Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত

    ইমদাদুল হক মিলন এক পাতা গল্প1423 Mins Read0

    মতিনউদ্দিনের প্রেম – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

    মতিনউদ্দিনের প্রেম – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

    মতিনউদ্দিন মেদমাংসশূন্য ক্ষীণ কাঠামোর ক্ষুদ্র আকৃতির মানুষ। ক্ষিপ্রবেগে চলার অভ্যাস সত্ত্বেও পথেঘাটে সে সহজে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। বাচালতা দোষ। নেই বলে অন্যদের মতো অজস্র কথায় সৃষ্ট একটি স্পর্শনীয় দৃশ্যমান চরিত্রও তার নয়। আপিসে দীর্ঘ বারান্দা-ঘরের সহযোগীদের মতো রাজনৈতিক সামাজিক ব্যাপারে তার মতামত থাকলেও কচিই তা সে প্রকাশ করে। কেবল চাল-ডালের দামের কথা উঠলে সে একটি বিশেষ মন্তব্য না করে যেন পারে না। একই ভঙ্গিতে একই স্বরে সে প্ররি বলে, শায়েস্তা খানের আমলে এক মণ চাল পাওয়া যে মাত্র দু-আনায়। উক্তিটা সত্য হলেও তা এখন সময় কালবহির্গত এবং বাস্তব হতে এত দূরস্থিত শোনায় যে তার সে-ঐতিহাসিক মন্তব্যটি শুন্যে বুলে মিলিয়ে যায়। সে-সব্যটিও তার সহযোগীদের মনে তার সম্বন্ধে স্বল্পভাষী নলাজুক মানুষের ছবিটিতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আনে না।

    তবে বাড়িতে পা দেওয়া মাত্র সেমানুষেরই চেহারা-হাবভাবে একটি বিষম পরিবর্তন ঘটে। বাইরে মতিনউদ্দিন এবং ঘরের মতিনউদ্দিনের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। ইট-তর্জা, টিনযোগে কোন মনে দাঁড়া করিয়ে রাখা তার ক্ষুদ্র বাসস্থানটি তার নতুন চরিত্রে স্পর্শে প্রাসাদে পরিণত হয়, এবং ঘরে তার স্ত্রী ছাড়া দ্বিতীয় কোন লোক

    থাকলেও মনে হয় যেন তার হুকুম তামিল করবার জন্য মোসাহেব-গোমস্তা বাবুর্চি-খানসামা পেয়াদা-কাবরদারের অন্ত নাই। তখন তার ত্রিশ-ইঞ্চি বুক থেকে অহরহ বাঘের মতো আওয়াজ বের হয়। তবে বন-জঙ্গলের শক্তিশালী পশুটির মতো তার সিনাটা গভীর নয় বলে মনে হয়, নিনাদ প্রচেষ্টায় যে-কোন সময়ে তার রগ ফেটে যাবে। মতিনউদ্দিনের খড়মেও কম আওয়াজ হয় না। বরাবর দেখে-শুনে শক্ত মজবুত খড়ম কেনে সে। বস্তুত, তার ঘরের জাদরেল সত্তাটির একধারে তার গলা অন্যধারে। খড়ম।

    তিন বছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু তার বউ খালেদা এখনো জানে না। কখন তার স্বামী হুঙ্কার দিয়ে উঠবে, কখন হুড়ুম করে লাফিয়ে যাবে উঠান থেকে কাক কুত্তা তাড়াতে। সেজন্যে সত্যিই পান থেকে চুন খসার প্রয়োজন নাই, উঠানে কাক কুত্তার উপস্থিতির দরকার নাই। দিনের মধ্যে কতবার যে খালেদার বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে, তার ঠিক নাই।

    খালেদাও ছোটখাটো মানুষ। গোপনে শরীরে একটু-যে মেদমাংস হয়েছে সে ধরটা ঢাকতে চেষ্টা করে নিঃশব্দে আলগোছে হেঁটে, দেহটা কাপড়ে জড়িয়ে রেখে। অবশ্য এ-বিষয়ে তার লজ্জার কোন অর্থ নাই, সাবধানতাও নিষ্প্রয়োজন। মউিদ্দিন কখনো তার বউ এর দিকে চোখ খুলে তাকায় না। তাকালেও বুঝবে না যে তার স্ত্রী কেমন একটু মোটাসোটা হয়ে উঠেছে। দোষভাবটা খালেদার মনেই। মোটা-হওয়া মানে খেয়েদেয়ে সে আরামেই আছে। সে কথা প্রকাশ করতে তার লজ্জা হয়। বিশেষ করে স্বামীটি যখন তেমন রোগাপটকাই থাকে।

    তারপর একদিন অকস্মাৎ মতিনউদ্দিনের মধ্যে একটি অবিশ্বাস্য পরিবর্তন ঘটে। এমন আশ্চর্য ঘটনাটি ঘটে বিনা খবরে, তার অব্যবহিত পূর্বে ক্ষীণতম ইঙ্গিত ছাড়া। পরিবর্তনটি শুরু হয় সকালেই, কিন্তু খালেদা তা লক্ষ করে সন্ধ্যাবেলায়। সেদিন আপিস থেকে ফিরে বেড়াঘেরা ক্ষুদ্র উঠানে বসে মতিনউদ্দিন কেমন নীরব হয়ে থাকে। বসার ভঙ্গিটা শিথিল, দৃষ্টি মাটির দিকে। নিত্যকার মতো চায়ের পেয়ালাটা নিয়ে আসে খালেদা। মতিনউদ্দিন চা পান করে বটে কিন্তু অন্যদিনের মতো থেকে থেকে তৃপ্তিসূচক উচ্চ আওয়াজ করে না। তারপর খালেদা কাটা নিয়ে এলে সে ধূমপানও করে, কিন্তু আজ ইঞ্জিনের ধুয়ারমতো রাশি রাশি ধুয়া নির্গত হয় না, কার পানিতে দুর্দান্ত গড়গড় আওয়াজও হয় না। ধূমপান শেষ করেও মতিনউদ্দিন কেমন নিস্তেজ ভাবে বসে থাকে, বেড়ার ওপর বসে একটা কাক তারস্বরে আর্তনাদ শুরু করলেও সে টু শব্দটা করে না। এদিকে সূর্য ডুবে যায়, আকাশে চাঁদ ওঠে, পাশের বাড়িতে ছেলেটি উচ্চকণ্ঠে ইতিহাস পাঠ খতম করে ঘুমোতে যায়। খালেদা চুলার আগুনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে, কিন্তু উঠান থেকে কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করে না, খাবার তৈরি হয়েছে কিনা।

    তিনদিন কাটলেও মতিনউদ্দিনের এ-অত্যাশ্চর্য ব্যবহার শুধু-যে অব্যাখ্যাত থাকে তা নয়, তার সেব্যবহারে কোন তারতম্যও হয় না। সেদিন রাতে খাবার সময়ে হ্যারিকেনটা একটু তেজ করে রাখে খালেদা। স্বামীকে সে ভালো করে দেখতে চায়, যদি বুঝতে পারে তার পরিবর্তনের কারণ। সে দেখে, মতিনউদ্দিনের মুখে ব্যথা বেদনার কোন স্পর্শ নাই, থমথমে ভাব নেই, কিন্তু গভীর ঘুম থেকে থেকে জেগে ওঠার-পর বেদনার কোন স্পর্শ নাই, থমথমে ভাব নেই, কিন্তু গভীর ঘুম থেকে জেগে-ওঠার-পর মানুষের মুখে যেমন একটা আবেশ দেখা যায়, তেমনি একটা আবেশে তার সারা মুখ আচ্ছন্ন। হাত-মুখ নড়ে, কিন্তু তার মনটা যেন ঘুমিয়ে। কিংবা দেহ-পরিত্যাগ করে তার মনটি কোথাও নিরিবিলি স্থানে গাছের ডগায় একাকি বসে আছে।

    খালেদার চোখ স্বামীর ওপর থাকে বলে গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে যায়। মেঝেটা মাটির বলে সেটি না ভাঙলেও পানি ছড়িয়ে পড়ে। সভয়ে খালেদা স্বামীর দিকে তাকায়। কিন্তু স্বামীর চোখ বর্তন থেকে ওঠে না। তারপর খাদ্যের গন্ধ পেয়ে একটি নোমছাড়া কুকুর চোরের মতো অনিশ্চিতভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরের দিকে তাকালে একটু অপেক্ষা করে খালেদাই আজ কুকুরটাকে তাড়িয়ে দেয়।

    এবার হঠাৎ খালেদার মনে হয় মউিদ্দিনের ব্যবহার আর সহ্য করা যায় না। স্বামীর হুঙ্কার গর্জন লাফাঝাপি সহ্য হয়, কিন্তু তার এই পরিবর্তন সহ্য করা হয় না। কিন্তু সে কি করবে? স্বামীকে কোন প্রশ্ন করা যায় না। তিন বছরের পারিবারিক জীবনে তাদের মধ্যে এমন একটি আদত গড়ে উঠেছে যে, কোন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা সহজ নয়। কাক কুত্তা ত্যক্ত করলে তা নিয়ে কথা হতে পারে, কিন্তু স্বামী একমাস কথা না বললেও তাকে জিজ্ঞাসা করা যায় না তার মৌনতার হেতু। অনেক হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করে, গুরুর কথারও উত্থাপন করে মতিনউদ্দিনের ঘরে তা সম্ভব হয়। বিয়ের প্রথম মাসেই তার স্বামী পরিষ্কারভাবে তাকে বলে দিয়েছিলো যে, হাসি-ঠাট্টার মানুষ সে নয়। একদিন রাতের বেলায় মতিনউদ্দিন যখন তার দিকে পিঠ দিয়ে শুয়েছিলো, তখন মস্করা করে হাল্কাভাবে সে তার পিঠে একটু খোঁচা দেয়। তৎক্ষণাৎ মতিনউদ্দিন বিপুলবেগে লাফিয়ে উঠে রেগে লাল হয়ে তাকে প্রশ্ন করে, গুতা দেও কেন? সেদিন থেকে খালেদার মস্করায় কোন সাধ নেই। অবশ্য তাতে খালেদার কোন আফসোস নাই। তার মতে, স্বামীর আইনকানুন আচার ব্যবস্থা স্ত্রীকে মানতেই হয়।

    কাজেই হ্যারিকেন তেজ করে রাখলেও খালেদা শেষ পর্যন্ত স্বামীকে কোন প্রশ্ন করে না, তার পরিবর্তনের কারণও জানতে পারে না। তাতে অতি প্রত্যুষে উঠে নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে স্বামীটি যখন আঙ্গিনায় বসে চুপচাপ হয়ে তাকে, তখন তার মনে একটা ভয়ের সঞ্চার হয়। তার স্বামীটির হলো কি?

    জাগ্রত সময়ের প্রতি মুহূর্তে মানুষ কিছুনা-কিছু ভেবেই চলে। তবে প্রত্যেকের চিন্তাধারার স্বরূপটা নিজস্ব। খালেদার মনে চিন্তাধারাটি দুই বন্ধুর আলাপ-আলোচনার রূপ গ্রহণ করে।

    খালেদা তার মনের বন্ধুকে বলে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বন্ধু উত্তর দেয়, বোঝা মুশকিল।

    তারপর খালেদা এবং তার মনের বন্ধু দু’জনেই কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে থাকে।

    নির্বাক হয়ে থাকলেও একটা কথা দু’জনের মধ্যেই উকিঝুঁকি মারে। কেবল সেটা তুলতে কারো সাহস হয় না। অবশেষে তার বন্ধুই বলে, আমার কি মনে হয় জানো?

    কি? সে উত্তর দেয়।

    মনে হয় কোন মেয়েলোকের ওপর তোমার স্বামীর দিল পড়েছে।

    সে টক করে উত্তর দেয় না। কথাটা সে যেন বোঝে না। দিল পড়ার অর্থ কি? কেনই বা একটি পুরুষের দিল একটি মেয়েমানুষের ওপর পড়ে? তাছাড়া, সে-ও কি মেয়েমানুষ নয়?

    তার মনের বন্ধু উত্তর দেয়, হয়তো মেয়েলোকটি সুন্দরী।

    খালেদা কিন্তু তার মনের বন্ধুর কথা মানতে চায় না। মাথায় একটু ঝামটা দিয়ে বলে, আমি জানি তার কি হয়েছে।

    কি হয়েছে?

    কোন ফকির-দরবেশের ডাক পড়েছে। মনের বন্ধু হাসে, ফকির-দরবেশের ডাক পড়েছে না কচু হয়েছে। দেখ না কেমন যত্ন করে সিঁথি কাটে আজকাল, মুখে-চোখে কেমন আবেশ?

    খালেদা জবাব দেয় না। সে নিজেই বোঝে, ফকির-দরবেশের ডাক পড়লে খোদারসুলকেও মনে পড়ে। কিন্ত মতিনউদ্দিনের মধ্যে বিচিত্র পরিবর্তনটা আসার পর সে একদিনও কলমা পর্যন্ত মুখে নেয় নাই। হয়তো তোমার কথাই ঠিক। সে মনের বন্ধুকে বলল। একটু থেমে আবার বলে, তবে চিন্তার কারণ নাই। ভেবেছিলাম, তার অসুখ-বিসুখ হয়েছে বুঝি।

    মনের বন্ধু মুখ টিপে হাসে।

    সুন্দরী মেয়েমানুষের ওপর তোমার স্বামীর মন পড়লে চিন্তার কারণ নাই?

    চিন্তার কি কারণ? গোয়ার্তুমির ভাব করে খালেদা উত্তর দেয়।

    যদি তোমাকে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে বিয়ে করে?

    আবার কিছুক্ষণ খালেদা নীরবে ভাবে। তারপর আরেকবার মাথায় ঝামটা দিয়ে বলে, আমি চলে যাব।

    সে ভাবে, অন্য একটি বউ ঘরে নিয়ে এসে তাকে তাড়িয়ে দিলে সে বাপের বাড়িতে না-হয় ভাই-এর বাড়িতে চলে যাবে। এখানে ভাত কাপড়টা পায়, বাপ-ভাই এর বাড়িতেও ভাত কাপড়টাও পাবে। দেশের বাড়িতে ক্ষেতখামার আছে, কুমড়ো শাকবজি আম-কাঁঠাল আছে, গাই-ছাগল আছে, এখানে উঠান ছাড়া আছে কি?

    কিন্তু তুমি একটি মানুষের বউ। তাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে না?

    আবার একটু ভেবে খালেদা জবাব দেয়, কষ্ট কিসের? যেতে হলে যাবো।

    মতিনউদ্দিনের চিন্তাধারাটা ভিন্ন ধরনের। তার মনের প্রাসাদের থামের আড়ালে দেয়ালের আনাচে-কানাচে অসংখ্য শ্রোতা। তবে তারা নীরবেই তার কথা শোনে। কেবল তারই কণ্ঠের প্রতিধ্বনি জাগে মনের সেপ্রাসাদের কক্ষে কক্ষে।

    তবে তার মধ্যে ঘোর পরিবর্তনটি আসার পর তার চিন্তাধারার রূপটাও বদলেছে। আজ তার মনের প্রাসাদ নির্জন, সেখানে শ্রোতারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সে নিঃসঙ্গ প্রাসাদের অসীম ভার সে একাই বহন করে বেড়ায়—আপিসে দীর্ঘ ঘরে হোক, মিষ্টমধুর কলতানমুখর নদীতীরে থোক, আপন ঘরেই হোক। তার এই নিঃশব্দ জগতে একটি কাক পর্যন্ত নাই যে-একটু শব্দের লহরি তুলবে।

    আসলে একটা নিদারুণ ভয় পাথরের মতো ভারি হয়ে চেপে আছে তার মনে। সে ভয়েই নিজের মনে কোন কথা তুলতে সাহস পায় না। কি হয়েছে তার?

    সে বোঝে, ভয়ের তলে আসলে আছে একটি বিচিত্র মিগ্ধভাব—এমন-এক ভাব যার স্পর্শে এক চাঁদ শত চাঁদ হয়ে ফুটে ওঠে, ধানের ক্ষেতের মধুর হাওয়ার ঢেউ জাগে। সত্য কথা বলতে কি, সে প্রেমেই পড়েছে কেবল কথাটা স্বীকার করার সাহস তার নাই। না হলে পাথর ঠেলে যে-মিগ্ধ মনোরম ভাবটি বারেবারে তার মনে ছেয়ে ফেলতে চায়, তাকে সে বাধা দিতো না।

    সে যে তার পারিবারিক জীবনের বা খালেদার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আপন মনে এই সংগ্রামে লিপ্ত হয়, তা নয়। বস্তুত, এ-পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যেও সেসব কথা তার মনে পড়ে নাই। সে-যে দায়িত্বহীন তাও নয় পারিবারিক শাসন-সংযমের খাতিরে কঠোর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সে বিশ্বাসী বলে তার মনোভারে বাহ্যিক কোন পরিচয় সে দেয় না। কিন্তু খালেদার প্রতি তার স্নেহ-মমতা-দায়িত্ববোধের অন্ত নেই।

    যে কারণে পরিবারের কথা ঘুণাক্ষরেও তার মনের আকাশে উদয় হয় না তা এই যে, তার হৃদয়ে যে প্রেমের ভাবটি জেগেছে তা অতি বিচিত্র। আসলে তার কোন বাস্তবরূপ নাই; সে-প্রেমের উৎপত্তি স্বপ্নের মধ্যেই। তবু আজ কদিন ধরে তা-তাকে গম্ভীরভাবে আবিষ্ট করে রেখেছে তার মানসিক সংগ্রামের এবং ভয়ের কারণ তাই। সেজন্যেই তার মনের প্রাসাদ কেচ্ছা কাহিনীর অভিশপ্ত কোন প্রাসাদের মতো নিস্তব্ধ নির্জন।

    স্বপ্নের কথাটি সে ভাবতে চায় না। ও বারবার তারই অজ্ঞাতে তার মনে তা ভেসে ওঠে এবং প্রতিবারই তাকে কেমন অবশ করে ফেলে।

    তার স্বপ্নটি এই। সে পুরুকে গোসল করতে যাচ্ছে, হাতে লাল গামছা। সেদিন কোন কারণে তার বড় তাড়াতাড়ি। হয়তো আপিসে যাওয়ার সময় উতরে গেছে। ঘরের বউটিও রান্না করতে দেরি করেছে। গোসল করতে গিয়েও তার আবার দেরি হয়, কারণ সে দেখতে পায় পুকুরের ধারে মস্ত একটা বাজার বসেছে। মানুষের হৈ হট্টগোল, ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকাহাঁকি, গরু-ছাগলের পায়ের ধুলায় স্থানটি ভরপুর। ভিড়ের মধ্যে অসংখ্য মানুষের গা ঘেঁষাঘেঁষি। করে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এমন সময় দুর্ধর্ষগোত্রে একটি পুলিশ এসে তার হাত ধরে। তারপর মুহূর্তে কোথাও সব গোলমাল হয়ে যায় যেন। সে যেমন জানে তেমনি পুলিশও জানে, সে নির্দোষ। লু সে দৌড়তে শুরু করে প্রাণপণে। শীঘ্র সে ভোলা মাঠে এসে পৌঁছয়, উন্মুক্ত হাওয়ায় তার বুক ভরে ওঠে। পুলিশ তখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। লু তার ভয়টা সম্পূর্ণভাবে যায় না। ক্ষেত্রে আল ধরে পুর্ণোদ্যমে আবার সে ছুটতে শুরু করেছে। এমন সময় সারা আকাশ খণ্ডবিখণ্ড করে একটি নারীর আর্তনাদ জেগে ওঠে। সে নারীর আর্তনাদে কি ছিলো কে জানে, কিন্তু পুলিশের ভয় ভুলে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে সে দাঁড়িয়ে। পড়ে। শীঘ্র সে বুঝতে পারে, নারীকণ্ঠ আর্তনাদ করে তাকেই ডাকছে। উদভ্রান্তের মতো সে এদিক-ওদিক তাকায় প্রথমে কোথাও কাউকে দেখতে পায় না। তারপর বিস্ময়ে সে দেখে, সামান্যদুরে বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে একটি সুতন্বী নারী। তার পরনে উগ্র লাল বর্ণের শাড়ি, মুখে কেমন বেদনাভরা নমনীয়তা। তাদের চোখাচোখি হতেই নারীটি তাকে হৃদয়বিদারক কন্ঠে অনুরোধ করে, সে যেন তাকে ফেলে না যায়। পরক্ষণেই উত্তরের অপেক্ষা না করে সে বুক ভাসিয়ে কাঁদতে শুরু করে। সে যেন বুঝতে পারে, মতিনউদ্দিন তাকে ফেলে চলে যাবেই। এসময় মউিদ্দিনের ঘুম ভেঙে যায়, স্বপ্নেরও অবসান ঘটে।

    স্বপ্নটি স্বপ্ন বলেই উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে মতিনউদ্দিন। ক্রন্দনরতা যে মেয়েকে সে জীবনে কখনো দেখে নাই, নিদ্রায় তার আবির্ভাব স্বপ্নের খামখেয়ালি এবং অর্থহীনতা ব্যতীত আর কি? বুদ্ধিমত্তার যুক্তি কিন্তু জয়ী হয় না। সব বুঝলেও সে অজানা মায়াময়ীর ডাক, তার অনুরোধ, তার কান্না ক্রমশ মতিনউদ্দিনের মনে একটা বিচিত্র মোহজাল বিস্তার করে। যেকণ্ঠ সে শুনতে চায় না সেকণ্ঠ বারবার তার মধ্যে অবিশ্বাস্য ঝংকারের সৃষ্টি করে, যার রেশ অবশেষে তার সমগ্র দেহে ছড়িয়ে তাকে গম্ভীরভাবে অভিভূত করে। সে জানে স্বপ্নটির কোন অর্থ নাই। তু তার হাত থেকে নিস্তার পায়না। বরঞ্চ তার মনে হয়, সে স্বপ্ন তার মধ্যে একটি নতুন সৌন্দর্যদীপ্ত আকাশ উন্মুক্ত করেছে, একটি সুপ্ত চেনাকে যাদুমন্ত্রে জাগিয়ে তুলেছে, একটি বিস্ময়কর ভাবাবেগের দ্বার খুলে দিয়েছে। ক্রমশ তার মনে হয়, নারীটি যেন অবাস্তব নয়, একটু চাইলেই সে সশরীরে উপস্থিত হবে। একথায় সে ভয়ই পায়।

    তারপর আজ সন্ধ্যায় একাকি নদীতীরে বসে আরেকটি কথা উপলব্ধি করলে তার ভীতিটা আরো ঘনীভূত হয়। সে বুঝতে পারে স্বপ্নের সে নারীটি শুধু যে তার মনের সুখশান্তি ধ্বংস করেছে তা নয়, সংসার থেকেও তার মনকে যেন উঠিয়ে নিচ্ছে। খালেদা তার স্বপ্নের নারীর তুলনায় সোনার পাশে পেতলের মতো সস্তা, অলোভনীয় হয়ে পড়েছে ভয়ে ক্ষণকালের জন্যে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। সে বোঝে, অবাস্তব যখন বাস্তবকে ধ্বংস করে তখন প্রত্যুত্তরে কিছু করবার থাকে না। বাস্তবের পক্ষে অবাস্তবের সঙ্গে যুদ্ধ করার কোন অস্ত্র নাই।

    স্বপ্নের মায়াময়ী নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করার অস্ত্র মতিউদ্দিনের নাই।

    ক্ষুদ্র উঠানের কোণে খালেদাও একাকি বসে। অনেকক্ষণ ধরে একটি বাসনই সে বারেবারে মাঝে-ঘষে। মনের বন্ধুর সঙ্গে কথালাপনে মগ্ন থাকে বলে তা সে লক্ষ করে না।

    মনের বন্ধু বলে মেয়েলোকটি কেমন সুন্দরী তা তোমার জানতে ইচ্ছা করে না?

    খালেদা একটু ভাবে। সুন্দরী হওয়াটা কী? আসলে সে কথাই তার সর্বপ্রথম জানতে ইচ্ছা করে। জীবনে সে বেশি মেয়েমানুষ দেখেনি। দেশের বাড়িতে কুলসুম আমেনাকে দেখেছে। এখানে পাশের কুনু বিবির সঙ্গে তার দেখা হয়। কিন্তু কখনো ভাবেনি কে কার চেয়ে বেশি সুন্দরী, কেবা রূপবতী। কে কার বউ, বা মেয়ে, কার কি নাম, সে-সব কথাই মনে এসেছে। অবশ্য ছোটবেলায় পরীর কথা শুনেছে। কিন্তু তারা হাওয়াই বস্তু। মানুষের আঁটগাটের বাইরে তাদের বিচরণ।

    কে জানে। হয়তো পরীর ওপর তার নজর পড়েছে বলে সে হাসে। হাসিটা অবশ্য লোক দেখানো। তার বন্ধুর খাতিরেই সে হাসে। গম্ভীর হয়ে বলে, সুন্দরী হোক অসুন্দরী হোক, আমার তাতে মাথাব্যথা নাই। তবে আজকাল তার খাওয়াটা কমে গেছে। বাসনে হাত নাড়াচাড়া করেই উঠে যায়। কি করি?

    কি আর করবে?

    মনে হয় চোয়ালের নিচে গাল বসে গেছে। হয়তো অসুখই হয়েছে।

    জ্বর নাই, কাশি নাই, লোটা নিয়েও দৌড়াদৌড়ি নাই— অসুখ আবার কিরে?

    তবে করি কি?

    কি আর করতে পারো তুমি?

    একটু থেমে খালেদা আবার বলে, থেকে-থেকে বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে। মানুষটার হলো কি? হাঁকাহাঁকি নাই, গলাবাজি নাই। হলো কি তার? কবরের মতো নিঝুম ভাবটি আর সত্যিই সহ্য হয় না। একদিন আমিই এবার পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠবে বলে দিলাম।

    কথাটি অবশ্য তার মনের বন্ধুরও বিশ্বাস হয় না।

    কিন্তু তা যে শুন্য ভয়প্রদর্শন নয়, খালেদা তার প্রমাণ দেয় সেদিন সন্ধ্যাবেলায়। আপিস থেকে ফিরে কাপড় বদলে উঠানে নিত্যকার মতো মতিনউদ্দিন চা-এর জন্যে অপেক্ষা করে। সে লক্ষ করে না যে চুলার তলে ঠাণ্ডা ধূর ছাই-এর ভূপ, খালেদাও দরজার চৌকাঠ ধরে নিস্পন্দ হয়ে দাঁড়িয়ে চা না এলে সে একবার অস্পষ্টভাবে এদিক-ওদিক তাকায়, কিন্তু কিছু বলে না। খালেদা নড়ে না। সে একটা উল্লাসমিশ্রিতভীতি বোধ করে। মনে হয় তার স্বামী হঠাৎ হুঙ্কার দিয়ে উঠে চা দাবি করবে।

    কিন্তু মতিনউদ্দিন কিছুই বলে না। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে ঘুমঘোরের মতো উঠে ভেতরে যায়, শার্ট-জুতা পরে তারপর আবার উঠানে নামে। খালেদাকে সে দেখেই না যেন।

    মতিনউদ্দিন যখন উঠানের মধ্যখানে পৌঁছয় তখন খালেদার দেহে কেমন অদম্য কাঁপন ধরেছে। সে নিজেই বুঝতে পারে না, তার কারণ রাগ না ভয়।

    মতিনউদ্দিন ততক্ষণে উঠানটা অতিক্রম করেছে বটে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে যায় নাই। খালেদা দরজার চৌকাঠ শক্ত করে ধরে। তারপর তার দেহের সে-অদম্য কম্পন হঠাৎ একটি চিৎকারে কেন্দ্রীভূত হয়ে উচ্চ, তীক্ষ্ণ আওয়াজে ফেটে পড়ে। সে বলে, মানুষটি যাচ্ছে কোথায়?

    নিজের কানেই চিৎকারটি বিচিত্র শোনায়।

    বেড়ার পাশে মতিনউদ্দিন থমকে দাঁড়ায়। তার সারা মুখে গভীর বিস্ময়ের ছায়া। সে অবুঝের মতো এধার-ওধার তাকায়। তারপর তার দৃষ্টি ফিরে যায় খালেদার প্রতি। তার বিস্ময়টা আরো বেশি। নির্বোধের মতো তার নিচের ঠোঁটটি ঝুলে থাকে। সে যা দেখে তা তার যেন বিশ্বাস হয় না।

    সেরাতে মতিউদ্দিনের নিথর ভাবটি মাত্রাতিরিক্তই মনে হয়। রাতটাও কেমন গুমোেট ধরে আছে। কোথাও হাওয়া নাই। পাশে বাণ্ডিলের মতো নিস্তেজ হয়ে শুয়ে খালেদা কান খাড়া করে রাখে। তার স্বামীর চোখে যে ঘুম নাই সে কথা সে জানে।

    আজ মতিনউদ্দিনের নিদ্রাহীনতার কারণটি কিন্তু একদিনের মোহ নয়। বস্তুত, আজ সন্ধ্যায় বেড়ার নিকট হতে ফিরে আসার পর হঠাৎ সে বুঝতে পারে, স্বপ্নের সুতন্বী নারীটি তার হৃদয়বিদারক আবেদন ক্রন্দনসহ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। এখন সজ্ঞানভাবে সে নারীর কথা স্মরণ করলেও হৃদয়ে ভাববেগের ঢেউ ওঠে না, দেহে মধুর ঝংকার জাগে না। প্রথমে সে একটু ক্ষোভ বোধ করে, তারপর মনে স্বস্তিই পায়। এখন যে কথা তার ঘুমের ব্যাঘাত করে তা হচ্ছে এই। স্বপ্নের মায়াময়ী নারীর হাত থেকে সে নিস্তার পেয়েছে বটে কিন্তু সে যেন এখনো ধরণীতে প্রত্যাবর্তন করে নাই : সূতম্বী নারীটি তাকে নিরবল অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখেই অদৃশ্য হয়ে গেছে। যে পাখায় ভর করে একদিন সে উড়ে বেড়িয়েছিলো সে-পাখা আর নাই বটে কিন্তু সে তার পায়ের তলে শক্ত জমি এখনো ফিরে পায় নাই। তাছাড়া তার কণ্ঠেও এখনো ভাষা ফিরে আসে নাই। শুধু তাই নয়, হঠাৎ খালেদা সম্বন্ধে এমন একটি তীক্ষ্ণ সচেনা সে বোধ করে যে একটু নড়বারও সাহস সে পায় না যেন। তবে তার সন্দেহ। নাই, একবার সে ধরণীতে প্রত্যাবর্তন করতে পারলে তার নিরাবলম্বভাব, তার বাকশূন্যতা এবং খালেদার বিষয়ে তীক্ষ্ণ বেদনাদায়ক সচেতনাটি দূর হয়ে যাবে, কিন্তু কি করে সে মৃত্তিকাময় স্থূল পৃথিবীতে প্রত্যবর্তন করে, কি করেই বা তার সাধারণ স্বাভাবিক জীবন পুনঃগ্রহণ করে?

    সাহায্য আসে অপ্রত্যাশিত অঞ্চল থেকে।

    বেহেস্ত-প্রেরিত একটি ফেরেশতা অতি দক্ষতার সঙ্গে তাদের মশারির মধ্যে অদৃশ্য একটি ছিদ্র আবিষ্কার করে। সে-ছিদ্র দিয়ে সে মশারিতে প্রবেশ করে কয়েক মহুর্ত বিজয় উল্লাসে নৃত্য করে। অবশ্য তার আবির্ভাব অলক্ষিতই থাকে। গব্যস্থলে পৌর প্রশংসনীয় দক্ষতা সত্ত্বেও মনস্কামনা চরিতার্থ করার ব্যাপারে অশেষ ধৈর্য অধ্যবসায় থাকা সত্ত্বেও ফেরেশতাটি একটি অতিক্ষুদ্রকায় জীবন, দিনের বেলায় তার ছায়া পড়ে না কোথাও, রাত্রে অন্ধকারে সে অদৃশ্যই থাকে।

    গ্যস্থলে পৌঁছানোর আনন্দোচ্ছাসটি কাটলে বেহেস্তপ্রেরিত ফেরেশতাটি এবার আপনকার্যে মনোনিবেশ করে। কাপড়ের বান্ডিলটি উপেক্ষা করে সরাসরি মতিনউদ্দিনের ঘর্মাক্ত ডান গালে সে অবতীর্ণ হয়। তার স্বীয় পাখাদুটিতে আলগোছে বার কয়েক ঝাঁপটা দিয়ে সে হঠাৎ নিশ্চল হয়ে পড়ে।

    একটু পরে আকস্মাৎ চাপড়ের মতো উচ্চ আওয়াজ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে রাত্রে গভীর নীরবতা মতিনউদ্দিনের নিকট আর্তনাদের ভঙ্গুর কাঁচের মতোই খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। নিজের গালে চাপড় দিয়ে এবং আর্তনাদ করেই মতিনউদ্দিন ক্ষান্ত হয় না। দুর্ধর্ষ গলায় হুঙ্কার দিয়ে বলে, মশারিতে হাজারো মশা। কি করে মানুষ চোখ বোজে?

    তারপর মশারিতে যে মশার অন্ত নাই সেকথাই প্রমাণ করার জন্যে সে ঠাসঠাস করে নিজের দেহের নানা স্থানে চড়-চাপড় মারে। মশা মারতে সে কামান দাগে।

    অন্যদিন হলে খালেদা উঠে মশারিটা ঝেড়ে আবার সযত্নে গুঁজে দিতো। আজ সে নড়ে না।

    মতিনউদ্দিন অবশেষে শান্ত হয়। শবিজয়ী সেনাপতির মতো আত্ম সচেতভাবে কিছুক্ষণ নড়েচড়ে সে যখন ঘুমের আয়োজন করে, তখন তার পিঠটা খালেদার পিঠের সঙ্গে একটু লেগে থাকে। গ্রীষ্মের দিনে সে সংস্পর্শ মধুর না হলেও মতিনউদ্দিন সরে না।

    খালেদার চোখে যখন নীরব অশ্রুর আবির্ভাব হয় তখন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে এমন রব তুলে মউিদ্দিন নাক ডাকতে শুরু করেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন
    Next Article গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    Related Articles

    ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলনের বিবিধ রচনা

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    অন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.