এবার বেরিয়ে পড়তে হয়। বাড়িতে বাচ্চরা অনেকক্ষণ একা আছে। সৌরভের ইচ্ছে আরও এক রাউন্ড করে চা হোক। কিন্তু মেয়েদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে ওরা ধীরে ধীরে আড্ডার জায়গা থেকে উঠতে লাগল। সৌরভের দু’এক জন আত্মীয় আর চার বন্ধু ছাড়া সকলেই চলে গেছে। সমরেশ সৌরভের কানে কী একটা গুনগুনিয়ে বলতেই সৌরভ হই হই করে উঠল। অনিন্দিতা শোন। শুনে যাও, সমরেশ হারামজাদাটা কী বলছে। ‘ অনিন্দিতা সামনেই ছিল। ও চেঁচাল কী বলছে গো?’

    -সে একটা যা তা কথা। অনেকেই শুনতে উৎসাহী হল। সৌরভ আর সমরেশকে তারা ঘিরে ধরল, কথাটা জানার জন্য। কেউই বলতে চায় না। অপ্রস্তুত দুজনেই। মাঝখান থেকে শ্যাম বলল, কথাটা তেমন কিছুই নয়। আসলে সৌরভ সস্ত্রীক একটু একা হতে চায় আজ। এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আবার একটা হাসির হররা উঠল ঘরে। অমিতাভের নেভি ব্লু রঙা মারুতিতে সবার আগে উঠে বসেছে শ্যাম। আসার সময় ওর গাড়িতেই এসেছে ওরা। একটু পরেই অমিতাভ আর কল্পনা উঠল গাড়িতে। শ্যাম জানলা দিয়ে সকলকে বিদায় জানাচ্ছে আবার তাড়াতাড়ি দেখা হওয়ার একটা উপলক্ষ খুঁজতে বলছে বন্ধুদের। শিবাজী আর সমরেশদের গাড়ি দুটো এগিয়ে গেল। অমিতাভ ওর গাড়ি স্টার্ট করতে গিয়েই নজর করল, দীপা নেই গাড়িতে। কল্পনাই দেখল দীপাকে প্রথম। একটু দূরেই সামান্য আলাদা হয়ে ও দাঁড়িয়ে। শ্যামও দেখল তারপর তার বউকে। রোগা হাত বার করে হাতছানি দিয়ে ডাকল ওকে। রসিকতা করল সামান্য, বলল, এ কী হল? থেকে যাচ্ছ না কি? উত্তরে দীপা সামান্য হাসল। বলল, একেবারে ভুলে গেছ? কী কথা ছিল ফেরার সময়? ছোট মাসির বাড়ি ঘুরে যাব না?

    শ্যাম ধরতেই পারল না দীপার চালটা। সে সরলভাবে জিজ্ঞেস করল, সে আবার কী? এখন বারুইপুর যাবে? এমন কথা আবার কখন হল? অমিতাভ এবং কল্পনা দুজনেই বলল, আজ থাক না দীপা। অন্য আর এক দিন না হয় এসো। দীপা বলল, তোমরা কিছু মনে কোরো না। এতখানি এসে ছোটমাসিকে না দেখে ফিরতে ইচ্ছে করছে না। ওঁর শরীর খুব খারাপ।

    অগত্যা ব্যাজার মুখে শ্যামকে নামতেই হয়। কোনও মানে হয়? কথাটা দুবার বলল শ্যাম। সৌরভ আর অনিন্দিতা তখনও ওখানে দাঁড়িয়ে। অমিতাভ শ্যামকে বলল, আরে ব্যাটা নামলি কেন? তোদের স্টেশনে ড্রপ করে দিচ্ছি। শ্যাম ফের। গাড়িতে উঠতে যেতেই বাধা দিল দীপা। বলল, না, না, এটুকু রাস্তা হেঁটেই যাব। ভীষণ ভাল লাগছে। সৌরভ হাসল কথাটা শুনে। বলল, আজ চারদিকে বেশ প্রেমের হাওয়া বইছে। নরেন্দ্রপুর স্টেশনে দীপা আর শ্যাম বসে আছে। বারুইপুর নয়, বালিগঞ্জের টিকিটই কেটেছে শ্যাম দীপার কথামতো। এবং এতটা পথে দীপা এই একটা কথাই বলেছে। শ্যাম বেশ বুঝতে পারছে দীপার মন বজ্রগর্ভ মেঘে ছেয়ে গেছে। এখন ঘন বিদ্যুৎ চমকাবে আর বজ্রপাত হতে থাকবে। সারাটা দিনের জমা আনন্দ ধুলো কাদায় নষ্ট হয়ে যাবে।

    আড়চোখে সে বউকে দেখে তাই বারবার। চা খাবে। ঝড় জলের পূর্বাভাস বুঝতেই শ্যাম প্রশ্নটি করে। দীপা কোনও উত্তর দিল না। বেশ বাড়িটা হয়েছে কিন্তু সৌরভদের তাই না? নিখাদ, নির্ভেজাল, সরল এবং অকপট একটি বাক্য শ্যাম প্রায় স্বগতোক্তির মতোই বলে। তোমার ভাল লেগেছে? ঠাণ্ডা আইসক্রিমের মতো মোলায়েম স্বর দীপার। মেঘ বুঝি তা হলে কাটল। খুশি হয় শ্যাম, দীপার পাশে সাহস করে আরও একটু ঘন হয় সে। এক কথায় অনবদ্য। আমার তো ফিরতেই ইচ্ছে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছি থেকে যাই।

    –থাকলে পারতে।

    —আরে সৌরভ তত বারে বারে বলছিল, অন্তত তোরা দুজনে আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে যা।

    –কাটালে না কেন?

    —না-না, তা কী করে হয়! ওদের গৃহপ্রবেশের দিন আজ। তবে হ্যাঁ। ওরা তো এখানে থাকবে না সবসময়। সৌরভ তাই বলছিল আমাকে, মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকতে পারিস শ্যাম, লিখতে টিখতে তো শুনি ফাঁকা আর নিরিবিলি জায়গার দরকার হয়। যখন ইচ্ছে হয় আসিস।

    —আসবে নিশ্চয়ই। শ্যাম বুঝতে পারছে না দীপা কোনদিকে আলোচনাটা নিয়ে যেতে চায়। মনে হচ্ছে উগ্রপন্থী হানা একটা হবে এবার। শ্যামের কোনও বেফাস কথাকে বাগে পেলেই কথার মেশিনগান চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দেবে দীপা। শ্যাম তাই সভয়ে চুপ করে থাকে।

    আজ রব্বিার। কিছু গাড়ি বাতিল বোধ হয় আজ। বালিগঞ্জের ট্রেন আসতে তাই দেরি হচ্ছে। বারুইপুরের দিকে একটা প্রায় জনশুন্য ট্রেন চলে গেল। আর তখনই হাঁদারামের মতো কথাটি পাড়ল শ্যাম এবং দীপার আক্রমণের পাল্লার মধ্যে পা দিল। খুবই আন্তরিকভাবে বলল, বারুইপুরে যেতে চাইছিলে, ঘুরে গেলেই হত। কলকাতার গাড়ি কখন আসবে কে জানে? অমিতাভর গাড়িতে গেলে এতক্ষণে বাড়িই পৌঁছে যেতাম। দীপা একটু নড়ে চড়ে বসল। শ্যামের দিকে অপলক দৃষ্টি তার। প্ল্যাটফরমের বিষণ্ণ আলোতে দীপার চোখ দেখল শ্যাম, বুঝল দীপার মেশিনগান রেডি। ট্রিগারে আঙুল রেখে বসেছে সে। শুধু সময়মতো টেনে দেওয়ার অপেক্ষা। পরের গাড়ি আর পরের বাড়ি দেখে আর কতদিন এ ভাবে আহাদে আটখানা হবে? কত বয়স হল তোমার খেয়াল আছে? শ্যাম মরিয়া হয়ে একটা চা ওলাকে ডাকল চেঁচিয়ে। যতক্ষণ লোকটার সঙ্গ পাওয়া যায় দীপাকে আড়াল করতে। চা-ওলা কাছে এল ধীর পায়ে, চা গরম হবে ভাই? শ্যাম জানতে চায় একটু আগে বানানো, নিস্পৃহ জবাব দেয় লোকটা। বাঃ, দাও তো ভাই একটা। তোমার বাড়ি কতদূর? এখানেই? চা-ওলাটা বেরসিক। ভাড়ে চা ঢালতে লাগল সে ভাবলেশহীন ভাবে। শ্যামের প্রশ্ন শোনার কোনও ইচ্ছে নেই তার। ভাড়টা শ্যামের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, একটাকা। শ্যাম চায়ে চুমুক দেয় শব্দ করে। তারপর লোকটাকে জিজ্ঞেস করে বালিগঞ্জের গাড়ির কোনও খবর আছে নাকি? জানি না, শ্যাম দ্বিতীয় চুমুকটি দিয়ে ভাবে এরপর তার কী করা উচিত হবে? চা-ওলা দাঁড়িয়ে আছে পয়সার প্রতীক্ষায়। শ্যাম দিচ্ছি দেব করছে দেখে দীপা তার হ্যাম্ব্যাগ খুলছে। একটা কয়েন বার করে লোকটাকে দিতেই সে শ্যামকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত করে দিয়ে চলে যায়। এবং দীপা আবার নতুন উদ্যমে ফিরে আসে রণক্ষেত্রে।

    পরের বাড়ি দেখতে আর গাড়ি চড়তে খুব আহাদ না? আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা যায়। মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না কোথাও। তার গল্পের নায়ক নায়িকাদের মুখে সংলাপ বসাতে শ্যামের কখনও অসুবিধে হয় না। কিন্তু দীপার কথার পিঠে কথা বসানো ভারী হুজুরে ব্যাপার, মিনমিন করল শ্যাম বন্ধুরা কি পর? ওরা কত ভালবাসে আমাকে তা জান?

    ওই আনন্দেই থাকো। ওদের করুণাকে তোমার ভালবাসা মনে হয়। ওদের পাশাপাশি তোমার কতটা দাঁড়ানোর যোগ্যতা হিসেব করেছ কখনও? দীপার গলায় বেশ একটা নাটকীয় ব্যাপার আছে। নানা অভিব্যক্তি চমৎকার ফোটে। গলার রেঞ্জ বেশ শক্তিশালী। এত কথা বলছে, তবু সুর বাধা এমন স্কেলে যে শ্যাম ছাড়া সে কথা। আর কারও কানে পৌঁছবে না। পৌঁছলে ভারী লজ্জা পেত শ্যাম। বেশ কিছু লোকজন জমে গেছে ইতিমধ্যে প্ল্যাটফর্মে। তবে তারা কেউই নজর করছে না ওদের।

    খোলা উদোম প্ল্যাটফর্মে উত্তরে বাতাস বয়ে যাচ্ছে অবিরল। শ্যামের একটি হাফহাতা সোয়েটার। হাতের দু’চেটো ঘষতে ঘষতে দীপাকে প্রশ্ন করল, তোমার শীত করছে না দীপা? সামান্য চেষ্টা, যদি অন্যমনস্ক হয় এতে। কিন্তু দীপার আক্রোশ এখনও কমেনি। দক্ষ টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের মতোই সে শ্যামের প্রতিটি কথাকে স্ম্যাশ করতে থাকে। না। দাঁতে প্রায় দাঁত দিয়ে বলল ও। আমার কোনও বোধই আর নেই শুধু দুটো ছাড়া। লজ্জা আর ঘেন্না। লজ্জা এই হাঘরে অবস্থার জন্য। আর ঘেন্না করি তোমাকে। নিষ্কর্ম, উদ্যমহীন আহম্মক কোথাকার। বন্ধুদের পা চেটে কতদিন আর কাটাবে?

    চা শেষ হয়ে গেছিল। ভাড়টা দুরে ছুঁড়ে দেয় শ্যাম। শান বাঁধানো প্ল্যাটফর্মে পড়েও ভাঙল না, একটা কুকুর এসে চাটতে লাগল সেটা। দৃশ্যটা দেখে মনে বল। আসে। সামান্য মাটির ভাঁড়। কিন্তু আঘাত সয়ে নিল দিব্যি। দীপার রাগ কিংবা গজরারি সময় শ্যামের মাথায় চিন্তার মিছিল চলে। যে গল্পের নামকরণ হয়নি, সে গল্পের নাম খোঁজে। দীপা আর পাপুনের অভাব অভিযোগ মেটানোর রাস্তা তৈরি করে। বন্ধুদের সমস্যার কথা ভাবে। ভাবে শাকউলি-মাসির মেয়ের বিয়েতে কিছু টাকা সে ধরে দেবে। এরকম সময় তার এইসব ভাবনা চিন্তার সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কার্যকর হয়ে ওঠে।

    .

    ও বোঝে দীপার কথা তাকে সইতেই হবে। দীপা কি সহ্য করে না? সারাদিন ওই দেড়কামরার বাড়িতে মুখ গুঁজে থাকা। হাত-পা খেলানোর জায়গা নেই। কোনও বিনোদন নেই। নেই অহঙ্কার দেখানোর মতো কোনও কিছুই, প্রতি মুহূর্তে সে লোকসমাজে কুণ্ঠা, জড়তা আর অস্বস্তির শিকার হয়। এর মূলে শ্যাম নিজেই কি নয়?

    —অনিন্দিতাই বলল আমাকে খাওয়ার সময়, এবার তোমরাও কিছু করো একটা। তোমাদের থাকার মতো সুন্দর একটা বাড়ি হলে, আমাদেরও ভাল লাগে। অনিন্দিতার কথাগুলি বেশ মোলায়েম ভাবে ওর মতো করেই বলল সে। শ্যাম ভাবল দীপা স্বাভাবিক হচ্ছে। ভাবাসে তো, তাই ওরা ভাবে যে আমার জন্য, দরদ মাখা কথা শ্যামের। দীপা ফের ফিরে গেল তার নিজস্ব রেঞ্জে। কেন? কেন এসব কথা আমি শুনব? বাড়ি করার ভার আমার? তোমার মতো কেরানির চাকরি করে আর কেউ বাড়ি করছে না? তোমারই হয় না কিছু। লোকের কাছে ভাল সেজে থাকা। আর ছেলে বউ-এর ব্যাপারে উদাসীন। তোমাকে স্পষ্ট বলছি, আমার এই শেষ। এরপর থেকে তোমার কোনও বন্ধু বা তার বউদের মুখদর্শন করব না আমি, ওদের বড়লোকি আমার অসহ্য লাগে।

    শ্যামকে বাঁচাতে ট্রেন আসছে অবশেষে। কুয়াশার ভিতর দিয়ে হলদেটে আলো দেখা গেল। শ্যাম উঠে পড়ে জায়গা ছেড়ে। দীপাও এগোল ওর পাশে পাশে। রাতে কিছু খেল না শ্যাম। বলল, খিদে নেই। ছেলের সঙ্গে জমে গেল দিব্যি গল্পে। নতুন বাড়ি। খাওয়া দাওয়া এবং নানা লোকজনের বর্ণনা দিল গুছিয়ে। দীপা রান্নাঘরে যাচ্ছে আবার ঘরে ফিরে এসে টুকিটাকি কাজ সারছে, শ্যাম আড়চোখে দু’একবার দেখেছে ওকে। তোম্বা ভাবটা কাটছে না মোটে। আজ আর কথাবার্তা হবে না। কালকেও হবে কি না সন্দেহ। আসলে খুবই মনে লেগেছে। ওর মন ভাল করে দিতে চাই একটা ছোট্ট বাড়ি। পারবে না শ্যাম, অফিস নোন, দুচারটে গয়না, এতে হয় না একটা বাড়ি? কাল অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখবে। অনেকেই তো করছে। পৃথিবীটা দেখতে দেখতে বাড়িতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। কত অজস্র সাজানো আলো ঝলমলে দোকানপাট। কত ভোগ্য সম্ভারের হাতছানি রাস্তায় বেরোলে। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, মানুষ বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে চিরকাল? একটা প্রতিজ্ঞার ছাপ ফোটে শ্যামের মুখে।

    মাঝ রাতে ঘুম ভাঙল দীপার। তেষ্টা পেয়েছে। বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে সে দেখে শ্যাম নেই। শোওয়ার আগে ওকে ছেলের ঘরে বসে বই পড়তে দেখেছিল। এখনও পড়ে যাচ্ছে বোধহয়। জল খেয়ে সে উঁকি মারল পাশের ঘরে। আলো জ্বলছে, ছেলে ঘুমিয়ে আছে কাদা হয়ে। পাশে ঘেঁষাঘেষি করে তার বাবা। গায়ের কম্বল সরে গেছে। মাথার কাছে ভোলা খাতা। বালিশে বুক দিয়ে উপুড় হয়ে অঘোর ঘুমচ্ছে লোকটা? অভ্যেস যাবে কোথায়? এত গালমন্দ তবু ঠিক লিখতে বসেছিল। ঘুমন্ত শ্যামের অসহায় চেহারা দেখে হঠাৎই মায়া হয় দীপার। এত খারাপ কথা রাগারাগি তু সবকিছু নীরবে মেনে নেয় লোকটা। সাবধানে খাতাটা তুলে নেয় দীপা। কিছুটা আঁকিবুকি কেটে অভ্যেস মতো একটা গল্প শুরু করেছে শ্যাম। আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করল ও। মাত্রই একপাতা লেখা। শুরুটা করেছে এ এইভাবে। একটা নতুন বাড়ি দেখলেই মানুষের মন ভাল হয়ে যায়। সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু মেয়েটির ব্যাপারে ঘটলো ঠিক উলটো টা। ওদের সবাইকে রান্নাঘরটা…পড়া শেষ করে কম্বলটা শ্যামের গায়ে চাপা দিয়ে বাতিটা নিভিয়ে দিল ও। তারপর ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। শ্যামের জন্য মাঝরাতে এক অদ্ভুত গর্ব অনুভব করে দীপা। এ গর্বের ভাগ সে কাউকে দিতে চায় না। এ তার একান্ত নিজস্ব।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন
    Next Article গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    Related Articles

    ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলনের বিবিধ রচনা

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    অন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.